দুপাতার পদ্ম পর্ব-২২+২৩

0
702

#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_২২
#Writer_Fatema_Khan

মেহেরের কথায় আয়াত পেছনে ফিরে তাকায়। মেহের আয়াতের চোখের দিকেই তাকিয়ে আছে। আয়াত এগিয়ে গিয়ে মেহেরের সামনে তাকায়৷ মেহের আয়াতকে এগিয়ে আসতে দেখে বলে,
“আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে এখন ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন। আমারও খুব ঘুম আসছে, আমার ঘুমানো দরকার।”
“এতক্ষণ ঘুম আসেনি বুঝি?”
“আমি তো এতক্ষণ বই পড়ছিলাম। হঠাৎ বাইকের শব্দ শুনেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখি আপনি মাত্র এসেছেন। আমিতো ভাবিতেই পারছিনা আপনি এত রাত অবদি বাইরে ছিলেন!”
“আমি তো এমন অনেক কিছুই করতে জানি যা তোমার চিন্তা ভাবনার বাইরে।”
“কিহ!”
“কিছুনা। আমি জানি তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে না। আমি এটাও জানি তুমি বারবার ঘড়িতে সময়ও দেখছিলে না। তুমি মাত্র বাইকের শব্দ শুনেই আমাকে শাসাতে এসেছ।”
“আমি আপনাকে কখন শাসালাম? আমি তো শুধু বাবা আর চাচার কথা বললাম। এটাকে কেউ শাসানো বলে?”
আচ্ছা আমার কথা বাদ দাও, কাসফিকে বকেছ কেনো? পিচ্চিটার মন খারাপ হয়ে গেছিলো। কত কষ্টে মন ঠিক করতে হয়েছে। এভাবে কেউ পড়ায় মন বসায় নাকি?”
“তো কিভাবে মন বসাতে হয় পড়ায়?”
“ব্যবসা তুমি করো এসব তো তোমার বেশি জানার কথা। আমি তো সামান্য লেকচারার।”
“মানে?”
“ব্যবসায়ে তোমরা যেমন ক্লাইন্টের সাথে ডিল করো, ঠিক তেমনি আমার আর কাসফির মাঝেও একটা ডিল হয়েছে।”
“কি ধরনের ডিল?”
“সেটা আমার আর কাসফির ব্যাপার। তোমার না জানলেও চলবে।”
“আমাকে বলুন কি ডিল হয়েছে আপনাদের দুইজনের।”
“সে যেটাই হোক। কাসফি যদি নেক্সট এক্সামে ভালো রেজাল্ট করে তাহলেই তো হলো তাই না। আর আমার বিশ্বাস আছে এবার কাসফি ভালো রেজাল্ট করবে।”
“এতটা কনফিডেন্ট তাও আবার কাসফির উপর। যে কিনা পড়েই না।”
আয়াত মেহেরের দিকে এগিয়ে এসে কিছুটা ঝুকে কানের কাছে মুখ এনে বলে,
“কাসফি ভালো রেজাল্ট করবে। এখন কথা হলো কাসফি যদি ভালো রেজাল্ট করে দেখায় সে তো তার পুরস্কার পেয়ে যাবে। কিন্তু আমি যে তার পেছনে আছি এটা আর কেউ না জানুক তুমি তো জানো। তাহলে আমি কি পাব?”
“মানে?”
“মানে খুব সোজা। কাসফি আমার থেকে কিছু পেলে আমি তার বোন থেকে কিছু পাওনা হই। তাই কাসফি ভালো রেজাল্ট করলে কাসফির রাগী মুড নিয়ে থাকা বোন আমাকে কিছু দিবে।”
“আমি কি দিব!”
কাপা গলায় বললো মেহের।
“কাসফি বললো তুমি নাকি রাগী মুডে থাকো সবসময়, আবার বকাঝকা করো। তা আমি কাছে আসলে রাগী মুড আর বকাবকি থেকে কাপাকাপি শুরু হয়ে যায় কেনো? আর সময় হলে আমার পাওনা আমি নিজেই নিয়ে নিব। আর তুমি তা দিতে বাধ্য হবে।”
আয়াত গটগট করে সিড়ি বেয়ে ছাদের দিকে এগিয়ে গেলো। মেহের নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে আয়নার দিকে তাকালো৷ কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে আর গাল দুটি রক্তিমা বর্ণ ধারণ করেছে। মেহের নিজের গালে হাত রেখে ভাবে,
“তার গাল দুটি এত লাল হলো কি করে, লজ্জায় নাকি রাগে? রাগ তো অনুভব হচ্ছে না। তবে কি লজ্জায়। আয়াতের কথায় আমার লজ্জা পায়। আমিও কোনো কোন দিক দিয়ে আয়াতের উপর দুর্বল হয়ে পরছি নাতো?”
এসব ভাবনার মাঝেই মেহেরের মোবাইলে কল আসলো। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে আয়াতের নাম্বার। রিসিভ করলে ওপাশ থেকে বলে,
“এতটা প্রেশার দিও না মাথায়। একটু ঘুমাও না হলে সকালে অফিস যাবে কি করে। আর একটা কথা। তুমি যা ভাবছো সেটাই সত্যি। এখন তুমি হয়তো ভাবছো আমি কি করে জানি, আমি জানি কারণ তোমার ওই রক্তিম আভাযুক্ত গাল দুটি দেখে। যা দেখার পর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব হয় নি৷ মেহের ঘুমিয়ে পরো আর প্লিজ আমাকেও একটু ঘুমাতে দেও। তুমি কেন আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছ বলতে পারো? ভালোবাসি মেহের খুব ভালোবাসি। তুমি কেন এতটা দূরে দূরে থাক, আগে তো সামনে দেখা হলেও পেতাম। চোখের পিপাসা তো মিটে যেত। আর এখন তুমি এত লুকিয়ে বেড়াও যে চোখের পিপাসাও মেটানো দায় হয়ে পরেছে। আমি জানি তুমি আব শুনতে পারছো কিন্তু ওই যে তোমার মুখে এখন কোনো কথা ফুটবে না। আমি সত্যি তোমাকে এত রাতে আশা করি নি। আমি ভেবেছি তুমি ঘুমিয়ে পরেছ। ধন্যবাদ তোমাকে। ধন্যবাদ কেন দিলাম জানো, তুমি অপেক্ষা করে ছিলে বলে না। তুমি গ্রাম থেকে আসার এই আজকেই আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলেছ। সামনাসামনি তোমাকে কিছু সময়ের জন্য হলেও মন ভরে দেখেছি। আচ্ছা শুভ রাত্রি আমার প্রেয়সী। আজ সত্যি খুব ভালো ঘুম হবে, তবে সেটা আমার একার। তোমার তো ঘুম উড়ে গেছে সেটা আমিও জানি। তবুও বলছি ঘুমিয়ে পরো প্রেয়সী।”
ফোন কাটার পর মেহের জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। এতক্ষণ যেনো শ্বাস আটকে বসে কথা শুনছিল আয়াতের। কল কাটতেই শ্বাস আবার নেওয়া শুরু করেছে। তবে আয়াতের সবগুলো কথাই সত্যি। মেহের নিজেও জানে সে আয়াতের প্রতি দূর্বল হয়ে পরছে। আবার আজ রাতে যে তার ঘুম হবে না এটাও সে নিশ্চিত। তবুও ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিয়ে বিছানার এক কোণে শুয়ে পরলো৷ এপাশ ওপাশ করতে করতে ভোর হয়ে গেলো। আজানের শব্দ কানে আসছে মেহেরের। তবে চোখে তার এক ফোটাও ঘুম নেই। আজ আর ঘুম আসবে না ভেবে শোয়া থেকে উঠে ওজু করতে চলে গেলো৷ নিজের নামাজ আদায় করে ঘরে বসেই কোরআন শরিফ পড়ছিল মেহের। নিজের মনকে শান্ত করার জন্য নামাজ আর কোরআন পাঠের তুলনা হয় না।

অক্টোবরের মাঝামাঝি চলছে। এই সময় গ্রামে হালকা শীত পরলেও শহরে শীতের দেখা সাক্ষাৎ পাওয়া দুর্লভ। তার উপর অসময়ে যদি হয় বৃষ্টি। বৃষ্টি এমন একটা জিনিস যা মানুষের অপছন্দের তালিকায় জায়গা পায় না৷ সবারই বৃষ্টি পছন্দ। তবে কাজের চাপে হয়তো অনেকের ভেজা হয় না সহজে৷ মেহের গাড়ি নিজে চালিয়ে যাচ্ছে, উদ্দেশ্য আয়াতের অফিস। তবে নিজে ইচ্ছায় যাচ্ছে না সে, যথাসম্ভব আয়াতের থেকে লুকিয়ে চলে সে। আয়াতের প্রতি তার দিন দিন দূর্বল হয়ে পরা এটা সে নিজেও অস্বীকার করতে পারে না। দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি হচ্ছে, এদিকে আয়াত না নিজের বাইক নিয়েছে না নিয়েছে ছাতা। তাই আয়াতের মা মেহেরকে কল করে বলে দিয়েছে আসার সময় আয়াতকে নিয়ে আসতে বাসায়। মেহের চেয়েও মানা করতে পারে নি, তাই এককথায় বাধ্য হয়েই আয়াতের ভার্সিটির পথে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। গাড়ি এসে থামল গেইটের সামনে। আয়াতকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
“এই আয়াত কই, ওর তো ক্লাস শেষ হওয়ার কথা অনেক আগেই। আর চাচী তো বললো মা আয়াতকে কল করে বলে দিয়েছে যে আমি আসব। তাহলে এখনো কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেন?”
এসব ভাবতে ভাবতেই মেহের ছাতা নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। মেহেরের ধারণা আয়াত যেহেতু ছাতা আনে নি তাই ভেতরেই আছে এখনো। আর যা বৃষ্টি পরছে ভেতর থেকে বের হলেই পুরো ভিজে যাবে। এসব ভাবনা চিন্তা করতে করতে ভার্সিটির গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। বৃষ্টির কারণে তেমন একটা টিচার চোখে পরছে না, তবে বেশ কিছু স্টুডেন্ট দেখা যাচ্ছে। কেউ ভেতরে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখায় মগ্ন, কেউ বা ছাতা নিয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষারত, কেউ বা আড্ডায় মেতেছে এক কোণায়। মেহের আস্তে আস্তে হেঁটে মাঠের মাঝে এসে গেছে। মাঠের মাঝে বেশকিছু স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে আছে। সবার মাথায় মোটামুটি ছাতা রাখা তাই ভালো করে বুঝা যাচ্ছে না ওখানে হচ্ছে টা কি। কি হচ্ছে দেখার জন্য মেহের এগিয়ে গেলো ভিড়ের দিকে। সবাই কেমন নিজেদের ভেতর হাসাহাসি আর কানাকানি করছে। মেহেরের মন কু ডাকছে আয়াতের আবার কিছু হলো না তো? মেহের ভিড়ের কাছে গিয়ে একটু ঠেলেই সামনে এগিয়ে গেলো। ওইখানে এমন কিছু দেখবে তা মেহেরের কল্পনারও বাইরে ছিল৷ মেহের কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সামনে চলমান মুহূর্তের দিকে তাকিয়ে ছিল। সবার হাসাহাসিতে আবার হুশ ফিরে এলো মেহেরের। মেহের একবার চোখ নামিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে বললো,
“আয়াত।”
মেহেরের কণ্ঠস্বর আচমকাই শুনে আয়াত পাশে তাকিয়ে দেখে মেহের তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আয়াত যেনো মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কি বলবে সে মেহেরকে। নিরবতা ভেঙে মেহের আবার বললো,
“আয়াত আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি। আপনি আসুন।”

চলবে,,,,,

#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_২৩
#Writer_Fatema_Khan

মেহেরের কণ্ঠস্বর আচমকাই শুনে আয়াত পাশে তাকিয়ে দেখে মেহের তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আয়াত যেনো মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কি বলবে সে মেহেরকে। নিরবতা ভেঙে মেহের আবার বললো,
“আয়াত আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি। আপনি আসুন।”
মেহের আর পেছনে না তাকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। বৃষ্টির মাত্রা যেনো আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেলো৷ আয়াত পুরাই স্তব্ধ মেহেরকে দেখে। এমন একটা পরিস্থিতিতে পরতে হবে তাও এত স্টুডেন্ট এর সামনে। তার চেয়ে বড় কথা মেহেরের সামনে। আয়াত নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো তাকে জড়িয়ে ধরে আছে আরশি নামক এক স্টুডেন্ট। যে কিনা কিছুক্ষণ আগেই আয়াতকে প্রপোজ করেছে। এমন বৃষ্টির মাঝেই হঠাৎ করে যে আরশি আয়াতকে জড়িয়ে ধরবে তা কস্মিনকালেও চিন্তা করে নি আয়াত। সে তো মেহেরের আসার অপেক্ষা করছিল। এসব ভেবেই আরশির দিকে রেগে তাকায় আয়াত। আর এম ঝাটকায় নিজের কাছ থেকে দূরে সদিয়ে দেয় আর বলে,
“আরশি তুমি খুব ভালো স্টুডেন্ট এটা সবাই জানে। তারমানে এই না যে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারো৷ আর আমি তো শিক্ষক হই। এই ভার্সিটিতে আমার একটা সম্মান আছে যার তুমি একটুও মূল্যয়ান করোনি। উলটা আমাকে ভালোবাসায় পাঠ পড়াতে এসেছো। নেক্সট টাইম এমন কিছু করতে দেখলে তোমার বিরুদ্ধে আমি স্টেপ নিতে বাধ্য হব।”
“কিন্তু স্যার আমি যে মন থেকে আপনাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।”
“এই মন থেকে আমাকে মুছে আবার পড়ায় মনোযোগ দাও, এতে তোমার নিজেরই লাভ হবে। আর আমার পেছনে ঘুরে নিজেকে কষ্ট দেওয়া ছাড়া আর কিছু পাবে বলে মনে হয় না। সো আমার স্টুডেন্ট তুমি এটা আমাকে ভুলতে বাধ্য করো না। আশা করি নিজের শিক্ষককে সঠিক সম্মানটুকু দিবে।”
“স্যার আমার একটা কথা শুনুন।”
“আর কিছু শোনা বা বলার নেই।”
আর কিছু বলতে না দিয়ে আয়াত সামনে গেইটের দিকে এগিয়ে গেলো। আয়াতের কথা শুনে ফুফিয়ে কাদতে থাকে। অনেকটা বিরক্ত হয়েই মাঠ ত্যাগ করে আয়াত। গাড়ির কাছে এসেই দেখে মেহের সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবছে। আয়াত আর কিছুই না ভেবে গাড়িতে উঠে বসলো। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মেহের চোখ খুললো। পাশে না তাকিয়েই বুঝতে পারল আয়াত এসেছে। কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো। কিছুটা যাওয়ার পর আয়াত মেহেরের দিকে তাকিয়ে বললো,
“মেহের গাড়ি থামাও।”
মেহের কিছু না বলেই গাড়ি চালাতে লাগলো। আয়াত স্টিয়ারিং এর উপর মেহেরের হাতের উপর হাত রাখলো। সাথে সাথে মেহের গাড়ি থামালো। মেহের আয়াতের দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো,
“কি হলো বাসায় যাবেন না বুঝি, নাকি অনেক কাজ এখনো বাকি আছে?”
“মেহের তুমি যা ভাবছো আসলে তেমন কিছুই নয়। আসলে আরশি আমাকে এভাবে সবার সামনে জড়িয়ে ধরবে তা আমার চিন্তার বাইরে ছিলো। আর ওই সময় তুমিও সেখানে উপস্থিত হবে সেটাও আমার ধারণায় ছিলো না। আমিতো তোমার জন্যই বাইরে আসছিলাম হঠাৎ করে আরশি কোথা থেকে এসে আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার কথা বলবে আমি সত্যি বুঝতে পারি নি। আমি নিজেও অনেকটা অবাক হয়েছি ওর মতো ভালো স্টুডেন্ট এমন একটা কাজ কি করে করতে পারে!”
“আমি ওই সময় মাঠে গিয়ে উপস্থিত হয়ে বুঝি আপনার প্রেমে বেঘাত ঘটালাম?”
“তুমি কিন্তু আমাকে ভুল বুঝছো মেহের।”
“আর আমাকেই বা এত কৈফিয়ত দেওয়ার কি আছে আপনার?”
“আমি তোমাকে কৈফিয়ত দিচ্ছে না, তুমি আমাকে ভুল বুঝছো তাই ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করছি মাত্র। কিন্তু তুমিতো আমার কথাই বুঝতে চাইছো না। কেনো বুঝো না তুমি আমাকে ভুল বুঝলে আমার খুব কষ্ট হয়।”
“স্টিয়ারিং এর উপর থেকে হাত সরান। আমার বাসায় যেতে হবে। আর আপনি নিজেও ভিজে গেছেন এখন বাসায় না গেলে আপনার জ্বর আসবে। আর জ্বর আসলে কাল ভার্সিটি আসবেন কি করে? আর না আসলে আরশির সাথেও দেখা হবে না।”
আয়াত আর কিছু না বলে মেহেরের হাতের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয়। মেহের আয়াতের হাত সরানো দেখে তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো৷ বাসায় পৌঁছেই আয়াত গাড়ি থেকে নেমে বার কয়েক কলিংবেল বাজাতে থাকলো। আয়াতের মা রান্নাঘরে ছিলেন সবার জন্য বিকেলের নাশতা বানাচ্ছিলেন, তাই রান্নাঘর থেকে আসতে আসতে আরও কয়েকবার কলিং বেল বাজালো। তিনি দরজা খুলে আয়াতকে কাক ভেজা দেখে বললেন,
“কিরে বাবা ভিজলি কি করে, মেহের তো তোকে আনতে যাবে বললো। ওর বুঝি দেরি হয়ে গেছে যেতে যেতে?”
“না মা মেহেরের দেরি হয় নি, আমারই বড্ড তাড়া ছিল তাই ভিজে গেছি৷”
আয়াতের কথা না বুঝতে পেরে তিনি আরও কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই আয়াত ভেতরে চলে গেলো। মেহেরকে ছাতা নিয়ে আসতে দেখে তিনি বললেন,
“হে রে মেহের এই আয়াতের আবার কি হলো?”
“জানি না চাচী। আমি ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি।”
তিনিও আর কথা না বাড়িয়ে দরজা আটকে রান্নাঘরের দিকে গেলেন৷ বিকেলে সবাইকে চা আর নাশতার জন্য ডাকা হলো। সবাই নিচে উপস্থিত থাকলেও আয়াত আসেনি। মেহের বারবার আড়চোখে সিড়ির দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু তার আসার নাম নেই। ট্রে করে গরম গরম চা এনে রাখলেন মেহেরের মা আর তার পেছনে আয়াতের মাও এসে বসলেন সোফায়৷ আয়াতের বাবা আয়াতকে না দেখে প্রশ্ন করলেন,
“আয়াত বাসায় নেই বুঝি আয়াতের মা?”
“আসলে কি বলো তো ছেলেটা দিন দিন একদম কারো কথা শুনে না। নিজের মর্জি অনুযায়ী চলে। এই বৃষ্টি দিয়ে তোকে ভিজতে কে বলেছে, মেহের তো যাবেই শুনেছে তবুও ভিজলো। আর এখন নিচে না থেকে সোজা ছাদের ঘরটাতে চলে গেছে। এত্ত বেপরোয়া হলে চলে নাকি বলো”
“শুনলে আয়াতের মা ছেলের বিয়ের বয়স হয়েছে তাই এমন করছে। বিয়ে দিয়ে দিলেই বেপরোয়া গিরী বের হয়ে যাবে।”
মেহেরের বাবার কথার প্রতিত্তোরে মেহেরের মা বললেন,
“তোমার মেয়েকে বুঝাও তাহলেই হয়। ছেলেটাকে আর কত কষ্ট দিবে কে জানে? ছেলেটা সারাদিন ওর থেকে দূরে দূরে থাকে যাতে করে ওর বাসায় কোনো অসুবিধা না হয়। ও কি বুঝে এসব।”
মায়ের এমন কথায় মেহের কি বলবে বুঝতে পারে না৷ তবে চাপা রাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। আর এক মিনিটও না দাঁড়িয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো৷ নিজের ঘরে এসে দরজা আটকে নিজেই ভাবতে লাগলো,
“আমি কি বলেছি তোমাদের ছেলেকে আমার জন্য বাসা থেকে দূরে থাকতে, আর না আমি কাউকে কষ্ট দিচ্ছি? তাহলে মা তুমি কি করে এ কথা বলতে পারো, এদিকে তোমাদের ছেলে যে আরেক জনকে মন দিয়ে বসে আছে সেই খবর কি জানো তোমরা? জানো না, আর না সেই খবর রাখার চেষ্টা করো। সবাই আমাকেই কেনো টেনে আনে সব সময়। আমিতো বলিনি আয়াতকে আমাকে ভালোবাসতে, আর আমাকে ভালোবাসলে আজ কি ছিলো এটা, পুরো ভার্সিটির সামনে একটা মেয়ের সাথে এমন অবস্থায়। আমি ভাবতেও পারছি না ওই ঘটনা। বারবারই চোখের সামনে ভেসে উঠছে।”

রাতে খাবার টেবিলেও আয়াতে খেতে আসে নি। বৃষ্টি কমে গেছে অনেক আগেই। আয়াতের মা ছাদে গিয়েছিলেন আরও আগে আয়াতকে ডাকতে। কিন্তু আয়াত দরজা পর্যন্ত খোলে নি। শুধু ভেতর থেকে বলেছে তার ভালো লাগছে না খিদে নেই খাবে না। সবাই যার যার খাবার খেয়ে নিজেদের ঘরে চলে গেলো। খাবার টেবিলের সামনে আয়াতের মা, মেহেরের মা আর মেহের সব গুছাচ্ছে৷ মেহেরের মা বললেন,
“আমেন তুই কাজ কর বোন একটা প্লেটে করে খাবার নিয়ে আয়াতকে খাইয়ে দিস। ছেলেটা সেই সকালে খেয়ে গেছে দুপুরে কিছু খেয়েছে নাকি খায়নি সেটাও জানি না আমরা। আর বিকেল থেকেও কিছুই পেটে পরেনি৷ এভাবে না খেয়ে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে৷ তাই কিছু খাইয়ে দিস৷”
“আমিও তাই ভাবছি ভাবি।”
মেহেরের মা আয়াতের মায়ের সাথে টেবিল গুছিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন৷ একটা প্লেটে ভাত তরকারি বেড়ে নিলেন আমেনা বেগম। মেহের এগিয়ে গিয়ে বললো,
“চাচী তুমি নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পরো আমি না হয় আয়াতের জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছি। আর মাহি তো এখন কাসফির সাথেই আছে। ততক্ষণে আমি আয়াতের খাবারটা নিয়ে আয়াতের কাছে যাই।”
প্রশস্ত হাসলেন আমেনা বেগম। নিজের মনে এ কথা ভাবলেও মেহেরকে তিনি বলেন নি। কারণ মেহেরকে তিনি কোনো ব্যাপারে জোর করতে চান না৷ কারণ আয়াত বলেছে মেহেরকে কোনো ব্যাপারে জোর না করতে। সে নিজে থেকেই যদি আয়াতের জন্য কিছু করতে চায় তাহলে ঠিক আছে কিন্তু মা চাচীর কথায় আয়াতের কাছাকাছি আসাটা আয়াত নিজেও পছন্দ করবে না। তাই নিজের ইচ্ছাগুলো নিজের মনেই চেপে রাখেন তিনি। তবে আজ মেহের নিজে থেকে আয়াতের খাবার নিয়ে আয়াতকে খাইয়ে দিতে চাইছে। এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে। তিনি মেহেরের হাতে প্লেটটা দিয়ে বললেন,
“খাওয়ার পর প্লেটটা নিয়ে আসিস৷ রেখে আসলে নাও খেতে পারে।”
“ঠিম আছে।”
তারপর আয়াতের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। দরজার সামনে এসে কয়েকবার কড়া নাড়লো মেহের৷ কিন্তু দরজা খোলার নাম নেই। আরও দুইবার কড়া নাড়তেই আয়াত বললো,
“মা আমার খিদে নেই। আমাকে ঘুমাতে দাও।”
মেহের এবার বললো,
“আয়াত আমি এসেছি দরজাটা খুলুন।”

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে