দহন ফুল পর্ব-০৪

0
366

#দহন_ফুল– ৪

এলার্ম বাজার সাথে সাথে ঘুম ভেঙে গেলো, ঘড়িতে ৫টা ১০বাজে গতরাতে গুগল থেকে সব নামাজের নিয়ম কানুন জেনে নিয়েছি। অনেক আগে পড়েছি দাদীর সাথে মায়ের সাথে অনেক ছোটখাটো ব্যাপার ভুলে গেছি। তবে অনেকদিন পর নামাজ পড়ছি কেমন যেনো জড়তা আর নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে। অজু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ শুরু করলাম।

গতরাতে আম্মু ফোন করে খুব খুশি প্রকাশ করলো, — আমি খুব খুশি হয়েছি প্রভা তোমার পরিবর্তন দেখে। এইযে নিজেকে নিজেকে বদলে নিয়েছো এটা শুধু তোমার জন্য নয়, তোমার ভবিষ্যত সন্তানদের জন্যও ভালো। কি হবে একটু গা বাঁচিয়ে থেকে তাতে তোমারই ক্ষতি, কাজ করলে শরীর পঁচে যায় না, বরং ভালো থাকে। আর কার সাথে কিভাবে কথা বলা উচিত কি উচিত নয়, আরো কত কত যে কথা বললো ।
আম্মুর খুশি দেখে নিজেরও ভালো লাগছে।

শুদ্ধ অশুদ্ধের শংকা নিয়ে নামাজ শেষ করে দেখি, সামির বসে অদ্ভুতভাবে দেখছে আমাকে।
— কি ব্যাপার হঠাৎ এতো পরহেজগার হয়ে গেলে?
মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো জায়নামাজ ভাঁজ করতে করতে , বললাম
— কি বলতে চাও?
— না মানে, হঠাৎ এতো পরিবর্তন, কাজ করছো, নামাজ পড়ছো।
— হ্যা মানুষ নিজেকে বদলাতে পারে না?
— হ্যা তাতো পারেই, তবে ভালো লাগছে।
বিছানা থেকে নেমে গাঁ ঘেষতে চাইলো, বললাম খবরদার শর্ত ভুলে যেও না।
— কোন শর্ত?
— যেটা দুদিন আগে বলেছি।
— উফফ কি যন্ত্রণা!
হঠাৎ দুহাতে কলার টেনে ধরে মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললাম — তুমিও নামাজ পড়ে নাও, পারো তো নাকি?
— পারবো না কেনো? আমি মাঝেমধ্যে নামাজ পড়ি।
— ঠিক আছে, তবে আমি নামাজ পড়ছি একথা সবার কাছে ঢোল পিটাতে হবে না। জানলে তোমার খবর আছে?
— জানলে কি হয়েছে?
— ভালো ভাবে শিখে নেই, তারপর সবাই জানবে।
— আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। শোনো শর্তটা সিথিল করা যায় না?
— নাহ… যায় না।
— ডিজগাস্টিং….
বিরস মুখে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

রুম থেকে বের হয়ে দেখি শাশুড়ী মগভর্তি ইসবগুলের শরবত খাচ্ছেন। আমাকে দেখে চোখ তুলে তাকালেন,
— প্রভা এত সকালে উঠলে যে?
— রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছি, তাই ঘুম ভেঙে গেলো মা। ভাবলাম রান্নাঘরে যাই দেখি কি হচ্ছে আজকের আয়োজন।
— ওদিকে যাওয়া লাগবে না, আমার কাছে এসে বসো। ওদিকটা ওই হাভাতের মেয়ে আর মনির মা সামলে নেবে। এমনিতেও আজকাল ওর পিছু রান্নাঘরে ঘুরাঘুরি করছো।

অন্য সময় এসব কথা শুনতে ভালো লাগতো, কিন্তু আজ ভালো লাগছে না, একটা মানুষের জন্য অন্য মানুষের মনে এতো বিষ কি করে পুষে রাখে। আমার কথাগুলো বিরক্ত লাগলো তবুও একে তো চটানো যাবে না, গতকাল মা একটা কথা বলেছিলো, যে বাঘকে ঠান্ডা রাখতে জানলে বাঘের লেজ দিয়ে কানও চুলকানো যায়। আমিও পাশে গিয়ে বসলাম তেলতেলে হয়ে বললাম।
— আপনি কি ভেবেছেন মা? আমি ভাবীর সাহায্য হবে ভেবে এসব করি? মোটেও না ভাবীর সাহায্য হোক বা না হোক আমার তাতে কি? আমি আসলে শেখার জন্য করি, আপনার সন্তানরা যেমন আপনার রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ আমার সন্তানরাও যেনো আমাকে নিয়ে এমন করে তার জন্য শিখি।
কতটুকু আটাতে কতটুকু পানি, কিভাবে মথতে হয়, কিভাবে রুটি গোলও হবে আবার বেলনের নীচে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরবে, আরও নানা পদের রান্না কোনটা কিভাবে করতে হয় সব কিছু শিখতে চাই।
— আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে শিখো তবে, ফকিন্নীর বেটিকে বেশি মাথায় তুলো না। ছোটলোক তো মানসম্মান বোঝে কম।
মনে মনে বললাম.. তুমি যে কত বড় মনের তা তো তোমার আচরণেই বুঝা যাচ্ছে।
মুখে বললাম — জ্বি আম্মা স্মরণ রাখবো।

রান্নাঘরে গিয়ে দেখলাম মনির মা পেঁয়াজ, আলু কুচি করছে আর ভাবী সেদ্ধ আটা মথে নিচ্ছে, আমাকে দেখে স্মিত হাসলেন আমিও হাসলাম,
— ভাবী আজ মেন্যুতে কি হচ্ছে সকালের আয়োজন?
— ওইতো রুটি, সুজির হালুয়া, আলুর ঝুড়ি ভাজা আর মাংসের শুটকি ভুনা।
— মাংসের শুটকি! সে আবার কি জিনিস?
— সেটা খুব কঠিন নয়, চট্টগ্রামের মাংসের কোয়াবের মতোই রেসিপিটা শুধু লবন দিয়ে অল্প তেলে ভেজে ফ্রিজের নরমালে সংরক্ষণ করা হয়, আর গ্রাম দেশে লবন দিয়ে সিদ্ধ করে চিকন তারে ঝুলিয়ে রোদে শুকিয়ে রাখে। তারপর যেদিন খেতে ইচ্ছে হবে ফুটন্ত গরম পানিতে ২/৩ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে শিলপাটায় ছেঁচে নিয়ে পেঁয়াজ কুচি আর যত রকম মাংসের মশলা আছে তা দিয়ে ভুনতে হয়। রুটি পরোটা গরম ভাত যেভাবে ইচ্ছে খাওয়া যায়।
— বাহ! বেশ তো! আজ একটা নতুন রেসিপি ট্রাই করা হবে।
— আচ্ছা ট্রাই করো।

ভাবী রুটি বানাচ্ছে আমি দাঁড়িয়ে না থেকে ভাবীর ডিরেকশন নিয়ে রুটি সেকে হটপটে রাখছি।
সব খাবার টেবিলে নিয়ে রাখলাম, সবাই এসে খুশিমনে নাস্তা খাচ্ছে রেসিপি আমার জন্য নতুন হলেও দেখলাম এই টেবিলে এটা পুরাতন খাবার। বেশ প্রশংসা হচ্ছিলো মাংসের শুটকি ভুনার, শাশুড়ী নাক সিঁটকে পছন্দ করি না বলে বলে সবার চেয়ে বেশিই খেলেন।
জগতে কিছু মানুষ সত্যিই অদ্ভুত থাকে, এদের কোনোভাবেই খুশি করা যায় না।

নাস্তা শেষে সবাই যার যার কর্মস্থলে যাচ্ছে, আমি ভাবীর সাথে রান্নাঘর গোছাচ্ছি, সামির জোরেজোরে নাম ধরে ডাকছে, ভাবী ঠেলে রুমে পাঠালেন।
— কি ব্যাপার ষাঁড়ের মতো চেচাচ্ছ কেনো?
— দেখতো টাই বাঁধাটা ঠিক হচ্ছে কিনা?
— এটা দেখানোর জন্য এভাবে ডাকছো?
— আরে না না, ওইযে বললে ভাইয়ার মতো ভালোবাসতে পারলে কাছে আসতে দেবে। কিভাবে ভাইয়া ভালোবাসে আমি তো জানিনা…. একটু বলে দেবে? আর ভাল্লাগছে না আমার।

আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
— উহু তা হবে না… চোখ কান খোলা রাখো তাহলেই তো দেখতে পাবে।
এবার একটু রেগে গেলো,
— আমি তোমাকে কত্ত সময় দেই, ভাবী তো ভোর থেকে সারাদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, ভাইয়া সকালে বেরিয়ে ফেরে অনেক রাতে, ভাবীকে কোথাও ঘুরতেও নিয়ে যায় না। বুঝিনা ভাইয়া অন্যরকম ভাবে ভাবে ভালোবাসে কখন?
বিরক্ত মুখ নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলো। আমি হেসে কুটিকুটি হচ্ছি.. বেচারা ভালো বিড়ম্বনায় পড়েছে, খুব জব্দ হচ্ছে।
মানুষ অভ্যাসের দাস আর নিজেকে দুদিনের ভেতর সে অভ্যাস থেকে বের করে আনা কষ্টের। টিভি অন করে একটা মুভি দেখতে দেখতে কখন যেনো ঘুমিয়ে গেছি জানিনা। ঘুম ভেঙে দেখি বারোটা বেজে গেছে। দ্রুত বের হয়ে গিয়ে দেখি ভাবী ঘেমে নেয়ে একার হাতে সব সামলাচ্ছেন, কাটাকুটি আর রান্নাবান্না করছে। তার চোখগুলো অস্বাভাবিক লাল হতে পারে মশলার ঝাঁঝ হতে পারে কেঁদেছেন বা অসুস্থতা হালকা কাশছেন নাক টানছেন একটু একটু আর মনির মা আশেপাশে কোথাও নেই। নিজের কাছে অনুশোচনা হচ্ছে, বললাম
— ভাবী আমায় ডাকেননি কেনো? আর মনির মা কই?
— মনির মাকে মা ডেকে নিয়ে গেছে ঘন্টা দুয়েক হবে।
মাছ, মাংস ধুলে হাতে গন্ধ লাগে তাই এসব কখনো করিনি তবুও যতটা সম্ভব ধুয়ে আর এটা সেটা এগিয়ে দিলাম। মনির মার খোঁজে বের হলাম, গিয়ে দেখি শাশুড়ী মনির মাকে নিয়ে ইন্ডিয়ান সিরিয়াল দেখছেন, মনির মা উনার হাত পা টিপে দিচ্ছে।

আমার শরীরের রক্ত সব রাগে মাথায় উঠে যাচ্ছি, কি থেকে কি বলে ফেলবো, হঠাৎ মায়ের বাঘের লেজের কথা মনে পড়ে গেলো। গলা যথেষ্ট নরম করে বললাম,
— মনির মা তুমি আম্মার এতবড় ক্ষতি কেনো করছো?
মনির মা থতমত খেয়ে বললো,
— আমি আবার কি করলাম ছোটভাবী?
— তুমি তো এভাবে হাত পা টিপে আম্মার হাড় ক্ষয় করে ফেলছো? বেশি হাত পা টেপালে মারাত্মকভাবে হাড় ক্ষয় হয়ে যায়! আম্মার কি এমন বয়স হয়েছে?
শাশুড়ী মনির মার হাত সরিয়ে দিয়ে বললেন,
— কি বলছো বউ মা, একথা কোথায় পেলে?
— আম্মা আমি পেয়েছি, বিশ্বাস না হলে গুগুলে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন।
শাশুড়ী চিন্তিত মুখে বসে রইলেন। মনির মাকে বললেন তুই রান্নাঘরের কাজে যা।

আমি ওখান থেকে সরে আসতে আসতে মনেমনে বললাম আসলে এই ব্যাপারে আমি কিছু পাইনি হুদাই গুল মেরে আসলাম, উনি কি আর গুগল সার্চ দিয়ে খুঁজতে যাবেন।

দুপুরের ভাত ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যার দিকে তাড়াতাড়ি উঠে নামাজ সারলাম। প্রবল পানি তৃষ্ণা পেলো কিন্তু বোতল খালি তাই বোতল হাতে ডাইনিংয়ে এসে দেখি শাশুড়ী বিড়বিড় করে বকাবকি করছেন? আমি সামনে আসতেই বললেন,– বুড়া মানুষ অকাজের এককাজ করো আমাদের মেরে ফেলো?
আগামাথা কিছু খুঁজে পাচ্ছি না, তাই জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে আম্মা খুলে বলেন?
— কি আর হবে সবই আমার কপাল, আমার কথা কি কোনো দাম আছে? বড় বউকে বলেছিলাম বিকেলে ফুল কপির বড়া বানাতে। সন্ধ্যা হতে চললো কিন্তু সেটা না করে নবাবের বেটি ঘুমিয়ে আছে।
— ঘুমিয়ে আছে? আচ্ছা আমি দেখছি?

ভাবীর রুমে সচরাচর যাওয়া হয় না আমার।আজ রুমে ঢুকতেই দেখলাম, সত্যিই ভাবী বেঘোরে শুয়ে আছে, যেটা ভাবী পারতপক্ষে করে না। কয়েকবার ডাকলাম কিন্তু সারা নেই, কাছে গিয়ে গায়ে হাত রাখতেই মনে হলো গরম তাওয়ায় হাত রাখলাম। আমি তড়াক করে সোজা হয়ে গেলাম তাড়াতাড়ি ভাবীর ফোন থেকে ভাইয়াকে কল দিয়ে বিস্তারিত বললাম, ভাইয়া আমি এক্ষুনি ডাক্তার নিয়ে আসছি বলে ফোন রাখলেন।

মাকে দেখেছি অতিরিক্ত জ্বরের সময় মাথায় পানি ঢালতে তাৎক্ষণিক ভাবে তাই করার প্রস্তুতি নিলাম।
দৌড়ে রান্না ঘরে গেলাম, ময়লা ফেলার বড় পলিথিন কেটে বড় করে নিয়ে যাচ্ছি, শাশুড়ী প্রশ্ন করলেন
— পলিথিন নিয়ে কই যাও
— ভাবীর খুব জ্বর মা সেন্সলেস হয়ে গেছে।
— কিচ্ছু হয়নি, সব ঢং কাজ থেকে বাঁচার বাহানা।
প্রচন্ড রাগ উঠে গেলো, তবু্ও নিজেকে কন্ট্রোল করলাম, বললাম।
— মরেটরে গেলে কেলেংকারী হবে মা।
শাশুড়ীর মুখ পাংশুটে হয়ে গেলো, বললেন
— দাঁড়িয়ে আছো কেনো যাও সেবা করো গিয়ে।

ভাবী হুশ নেই কোনো রকমে টেনে এনে, মাথার নিচে পলিথিন দিয়ে অনবরত পানি ঢালতে লাগলাম, কী মনে করে কে জানে? শাশুড়ী রুমে এলেন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেলেন। অনবরত পানি ঢালতে ঢালতে একসময় দেখলাম ভাবীর ঠোঁটদুটো নড়ছে।
ভাইয়া ডাক্তার নিয়ে বাসায় এলেন, ভাবীর মাথা মুছে দিয়ে বালিশে তুলে দিলাম। ডাক্তার চেক আপ করলেন,
— কখন থেকে জ্বর কেউ জানেন?
আমি বললাম
–সেটা তো জানিনা, তবে সকাল থেকেই দেখছি চেহারায় অসুস্থতার ছাপ। কাউকে তো কিছু বলেনি।
— ওকে ভয় পাবেন না, প্রচন্ড জ্বর থেকে শকে চলে গিয়েছিলেন, মাথায় পানি দেওয়াটা বুদ্ধির কাজ হয়েছে। আমি ওষুধ লিখে দিচ্ছি, একসপ্তাহ পড়ে জ্বর ভালো না হলে এই টেস্টগুলো করাবেন, আপাতত এই ওষুধগুলো চলবে আর সাথে প্রচুর তরল খাবার আর হ্যা একসপ্তাহ ফুল রেস্টে থাকুক।

আমি ভাইয়াকে বললাম আপনি ওষুধ পথ্য সব নিয়ে আসুন আমি ভাবীর কাছে আছি। ভাইয়া বিভিন্নরকম ফল আর ওষুধ নিয়ে ফিরে এলে ভাবীকে একটু জুস খাইয়ে ওষুধ খাওয়ায়ে দিলাম।

রাতের খাবারে বেশি ঝামেলা করলাম না, দুপুরের যা তরকারী ছিলো ওসব গরম করে, কষ্ট করে কোনরকমে ভাত রান্না করে সবাইকে খেতে দিলাম। খেতে বসে শ্বশুর বললেন —
— বড় বউমা কিছুদিন রেস্টে থাকুক, সবাই তার যত্ন নিও।
শাশুড়ী খাচ্ছিলেন বললেন,
— অসুখের বাহানায় বিছানায় পড়ে থাকলে সংসার চলবে কি করে?
সাবির ভাইয়ার মুখটা বিমর্ষ হয়ে গেলো, শ্বশুর খেয়াল করলেন এবং বললেন,
— তোমার তো মানবতা নেই সেটাই জানা আছে, তা তুমি কি করবে? সারাদিন তো শুয়ে বসে কুটনামি করে দিন যায়।
— কি আমি কুটনামি করি? আমি তো মানুষ খারাপই, আমি পারবো না রান্নাঘরে যেতে।
আমি বললাম,
— বাবা চিন্তা করবেন না, আমি তেমন রান্নাবান্না পারি না কিন্তু আমি চালিয়ে নিতে পারবো, সকালে কয়দিন আমরা সবাই ব্রেড জ্যাম জেলি, ডিম, টোস্ট এসব দিয়ে চালিয়ে নেবো আর দুপুর রাতে ভাবীকে জিজ্ঞাসা করে করে রেঁধে ফেলবো মনির মা তো সাথে আছেই । লবন ঝাল কমবেশিটা আপনারা মাফ করে দেবেন।
শ্বশুর হেসে বললেন,
— বউ মা তুমি লবন দিয়ে সেদ্ধ করে দিলেও খেয়ে নেবো। আমাদের মজার খাবার খাওয়াতে গিয়ে বড় বউমার তো মরে গেলে আর চলবে না।
বড় ভাইয়ার মুখটা দেখলাম প্রসন্ন হলো।

রাতে ইউটিউব দেখে দেখে চিকেন প্রণ স্যুপ রান্না করে বাটিতে করে, ভাবীর রুমে নিয়ে গেলাম, ভাইয়া ভাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ভাবী চোখ বুজে শুয়ে আছে। আমার সাড়া পেয়ে ভাইয়া সচকিত হলো, আমার হাতে স্যুপের বাটি দেখে বললো আমার কাছে দাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
ভাইয়ার হাতে বাটি দিয়ে দরজাটা একটু ফাঁকা রেখে নিজের রুমে আসলাম, সামির ল্যাপটপে কি যেনো করছে। হাঁদারামকে বললাম, তুমি না বলেছো ভাইয়া কি করে ভালোবাসে দেখবে? যাও কোনো রকম শব্দ না করে চুপচাপ ভাইয়া ভাবীর রুমে উঁকি দেবে খবরদার! ভাইয়া যেনো টের না না পায়।

কতক্ষণ পর সামির ফিরে এলো,
আমি প্রশ্ন করলাম,
— কি দেখলে?
— ওইতো ভাইয়া ভাবীকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে।
আমি অভিমান দেখিয়ে বললাম,
— গরু তো ঘাস ছাড়া আর কি চোখে পড়বে?
রাগ করে উঠে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াতে লাগলাম। পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজলো। ফিসফিস করে বললো,
— যত্ন করে স্যুপ খাওয়াচ্ছে, আর খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়াচ্ছে, কপালে চুমু খাচ্ছে।
— আর….
— আর গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকছে, দুচোখের তারায় অবাধ প্রেম।
আমি ঘাড় ফিরিয়ে বললাম,
— তুমি এভাবে পারো ভালোবাসতে? ভালোবাসা শুধু শরীরের সাথে শরীর মেশা নয়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভূতিগুলো ভাগ করে নেয়া। যেখানে অর্থের কমতি হলেও ভালোবাসার কমতি হবে না। পারবে এমন ভালোবাসাতে?
— খুব পারবো, নয়তো তুমি শিখিয়ে দেবে।

আমি মাথায় আলতো করে একটা গাট্টা মারলাম। ঘাড়ে নিঃশ্বাস আরো ভারী হলো।

চলবে

#শামীমা_সুমি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে