#দহন
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_১০
” আমি তোমাকে ক্ষমা আজীবন করতে পারবো না ভাইয়া। তোমার জন্য এখনো আমি সেই অতীত ভূলতে পারি নাই। তোমার জন্য রায়হান মারা গেছে সদ্য জন্ম নেওয়া নবজাতক মেয়েটা মারা গেছে। ”
” আমি তোকে কতবার বলবো। হ্যা আমি ভূল করেছি। কিন্তু কখনো তোর স্বামী ও বাচ্চার কিছু করেনি আমি। ওরা সেইদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। ”
” যে ভাইয়া কখনো আমাদের সম্পর্ক মানলো না হঠাৎ করে সেইদিন আমাদের তাদের বাড়িতে ডাকলো। আর সেইদিনে দুঘর্টনা ঘটলো। ব্যাপারটা কিউরিসিটি নয় প্লানমাফিক রায়হান ও আমার মেয়েকে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিছো তুমি। ”
” তোকে কতবার বলবো আমি এইরকম জঘন্য কাজ করতে পারিনা। বাবা তুমি রেহেনাকে কিছু বলছো না কেনো? ”
” রেহেনা ৩০ বছর আগেকার কাহিনির সূত্রপাত এখন ঘটাবি। তুই নিজেও জানিস না কত বড় ভূল করলি। তোর জন্য আকাশ আজকে মৃত্যু পথযাত্রী। নিজেকে শুধরিয়ে নে মা! ”
” বাবা আমার মুখ খোলাবে না। তোমাদের জন্য আমার জীবন টা হেল হয়ে গেছে। বিশেষ করে তোমার এই ছেলের জন্য। কি দোষ ছিলো রায়হানের? সেতো একজন সাংবাদিক ছিলো। তার পেশার রোজগার নিয়ে যথেষ্ট সুখী ছিলাম আমি। ”
” কথাটা এইটা নয় রেহেনা। রায়হান ছিলো একজন ভিনদেশী। তার পরিচয় আমরা কিছুই জানতাম না। তোর ভালোর জন্য, সমাজের ভালোর জন্য তোদের ভালোবাসার মাঝখানে আমি বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছিলাম। কিন্তু পরে তো আমি স্বীকার করছি। ”
” পরে স্বীকার করে কি হবে ভাইয়া। ত্রিশ বছর আগে আমি পালিয়ে যেয়ে রায়হান কে বিয়ে করি। এরজন্য তোমরা পরিবারের সবাই আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দাও। কিন্তু এমন কি হলো। যারজন্য আমার নবজাতক বাচ্চা যেইদিন জন্ম নিলো। তারপরের দিন খবর পাঠিয়ে দিলা তোমরা আমাদের সম্পর্ককে মেনে নিয়েছো। আমিয়ো খুশিতে রায়হান ও আমার বাচ্চাকে নিয়ে তোমাদের সাথে দেখা করতে আসলাম। কিন্তু আমি যদি তখন জানতাম এইটা প্লানমাফিক কাজ তোমার তাহলে কিছুতেই রায়হানকে আমি হারাতাম না। সাথে রায়হানের স্মৃতি হিসাবে নবজাতক বাচ্চাকে। ”
” বোন তোকে সেইদিন আমি ডেকেছিলাম। তোর বাচ্চাকে দেখার জন্য।আমি যদি জানতাম পথিমধ্যে এইরকম সড়ক দুর্ঘটনা হবে তাহলে কখনো জেনেবুঝে তোদের আসতে বলতাম না। ”
” ভাইয়া তোমার বোনকে তো ৩০ বছর আগেই মেরে ফেলছো। সেইদিন যদি রায়হান ও বাচ্চাটির সাথে সাথে আমিয়ো মারা যেতাম। অনেক ভালো হতো। তাহলে আজকে আর এইদিন দেখতে হতোনা। আমজাদকে কখনো মন থেকে ভালোবাসতে পারলাম না। না আকাশের মন বোঝার চেষ্টা করলাম। না ভালো ফুপি ও মা হতে পারলাম। ”
” তোর প্রতিহিংসার আগুন আমার ছেলে মেয়ে দুটির জীবন নষ্ট হয়ে গেলো। ”
” কিন্তু ভাইয়া এটাতো তোমার কাজের ফল। সেইদিন আমি রায়হানের ডেড বডি দেখলেও আমার নবজাতক বাচ্চাটির ডেড বডি পাই নাই। ”
” আবারো সেইম কথা। আমি কি এতোটাই স্বার্থপর নিজ হাতে বোনের ভালোবাসাকে হত্যা করবো। ”
” কিন্তু সেইদিন এই ঘটনা হওয়ার মানে এটাই দাড়ায়। ”
” পুলিশ ইন্সভেস্টিগেট করে রায়হানের শরীরে কিছু পায়নাই। আর দুঘর্টনায় নিহত হওয়ার মতো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেনাই। কিন্তু রায়হানের সাথে আমার কখনো দেখা হয় নাই তাহলে কখন ওকে মারলাম। লজিক্যালে ভাব, উল্টো তোকে আমরা দোষারোপ করতে পারি। ”
” এইবার নীলা ডুকরে ডুকরে কেঁদে বলে। চুপ থাকো তোমরা। আমার আকাশ হসপিটালে ভর্তি। আকাশের এই অবস্থার জন্য দায়ী তোমরা। তোমরা কেনো আকাশকে বুঝলা না। আজকে আমাদের জীবনে সবকিছুর পিছনে ফুপির জেদ বাবার অতিরিক্ত ভালোবাসা। ”
” আমি জানতাম না নীলা। আকাশ এরকম কিছু করতে পারে? আমি ভাবতাম ওর আমার পেট থেকে জন্ম নিছে আমার মতো স্ট্রং হবে। আমি যেমন লাইফে মুভ অন করছি ও করতে পারবে। কিন্তু ফল উল্টো টা হলো। তোদের দুজনের কাছে তো আমি দোষী। আমাকে কি শাস্তি দিবি দে মাথা পেতে নেবো। ”
” এই কথাগুলো তোমার আগে ভাবা উচিত ছিলো। তুমি নিজে যে দহনে পুড়ছো আমাদের দুজনকে সেই যন্ত্রণার মুখোমুখি দাড় করিয়েছো। ভালোবাসা যে কতোটা যন্ত্রণা ভালো করেও জেনে আমাদের সাথে এরকম করলা। আগে জানতাম ফুপিরা মায়ের মতো হয়। কিন্তু তোমার এই হঠাৎ পরিবর্তন আমাকে ছাইপাঁশা নীলা বানিয়ে দিছে। ”
” তোর ফুপি আগ থেকে তো একরোখা নীলা। আমি জানতাম ও বাধা হয়ে দাড়াবে তোদের মাঝখানে। তাই কানাডা পাঠিয়ে দিছিলাম। যাতে সবাই তোর অনুপস্থির মূল্যে বুঝতে পারে। কিন্তু রেজাল্ট যে ভিন্ন হবে তা আমার জানা ছিলো না। ”
” বাবা কিছু মনে করবে না, এইখানে তোমার হাজারটা দোষ আছে তুমিতো জানতে ফুপি একরোখা। ফুপি এরকম কিছু করতে পারে আগে থেকে জানা। তাহলে সেদিন আমাকে সামান্য সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ফুপির সাথে কথা না বলে এতো বড় এনাউন্সমেন্ট ক্যান দিলে। তোমাকে আগে এই বিষয়ে ফুপির সাথে কথা বলতে হতো। তাহলে আজকে আমাকে চারবছর কানাডাতে থাকতে হতোনা। ”
” আমি এরকম কিছু তখন ভাবিনি নীলা । আসলে আমার চিন্তাধারা তখন অন্যরকম ছিলো। ভেবেছিলাম আকাশ তোমাকে সত্যি ভালোবেসে থাকলে রেহেনা কিচ্ছুটি করতে পারবেনা। ”
” বাবা তোমার দ্বিতীয় ভূল আমাকে কানাডা পাঠানো। নাহলে এতো ক্ষুদ্র ভূল বিশাল রুপ ধারণ করতো না আস্তে আস্তে। ”
” নীল পাখি কাউকে দোষারোপ করে লাভ হবেনা আমাদের এখন।এইখানে তোমার বাবা ও ফুপি সমান দোষে দোষী। তার চেয়ে বড় দোষ তুমি আকাশ দাদুভাইকে বুঝার চেষ্টা করো নাই। ”
” হুম দাদু ভাই অনেক বড় ভূল করেছি। আকাশ ঠিক চারবছর আগে যা করেছিলো আমি আজকে তাকে চরম রুপে ফিরিয়ে দিলাম। আকাশকে যদি একটু বোঝার চেষ্টা করতাম। কিন্তু কথা আছেনা দাম্ভিকতা ভালাবাসা দেখেনা। আসলেই তাই বাবার অপমান, নিজের অপমানের ঘায়েল করতে আজ আমি ভালোবাসা হারানোর পথে লিপ্ত হলাম। কিন্তু দাদু তুমিতো মুরব্বি মানুষ আমাদের সাথে এরকম কিছু ঘটতে দিলে ক্যান? ”
” এই বিয়েটা আমার প্লানের অংশীদার নীলা। তোর বাবা কখনো তোকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে চাইনি। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম অন্যকিছু হলো অন্যকিছু। আমি ভেবেছিলাম তোর বিয়ের ব্যবস্থা করলে আকাশ অন্য জায়গায় তোর বিয়ে হতে দিবেনা। তুইয়ো অন্য কাউকে বিয়ে করবি না। কিন্তু উল্টো টা হলো। ”
” কানাডা থেকে আসার পর মানুষ টাকে ভূলেই বুঝে গেলাম। কিন্তু দাদু আমি কথা দিলাম যে জীবনে আমি আকাশের হতে পারলাম না। এই জীবনে আমি অন্য কারো সাথে সংসার করতে চাইনা। আমাকে মাফ করবেন ধ্রুব সরকার। আপনাকে আমি ডির্ভোস দিয়ে মুক্তি করে দিতে চাই। অভিশপ্ত জীবনে আপনাকে কষ্ট ছাড়া ভালোবাসতে পারবো না। আমি শুধুই আকাশের। ”
ধ্রুব নীলার কথা শোনে মিটি মিটি হাসে দাদুর দিকে চেয়ে রয়।
” ফুপি তোমার জীবনে স্যাড স্টোরি রয়েছে জানতাম না। আমি জানতাম আমজাদ ফুপাই তোমার ফার্স্ট জামাই। কিন্তু আজকে তোমার জন্য আকাশের সাথে আমার এইরকম দুর্দশা। তবে তোমাকে কথা দিলাম কানাডাতে আইন নিয়ে ভালোভাবে পড়েছি এখনো কোনো কেইস লড়িনি। তবে এই কাহিনী শোনার পর রায়হান হত্যার কেইস রিওপেন করবো। যদি সত্যি বিষ প্রয়োগে কেউ মেরে থাকে জাস্টিস পেয়ে দিবো কথা দিলাম। কানাডা যাওয়ার আগে সব ঠিক করে দিবো। ”
” হত্যাকারী তোর বাবা। পারবি বিচার করতে। ”
” আইনের কাছে সবাই সমান। এরকম কিছু যদি তথ্য মেলে অবশ্যই কোর্ডে তুলে ধরবো। আমারতো জীবন থেকে দহন কমবে না। কিন্তু তোমার জীবনকে দহনমুক্ত করবো। ”
নীলার এই কথা শুনে আমজাদ ঢোক গিলে। আশফাকুল অন্যমনস্ক হয়। দাদু মিটিমিটি হাসে ধ্রুব সহ। দিলারা খান মন খারাপ করে বসে থাকে।
এমন সময় দাদু বলে সবার যদি কথা শেষ হয়ে থাকে। তাহলে, আমি একটা কথা বলতে চাই। কথাটি শুনলে সবার মুড ভালো হয়ে যাবে। কি শুনবি তোরা এই কথা?
চলবে,,,,,