দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_১২
Writer-Afnan Lara
.
আমি পারবো না ডাকতে,ভাইয়া এমনিতেও বলছে আপনার সাথে যেন কোনো কথা না বলি,,তারপরেও আপনার সাথে কথা বলাটাই আমার ভুল হয়েছে,ওকে বাই!!!
রিম আরেকদিকে ফিরে চলে গেলো তার রুমে,তারপর বিছানায় ঘাপটি মেরে বসে থাকলো চুপচাপ
.
স্পর্শ চেয়ার একটা টেনে গলা ঠিক করে বললো”ঐ রিহাব!!!এদিকে আয় বলছি”
.
রিমের তো চোখ কপালে,স্পর্শ এরকম চেঁচাচ্ছে কোন সাহসে,আল্লাহ রক্ষা করো!!!
.
রিহাব রেগে আগুন হয়ে রিমের রুম পেরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো,সাথে আসলো ওর বাবা মা ও
.
স্পর্শ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেলো তারপর শান্ত গলায় বললো”তুই আমার বোনকে বিয়ে করবি এটার প্রস্তাব নিয়ে আমাদের বাসায় আসবি”
.
হু দ্যা হেল আর ইউ!
তোমার বোনকে আমি বিয়ে করবো না মানে করবো না!
.
ওহ তাই??ফাইন!!
তোর বোনরে এতদিন ফুলের যত্ন করছি,আর সেটা ছিল আমার বোকামি
এবার তোর বোন ঠিক কত মিনিট তোর বাসায় সেফ থাকে সেটাও দেখবি
.
রিহাব রেগে গিয়ে স্পর্শকে মারতে হাত তুলতেই স্পর্শ ওর হাতটা ধরে ফেললো
তারপর একটা ঘুষি মেরে দিলো রিহাবের মুখ বরাবর,রিহাব পিছিয়ে পড়তে যেতেই ওর বাবা ধরে ফেললো ওকে
রিম লুকিয়ে সব দেখছে
.
স্পর্শ স্বাভাবিক ভাবেই বললো”তুমি আমার কলার ধরলা আর আমি তোমারে মেরেই দিলাম,নেক্সট???!! ”
.
রিহাব নাক ডলে মা আর বাবার দিকে তাকালো তারপর রেগে চলে গেলো
রিমের বাবা এগিয়ে এসে বললেন”তোমার বোনকে হয়ত আমরা মেনে নিব কিন্তু তোমাকে??জীবনেও না”
.
স্পর্শ হাসলো,হাসতে হাসতে সে চেয়ার টেনে বসে বললো”আপনাদের পরিবারের জামাই আমি হতেও চাই না,স্বপ্ন দেখিও না,কিন্তু!আমার বোনের বেলায় যেন সাত পাঁচ নাহয়,এটা দেখবেন তাহলে আপনাদের মেয়ের ভালোটা আমি দেখে নিব,আর যদি আমার বোনের চোখে আমি পানি দেখি তো আপনার মেয়েকেও কাঁদিয়ে ছাড়বো
রিহাবের কাছে তার বোনের হাসির মূল্য আছে
আমার কাছে আমার বোনের মূল্য নাই?
বরং একটু বেশিই আছে,আমার বোন যখন আপনার ছেলেকে পছন্দ করেছে তো ওর বিয়ে রিহাবের সাথেই হবে,দরকার হলে দুটোকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করিয়ে বাচ্চা সহ আনাবো আপনাদের সামনে,স্পর্শকে চিনতে কত বছর লাগে???
.
কথাটা বলে স্পর্শ উঠে চলে গেলো,সোজা সোফার রুমে আসলো সে
আসমা আর রোকসানা বেগম মিলে সোফার সামনের টেবিলটা সাজাচ্ছে,কিছুক্ষন পরেই আশিকের পরিবার আসবে আঁখিকে দেখতে
.
স্পর্শ পকেট থেকে ফোন নিয়ে আশিককে ফোন করলো
.
হ্যালো!!!স্পর্শ ভালো করেছিস ফোন করেছিস,আমিও তোকে কল করতাম,আন্টি এসব কি বলছে,আখিঁ আর আমি?এটা কি করে হতে পারে,ওকে আমি সবসময় আমার ছোটবোনের মতন দেখেছি,এটা হতে পারে না স্পর্শ
.
হুমম,আসিস না,, তুই আপাতত তোর আম্মুকে ম্যানেজ কর,বল যে আঁখিকে আমরা আরেক জায়গায় বিয়ে দেবো
.
স্পর্শ??
এসব কি বললি আশিককে??
.
আঁখি সোফার এক কোণে বসে কাঁদছিলো,আশিককে বলা স্পর্শের কথা শুনে সে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে
মা স্পর্শের সামনে এসে বললেন”কিরে?এমন করলি কেন?”
.
স্পর্শ টেবিলের উপর থেকে একটা আপেলের টুকরো নিয়ে সেটা খেতে খেতে বললো “রিহাবের পরিবার কাল পরশু আসবে আঁখির আর রিহাবের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে”
.
কে বললো তোকে??
.
স্পর্শ হেসে সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে বললো”ওরা আসবে না ওদের ১৪গুষ্টিকে আনিয়ে ছাড়বো
এতদিন মেয়েদের জোর করে বিয়ে করেছে ছেলেরা
আর এবার মেয়ে জোর করে ছেলেকে বিয়ে করবে,নিয়ম পাল্টে দেবো”
.
নাহ,আমি রিহাবের সাথে আঁখিকে বিয়ে দিব না কিছুতেই ঐ ছেলেটার ব্যবহার ভালো না
.
মা প্লিস,অনেক হয়েছে,আঁখিকে সুখী দেখতে চাও তো?তাহলে রাজি হয়ে যাও,আর তারা নিজ থেকেই আসবে,আমরা যাব না
.
না মানে না,আমি ঐ ছেলেকে পছন্দ করি না
.
“কে কাকে পছন্দ করে না???”
.
বাবার কথা শুনে স্পর্শ সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো,মা কাছে এসে বললেন”তুমি জানো বাসায় আজকাল কি হচ্ছে??”
.
জানি তো অবশ্যই,তুমি আমাকে না বলে আঁখির বিয়ে দিয়ে ফেলতেছো শুনলাম,আমার ঘরের খবর আমি আমার কলিগদের থেকে পাচ্ছি,কি হাস্যকর ব্যাপার!
.
কথাটা বলে স্পর্শের বাবা সোফায় বসলেন
.
তুমি সারাদিন বাসার বাইরে থাকো,এতসব জানানোর সময় আছে,আর এটা জানো তোমার মেয়ে পাশের বাসার রিহাবের জন্য মরে যাচ্ছে???সাথে স্পর্শ ও তার কথায় সম্মতি দিচ্ছে
.
বাবা আঁখির দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ তারপর হাত দিয়ে ওকে কাছে আসতে বললেন
আঁখি চুপচাপ এসে বাবার পাশে বসলো
.
বাবা ওর মাথা মুছে দিয়ে বললেন”রিহাবকে পছন্দ করিস??”
.
হুম
.
আর রিহাব তোকে পছন্দ করে?
.
স্পর্শ এগিয়ে এসে বললো”না করলে করিয়ে নেবো”
.
আঁখি চুপ করে থাকলো কিছুক্ষণ,তারপর বললো”করে!!! তবে সে বিয়েতে রাজি না”
.
কিন্তু কেন?
.
কারণ সে স্পর্শ ভাইয়াকে পছন্দ করে না
.
স্পর্শ মুখ বাঁকিয়ে আরেকদিকে ফিরে দাঁড়ালো
.
সেটার কারণ কি??
.
আমি বলছি কারণ কি,তোমার ছেলে সারাদিন ঐ রিহাবের বোনের পিছনে লেগে থাকে,আর সেটা রিহাবের পছন্দ না বলেই সে বিয়েতে রাজি না
আমার ছেলেকে জাজ করার রিহাব কে?
কে অধিকার দিছে ওকে?যে ঘরে আমার আর আমার ছেলের সম্মান নাই সেই ঘরে আমি আমার মেয়ে বিয়ে দিব না কিছুতেই
.
স্পর্শের বাবা আসমার হাত থেকে পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেয়ে চুপচাপ বসে থাকলেন তারপর হালকা কেশে বললেন”ব্যাপারটা দুই পরিবার সামনা সামনি বসে ঠিক করলে ভালো হবে,মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে,সামনা সামনা খোলসা আলাপ হলে মিমাংসা করতে সহজ হবে”
.
কি সহজ হবে?বিয়ে দেবো না মানে দেবো না,ছেলের কি অভাব আছে দুনিয়ায়?আমার কি মতের কোনোই গুরুত্ব নেই তোমাদের বাপ বেটির কাছে?
.
থাকবে না কেন,অবশ্যই আছে,কিন্তু বিয়ে তো হবে রিহাব আর আঁখির,ডিসিশানটা ওদের উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত
আর আমার মেয়ে তো কোনো বেকার ছেলেকে পছন্দ করে নাই,বরং একটা পরিশ্রমী এবং জব করা ছেলেকে পছন্দ করেছে,এটাতে দোষ কোথায়??
.
কথাটা স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললেন বাবা
কারণ স্পর্শ ও বেকার,কথার মাঝে ওকে খোঁচা দিয়ে দিলেন তিনি,তাই স্পর্শ রেগে চলে গেলো তার রুমের দিকে
.
রোকসানা বেগম কোমড়ে হাত দিয়ে বললেন”এতদিন তো ঐ ছেলের সাথে আমার ছেলের তুলনা করতা,এবার মেয়ে বিয়ে দিয়ে তো মনে হয় মাথায় তুলে নাচবা
.
দরকার হলে তাই করবো!
যাও আঁখি,নিজের রুমে যাও
♣
রিমের মা বাবা রোবটের মতন দাঁড়িয়ে আছেন সোফার রুমে,অথচ বসতেছেন না,রিহাব চেয়ারে বসে গাল ফুলিয়ে রেখেছে
তামিম চোরের মতন এক কোণায় বসে সবার মুখের ভাবগতি উপলব্দি করছে
রিমের মন চাচ্ছে রান্নাঘর থেকে বটি এনে স্পর্শের গলা কেটে দু টুকরো করে দিতে
এরকম খারাপ একটা লোক কিনা আমাকে পছন্দ করে?ভাবতেই ঘৃনা লাগছে, সব দোষ আমার
লোকটা আমার মা বাবার সাথে কি খারাপ ব্যবহারটাই না করলো,এটা কিছুতেই আর চলতে দিতে পারি না আমি,কিন্তু আমার কি করা উচিত??
.
এই!!
.
এই শুনে রিম পিছন ফিরে জানালার দিকে তাকালো,স্পর্শ তার রুমে দাঁড়িয়ে রিমকে ডেকেছে
রিম এগিয়ে এসে বললো”আপনার মতন একটা ছেলের সাথে আমার আর কোনো কথা থাকতে পারে না,এই আপনার ভালোবাসা??আপনি স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই জানেন না যা বুঝলাম,আপনার সাথে কথা বলতেও আমার অসহ্যকর লাগছে,আর জীবনে আমার মুখোমুখি হবেন না আপনি”
.
রিমঝিম জানালার পর্দা টেনে দিয়ে রুম থেকে চলে গেলো
আজ রাত ১২টার সময় রিমঝিম বারান্দায় আসেনি,স্পর্শ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো ওর জন্য,শেষে ও আসছে না দেখে চলে গেলো সে
রিম চুপ করে বিছানার মাঝখানে বসে আছে,চোখে ঘুম নেই তার
বাবা আর রিহাব ভাইয়ার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করলে স্পর্শ,হাত ও তুললো??এসব ভাবতে ভাবতে তার মনের শান্তি গায়েব হয়ে গেছে,ঘুম ও আসছে না
কোন অভিশাপে আমার আজ এই দিন দেখতে হলো,এই লোকটার থেকে মুক্তি পেতেই হবে আমাকে যে করেই হোক
ভাবতে ভাবতে রিম হেলান দেওয়া অবস্থাতেই ঘুমিয়ে গেছে
পরেরদিন সকাল হতেই রিহাব অফিসে যাওয়ার আগে রিমকে ডেকে বললো”আজ থেকে তার ভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ,রিহাব আলাদা রিকশা বুক করেছে,তামিমকে স্কুলে দিয়ে আসার জন্য আর নিয়ে আসার জন্য
রিম মন খারাপ করে নিজের রুমে ফেরত চলে আসলো,এতদিন কি তার বন্দি জীবনে কমতি ছিল যে এখন সম্পূর্ণ বন্দি হয়ে গেলো সে চার দেয়ালের মাঝে??
.
স্পর্শ আজ ভোরবেলাও রিমের অপেক্ষা করেছিলো তাও রিম আসেনি,রাগে মেজাজ বিগড়ে আছে তার
গাল ফুলিয়ে সে এখনও বাইকে বসে রিমের বারান্দার দিকে চেয়ে আছে,সারাদিন গড়িয়ে এখন বেলা ১২টা বাজে
স্পর্শর খুব রাগ হচ্ছে,এক চিৎকার করে সে বললো”রিমমমমম!বারান্দায় আসো”
.
কথাটা রিমের মা,আর রিম শুনলো,তারা দুজনেই রান্নাঘরে ছিলো,মা রাঁধতেছিলো আর রিম তরকারি কাটছিলো
দুজনেই চুপ করে আছে
.
স্পর্শ এবার ভলিউম আরও বাড়িয়ে বললো”তুমি না আসলে আমি এসে যাব,তখন খুব খারাপ হয়ে যাবে”
.
তাও রিমের খবর নেই,রিম চুপচাপ তরকারি কাটার গতি বাড়িয়ে তরকারি কেটে যাচ্ছে
মা বিচলিত হয়ে বললেন”এই রিম যা একটু,এই ছেলেটা কিরকম জানিস তো,পরে আবার কি না কি করে ফেলে”
.
ভাইয়া ওর জন্য আমার পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছে ওর সাথে তো আমি জীবনেও কথা বলবো না,সামনেও যাব না আর
.
১০মিনিট ধরে স্পর্শর চেঁচামেচিতেও কাজ হয়নি বলে স্পর্শ রেগে এবার রিমদের বাসায় এসে হাজির,কলিংবেলে পরপর টিপেই যচ্ছে সে,মা তো ভয়ে শেষ
রিম বিরক্ত হয়ে গিয়ে দরজা খুলেই দুমদাম ২টা চড় মেরে দিলো,স্পর্শ গালে হাত দিয়ে রিমের দিকে তাকিয়ে আছে
.
রিম কাঁপতে কাঁপতে বললো”এতকিছুর পরেও আপনি কোন সাহসে আমার মুখোমুখি হন??”
.
স্পর্শ গাল থেকে হাত নামিয়ে রিমের হাত টেনে ধরে ওর রুমের দিকে চললো
.
মা এগিয়ে এসে বললেন”এই তুমি আমার মেয়েকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?”
.
স্পর্শ রিমকে নিয়ে ওর রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে ফেললো
রিম ভয়ে রুমের এক কোণায় চলে গেছে
স্পর্শ এগিয়ে গিয়ে ওর হাত টেনে ধরে ওকে কাছে নিয়ে এসে বললো”আর ৮টা বাকি,মেরে দে,এখনই”
.
রিম কাঁপতেছে ভয়ে
.
মা দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললেন”রিম তুই ঠিক আছিস তো??এই স্পর্শ এটা কোন ধরনের বেয়াদবি,দরজা খুলো বলছি!!”
.
রিম কাঁপতে কাঁপতে মাথা নিচু করে ফেলেছে
স্পর্শর চোখ দিয়ে ওর সব রাগ বের হচ্ছে
রিমের মুখ দিয়ে টু শব্দটাও বের হচ্ছো না, স্পর্শ এর আগে এমনটা করেনি আর সেও এতদিনে স্পর্শর কথার অবাধ্য হয়নি কখনও,,
স্পর্শ ওর হাতটা আরও টেনে বললো”জানো তো তোমাকে না দেখলে আমার কিছু ভালো লাগে না তাহলে কেন কষ্ট দাও আমাকে??বলো,তোমার ভাইয়ার সুখের জন্যই তো এত কষ্ট করছি তাহলে তোমার মন পাচ্ছি না কেন?? কিসের এত ইগো তোমার??বলো রিম!!আমার ভালোবাসাটা দেখো না?শুধু আমার রাগ টাই দেখো সবসময়??”
.
রিম চোখের পানি ফেলে স্পর্শের দিকে তাকালো তারপর হাত মুছড়াতে মুছড়াতে বললো”চলে যান এখান থেকে”
.
স্পর্শ রিমের হাত ছেড়ে দিলো,তারপর গিয়ে দরজা খুলে দিলো,সাথে সাথে রিমের মা রুমের ভেতর ঢুকে রিমের কাছে এসে বললেন”কিরে তুই ঠিক আছিস তো?”
.
হুম
.
স্পর্শ চলে যাওয়ার আগে বললো”নেক্সট টাইম ভুল যেন না হয়,এত ডাকাডাকি করতে স্পর্শ পছন্দ করে না”
চলবে♥
দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_১৩
Writer-Afnan Lara
.
দেখলি?হলো তো,আমি বলেছিলাম এই ছেলেরে রাগাইস না,এখন দেখলি তো
.
রিম চুপ করে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,কিছুক্ষণ পর ওর হুস আসতেই হাত দিয়ে নিজের চোখ মুছে বললো”মা এই ঘটনাটা ভাইয়া কিংবা বাবাকে বলো না”
.
সেটা নাহয় বলবো না,কিন্তু তুই ঠিক আছিস তো?স্পর্শ গায়ে হাত দেয়নি তো?
.
রিম সোজা হেঁটে গিয়ে বিছানায় বসে বললো”না,ছোঁয় নি আমাকে”
ছোঁয়ার কথা মাথায় আসতেই রিমের মনে পড়ে গেলো স্পর্শের বলা কথাটা,আর মাত্র ৮টা চড়!!!
রাগের বশে চড় মেরে দিই সবসময়,এতটা বছর ধরে এতগুলো চড় মেরেছিলাম আমি?
আর ৮টা বাকি,না জানি রাগ করে এগুলাও মেরে দিই কোনো একদিন,তখন কি করবে লোকটা?আমাকে ছোঁবে?কেমন করে??
না না,রাগ কাবু করে রাখতেই হবে,কোনো মতেই বাকি ৮টা চড় পূর্ন হতে দেওয়া যাবে না
.
কিরে রিম এত করে ঘামাচ্ছিস কেন??
.
এমনি কিছু না,তুমি যাও রান্নাঘরে,,আমি আসতেছি
♣
স্পর্শ বাসায় ফিরে আসলো সোজা,রোকসানা বেগম মুখটা বাংলার পাঁচ করে রেখে সোফায় বসে আছেন,স্পর্শ বাসায় ঢুকতেই তিনি সামনের টেবিলটার দিকে তাকানো অবস্থায় বললেন”কিরে?তোর ভয়ে নাকি ঐ রিহাবের ১৪গুষ্টি আসবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে??কই আসতেছে না যে?”
.
আসবে,সবুর করো
.
স্পর্শ নিজের রুমে ফেরত যাওয়ার সময় দেখলো আঁকি একটা শাড়ী পরে দুলতেছে,মুখে অবিরাম হাসি
স্পর্শ ও খুশি হলো আঁখির মুখে হাসি দেখে,সব তো ওর জন্যই করা
.
সন্ধ্যায় রিহাব বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে এখন সোফার উপর,তার সামনে ওর মা বাবা বসে আছেন,নেক্সট কি করবে সেটাই জানার জন্য উনারা রিহাবের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন সেই কখন থেকে
.
রিহাব ভ্রু কুঁচকে নরমালি বললো”তোমরা রাজি হলে আমার আপত্তি নাই,ভেবে উত্তর দিবা”
.
বাবা মা মুুচকি হাসলেন,তারপর মা বললেন”দেখ বাবা তুই তো জানিস আমাদের অবস্থা কেমন আর আঁখিদের অবস্থা কেমন,তোর আর তোর বাবা মিলে যে টাকা কামায় তার দুই গুন টাকা আঁখির বাবা ইনকাম করে,এরপরেও উনি তোকে পছন্দ করেন,এমনকি আঁখিও তোকে পছন্দ করে,তাহলে আমাদের ও কোনো আপত্তি থাকার কথা না”
.
কিন্তু মা,স্পর্শ আর তার মা তো আমাকে লাইক করে না
.
রিম পর্দার ওপাশে দাঁড়িয়ে সবার কথা শুনতেছে,তামিম রিমের পিছনে দাঁড়িয়ে ঐদিন আঁখির দেওয়া ললিপপগুলোর প্যাকেট থেকে একটা ললিপপ নিয়ে খেয়ে যাচ্ছে
.
তোকে লাইক করে না কে বলেছে,স্পর্শ তো বিয়েতে রাজি
.
কাল কি করেছিল ভুলে গেছো?
.
তুই রাজি হস না দেখে এমন করলো,তবে ঠিক করেনি,এর জন্য সে আমাদের থেকে ভালো ব্যবহার কখনওই পাবে না,কথা হলো তাদের বাদ দিয়ে তোকে ভাবতে হবে মেইন কনে আর কনের বাবাকে নিয়ে
তারাই যখন রাজি তখন আর আমাদের এত ভাবনা কিসের?আর তুই ও তো আঁখিকে পছন্দ করিস
.
আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছে,বিয়েটা কি এখনই করাটা জরুরি???
.
না এখনি না,জাস্ট আংটি বদলটা হয়ে গেলে তোদের সম্পর্কটার একটা নাম হতো
.
তোমার কি মনে হয় রোকসানা বেগম এটা মেনে নিবে?
.
না মানলে স্পর্শ এত জোর গলায় আমাদের আসতে বলতো না
.
ফাইন,কাল তোমরা যাবে ঐ বাসায়,ওদের সাথে কথা বলে যেটা ডিসাইড হবে সেটাই ইন ফিউচারে হবে
.
রিহাব উঠে চললো তার রুমের দিকে,তারপর হঠাৎ থেমে গিয়ে রিমের দিকে তাকালো সে
আবারও পিছন ফিরে মা বাবার উদ্দেশ্যে বললো”এই বিয়েটা হচ্ছে তার মানে এই নয় যে আমার বোন নদীর জলে ভেসে যাবে
আমি বেঁচে থাকা পর্যন্ত রিমের সাথে ঐ ছেলের বিয়ে কখনও মেনে নিব না,মরে গেলেও না
আমার গায়ে যে ছেলে হাত তুলেছে সে আমার বোনের গায়েও হাত তুলবে তা জানা আছে আমার”
.
রিম চুপচাপ নিজের রুমে ফেরত চলে আসলো,রাগ করে গায়ের থেকে ওড়না ছুঁড়ে মেরে দরজা লাগালো সে তারপর ফ্লোরে দপ করে বসে পড়লো
কান্না এসে গেলো হঠাৎ
কিসের জন্য কাঁদছে সে জানে না,তবে তার কিসের যেন কষ্ট হচ্ছে
চুপচাপ চোখের পানি মুছতে মুছতে সে বাম পাশে তাকাতেই নিমিষেই কান্না থেমে গেলো তার,স্পর্শ চেয়ারে বসে ফোন হাতে নিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে,কিছুটা চমকে
রিম জলদি করে উঠে ওড়না গায়ে দিয়ে জানালার পর্দা টেনে ফেলে ভাবলো বারবার এই জানালার পর্দা সরায় কে
পরে মনে পড়লো তামিমের কথা,তামিমের সাথে স্পর্শর বেশ ভালো সম্পর্ক,ও এই জানালা দিয়ে এসে স্পর্শর সাথে কথা বলে সবসময়
.
রিম চোখ মুছে গিয়ে বিছানায় বসলো এবার
.
আজ রিহাব ডিনার করতে আসেনি,বাবা চুপচাপ খাচ্ছেন
মা বাবাকে খাবার সার্ভ করে দিয়ে এবার তামিমকে খাওয়াচ্ছেন,রিম ভাত তরকারি নিয়ে সোফায় বসে আছে,১০মিনিট হয়ে গেছে সে তার হাত প্লেটে থাকা ভাতে ডুবিয়েছে অথচ এখনও এক দানাও মুখে তুলেনি সে
কিসের এক ভয়,কিসের এক চিন্তা তাকে খেয়ে যাচ্ছে
♣
রিহাব এত সহজে রাজি হতো না,তার রাজি হওয়ার কারণ হলো আজ সকালে যখন সে অফিসে যাচ্ছিলো রাস্তার মোড় শেষ হয়ে আরেকটা মোড়ের মুখোমুখি জায়গায় আঁখি দাঁড়িয়ে ছিলো,হাতে ব্লেড নিয়ে
রিহাবকে অনেক করে বলেও যখন সে রাজি হচ্ছিলো তখন আঁখি হালকার উপর ঝাপসা একটা টান দিয়ে দিয়েছিলো তার হাতে,রিহাব তাতেই ভয় পেয়ে অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করেছে,শেষে আঁখি রিহাবের হাত ধরে গ্যারান্টি দিয়েছে রিমকে কখনও স্পর্শ বিয়ে করবে না কারণ ওর মা!!!
বাবার পাল্লায় পড়ে ওর আর রিহাবের বিয়েটা মেনে নিলেও তার আদরের ছেলে স্পর্শর সাথে রিমকে মেনে নেবেন না কিছুতেই,এ ক্ষেত্রে তিনি বাবাকে টপকে যাবেন
রিহাব তাই সিউর হয়েই সম্পূর্ণ ডিসিশান মা বাবার উপর দিয়েছে,,ওর আর আঁখির বিয়ে নিয়ে তারাই যা ভালো বুঝবেন করবেন
.
স্পর্শ জানালায় হাত রেখে রিমের রুমের দিকে তাকিয়ে আছে
রিম তখন এমন কাঁদছিলো কেন?সকালে যে আমি বকে ছিলাম তার কারনে?তাহলে আমার সামনে কাঁদেনি কেন?সারাদিন গড়িয়ে এখনই বা কাঁদছে কেন?
ঐ রিহাব কি বলেছে ওকে?মানুষের ভাই এমন ও হয়?
কই আমি তো এমন না,আমি তো আঁখিকে রিহাবের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য সব ভুলে উঠে পড়ে লেগেছিলাম
তাহলে ও এমন করে কেন,আমার সাথে ওর কি এত সমস্যা?
.
রিম ভাত দু লোকমা খেয়ে রেখে দিয়েছে,গলা দিয়ে আর খাবার নামছে না তার
কাল তার ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে কথা হবে অথচ তার মুখে হাসি নেই,অন্য কোনো বোন হলে নাচানাচি করতো,আর তাকে দেখো তার যেন কষ্ট হচ্ছে উল্টো
স্পর্শর সাথে তার বিয়ে হবে না এটার কথা শুনে তার বুক ফেটে কান্না আসছে কেন,তার তো নাচা উচিত
কিন্তু নাহ,ঐ লোকটা এই কথা শুনলে ঠিক কি করবে এটা ভেবেই রিমের কষ্ট হচ্ছে
সে চায় না তার কারণে তার পরিবারের লোকেরা কোনোরকম বিপদে পড়ুক
.
আজ নির্ঘুম রাত,রিম গায়ে কম্বল টেনে খাটের মাঝখানে বসে আছে
ঠিক ১২টা বাজলে এক কাপ চা হাতে সে বারান্দায় যাবে
কিন্তু আজ মনে হয় জলদি ঘুম আসছে,তাই রিম আজ ১২টার আগেই চা বানিয়ে নিলো
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বারান্দার দরজা খুলে সে বের হতেই কারোর আসার আওয়াজ পেয়ে লুকিয়ে গেলো সাথে সাথে,তারপর উঁকি দিয়ে দেখতে পেলো স্পর্শকে
স্পর্শ হাতে একটা কয়েল আর সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে সেটা ঘুরাতে ঘুরাতে হেঁটে চলেছে দূরের ল্যাম্পপোস্টটার দিকে
রিম কিছুটা চমকালো,কারণ এসময়ে লোকটা কই যাচ্ছে,আগে তো দেখেনি কোনোদিন,অবশ্য সে সবসময় ১২টায় চা নিয়ে বারান্দায় আসে,১২টার আগে কখনও আসে না বলে হয়ত জানে না
রিম লুকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো স্পর্শ ওখানে ঠিক কি করছে,কিন্তু অন্ধকারের জন্য কিছুই বুঝলো না
অনেকক্ষণ সেদিকে চেয়ে থেকে সে চা শেষ করে আবার রুমে ফেরত চলে আসলো
মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে লোকটা সেদিকে কি জন্য গেলো,তারপর আবারও উঁকি মারলো সে জানালা দিয়ে
স্পর্শর রুম দেখবে এখন
ও যখন রুমে চলে এসেছে তার ঠিক ৫মিনিট পর স্পর্শ ও ফিরে এসেছে
বিষয়টা কেমন স্ট্রেঞ্জ লাগলো না??
রিম চুপ করে দেখে যাচ্ছে সব,যদি কোনো ক্লু পাওয়া যায়!!
স্পর্শ সিগারেট একটা মুখে নিয়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো,তারপর এক পায়ের উপরে আরেক পা তুলে সে সিগারেট টানছে আর ফোন টিপছে
রাতের সাড়ে ১২টা বাজে,ঘুমাবে কখন??
স্পর্শ সিগারেট টা শেষ করে গায়ের শার্টটা খুলে ফেললো এবার
রিম শীতে কাঁপছে আর স্পর্শ কিনা গায়ে যেটা ছিল সেটাও খুলে ফেলেছে?
খাটে তো কম্বল ও দেখছি না,এত শীতে কম্বল গায়ে দেয় না নাকি?আজিব লোক
.
স্পর্শ উঠে দাঁড়িয়ে কোথা থেকে যেন কম্বল একটা আনলো,তারপর সেটা বিছানায় রেখে রুমের লাইট অফ করে,ড্রিম লাইট অন করে সাথে সাথে রিমের রুমের দিকে তাকাতেই রিম লুকিয়ে পড়লো, ওর রুমের লাইট জ্বলছে
রিম কপাল চাপড়িয়ে রুমের লাইটটা অফ করে ফেললো সাথে সাথে
এখন দুই রুমই অন্ধকার
রিমের সন্দেহ ঠিক,এটা ভেবে সে ঠিক করলো আর রাত ১২টায় সে বারান্দায় দাঁড়াবে না,বরং চুপিচুপি মেইন দরজা খুলে স্পর্শকে একদিন ফলো করতে হবে
যদি দেখি আমার জন্য বসে থাকে তাহলে চান্দু আর জীবনেও আমি রাতে বারান্দায় আসব না
.
পরেরদিন ভোর হতেই রিম স্পর্শর আদেশমতন বারান্দায় এসে হাজির
কিছুক্ষণ বাদেই স্পর্শ শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে এসে দাঁড়ালো সেখানে
তারপর রিমকে দেখে শক্ত গলায় বললো”কাল রাতে আমার রুমের দিকে উঁকি মেরে দেখছিলে কেন?”
.
রিম তো ভূত দেখার মতন মুখ করে আছে,কাল যে স্পর্শ ওকে দেখে ফেলেছে তা সে একদমই বুঝেনি
তোতলাতে তোতলাতে সে বললো”দেখলাম আলো জ্বলে কিনা”
.
কেন??আলে জ্বললে কি করতা??
.
রিম কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,এদিকে স্পর্শ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ওর উত্তরের আশায়
অনেক ভেবে রিম হালকা কেশে বললো”ঐ আসলে বলতাম যে আজ আমরা বিকালে আপনাদের বাসায় আসবো,বিয়ের কথা বলতে”
.
স্পর্শ দাঁত কেলিয়ে পাশে থাকা চায়ের দোকানটার দিকে তাকালো তারপর বললো”কার?আমার আর তোমার?
.
নাহ,সেটার কথা ভুলে যান,একদম মুখেও আনবেন না!
ভাইয়ার আর আঁখি আপুর
.
“আচ্ছা তোমার ভাইয়া না মানা করছে আমার সাথে কথা না বলতে??তাহলে কেন কথা বলছো??”
স্পর্শ পকেটে হাত ঢুকিয়ে নড়ে চড়ে দাঁড়িয়ে আবার বললো”আমার আদেশনামায় তো কথা বলা লিখা নাই,জাস্ট দেখবো এটাই”
.
রিম তো রেগে আগুন হয়ে রুমের ভেতর চলে গেছে
তা দেখে স্পর্শর মুখে হাসি ফুটলো,তারপর সে চায়ের দোকানের সামনে থাকা বেঞ্চে গিয়ে বসলো,সে সময়ে রিপন ও এসে হাজির,হাতে টুথব্রাশ আর পেস্ট নিয়ে
.
কিরে এখনও দাঁত মাজিসনি??
.
না সেটা না,আমি তো আরও আগেই দাঁত মেজে ফ্রেশ ও হয়ে গেছিলাম,এটা তো রোকসানা ম্যাডামের
.
সে কি রে,মায়ের টুথব্রাশ আর পেস্ট তোর হাতে কেন?
.
“ঘটনাটা আগে শুনে নাও”
রিপন গিয়ে স্পর্শর পাশে বসলো তারপর বললো”আমি ভোর সাড়ে ৪টায় উঠলাম,মুখ ধুয়ে অযু করে নামাজ পড়বো বলে কিন্তু তখন দেখলাম রোকসানা ম্যাডাম তার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রিহাব ভাইদের বাসায় যা পারছে ছুঁড়ে মারছে”
.
কি বলিস!
.
হ্যাঁ,আমি বলতে পারবো তোমায় ওদিকে কি কি মারছে,কারণ উনাদের জানালা বন্ধ ছিল বলে কিছুই ভেতর ডুকেনি,টপকে নিচে পড়েছে
প্রথমে মেরেছে আপেল,তারপর খুন্তি,লাঠি,ঝাঁটা যা পেরেছে তা মেরেছে
তো ওসব আমি বাড়িতে নিয়ে গেছি,কাজে লাগবে বলে
কিন্তু পেস্টটা দেখে দামি মনে হলো বলে ফেরত দিতে আসলাম তোমার কাছে
.
স্পর্শ মাথায় হাত দিয়ে বললো”মা কি আর করবে,এই বিয়েটা মানতে পারছে না বলে শেষমেষ কিনা রাগ এমন করে ঝাড়ছে?”
চলবে♥
দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_১৪
Writer-Afnan Lara
.
রিম চুপচাপ হাতে জামা নিয়ে বসে আছে,একটা সবুজ রঙের জামা,ঘাড়ো সবুজ,দেখে মনে হয় কাঁচা পেঁপে
রিম জামাটা ওলটপালট করে দেখে টেবিলের দিকে তাকালো,সেখানে তার শখের একটি চুড়ির আলনা,আলনাটা তার তবে সেখানে থাকা প্রতিটা চুড়ি স্পর্শের দেওয়া
রিমের হাতের জামার সাথে মেলানো কাঁচা পেঁপে কালারের চুড়িও আছে সেখানে
রিম জামাটা একপাশে রেখে দিলো,জামাটা তার বড় ফুফু তাকে তার জন্মদিনে উপহার দিয়েছিলো,এখনও পরেনি সে,আলমারিতে তোলা ছিল এতদিন,আজ নিলো পরার জন্য
জন্মদিন সে তো এলাহি ব্যাপার স্যাপার
তবে সেটা আগে ছিল না,স্পর্শ আমার জীবনে আসার পর থেকে আমার জন্মদিন এলাহি হয়ে গেছে
ধুমধাম হয়েই শেষ হয়
এসব ভাবতে ভাবতে রিম সবুজ রঙের জামাটা পরে নিলো তারপর চুড়ি পরার জন্য টেবিলের কাছে যেতে গিয়ে থেমে গেলো সে
স্পর্শ নাকি ওকে ফলো করে জামা চেঞ্জ করে??ওর হাতের চুড়ি দেখে?
আজ পরীক্ষা করে নিব,আজ আমি চুড়ি পরতে সেদিকটায় যাব না
দেখি আমার আর তার জামার রঙ মেলে কিনা!
.
রিম চলে গেলো মায়ের কাছে
.
স্পর্শ সেই কখন থেকে রিমের অপেক্ষা করছে,রিমের চুড়ি পরা দেখবে সে জানালার পর্দাটার ফাঁক দিয়ে,কিন্তু রিম তো আসার নামই নিচ্ছে না,ও তো বললো ওরা আজ বিকালে আসবে আঁখিকে দেখতে,বিকাল চারটা বাজে এখন,এতক্ষণে তো রেডি হয়ে যাওয়ার কথা
.
মা একটা সুন্দর জামদানি শাড়ী পরে তৈরি হয়ে নিয়েছেন,তামিম তো হাইফাই সেজেছে যেন আজই রিহাবের বিয়ে হবে
রিম তামিমের চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে ওকে নিয়ে সোফার রুমে এসে টিভি দেখতে বসলো।
বাবা আর রিহাব ভাইয়া পাঁচটার আগেই বাড়ি ফিরেছেন,দুজনেই ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নিলো,এবার তারা বাসায় তালা দিয়ে বের হলো আঁখিদের বাসায় যাবে বলে
রিমের কলিজা ধুকধুক করছে,এ প্রথম সে স্পর্শদের বাসায় পা রাখবে,আগে কখনওই যায়নি
কারণ যেদিন থেকে সে এ মহল্লায় এসেছে সেদিন থেকেই স্পর্শ ওর সাথে চুইংগামের মতন লেগেছে তাই আর ওদের বাসায় যাওয়ার চিন্তা মাথায় আসেনি
স্পর্শদের দরজার সামনে ডানে ও বাঁয়ে দুটি গাছ,ফুলের না
এমনিতেই গাছ লাগানো,সম্ভবত বিলাতি গাছের মতন
.
দরজায় বড় করে স্পর্শের বাবার নাম লিখা,(আসাদুজ্জামান ইসতিয়াক)
ইসতিয়াক যে স্পর্শের নাম তা রিমঝিম জানে না,সে ভাবলো আসাদুজ্জামান আঙ্কেলের বুঝি আরেক নাম
তবে এমন নাম রাখার পেছনে হিস্ট্রি আছে,আর সেটা হলো বাড়ির মালিক আসাদুজ্জামান তাই সে সূত্রে তারা যে বাসায় থাকে সেখানে তার নাম থাকা শ্রেয়,তবে রোকসানা বেগমের কথা হলো তার একটামাত্র ছেলের নাম ও থাকতে হবে
উনার নাম হলো আসাদুজ্জামান ইফতি,নেমপ্লেটে নাম লিখতেছেন মিস্ত্রি,তো আসাদুজ্জামান লিখা শেষে সে (ই) লিখার সাথেসাথে রোকসানা বেগম দোকানে ঢুকে বললেন”ইফতি লিখবা না,আমার ছেলের নাম লিখো”
.
মিস্ত্রি চমকে বললো”আপনারা তো বলেছিলেন আসাদুজ্জামান ইফতি লিখার জন্য,আমি তো (ই) ও লিখে ফেলেছি
.
সমস্যা নাই,ই দিয়ে ইসতিয়াক লিখে ফেলো
.
মিস্ত্রি তাই করলো
.
যাই হোক কলিংবেলে চাপ দিয়েছে তামিম,দরজা খুললো স্পর্শের বাবা,খুলেই সালাম দিয়ে রিহাবের বাবাকে এক পাশ করে বুকে জড়িয়ে ধরে একটা বিরাট হাসি দেখালেন,কোনোমতেই তাদের অপমান করবেন না তিনি,অপমান হতেও দেবেন না
.
রিম সবার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে,সে গাছের টবটার দিকে চেয়ে ছিল,আদিম কালে পানি দেওয়া হয়েছে মনে হয়
এক এক করে সবাই গিয়ে সোফায় বসতেছে,রিম বাসার ভেতর পা রাখতেই রোকসানা বেগমের সামনে পড়লো
তারপর কাঁপা গলায় বললো”আসসালামু আলাইকুম”
.
রোকসানা বেগম এমন মুখ করে রেখেছেন যেন পারছেন না এখনই রিমকে বের করে দেন তাও বুকে পাথর বিধে তিনি বললেন”ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,দাঁড়িয়ে আছো কেন,গিয়ে বসো”
.
রিম গিয়ে তামিমের পাশে বসলো
.
আসাদুজ্জামান তো খুশিতে আটখানা হয়ে রিমের বাবার সাথে কথা বলে যাচ্ছেন,রিহাব আজ বেশ নরমাল সাজে এসেছে,,তবে আঁখির পছন্দে
হালকা নীল পাঞ্জাবি,আঁখির এ রঙ অনেক পছন্দ বলে আজ সে ইচ্ছে করে এই রঙটাই পরেছে,বারবার সে সামনের রুমগুলোর দিকে তাকাচ্ছে,আঁখিকে দেখছে না তাও
রান্নাঘর থেকে আসমা আর রোকসানা বেগম ছোটাছুটি করে একবার এক খাবার এনে টেবিলের উপর রাখছেন
.
রিমের এবার স্পর্শের কথা মনে পড়লো,সে তামিমের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে সামনের রুমগুলোর দিকে তাকালো
তার জানা নেই ঠিক কোন রুমটা স্পর্শের
তাদের বাম পাশের রুমটা হচ্ছে রান্নাঘর,আর সামনের তিনটে রুমগুলোর কোণার রুমটা আঁখির,মাঝেরটা ওর মা বাবার,তার পরেরটা গেস্ট রুম,স্পর্শর রুম হলো ডান পাশে তাকালে যে রুমটা পড়ে ঠিক সেটা
রিমের কেন জানি মনে হলো এ রুমটাই স্পর্শের,কারণ ওপাশেই তার রুম পড়েছে,জানালা দিয়ে সেই কোণার রুমটা দেখা যায় তার মানে সেটাই স্পর্শের
.
আপু!
.
রিম ভাবনা থেকে বেরিয়ে তামিমের দিকে তাকিয়ে বললো”কি?”
.
এক নাম্বার
.
আসার সময় করে আসতে পারিসনি?
.
তখন তো এক নাম্বার আসে নাই
.
ধ্যাত,চল এখন
.
রিম তামিমের হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো,ওদিকে রিমকে উঠতে দেখে রোকসানা বেগমের কলিজায় কামড় দিছে,উনার একটাই উদ্দেশ্য স্পর্শ আর রিমকে কাছাকাছি থাকতে দিবেন না,উনি সাথে সাথে রিমের সামনে এসে বললেন”কি ব্যাপার কোথায় যাচ্ছো??”
.
রিম ইতস্তত বোধ নিয়ে বললো”তামিম একটু বাথরুমে যাবে,কোনদিকে একটু বলে দিন,আমি ওকে নিয়ে যাই”
.
রোকসানা বেগম পিছনে তাকিয়ে আসমাকে ডেকে বললেন তামিমকে নিয়ে যেতে
তামিম রিমের ওড়না ধরে ওর পিছনে লুকিয়ে বললো”এই খালাম্মার সাথে যাব না আমি,আপুর সাথে যাব”
.
রোকসানা বেগম ভৌতিক লুক নিয়ে তামিমের দিকে তাকিয়ে রইলেন,মনে মনে ভাবলেন,ভাইবোন ৩টে এক নাম্বারের নাছোড়বান্দা
.
আচ্ছা যাও,তুমি নিয়ে যাও,গেস্ট রুমের বাহিরের এটা ওয়াসরুম
.
আচ্ছা!
.
রিম তামিমকে নিয়ে সেদিকে গেলো,,সবাই সবার কথা বলা নিয়ে ব্যস্ত
রোকসানা বেগম অনেকক্ষণ পাহারা দিলেন রিমকে
পরে আসমা ডাকলো নুডুলসটা ঠিক করতে তাই তিনি চলে গেলেন,তামিম ও লেট করছে,রিম এদিক ওদিক তাকিয়ে স্পর্শদের বাসাটা পুরো দেখে যাচ্ছে,হঠাৎ একটা হাত রিমের হাত ধরে টান দিয়ে মূহুর্তেই গায়েব করে দিলো রিমকে সবার চোখের সামনে থেকে
.
রিম চিৎকার করতে যেতেই স্পর্শ ওর মুখে হাত দিয়ে ফেলে বললো”চুপ!আমি আমি,চিনো না?”
.
রিম ব্রু কুঁচকে তাকালো এবার,স্পর্শ কালো একটা শার্ট পরে আছে তার মানে আমার সন্দেহ ভুল,আমার হাতের চুড়ি পরা দেখেই উনি তাহলে জামা সেম পরতে পারেন প্রতিদিন
আর আজ চুড়ি পরিনি বলে মনে হয় গেস করতে পারে নাই
.
স্পর্শ মুচকি হেসে রিমঝিমের মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো”কি গো??আমার জামাটা এমন ভাবে দেখছো কেন”
.
রিম চমকে গিয়ে বললো”কিছু না,হাত ছাড়ুন!
.
রিম হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো,স্পর্শ আবার এগিয়ে এসে রিমের পাশের দেয়ালে হাত রাখলো তারপর আরেক হাত দিয়ে পকেট থেকে সবুজ রঙের চুড়ি এক ডজন বের করতে করতে বললো”তোমার কি সবুজ রঙের চুড়ি নেই?খালি হাতে এসেছে কেন,আজ তোমাকে চুড়ি পরতেও দেখলাম না,তুমি তো চুড়ি পরা মিস দাও না তাই ভাবছি হয়ত চুড়ি নাই তাই কিনে এনেছি,বাট আমি তো ঐবার তোমাকে সবুজ রঙের চুড়ি দিয়েছিলাম”
.
রিম একটু সরতে নিতেই স্পর্শ এবার দুহাত দেয়ালে রেখে দুইদিক থেকেই রিমকে আটকে ফেলে বললো”কথা শেষ করতে দাও”
.
কিসের কথা,আমার চুড়ি আছে,আমি জাস্ট ভুলে গিয়েছিলাম পরতে
.
তুমি সব ভুলে যাও তাও চুড়ি পরা ভুলো না,আর আমাকে এখন মানতে হবে তুমি ভুলে গেসিলা?সত্যি করে বলো
.
পথ ছাড়ুন আমার!.
.
“ছেড়ে দেবো,আগে খালি হাতগুলো পূর্ন তো করে দিই”
.
স্পর্শ মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে রিমের হাত ধরলো তারপর চুড়ি গুলো পরিয়ে দিলো সুন্দর মতন
সবসময় সঠিক মাপের চুড়ি কিনে সে রিমের জন্য
রিম মাঝে মাঝে ঘোরে চলে যায়,এত নিখুঁত ভাবে একটা মানুষ কি করে সব কিছু মনে রাখতে পারে,বুঝে নিতে পারে??
.
স্পর্শ রিমের হাত ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে গিয়ে বললো”দেখো আমার রুম,পুরোটা তো কখনো দেখোনি,এখন দেখো নাও
.
রিম মুখ বাঁকিয়ে দরজা ফাঁক করে চলে গেলো
.
তামিম সবেমাত্র বেরিয়েছে বাথরুম থেকে,রিম গিয়ে ওর হাত ধরতেই রোকসানা বেগম ও এসে হাজির
রিম তামিমকে নিয়ে গিয়ে আগের জায়গায় বসলো,রোকসানা বেগম আঁখিকে আনতে গেলেন
আঁখি আজ কমলা রঙের একটা সুতির শাড়ী পরেছে,মাথায় ঘোমটা টেনে সে সোফার রুমে আসলো মায়ের সাথে,মাথা তুলে সালাম দিয়ে আবারও মাথা নিচু করে ফেললো সে
.
রোকসানা বেগম ওকে ওর বাবার পাশে বসিয়ে দিয়ে নিজেও একটা চেয়ার টেনে বসলেন
স্পর্শ ডাইনিংয়ের কাছে একটা চেয়ারে বসে আছে চুপচাপ,তার চোখ রিমের দিকে
রিম এতক্ষণ ভালোই বসে ছিল,কিন্তু স্পর্শর এমন চাহনি তার ভালো ভাবে বসার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে,স্পর্শ একবার রিমের মাথার দিকে তাকায় তো রিম সাথে সাথে ঘোমটা টেনে ঠিক করে ফেলে,স্পর্শ আবার ওর হাতের দিকে তাকায় তো রিম চুড়িগুলো সমান করে ফেলে
আবার ওড়নার দিকে তাকায় তো,ওড়না ঠিক করে বসে রিম
রিমের এমন কাজ দেখে স্পর্শর খুব হাসি পাচ্ছে
.
দুপক্ষ কথা বলে শেষে সব মিটমাট হলো,এবং ফাইনাল ও হলো যে বিয়েটা হচ্ছে,আঁখি তো পারছে না উঠে লাফাচ্ছে,
বড়দের কথা শেষে রিহাব আর আঁখিকে একান্তে কথা বলতে দেওয়া হলো
আঁখির রুমে বিছানার এক পাশে রিহাব আরেক পাশে আঁখি বসে আছে
আঁখি লাফ দিয়ে উঠে দরজা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলো কেউ আছে কিনা,তারপর দৌড়ে রিহাবের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো
রিহাব ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো”এবার খুশিতো??”
.
অনেক!!
♣
তামিম এক দৌড়ে স্পর্শের রুমে চলে গেছে,স্পর্শ ও গেছে ওর পিছু পিছু
এদিকে রিম রোকসানা বেগমের মুখের দিকে চেয়ে রোবট হয়ে আছে
উনি কোথা থেকে এসে রিমের পাশে বসলেন তারপর রিমের হাত পা ভালো করে দেখতে থাকলেন
.
রিম বারবার ঢোক গিলছে,আর রোকসানা বেগমের চাহনি দেখে ওর মনে হচ্ছে রোকসানা বেগম ওকে চোখ দিয়ে গিলছে
যাই হোক অনেকক্ষণ ধরে রিমকে তিনি পর্যবেক্ষন করে তারপর মুখ ফুটালেন
বললেন”কিসে পড়ো তুমি? ”
.
অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে
.
ওহ!কয়টা ছেলে বন্ধু তোমার??
.
রিম খেয়াল করলো স্পর্শ এগিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে
.
(হাহা,এটা মোক্ষম সুযোগ রিম,হাতছাড়া করিস না)
.
রিম দাঁত কেলিয়ে বললো”ক্লাসে ছেলে বন্ধু একটা আছে,নাম নয়ন,,আর তমা আমার বান্ধুবী”
.
নয়ন??কিরকম বন্ধু তোমার??
.
রিম আড় চোখে স্পর্শর দিকে তাকালো,স্পর্শ ওর হাতের কব্জি কচলাচ্ছে রেগে রেগে
.
রিম মুচকি হেসে বললো”না তেমন না,তবে ওকে ভাল্লাগে,আচরন ঠাণ্ডা স্বভাবের”
.
আচ্ছা তাহলে তো ভালো,আমি তো আরও ভেবেছিলাম তোমার সাথে আমার ছেলের প্রেম চলে,এখন নিশ্চিত হলাম একটু!
.
রোকসানা বেগম মনের সুখে চলে গেলেন রান্নাঘরের দিকে
.
স্পর্শ রেগে শেষ,আসলে রিমের ভার্সিটির ভেতর কি হয় তা সে জানে না,তবে রিম কি মিথ্যা বললো নাকি সত্যি বললো?? তাই বুঝছে না সে
.
রিমঝিম রিহাবের ফোনটার দিকে চেয়ে আছে,রিহাব ফোন টেবিলের উপর রেখে গেছে
রিম ফোনটা নিয়ে কিসব করলো তারপর কানে দিয়ে স্পর্শর পাশ দিয়ে যেতে যেতে বললো”হ্যালো নয়ন???কাল আমাদের প্রথম ক্লাস কোনটা??তুমি আসবা তো???”
.
স্পর্শ রেগে আগুন,সে হাত মুঠো করে রিমের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গেলো সেদিকে
চলবে♥