#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_১৪
#Writer_Fatema_Khan
আজ আকাশ মেঘে ঢেকে নেই৷ না আছে অন্ধকার মুখ করে৷ সূর্য আকাশে আছে ঠিক কিন্তু তার তেজ এতটাও না। তবে শীতল হাওয়া এখনো বইছে৷ যেকোনো সময়েই আবার অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামতে পারে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আয়াত দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। মাত্রই ক্লাস শেষ করে দাঁড়িয়েছে সে৷ ক্লাসে কেনো যেনো মন বসাতে পারছে না আয়াত। বারবার কাল রাতের কথা মনে পরছে। না চাইতেও মেহেরের আতংকিত চেহারাটা ভেসে উঠছে তার সামনে। মেহের যে বড়সড় এক ধাক্কা খেয়েছে এই অপরিচিত আয়াতকে দেখে তা আয়াতের অজানা নয়। কারণ মেহেরের চোখ মুকজ দেখেই বুঝতে পারছিল আয়াত মেহেরকে কতটা লজ্জায় ফেলে দিয়েছিল। যা থেকে মেহের সরে আসতেও পারছিল না। আয়াত নিজেই মেহেরের সেই লজ্জা মিশ্রীত মুখ দেখে মেহেরের ঘর ত্যাগ করতে বাধ্য হয়৷ আয়াত বারান্দায় দাঁড়িয়েই আনমনে হাসছিল। এমন সময় আয়াতের মোবাইলে একটা কল আসে। আয়াত মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কল রিসিভ করে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয়৷ ক্লাস শেষেই আয়াত বাসায় চলে যায়৷
বারকয়েক কলিংবেল বাজার পর কাসফি দরজা খুলে দাঁড়ায়। আয়াতকে দেখে একটা হাসি দিয়ে দরজা থেকে সড়ে দাঁড়ায়। আয়াত তার মাথায় একটা টোকা দিয়ে ছাদে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে সোজা নিজের মা বাবার ঘরে চলে যায়। মেহেরের মা কাসফি থেকে জানতে পারে আয়াত এসেছে। তাই খাবার গরম করে আয়াতের জন্য। কিন্তু আয়াত খেতে না আসলে খাবার নিয়ে আয়াতের মায়ের ঘরের দিকে যায়। দরজায় নক করতেই ভেতরে আসার জন্য বলে উঠলো আয়াতের মা। খাবার হাতে নিয়েই হাসি মুখে ভেতরে ঢুকলেন তিনি।
“কিরে বাবা তুই না খেয়ে এখানে বসে আছিস কেনো, এদিকে আমিতো খাবার গরম করে বসে ছিলাম খাবার টেবিলে।”
“আচ্ছা চাচী তুমি আর মা কি সারাদিন সবাইকে খাওনোর জন্যই বাসায় ঘুরাঘুরি করো! যখনই বাসায় আমরা কেউ আসি তোমরা দুইজন তাকে খাওয়ানোর জন্য পাগল হয়ে যাও।”
আয়াতের বাবা অট্টহাসিতে ফেটে পরেন। আয়াতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,
“আয়াত তুই কিন্তু একদম আমার মনের কথা বললি। এরা দুই জা মিলে পারে না আমাদের খাইয়ে খাইয়ে মেরে ফেলে।”
দুই জায়ের মুখে যেনো মুহূর্তেই অমবস্যা নেমে এলো তাদের দুইজনের কথা শুনে। আয়াতের মা রাগী গলায় বলে উঠলো,
“ভাবি কাল থেকে আর এদের জন্য রান্নার দরকার নেই। শুধু আমার আর তোমার জন্যই রান্না হবে। তখন দেখব কোথাথেকে এরা খাবার খায়।”
আয়াত এতক্ষণে নিজের খাবার খাওয়া শুরু করে দিল। আয়াতের বাবা দুষ্ট হাসি হেসে তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলে,
“আরে তুমি রাগ করো কেনো, তোমার হাতের খাবার খেয়েই তো তোমার প্রেমে পরেছিলাম। তারপর না আব্বাকে মেনেজ করে তোমার বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম।”
আয়াত বাবার কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। মেহেরের মা দেবরের কথা শুনে মুচকি হাসলেন। সত্যি তার দেবর আয়াতের মাকে বিয়ে করার জন্য কত কাঠখড় না পুড়িয়ে সবাইকে রাজি করিয়েছে। আয়াতের মা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে আয়াতের বাবার দিকে তাকালেন৷ মনে মনে ভাবলেন,
“এই নির্লজ্জ লোক কিনা ছেলের সামনে এভাবে লজ্জা দিল, কোথায় ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভাববে তা না তিনি নিজের প্রেমের কাহিনি শোনাচ্ছেন।”
আয়াত ফ্লোরেই বসে খাচ্ছিলো। খাওয়া শেষ করে মায়ের রাগান্বিত মুখ দেখে খাটের উপরে বসে পেছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“রাগ করে না মা, বাবা তো তোমায় এখনো কত ভালোবাসে দেখেছো।”
“এই না হলে আমার ছেলে, কি করে বাবার মনের কথা সব বুঝে যায় আর তুমি কিনা এত বছর সংসার করেও রাগ হয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকো।”
“আচ্ছা বাবা শোনো না আমরা কিন্তু কাল সকালেই বের হব।”
“কোথায় যাবি?”
প্রশ্ন করলেন মেহেরের মা।
“আরে চাচী জানো আজ কে কল করেছিলো!”
“কে?”
“আমার মামা। গ্রামে থাকে যে উনি। বলেছে গ্রামে যেতে।”
“হঠাৎ! সব ঠিক আছে তো?”
“সব ঠিক আছে। মামার বড় মেয়ে বিথির বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাই আমাদের সবাইকে কালকেই যেতে হবে। তাই তোমরা রাতেই সবাই নিজেদের সবকিছু গুছিয়ে নাও।”
“হ্যাঁ ভাবি কতদিন হলো গ্রামে যাই না। এবার কিন্তু আমরা কিছুদিন বাড়িয়ে থাকব। আয়াতের বাবা তুমি আর ভাইয়া কিন্তু কিছু বলতে পারবে না।”
“আয়াতের মা কবে তোমায় কোনো কিছু করতে বারণ করলাম আমি!”
“ভাবি চলেন বাইরে গিয়ে কি কাজ আছে দেখি। এদের বাপ বেটার কাছে ভালো লাগছে না।”
বিছানায় রাখা এটো প্লেটটা নিয়ে আয়াতের মা বেড়িয়ে গেলেন। সাথে গেলেন মেহেরের মা। আজ তাদের দুইজনকে খুব খুশি খুশি লাগছে। অনেকদিন হয় বাসার বাইরে কোথাও যায় নি তারা। আসলে সংসার জীবনে পা দিলে নিজের শখ আহ্লাদ সবকিছু যেনো মেয়েদের জন্য অমব্যার চাঁদ হয়ে যায়। মন চাইলেও নিজ থেকে কোথাও যেতে পারে না। একটা দায়িত্ব নামক শিকল তাদের পা বেধে রাখে নিজেদের জন্য ভাবার। মেহের আর মেহেরের বাবা একসাথে বাসায় ফিরলে জানতে পারে কাল তারা গ্রামে যাবে। তারা তাদের বড় গাড়ি করেই কাল গ্রামের উদ্দেশ্যে বের হবে বলে জানিয়েছে আয়াত। রাতে সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমাতে নিজ নিজ ঘরে চলে গেলো। মাহিকে ঘুম পারিয়ে মেহের নিজের আর মাহির ব্যাগ গুছিয়ে নিল। আয়াতের দেওয়া সবগুলো ড্রেস নিল আর সাথে কয়েকটা শাড়ি। বিয়েতে পরার জন্য শাড়ি অর্নামেন্টস সব গুছিয়ে ঘরের বাইরের দিকে পা বাড়ালো। কাসফির ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে দরজা হালকা ধাক্কা দিতেই মেহেরের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো৷ মেহের তার মাকে বলে রেখেছিল কাসফির কাপড় সে নিজেই গুছিয়ে দিবে তাই মা যেনো চিন্তা না করে। কিন্তু কাসফির ঘরে আসতেই যে সে এমন কিছু দেখবে সে ভাবেও নি। কাসফি খাটের পাশে ফ্লোরে বসে আছে মুখ কালো করে। আর তার বিছানার উপর আলমারির সব কাপড় পরে আছে এদিক ওদিক। এসব গুছাতে গুছাতেই তো সকাল হয়ে যাবে। মেহের এগিয়ে গিয়ে বললো,
“কি হয়েছে এভাবে মুখ কালো করে বসে আছিস কেনো? আর সবকিছু এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কেনো রেখেছিস?”
“আপু আমার তো মাথায় আসছে না কোনটা রেখে কোনটা নিয়ে যাব? আমার তো সবগুলো কাপড় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা।”
“কিহ! এক আলমারি কাপড় গ্রামে নিয়ে তুই কি করবি?”
“আমার তো সবগুলাই খুব ফেভারিট।”
“বাচ্চা যে তুই বাচ্চাই থেকে গেলি। ক্লাস নাইনে পড়িস এখন তো একটু সিরিয়াস হ।”
“আমি সিরিয়াস হলে তুমি, মা আর চাচী আছে কি করতে তাহলে!”
মেহের আর কথা না বাড়িয়ে কাসফির কাপড় গুছাতে লাগলো। যেগুলো নিবে না সেগুলো গুছিয়ে কাসফির হাতে দিচ্ছে কাসফি সেগুলো আলমারিতে রেখে দিচ্ছে। অনেক গরম পরছে তাই মেহের গায়ের ওড়না খুলে পাশে রেখে কাপড় গুছাতে লাগলো। কাসফি তা খেয়াল করে বললো,
“আপু তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। কতদিন পর তুমি শাড়ি ছেড়ে ড্রেস পরেছো। কবে এই ড্রেসগুলো কিনলে আমাকে তো দেখাও নি বা আগেও দেখিনি তোমার কাছে এই ধরনের ড্রেস। তবে যাই বলো তোমাকে না আজ খুব সুন্দর লাগছে।”
কাসফির কথায় মেহেরের হাত থেমে যায়। কাল রাতের কথা মনে পরতেই একরাশ রক্তিম আভা এসে ভিড় করে মেহেরের দুই গালে। কাসফির কথাকে উপেক্ষা করে কাসফির হাতে আরও কিছু কাপড় দিয়ে বললো,
“এগুলোও আলমারিতে রেখে দে৷ আর তোর সব কাপড় গুছানো হয়ে গেছে। সব প্রয়োজনীয় জিনিসও আমি রেখে দিয়েছি, তোর আর কিছু আলাদা করে নিতে হবে না।”
“আপু এই ব্যাগের কাপড় গুলাও রাখো।”
কয়েকটা শপিং ব্যাগ এনে মেহেরের হাতে দিয়ে বললো। মেহের ভ্রু কুচকে কাসফির হাত থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে দেখতে লাগলো। আর সবগুলো জামাই নতুন৷
“তুই এই নতুন কাপড় কোত্থেকে আনলি, আমার জানামতে এই কাপড় তোকে কেউ কিনে দেয়নি?”
“আপু কাল আয়াত ভাইয়া এনে দিয়েছে৷ ভাইয়া আসার পরেই তো আমার ঘরে এসে দিয়ে গেলো। সুন্দর না! আমার তো খুব পছন্দ হয়েছে।”
“খুব সুন্দর হয়েছে।”
মেহেরের মুখটা মুহূর্তেই চুপসে গেলো। কাসফির কাপড় গুলো গুছিয়ে বললো,
“ঘুমিয়ে পর। কাল খুব সকালে উঠতে হবে।”
মেহের ভাবলো,
“তারমানে আয়াত একলা আমার জন্য কিছুই আনে নি, কাসফির জন্যও এনেছে।”
থমকে গেলো মেহেরের পা।
“একি ভাবছি আমি! আয়াত আমার জন্য আনলে অবশ্যই সবার জন্য আনবে তাই না। আমি এমন কোনো স্পেশাল মানুষ নই যে আমার জন্যই আনতে হবে। আসলেই কি আমি স্পেশাল কেউ নই?”
চলবে,,,,,,
#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_১৫
#Writer_Fatema_Khan
সূর্য পূব আকাশে উঁকি দিয়েছে সেই কখন। গ্রামের উদ্দেশ্যে তাদের বেরিয়ে যাওয়ার কথা ফজর নামাজ আদায় করার পর পর হলেও তারা বের হচ্ছে সকাল ৭টার দিকে৷ সিড়ি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নামছিল লাসফি৷ তার দিকেই সবার নজর৷ বাকিরা সবাই বসার ঘরে কাসফির জন্য অপেক্ষা করছিল। আয়াত তার দিকে তাকিয়ে দেখল র ভাবল,
“কাসফি খুব করে সেজেছে। একটা টপ্স, সাথে ব্লু প্যান্ট, চুল গুলো একটা পোনিটেল করে বাধা, হাতে ঘড়ি অন্য হাতে ব্রেসলেট, হালকা মেকআপ, ঠোঁটে গাড় রঙের লিপস্টিক। বাহ্! খুব সুন্দর লাগছে তো পিচ্চিকে।”
হাসলো আয়াত পিচ্চিকে এত সাজতে দেখে। পরক্ষণেই আয়াত মেহেরের দিকে তাকালো। “একদম সাদামাটা মেয়েটা। ঠিক আগের মতোই। একটা হালকা গোলাপি রঙের থ্রি পিস পরেছে তবে এটা আমার দেওয়া না। চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া, অবাধ্য কিছু চুল বারবার চোখ আর কপালের উপর পরে আছে। তবে সেগুলো সরানোর বৃথা চেষ্টা করছে না মেহের। মুখে অতিরিক্ত কোনো প্রসাধনী নেই না রাঙিয়েছে অধর জোড়া। হাতে চেইনের একটা হাত ঘড়ি, কানে ছোট দুল, গলায় মেহেরের জন্মদিনে দেওয়া চাচার সেই ছোট স্টোনের লকেটসহ চেইন৷ সুন্দর বললে ভুল হবে অমায়িক লাগছে। আচ্ছা এই মেয়েটা সাজে না ঠিক আছে কিন্তু চোখে কাজল দেয় না কেন! মেয়েটা কি বুঝে না কাজল দিলে তাকে ভয়ংকর রকমের সুন্দর লাগবে। যা আমাকে মুহূর্তের ভেতর ধ্বংস করতে সক্ষম। আমি যে তাকে সেই ভয়ংকর রকমের সুন্দরী রূপে দেখতে চাই। আর এই মেয়েটা হাতে চুড়িও পরে না। অদ্ভুত! অথচ বেশির ভাগ মেয়েরাই রেশমি চুড়ি পরতে খুব পছন্দ করে।”
“আয়াত কোথায় হারিয়ে গেলি! যা গিয়ে গাড়ি বের কর দেরি হচ্ছে আমাদের, এমনিতেও অনেক লেইট করে ফেললাম।”
আয়াতের বাবার কথায় হুশ এলো আয়াতের। তাকিয়ে দেখে সবাই এখনো বসার ঘরেই দাঁড়িয়ে একে অন্যের সাথে কথা বলছে আর তার গাড়ি বের করার অপেক্ষা করছে। আয়াত কাল বিলম্ব না করে দ্রুত বেরিয়ে গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে বাড়ির সামনে এনে হর্ণ বাজালো। তারপর একে একে সবাই বের হয়ে গেলো। আর গাড়িতে উঠতে লাগলো। আয়াত গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল স্ক্রল করছিল সেই সময় মেহের বাসা থেকে বের হয়ে এলো। আয়াতের দিকে এক নজর দেখে গাড়িতে গিয়ে বসলো। সাদা টি-শার্টের উপর কালো জ্যাকেট সাথে ব্লু জিন্স ভালো দেখাচ্ছিলো আয়াতকে। সবার উঠা শেষ হলে আয়াত গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে। বসার পর পরই আয়াতের মুখে আধার নেমে এলো। একদম পেছনের সিটে মেহের, আয়াতের মা বাবা বসেছে। মাঝের সিটে মেহেরের মা বাবা আর তাদের কোলে মাহি। আর সামনে আয়াত ড্রাইভিং সিটে তার সাথেই বসেছে কাসফি৷ আয়াত তার পাশে কাসফিকে একদম আশা করে নি। সে ভেবেছিল মেহের বসবে কিন্তু মুখ ফুটে বলতেও পারবে না কিছু৷
“ভাইয়া আমাকে কেমন দেখাচ্ছে বলতো?”
“একদম কিউট একটা পিচ্চি, কিন্তু এত সাজার কি আছে বল তো আমাকে?”
“না সাজলে এখনকার ছেলে মেয়েরা আনস্মার্ট বলে বুঝলে।”
“কিন্তু আমার কাছে কেন যেন সবসময়ই সাজ বিহীন মেয়েদেরই ভালো লাগে। কোনো অতিরিক্ত প্রসাধনী নেই যা দৃষ্টিতে আসছে সব মন ছুয়ে যাওয়ার মতোই।”
কাসফি যেন চিন্তায় পরে গেলো আয়াতের কথায়। সাজ বিহীন আবার কাউকে সুন্দর দেখায় নাকি! লুকিং গ্লাসের দিকে নজর আয়াতের সে মেহেরের দিকেই তাকিয়ে আছে। মেহের একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। ওই রাতের পর তার সাহস হয় না এই ছেলের চোখের দিকে তাকানোর। বড়ই অদ্ভুত সেই চোখ জোড়া, যাকে পড়া মেহেরের সাধ্যের বাইরে। আর দেরি না করে গাড়ি স্টার্ট দেয় আয়াত৷ গাড়ির গ্লাস নিচে নামিয়ে কাসফি বাইরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। তার মনে আজ আনন্দের শেষ নেই। অনেকদিন পর গ্রামে যাবে। ভাবতেই মন নেচে উঠছে৷ ঘন্টাখানেক পর আয়াত একটা হোটেলের সামনে গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে নেমে বাইরে দাঁড়ায় আয়াত।
“আমাদের এখানেই সকালের নাস্তা সেড়ে নেওয়া দরকার পরে আবার অনেক দেরি হয়ে যাবে।”
আয়াতের কথায় সবাই সায় জানায়। সবাই নেমে হোটেলের ভেতর যায়। সবাই হালকা নাস্তা সেড়ে নেয়। মাহি কান্না করছিল, মাহিকে মেহের কোলে তুলে নেয়।
“মা তোমরা থাক আমার খাওয়া শেষ আমি মাহিকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসি। মাহির হয়তো খিদে পেয়েছে।”
“আচ্ছা যা, তুই গিয়ে গাড়িয়ে বসে মাহিকে খাইয়ে দে।”
মেহের মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে হোটেলের বাইরে চলে এলো। গাড়িতে উঠে মাহিকে খাইয়ে দিল। মাহি ঘুমিয়ে গেছে৷ বুকের উপর রেখে পিঠে হালকা চাপর দিতে লাগলো মেহের। গাড়ির গ্লাসে হঠাৎ টোকা পরাতে ঘাবড়ে গেলো মেহের। বাইরে আয়াতকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় পরে যায় মেহের। আয়াত গাড়ির দরজা খুলে বলে,
“মাহি ঘুমিয়েছে?”
আজ তিনদিন পর আয়াত মেহেরের সাথে কথা বললো। আয়াত নিজেও ওই রাতের পর থেকে যথেষ্ট দূরে দূরে থাকে মেহেরের থেকে। মেহের আশেপাশে থাকলে নিজেকে যেন ঠিক রাখতে পারে না সে। মেহের আস্তে জবাব দেয়৷
“ঘুমিয়ে গেছে।”
“তাহলে এটা নেও গ্রামে যেতে যেতে দেরি হবে৷ এটা খেলে মাইন্ড ভালো লাগবে।”
আয়াতের এক হাতে এক কাপ লেবু চা আর অন্য হাতে কফি৷ মেহের জানে আয়াত তার জন্য চা এনেছে। কারণ মেহের কফি খায় না। তার অপছন্দের জায়গায় সবচেয়ে উপরে হয়তো কফি। কেমন নাক মুখ কুচকে ফেলে কফি খেতে বললে। মেহের লেবু চা টা নিয়ে নিল আয়াতের হাত থেকে। তারপর তাতে চুমুক দিল। আয়াতও অন্যদিকে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দিল। তাদের মাঝে আর কোনো বাক্য বিনিময় হলো না। তারা দুইজনেই সামনাসামনি আসলে সব কথা হারিয়ে ফেলে খালি তাকিয়ে থাকতেই পারে৷ আয়াতের কফি শেষ হলে মেহেরের দিকে তাকায়।
“শেষ হয়েছে?”
“হুম।”
আয়াত মেহেরের হাত থেকে ওয়ান টাইম কাপটা নিয়ে সামনে থাকা ডাস্টবিনে দুইজনের কাপগুলো ফেলে দেয়। আবার গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়। হোটেল থেকে সবাইকে বের হতে দেখলে আয়াত মেহেরের দিকে তাকায়।
“মেহের।”
মেহের অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল আয়াতের ডাকে তার দিকে। প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে আছে মেহের আয়াতের দিকে। মেহেরের তাকানোর ফলে আয়াত যেন হার্ট বিট মিস করলো।
“এভাবে তাকিও না, এই চাহনিতেও মাদকতা আছে।”
তাড়াতাড়ি নিচের দিকে তাকালো মেহের। নিজের মনেই আওড়ালো,
“এই লজ্জা দেওয়ার জন্য ডেকেছিল!”
“তোমায় খুব সুন্দর লাগছে আজ, একদম মায়াবতী। আমার কল্পনার মায়াবতী লাগছে।”
সবাই কাছেই এসে পরেছে। তাই আয়াত মেহেরের কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়৷ একে একে সবাই আবার নিজের স্থানে বসে পরে৷ মাহি ঘুমের ভেতর বলে মেহের আর তার মায়ের কাছে দেয় নি। নিজের কোলেই রেখেছে৷ গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো গ্রামের পথে। কিছুক্ষণ পর পর আয়াত আয়নায় মেহেরকে দেখছে। মেহেরও আড়চোখে আয়নায় আয়াতকে দেখছে৷ সামনের গ্লাস খোলা থাকার ফলে মেহেরের খোলা চুল গুলো আরও এলোমেলো করে দিচ্ছিলো বাইরের অবাধ্য হাওয়া। মাহি ঘুম থেকে উঠে মেহেরের মায়ের কোলে চলে যায়। সিটে নিজের গা এলিয়ে কখন যে ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে মেহের নিজেও জানে না। তার ঘুম ভাঙলো কারো ডাকে।
“মেহের উঠো আমরা পৌঁছে গেছি।”
চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আয়াতকে সামনে দেখতে পায় মেহের৷ পাশে তাকিয়ে দেখে সবাই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেছে। মেহের আয়াতকে পাশ কাটিয়ে গাড়ি থেকে নেমে তাদের দিকে এগিয়ে যায়। আয়াত ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তারপর গাড়ি বাড়ির এক সাইডে রেখে লক করে ভেতরে চলে গেলো৷
চলবে,,,,