দু মুঠো বিকেল পর্ব-০১

0
5233

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#সূচনা_পর্ব
Writer-Afnan Lara

আমার সারাটাদিন মেঘলা আকাশশশশ, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
শুধু….
আজকেও কেন মনের ভেতরটা সাঁই দিচ্ছে যে লোকটা আমার আাশে পাশেই আছে
কিন্তু কই আমি তো দেখছি না! যা বুঝলাম এটা আবারও সেই মনের ভ্রম
.
ভাবনা থেকে বেরিয়ে মেয়েটি ছাতা ঠিক করে আবারও হেঁটে চললো, হাতে তার এক ঝুড়ি আপেল,ফুফুর বাড়ি থেকে ফেরার সময় ফুফু তার শৌখিন আপেল গাছটা থেকে আপেল পেড়ে দিয়েছে তার হাতে,সে যেন তার বাবার হাতে দেয়,তার বাবার আপেল অনেক পছন্দ
সবুজ রঙের মিনি সাইজের আপেলগুলো দেখতে একদম নজরকাড়া,খেতেও বেশ
মেয়েটা একবার আপেলের দিকে তাকাচ্ছে আবার পিচ্ছিল পথটার দিকে তাকাচ্ছে
আপেলগুলোর প্রতি লোভ হয় তবে তার দায়িত্ব যেটা সেটাই করতে হবে,তা নাহলে কথার মান রাখা হবে না
বাবাকে দেওয়ার পর নাহয় একটা নেবো
.
প্লাজোটা খানিকটা উঠিয়ে হাঁটতেছে মেয়েটি,মাঝে মাঝে পিছলিয়ে পড়ে যাওয়া ধরে আবারও সামলে নেয় নিজেকে,অনেকটা পথ হাঁটতে হবে এখনও
বৃষ্টির মধ্যে এই এক জ্বালা,সহজে রিকসা পাওয়া যায় না তার উপর অন্য কোনো যানবাহন ও চোখে পড়ছে না,শূন্য একটা পথ দিয়ে হেঁটে চলছে সে,মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়া এসে গায়ে লাগলেই থেমে যায় মেয়েটি
বাতাসের শক্তি ভেদ করে হাঁটা টা জটিল,আর আমি তো শুকনা মানুষ,যদি উড়ে যাই,আমি না যাই আমার ছাতাটা যদি উড়ে যায়?তাহলে পুরো পথটা ভিজে যেতে হবে
সন্ধ্যা হতে আর এক কি ২ঘন্টা বাকি,জলদি করে হাঁটতে হবে আমাকে
আর একটু!
রাস্তায় পানি নেই তবে জুতোয় আমার পানিতে ভর্তি,প্রতিবার পা রাখতেই প্যাচ প্যাচ করে শব্দ করে
ভালো ও লাগে আবার বিরক্ত ও লাগে,বৃষ্টির যেমন ভালোলাগার দিক আছে আবার বিরক্তিকর দিক ও আছে
আমি এখন দুটোই অনুভব করছি
আর ২০/২২কদম পার হলেই আমার বাসা এসে যাবে,গলিতে ঢুকে পড়েছি অলরেডি
দোকানপাট খোলা তবে সেখানে কোনো ক্রেতা নাই,শুধু বসে আছেন বিক্রেতারা
যতই এগোচ্ছি ততই বুকের ভেতরটার ডিপডিপ বেড়ে যাচ্ছে,এখন এই মূহুর্তে সে কেন থাকবে?
আর আমার মন কেন বলছে সে এখানে আছে?
এসব ভেবে মেয়েটা হাত দিয়ে কুঁচকানো প্লাজোর খানিক অংশটা ছেড়ে দিলো
প্লাজোটা আবারও সেই ভেজা রোড ছুঁয়ে ফেলেছে সাথে সাথে
মেয়েটা ছাতা দিয়ে মুখটা ঢাকার চেষ্টা করে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো
আর ৭কদম গেলে বাড়ি,তবে এই ৭কদমে হয়ে গেলো বিপত্তি
যেটার ভয় পেয়েছিলাম এতক্ষণ ধরে ঠিক সেটাই হলো
আমার হাত না ধরুক ঝুড়িটা ধরে ফেলেছে সে
আমি পিছনে তাকানোর সাহস পাইনি,চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়েছি
যে ধরেছে সে ঝুড়ি থেকে একটা আপেল নিয়ে ঝুড়ি ছেড়ে দিলো তারপর শুধু একটা কথাই বললো আর সেটা হলো”যাও”
.
মেয়েটি আর ১সেকেন্ড ও দেরি না করে ৪তলা বাড়িটার ভিতর চলে গেছে,তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি বেয়ে উপরেও চলে গেছে সে আর পিছনে তাকালো না,একটিবার থামলো ও না
এখন তার একটাই লক্ষ্য আর সেটা হলো নিজের বাসার ভেতর অবস্থান নেওয়া
২তলায় তাদের বাসা,এখানে ভাড়া থাকে তারা,মেয়েটি এবং তার বড় একটা ভাই, ছোট একটা ভাই আর মা বাবাকে নিয়ে তাদের পরিবার,বাবা আর বড় ভাইয়ের চাকরিতে সংসার চলে তাদের
মেয়েটি দরজায় টোকা দিয়ে ঝুড়িটা নিচে ফ্লোরে রেখে ওড়না দিয়ে মুখ মুছলো কারণ একে তো বৃষ্টির পানি আরেক তো কিছুক্ষন আগের ঘটনায় ভয়ে কপাল ঘেমে গেছে তার
তারপর হাত থেকে ছাতাটা নিয়ে অফ করে ছাতাটাও একপাশে হেলান দিয়ে রেখে দিলো সে
৫মিনিট পর একটা ৬বছরের ছেলে এসে দরজা খুললো
সে তার আপুর দিকে না তাকিয়ে নিচে রাখা ঝুড়িটার উপর হামলিয়ে পড়লো দেরি না করে
মেয়েটি মুচকি হেসে ভিতরে চলে গিয়ে মাকে ডাক দিলো একবার তারপর নিজের রুমে এসে খোঁপা থেকে কাঠি খুলে চুলগুলো ছেড়ে দিলো
চুলগুলো ভিজে গেছে,ঝাড়তে ঝাড়তে সে বারান্দার দিকে তাকালো,বারান্দার দরজা লাগাতে হবে,সন্ধ্যা নেমে গেছে
সেদিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তার কি যেন মনে পড়লো তারপর আরও ৫/৬কদম পিছিয়ে গেলো সে
গভীর চিন্তাভাবনা করে সে তার ছোট ভাইটাকে ডাকতে ডাকতে চলে গেলো ডাইনিং রুমের দিকে
.
তামিম!
.
হুম আপু বলো,আপেল গুলো কিন্তু অনেক মজার,ফুফির বাগানের বুঝি?
.
হুম,যাও তো আমার বারান্দার দরজাটা লাগিয়ে আসো,ছিটকিনি নিচের টা লাগিও,উপরেরটা লাগাতে তোমার চেয়ার আর মোড়ার প্রয়োজন লাগে,এত খাটনির দরকার নেই শুধু নিচের ছিটকিনি লাগালেই হবে
.
কেন আপু?
.
যা বলছি করো,মা কোথায়?
.
মা তো বাথরুমে!
.
এটা বলেই তামিম চেয়ার থেকে নেমে আপেল খেতে খেতে তার আপুর বারান্দায় এসে এদিক ওদিক তাকালো,তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখে চোখ বড় করে লুকিয়ে পড়লো সে
গুটি গুটি হামাগুড়ি দিতে দিতে বারান্দা দিয়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে এক দৌড় দিলো তামিম
মেয়েটি সোফায় পা তুলে বসে টিভি চালিয়ে একটা কার্টুন দেখছিল
তামিম দৌড়ে এসে মেয়েটির কোলে বসে বললো”আপু আপু!! সে নিচে দাঁড়িয়ে আছে”
.
কথাটা শুনে মেয়েটির মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো মূহুর্তেই,চুপ করে থেকে বাইরের আবহাওয়া খেয়াল করলো সে
ঝুম বৃষ্টি,কোনো থামাথামি নেই
আর মেয়েটি খুব ভালো করে জানে সে বারান্দায় না দাঁড়ালে ছেলেটি এখান থেকে যাবে না,বৃষ্টি হলে হোক
তুফান হলে হোক,এক বিন্দু ও নড়বে না
মেয়েটি তাও গেলো না,চুপ করে টিভির দিকে চেয়ে রইলো
.
কিরে রিম কখন এলি?
.
টিভির দিকে তাকিয়েই রিম বললো”মাত্রই”
.
আপেলগুলো তো বেশ তাজা মনে হচ্ছে!
.
মা আপেলগুলোর ঝুড়িটা নিয়ে রান্নাঘরে যেতে যেতে বললেন”তামিম তুই বুঝি আপেল না ধুয়েই খেয়েছিস?”
.
তামিম সোফার নিচ থেকে একটা আপেলের বিচি নিয়ে সেটা পকেটে ঢুকিয়ে বললো”আমি এখনও একটাও খাইনি আম্মু,সত্যি বলছি”
.
রিমঝিম উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে সোফা থেকে,তারপর টেবিল থেকে পানি নিয়ে খেলো চুপচাপ
ঘুরেফিরে আবারও সোফার রুমের জানালাটা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো সে,বৃষ্টি এখনও সেই আগের সাইজেই আছে,কমছে না কেন!
রিম বিরক্ত হয়ে খোঁপা করতে করতে তার রুমে আসলো,গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে বারান্দার দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো সে,প্রচণ্ড রকম বিরক্তি নিয়ে দরজাটা খুললো এবার
সন্ধ্যাবেলা বলে মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিলো
তারপর নিচের দিকে তাকিয়েই বারান্দায় পা রাখলো
বাসার সামনে আরেকটা বাসা,মাঝখান দিয়ে চিপা গলি
রিম বামপাশে তাকিয়ে আছে,তারপর বড় করে শ্বাস নিয়ে ডান পাশে মুখ ঘুরিয়ে নিচে তাকালো,তার বরাবর নিচে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে
পরনে সাদা ফুল শার্ট,বোতাম নিচের ২টো লাগিয়েছে সে,বাকিগুলো খোলা,শার্টটা মনে হয় এই বুঝি পড়ে যাবে,অবশ্য ভিতরে একটা গেঞ্জিও পরেছে সে
ফুল শার্টটার হাতগুলো গুটিয়ে কুনুই পর্যন্ত এনে রেখেছে সে
শার্টটার সাথে আবার জিন্স ও পরেছে,১৪/১৫ছেঁড়া
ডিজাইন,অভাবে নয় স্বভাবে!
রিমকে দেখেই তার ঠোঁট জোড়া নড়েছড়ে একদম টাইট হয়ে গেছে
এক গাল হাসি দিয়ে সে রিমের দিকে তাকিয়ে আছে,এত এত বৃষ্টিতে সে স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে দোতলার বারান্দার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে পারছে বেশ
.
২মিনিট তাকিয়ে থেকে সে ব্রুটা কুঁচকালো তারপর একটু এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো কোমড়ে হাত দিয়ে
রিমের হাতের সবগুলো পশম দাঁড়িয়ে গেছে ভয়ের চোটে
সে বুঝেছে ছেলেটার এগিয়ে আসার কারণ
তাই ঘোমটার ভিতরে হাত নিয়ে খোঁপাটা খুলে ফেললো সে
চুল গুলো ছড়িয়ে যেতেই ছেলেটা মুচকি হেসে আবারও আগের জায়গায় পিছিয়ে চলে আসলো,তার চোখ এখনও রিমের দিকে
রিমের সারাটা দেহ কাঁপছে,আর পারছে না সে দাঁড়িয়ে থাকতে,৫মিনিট কখন হবে!
.
ছেলেটা হাতের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে মাথার চুলগুলো ঝেড়ে নিলো মাথা হেলিয়ে দুলিয়ে
তারপর হাত দিয়ে ভেজা মুখ মুছতে মুছতে সোজা হেঁটে চলে গেলো,হাত দুলিয়ে দুলিয়ে বৃষ্টির মধ্যে সে হেঁটে চলেছে
রিম বড় করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ছেলেটার চলে যাওয়া দেখে নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ফেললো

স্পর্শ ভাই!
.
ছেলেটা থেমে গিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে বললো”কি?”
.
একটা লুঙ্গি পরা ছেলে ছাতা নিয়ে দৌড়ে এসে স্পর্শের মাথার উপর ধরে বললো”ভাই বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট দিয়েন না আমাদের,একটামাত্র কলিজা আপনি আমাদের,আপনার যদি জ্বর সর্দি দেখা দেয় এই মহল্লা গরম আগুন হয়ে যাবে,তারপর ব্লাস্ট!
.
কিছু হবে না আমার,চল চা খাবো আজ
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে