#দুই_পথের_পথিক
#পর্বঃ১৯
#বর্ষা
বিল্ডিং দেখতে এসে কুহেলিকা পড়েছে বিপদে।বহু পুরনো এই চৌধুরী টেক্সটাইল গ্রুপের বিল্ডিংটা। কোহিনুর চৌধুরীর মৃত্যুর পর বিল্ডিং এর ভেতরের প্রায় জিনিস বেঁচে সাফ করে ফেলা হয়েছে।তাও তো কম সময় না,প্রায় দশবছর।বিল্ডিংটা খিলক্ষেত এরিয়ায় পড়েছে।চারপাশে আরো অনেকগুলো বিল্ডিং যেন কলোনি।তবে কুহেলিকাকে ‘চৌধুরী টেক্সটাইল’ বিল্ডিং নিয়ে কথা বলতে দেখে দারোয়ান ফোন করে কাউকে।দ্রুত পাশের বিল্ডিং থেকে এক লোক এগিয়ে আসে।
”এক্সকিউজ মি. আপনি কে?”
ভদ্র করে লোকটা এগিয়ে আসে।কুহেলিকা সেদিকেই তাকিয়ে ছিলো।কোনো সহজ-সরল কথাবার্তা না বলে সোজাসুজি বলে ওঠে,
”এই বিল্ডিং এর চাবি দিন”
”আপনি?”
”কুহেলিকা চৌধুরী ”
”ম্যাম আমাকে বলতেন আমি আপনাকে নিতে আসতাম। কষ্ট করে খুঁজতে গেলেন কেন?”
কুহেলিকার লোকটার কথায় ভ্রু কুচকায়। আপন মানুষ ছাড়া কারো ফাউ প্যাচাল শুনতে তার ভালো লাগে না।কুহেলিকা বিরক্ত হচ্ছে বুঝতে পেরে লোকটা সময় চেয়ে ছুটে পূর্বের বিল্ডিং এর সিকিউরিটি ফ্লোরে যায়। মিনিট পাঁচেক পর হাঁপাতে হাঁপাতে উপস্থিত হয়।
”ম্যাম সব রেডি করেই রেখেছিলাম।আপনি বলার পরপরই সব এনে রেখেছিলাম।তবে আপনি যদি আগে জানিয়ে আসতেন তাহলে আমি ফাইল নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতাম”
কুহেলিকা রঞ্জনের কথা শোনে। হিন্দুগোষ্ঠীর লোক হলেও বোঝার উপায় নেই তা।বছর এক আগে কুহেলিকা মুফতির সাহায্যে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিলো চৌধুরী ইন্ড্রাস্ট্রিজ সরকারের হাতে চলে গিয়েছে।কুহেলিকা তো তখন পাগল প্রায়। নিজের সঙ্গে থাকা বহু প্রমাণাদি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে বাংলাদেশে পাঠায়।ওর লয়ার ছিলো কুন্তী।রঞ্জনের বড় বোন।তারপরই তো কুহেলিকা জানতে পারলো কুন্তী আর কেউ নয় বরং তারই ছোটবেলার ঝগড়াসঙ্গি।কুন্তী বান্ধুবীর কয়েকটা সমস্যার কথা জেনে রাজি হলো কুহেলিকা হেল্প করতে।ভাইগুলো সব ওর ভাইয়ের কাছে দিলো।আর ভাই যেহেতু ওখানের একটা ফ্লোরে কম্পিউটার সিকিউরিটি সিস্টেমের কোর্স করছে তাই খোঁজ খবরও জোগাড় করতে পারলো।
”কোনো খোঁজ আছে যে দিনের আলোয় কেউ আসে কিনা?”
ফাইলগুলো হাতড়ে দেখার সময়ই প্রশ্ন করে কুহেলিকা। কোহিনুর চৌধুরীর সব সম্পত্তি সে পেলেও এই কম্পানিটা ছিলো তানজিল চৌধুরীর নামে অর্থাৎ ওর বাবার নামে।তাই কুহেলিকাও লজিকের বৃষ্টি ঘটালো নিজেদের প্রপার্টি সরকারের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনলো।
কুহেলিকার প্রশ্নে রঞ্জন না বোধক মাথা নাড়ায়।ঘড়িতে সময় দেখতে থাকে বারবার।কুহেলিকা জিজ্ঞেস,”করে কোনো সমস্যা?”
”আসলে ম্যাম আমার ব্রেক টাইম শেষ হয়ে আসছে।এখন না গেলে লেইট হবে”
রঞ্জনের সংকোচিত উত্তর।কুহেলিকা রঞ্জনকে তার কোচিং সেন্টারে ফিরতে বলে।কুহেলিকা বুঝতে পেরেছে এই ছেলে বড্ড বোঁকা গোছের।কুন্তীও তো তাই বলেছিলো যে দোস্ত আমার ভাইটা বড্ড বোকা। স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটলেও মাঝে মাঝে এতো বোকা বোকা কাজ করে বলার বাইরে।
কুহেলিকা রঞ্জনের যাওয়ার দিকে তাকায় তো একবার ফাইলের দিকে।সে ভাবে আজ যদি কেউ জানতো রঞ্জনই ওর হয়ে কাজ করছে তাহলে কি হতো!ছেলেটা কি যাচাই বাছাই না করেই ফাইলগুলো দিয়ে দিতো।ভাগ্য ক্রমে কুহেলিকার হাতেই পড়েছে নয়তো আবার কত ঝামেলা পোহাতে হতো কে জানে!
কুহেলিকা ইফতেখার আহমেদকে ফোন দেয়।তবে তার পূর্বে ফাইলের থেকে কয়েকটা অংশের ছবি তুলে নেয় সে।কুহেলিকা কল দিতেই কল রিসিভ করেন তিনি।
”আসসালামু আলাইকুম আংকেল ফাইল পাঠিয়েছি একটু দেখবেন?”
”আচ্ছা মামনি লাইনে থাকো দেখছি।”
কুহেলিকা এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। লক্ষ্য করে সকাল থেকেই একটা বাইক তাকে ফলো করছে।এখনও এখানে আছে।কুহেলিকা কিছুই বলে না। সেদিকে দ্বিতীয়বার ফিরেও তাকায় না যেন সে দেখেইনি।
”মামনি সব ঠিক আছে। তবে ফাইলগুলো সামনাসামনি দেখতে পারলো ভালো হতো। যাইহোক ফাইলগুলো পেলে কোথায়?”
”আংকেল এর জন্যই ঢাকায় আসা। চৌধুরী টেক্সটাইল আবারো মাথা তুলে দাঁড়াবে।রাখছি আল্লাহ হাফেজ”
কুহেলিকা কল কেটে দূরে দাঁড়ানো ওভারের দিকে অগ্রসরিত হয়।আসার সময়তেও এটাতেই আসা।কুহেলিকা গাড়িতে উঠতেই সো সো করে গাড়ি চলতে শুরু করে।কুহেলিকা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। কয়েকজনকে একসাথে কনফারেন্সে কল দেয়।ফরেন পিপলস্ দের সাথেই মূলত মিটিং।কথা হচ্ছে চৌধুরী ইন্ড্রাস্ট্রিজের রিওপনিং নিয়েই।
***
জয়নুবা বেগম হসপিটালের বেডে নিস্তেজ পড়ে আছেন।ক্যানোলাতে চলছে তার স্যালাইন।আর খাবারও দেহে যাচ্ছে পাইপ দিয়ে।ছেলে স্বামীকে পুলিশে ধরায় ট্রমা সহ্য করতে পারেননি।ব্রেন স্ট্রোক করেছেন।দেহের একপাশ পুরোপুরি প্যারালাইস হয়ে গেছে।ডান পাশে নড়াচড়া করতে পারলেও তা যেন খুবই সামান্য।
রাইসা রামায়সাকে নিয়ে বাপের বাড়ি গমন করেছে।স্বামী মানুষ হিসেবে খারাপ তা সে জানতো।তাই বলে জঘন্যতম তা সে জানতো না।প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই ভালো খারাপ গুন থাকে।তাই ভেবে রাইসা এতো দিন জুনায়েদের প্রত্যেক খারাপ কাজ এড়িয়ে গিয়েছে।অন্ধ থেকেছে স্বামীর ভালোবাসায়।তবে এই মানুষটা যে জঘন্য তা জানা ছিলো না তার!
রামায়সা পাপা যাবো, পাপা যাবো বলায় দু’ঘা চড়ও খেয়েছে মায়ের হাতে।মেয়ের এমন ব্যবহারে আতংকিত রাইসার বাবা-মা।তাইতো রামায়সাকে রাইসার থেকে দূরে রেখেছে। কিন্তু তারা হয়তো ভুলে গেছে সন্তানকে মায়ের থেকে দূরে রাখলে মায়ের পাগলামি কমার পরিবর্তে আরো বাড়ে।রাইসা নামাজে বসে ঢেসকি পেরে কাঁদছে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছে।বলছে,
”আল্লাহ আমি তো ওর ভালো দিকগুলো নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম।তবে কেন ওর জীবনের এই কালো সত্য সামনে আসলো! আল্লাহ এই সত্যটা কি আরো আগে আসতে পারেনি?আমার বাচ্চাটাকে যে সবাই বলবে তোর বাবা খুনি!ও আল্লাহ তুমি কেন আমার রাইসাকে এক খুনির ঘরে জন্ম দিলে? আল্লাহ আমার রাইসা যেন মাসুম।আমি তো চায়নি কখনো ওকে হিংসা কি তা শেখাতে।সেখানে তুমি ওর বাবাকে খুনি বানালে! আল্লাহ আমার রাইসা এতো সহায়-সম্পদ দিয়ে কি করবে?ও যে ওর বাবার ভালোবাসাই পাবে না। আল্লাহ আমার স্বামীকে তুমি ক্ষমা করে দেও। ওকে তুমি ইহলোকেই শাস্তি পাইয়ে দেও। আল্লাহ পরকালে যে আমি ওর হাত ধরে জান্নাত ঘুরতে চাই!”
রাইসা আবারো কান্নায় লুটিয়ে পড়ে। হঠাৎ মনে হয় আমার মেয়েটা কোথায়!বুক কেঁপে ওঠে।দ্রুত দরজা খুলে বাইরে বের হয়।বাবা-মায়ের রুম খোঁজে তবে পায়না।রাইসার পাগল পাগল লাগতে লাগে।রাইসা দ্রুত সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে গিয়ে ড্রয়িংরুমে মেয়েকে দেখতে পায়।রোহানীর কোলে মেয়েটা।
”রামায়সা”
মায়ের ডাক শুনতে সেদিকে তাকায় রামায়সা। ছোট্ট রামায়সা হয়তো বুঝতে পারছে না তাদের জীবনে কি ঝড় উঠেছে তবে এতটুকু বুঝতে পারছে তার মাম্মাম ভালো নেই।তাইতো চারদিন ধরে মা তাকে আদর করছে না।কাছেও আসছে না,খাইয়ে দিচ্ছে না।রামায়সা অভিমান করে বসে থাকে না। বরং ছুটে যায় মায়ের কাছে।রাইসা রামায়সাকে জড়িয়ে কলিজা ঠান্ডা করে।রোহানীর চোখ বেয়ে আপনাআপনি অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে।রোহানী মনে মনে বলে,
”আল্লাহ তুমি আমার আপির সাথে কেন এমন করলা?আমি স্বার্থপর হয়ে আমার আপিকে দিয়ে নাহিনকে পাওয়ার জন্য উল্টাপাল্টা কথা হয়তো বলিয়েছিলাম।তাই বলে আমার আপি তো স্বেচ্ছায় এমন করিনি।আমার জেদের কারণে আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের কারণে করেছিলো। আল্লাহ আমার আপির এই দুঃখ যে আমার সইছে না।'”
****
নাহিন অফিসের কাজ শেষে গাড়ি করে বেরিয়েছে।আজ বাংলাদেশে ঢাকা সেক্টরের অফিসে তার তৃতীয় দিন কেটেছে।জুতা,ব্যাগ শিল্পের সেক্টর এইটা।ব্র্যান্ডেড জুতা আর ব্যাগের ব্যবসায় আকাশ ছোঁয়া সাফল্য পেয়েছে সে।আর কি লাগে! নিজের তৈরি অভাবনীয় সুন্দর ডিজাইনে জুতা তৈরি আর স্বল্প লাভে ছেড়ে দেওয়ায় পণ্যের গুণগত মানের ওপর নির্ভর করে ব্যবসাটাও ধীরে ধীরে প্রগতিশীল হয়েছে।তাছাড়া অস্ত্র উৎপাদনের যে ব্যবসাটা আছে তা থেকেও তো বিশাল বড় এমাউন্ট আসে তার একাউন্টে।রাশিয়ার হয়ে অস্ত্র তৈরি করার চুক্তিতে চুক্তিবদ্ধ সে। পাশাপাশি নিজস্ব কয়েকটা সরুমও আছে উত্তরা, নিউমার্কেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
নাহিন গাড়ি করে বাড়ি ফেরার পথে বাইরে তাকিয়ে থাকে।চোখ পড়ে প্রায় নিস্তেজ হয়ে পড়া গোলাপের দিকে।তবে কষ্ট যেন সেই ফুলের মালিককে দেখে আরো বেশি লাগে তার।কি মায়াবী একটা ছোট শিশু ফুল বিক্রি করছে।বয়স কত হবে?দশ বা এগারো!নাহিন গাড়ি থামাতে বলে সেদিকে অগ্রসরিত হয়।
”ফুল তোমার ফুলগুলো আমায় দেও তো।আর এই নেও টাকা”
বাচ্চাটার চোখ যেন চকচক করে ওঠে।দ্রুত ফুলগুলো নাহিনের হাতে দেয়।সাতটা ফুল। নাহিন পাঁচশো টাকার নোট এগিয়ে দেয়।বাচ্চাটার মুখে অন্ধকার নেমে আসে।কান্না ভেজা কন্ঠে বলে ওঠে,
”সাহেব আমার কাছে তো এতো বড় টাকা ভাংতি নেই।ভাংতি দিন না..”
নাহিনও কিছু একটা ভেবে মাসুম চেহারা করে বলে ওঠে,”ফুল আমার কাছেও যে ভাংতি নেই।কি করা যায় তাহলে!”
বাচ্চাটার মুখটা চুপসে যায়।নাহিনের মায়া হয়।নাহিন মুচকি হেসে বলে,
”ফুল শোনো তুমি এই পাঁচশো টাকাই আজ রেখে দেও।আমি কাল নাহয় তোমার থেকে আবার ফুল নেবো।”
বাচ্চাটার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।হয়তো আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পাড়ার খুশিই তার মুখকে আলোকিত করছে।বাচ্চাটার সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে নাহিন।জানতে পারে বাচ্চাটার নাম অদ্রি।বাবা-মা সবাই ছিলো।ডিভোর্সের পর কেউই তাকে রাখতে চায়নি তারপর সরকারের থেকে ওর দূর সম্পর্কের মামা ওর দায়িত্ব নিলো।আর সেখানে খেতে গেলে ওর কাজ করেই কাটাতে হবে এমনটাই বলেছিলো তারা।কাজ করে খেতে হলেও মামীর ভালোবাসা জুটেছে কপালে তার। কেননা মামির পাঁচটাই ছেলে।কোনো মেয়ে নেই।আর মেয়ের শখ অদ্রি পুড়িয়েছে যেন।
নাহিন গাড়ি ফিরে এসে ভাবতে থাকতে কেমন বাবা-মা যে ডিভোর্সের পর সন্তানকে ফেলে দেয়!নাহিন আঁতকে ওঠে তার অযৌক্তিক সব কল্পনায়।ভাবে কোনো কারণবশত যদি তার আর কুহেলিকার আলাদা হতে হয় তখন!তখন কি তাদের সন্তানেরও পরিণতি এমন হবে!নাহিন নিজের এই ভাবনার জন্যই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ যেন এমন কখনোই না করে তাদের জীবনে!
নাহিন বাসায় ফিরে দেখে নাসরিন সুলতানা খাইয়ে দিচ্ছে কুহেলিকাকে।তা দেখে বেচারারও মায়ের হাতে খাওয়ার ইচ্ছা জাগে। মাগরিবের আজান পড়ে চারপাশে অন্ধকার ছড়িয়েছে অনেকক্ষণ।নাহিনও মায়ের কাছে গিয়ে খাবার খেতে হা করে।তা দেখে কুহেলিকা বলে ওঠে,
”দেখেছো আম্মু তোমার ছেলে কত হিংসুটে!আমায় তুমি খাইয়ে দিচ্ছো দেখে ওর সহ্য হলো না।এসে পড়েছে খাবার খেতে”
কুহেলিকা বলতে বলতে নাহিনের হাতের দিকে তাকায়।গোলাপ ফুল।কুহেলিকার বড্ড পছন্দের এই গোলাপ।প্রায় মানুষেরই যে পছন্দের।কুহেলিকা আবার বলে ওঠে,
”দেখি দেখি দেও তো ফুলগুলো আমায়”
”তোমায় দেবো কেন?”(নাহিন)
”আম্মু দেখো তোমার ছেলে আমায় ফুল দেয় না”(কুহেলিকা)
”নাহিন তুমি আমার মা’কে না ক্ষেপিয়ে ফুলগুলো দিয়ে দেও।এমনিতেও আমার মা’টা দুপুরে কিছু খায়নি ঠিকভাবে”(নাসরিন সুলতানা)
”এই তুমি খাও নাই কেন?”(নাহিন)
কুহেলিকা নাহিনের জবাব দেয় না। বরং নাহিন ফুলগুলো আলগা হাতে ধরতেই ফুরুৎ করে ফুলগুলো নিজের হাতে নিয়ে নেয়।তবে হাতে কাঁটা বিঁধতেই হালকা আর্তনাদ করে ওঠে।নাসরিন সুলতানা যেন ব্যতিব্যস্ত হয়ে কুহেলিকাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে কোথায় ব্যথা পেয়েছে সে।সত্যিই কুহেলিকার আজ নিজেকে বড্ড ভাগ্যমান মনে হচ্ছে নিজেকে।মায়ের ভালোবাসা না পাক তবে শাশুড়ি নামক মমতাময়ী মা তো পেয়েছে!
নাসরিন সুলতানাকে শান্ত করে কুহেলিকা নাহিনকে প্রশ্ন করে,
”তা ফুলগুলো নিস্তেজ কেন?”
”ফুলগুলো এক ফুলের থেকে কিনেছি তাই”(নাহিন)
”মানে?কোন ফুলের কথা বলছো তুমি বেয়াদব ছেলে?আমার মেয়েকে ভুলে অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকালে তোমার খবর আছে এই বলে দিলাম আমি।”(নাসরিন সুলতানা)
নাহিন খুশি হয় মায়ের কথা বলার ধরণে।তবে চিন্তিত হয় মা’কে নিয়ে।মা সুস্থ তো ঠিকই হচ্ছে।তবে তার পাগলী বউটার মতো সবকথা না শুনেই একগাদা কথা শুনাচ্ছে।নাহিন অদ্রির কথা খুলে বলে ওদের।কুহেলিকার মুখটা চুপসে যায়।তবে শুনে খুশি হয় বাচ্চাটার জীবনে অত্যন্ত তার মামী আছে তাকে ভালোবাসতে!নাসরিন সুলতানারও কষ্ট হয় বাচ্চাটার জন্য।তবে ওনার ঘৃণা হয় ওই বাচ্চার মা-বাবার প্রতি।যেমন উনি নিজের স্বামীকে ঘৃণা করলেও অসম্মান করেননা বরং এড়িয়ে চলেন তেমন। কতগুলো বছর একঘরে থাকলেও আকাশসম দূরত্ব তাদের!
চলবে কি?