দু মুঠো বিকেল পর্ব-১৮+১৯+২০

0
2201

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_১৮
Writer-Afnan Lara
.
ঠিক আছে যাও,আর সাতটা কিন্তু!
.
রিম আর পিছনে তাকালো না,দৌড়ে বাসায় ফিরে গেলো সে,এরকম চিটার লোক আর সে দেখেনি আগে
দেখবেও বা কি করে,গত তিন বছর ধরে তো এই লোকটাই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাচ্ছে আমাকে,কবে মুক্তি পাবো কে জানে!
.
স্পর্শ ফেরত আসলো রিপনের কাছে,রিপন গরম গরম চা খেতে খেতে বললো”ভাই,এতই যখন ভালোবাসেন,, করে ফেলেন একটা চাকরি তাহলেই তো হয়,মেয়ের বাপ ভাই খুশি তো মেয়েও খুশি”
.
না রে রিপন,আমি চাই রিম যেন আগে থেকেই আমাকে ভালোবাসে,পছন্দ করে,ওর সম্মতি দেখার পরেই চাকরির যুদ্ধে নামবো,তার আগে না
.
তাহলে রিমকে জানান যে আপনি উনার মতামত পেলে চাকরি করবেন
.
আর রিম বলবে তাহলে চাকরি পেয়ে নিন বিয়ে করে ফেলি,এত সোজা?রিমকে আমি খুব ভালোমতন চিনি,ও সোজাসুজি বলে দিবে যে চাকরি করলেও কি না করলেও কি!
.
আরে ভাই একবার বলে তো দেখেন
.
আচ্ছা বলবো একদিন,যেদিন ওর মুড ভালো থাকবে

রিম কলিংবেলে চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,তামিম সোফা থেকে নেমে দরজার খুলতেই রিম হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো
তামিম বুঝলো হয়তবা স্পর্শ বকেছে ওকে,কারণ রিমের এমন মেজাজের কারণ সবসময় স্পর্শই তা এই মহল্লার সবাই জানে
.
রিম বিছানায় এসে বসতেই কল আসলো তমার,কাল সকাল দশটায় বাস ছাড়বে ভার্সিটির সামনে থেকে,রিম যেন জলদি আসে সেটা বলার জন্য তমা ফোন করেছে ওকে
.
রিম কিছুক্ষন আগে হয়ে যাওয়া সব ঘটনা ভুলে জামা চয়েস করা শুরু করলো যেটা সে কাল পরে যাবে,একটা কমলা রঙের জামা বেছে নিল সে
জামাটায় গোলাপি রঙের ফুলকতগুলোর ফ্রিন্ট করা
তারপর চুড়ির আলনায় চোখ বুলিয়ে নিলো যে কমলা রঙের চুড়ি কোন খাঁজটায় আছে
ব্যাস সব রেডি এবার আমি যাই একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি
আজ কিছুই ভাল্লাগছে না
যেতে যেতে হঠাৎ মাথায় কিসের বুদ্ধি আসলো ওর
তামিম চিপসের প্যাকেট কোলে নিয়ে বসে টিভি দেখছে
আর মা নিজের রুমে দুপুরের ঘুম ঘুমাচ্ছেন,বাবা আর রিহাব অফিস থেকে ফেরেনি এখনও
রিমঝিম রান্নাঘরে গিয়ে টি ব্যাগ একটা নিলো আর গুড়ো দুধের মিনি প্যাকেটা নিয়ে চললো,, যাওয়ার সময় তামিমকে বললো ওর কার্টুন শেষ হলে টেবিলের উপরে থাকা ফ্লাক্সটা নিয়ে যেন ছাদে দিয়ে আসে
.
রিম ছাদে এসে এক কোণায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে
বেশ ভালো লাগছে,এই জন্যই তার এসময়টায় ছাদে আসা হলো
রিমদের ছাদে তেমন ফুল না থাকলেও স্পর্শদের ছাদে ফুলে ভর্তি,ছাদে থাকা সবগুলো ফুল স্পর্শদের,ওদের ভাঁড়াটিয়ারা বারান্দায় ফুল গাছ রেখেছে,ছাদে একান্তই স্পর্শরা গাছ লাগাবে এটাই নিয়ম
তো রিম চুপিচুপি এসে হাত বাড়িয়ে ঐ ছাদ থেকে অনেক কষ্টে একটা গাঁদা ফুল নিয়ে ওদিকে তাকানো অবস্থায় এক দৌড় দিলো
হঠাৎ স্পর্শর বুকে ধাক্কা খেয়ে সে দুম করে পড়ে গেলো ছাদের উপর
.
স্পর্শ কপাল কুঁচকে বললো”চুরি করা হচ্ছে?”
.
রিম ফুলটা লুকিয়ে ওড়না ঠিক করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো তারপর একটু দূরে গিয়ে বললো”না মানে এটা তো আসলে এমনি”
.
স্পর্শ মুচকি হেসে বললো”সব তো তোমারই,আর কোনো ফুল লাগবো নাকি বলো এনে দিচ্ছি”
.
আমি কখন কোথায় থাকি আপনি সবসময় বুঝে যান কি করে বলুন তো?”
.
স্পর্শ হাত বাড়িয়ে ওদের ছাদ থেকে একটা গোলাপ ফুল নিতে নিতে বললো”তোমাদের বাসার দেয়াল ও আমার সাথে কথা বলে,শুধু বলতে চাও না তুমি”
.
আপু!
.
রিম আর স্পর্শ একসাথে ছাদের কোণার দিকে তাকালো,তামিম হাতে ফ্লাক্স নিয়ে চোরের মতো দাঁড়িয়ে আছে সেখানে
.
রিম কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে ফ্লাক্স নিতেই স্পর্শ পাশে দাঁড়িয়ে বললো”কি শালাবাবু, কি আনছো?”
.
তামিম দাঁত কেলিয়ে বললো”গরম পানি,আপু চা খাবে তো”
.
এই চুপ,তোকে বলছি না উনার সাথে কোনো কথা বলবি না?
.
আমাকে মানা করে তুমি নিজেও তো কতো কথা বলো,আর আমি বললেই দোষ??
.
রিম বোকা বনে গেছে,স্পর্শ হাসতে হাসতে শেষ
.
রিম চুপচাপ ছাদের শেষ প্রান্তে গিয়ে ফ্লাক্সের ভেতর গুড়ো দুধ আর টি ব্যাগ ঢুকিয়ে ছিপি আটকালো,তার কিছুক্ষন পর ছিপিতে চা ঢেলে মুখে দেওয়ার আগেই স্পর্শ সামনো এসে বললো”আমাকে দিবা না?”
.
রিম মুখ লাগিয়ে ফেলে বললো”ওহ সরি মুখ লাগিয়ে ফেলেছি”
.
স্পর্শ তাও ওর হাত থকে চায়ের ছিপিটা নিয়ে চা খেতে শুরু করে দিলো
.
রিম এবার প্রচুর রেগে গেছো,তার বিকালের মজাটাই নষ্ট করে দিলো!!!
স্পর্শ মুখটা বাঁকিয়ে বললো”চিনি দাওনি?”
.
গুড়ো দুধে চিনি থাকে,আমি এক্সট্রা চিনি দিই না
.
এই জন্যই তোমার মেজাজ গরম থাকে সবসময়,এখন থেকে বেশি করে চিনি দিবা,দেখবা মন মেজাজ দুটোই ঠিক আছে
চিনিতেই চায়ের আসল স্বাদ
আর রইলো কথা চিনি খাওয়ার,,এখনও সময় আছে চিনি খেয়ে নাও ভালো করে,নাহলে পরে ডায়াবেটিস হলে আর একটুও খেতে পারবে না
.
আমার ডায়াবেটিস হবে সেটার সিউরিটি দিচ্ছেন কি করে?
.
কারণ তোমার বাবার ডায়াবেটিস, আর ডায়াবেটিস বংশগত ও হয়
.
আপনার সাথে কথা বলায় বেকার
.
রিম চলে যেতে নিতেই স্পর্শ রিমের হাত ধরে ফেলে বললো”এই রিম,চা খাবে না?”
.
ঐ চায়ে আপনি মুখ লাগিয়েছেন,আমি খাব না
.
তবে খেতে তো তোমাকে হবেই
.
কিহহহ!জোর করে আপনার মুখের এঁটো করা চা আমাকে খাওয়াবেন আপনি?
.
হুমম
.
রিম খুব ভালো করে জানে স্পর্শ যেটা বলে ঠিক সেটাই করে
তাই সে একটু কাছে এসে স্পর্শর হাত থেকে ছিপিটা ফেলে দিলো কোনো রকমে
.
হেহেহেহে,এবার কি করে আপনার মুখের চা খাওয়াবেন বলুনতো??
.
স্পর্শ ব্রুটা নাঁচিয়ে রিমকে কাছে টেনে এনে বললো”চাইলে এখন কিস করতে পারি বাট করবো না,মুড নাই”
.
কথাটা বলে স্পর্শ চলে গেলো,রিম প্রতিবারের মত থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
এই লোকটা এক বার এক কথা বলে যে আমার আর প্রতিউত্তরে কিছু বলার থাকে না,আজিব একটা লোক

রিম ভাবতে ভাবতে শেষ, কাল সে সম্পূর্ন স্বাধীনতায় বাঁচবে,স্পর্শর থেকে দূরে,নিজের মনমত থাকবে,আহা শান্তিইইইইইই

কিরে স্পর্শ??ব্যাকপ্যাক রেডি করছিস কেন??কোথাও যাবি নাকি?
.
হুম,কাল পিকনিকে যাব
.
ওমা,কোথায়?
.
নরসিংদীতে,,আমার ফ্রেন্ডরা সব যাচ্ছে,ভাবলাম আমিও যাই
.
ওহ আচ্ছা,সাবধানে যাস,অনেকদিন ঘুরতে যাস না,এবার একটু মনটাকে শান্তি দিয়ে আয়
.
হুম
.
পরেরদিন সকাল সকাল রিম ভার্সিটিতে এসে হাজির,কি আনন্দ আজ তার মনে,এক এক করে সবাই বাসে উঠছে
রিম তমার হাত ধরে বাসের দিকে চললো,বাসের একদম পিছনে এসে রিম আগে ভাগে জানালার পাশের সিটটা দখল করে ফেলেছে
তমাও বসতে নিতেই কাউকে দেখে ওর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো
.
কিরে তমা,বসতেছিস না কেন?
.
ইয়ে মানে, তুই বস না,আমি ওপাশে বসি
.
মানে কি?আর কি সিট খালি আছে যে তুই আরেক জায়গায় বসার কথা বলতেছিস?
.
তমা নিমিষেই উধাও
রিম ব্যাপারটা বুঝলো না,সেও উঠতে যেতেই ওর পাশে এসে বসে পড়লো একজন সুদর্শন পুরুষ,পরনে ডিপ ব্লু কালারের হুডি,চোখে আবার চশমাও দেখা যাচ্ছে,কোলে একটা ব্যাকপ্যাক
.
একি,কে আপনি,তমা কোথায়,তমা!!!
.
স্পর্শ সানগ্লাসটা খুলে রিমের দিকে তাকাতেই রিমের তো চোখ কপালে,সে একটু পিছিয়ে গিয়ে বললো”আপনি,এখানে?কি করে?”
.
তুমি আমার থেকে যতই লুকানোর চেষ্টা করবা ততই আমি তোমার কাছে কাছে থাকবো,বুঝলা খুকি?
.
স্যার!!ম্যাডাম!!দেখুন না,কোথাকার কে এসে আমাদের ফার্স্ট ইয়ারের বাসে উঠে পড়েছে
.
স্যাররা তখন তাদের জন্য রাখা আলাদা মাইক্রোতেে উঠছিল,একজন স্যার পিছন ফিরে বললেন”আরে এটা তো স্পর্শ,এক্স স্টুডেন্ট”
.
হুম রহিম স্যার,ও আমাকে রিকুয়েস্ট করেছিল বলে ওর নাম ও দিয়েছি,আর রিম নাকি ওর বোনের ননদ,তাই ওকে ওর বোনের জামাই বলেছে রিমের খেয়াল রাখতে,আর তাই সে রিমের এজ এ গার্ডিয়ান হয়ে এই বাসে উঠেছে,সমস্যা তো দেখছি না
.
ম্যাডামের কথা শুনে রিম মনে হয় জ্ঞান হারাবে,সে ভয় ভয় চোখে স্পর্শর দিকে তাকালো
সে খুব ভালো করে জানে স্পর্শ সব মিথ্যা বলে ম্যাডামকে ভুল বুঝিয়েছে,আজকের দিনটা আমার পুরো নষ্ট করে ছাড়বে
.
স্পর্শ একটু চেপে চেপে বসছে,রিম বিরক্ত নিয়ে চোখ বড় করে তাকায় বারবার,শেষে এমন বিরক্ত হলো যে কেঁদেই দিলো বাচ্চাদের মতো
স্পর্শ তো রীতিমত অবাক,তব্দা হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সে বললো”ওকে সরি,আমি একটু সরে বসছি,তাও কেঁদো না”
.
স্পর্শ একটু সরে বসলো,রিম কান্না থামিয়ে জানালার দিকে ফিরে বসেছে এবার
.
স্পর্শ মনে মনে ভাবলো কি মেয়েরে বাবা,কান্না দিয়ে কাবু বানাই দিলো আমাকে
.
রিম আড় চোখে স্পর্শর দিকো তাকালো একবার,স্পর্শ সিটে হেলান দিয়ে রিমকে দেখে যাচ্ছে মন দিয়ে
এত কাছ থেকে দেখা তো সৌভাগ্যের ব্যাপার তার কাছে
.
রিম আবারও মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে একটু শোয়ার চেষ্টা করলো সিটে
ঘুমালে ভালো হতো কিন্তু নাহ,কিছুতেই না,এমন ও হতে পারে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম লোকটার কাছে আমি
এটা হতে দেবো না তার চেয়ে বরং জেগেই থাকি
বেশি দেরি তো আর হবে না নরসিংদী যেতে

দুপুর একটা বাজে,স্পর্শ হাত একবার সামনে আনছে আবার লুকিয়ে পকেটে ঢুকাচ্ছে,কারণটা হলো রিম একদম ওর বুকের সাথে লেগে গভীর ঘুমে
আর সে হাত দিয়ে ওকে ধরবে নাকি ধরবে না তাই ভেবে যাচ্ছে,কারণ পথের যে অবস্থা যেকোনো সময় রিম পড়ে যেতে পারে
স্পর্শ ঠিক যখনই ধরলো তখনই রিম জেগে গেলো,আর দুম করে দূরে সরতে যেতেই মাথায় একটা বড় রকমের বাড়ি খেলো সে
মাথা মুছতে মুছতে চুপ করে থাকলো সে
স্পর্শ ব্রু কুঁচকে বললো”হলো তো??আমাকে এত ঘৃনা করতে করতে এখন নিজেই ব্যাথা পেলে,আরও করো ঘৃনা”
.
রিম মাথা মুছে ঠিকঠাক হয়ে বসে নিজেই নিজেকে গালি দেওয়া শুরু করলো,কারণ সে শপথ করেছিল সে ঘুমাবে না তারপরেও কি ভাবে ঘুমিয়ে পড়লো সে,ধুর ধুর
.
রিম চুপচাপ জানালার দিকে ফিরে বসে আছে,হঠাৎ স্পর্শ সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পাশে বসে থাকা একটা ছেলের কান টেনে বললো”আমাকে চিনো চান্দু?”
.
কে ভাই আপনি?
.
তোর দুলাভাই,এত ড্যাবড্যাব করে এদিকে কি দেখছিলি তুই?
.
কই কিছু না তো
.
চোখ উপড়ে ফেলে নোয়াখালির ভাষায় মরিচখোলা করে ফেলবো একদম
.
ছেলেটা মুখটা ছোট করে আছে,কারণ সে ভালো করেই জানে স্পর্শ ওকে ধমকাচ্ছে ঠিক কি কারণে,সে এতক্ষণ ধরে রিমের দিকে তাকাচ্ছিলো বারবার,স্পর্শ বিষয়টা খেয়াল করছে গত ১০মিনিট ধরে
.
রিম এমন ভাবে রিয়েক্ট করলে যেন এটা কোনো ব্যাপারই না,আসলেই তার কাছে এটা কোনো ব্যাপার না,এরকম আরও কত ছেলে যে রিমকে প্রোপোজ করতে এসে অর্ধেক পথেই আটকে গেছে
এটা নতুন না,মাঝে মাঝে হাসি পায় তার
.
স্পর্শ হুডিটা টেনে আবারও রিমের পাশে এসে বসলো,বসতে বসতে একটা কথা গালের ভেতর রেখেই বললো সে
আর তা হলো”পুরান পাগলের ভাত নাই,নতুন পাগলের আমদানি”
.
রিম কথাটা শুনতে পেয়ে ফিক করে হেসে দিলো
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_১৯
Writer-Afnan Lara
.
হাসার কি হলো,পুরান পাগল তো ভাত পায় না,কথাটা তো সত্য
.
তো আমি কি বললাম নাকি যে মিথ্যা?সেই পাগল আর জীবনেও ভাত পাবে না এটাও সত্য
.
না খেয়েই থাকবো নাহয়

এসে গেছে ড্রিম হলিডে পার্ক,সবাই এক এক করে বাস থেকে নামছে,স্পর্শ রিমের পিছু পিছু হাঁটছে,রিম কত স্বপ্ন দেখছিল আজকের দিনটা অন্তত হাসিখুশিতে কাটাবে,আসলে মানুষ যেটা ভাবে হয় তার উল্টোটা
এখন তো দেখছি নরমাল দিনের চেয়েও বেশি পরিমাণ জ্বালিয়ে খাচ্ছে লোকটা
.
রিম গিয়ে একটা চেয়ারে বসলো,শুধু সে না ওর সাথে পিকনিকে আসা সবাই যে যার চেয়ার বুঝে নিয়ে বসেছে কারণ এখন সবাইকে নাস্তা দেওয়া হবে
স্পর্শ ঘুরে ফিরে সেই রিমের পাশেই বসলো,রিম খাবারের দিকে তাকাতেই ওর মুখটা গেলো ফ্যাকাসে হয়ে
দুইটা কলা,পাউরুটি আর ডিম
এটা কোন ধরনের খাবার??তিনটার পর নাকি বিরিয়ানি খাওয়াবে,ততক্ষণ এগুলা খেয়ে থাকতে হবে?
আমি তো কলাও খাই না,ডিম ও খাই না,তাহলে কি শুধু পাউরুটি খেয়েই থাকতে হবে,ধুর ছাই!
.
এই ওয়েটার,কেক আছে??৩০টাকার গুলা এক প্যাকেট দাও
কথাটা বলে স্পর্শ পকেট থেকে টাকা বের করে দিলো
ওয়েটার কেক এনে দেওয়ার পর স্পর্শ প্যাকেটটা রিমের দিকে দিয়ে বললো”নিন খেয়ে নিন”
.
আমি কেন খাব?
.
কারণ আমি জানি তুমি কলা আর ডিম খাও না,শুধু পাউরুটিতে পেট ভরবে না,এই কেকগুলো খাও আপাতত
.
আপনার টাকায় কেনা কেক আমি খাব না
.
স্পর্শ রাগী চোখে অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে নিজেই গপাগপ কেক খাওয়া শুরু করলো,,রিম পাউরুটি পানি দিয়ে গিলচে আর স্পর্শর খাওয়া দেখছে
.
সবাই এবার পার্কটা ঘুরে ঘুরে দেখে যাচ্ছে,আর রিমকে সামনাসামনি স্পর্শ আটকে না রেখেও আটকে রাখার মতই রাখছে
রিমের পিছু পিছু সারাক্ষণ সে ঘুরঘুর করছে,রিম তমার হাত ধরে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করে তাও লাভ হয়না,স্পর্শ যেন এসেছে রিমের সাথে সাথেই থাকতে
সারাদিন ঘুরাফিরার পর সবার এবার বাড়ি ফেরার পালা
.
রিম জানালার সাথে মাথাটা লাগিয়ে বাহিরের ব্যস্ত শহর দেখায় মন দিয়েছে,আশেপাশের পরিবেশ বেশ তবে রোডটা ভালো না,বারবার ঝাঁকুনি দিচ্ছে,,বাহিরে অন্ধকার নেমে আসছে,হালকা আবছা আলো এখনও
এরই মাঝে খেয়াল করলাম কে যেন নাক টানছে বারবার,আবার থেমেথেমে কাশছেও
পাশ ফিরে তাকাতেই বুঝলাম স্পর্শ টিসু দিয়ে নাক মুছছে,জানালার ধারে বসলাম আমি আর আমার ঠাণ্ডা না লেগে লাগলো কিনা উনার?
.
স্পর্শ রিমের দিকে তাকালো নাক মুছতে মুছতে,চোখ দুটো ওর লাল হয়ে আছে,নাকটাও লাল হয়ে গেছে
রিম ব্রু কুঁচকে বললো”মাফলার এনেছেন?”
.
আমি কি জানতাম আমার ঠাণ্ডা লাগবে?
.
শীতকালে মানুষ কোথাও গেলে সাথে করে প্রয়োজনীয় সব কিছু নিয়ে বের হয়,ছেলে হয়েও মাফলার আনতে ভুলে গেলেন?এই হুডি পরে আপনার শীত যাবে??আর সবে তো বাসে উঠলাম যেতে যেতে আড়াই ঘন্টা লেগে যাবে,ততক্ষণ কি করবেন
.
একজনের খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজের খেয়াল রাখা আর হবে না আমার দ্বারা
.
কে বলে আপনাকে এতসব করতে,এতে করে আমার বিরক্তি আসে,যাই হোক,আমি সাথে করে একটা সুতির ওড়না এনেছি এক্সট্রা,ব্যাগে আছছে দিচ্ছি,ওটা গলায় পেঁচিয়ে নিন,কাশি কম হবে
.
মেয়েদের ওড়না আমি গলায় পেঁচাবো?
.
তো??কে দেখবে?সবাই যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত, এখন জরুরি হলো কাশিটা থামানো
.
আমার বিশ্বাস হচ্ছে না রিমঝিম রহমান কিনা আমাকে তার ওড়না দিচ্ছে,নেশাটেশা করেছো নাকি?
.
অতিরিক্ত কথা না বলে যা বলেছি করুন
.
স্পর্শ মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ওড়নাটা গলায় মাফলারের মতন পেঁচিয়ে নিলো,রিম মুখটা বাঁকিয়ে জানালার দিকে ফিরে বসলো আবার

মা??রিম এখনও আসেনি??
.
নাহ রে,বলেছে ফিরতে দেরি হবে
.
একা আসবে কি করে??
.
তমা আসবে ওর সাথে মনে হয়,তা নাহলে তো তোকে বলতো গিয়ে আনতে
.
হুমম
.
তামিম রিমের বারান্দায় এসে ওর ফুলগাছগুলো দেখছে,দূর থেকে রিমকে দেখতে পেয়ে সে চেঁচিয়ে বললো”রিম আপু এসে গেছে,কি মজা”
.
রিহাব শুনতে পেয়ে সোফার রুমের জানালা দিয়ে নিচে তাকালো
তামিম স্পর্শকে দেখতে পায়নি,রিহাব বেশ অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে দেখলো তমাকে দেখা যায় কিনা
কিন্তু সে তমাকে দেখলো না, দেখলো স্পর্শকে
স্পর্শ রিমের সাথে কথা বলতে বলতে আসছে একসাথে
.
রিম তার বাসায় ঢুকিয়ে দোতলায় এসে কলিংবেলে চাপ দিতেই রিহাব এসে দরজা খুললো
রিম মুচকি হেসে ভিতরে পা রাখতেই রিহাব গম্ভীর গলায় বললো”তমা এসেছিলো?ভেতরে ডাকিসনি কেন?”
.
রিম থেমে গিয়ে চুপ করে থাকলো কিছুক্ষণ
.
রিহাব টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেয়ে আবারও রিমের দিকে তাকিয়ে বললো”কিরে??তমাকে বাসায় আসতে বললি না কেন?”
.
আসলে ওর দেরি হচ্ছিলো,তাই
.
রিহাব কাছে এসে রিমকে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো
রিম ফ্লোরে বসে গেছে,মা তার রুম থেকে দৌড়ে আসলেন,তামিম পর্দার পিছনে লুকিয়ে পড়েছে ভয়ে
.
রিহাব চোখ বড়বড় করে বললো”ঐ ছেলেটার জন্য এবার আমাকে মিথ্যা বলাও শিখে গেছিস?
তোকে বলেছিলাম না ঐ ছেলেটার সাথে কোনো কথা বলবি না???ওর বোনকে আমি বিয়ে করবো তার মানে এই না যে ওর সাথে তোর সম্পর্ক মেনে চলতে হবে
তোর সাহস হয় কি করে এত কিছুর পরেও ঐ ছেলেটার পাশাপাশি হাঁটার??
আমাকে ঘুষি মেরেছিল ভুলে গেছিস সেটা?নাকি তুই নিজেই এবার সেই ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেছিস?”
.
বাবা অফিস থেকে ফিরলেন তখনই
রিহাবের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে জলদি করে বাসায় ঢুকে দেখলেন রিম গালে হাত দিয়ে ফ্লোরের উপর বসে আছে,সবাই চুপ করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে
.
রিহাব বাবার দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললো”আমার বিয়ের এক মাস পর রিমের বিয়ে দিয়ে দিবা,এটাই ফাইনাল”
.
কথা শেষ করে রিহাব তার রুমে চলে গেলো হনহনিয়ে
মা এসে রিমের হাত ধরে ওকে উঠালেন,নিয়ে গেলেন তার রুমের দিকে
রিম চুপ করে তার বিছানায় বসলো,মা আর কিছুই বললেন না,আঁচল দিয়ে চোখ মুছে চলে গেলেন তিনি
তামিম পা টিপে টিপে রিমের কাছে এসে বললো”আপু,ব্যাথা পেয়েছো?’আমি চুমু দিয়ে দিচ্ছি,দেখবা আর ব্যাথা করবে না”
.
তামিম রিমের গালে চুমু খেতেই রিম কেঁদে ফেললো,কেঁদে তামিমকে জড়িয়ে ধরলো সে
এই প্রথম রিহাব তার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করেছে,তার গায়ে হাত তুলেছে,শুধুমাত্র এই লোকটার কারণে আজ আমার এত তাড়াতাড়ি বিয়ের কথা উঠলো
.
তামিম রিমের চোখ মুছে দিয়ে হাতের মুঠো থেকে একটা ললিপপ বের করে রিমের হাতে ধরিয়ে চলে গেলো
.
রিম গায়ের থেকে ওড়না খুলে সেটা বিছানার উপর রেখে বাথরুমে গিয়ে ঝর্না ছেড়ে দিলো
তবে ঝর্নার নিচে বসলো না সে,একটু দূরেই বসলো
ঝর্না দিয়ে বৃষ্টির মত পানি ঝরে যাচ্ছে আর রিম সেটা গভীর মনযোগ দিয়ে দেখে যাচ্ছে
আমার এখন কি করা উচিত?
আত্নহত্যা মহাপাপ নাহলে এতক্ষণে মরতাম,এত কিছু সহ্য করে কি করে টিকেছি তা শুধু আমি জানি,আর কেউ জানে না
আমাকে এসব থামাতেই হবে,এভাবে আর চলতে পারে না,,অনেক কষ্ট করেছি এই বন্দি জীবনে থেকে
এবার আমি আমার মত করে বাঁচবো,সবার থেকে দূরে চলে গিয়ে
একটা চাকরি হলে আর কিছুর প্রয়োজন ছিল না আমার
আমি এই বাসায় আর থাকবো না,এই মহল্লায় ও আর থাকব না
এ লোকটার চেয়ে আমার পরিবারের চেয়ে দূরে চলে যাব আমি,শুধু একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে আমায় যে করেই হোক,এই কথা আমি জানবো আর কেউ জানবে না
কারণ আশেপাশের লোকগুলোই পিছন থেকে ছুরি মারে সবসময়
.
স্পর্শ ওদের ফ্ল্যাটের সামনে এসে কলিংবেলে চাপ দিতেই ওর মনে পড়লো ওর গলায় রিমঝিমের ওড়না
জলদি করে ওড়নাটা খুলতেই সাথে সাথে মা এসে দরজা খুললেন
.
যাক এলি অবশেষে,হাত মুখ ধুয়ে আয়,ডিনার রেডি করছি
.
হুম
.
স্পর্শ ওড়নাটা লুকিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো সোজা
রুমে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে সে জানালার কাছে এসে ফিসফিস করে রিমকে ডাকতে থাকলো
রিম ঝর্নার নিচে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ভিজে রোবটের মতন হেঁটে হেঁটে বাথরুম থেকে বের হলো,তারপর ড্রয়ার খুলে তোয়ালেটা হাতে নিতেই কারোর ফিসফিস আওয়াজ পেয়ে সে জানালার দিকে তাকালো
তামিম সেই আবারও জানালাটা খোলা রেখেছে,তবে পর্দাটা টানানো এখনও
রিম একটু এগিয়ে এসে জানালাটা আটকাতে নিতেই দেখলো স্পর্শ হাতে ওর ওড়না নিয়ে এদিকেই চেয়ে আছে
রিম তোয়ালেটা গায়ে পেঁচিয়ে আরেক দিকে ফিরে গেলো সাথে সাথে
তারপর হাতটা নিয়ে কোনো মতে পর্দা টেনে চলে গেলো সে
.
কি ব্যাপার??এত রাতে শীতের মধ্যে রিম গোসল করলো কি জন্যে?আর মুখটা ওমন ফ্যাকাসে করে রেখেছে কেন?
.
রিম বিছানার সামনে নিচে ফ্লোরে বসে আছে,না চুল মুছতেছে না শরীর মুছতেছে
তার এত খারাপ লাগছে এই মূহুর্তে,মা দরজার কাছে এসে বললেন”রিম??খেতে আয়,কিছু খেয়ে ঘুম দে,সব ক্লান্তি চলে যাবে”
.
রিম মনে মনে ভাবলো যে কষ্টটা আজ সে পেয়েছে সেটা কবে চলে যাবে???
.
স্পর্শ জানালার ধারে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেল ফ্রেশ হতে
.
রিম বেশ অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকলো,ঠিক যতক্ষন না সবাই ঘুমাতে চলে যায়,মা অনেকবার ডাকলেন রাতের খাবার খেয়ে যেতে কিন্তু রিম যায়নি,সবাই যে যার রুমে চলে যাওয়ার পর রিম তার রুম থেকে বের হলো,সোজা রান্নাঘরে গিয়ে চা বানালো,সাথে দুটো বিসকিট নিয়ে মেইন দরজা খুলে ছাদের দিকে চললো সে
বারান্দায় যাওয়া যাবে না,যদি ঐ লোকটা এসে যায়?
তার চেয়ে বরং ছাদেই যাই,অন্তত উনি এখানে আসবেন না

রিম ছাদের এক কোণায় নিরিবিলি জায়গায় বসে আকাশের তারাগুলো গুনার চেষ্টা করছে,কষ্টটা যদি একটু কমতো তাতে
চড় এতদিন সে স্পর্শকে মারতো,আর আজ সে নিজে চড় খেয়েছে, আর তাই খুব ভালোমতন এর কষ্টটা বুঝতে পারলো,চোখ দিয়ে দুফোটা পানি বেরিয়ে আসলো তার,চা খাওয়া শেষ করে হাত দুটো ঘষতে ঘষতে সে ছাদে হাঁটা হাঁটি শুরু করলো,প্রচুর শীত পড়ছে
হুট করে একা থাকতে গিয়ে কান্নার বেগ বেড়ে গেলো ওর
আসলে এর আগে ভাইয়া কিংবা বাবা মা কেউই ওর গায়ে হাত তুলেনি,তাই সে আজকের ঘটনাটা নিতে পারছে না ঠিক
চোখ মুছতে মুছতে কারোর সাথে ধাক্কা খেয়ে গেলো সে,গরম তাপ আর ভালোলাগার একটা উষ্ণতা পেয়ে সুযোগ হাতছাড়া করলো না রিম
শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে সামনে থাকা লোকটিকে
গন্ধটা চেনাপরিচিত,এই মূহুর্তে কাউকে জড়িয়ে ধরাটা জরুরি ছিল,আর সে যদি হয় চেনা মানুষ তাহলে অবশ্যই ধরতে হবে,তাই ধরলাম,লোকে যা বলে বলুক
স্পর্শ তার দুহাত ঘুরিয়ে তার গায়ে থাকা চাদরটা মেলে রিমকে ঝাপটে ধরলো শক্ত করে
রিম যেন এই অনুভূতিতে ডুবে যেতে চাইলো,যে লোকটাকে সে জড়িয়ে ধরেছে তার গায়ের শার্টটা শক্ত করে ধরে সে নাক ডুবালো তার বুকে,ভেজা চোখজোড়া শুকিয়ে গেছে শার্টের ছোঁয়ায়
বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকার পর রিমের হুস ফিরে আসলো
সে এত রাতে কার বুকে মুখ লুকিয়েছে তা তার মাথায় আসতেই চট করে দূরে সরে গেলো সে,ছাদে থাকা নরমাল একটা লাইটের আলোয় চোখ বুলিয়ে সে বুঝতে পারলো এই লোকটা স্পর্শ
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_২০
Writer-Afnan Lara
.
আপনি!
.
কাঁদছিলে কেন?
.
“আপনাকে বলতে হবে??”
.
রিম মুখ ঘুরিয়ে হেঁটে চলে গেলো আর একটিবারের জন্য ও পিছন ফিরে তাকালো না সে
স্পর্শ এক দৃষ্টিতে রিমের চলে যাওয়া দেখছে,এত বছরে সে একবারও রিমকে এভাবে কাঁদতে দেখেনি,হলোটা কি মেয়েটার??এত রাতে গোসল,আবার এত রাতে কান্নাকাটি, আমাকে আবেগে জড়িয়ে ধরলো টেরই পেলো না,আবার টের পেয়ে ছুটে চলেও গেলো??
.
রিম নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে,,আর এসব সে ভাববে না,যত ভাবে ততই কষ্ট লাগবে
কাল ভোর হতেই স্পর্শ বাসার নিচে নামলো না কারণ সে জানে রিম আজকে বারান্দায় আসবে না
আর ঠিক তাই হলো,রিম আসলো ও না
.
স্পর্শ বেশ কিছুক্ষণ রিমের জন্য অপেক্ষা করলো নিজের বারান্দায়,রিম আসলো না দেখে চুপচাপ আবার ফেরত চলে গেলো সে
আজকে সন্ধ্যায় রিহাব আর আঁখির আংটি বদল বলে রিম কেন আসেনি সেদিকে আর স্পর্শ মাথা ঘামায়নি
আসাদুজ্জামান আর স্পর্শ এদিক ওদিকে কাজের চাপে পুরোপুরি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন
আর এদিকে রোকসানা বেগমের যেন কোনো ভ্রুক্ষেপ ও নেই সেসবে
তিনি একের পর এক সিরিয়াল দেখেই যাচ্ছেন
.
রোকসানা??একটু কাজ ও তো করতে পারো,আঁখি তো তোমারই মেয়ে
.
আমার মেয়ে?তাই নাকি?তাহলে আমার মত নাও নি কেন ওর বিয়ে ঠিক করার সময়?
.
অনেক হয়েছে,চুপচাপ কাজে হাত লাগাও,নাহলে ডিস লাইন কাটাচ্ছি আমি
.
রোকসানা বেগম মুখটা ফুলিয়ে চলে গেলেন রান্নাঘরের দিকে
আঁখি নিজের রুমে বসে আছে আয়নার সামনে,আজ তাকে সাজতে হবে,খুব সুন্দর করে সাজতে হবে
রিহাব চোখই ফেরাতে পারবে না
মা মুখটা গোমড়া করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন আঁখির রুমে
আঁখি মুচকি হাসতেই উনার মুখের ভাবগতি দেখে ওর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো
মা ওর সামনে একটা শাড়ী রেখে আবার চলে গেলেন
আঁখি জানে মা এই বিয়েতে রাজি না,কিন্তু বাবা আর ভাইয়া তো রাজি,তাতেই হলো
.
স্পর্শ সোফার রুমটা গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে সাজাচ্ছে,হালকার উপর ঝাপসা ডেকোরেশন যাকে বলে
.
কলিংবেল বাজলো গুনে গুনে পাঁচবার
স্পর্শর আর বুঝতে বাকি নেই তার খালাতো বোন নিহা এসে পড়েছে
সে জলদি করে গাঁদা ফুলের মালা হাতে নিয়েই এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গিয়ে দরজা আটকে ফেললো
.
আসমা পাটায় মশলা বাটছিল,কেউ দরজা খুলছে না দেখে সে উঠে এসে দরজা খুললো,নিহা আর তার মা বাবা আর তার ছোট বোন দাঁড়িয়ে আছে
আসমা কিছু বলার আগেই তারা সবাই ভেতরে চলে আসলো,ঢুকেই হইচই শুরু করে দিলো
রোকসানা বেগম মুখ ফ্যাকাসে করে নিজের রুমে বসে ছিলেন,তার নিজের বোনের ডাক শুনে তিনি তো খুশিতে গদগদ হয়ে এক দৌড়ে গেলেন সেদিকে,বোনকে এতদিন পর দোখে খুশিতে আটখানা হয়ে গেছেন তিনি
.
কিরে রোকসানা কেমন আছিস!!
.
ভালো বুবু,তুমি কেমন আছো,আরে নিহা যে,কেমন আছিস??রিয়াও তো এসেছে,কত ভালো লাগছে তোমাদের দেখে,এই আসমা জলদি করে নাস্তা নিয়ে আয়
.
রোকসানা তার বোনকে নিয়ে সোফায় বসে আলাপ শুরু করে দিয়েছেন
নিহা স্পর্শর রুমের দিকে তাকিয়ে আছে,আর স্পর্শ বারান্দায় এসে রিমের অপেক্ষা করছে,রিম ভুলেও তার বারান্দায় আসছে না আজ
.
দরজা নক হচ্ছে থেম থেমে,স্পর্শ ঢোক গিলে পা টিপে টিপে গিয়ে দরজাটা খুললো,ওপাশে মা দাঁড়িয়ে আছেন
.
কিরে স্পর্শ তুই দরজা অফ করে কি করস??,তোর খালা এসেছে,জলদি আয়,দেখা করে যা
.
স্পর্শ বিরক্তি নিয়ে খালার সামনে এসে একটা সালাম দিলো,খালা মুচকি হেসে বললেন”তুই খালি ধলাই হবি,,তা তোর বউকে কবে দেখবো?”
.
রোকসানা বেগম শরবত বানাতে বানাতে বললেন”নিহা বিএ পাসটা করলেই তুমি আমার স্পর্শের বউকে দেখতে পাবা”
.
নিহা লজ্জায় শেষ,স্পর্শ ব্রু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকালো একবার তারপর আবার খালার দিকে তাকিয়ে বললো”আচ্ছা খালা আমি যাই,রুম ডেকোরেশন করতেছি তো”
.
নিহা উঠে দাঁড়িয়ে বললো”আমি তোমাকে হেল্প করবো চলো”
.
স্পর্শ কপালটা কুঁচকিয়ে বললো”তার দরকার নেই তো আপু,তুমি বরং আঁখির কাছে যাও,ওর কি লাগবে না লাগবে সেটা দেখো গিয়ে”
.
নিহা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”তোমাকে না বললাম আমাকে আপু বলবা না,বয়সে তোমার চেয়ে ৪/৫বছরের ছোট আমি”
.
আমার ছোট আরেকটা মেয়ে আছে,পাশের বাসার রিম,ওকে আমি আপু ডাকি না
ও আমার চেয়ে ৭/৮বছরের ছোট,ওকে আপু বলা সাজে না,বাট তোমাকে বলা সাজে
.
কার সাথে কাকে মেলাচ্ছো? রিম কে আবার?
.
স্পর্শ চলে গেলো,আর কিছু বললো না
.
রিম চুপচাপ একটা জামা বেছে নিচ্ছে পরার জন্য
মা এসে বললেন”নে ধর,তোর ভাইয়ের আংটি বদল বলে কথা,শাড়ী পর”
.
রিম শাড়ীটার দিকে তাকিয়ে বললো”কোথায় পেলে?”
.
স্পর্শ যে ডালাটা দিয়ে আসছিল রিহাবের জন্য,সেখানে দেখলাম আমার,, তোর বাবার তামিমের আর তোর জন্যও আছে জামাকাপড়
.
আমি পরবো না এটা
.
পরবি,আমরা সবাই ওর দেওয়া জামাকাপড় পরবো,তাহলে তুই পরবি না কেন?
.
আমার সব কিছুতেই মানা
.
মা রিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন”থাক মা বাদ দে ওসব,দেরি হয়ে যাবে,ফটাফট তৈরি হয়ে যা,তারপর আবার তামিমকে তৈরি করবি,আমার অনেক কাজ আছে,আমি পারবো না
.
ওকে আগে পাঠিয়ে দাও,ওকে রেডি করিয়ে তারপর আমি রেডি হবো
.
আচ্ছা
.
তামিম ছোট্ট একটা শেরওয়ানি পরেছে,গোল্ডেন কালারের,বেশ একটা ভাবসাব নিয়ে সোফার মাঝখানে গিয়ে বসে কার্টুন দেখছে সে এখন
রিম শাড়ীটা হাতে নিয়ে এপিঠ ওপিঠ করে দেখলো
বরাবরের মতই স্পর্শের পছন্দের জবাব নেই
কি সুন্দর হালকা কমলা রঙের একটা শাড়ী,,
রিম চুপচাপ শাড়ীটা পরতে নিলো, শাড়ীটা খুলার সময় ঝুনঝুন করে কি যেন গিয়ে নিচে থাকা কার্পেটার উপরে পড়লো,,রিম কৌতুহল নিয়ে ঝুঁকে জিনিসটা তুললো
একটা কোমড়ের বিছা,গোল গোল লাল পাথর আটকানো,,বডিটা সোনালি রঙের
রিম আগে কখনও কোমড়ের বিছা পরেনি তাও কোনো রকম কোমড়ে আটকিয়ে চুলগুলো আঁচড়িয়ে নিলো,ড্রয়ার থেকে সিলভার কালারের একটা টিকলি নিয়ে পড়লো সাথে কান টানা দুল
তারপর বের হলো সে রুম থেকে
মা কানের দুল লাগাতে লাগাতে এসে রিমকে দেখে হেসে বললেন”তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে রিমঝিম!!”
.
মা চোখের কাজল নিয়ে রিমের কানের তলায় লাগিয়ে দিল যাতে কোনো নজর না লাগে
তারপর রিম গিয়ে তামিমের পাশে বসলো
রিহাব তৈরি হয়ে বেরিয়েছে,,হাতের ঘড়ি লাগাতে লাগাতে সে মায়ের দিকে চেয়ে বললো”মা?তোমরা রেডি তো??এখন বের হবা?”
.
হুম,তোর বাবা পাঞ্জাবি পরছে,উনি বের হলেই আমরা যাব
.
আচ্ছা

স্পর্শর হাতে ওর মা দুইটা পাঞ্জাবি ধরিয়ে দিয়ে চলে গেছেন,যেকোনো একটা পরতে হবে ওকে,একটা নীল পাঞ্জাবি আরেকটা কমলা রঙের
স্পর্শ মুচকি হেসে কমলা রঙেরটাই বেছে নিলো,তারপর পাঞ্জাবিটা পরে চুলে জেল লাগিয়ে চুল ঠিক করতেছে সে,ঠিক সেসময়ে কলিংবেল বাজলো,নিশ্চয় রিমেরা সবাই এসে গেছে
স্পর্শ জলদি করে রুম থেকে বেরোতে নিতেই নিহার সাথে এক ধাক্কা খেলো,সেসময়ে নিহা পড়ে যেতে নিতেই স্পর্শ ধরে ফেললো ওকে
রিম তামিমের হাত ধরে বাসায় ঢুকতেই স্পর্শ আর নিহাকে দেখতে পয়ে চোখ নামিয়ে নিলো,চুপচাপ গিয়ে তামিমকে নিয়ে সে সোফার এক কোণায় বসলো,রিহাব আঁখির বাবাকে সালাম দিয়ে বাসার ভেতর ঢুকেছে,,আঁখির বাবা রিহাবের মা বাবাকে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত
আর রোকসানা বেগম তো তার বেনকে নিয়ে ব্যস্ত
এদিকে স্পর্শর কলিজায় কামড় দিয়েছে এই ভেবে যে রিম ওকে আর নিহাকে হাত ধরা অবস্থায় দেখে ফেলেছে,কি না কি ভেবেছে কে জানে
রিম গম্ভীর হয়ে বসে আছে,নিহা কোথা থেকে এসে বললো”পাশের বাসার রিমকে চেনো??শুনলাম তোমাদের বাসাও নাকি পাশের বাসায় তাই জিজ্ঞেস করলাম”
.
কিন্তু কেন?
.
স্পর্শ শুধু রিম রিম করে,তাই আমার একটু জানার ইচ্ছে কে এই মেয়েটা
.
রিম চুপ করো তাকিয়ে থাকলো নিহার দিকে,কিছু আর বললো না,তামিম মুখে হাত দিয়ে বসে আছে,কিছুই বলবে না সে,রিম মানা করেছিল বড়দের মাঝে কথা না বলতে
রিহাব বাবার পাশে বসে রিমের আর স্পর্শর দিকে নজর রাখছে তথাকথিত
.
স্পর্শ রুমের এক কোণায় বসে আছে,তার চোখ শুধুই রিমের দিকে
রিম আজ ওর মনমত সেজে এসেছে,যেমনটা সে কল্পনায় ভেবে রেখেছিলো
আর রিম মাথা নিচু করে বসে আছে,একটিবারের জন্যও তাকাচ্ছে না সে
.
রিহাব হালকা কেশে আঁখির বাবার দিকে চেয়ে বললো”আঙ্কেল আপনাকে আমার কিছু কথা বলার আছে”
.
হ্যাঁ বাবা বলো
.
আমি চাই এর পরের সবগুলো অনুষ্ঠান আমাদের বাসায় হোক,কারণ মেয়েদের বাসায় এসব অনুষ্ঠান হয় না,এমনকি আমি আংটিবদলটাও আমাদের বাসায় করতে চেয়েছিলাম
.
সেটা সমস্যা না,তোমার যখন ইচ্ছা তোমার বাসায় করার তো ঠিক আছে,সমস্যা নেই
.
ধন্যবাদ আঙ্কেল
.
নিহা আসমার সাথে নাস্তা এনে টেবিলের উপর রাখছে আর বারবার স্পর্শর দিকে তাকাচ্ছে,অথচ স্পর্শ ভুলেও ওকে দেখছে না,তার চোখ রিমের দিকে,আজ সারাদিন একটিবারের জন্য ও সে রিমের সাথে কথা বলেনি,মনটা আনচান করছে,যে করেই হোক দুটো কথা বলতেই হবে
.
তামিমের আবারও বাথরুম পেয়েছে,রিম ওকে নিয়ে বাথরুমের সামনে এসে দাঁড়ালো,তামিম ভিতরে ঢুকে গেছে সাথে সাথে
স্পর্শ রিহাবের চোখের দিকে তাকালো এক নজর
রিহাব ওর বাবার সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলছে
স্পর্শ রিমের হাত শক্ত করে ধরে নিয়ে গেলো নিজের রুমের দিকে
রিম চিৎকার করতে গিয়েও পারলো না,আজ সে চিৎকার করলে তার সাথে সাথে স্পর্শর ও অপমান হবে,তার চেয়ে বরং নিরবতায় শ্রেয়
স্পর্শ খুশি খুশি রিমকে নিজের রুমে নিয়ে এসে বললো”জানো তোমাকে আমি কত মিস করেছি,আজ সারাটাদিন তোমাকে দেখিনি,তোমার সাথে কথা বলিনি,আমার এত খারাপ লাগছিল,তবে এখন খুব ভালো লাগছে
আর অনেক অনেক থ্যাংকস আমার দেওয়া গিফটটা এক্সসেপ্ট করার জন্য”
রিম চুপ করে স্পর্শর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
.
স্পর্শ রিমের কোনো উত্তর না পেয়ে ওর দুহাত ধরে ঝাঁকিয়ে বললো”রিম কথা বলবে না আমার সাথে??”
.
রিমের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে
আর পারলো না সে সব কষ্ট ধরে রাখতে
দেখিয়ে দিলো স্পর্শকে,এতটা কষ্ট যে সে নিচে বসে পড়েছে,স্পর্শ রিমের হাত ছেড়ে দিলো সে মূহুর্তে
রিম স্পর্শর পা ছুঁয়ে বললো”আমাকে মুক্তি দিন,আমার আর সহ্য হয় না”
.
স্পর্শ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
রিম কাঁদতে কাঁদতে বললো”শুধুমাত্র আপনার কারণে ভাইয়া কাল আমার গায়ে হাত তুলেছে,আমি চাই না আমার পরিবারের সবাই আমার বিপক্ষে চলে যাক তাও আপনার কারণে,আপনি প্লিস আমাকে ভুলে যান,আমাকে আর বন্দি করে রাখবেন না”
.
স্পর্শ আরেকদিকে ফিরে চলে গেলো সোজা বারান্দায় যেতে যেতে বললো”আমাকে একা থাকতে দাও”
.
কথাটা শুনে রিম ফ্লোর থেকে উঠে চলে গেলো রুম থেকে
.
নিহা আঁখিকে নিয়ে এনে রিহাবের পাশে বসালো,,আজ রিহাব আর আঁখিকে দেখে মনে হচ্ছে মেড ফর ইচ আদার!!!
.
রিমের মনে হলো সে আজ স্পর্শকে অনেকটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছে
তবে তার হাতে যে আর কিছুই নেই
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে