ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ৩
সকালে ঘুম ওঠেই ফোন চেক করার পরই চিৎকার দিয়ে ওঠে পাপড়ি। তার চিৎকার শুনে পাশ থেকে পুষ্প ঘুম থেকে লাফ দিয়ে ওঠে। হঠাৎ পাপড়ির চিৎকার শুনে বাহিরে থেকে তার মা ও দাদীও দৌড়ে আসে। সবাই অবাক হয়ে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। এদিকে পাপড়ি একা একাই হাসছে। হঠাৎ পুষ্প বলে ওঠে
– কি হলো টা কি তোর? সাঁজ-সকালে এমন চিৎকার দিয়ে এখন পেত্নির মতো হাসছিস? ভুতে-টুতে ধরলো নাকি?
পাপড়ি কিছু না বলেই দৌড়ে দরজায় দাড়িয়ে থাকা তার মাকে জড়িয়ে ধরে বললো
– মা আমি চাকরি পেয়ে গেছি। দেখো চাকরির কর্নফার্মেশন মেসেজ এসেছে।
তার কথা শোনে সবার মুখে হাসি ফুটলো।
পুষ্প বললো
– যাক, চাকরিটা পেলি শেষমেষ। আমি ভাবছিলাম তুই চাকরি খুজতে খুজতে বুড়ি হয়ে যাবি।
পাপড়ি ভ্যাংচি কেটে বললো
– এ্যাহ, বুড়ি হতে আমার বয়েই গেছে।
দাদী বলে ওঠে
– এতো খুশির সংবাদ। এই সংবাদে মিষ্টি মুখ না করলে হয়। বৌমা একটু পায়েস যদি হয়ে যেত আজ?
– হ্যা কেনো নয় মা। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না যে তুই চাকরিটা পেয়ে গেছিস।
– হ্যা মা, সত্যিই পেয়ে গেছি। কালকেই জয়েন করতে বলছে। আর দাদী এখন হয়তো তোমার বড় নাতীনির বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই বলো?
পুষ্প কথাটা শুনেই রেগে গেলো। রাগান্বিত স্বরে বললো
– কিহ! এই তোর চাকরি পাওয়ার মধ্যে আমার বিয়ের দেওয়ার কি সম্পর্ক রে?
পাপড়ি ভেংচি কেটে বললো
– এতোদিন বলছিস যে আমি মা-দাদীর খেয়াল রাখতে পারবো না। এখন তো আমি চাকরি পেয়ে গেছি এখন কি বলবি?
– তোর এতো বিয়ে শখ যখন তুই ই করে নে না। চাকরি তো পেয়ে গেলি এখন বিয়েটাও করে নে।
– কেনো তুই আমার থেকে ৫ মিনিটের বড় ভুলে গেছিস নাকি।
– তো কোথায় লিখা আছে সবসময় বড়দেরই আগে বিয়ে করতে হবে?
এবার আফিয়া বেগম বলে ওঠলো
– আহ! এবার থাম না তোরা, অনেক হয়েছে। পুষ্প তুই গিয়ে বাজার থেকে মিষ্টি নিয়ে আয় তো। সত্যিই মেয়েগুলোকে নিয়ে পারা যায় না।
এই বলে মা-দাদী বিদায় নিলো।
পুষ্পও ভেংচি কেটে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে দরজা খুললো নীল। বাহিরে পুষ্প আর পাপড়িকে মিষ্টি আর পায়েস হাতে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে বললো
– কি ব্যাপার এতো সকালে তোরা মিষ্টি-পায়েস নিয়ে আমার বাসায় এসেছিস। আমার জন্য বিয়ের সমন্ধ এনেছিস বুজি?
পাপড়ি মুখটা একটু ভেংচি কেটে বললো
– তোর মতো রামছাগলকে কে বিয়ে করবে?
– কেনো তুই শাকচুন্নি করবি।
– এ্যাহ, তোর মতো রামছাগলকে বিয়ে করতে আমার বয়েই গেছে।
-অাহ, তোরা দুজন চুপ করবি? যেই কাজের জন্য এসেছি সেটা আগে শেষ করি।
পুষ্প এমন কথায় নীল অবাক হয়ে বললো
– কি কাজ?
– একটা খুশির সংবাদ আছে। আগে তুই সরে দাড়া। কাকিমা কোথায়, কাকিমা?
বলতে বলতে ঘরের ভিতরে চলে গেলো পুষ্প।
পুষ্প ডাক শুনে ঘরের ভিতর থেকে ছুটে এলো নীলের মা।
– কিরে পুষ্প যে, কতোদিন পরে এলি।
– এই যে ধরো, মিষ্টি আর পায়েস।
– ওমা, এগুলো কেনো রে।
– পাপড়ি চাকরি পেয়ে গেছে গো, সেই খুশিতে।
– (মুখে হাসি নিয়ে) ওমা তাই নাকি। তো পাপড়ি কই?
পাপড়ি ঘরে ঢুকে নীলে মায়ে কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পেছন থেকে নীল পাপড়ির বেনুনিটা টান দিয়ে বললো,
-এই শাকচুন্নি শোন?
-ওমাহ!!
পাপড়ি রাগান্বিত স্বরে বললো
– এই রামছাগল, বাদর, ছুছোন্দর। তুই আবার আমাকে শাকচুন্নি বলছিস।
-হে, তোর মতো শেওড়া গাছের পেত্নিকে আর কি বলবো?
সামনে নীলের মাকে আসতে দেখে পাপড়ি দৌড়ে গিয়ে বলে
– দেখেছো কাকিমা, তোমার ছেলে আমাকে আবার শাকচুন্নি বলেছে আর বেনুনি ধরেও টান দিয়েছে।
– আর আমাকে কি কি বলেছিস বলিস না কেনো মাকে?
পুষ্প বলে ওঠে
-এদের ঝগড়া আর শেষ হবে না।
বলেই হেসে দিলো পুষ্প আর নীলের মা।
-বলি চাকরি তো পেয়ে গেলি এখন বড় হবি কখন তুই?
পুষ্পর কথা শুনে নীল বলে ওঠে
-ও! চাকরি পেয়ে গেছিস। তোর মতো পেত্নীকে চাকরিটা দিলো কে শুনি?
-দেখেছো কাকিমা আবার পেত্নি বলেছে।
এবার নীলের মা বলে ওঠলো
-আহ নীল! আর খেপাস নাহ! কতোদিন বাদে এসেছে মেয়েগুলো। এক পাড়াতেই তো থাকি তো মাঝে মাঝে আসতেও তো পারিস তোরা। তোদের দেখে তোদের কাকুও খুশি হয়।
– কি করবো কাকিমা। সময়ই তো পাই না। ক্যাফেটা সামলাতে সামলাতে দিন চলে যায়।
পুষ্পর কথা শুনে নীল বললো
– পুষ্পরটা তো বুজলাম। তা পাপড়ি কেনো আসিস না?
পাপড়ি ভেংচি কেটে বললো
– তোর মতো রামছাগলের জন্যই আসি না। আসলেই তো আমাকে খোঁচানো শুরু করে দিস।
-এ্যাহ! আমার আর অফিস নেই। সারাদিন তাকে খোঁচানোর জন্য বাসায় বসে থাকবো।
-উহ! তোদের ঝগড়াটা আর থামানো গেলো না। আচ্ছা কাকিমা আমরা যাই তাহলে।
পুষ্পর এমন কথাই নীল মা বললো
– সেকি! মাত্রই তো আসলি। আর কিছুক্ষণ থাক?
-নাহ, কাকিমা। ক্যাফেতে যেতে হবে।
পাপড়িও বললো
– হে, আমারও কাজ আছে বাসায়। অন্য কোনোদিন আসবো আমরা।
-আচ্ছা যা তাহলে। সাবধানে যাস দুজন।
যাওয়ার সময় পাপড়ি মুখ ভেংচি কেটে বিদায় নিলো।
চলবে…..