#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_০৩
#Writer_Fatema_Khan
দরজায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে বুঝতে পেরে কাসফি তাড়াতাড়ি উঠে বসে। আর দেখতে পায় তার সামনে আয়াত দাঁড়িয়ে আছে। আয়াতকে দেখে কাসফি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। আয়াত দরজা থেকে কাসফির কাছে এসে খাটের উপর বসে পরে।
“ভাইয়া আসলে তেমন কিছু না তুমি যেটা ভাবছো।”
“কাসফি আজ বিকেলে আমি তোকে কি বলেছিলাম যে, আমি বুঝি তোর কথার ধরণ। তাই বড় ভাই হিসেবে কিছু কথা বলি এগুলো সবসময় মনে রাখবি।”
“কি কথা?”
“তুই এখন যে সময়টা দিয়ে যাচ্ছিস এই সময়টা সব মানুষ পার করে আসে। এই সময় কাউকে ভালো লাগলে আমরা ভাবি হয়তো আমরা তাকে ভালোবাসি। আসলে কিন্তু তেমনটা না।”
“তাহলে কেমন?”
“এগুলো হলো আবেগ। আবেগ মানে যা কখনো সত্যি হওয়ার নয় কিন্তু আমরা এটাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। ভাবি এটা না পেলে মরে যাব। ঠিক এমন। এই যে একটু আগে তুই কাঁদছিলি কেনো, তুই মনে করছিলি আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি তারমানে তোকে ভালোবাসি না।”
“তাহলে কি তুমি আমাকে ভালোবাসো!”
“হুম বাসিতো কিন্তু শুধু বোনের মতো। তোর এখন হয়তো খারাপ লাগছে কিন্তু যখন তুই বড় হবি এসব ভেবেই হাসি পাবে। কত ছেলেরা তোকে বিয়ে করার জন্য বাড়ির সামনে বসে থাকবে আর তুই কিনা আমার মতো বুড়োর জন্য কাঁদছিস।”
“কিন্তু তুমি তো বুড়ো না?”
“এখন বুড়ো না, কিন্তু তুই যখন বড় হবি তখন তো আমিও বুড়ো হয়ে যাব।”
“তা তো আমি ভেবেই দেখি নি। তখন আমাদের বিয়ে হলে তো সবাই হাসাহাসি করবে তাই না?”
“ঠিক, আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করবে। এখন তুই লক্ষী মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পর এক্ষুনি মেহের এসে পরবে আমি যাই।”
“ভাইয়া একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“হুম বল।”
“তুমিও যাকে ভালোবেসছো সে কি তোমায় ভালোবাসে?”
“সে তো আজও বুঝতেই পারে নি আমি তাকে ভালোবাসি। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো সে আমার চেয়ে দুই বছরের বড়।”
“কি বলো! তাহলে কি বুড়ি সে!”
“বুড়ি হবে কেনো, আমার থেকে দুই বছরের বড় এই আর কি।”
“তুমি তাকে বলে দিও তুমি তাকে ভালোবাসো ঠিক আছে।”
“আচ্ছা। মাহি ঘুমাচ্ছে এখন পিচ্চি তুইও ঘুমা। আমিও ঘুমাতে যাই।”
আয়াত রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে এসে বিছানায় শুয়ে মোবাইলে স্ক্রল করতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ পর আয়াত নিজের ফোন রেখে শুয়ে পরলো।
সকালে কাসফির ডাকে আয়াত আড়মোড়া দিয়ে উঠলো।
“এই ভাইয়া উঠো না, ভাইয়া, এই ভাইয়া উঠো।”
“উফ! এই সকাল বেলা কেউ এভাবে ডেকে তুলে? কি হয়েছে বল?”
“ভাইয়া কয়টা বাজে দেখো। ৯ঃ৩০ বাজে এখান আমি স্কুলে না গেলে খুব লেইট হয়ে যাবে। চলো ভাইয়া।”
“প্রতিদিন তোকে কে স্কুলে নিয়ে যায়?”
“কেনো মেহের আপু।”
“তাহলে আজ তোর মেহের আপু কই?”
“মেহের আপু তো আজ খুব তাড়াতাড়ি অফিস চলে গেছে। আর বাবা আর চাচাও তার সাথেই গেছে তাদের নাকি মিটিং আছে। তাই আমাকে বলে গেছে তোমার সাথে স্কুলে যাওয়ার জন্য।”
“আসতে না আসতে ডিউটি। আচ্ছা তুই নিচে গিয়ে বস আমি রেডি হয়ে আসছি।”
“ঠিক আছে ভাইয়া।”
রেডি হয়ে আয়াত নিচে এসে কাসফিকে বলে,
“কিরে পিচ্চি চল স্কুলে।”
এদিকে রান্নাঘর থেকে আয়াতের মা এসে বললো,
“কিছু না খেয়ে যাবি? দাড়া আমি এক্ষুনি খাবার দিচ্ছে।”
“না মা আমি বাইরে খেয়ে নিব।”
তারপর কাসফিকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। বাইরে এসে আয়াত লক্ষ করলো বাড়ির বাইরে তাদের দুইটা গাড়ির একটা গাড়িও নেই। আয়াত মাথা চুলকে কাসফিকে বললো,
“তোর স্কুলে কি খুব কাছে নাকি একটা গাড়িও তো নেই।”
“হুম কাছেই চলো আমি তোমাকে নিয়ে যাই।”
তারপর আয়াত কাসফির সাথে বাড়ির গেইটের বাইরে চলে গেলো। কাসফি একটা রিকশা ডেকে তাতে উঠে পরে আর আয়াতকেও উঠতে বলে। আয়াত কাসফির সাথে রিকশায় উঠে পরে। প্রায় দশ মিনিট পর কাসফির স্কুলের সামনে এসে রিকশা থামলো। কাসফি নেমে আয়াতকে বিদায় জানিয়ে দ্রুত স্কুলে চলে গেলো৷ আয়াত যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো৷
“এই কাসফি এত কথা কি করে বলে! এই দশ মিনিটে সে তার স্কুলের সব কাহিনি বলে দিয়েছে আমাকে।”
আয়াত রিকশার ভাড়া মিটিয়ে একটা বাসে উঠে পরলো। কিছুক্ষণ পর বাস থেকে নেমে তাদের অফিসের উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো। অফিসে পৌঁছে আয়াত সরাসরি মেহের কোন কেবিনে আছে তার খবর নিলো। তারপর সোজা মেহেরের কেবিনে চলে গেলো। বিনা অনুমতি মতে ঢুকে পরায় মেহের আয়াতকে খেয়াল করে নি। মেহের আজকের মিটিংয়ের সব ফাইল চেক করছিলো। হঠাৎ কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে মেহের সামনের দিকে তাকালো। আয়াতকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
“আরে আয়াত তুই এখানে!”
আয়াত চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
“আমাকে তোমার ওই বাচাল বোন কাসফির কাছে রেখে এখন বলছো আমি এখানে কেনো।?
একটু হেসে মেহের বললো,
” কাসফি একটু দুষ্ট আর চঞ্চল বুঝলি তাই আর কি।”
“সে আমি বুঝে গেছি। এখন কথা হলো আমার খুব খিদে পেয়েছে।”
“তুই সকালে নাস্তা করিস নি? এক মিনিট আমি এক্ষুনি খাবার আনছি তোর জন্য।”
“হুম সেটাই ভালো। আচ্ছা চাচা আর বাবা কোথায়?”
“তারা মিটিং শেষ করে কোথাও একটা গেছে। বললো কিছুক্ষণ পর ফিরে আসবে।”
পাঁচ মিনিটের মাঝে খাবার এসে হাজির হলো। আর আয়াত সব খাবার খেয়ে নিলো। তারপর মেহেরকে বললো,
“আজ কি কাজের খুব চাপ?”
“না তেমন না। একটা মিটিং ছিলো ওইটা শেষ। আজ আর আমার তেমন কাজ নেই।”
“তাহলে চলো আমার সাথে।”
“কোথায়?”
“গেলেই দেখতে পাবে।”
আয়াত মেহেরকে নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে গেলো। মেহের বারবার জিজ্ঞেস করার পরও বললো না আয়াত। অফিসের বাইরে থেকে একটা রিকশায় উঠে পরলো দুইজনে। রিকশা এসে থামলো একটা লেকের পাশে। লেকের চারপাশে অনেক মানুষ আছে। যে যার মতো ব্যস্ত। কেউ নিজের সাথে আসা ব্যক্তিটির সাথে কেউবা নিজের কাজ নিয়ে। আয়াত মেহেরকে নিয়ে লেকের সাইডে গিয়ে বসলো। মেহের নিজের পায়ের জুতা খুলে লেকের পানিতে পা ডুবিয়ে বসলো। আয়াত পাশে থাকা বাদামওয়ালা থেকে বাদাম কিনল। আয়াত বাদাম ছুলে মেহেরকে দিচ্ছিলো আর মেহের আয়াতের হাত থেকে বাদাম নিয়ে খাচ্ছিলো। আর দুইজনে অনেক অনেক কথা বলছিলো। আয়াত মাঝে মাঝে কিছু মজার কথা বলছিলো যা শুনে মেহের হেসে কুটিকুটি হচ্ছিলো। কখনো বা বিদেশের বন্ধুদের কথা বলছিলো। এক সময় একটু দূরে একটা ফুচকার ঠেলা দেখে মেহের বলে উঠলো,
“এই আয়াত চল ফুচকা খাব।”
“আচ্ছা চলো।”
তারা দুইজনে ফুচকার ঠেলার সামনে যায় আর এক প্লেট ফুচকা নেয় আয়াত।
“কিরে এক প্লেট কেনো তুই খাবি না?”
“না আমার এসব ভালো লাগে না।”
“কি বলছিস তুই, আর আগে তো তুই সবার সাথে কম্পিটিশন দিতি কে বেশি ফুচকা খেতে পারে। আর এখন কিনা ভালো লাগে না।”
“আসলে মেহের কি বলতো অনেক কিছুই তো আমাদের জীবনে পরিবর্তন হয় তাই না৷ ধরো আমার জীবনের মধ্যে এটাও একটা পরিবর্তন।”
মেহের হঠাৎ করেই মন খারাপ করে ফেললো। কাল থেকে মেহেরের মুখে ভালো করে হাসি দেখে নি আয়াত। আজ একটু খুশি ছিলো সে আর তার কথায় তা আবার অন্ধকারে ঢেকে গেলো। আয়াত বলে উঠলো,
“তবে মাঝে মাঝে আমাদের উচিত পুরোনো অভ্যাস গুলোকে জাগিয়ে তোলা। তাহলে আজ হয়ে যাক ফুচকা কম্পিটিশন?”
আয়াতের কম্পিটিশনের কথা শুনে মেহের আবার হেসে উঠলো আর বললো,
“হয়ে যাক।”
আয়াত আরেক প্লেট ফুচকা দিতে বললো। ফুচকা আসতেই দুইজনে গপাগপ ফুচকা খাওয়া শুরু করে। দুইজনের দুই প্লেট খাওয়া প্রায় শেষ। মেহেরের চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে তবুও তার থামার নাম নেই। হঠাৎ পরিচিত কারো গলার শব্দে থমকে গেলো মেহের।
“আরে মেহের তুমি এখানে!”
মেহের আর কোনো কিছু না ভেবেই পেছনে তাকালো আর ঠিক যাকে ভেবেছিলো সেই তার সামনে দাঁড়িয়ে।
চলবে,,,,,,