দর্পহরন পর্ব-৬৬+৬৭+৬৮

0
132

#দর্পহরন
#পর্ব-৬৬

তুলতুলের ছেলে হয়েছে সিজারে। পেটে পানি ভেঙে যাওয়ার কারনে আগেভাগে সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সময়ের আগে পৃথিবীতে এসেছে বলে বাচ্চাটাকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। তুলতুলের অবস্থা ক্রিটিক্যাল। সিজারের মাঝে হঠাৎ তার খিচুনি শুরু হয়ে শ্বাস কষ্ট হতে থাকে। তাড়াহুড়ো করে তাকে আইসিইউততে শিফট করা হয়েছে।

নাতির মুখ দেখে সালিম সাহেব যারপরনাই আনন্দিত। তার মনে হলে বাচ্চাটা তার জন্য অত্যান্ত ভাগ্যবান। বাচ্চাটা দু’টো সুসংবাদ নিয়ে এলো তার জন্য। বাচ্চা দেখতে দারুণ সুন্দর হয়েছে। একেবারে তাদের বংশের ধারা পেয়েছে। ভারী স্নেহার্দ হয় সালিম সাহেবের মন। তার সোহেল যেমন তাকে ভালোবাসতো তার সন্তান যেন তার দ্বিগুণ ভালোবাসা দিচ্ছে দাদাকে। নাতির প্রতি অপার স্নেহ অনুভব করে সালিম সাহেব। সে মনে মনে নিশ্চিত হয়ে যায় নির্বাচনে তার জয় সুনিশ্চিত।

এদিকে শরীফ ছোটাছুটি করছে তুলতুলকে নিয়ে। মেয়েটা কিসের জন্য যেন ভয় পেয়েছিল। বারবার মায়ের কথা বলছিল। সেই জন্য ওর মাকে খবর দিয়ে হাসপাতালে এনেছে শরীফ। কিন্তু মনেহচ্ছে এনে আরও বিপাকে পড়েছে। মহিলা সেই থেকে মেয়ের জন্য কেঁদে যাচ্ছেন তো যাচ্ছেন। কোন কিছুতে শান্ত হচ্ছে না। এদিকে ডাক্তারও কোন কথা বলছে না। তুলতুলের অবস্থা আদৌও কেমন সেটা বলছে না। নিজের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। শান্ত হয়ে বসা যাচ্ছে না। শরীফ হাসপাতালের এ মাথা থেকে ও মাথা হেঁটে বেড়ায়।বারবার নিজেকে বলছে, তুলতুলের যেন কিছু না হয়। এই মেয়েটা অনেক কিছু সয়েছে। এবার ওর সুখের পালা। আমি ওকে সুখের স্বাদ পাওয়াতে চাই। তাই ওকে বাঁচতে হবে, বাঁচতেই হবে।

উপরওয়ালা শরীফের প্রার্থনা শুনলেন বলেই দুইদিন পরে তুলতুলের শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলো। তাকে আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হলো। শরীফ যেন নতুন করে নিজের মধ্যে প্রান ফিরে পেলো।

*****

“তোমার আর ও বাড়ি যেতে হবে না ফাহিম। তোমার উচিত হয়নি আমার কথা অমান্য করে ওনার সাথে কাজ করতে রাজি হওয়ার। এতো রিস্ক কেন নিয়েছ?”
ফাহিম অবাক হয়ে রণর দিকে তাকালো-“ভাই, আপনার জন্য এইটুকু করবো না।”
“না করবে না। আমি চাই না আমার কারনে কারো বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি হোক। কাল একটা অনর্থ হয়ে যেতে পারতো। দেখেছ তো দিলশাদের অবস্থা? ও পুলিশ কর্মকর্তা হয়েও রেহাই পায়নি। বুঝতে পারছ উনি কতটা ডেয়ারিং?”
“আমি ওনাকে ভয় পাই না ভাই। উনি কিছু করতে পারবে না আমার।”
রণ এবার বিরক্ত হলো-“নায়কোচিত কথা বলো নাতো ফাহিম। তুমি কথা দাও আপাতত ওনার ডোরায় আর যাবে না ফাহিম। সুমনা আপার জন্য ভালো মতো কাজ করো। সুমনা আপা এলে তোমাকে স্থানীয় ভাবে একটা পদ দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। আর কাজের ব্যবস্থা করে দেব।”
“ঠিক আছে ভাই আপনি মানা করছেন আর যাব না। একটা কথা ভাই।”
“কি কথা?”
“গতদিন দুপুরে তালই সাহেবের সাথে আমার বাইরে যাওয়ার কথা ছিলো। হঠাৎ ভাবি অসুস্থ হয়ে গেলো। পরে ভাবি ঠিক হইলেও তালই মশাই আর আমাকে নিয়ে বের হয় নাই। আমাকে বাদ দিয়ে তুহিনকে সাথে নিয়ে কই যেন গেছিল। আজব ব্যাপার হইলো এই দুইদিনে তুলতুলকে নিয়ে এতো হইচই হইলো ভাবিকে কোথাও দেখলাম না। না হাসপাতালে না বাসায়।”
রণর ভ্রু কুঁচকে গেলো ফাহিমের কথা শুনে। শুভ্রাকে নিয়ে চিন্তা হলো। এতোকিছুর মধ্যেও শুভ্রার জন্য কনসার্ন এড়াতে পারে না সে। ওর কথা শুনেই বুকের ধকধক বাড়ে। মেয়েটা সেই যে গেলো আর যোগাযোগ হয়নি। মেয়েটা কি তাকে ভুল বুঝলো? হুট করে শুভ্রাকে দেখার তীব্র আকাঙ্খা হলো তার। তবে সেটা ফাহিমকে জানান দিলো না। সে চিন্তাটুকু নিজের মধ্যে রেখে বললো-“নির্বাচন পর্যন্ত সাবধানে থাকবে। একা চলাফেরা করবে না।”

পরদিন বাসায় ফিরতেই মায়ের ডাক এলো-“বাবাই, খুব তো মাকে দোষী বানিয়ে দিয়েছিলি। ওরা বাপ মেয়ে মিলেই চুড়ান্ত খেলাটা খেলছে সেটা আর বিশ্বাস হয় না তাই না?”
রণর মনটা এমনিতেই ভার হয়ে ছিলো। সে কন্ঠে উষ্মা ঢেলে জানতে চাইলো-“আবার কি হলো মা?”
“হচ্ছে তো অনেক কিছুই। বউ বউ করে তোমার মাথা গেছে। তুমি অন্য কিছুই আর দেখছো না।”
“মা পরিস্কার করে বলবে কি হয়েছে?”
“তোমার আদরের বউ ডিভোর্স পেপার সাইন করে পাঠিয়েছে। আশাকরি তোমার এবার আপত্তি নেই ডিভোর্সে।”
রণ থমকায়, ওর মুখের কথাগুলো গুহায় লুকিয়ে যায়। মুখটায় কেউ যেন কসটেপ মেরে দিয়েছে। রণ ধীর পায়ে রুমে ফিরে এলো। কোথায় যেন জীবনের সুর কেটে গেছে। এমনটা কি হওয়ার ছিলো? সে চেয়েছিল বাবার স্বপ্নটা পূরণ করতে। তার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে। সেই ভেবেই দিনরাত পরিশ্রম করে নিজেকে যোগ্য বানিয়ে রাজনীতির মাঠে আগমন। এখন মনেহচ্ছে না এলেই ভালো হতো। এতোদিনের নিয়ম মেনে চলা জীবনটা হঠাৎ অনিয়মের বেড়াজালে বন্দী হয়ে গেলো। মনমগজ ওলট-পালট হয়ে গেলো। একটা সাধারণ সুখের সংসারের স্বপ্নটা কেবলই দূরে সরে যাচ্ছে।

*****

সুমনা আর সালিম সাহেব ময়দানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকায় সমাবেশ করা নিষিদ্ধ হলো। অতীত টেনে একে অপরকে কাঁদা ছোড়াছুড়ি অব্যাহত থাকলো। নির্বাচন ঘিরে সরকারি দলে একটা বিভক্তি টের পাওয়া গেলো। বয়োজ্যেষ্ঠ কয়েকজন খোলাখুলি ভাবে সালিম সাহেবকে সাপোর্ট দিচ্ছে। আরেকদিকে সুমনার সাপের্টে আছে রণ। নেত্রী নিজে এখন দোটানায় ভুগছেন তিনি কার পক্ষ নেবেন। তার ভীষণ ইচ্ছে ছিলো সালিমকে দল থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার। শুধু সালিম না বয়স্ক যারা তাদেরকে একে একে সরিয়ে দেওয়া। দলে লম্বা সময় ধরে যারা আছেন তারা বেশিরভাগ ক্ষমতা পেলে নিজেদের সম্পদ বাড়াতে তৎপর। দেশের ও জনগনের জন্য কিছু করায় তাদের উৎসাহ কম। এসব দেখে বেশ বিরক্ত হয়েছেন নেত্রী। আসলে নেত্রী চাইছেন দলকে ঢেলে সাজাতে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য স্মার্ট, শিক্ষিত, টেকনোলজিতে ভালো জ্ঞান আছে এমন তরুন এনার্জিটিক ছেলেমেয়েদের নিয়ে দল সাজাতে। তাছাড়া তার পরে দলের ভার নেওয়ার জন্য কে উপযুক্ত সেটাও যাচাই বাছাই করতে চাইছেন এই সুযোগে। এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে ভবিষ্যত ভাবতে গেলে বর্তমানটা ছাড় দিতে হচ্ছে। আজকাল তাই বেশিরভাগ সময় গভীর ভাবনায় মগ্ন থাকছেন নেত্রী।
“মাজহার, সিদ্ধান্তে ভুল হচ্ছে নাকি? সালিমকে কি সামাল দিতে পারবো?”
মাজহার সে কথার উত্তর না দিয়ে জানতে চাইলো-“আচ্ছা, চন্দ্রের সাথে রণর ব্যাপারে কথা হয়েছে কি? সে কি চায়?”
নেত্রী অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিলো। প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে তাকাতেই মাজহার খানিকটা আনমনা হলো-“রণ ছেলেটা বেশ ঠান্ডা মাথার। দেখো সে হয়তো বুঝেছে সালিম সাহেব গ্রীন সিগনাল পেয়েছে আমাদের থেকে অথচ কোন উচ্চবাচ্য করছে না।”
“হতে পারে ব্যক্তিগত জীবনে ব্যস্ত।”
নেত্রীর কথায় মাজহারের ভাবনার জগতে কোন হেরফের হলো কিনা বোঝা গেলোনা।
“ছেলেটার মধ্যে নেতৃত্ব দানের গুণাবলি আছে। সেই সাথে প্রচন্ড সৎ, দায়বদ্ধ। এমন মানুষ পার্টনারের প্রতি লয়াল হয়। এদিকটায় এসে রণর উপর সামান্য দ্বিধা আসছে আমার। মনেহচ্ছে সালিমের মেয়েটাকে সহজে ছাড়তে পারবেনা। ছাড়লেও ওর জীবনে একটা টানাপোড়েন থাকবে।”
নেত্রীর কপালে ভাজ পড়লো দেখে মাজহার হাসলো-“এরকম আরও কয়েকজন পেলে দল নিয়ে তোমার চিন্তা দূর হয়ে যাবে। আরেকটা কথা, রণর কাছে সত্য লুকাবে না। বিয়ের কথা হলে চন্দ্রের ডিপ রিলেশনশিপের ব্যাপারটা ওর কাছে অবশ্যই খোলাসা করে বলবে। না হলে খুব সমস্যা হবে। কারন রণকে কেবল তুমি সত্য দিয়ে বাঁধতে পারবে অন্য কোন কিছু দিয়ে নয়।”
একটু থেমে নিয়ে আবার মুখ খুললো মাজহার-“আর একটা কথা কি জানো, সালিম একবার যখন দূরে সরে গেছে ওকে দূরে রাখাই ভালো হবে।”
নেত্রীকে দ্বিধান্বিত দেখায়-“কিন্তু এখন পিছিয়ে আসার উপায় নেই। তাছাড়া সব সিনিয়ররা ওর পক্ষে।”
“হুমমম। আচ্ছা, ভাগ্যের উপর ছেড়ে দাও সব। যাইহোক তাতে তোমার কোন লস নেই। কাজেই কোন ব্যাপার নিয়ে ভেবোনা।”

একদিকে নেত্রীর ভাবনা অন্যদিকে উত্তপ্ত নির্বাচনের মঞ্চ। এরমধ্যেই ঘটনাটা ঘটলো। রণ সত্যিই ভীষণ অন্যমনস্ক থাকে আজকাল। এই সুযোগে একটা অঘটন ঘটে গেলো। অন্যভাবে বলা যায় সুযোগ পেলে অঘটন ঘটিয়ে ফেললো তন্ময়। খুশিতে তুলে নিলো কিংবা বলা যায় অপহরণ করলো। অথবা আরেকভাবে বলা যায় তন্ময়কে সু্যোগ দেওয়া হলো খুশিকে তুলে নেওয়ার।

#দর্পহরন
#পর্ব-৬৭

মন খারাপ করে জানালার কাছে বসে ছিলো শুভ্রা। তখনই তন্ময়ের গাড়ি ঢুকতে দেখলো। কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে ছিলো শুভ্রা। গাড়িটা না থেমে ভেতর বাড়ির দিকে চলে গেলো। শুভ্রার হুট করে কি মনে হলো সে উঠে দাঁড়ায়। দ্রুত পায়ে ছাদে উঠে এলো। গাড়িটা রঙমহলের সামনে থেমেছে। ভেতরের ওই বাড়িটায় কখনো যাওয়া হয় নি শুভ্রার। ওটা বাবার চ্যালাদের আস্তানা বলে ওখানে বাড়ির মেয়েদের যাওয়া নিষেধ ছিল। তন্ময়ের ওখানে কি কাজ? শুভ্রা সরু চোখে তাকিয়ে থেকে দেখলো তন্ময় নেমে এসে পছনের দরজা খুললো। একটা মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে ভেতরের দিকে গেলো। দূরত্ব বলে মেয়েটার চেহারা পরিস্কার দেখতে না পেলেও শুভ্রার মনটা কেঁপে উঠলো অজানা আশঙ্কায়। তন্ময় কাকে তুলে এনেছে? খুশিকে নয়তো? না তা কি করে হয়? রণ নিশ্চয়ই খুশিদের সিকিউরিটিতে কোন ছাড় দেয়নি? খুশি না হলে কে? মনের মধ্যে আশা প্রশ্নগুলো শুভ্রাকে চঞ্চল করে তুললো। শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের একটা স্রোত নেমে যাচ্ছে। এরইমধ্যে তন্ময়কে বেড়িয়ে আসতে দেখলো। তন্ময় আশেপাশে তাকালো চোরা চোখে। শুভ্রা লুকিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর উঁকি দিয়ে তন্ময়কে দেখতে পেলো না কোথাও।

দ্রুত ছাঁদ থেকে নেমে এলো শুভ্রা। নিজের কামরায় বসে ছটফট করছে কি করবে। কোন মেয়েকে তুলে এনেছে সেটা দেখতে হবে তাকে। কিন্তু কার সাহায্য নেবে? হাসপাতাল থেকে ছুটি হয়নি তুলতুলের তাই বাড়ির সকলে তুলতুল আর বাচ্চাকে নিয়ে ব্যস্ত। কাকে বলবে কাকে বলবে না বুঝতে পারছে না শুভ্রা। আবার চুপচাপ বসেও থাকতে পারছে না। মনটা অশান্ত হয়ে আছে। শরীফ থাকলে তাকে বলা যেত কিন্তু সে তুলতুলকে নিয়ে ব্যাস্ত। শুভ্রা ছটফট করতে করতে বসার ঘরে এলো। একবার বাইরে উঁকি দিলো। আজ বাড়ি একটু বেশি নিরব। কাজের লোকগুলো কাজ করছে নিঃশব্দে। বাবা চাচা মিলে কোথাও প্রচারনায় গেছে। চাচী আর মা হয়তো হাসপাতালে। ছোট চাচা ঢাকায়। বাড়ীটাকে আজ মৃত্যু পুরী লাগছে। শুভ্রা কি একবার দেখে আসবে? তন্ময় কোথাও আছে এখন? মেয়েটার সাথে কিছু করছে নাতো? ভয়ে শিউরে উঠলো শুভ্রা। সে তন্ময়ের খোঁজে বেরুল।

*****

ইউনিভার্সিটি থেকে গায়েব হয়েছে খুশি। এই খবর পেতে পেতে বেলা গড়িয়ে গেছে রণর। ততক্ষণে সিকিউরিটির লোকজন পুরো ইউনিভার্সিটিতে খুশিকে খুঁজেছে। চব্বিশ ঘণ্টার আগে নিখোঁজ এর মামলা করা যায় না। রণ এতো কিছুর ধার দিয়ে গেলো না। সে সরাসরি অপহরণের মামলা করলো। প্রধান আসামি করা হলো তন্ময়কে। তাৎক্ষণিকভাবে ইব্রাহিম নিবাসে অপারেশন চালানোর অর্ডার দিলো। অপারেশন এর দায়িত্ব দিলশাদের উপর।

এরপরের ঘটনা অতিদ্রুত ঘটলো। দিলশাদ ফোর্স নিয়ে ইব্রাহিম নিবাসে এলো। কিন্তু প্রবেশ করতে পারলোনা কিছুতেই। গেট খোলা হচ্ছে না। কারণ এ বাড়িতে পুলিশ ঢোকার অনুমতি নেই। হাজারো বাকবিতন্ডার পরর দরজা খুলে দিতে রাজি না হওয়ায় গেটম্যানের হাতে গুলি ছুড়লো দিলশাদ। বলে দিলো সরকারি কাজে বাঁধা দিলে জানে মেরে ফেলবে। ভয়ে বাকীরা গেট থেকে সরে গেলো। একে একে সবাই ইব্রাহিম নিবাসে প্রবেশ করে। পুলিশ ইব্রাহিম নিবাসের প্রধান ভবন তল্লাশি শুরু করে। তন্নতন্ন করে প্রতিটা কামড়া চেক করছে। শুভ্রা বেরিয়ে এসেছে। ও পুলিশ দেখে অবাক হলো। দিলশাদ শুভ্রাকে দেখে সালাম ঠুকলো। শুভ্রা পুলিশী তল্লাশীর কারন জানতে চাইলো। এরইমধ্যে খবর পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন সালিম আর মোর্শেদ। দিলশাদকে দেখেই তেড়ে মারতে এলেন সালিম সাহেব-“কোন সাহসে আমার বাড়িতে ঢুকছোস তুই?”
দিলশাদ হাসলো-“সাহস তো এই পোশাকের। তাছাড়া আদালত থেকে অনুমতি নিয়েই ঢুকছি। দেখি কি কি খাজানা লুকায় রাখছেন বাড়িতে যে এতো লুকোচুরি।”
দিলশাদের উত্তরে সালিমের প্রচন্ত হুঙ্কার শোনা গেলো-“তোরে ওইদিন ছাইড়া দিয়া ভুল করছি। তয় আইজকা ছাড়ুম না। এক্ষন বাইর হ বাড়ি থিকা নাইলে খারাপ হইবো।”
“বের তো হবোই তবে কাজ শেষ হোক আগে। এখন বলুন আপনাদের সুযোগ্য পুত্র তন্ময় কোথায়? কোথায় রেখেছে মন্ত্রী স্যারের বোনকে। যত তাড়াতাড়ি বলবেন তত তাড়াতাড়ি বাঁচবেন। যদি স্যারের বোনের কিছু হয় তাহলে আজ এই ইব্রাহিম নিবাস ধ্বংসস্তুপে পরিনত হবে।”
দিলশাদের ঠান্ডা স্বরে বলা কথাগুলো শুনে মোর্শেদ চমকে উঠলো-“অফিসার আমার ছেলে তো বাসাতেই আছে। তোমার হয়তো বুঝতে ভুল হইছে। তার দ্বারা এমন কিছু করা সম্ভব না।”
দিলশাদ হাসলো-“ডাকেন আপনের ছেলেকে।”
সালিম গজগজ করলো-“তন্ময় বাসায় থাকলে তোর খবর আছে আইজ।”
মোর্শেদ তুহিনকে ইশারায় তন্ময়কে ডেকে আনতে বলে। কিছুক্ষণ পরেই তন্ময় এলো হেলতে দুলতে। পুলিশ দেখে মনে মনে ভরকে গেলেও মুখটা স্বাভাবিক রাখলো। হাই তুলে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো-“আব্বা ডাকছিলেন আমাকে?”
“হহহ। তুই আছিলি কই? পুলিশ আইছে টের পাস নাই?”
“ঘুমায় আছিলাম আব্বা কেমনে টের পাবো?”
তন্ময় আবারও হাই তুললো। সালিম দিলশাদের দিকে তাকিয়ে বললো-“দেখছোস। ওয় বাসাতেই আছিল। কি করবি এখন?”
দিলশাদের অবিচল থেকে বললো-“পুরো বাড়ি তল্লাশি করবো। এই তোমরা যা করছিলে করো। আর খুঁজে দেখো স্যারের বোন আছে কিনা। কোন ঘর যেন বাদ না পড়ে।”
“এই কেউ ঘরে যাবি না কইলাম।”
সালিম সাহেব আঙুল তুলে শাসালেন। তন্ময় অবাক হওয়ার ভান করে বললো-“কাকে খুঁজতেছেন আপনারা? কি হইছে?”
দিলশাদ জবাব দিলো-“কি হইছে একটু পরেই টের পাবা।”
তন্ময় নরম কন্ঠে বললো-“অফিসার, কি বলছেন বুঝতে পারছি না। আমাদের মতো গন্যমান্য মানুষের মান সন্মান নিয়ে এরকম তামাশা করা কি উচিত হচ্ছে?”
দিলশাদ মোলায়েম হাসি ফেরত দিলো-“তামাশা করা কাকে বলে তা আপনার কাছ থেকে শিখতে হবে না স্যার। একটু পরেই টের পাবেন কে তামাশা করছে।”
তন্ময় রেগে গেলো-“আপনি কিন্তু অপমান করছেন আমাদের।”
“ডাকাতদের আবার মান আছে?”
তন্ময় কিছু বলতে যাচ্ছিল তখন দুইজন হাবিলদার আর সাব ইন্সপেক্টর ফিরে এলো-“পেলাম না স্যার। কোনদিকেই খোঁজ পেলাম না।”
দিলশাদের কপালে ভাঁজ পড়লো। যতটুকু শুনেছে তন্ময় আজ একা আসেনি এ বাড়িতে। তাহলে গেলো কোথায় মেয়েটা? অন্য কোথাও রেখেছে?
দিলশাদের ভাবনার মাঝের সালিম তেড়ে এলো-“তোর মন্ত্রী বাপরে যাইয়া ক তার বোন এইখানে নাই। আমাগো রুচি এতো খারাপ হয় নাই যে তার বোনের লাইগা পাগল হইবো আমাগো পোলা। কার না কার লগে ভাইগা গেছে এখন আমাগো নাম দিতেছে। যা ভাগ এখন। তোর এই কাজের সাজা তো তোকে দিবই। নির্বাচনটা পাড় হইতে দে তারপর তোরে দেখতেছি।”
দিলশাদ দাঁতে দাঁত চাপে। বাইরে বেরুতে যাবে তখন হুট করে পেছন থেকে শুভ্রা ডাকলো-“ওসি সাহেব, দাঁড়ান।”
ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা সকলেই বিস্মিত। সালিম সাহেব অবাক হয়ে মেয়েকে দেখলো-“আম্মাজান, কি হইছে?”
শুভ্রা বাবার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এগিয়ে এলো দিলশাদের দিকে-“ওপাশে আমাদের আরেকটা বিল্ডিং আছে। প্লিজ ওদিকটায় একটু দেখুন। আপনারা যার খোঁজ করছেন তার খোঁজ পেয়ে যাবেন হয়তো।”
দিলশাদের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। সে সাব ইন্সপেক্টর আর হাবিলদারদের ইশারায় সেদিকে যেতে বললো। মোর্শেদ বিস্ময় নিয়ে তন্ময়কে দেখলো। তন্ময় মাথা নামিয়ে নিল। সালিম সাহেব এগিয়ে এসে মেয়ের গালে চড় কষালেন-“আম্মাজান, আপনারে কে কথা কইতে কইছে? জানেন না এই বাড়ির মাইয়ারা বাইরের কোন ব্যাপারে কথা কয় না?”
শুভ্রা অবাক হলো না। সে কেবল গালে হাত দিয়ে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। দিলশাদ এগিয়ে এলো-“বিবাহিত মেয়ের গায়ে হাত তোলা গর্হীত অপরাধ।”
সালিম ঝট করে দিলশাদের গায়ে হাত তুলতে যাচ্ছিল। দিলশাদ হাত ধরে ফেলে ঝাটকা দিলো-“নেভার ডেয়ার সামথিং লাইক দ্যাট। একবার ভুল হয়েছে বলে বারবার মাফ পাবেন না।”
“স্যার, তাড়াতাড়ি আসেন।”
দিলশাদ দৌড়ে গেলো। তন্ময় কটমট করে তাকিয়ে আছে শুভ্রার দিকে-“কাজটা ভালো করলি না শুভ্রা।”
শুভ্রা অসহায় চোখে হাসলো-“তোমাকে বাঁচিয়ে দিলাম।
“পূন্য করছোস। পূন্যের পুরস্কার পাবি।”

“এবার কি বলবেন আপনি মিস্টার সালিম ইব্রাহিম?”
জ্ঞানহীন খুশিকে দেখে মনচোখ কুঁচকে গেলো সালিমের। শুভ্রার বুকের রক্ত ছলকে উঠলো। সে ছুটে গিয়ে খুশিকে ধরলো। আহা! তার মন তবে তাকে ঠিকই বলেছিল? কেন যেন বুকের উপর থেকে একটা পাথর সরে গেলো। সে তাহলে বাঁচাতে পারলো খুশিকে? রণকে দেওয়া কথা রাখতে পারলো, এই আনন্দে লাফ দিতে মন চাইলো।
“মিস্টার তন্ময়, ইউ আর আন্ডার এরেস্ট। চলুন থানায় যাওয়া যাক। আপনার আসল শশুর বাড়িতে।”
হ্যান্ডকাফ নিয়ে এগিয়ে যেতেই মোর্শেদ মাঝে টপকে পড়লো-“খবরদার ওসি, আমার পোলাকে কিছু করবা না। কোথাও যাইবো না আমার পোলা।”
“আমাদের কাজ করতে দিন না হলে খারাপ হবে।”
“দিমু না। কি করবি? এই তুহিন যা তো জিনিস নিয়ায়।”
সালিমের কথা শুনে দিলশাদ বললো-“আমাদের পথ থেকে সরে দাঁড়ান। অনেক ঝামেলা হয়েছে আর করবেন না।”
“সরুম না। যা করার কর দেখি কি করতে পারোস।”
সালিম আর মোর্শেদ অনড় হয়ে তন্ময়ের সামনে দাঁড়ায়। তুহিন কিছুক্ষণ পরই ফিরলো পিস্তল নিয়ে। দিলশাদ তা দেখে শেষ বারের মতো বললো-“সরে যান সালিম সাহেব না হলে গুলি ছুড়তে বাঁধ্য হবো।”
“আমরা বইসা তোমারে চুমা দিমু।”
বলা মাত্রই দিলশাদ সেকেন্ডের গতিতে পিস্তাল বের করে সালিম সাহেবের হাত লক্ষ করে গুলি ছুড়লেন। গুলিটা ডান হাত এফোর ওফোড় করে বেরিয়ে গেলো। সালিম সাহেব ব্যাথায় ককিয়ে উঠলে। দিলশাদ অপেক্ষা না করে পিস্তলের বাট দিয়ে তন্ময়ের মাথায় মারলেন। শেষ পর্যন্ত মোর্শেদের দিকে বন্দুক ধরতেই মোর্শেদ দুইহাত উপরে তুলে সারেন্ডার করলেন। দিলশাদ কেবল তন্ময়কে তুলে নিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার আগে শুভ্রাকে কেবল বিদায় জ্বানালো। ফিসফিস করে শুভ্রাকে বললো-“আপনি যোগ্য ভাবির মতো কাজ করলেন। স্যার শুনলে খুব খুশি হবে। স্যারকে বাঁচিয়ে দিলেন ভাবি।”

চলবে।

#দর্পহরন
#পর্ব-৬৮

সালিম সাহেব হাসপাতালে। হাতের তালু ফুটো হয়ে গুলি বেরিয়ে গেছে। রক্ত বন্ধ হচ্ছে না বলে বাধ্য হয়ে তুহিনকে সাথে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। মোর্শেদ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো তার মাথায় খেলছে না। সে বাধ্য হয়ে ছোট ভাই তাহেরকে ফোন দিয়ে আসতে বলেছে। তার ভয় হচ্ছে মিনু ফিরে তন্ময়ের কথা জানলে কি করবে? সেই চিন্তায় তার ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে। উকিলের সাথে কথা বলা দরকার কিন্তু সাহস পেলো না। কিভাবে কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। সে আশেপাশে তাকালো শুভ্রাকে দেখা যায় কিনা। একটু আলাপ সারতেন শুভ্রার সাথে। কিন্তু শুভ্রাকে কোথাও দেখা গেলোনা। নিশ্চয়ই নিজের ঘরে বসে আছে। মনে মনে রেগে গেলো মোর্শেদ। শুভ্রার আজকের কাজের জন্য তার শাস্তি পাওনা হয়েছে। সালিম যদি এবার মেয়েকে কিছু না বলে তাহলে সে নিজে শুভ্রাকে সাজা দেবে। তার ছেলেকে জেলে ঢুকানোর সাজা তো ওকে পেতেই হবে।

বিকেলে শরীফ তুলতুল আর বাচ্চাকে নিয়ে মিনু আর রিমা বাড়ি ফিরলো। তারা তখনো জানতো না ঘটনা। পুরো ঘটনা জানতেই মিনু ভীষণ হইহই করে উঠলো। তখনই পারলে শুভ্রাকে কাঁচা খেয়ে ফেলে অবস্থা। শুভ্রা বড় চাচীর ভয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে রইলো। এরমধ্যে সালিম সাহেব ফিরলো হাত ব্যান্ডেজ করে। তখন মিনু আর রিমার মধ্যে মৃদুস্বরে ঝগড়া চলছে। মিনু সমানে শুভ্রাকে গালিগালাজ করে যাচ্ছিল। রিমা না পেরে প্রতিবাদ করলো-“আপা, বলতে গেলে তন্ময়ের কারণে আমার শুভ্রার ঘর ভাঙছে তবুও কোনদিন কিছু বলি নাই। কিন্তু আপনে তো সম্পর্কের লেহাজ করতেছেন না। যা নয় তাই বলতেছেন আমার মেয়েকে।”
“তো কি করবো? চুমা দিব তোর মেয়েকে? এই বাড়িতে কোনদিন পুলিশ ঢুকে নাই এবার সেইটাও হয়ে গেলো।”
“তাতে শুভ্রার দোষ কোথায় আপা?”
“শুভ্রার দোষ না থাকলে কার দোষ? তোর মাইয়া
বিয়ার আগে কই না কই থাইকা নষ্টামি কইরা আইসা আমাগো ঝামেলায় ফালাইছে। এখন আমার পোলার জীবন ঝুঁকিতে ফালাইলো। তোরে বইলা দিতেছি রিমা, আমার পোলার কিছু হইলে তোরা মাইয়ার জীবন বিষায় দিমু কইলাম।”
“আপা!”
আর্তনাদ করে উঠলো রিমা-“আপনে এই কথা বলতে পারলেন? শুভ্রাকে কি আপনে চিনেন না? ছোট থিকা আপনের হাতেই তো বড় হইছে। কেমনে ওর নামে এইসব বলতে পারলেন? আপনার থিকা এইসব আশা করি নাই আপা। যেইখানে আমার মেয়ের সাজানো সংসারে আপনের ছেলে ঝামেলা করলো, শুভ্রার শাশুড়ী ওকে বের করে দিলো তাও আপনের ছেলে শুধরাইলো না। আর আপনে এখন আইসা আমার মেয়েকে দায়ী করতেছেন? বাহ আপা।”
কথাগুলো সালিম সাহেবের কানে যেতেই সে গর্জে উঠলো-“চুপ করো তোমরা। কি শুরু করছো এইসব? মানুষ তো এইসব দেখলে খুশি হইবো। সবাই চায় আমাদের মধ্যে মিল না থাক। তোমরা সেই দিকে যাইতেছ।”
দুই বউ ভয়ে চুপসে গেলো। কথা বলতে বলতে সালিম সাহেব হাতের যন্ত্রণায় মুখ কুঁচকে ফেললেন। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো-“ভাবি, তোমার কথাগুলো শুনে খুব খারাপ লাগলো। আমি কখনোই আমার বাচ্চা আর তোমার বাচ্চাদের আলাদা চোখে দেখি নাই। ওরা সবাই আমার কাছে এক। যদি তাই না হইতো তাইলে তন্ময়কে আগেই শাসন করতাম। এমনকি ওর জন্য শুভ্রা কষ্ট পাইতেছে জানার পরও আমি তন্ময়কে কিছু কই নাই। আর তুমি আজকে আমার মেয়েকে কতকিছু বললা। খুব কষ্ট পাইলাম তোমার আচরণে।”
মিনু কিছু না বললেও মোর্শেদ মুখ খুললো-“শোন সালিম, কি হইছে না হইছে এইসব জানি না। আমি আমার পোলা ফেরত চাই। নাইলে ভাইরে ভুইলা যাইস।”
বলেই মোর্শেদ উঠে চলে গেলো। তার পিছনে মিনুও গেলো। একেতো হাতের যন্ত্রণা তারউপর মোর্শেদের ব্যবহার। সালিম সাহেব হাতের যন্ত্রণায় টিকে থাকতে না পেরে টলে পড়লেন সোফাতেই।

*****

রণ এলাকায় নিজের বাসায় বসে ছিলো। দিলশাদের পোশাকে লাগানো গোপন ক্যামেরায় ইব্রাহিম নিবাসের সমস্ত ঘটনা লাইভ দেখেছে সে। শেষ মেষ বোনকে সহিসালামত দেখে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে। খুশি হলো শুভ্রাকে দেখেও। তবে মনের খবর মনেই রাখলো রণ। দিলশাদ খুশিকে নিয়ে আসতেই ঢাকায় আসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় রণ। তার আগে দিলশাদ খুশিকে বুঝিয়ে দিয়ে হাসলো-“ভাই, ভাবি কি করেছে দেখেছেন তো?”
রণ সে কথার জবাব না দিয়ে বললো-“এককাজ কর দিলশাদ। দুটো ভিডিও আপলোড করে দে। নির্বাচনের আর কয়েকটা দিন তো বাকী। শেষ তুরুপের তাসটা ব্যবহার করে ফেল। আশাকরি কাজে দেবে। আর তন্ময় যেন কোন ক্রমেই বেল না পায়। ওর মুখ থেকে স্বীকারোত্তি নিবি যেভাবে হোক।”
দিলশাদ মাথা দুলিয়ে সায় দেয়। রণ খুশিকে নিয়ে ঢাকায় চলে এলো। জলি ভীষণ অস্থির হয়ে আছে। খুশিকে চোখে না দেখা অবধি ঠান্ডা হবে না। খুশি তখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। ভয়ে শরীর কাঁপছে তার। রণ তাকে শান্ত করার জন্য অনেক কিছু বলছে কিন্তু কোন কিছু তার কানে যাচ্ছে বলে মনেহয় না। শেষে হুট করে ভাইয়ের দিকে তাকায়-“ভাইয়া, আজ ভাবি বাঁচিয়েছে আমাকে। ভাবিকে প্লিজ ফিরিয়ে আনো। মানুষটা কষ্ট পাচ্ছে তোমাকে ছাড়া।”
“মা মানবে না খুশি। তাছাড়া এখন এসব নিয়ে কথা বলার সময় না খুশি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক তখন ভেবে দেখবো।”
“ভাবির বাবা ভাবিকে মেরেছে জানে তো? আমাকে বাঁচানোর জন্য না জানি আরও কতকিছু সহ্য করবে মানুষটা।”
রণ বোনের দিকে স্নেহময় দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। খুশি এখনো ভয়ে ভীত হয়ে আছে। রণ খুশির মাথায় হাত বুলায়-“এসব নিয়ে ভাবিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

জলি মেয়েকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো-“আমার খুশি আসছে রে। আম্মু তুই ঠিক আছিস?”
এতোক্ষণে খুশি কি ছুটা ধাতস্থ, নিজেকে সামলে নিতে পেরেছে। সে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো-“আমি ঠিক আছি আম্মু। জানে আর কার কারণে ঠিক আছি? ভাবি। ভাবি আমাকে তন্ময় নামক বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। ভাবি যদি চুপ করে থাকতো তাহলে আমার সাথে জি হ্তো তা ভাবতেও পারছি না।”
“সবই আল্লাহর ইচ্ছা।”
“মা, ভাবি কিন্তু চাইলে আমার জন্য কিছু করলেও পারতো। জানো ভাবির মার খেতে হয়েছে। আরও না জানি কত কি সহ্য করবে।”
জলির মেজাজ খারাপ হলো শুভ্রার গুনগান শুনে-“কি বলতে চাইছিস খুশি?”
“ভাবিকে মেনে নাও মা। কেন যেন ওনাকে আপন আপন লাগে।”
“হয়েছে এসব ফালতু প্যাচাল। হাতমুখ ধুয়ে আয় খাবার দিচ্ছি।”
জলি চলে যাচ্ছিল খুশি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে জলিকে-“ভাবির উপর খামোখাই রেগে আছো মা। মানুষটা কিন্তু খারাপ না। আচ্ছা তুমি না ভাইয়াকে ভালোবাসো? তুমি তো ভালোমতোই জানো ভাইয়ার খুশি কিসে? তাহলে কেন জেদ করছো মা?”
জলি থমকে গেলো। খুশির সাথে এবার হাসিও জোগ দিলো-“খুশি সত্যি বলছেমা। ভাবি কিন্তু কখনো পরিবারের সাপোর্ট নেয়নি। তাহলে কেন তাকে এরকম সাজা দিচ্ছ? মেনে নাও মা, ভাইয়া খুশি হবে। দেখছো না ভাইয়ার অবস্থা। মুখে না বললেও মনে মনে গুমড়ে মরছে। তুমি চাইলে সবকিছু আগের মতো সুন্দর হয়ে যাবে মা।”
জলি অভিমানে ঠোঁট ওল্টায়-“তোদের সবার কাছে আমিই খারাপ তাই না। অথচ আমি কেন এমন করছি কেউ বুঝতে চাইছে না। তাহলে আমি চলে যাই অন্য কোথায়। তোদের ঝামেলা হবে না। যা খুশি তাই কর তোরা।”
হাসিখুশির মুখের জ্যোতি নিভে গেলো-“মা, কেন বুঝতে চাইছো না?”
আড়াল থেকে মা বোনদের আলাপ শুনলো রণ। মায়ের অনড় মনোভাব দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। তারপর ধীর পায়ে নিজের ঘরে ফিরে গেলো। আজ শুভ্রাকে মন দিয়ে দেখেছে সে। শুভ্রা বলেছিল, হাসিখুশিকে বোনের নজরে দেখে। কথার কথা ছিলো না সেটা আজ শুভ্রা প্রমান করে দিয়েছে। ভিডিওতে দেখেছে রণ, মেয়েটা এরইমধ্যে ভীষণ শুকিয়ে গেছে। কি যে খারাপ লেগেছে। সালিম সাহেব যখন ওকে মারলো যেন নিজের বুকে আঘাত টের পেলো রণ। আর কখনো কি শুভ্রাকে পাবে না সে? সত্যি কি শুভ্রাকে হারিয়ে ফেললো?

চলবে।
©Farhana_Yesmin

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে