#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_১০
#Writer_Fatema_Khan
রাত দশটা বাজে। এখন অবদি আয়াতের বাসায় আসার কোনো নাম নেই। বাসার সবাই কল করেই যাচ্ছে কিন্তু কল রিসিভ করছে না আয়াত৷ আয়াতের মা দুশ্চিন্তায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। তাকেই বুঝানোর চেষ্টায় আছে তারই জা। মেহেরের চোখ বরাবরই দরজার দিকে। কখন আসবে আয়াত। কাসফি আর মাহি উপরের ঘরে। আর তাদের এসব নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথাও নেই৷ রাত প্রায় সাড়ে দশের ঘরে তখন কলিংবেলের শব্দে আয়াতের মা ছুটে দরজা খুলে দিলো। দরজার বাইরে আয়াতকে দেখে যেন তার কলিজায় প্রাণ ফিরে এলো৷
“এত দেরি করে কেউ বাসায় ফিরে বাবা, আর সারাদিন কোথায় ছিলি? কত চিন্তা হচ্ছিলো জানিস তুই।”
“মা আমি কোথায় যাব বলো, ঘুরে ফিরে তো তোমার কাছেই আসতে হবে তাই না।”
“ফোনটা তো রিসিভ করবি বল।”
“মোবাইল হয়তো সাইলেন্ট আছে তাই শুনতে পাই নি।”
আয়াতের বাবা মা ছেলের কথা শুনে বলে উঠলেন,
“এতটা কেয়ারলেস কবে থেকে হলে, ভাবতেই অবাক লাগছে দেশের বাইরে তোমাকে পড়তে পাঠালে তুমি এতটা দায়িত্বহীন হয়ে উঠবে। আমরা ভুল করে ফেললাম মনে হয় তোমাকে নিজেদের থেকে দূরে পাঠিয়ে৷”
আয়াত জবাব দিল না। চুপচাপ বাবার সামনে এসে দাড়ালো। মেহেরের বাবা বললেন,
“আহ্, ছেলেটা মাত্র বাসায় আসলো এতটা বকছিস কেন? সারাদিন বাসায় ছিল না খাওয়া হয় নি মনে হয়। ফরিদা আয়াতকে খাবার দাও তো ছেলেটার মুখটাও শুকিয়ে গেছে।”
“এখনি দিচ্ছি।”
বলেই মেহেরের মা আর আয়াতের মা রান্নাঘরে গেলেন। আয়াত তার চাচা আর বাবাকে উদ্দেশ্যে বললো,
“তোমরা কিছু বলবে বলেছিলে, বলো আমার ঘুম পাচ্ছে আমি নিজের ঘরে যাব।”
“খেয়ে নাও তুমি তারপর বলছি।”
আয়াত কথা না বারিয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো। কিছুক্ষণের ভেতর সব আয়াতের মা আয়াতকে খাবার বেড়ে দিলো। আর আয়াতও খেয়ে নিলো৷ তারপর সোফায় গিয়ে বসলো তার বাবা আর চাচার কথা শোনার জন্য।
“এবার বলো কি বলবে?”
আয়াতের বাবা কিছুটা রেগে বলেন,
“তোমার মনে হয় খুব তাড়া আছে!”
“বললাম তো ঘুমাতে যাব তাই।”
“দেশে এসেছো কিছুদিন হয়ে গেছে। তাই আমি আর তোমার চাচা ভাবছি তুমি আমাদের অফিসে জয়েন করো আর সেটা কাল থেকেই। আমি, তোমার চাচা আর মেহের তো দেখছিই সাথে তুমিও জয়েন করলে আমাদের ব্যবসা আরও উন্নতি করবে।”
“এটা বলার জন্যই কি সকালে বললে সবার সাথে কথা আছে!”
“হুম তোমাকে তো পাওয়া যায় না অন্যান্য সময়। আজ শুক্রবার ভাবলাম বাসায় থাকবে, কিন্তু তোমার দর্শন যে আমাদের কারও হবে না কে জানতো!”
“বাবা আর চাচা আমি তোমাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। কিন্তু আমার দ্বারা তোমাদের অফিসে জয়েন করা সম্ভব না। আর আমি বসে বসে তোমাদের অন্ন ধ্বংস করব এটাও ভেবো না, আমি শীঘ্রই একটা ভার্সিটিতে লেকচারের জব নিচ্ছি। তাই তোমাদের আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।”
“মানে কি তুমি আমাদের নিজেদের ব্যবসা থাকতে বাইরে কেনো জব করতে যাবে?”
“আমাদের ব্যবসা দেখার জন্য তুমি আছো চাচা আছে আর মেহের তো আছেই। আমার মনে হয় না আমার সেখানে কোনো প্রয়োজন আছে। আর আমি নিজেও অফিসে কাজ করতে চাই না। আমার মনে হয় আমাকে এই নিয়ে কেউ জোর করবে না। উঠছি।”
আয়াত সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। আয়াতের যাওয়ার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। মেহের উঠে নিজের ঘরে চলে গেলো। আয়াতের মা মেহেরের বাবার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
“ভাইয়া আমি একটা অনুরোধ করতে চাই আপনার কাছে। দয়া করে আমার অনুরোধ আপনি ফেলবেন না।”
“কি হয়েছে আমেনা, তুমি নিসংকোচে বলো কি বলতে চাও। বড় ভাই হিসেবে আমার দায়িত্ব সবার অসুবিধা গুলো দেখা।”
“ভাইয়া আপনার মেহেরকে আমার আয়াতের জন্য চাই। আমার আয়াত যে মেহেরকে খুব ভালোবাসে সেই স্কুল জীবন থেকেই। মেহেরের প্রতি আয়াতের দূর্বলতা আছে আমি সেটা আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু মেহেরের বিয়ের সময় বলতে পারি নি। কি করে স্বার্থপর হতাম নিজের ছেলের জন্য যেখানে মেহের নিজে আবিরকে পছন্দ করতো?”
আয়াতের বাবা ধমকের সুরে বললেন,
“আমেনা তুমি ঘরে যাও। বেশি বলে ফেলছো। যেটা সম্ভব না তা নিয়ে কথা না বলাই উচিত।”
“আমি মোটেও বেশি বলছি না। একবার তো আয়াতের কথা পাশে রেখে মেহেরের খুশিটা দেখেছি এবার যেখানে জানি এই সম্পর্কে মেহেরও ভালো থাকবে আর আমার ছেলেটাও তাহলে আমি চুপ থাকব কেনো? আমার ছেলেটা সারাদিন বাসায় ফিরে না, নিজের ঘর ছেড়ে ছাদে চলে গেছে যাতে মেহেরের সামনে তাকে আসতে না হয়। মেহেরের তাকে নিয়ে যাতে কোনো অস্বস্তি না হয় আয়াত যদি এতটা ভাবে তাহলে আমরা কি আয়াতের জন্য এটুকু ভাবতে পারি না। আমার মনে হয় ভাইয়া আপনি আর আয়াতের বাবা বললে মেহের কখনোই মানা করবে না। আর মেহের কি সারাজীবন এভাবেই থাকবে, নাতো আমরা মেহেরকে আজ না হয় কাল বিয়ে দিবই। তাহলে সেই ছেলেটা আয়াত কেনো নয়?”
মেহেরের মা বলে উঠলো,
“আমারও মনে হয় আমেনা ঠিক বলছে। মেহেরের বয়সই কত, আমরা মেহেরের বিয়ের কথা আজ না হয় কাল ভাববোই। তাহলে আয়াত যেহেতু মেহেরকে পছন্দ করে তাহলে আয়াতের সাথেই মেহেরের বিয়ে দিতে আপত্তি কোথায়? আমার আয়াত আর মেহেরের বিয়ে নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। বাকিটা আপনারা দুই ভাই ভেবে দেখুন। ছেলে মেয়ে দুইটাই আমাদের। তাহলে তাদের সুখের কথাও আমাদের ভাবা উচিত। আর দেশে আসার পর থেকেই ছেলেটা কেমন ছন্নছাড়ার মতো ঘরের বাইরে বাইরে থাকে। আয়াত আমাদের ছেলে তার দিকটাও আমাদের দেখা উচিত৷ মেহেরের জীবনে এক দূূর্ঘটনা ঘটে গেছে বলে আমরা বসে থাকতে পারি না৷ আমার মনে হয় আমাদের আয়াত ও মেহেরের বিয়ে নিয়ে ভাবা দরকার।”
উপরে সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে সবকিছু শুনছিলো মেহের। তার যেনো পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে৷ চোখের পানি যেনো বাধ মানতে নারাজ৷ শ্রাবণের ধারার মতো চোখের পানি ঝরে পরলো দু চোখ গড়িয়ে৷ মেহের তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে চলে গেলো। মেহের ঘরে গিয়ে দেখে কাসফি বসে বসে গেমস খেলছে আয়াতের ফোনে আর আয়াত মেহেরের খাটে শুয়ে মাহিকে বুকের উপর নিয়ে খেলছে৷ মাহির হাতে দুইটা চকলেট আর বিছানায় কিছু চকলেট। কাসফিও চকলেট হাতে গেমস খেলায় ব্যস্ত। মেহের যে ঘরে এসেছে সেদিকে তাদের তিনজনের খেয়াল নেই। মেহের নিজের চোখের পানি লুকাতে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে আয়াত আর কাসফি দুইজনেই ওইদিকে তাকালো। আয়াত বললো,
“কিরে তোর বোন কি ঘরে এসে গেছে?”
“হ্যাঁ মনে হয়।”
“আচ্ছা তাহলে তোরা থাক আমি আমার ঘরে যাই, এখানে থাকলে তোর বোনের আবার ভালো লাগবে না।”
আয়াত মাহিকে বুকের উপর থেকে উঠিয়ে বিছানায় বসিয়ে গালে একটা আদর দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। আয়াত ছাদের দিকে যেতে নিলে মেহেরের বাবা আয়াতকে পেছন হতে ডেকে বলে,
“আয়াত একটু নিচে আসো তো তোমাদের সাথে কিছু কথা আছে।”
“চাচা প্লিজ আমাকে তোমাদের অফিসে জয়েন হওয়ার জন্য জোর করো না আমি চাই না ওইখানে কাজ করতে।”
“অন্য কথা আছে তোমার আর মেহেরের সাথে।”
বলেই মেহেরের বাবা সিড়ি বেয়ে নিচে বসার ঘরে চলে গেলেন৷ আয়াতও আর কিছু না ভেবে তার পেছন পেছন নিচে চলে এলো। মিনিট দশেক পর মেহেরের মা মেহেরকে নিয়ে নিচে এলেন৷ আয়াত সোফায় বসে মোবাইল চালাচ্ছিলো। মেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে মোবাইল পকেটে রেখে মেহেরের বাবার উদ্দেশ্যে বললো,
“মেহের এসে গেছে চাচা এবার বলো কি বলবে?”
“আয়াত আর মেহের আমরা বড়রা সবাই অনেক ভেবেছি তোমাদের নিয়ে আমরা চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে। আয়াতের এতে কোনো আপত্তি থাকবে না জানি। কারণটা আয়াত নিজেই আমাদের কাছে বলেছে কিন্তু মেহের আমরা চাই তুই এই বিয়েতে অমত করিস না।”
মেহের আগেই সব শুনেছে তাই তার মুখের কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না কিন্তু আয়াত যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে সবার কথায়। সবাই তাদের বিয়েতে সম্মতি দিয়েছে। আয়াত মেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখে মেহের চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া নেই তার মুখে যেনো এটাই হওয়ার ছিল৷ মেহের বললো,
“তোমরা যেটা ভালো বুঝবে সেটাই করো, আমার তোমাদের উপর পুরোপুরি ভরসা আছে।”
আর কারো কথার অপেক্ষা না করে মেহের দ্রুত উপরে চলে গেলো৷ আয়াতের যেনো কিছুই মাথায় আসছে না। সবার কি হলো সবাই হঠাৎ করে কিভাবে তাদের বিয়ের কথা ভাবছে। কালও সবাই এই কথা নিয়ে অমত ছিলো। আয়াতও কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে গেলো।
সব কথা আবার মনে পরতেই মেহেরের চোখ ভেঙে অঝোর ধারায় পানি বেয়ে পরলো। কি থেকে কি হয়ে গেলো তার জীবনে। সেতো এমনটা ভাবে নি। সেতো বাকি জীবনটা মাহির সাথে একা থাকতে চেয়েছিলো৷ তাহলে কেনো সবাই আবার তাকে বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ করে দিতে চাইছে?
চলবে,,,,,,
#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_১১
#Writer_Fatema_Khan
“মা আজ জলদি যেতে হবে অফিসে, তাই নাস্তা করে যেতে পারব না। অফিসের কেন্টিনে কিছু খেয়ে নিব।”
মেহের তার মায়ের কাছে বলে যাচ্ছিলো। তার মা ডেকে বললেন,
“কিছু তো খেয়ে যা।”
“না মা এমনিতেই লেইট হয়ে যাচ্ছে। বাবা আর চাচা তো আরও আগেই বেরিয়ে গেছে এদিকে আমি এখনো বাসায়।”
আয়াত নিচে নামতে নামতে তার মা আর চাচীকে বললো,
“আমিও আজ বাসায় খাব না। আজ ভার্সিটিতে প্রথম দিন। প্রথম দিনেই যদি লেইট হয় স্টুডেন্টরা তার লেকচারার কে নিয়ে কি ভাববে?”
“হুম এটাই ভালো তোরা সবাই বাইরেই খাওয়া দাওয়া কর আমরা আর কষ্ট করে রান্না করব কার জন্য?”
“আম্মু আমি খেয়ে যাব তো আমার জন্য করবে।”
কাসফির কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। আয়াত আবার তাড়া দিয়ে বললো,
“আমি বের হচ্ছি তোমরা থাক।”
“এই দাড়া বাবা, তোর তো এখনো গাড়ি কেনা হয় নি। তুই এক কাজ কর তুই মেহেরের সাথে মেহেরের গাড়ি করে চলে যা। মেহের তোকে নামিয়ে তারপর না হয় অফিস যাবে।”
মেহেরের মা আয়াতকে নিয়ে যাওয়াতে মেহের বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে। আয়াত মেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে বলে,
“না চাচী আমি চলে যাব কোনো সমস্যা হবে না আমার।”
আয়াতের মা মাঝখানে বলে উঠলো,
“সেকি একসাথেই তো যাচ্ছিস তো একসাথে গেলেই বা কি সমস্যা!”
“আমার কোনো সমস্যা নেই চাচী, আমি আয়াতকে ছেড়ে দিব।”
আর কিছু না বলে মেহের বেরিয়ে গেলো তার পেছন পেছন আয়াতও বের হয়ে গেলো। তাদের যেতে দেখে আয়াতের মা আর মেহেরের মা দুইজনেই জোরে হেসে দিলো।
“ফাইনালি তারা একসাথে গেলো, কিছুক্ষণ একলা সময় কাটাতে পারবে।”
“হুম ভাবি না হলে তো একজন আরেকজন থেকে খালি পালিয়ে বেরায়।”
কাসফি তাদের কথা বুঝতে না পেরে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।
“আম্মু তোমরা দুইজনে কি নিয়ে কথা বলছো?”
“তুই বুঝবি না তুই খেয়ে তৈরি হয়ে নে, স্কুলে যেতে হবে তো নাকি।”
কাসফি আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
মেহের ড্রাইভিং সিটে বসে আয়াতের জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আয়াত এসে পাশে বসে পরলো। আয়াত বসার সাথে সাথে মেহের গাড়ি স্টার্ট দিলো। আজকেও আবহাওয়া কালকের মতোই শীতল। তবে সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি এখনো। আয়াত এসি অফ করে দিয়ে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিলো৷ এর ফলে ঠান্ডা শীতল হাওয়া দুইজনের শরীর ছুয়ে দিচ্ছে।
“তুমি বললে কেনো তোমার সমস্যা হবে না, আমি মা আর চাচীকে বলে বেরিয়ে পরতাম। তোমার কোনো ইচ্ছাই নেই আমার সাথে যাওয়ার আমি খুব ভালো জানি এটা। অবশ্য আমার থেকে ভালো করে জানার কথাও না।”
“আমার সত্যি কোনো সমস্যা নেই, তাই আপত্তি করি নি।”
আয়াত মাথা নিচু করে হালকা হেসে বাইরের দিকে তাকায়। প্রায় পৌঁছে গেছে আয়াতের ভার্সিটিতে। এর মাঝে দুইজনের ভেতর আর কোনো কথা হয় নি। দুইজনেই পুরো রাস্তা চুপচাপ ছিলো। তবে আয়াত কয়েকবার মেহেরের দিকে আড়চোখে তাকিয়েছে। তাকালেও কথা বলে নি কেউ। আয়াত বাইরে থেকে মেহেরের দিকে তাকালে দেখে বাইরের বাতাসে মেহেরের শাড়ি অনেকটাই সরে গেছে। যার ফলে মেদবিহীন পেট দেখা যাচ্ছে। আয়াত চোখ সরিয়ে নেয় সাথে সাথে। গন্তব্যে পৌঁছলে আয়াত সাথে সাথে গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে চলে গেলো। মেহেরের সাথে কোনো ধরনের কথাই বলে নি আয়াত। মেহের ভ্রু কুচকে আয়াতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবলো,
“এর আবার কি হলো, কিছুক্ষণ আগেও তো ভালো ছিল। গাড়ি থামার সাথে সাথে এভাবে নেমে চলে গেলো কেন?”
মেহের আর কিছু না ভেবে নিজের অফিসে চলে গেলো।
অফিসে গিয়েই হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিলো মেহের। না এখনো মিটিং শুরু হতে মিনিট দশেক বাকি। তাই একটা সস্তির নিশ্বাস ফেলে ভেতরের দিকে পা বাড়ায়। আজ দেশের বাইরের একজন ক্লাইন্টের সাথে মিটিং, তাই মেহের তাড়াতাড়ি অফিসে পৌঁছে সবকিছু গুছিয়ে রাখতে পারে। নিজের রুমে গিয়ে মিটিংয়ের সব ফাইল গুছিয়ে মিটিং রুমে যাওয়ার সময় কেই নক না করেই তার রুমে ঢুকে পরে। মাথা না উঠিয়েই চোখ উঁচু করে তাকালো মেহের। নিজের বাবাকে দেখে হাসলো মেহের৷
“এত কাজ কাজ না করে নিজের দিকেও একটু খেয়াল রাখ না মা।”
“আমি একদম ঠিক আছি। আর কে বললো যে আমি নিজের খেয়াল রাখি না!”
“তাহলে অফিসে এসেই কিছু না খেয়ে ফাইল নিয়ে কেনো পরলি, বাসায় নাকি বলেছিস অফিসে খেয়ে নিবি, তাই না খেয়েই এসে গেছিস। এখন আমিতো অন্য কিছু দেখছি এখানে এসে।”
“আসলে বাবা আমি এক্ষুনি খাবারের কথাই ভাবছিলাম৷”
সাথে সাথে আয়াতের বাবা রুমে ঢুকলো তার পেছনে একজন স্টাফ। যার হাতে একটা ট্রে, যেখানে মেহেরের জন্য খাবার রাখা আছে। আয়াতের বাবা বললেন,
“আগে খেয়ে তারপর মিটিং করতে যাবি। বুঝলি তো মা।”
“হুম।”
মেহের চেয়ারে বসে খাওয়ার জন্য। কিন্তু খাবার মুখে নেওয়ার সময় তার হাত থেমে যায়।
“আচ্ছা আয়াতও তো কিছু না খেয়েই বেরিয়ে গেলো, কিছু কি খেয়েছে নাকি না খেয়েই ক্লাসে চলে গেলো?”
“কিরে না খেয়ে কি ভাবছিস?”
“কিছু না।”
তারপর মেহের নিজের খাবার শেষ করলো। খাবার শেষ হতেই তিনজনে মিটিং রুমের দিকে পা বাড়ালো।
বিকেল চারটা বাজে। ভার্সিটির ক্লাস সেই অনেক আগেই শেষ কিন্তু আয়াত কাম্পাস ঘুরে ঘুরে দেখছে। বাসায় ফিরবে কিছুক্ষণ পর। প্যান্টের পকেট হতে মোবাইল বের করে মেহেরের নাম্বারে কল দিলো। মেহের নিজের মোবাইল রেখেই মিটিংয়ে গিয়েছিলো। রুমে আসতেই মোবাইলে কল বাজতে দেখে তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে মোবাইল হাতে নেয়। হাতে নিয়ে দেখে আয়াতের নাম্বার। একবার রিসিভ করবে না ভেবেও রিসিভ করতে গেলে কল কেটে যায়। তারপর মোবাইল রেখে দিলে আবার কল আসে মেহের দেখে আবার আয়াত কল করেছে৷ কল রিসিভ করে কানে নিলে আয়াত বলে,
“তুমি কি অফিসে আছো?”
“হুম।”
” আমি এখনো বাসায় যাই নি। আমাকে নিয়ে যেও যাওয়ার সময়, হয়তো বৃষ্টি আসবে।”
“ঠিক আছে আপনি থাকুন আমি আপনাকে নিয়ে আসব আপনাকে।”
মেহের আয়াতকে আর কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দেয়। আয়াত মোবাইলের স্ক্রিনে থাকা তাদের পুরো পরিবারের ছবিটি দেখে হেসে দেয়৷ যেখানে আয়াত আর মেহের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে তবে আয়াত মেহেরের দিকে তাকিয়ে আর মেহের সামনের দিকে। মা, বাবা, চাচা, চাচী সোফায় বসা আর কাসফি তাদের মাঝে। আর সেই মেহের আজ তার সাথে অপরিচিত মানুষের মতো কথা বলছে। কিছুক্ষণ পরেই মেহের ভার্সিটির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে নেয়। গাড়ি থেকে নেমে আয়াতকে কল দেয় আর সাথে আয়াত কল রিসিভ করে।
“আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি আপনি কোথায়?”
,”আসছি।”
আয়াত কল কেটে গেইটের সামনে এসে পরে৷ মেহের গাড়ির সামনে মোবাইল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াত এগিয়ে আসতেই কয়েকটা মেয়ে আয়াতের কাছে এসে বলে,
“স্যার আপনার ক্লাস খুব ভালো লেগেছে৷ সত্যি আপনি খুব ভালো পড়ান৷”
তাদের মধ্যে একজন বলে,
“আর কখনো ক্লাস বাংক করবো না স্যার। আপনার লেকচারের পাশাপাশি আপনাকেও খুব ভালো লেগেছে স্যার।”
আয়াত কপাল চুলকে বলে,
“ধন্যবাদ। আমি আসছি।”
“আচ্ছা স্যার কাল আবার দেখা হবে আর উনি কি আপনার বোন?”
“বৃষ্টি আসতে পারে তাই তাড়াতাড়ি বাসায় যাও। আর কাল ক্লাসে এসো কাল দেখা হচ্ছে।”
বলেই আয়াত তাদের এড়িয়ে কথা কাটিয়ে মেহেরের দিকে তাকালো। মেহের দুই ভ্রু কুচকে মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে৷ আয়াত মেহেরকে দেখে হেসে দেয়। তারপর বলে,
“মেহের চলো বাসায় যাব তো।”
মেহের চমকে উঠে আয়াতের ডাকে৷ তারপর বলে,
“হুম চলুন।”
“মেহের আমি ড্রাইভ করছি, তুমি বসো।”
মাথা নেড়ে মেহের সায় দিয়ে পাশের সিটে বসে পরে। আয়াত ড্রাইভিং সিটে বসে পরে। গাড়ি স্টার্ট দিলে মেহের বারবার আয়াতের দিকে তাকাচ্ছে তা আয়াত খুব ভালোই বুঝতে পারছে৷ আয়াত সামনের দিকে তাকিয়েই হাসছিলো। তা দেখে মেহের বুঝতে পারে তার জন্যই আয়াত হাসছে তাই বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ আয়াত বলে,
“কিছু বলবে মেহের?”
“আপনি সকাল থেকে কিছু খেয়েছেন?”
আয়াতের যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না মেহের তার খোঁজ নিচ্ছে। কিছু না বলেই আয়াত ড্রাইভে মনোযোগ দিলো।
চলবে,,,,