দুপাতার পদ্ম পর্ব-০২

0
958

#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_০২
#Writer_Fatema_Khan

“কি করছো এখান একা একা?”
আয়াতের ডাকে চোখ খুলে তাকায় মেহের। নিজের পাশে আয়াত দাঁড়িয়ে আছে আর সে এতক্ষণ বুঝতেই পারে নি। মাহের হালকা হেসে বললো,
“এমনিতেই ভালো লাগছিলো না তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি। তা তুই কখন এলি আমিতো টেরও পাই নি!”
“তুমি কিছু ভাবছিলে মেহের তাই হয়তো বুঝতে পারো নি। তা কি ভাবছিলে?”
মেহের একটা মুছকি হাসি দিলো আয়াতের দিকে তাকিয়ে তবে তার কথার বিপরীতে কোনো উত্তর দেয় নি। আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তবে এবার চোখ খুলে। আর জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো। আয়াত মেহেরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াত বললো,
“কফি খাবে মেহের?”
“হু খাওয়া যায়। তুই একটু অপেক্ষা কর আমি বানিয়ে নিয়ে আসছি।”
“লাগবে না তুমি আমার সাথেই দাড়াও।”
“আরে তুই শুধু পাঁচ মিনিট দাড়া আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।”
মেহের ছাদ থেকে নিচে চলে এলো। কিছুক্ষণ পর এক মগ কফি আর এক কাপ চা হাতে করে মেহের ছাদে উঠে এলো। মেহের বরাবরই চা প্রেমী তাই সে নিজের জন্য চা এনেছে আর আয়াতের জন্য কফি। আয়াতের হাতে কফির মগ দিয়ে নিজের চায়ের কাপে চুমুক দিলো মেহের। আর সাথে সাথে চোখ বুজে নিলো৷ এ দেখে আয়াত একটু শব্দ করেই হেসে দিলো।
“তুমি একটুও বদলাও নি মেহের। ঠিক আগের মতোই আছো। আগের মতোই নিজের প্রতি উদাসীন। এখন অন্তত পক্ষে নিজেরটা একটু ভাবো।”
“কই আমি নিজের ব্যাপারে উদাসীন! আমি নিজেকে নিয়েই ভাবি সবসময়।”
“আমাকে আর বুঝাতে হবে না।”
আয়াত নিজের মগে চুমুক দিলো। প্রায় দুইজনেই দশ মিনিটের মতো নিশ্চুপ। তারপর মেহের বলে উঠলো,
“তুই এত বছর দেশে আসলি না কেনো? জানিস চাচী কত কষ্ট পেতো। তোর তো দুই বছর পর আসার কথা ছিলো কিন্তু আসলি না আর না এসেছিস আমার বিয়েতে।”
আয়াত মেহেরের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“যদি বলি অনেক কারণ ছিলো দেশে না আসার।”
“কি কারণ!”
“যদি বলি কারণটা……
” ওহহো! তোমরা দুইজন এখানে গল্প করছো আর আমি তোমাদের দুইজনকে পুরো বাড়ি খুঁজে এলাম।”
কাসফির ডাকে দুইজনেই পেছনে ফিরে দেখে কাসফি কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাসফি এগিয়ে গিয়ে আয়াতের পাশে দাড়ালো আর বললো,
“আমাকে ডাকো নি কেনো আয়াত ভাইয়া? আমি কত খুজলাম তোমায়।”
“এতটা কেনো খুজতে গেলি, আমিতো এমনিতেই একটু পর নিচে আসতাম।”
“আমি তোমাকে এত খুজলাম আর তুমি বলো কেনো খুজতে গেলাম।”
“আচ্ছা পিচ্চি আয় এদিকে। ভাইকে বুঝি খুব মিস করেছিলি যখন আমি ছিলাম না?”
কাসফি মনে মনে ভাবলো,
“ভাই হবে কেনো আমার তো তোমাকে খুব ভালো লাগে আর অনেক অনেক মিস করেছি।”
“কিরে চুপ করে গেলি যে মিস করিস নি!”
“অনেক মিস করেছি ভাইয়া।”
“আসলে কি বলতো কাসফি একমাত্র তুই ই আমি আসাতে খুশি হয়েছিস আর কেউ কিন্তু হয় নি।”
“ঠিক আমি অনেক খুশি হয়েছি তুমি আসাতে। জানো আমি তোমার জন্য কত অপেক্ষায় ছিলাম আর তুমি কিনা আজ আসলে।”
মেহের কিছুটা ভ্রু কুচকে বললো,
“তোদের অপেক্ষার পালা শেষ হলে নিচে যাওয়া যাক।”
“না আপু তুমি নিচে যাও আমি আর আয়াত ভাইয়া কিছুক্ষণ থাকি না।”
“ঠিক আছে।”
মেহের কাসফি আর আয়াতকে রেখে নিচে চলে গেলো। কাসফি আয়াতের কিছুটা কাছে এসে দাড়ালো তারপর তার দিকে তাকিয়ে রইলো। আয়াত কাসফির দিকে তাকিয়ে বলে,
“কিরে পিচ্চি কিছু কি বলবি?”
“তুমি খুব সুন্দর ভাইয়া।”
খুব জোরে আয়াত হেসে উঠলো আর বললো,
“জানি আমি অনেক সুন্দর কিন্তু কি বলতো সবাই এটা বুঝে না শুধু তুই বুঝলি। আরেকটা কথা জানিস?”
“কি কথা?”
“তুই খুব পেকে গেছিস।”
মুখটা কালো করে কাসফি বললো,
“তোমাকে সুন্দর বলাতে আমি পেকে গেছি বুঝি!”
“তুই তো বাচ্চা তাই তোর সব ধরনের কাজ বা কথার ধরণ আমি বুঝি। এমন একটা আমার জীবনেও ছিলো যখন আমার কথাগুলো কারও বুঝার দরকার ছিলো কিন্তু সে এতটাই অবুঝ আজ অবদি বুঝলো না।”
“কে সে!”
“চল নিচে তোদের গিফট গুলো খুলি গিয়ে।”
এক মুহূর্তে কাসফির মন ভালো হয়ে গেলো।
“হুম ভাইয়া তাড়াতাড়ি চলো।”
আয়াতকে রেখেই কাসফি একছুটে নিচে চলে গেলো। আর সবাইকে ডাকতে লাগলো।
“কিরে এভাবে চেছাচ্ছিস কেনো?”
রুম থেকে বের হতে হতে আমেনা বেগম বলে উঠলেন।
“চাচী ভাইয়া বলেছে সবার জন্য গিফট এনেছে ওইগুলো এখন দিবে।”
“ওহ। তা তোর ভাইয়া কই?”
“ভাইয়া আসছে ছাদ থেকে।”
“মেহেরকে দেখেছিস?”
“মেহের আপু তো নিচেই। হয়তো নিজের ঘরে আছে।”
তাদের কথার মাঝেই বাকি সবাই সবার রুমে হাজির হলো। আয়াতও ছাদ থেকে নেমে এসেছে। আয়াত নিজের রুমে সবাইকে আসতে বললো। সবাই আয়াতের রুমের দিকে গেলো আর কাসফি আয়াতের হাত ধরে যাচ্ছে। আয়াত রুমে এসেই নিজের ব্যাগ থেকে সবার জন্য আনা জিনিসগুলো বের করে দিচ্ছিলো। মা আর চাচীর জন্য দুইটা স্মার্ট ফোন এনেছে।
“এখন থেকে তোমাদের আর বাবা চাচার ফোনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। যখন মন চায় যার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হবে কথা বলতে পারবে।”
বাবা আর চাচার জন্য দুইটা হাত ঘড়ি এনেছে আর বডি স্প্রে। মাহির জন্য একটা পুতুল আর একটা গাড়ি। এদিকে কাসফি গাল ফুলে বসে আছে তার জন্য কি এনেছে এখনো বের করেনি তাই। সবশেষে কাসফির জন্য খুব সুন্দর একটা গাউন এনেছে। এটা বের করেই কাসফি খুশিতে সবার সামনেই নাচা শুরু করলো। কাসফি খেয়াল করলো আয়াত সবার জন্য কিছু না কিছু আনলেও মেহেরের জন্য কিছুই আনে নি। তাই কাসফি বললো,
“ভাইয়া আপুর জন্য কিছু আনো নি?”
“আসলে আমি ভুলে গেছি মেহেরের কথা।”
“মেহের আপু তুমি কি মন খারাপ করছো তোমার জন্য কিছু আনে নি বলে!”
“দূর পাগলি আমি মন খারাপ করব কেনো? আয়াত দেশে এসেছে এটাই অনেক। চাচী তো রোজ আয়াতের জন্য কেঁদে ভাসাতো। এখন সে ফিরে এসেছে আর কি চাই আমাদের।”
মেহেরের দিকে আয়াত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে জানে তার জন্য কিছু না আনলেও সে মন খারাপ বা কষ্ট পাবে না। কারণ জীবন যা কষ্ট দেওয়ার তাকে তো দিয়েই দিয়েছে৷ সবাই নিজেদের জিনিস নিয়ে নিজেদের ঘরে চলে গেলো। কাসফিও খুশিতে নিজের গাউন নিয়ে চলে গেলো। মেহের মাহিকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বের হবে এমন সময় আবার পিছু ফিরে আয়াতের কাছে এসে বললো,
“আয়াত তোর কি কোনো কারণে মন খারাপ বা দেশে এসে তুই কি খুশি না?”
“এমনটা মনে হওয়ার কারণ জানতে পারি।”
“আমি তোকে খুব ভালো করেই চিনি, তোর কিছু তো মনে চলছে সেটা কি?”
“কিছু না। তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো মেহের। যাও মাহিকে নিয়ে নিজের ঘরে যাও।”
মেহের আর কথা বাড়ালো না নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো। আয়াত নিজে নিজে ভাবতে লাগলো,
” মিথ্যা মেহের তুমি কখনোই আমাকে বুঝতে পারো না।”

রাতে খাওয়া শেষে আয়াতের বাবা আফজাল সাহেব বললেন,
“আয়াত তোমার সাথে আমাদের কিছু কথা আছে।”
সোফায় বসতে বসতে আয়াত বললো,
“বলো বাবা কি বলবে।”
“দেখো তুমি তো নিজের পড়া শেষ করেই দেশে এসেছো। আজ বাদে কাল আমাদের ব্যবসায় জয়েন দিবে। তাই আমরা সবাই চাই তুমি এবার নিজের বিয়ের ব্যাপারে ভাবো।”
কাসফি যেনো আয়াতের বিয়ের কথা শুনে থমকে গেলো। আয়াত কিছু একটা ভেবে বললো,
“আমি একজনকে পছন্দ করি তোমাদের আপত্তি না থাকলে আমি তাকেই বিয়ে করতে চাই। আর মেয়েটি কে তা না হয় পরে বলব। এখন খুব ঘুম পাচ্ছে আমি উঠি।”
আয়াত আর এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। আয়াতের মুখে কাউকে পছন্দ করে শুনে কাসফির মনে খুব আঘাত পেলো। সে আর না খেয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। তারপর বিছানায় শুয়ে কাদতে লাগলো।
“আমিতো ভাইয়াকে খুব ভালোবাসি তবে কেনো ভাইয়া অন্য কাউকে ভালোবাসবে। আমি কি কম সুন্দর নাকি যে ভাইয় অন্য কাউকে ভালোবাসে।”
দরজায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে বুঝতে পেরে কাসফি তাড়াতাড়ি উঠে বসে। আর দেখতে পায় তার সামনে….

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে