ত্রিভুজ প্রেম পর্ব -১৪

0
1310

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৪

মেহমানদের বিদায় দিয়ে দাদী রাইয়ানের একটা ছবি নিয়ে পুষ্পর কাছে যায়।
– নে দেখ? ছেলে পছন্দ হয় কিনা তোর?
পুষ্প রাগে ছবিটা নিয়ে একটানে ছিড়ে ফেলে দেয়।
– এটা কি করলি তুই?
– ঠিকই করেছি। এ বিয়েতে আমার একদম মত নেই শুধু মায়ের কসমের কারণেই আমি রাজি হয়েছি নয়তো কখনোই এ বিয়ে করতাম না। আর তুমি এসেছো আমাকে ছেলের ছবি দেখাতে?
দাদী একটু হেসে পুষ্পের মাথায় হাত রেখে বলে
– যখন তোর বিয়েটা হবে তখন তুই বিয়ের মর্যাদাটা বুজতে পারবি।
বলে দাদী চুপচাপ চলে যায়।

বাসায় গিয়ে মি. রাশেদ রুমে ঢুকতেই পেছন থেকে মিসেস মাহমুদা চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে
– এ বিয়ে নিয়ে তোমার কি আমার মতামত নেওয়া একদমই প্রয়োজন মনে হয়নি?
-আহা! চিৎকার করছো কেন?
– চিৎকার করবো নাতো কি? ঐখানে গিয়ে তুমি বলে দিলে যে মেয়ে তোমার পছন্দ হয়েছে, আমার কি মেয়ে পছন্দ হয়েছে কি না সেটা জানতে চেয়েছো?
মি. রাশেদ একটু অবাক হয়ে বললো
– কেনো মেয়ে তোমার পছন্দ হয়নি?
– না। এই রকম একটা গাইয়ে ভুত মেয়েকে আমি আমার ছেলের জন্য পছন্দ করবো ভাবলে কি করে তুমি?
– এসব কি বলছো তুমি? আমাদের ছেলে মেয়েটাকে পছন্দ করছে বলেই তো আমরা মেয়েটাকে দেখতে গিয়েছিলাম।
– আমার ছেলের পছন্দ হলেই তো হবে না আমারো মেয়েকে পছন্দ হতে হবে। আর এই মেয়েকে আমার একদম পছন্দ হয়নি। এ মেয়ের সাথে আমি আমার ছেলের বিয়ে কখনোই দিবো না।
– তোমার কথাতে তো সব হবে না। তোমার যে কেমন মেয়ে পছন্দ তা তো আমার ভালো করেই জানা আছে। শুনে রাখো মাহমুদা, রাইয়ান পুষ্পকে পছন্দ করেছে আর তাই পুষ্পর সাথেই রাইয়ানের বিয়ে হবে। এতে তোমার মত থাকুক বা না থাকুক। আর এটাই আমার শেষ কথা।

রাইয়ান বাসায় এসে বাবা মায়ের এমন চিৎকার চেচামেচি শুনে তার মনটাই খারাপ হয়ে গেছে। মা যদি এ বিয়েটা ভেঙে দেয় তাহলে তো সব শেষ।
– পুষ্প কি আমায় বিয়ে করতে রাজী হয়েছে?  একবার কি ফোন দিবো তাকে?
ভাবতে ভাবতে একটা কল দেয় রাইয়ান। কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। ফোন বন্ধের কারণ খুঁজে পাচ্ছে না।
– হঠাৎ করে ফোনটা বন্ধ করে রাখলো কেন পুষ্প?
পেছন থেকে রাইয়ানকে ডাক দেয় মি. রাশেদ। বাবার ডাক শুনে রাইয়ান তার কাছে গিয়ে বললো
– কিচ্ছু বলবে বাবা?
– হ্যা। পুষ্পকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তোর পছন্দ আছে বলতে হবে।
রাইয়ান কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলো কথাটা শুনে। একটু হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো
– পুষ্প কি আমাকে পছন্দ করেছে?
– তা তো বলতে পারলাম না। তবে মেয়ের পরিবার তোকে খুব পছন্দ করেছে।
কথাটা শুনতেই রাইয়ানের মনটা নেচে ওঠে।
-হ্যা রে শোন, তোকে যেটার জন্য ডেকে ছিলাম, আগামী বুধবার তোকে পাত্রীপক্ষ দেখতে আসবে। ঐদিন কিন্তু অফিসে কোন মিটিং বা কাজ রাখিস না।
– কিহ! আমাকে দেখতে আসবে?
– তোর কাছে মেয়ে বিয়ে দিবে আর তোকে দেখতে আসবে না, এটা কোন কথা? তোর কি কোন সমস্যা আছে তাতে?
– না না, আমার কোন সমস্যা নেই। ঐদিন আমি অফিসেই যাবো না।
– আচ্ছা। তুই যা ভালো বুজিস। আমি একটু তোর দাদাভাই দেখা করে আসি।
-আচ্ছা।

– ছেলের বাবা রাশেদ সাহেবের ব্যবহার আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। লোকটা একবারে মাটির মনের মানুষ। 
দাদীর এমন কথা শুনে আফিয়া বেগম বললো
-হ্যা মা। আমারো তাই মনে হয়। তবে মিসেস মাহমুদা আচরণ আমার একদমই ভালো লাগে নি। কেমন যেন গুমরো মুখ করে ছিল। দেখে মনে হচ্ছিলো এ বিয়েতে তিনি একদমই রাজি নন।
– এমন কিছু না। তিনি প্রথম প্রথম আমাদের বাসায় এসেছে তো তাই হয়তো এমন হয়ে ছিল। তুমি শুধু শুধু  চিন্তা করছো বউমা। আমাদের পুষ্পের এখানে বিয়ে হলে সে সুখেই থাকবে।

সকালে খুব ভালো একটা ঘুম দিয়ে ওঠেছে নীল। ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে দেখলো পাপড়ি চা বানিয়ে সবাইকে চা দিচ্ছে। নীল সোফায় গিয়ে বসেই বললো
– আমাকেও এক কাপ চা দে, খেয়ে দেখি কি রকম চা বানাস?
পাপড়ি মুচকি একটা হাসি দিয়ে কিচেন থেকে এক কাপ বানিয়ে আনলো।
– কি ব্যাপার, সবাইকে ট্রে থেকে চা বানিয়ে দিলি আর আমার বেলায় কিচেন থেকে বানিয়ে আনলি কেন?
– আসলে তুই তো এতোক্ষণ ছিলি না আমি শুধু রূপা, আংকেল আর আমার জন্য চা এনেছি। তাই তোর জন্য কিচেন থেকে চা বানিয়ে আনলাম।
-হুম। দে।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে নীল আ…. করে চিৎকার দিয়ে ওঠলো।
নীলের চিৎকার দেখে রূপা বললো
– কিরে, কি হয়েছে?
– আ… ঝাল ঝাল, পানি পানি।
নীলের এ অবস্হা দেখে পাপড়ি হাসতে হাসতে বললো
– এবার বুজেছিস আমাকে ফেলে দেওয়ার মজা। কেমন লাগছে এখন  নীল মহাশয়?
নীল রূপা এনে দেওয়া পানি খেয়ে বললো
– তোর চুলগুলো যদি আজ না ছিড়েছি তবে বলিস।
– এতো সহজ নাকি?
বলেই পাপড়ি দৌড় দিলো আর তার পেছনে নীলও।

সকালে অফিসে এসে রাইয়ান পাপড়িকে দেখতে না পেয়ে খুব হতাশ হয়ে গেলো।
– আজও আসে নি পুষ্প। আজ তো সমস্যা নেই। নাকি আমার সামনে আসতে লজ্জা পাচ্ছে সে? একবার কল করে দেখি।
কল দিতেই ফোন বন্ধ।
– এখনো ফোন বন্ধ করে রেখেছে?
তবে কি পুষ্প আমায় বিয়ে করতে রাজি নয়? তার কি আমাকে পছন্দ হয় নি?

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে