দহন পর্ব-১২

0
724

#দহন
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_১২

১৮, দিন পেরিয়ে গেছে। এরমধ্যে, নীলা আকাশকে সবটা জানাইছে। আকাশ সবটা জেনে নীলাকে সঙ্গ দিচ্ছে। রায়হান হত্যা কেইসকে রিওপেন করেছে। পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনায় বলে কেইসকে বন্ধ করে দিছে।

১২ জুন ২০২৩;
উত্তরাতে এক সাংবাদিকের লাশ পাওয়া গেছে গাড়িতে। ভিক্টিমের নাম শাজাহান বয়স আনুমানিক ৪২। পুলিশ ডেড বডি নিয়ে যায় ফরেনসিক ল্যাবে। পরীক্ষার পর জানা যায় ভিক্টিমের মৃত্যু হয়েছে, স্বাভাবিক ভাবে। কোনো কেজুয়াল কারণ দেখা যায় নাই। পুলিশ মৃত্যু টি সড়ক দুর্ঘটনা বলে যাচাই করে। কিন্তু ভিক্টিমের পরিবার কেইস ফাইল করে। ওরা মন্তব্য করে ভিক্টিম কে নাকি মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বলে কেনো শাজাহানকে কেউ মারবে। মারার কোনো নমুনা বডিতে পাওয়া যাচ্ছে না। ভিক্টিমের কি শত্রু রয়েছে। ভিক্টিমের পরিবার জানায়। ওনি একজন সৎ সাংবাদিক। অন্যায়ের সাথে কখনো আপোষ করে নাই হয়তো এমন কিছু তথ্য জানতো,যা ওনি লীগ করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তার শত্রু তাকেই আগে গুম করে দেয়। পুলিশ বলে মনগড়া কথা দিয়ে কেইস ফাইল আমরা লিখি না। এরজন্য প্রপার তথ্য লাগে। আগে তথ্য নিয়ে আসুন তারপর কেইস ফাইল তৈরি করবো। কারণ ভিক্টিমের কোনো প্রকার হত্যার স্যাম্পল মিলে নাই।

“নীলা এসে বলে এসআই আরিয়ান আপনি কেইস ফাইল রিপোর্ট করেন!”

” এ আপনি কি বলছেন ম্যাডাম। আপনার মাথা কি গিয়েছে। জেনেশুনে আমি কেনো অন্ধ হয়ে মরীচিকার পিছনে ছুটবো। আমার সময়ের মূল্য অনেক। তাছাড়া আপনি নতুন লোয়ার এতোকিছু এখন আপনি বুঝবেন না! সেদিনতোই দেখলাম ৩০ বছর আগের কেইস আপনি রিওপেন করছেন। আরে ম্যাডাম তখনতো আপনার জন্মই হয়নাই। তাহলে জেনেশুনে অতীত আর মরিচীকার পিছনে ছুটা আপনার কাজ আমার নয়। এসআই আরিয়ান ইনফোর্ম ছাড়া কোনো কাজ করেনা। ”

” হয়তো আমি নতুন! কিন্তু আইনের জ্ঞান আমার মাথাও রয়েছে। কেইস লড়ি নাই বলে আপনি আমার গুনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে পারেন না। আপনি এখানে বসেছেন কেনো? জনগনকে সুবিচার পাইয়ে দেওয়ার জন্য। তাহলে জনগনের বিচার নিয়ে হাসি তামাশা করছেন কেনো? ইনফোর্মের কথা বলছেন, তাহলে আপনার একটা বিষয় জানা উচিত। গত ৩০ বছরে একইভাবে ২৮ জন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। এইটা মোটেও মরিচীকা নয়। ”

” কিন্তু গত ৩০ বছরে ২৮ জন সাংবাদিকদের মৃত্যু হয়েছে একইভাবে এই এলাকায়। আপনি জানলেন কি করে? ”

” আপনি হয়তো ভূলে যাচ্ছেন। সাংবাদিকতা পেশাটা ছোট হলেও যথেষ্ট সম্মানের। এদের মৃত্যু হবে আর নিউজ হবেনা আপনি ভাবলেন কি করে? গুগোলে বিষয়টা সার্চ করলে চাঞ্চল্যকর তথ্যর মুখোমুখি হবেন আপনি। ”

” আরিয়ান নিজের ল্যাপটপে সার্চ করে দেখতে পায়। নীলার দেওয়া তথ্যটা আসলেই সঠিক। এরপরে ভিক্টিমের পরিবারকে বলে নীলা ম্যাডামের জন্য কেইস টা ফাইল করছি। কখনো কোনো প্রয়োজন হলে আপনাদের ডাকতে পারি। আপনারা এখন আসতে পারেন। ”

” ধন্যবাদ আরিয়ান স্যার।”

” আরে কিসের ধন্যবাদ জানাচ্ছেন আপনি। এটা আমার প্রফেশনাল দায়িত্ব। তবে আমরা কি পারবো সত্যি অব্দি পৌঁছাতে। কোনো প্রমাণ না পেলে কিভাবে আমরা সঠিক পথে হাটবো। ভিক্টিমের বডিতে কোনোপ্রকার আঘাতের চিহ্ন নেই। ”

” আপনাকে একটা কাজ করতে হবে আরিয়ান স্যার। আপনি নিউজের চ্যানেলে জানান ভিক্টিমের বডি মর্গে রাখা হয়েছে। ভিক্টিমের সড়ক দুর্ঘটনা হয় নাই। কেউ তাকে জেনেশুনে মেরেছে। এই কথা অপরাধী শুনতে পেলে অবশ্যই কোনো না কোনো ভূল করবে। আর হ্যা ভিক্টিমের বডি যেনো মর্গতে রাখা হয়। কোনোভাবে এখন তার পরিবারকে দেওয়া যাবেনা দাফন করার জন্য। ”

” হুম ম্যাডাম! দিলেনতো আমার টেনশনটা বাড়িয়ে। নতুন আরেকটা মরীচিকার পিছনে ছুটা শুরু করলাম আজ থেকে। আমার শান্তি নাই যখন যেই থানায় আমার পোস্টিং হয়। তখনি মরিচীকার মতো কেইসগুলো আমার কাঁধে ভর করে। তো আপনার কেইসের কি খবর? ”

” সত্যি অব্দি পৌঁছানোর জন্য গত ১২ দিন থেকে অনেক গবেষণা করলাম। কিন্তু আমি সফল হয়নি। কারণ তখনতো আমার জন্মই হয়নি। আর ক্লু ছাড়া কিভাবে সত্যি অব্দি দৌড়াবো। পরে গুগোলে যেয়ে দেখি এই ব্যাপার। আজকেও ঘটে গেলো একটা চাঞ্চল্যকর একটা তথ্য। আজকেও কারো হত্যা হলো। এইটা ঠিক হত্যা বলা যায়না পরিকল্পিত মার্ডার। কারণ এই সাংবাদিকগুলোকে যে বা যারা মারছে। এই সাংবাদিক গুলো হয়তো শত্রুর টিমের ব্যাপারে কোনো তথ্য ফাশ করতে চেয়েছিলো। এরজন্য এরা স্বীকার হচ্ছে ওরা। ”

” এখন কি আপনার প্লানটা সাকসেসফুলি হবে ম্যাডাম। গত ৩০ বছর থেকে যে এই নিখুঁত প্লান করে মার্ডার করছে। সে কিন্তু খুবই চালাক। দেখছেন না ভিক্টিমের বডিতে কোনো প্রকার আচড় পাওয়া যাচ্ছেনা খুনের। ”

” হত্যাকারী যতই চালাক হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত না লাশের দাফন হচ্ছে ওদের কিন্তু মনে ভীতি থেকেই যায়। তারউপর নিউজ চ্যানেলে প্রচার হবে সড়ক দুর্ঘটনা নয় বরং পরিকল্পিত মার্ডার হয়েছে। সে যতই চালাক হোক কোনো না কোনো ভূল করবে। ”

” হুম ম্যাডাম এভাবে তো ভাবিনাই। যাক অবশেষে কোনো পথ দেখালেন আমাকে। ”

” আরিয়ান স্যার খুনী যদি আমাদের প্লান পাস করে। তাহলে আমাদের দ্রুত প্লান বি ভাবতে হবে। দ্রুত কাজে লেগে যান আমি আসি তাহলে। ”

_____

” কি ব্যাপার নীলা আজকাল তোমার দেখাই পাওয়া যায়না। সারাক্ষণ অন্ধকার রুমে বাল্ব না জ্বালিয়ে কি ভাবো তুমি? যখনি তোমার কাছে আসি। তোমাকে এইভাবে দেখতে পাই। তোমার এই মুখটি আর নেওয়া যাচ্ছেনা নীলা। ”

” কি করবো আকাশ? আমি যে দোটানায় ভূগতেছি। ফুপিকে অনেক বড় কথা দিয়েছি। সেই কেইসের কোনো হদিস পাচ্ছিনা। গত ১২ টা দিন যাবত এখনো কোনো ক্লু পেলাম না। রায়হান ফুপার কি আসলে হত্যা হয়েছে নাকি নিছক দুঘর্টনা যেইটা ফুপি অনেক বড় করে দেখতেছে। ”

” তুমি যে কি ভেবে আম্মাকে কথা দিলা। এইটা ৩০ বছর আগের ঘটনা তখন আম্মা কিছু করতে পারে নাই। এখন আমাদের ভালোবাসার উপর বাজে দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হলো। তুমিয়ো ক্যান যে সেদিন বললে এইটার সত্যি সামনে এনেই বিয়ে করবে আমাকে। তুমিতো জানো আম্মা অন্যরকম টাইপের। আম্মার যন্ত্রণা আমাদের উপর ভালোবাসার জন্য বারবার বাধা হয়ে দাড়াইতেছে। ”

” আকাশ আমি প্লান এ আজকে রেডি করছি। আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে এবার কোনো তথ্য আমার সামনে আসবে। ”

” কি প্লান নীলা। ”

” টিভিটা অন করে দেখেন! ”

আকাশ টিভি অন করে। নিউজ ২৪ চ্যানেলে শাজাহানকে কেউ হত্যা করেছে বলে দাবী করেছে শাজাহানের পরিবার। পুলিশ শাজাহানের বডি মর্গে রাখছে। পুলিশ যথেষ্ট ইন্সভেস্টিগেট করবে এই কেইসের। যতদিন না পযন্ত হত্যাকারী সামনে আসছে ততদিন পযর্ন্ত শাজাহানের লাশের দাফন হবেনা।

” এসব কি নীলা। শাজাহানের সাথে রায়হান হত্যার কি কানেকশন? ”

” কানেকশন যথেষ্ট রয়েছে আকাশ। কারণ শাজাহান একজন সাংবাদিক। মৃত রায়হান ফুপাও একজন সাংবাদিক ছিলো। গত ৩০ বছরে এই এলাকায় এইভাবে ২৮ জন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। যেইটা পুলিশ নিছক সড়ক দুর্ঘটনা বলে উড়িয়ে দিছে। আমারতো মনে হয় এর পিছনে একজন মাফিয়া রয়েছে যে হত্যার করার পর ডেড বডিতে কোনো প্রকার প্রমাণের চিহ্ন রাখছে না। যাতে করে পুলিশ মাফিয়া অব্দি পৌছাতে না পারে। এগুলো পরিকল্পিত মার্ডার আকাশ। এর পিছনে একজন পরিকল্পিত মার্ডারারের হাত রয়েছে। ”

” তুমি ঠিক বলছো নীলা। কিন্তু এই কেইসের চক্করে আমাদের অনেকটা সময় নষ্ট হচ্ছে। আমাদের বিয়েটাও হচ্ছে না। যারজন্য আমরা রোমান্স করতে পারছিনা। ঠিকসময়ে বিয়ে করলে আমাদের এতদিন একটা প্রিন্সেস থাকতো। তোমার কি মন চায়না আমাকে ভালোবাসতে। ”

” আকাশ আপনার মাথা কি গেছে! আমি একটি সিরিয়াস ইস্যু নিয়ে কথা বলছি। আর এই সময়ে আপনার প্রেম পাচ্ছে। প্রেম করার জন্য অনেক সময় পড়ে আছে। ”

” আর কত বছর ভার্জিন থাকবো নীলা। আটাশটা বছর তো কম নয় নীলা। তোমাকে না পাওয়ার তৃষ্ণা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আর শুনো শুধু কেইস নিয়ে ভাবলে হবে না নীলা। আমি আবার ০৪ বছর আগের নীলাকে চাই। চোখের নিচে কালো দাগ, গালের বরুনের দাগ গুলোর যত্ন নেও। যাতে বিয়ের পর বুক ফুলিয়ে স্টাফদের বলতে পারি আমার বউ যথেষ্ট সুন্দরী। ”

” নীলা আড়চোখে বলে, এখন কি আমি সুন্দরী নই। তো সুন্দরী কোনো মেয়ের পিছনে লাইন মারেন। আমাকে ভূলে যান। আর এই চোখের নিচের কালো দাগ গুলো কার জন্য। সবতো আপনার জন্য। ”

” আচ্ছা তাহলে আমার পিয়ে নয়নাকে বিষয়টা বলতে হচ্ছে। সেও যথেষ্ট সুন্দরী। তার সাথে আমাকে প্রচুর মানায়। আর কতই বা ভার্জিনিটি নিয়ে এই জীবন বয়ে বেড়াবো? ”

” ও তাহলে আমার জন্য ০৪ বছর অপেক্ষা কেনো করেছিলেন। আর এই নয়না কে কালকেই ওকে অফিস থেকে ফায়ার করবো আমি। আমার হবু জামাইয়ের পিছনে সারাক্ষণ কোনো মেয়ে কেনো ঘুড়ঘুড় করবে। আর যদি কোনো নারীর দিকে চোখ দেন, আপনার এই একজোড়া চোখ তুলে নিবো । ছেলেদের আবার কিসের ভার্জিনিটি হয়। ”

এমন সময় নীলার ফোন বেজে উঠে। ফোনটা আকাশ তুলে বলে __

” হ্যালো কে বলছেন? এতো রাতে আমার বউয়ের ফোনে ফোন দেয়। ”

” আমি এসআই আরিয়ান বলছি স্যার? এইটা এতো রাত নয় স্যার কেবলতো সাড়ে নয়টা। যতদূর জানি নীলা ম্যাডাম অবিবাহিত তাহলে আপনি কে? ”

” আমি ওর হবু জামাই। আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না অফিসার। কি জন্য ফোন দিছেন সেইটা বলেন? ”

” ম্যাডামকে লাগবে স্যার? ম্যাডামকে ফোনটা দিন। ”

নীলা আকাশের কান থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে হ্যালো স্যার। কিছু কি বলবেন?

” হুম ম্যাডাম তারআগে বলেন তো এমন বদরাগী লোককে আপনার পছন্দ হলো কি করে? ”

“আসল কথায় আসুন। ও খুবই পজেসিভ। ”

” ম্যাডাম আপনার প্লান কাজ করেছে মর্গে শাজাহানের লাশ দুজন ব্যাক্তি চুরি করতে আসছিলো? পুলিশের প্রটেকশনের জন্য লাশ নিয়ে বেড়ানোর আগেই ওরা ধরা পড়ে। এখন আমার কাস্টোডিতে রয়েছে। ভাবলাম আপনাকে বিষয়টা জানা উচিত। ”

” জিজ্ঞাসাবাদ করুন অফিসার। এখনতো বুঝলেন এইটা সড়ক দুঘর্টনা নয়। এর পিছনে আসলেই পরিকল্পিত মার্ডারের কানেকশন রয়েছে। আমরা মরিচীকার পিছনে হাটছি না। আপনি জিজ্ঞাসাবাদ করুন আমি পুলিশ কাস্টোডিতে যাচ্ছি। বাকি কথা পরে হবে। ”

” হুম ম্যাডাম। ”

নীলা এখন তুমি কাস্টোডিতে যাবে এভাবে একা একা। তাও আবার এইরকম ফালতু লোকের সঙ্গে দেখা করতে। আমি যাচ্ছি তুমি বাসায় থাকো।

” আপনি গেলে হবেনা আকাশ। আমাকে যেতেই হবে। আর হ্যা আপনার যদি আমাকে একা ছাড়তে দ্বিধাবোধ লাগে আমার সঙ্গে কাস্টোডিতে যেতো পারেন । ”

” হুম আমিয়ো যাবো চলো। ”

এরপরে আকাশ আর নীলা গাড়ি নিয়ে পুলিশ কাস্টোডিতে রওনা হয়।

” বল কে তোদের পাঠাইছে। তোরা কেনো শাজাহানের লাশ চুরি করতে এসেছিস? তোদের এতো বড় সাহস পুলিশের এতো প্রটেকশনের পরেও মর্গে ঢুকিস লাশ চুড়ি করতে। ”

#চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে