ত্রিভুজ প্রেম পর্ব -১৩

0
1359

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৩

– ঊফ! আস্তে কাতুকুতু লাগছে তো। ওদিকে ধরো না। ওদিকে আমার কাতুকুতু বেশি।
– ইশ! পুষ্প, এমন করলে শাড়ি পড়াবো কি করে তোকে আমি?
– আরে কাকিমা, আমি কী করবো আমার যে কাতুকুতু লাগছে।
– কাতুকুতু লাগলেও চুপ করে দাড়িয়ে থাক। আমি তাড়াতাড়ি শাড়িটা পরিয়ে দেয়, ঐদিকে মেহমানদের আসার টাইম হয়ে গেছে।
-হুম।
– নে এবার হেটে দেখ কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা।
পুষ্প দুকদম হাটতেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়।
– ওফ! এসব শাড়ি-টাড়ি পড়া আমার দ্বারা হবে না, আমি গিয়ে বরং সালোয়ার-কামিজ পড়ে নিই।
– নাহ! একদম না। তোর মা আর দাদী ব্যস্ত থাকায় তোকে শাড়ি পড়ানোর জন্যই ভাবি আমাকে বাসা থেকে ডেকে এনেছে, আর কড়া করে বলে দিয়েছে তোকে যেন শাড়িটা সুন্দর করে পড়িয়ে দেই। আর তুই যাচ্ছিস সালোয়ার-কামিজ পড়তে?
– উফ! মা আমাকে একটুও কি শান্তিতে থাকতে দিবে না।
– হুম হয়েছে, এখন আমি শাড়িটা ঠিক করে দিচ্ছি। এবার আর হাটতে সমস্যা হবে না তোর।

গাড়িটা বাসার সামনে থামতেই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায় মি. রাশেদ আর ঘটক। মিসেস মাহমুদা এখনো গাড়িতেই বসে আছে। তার একদম গাড়ি থেকে নামতে ইচ্ছা করছে না।শুধু স্বামীর কথা আর ছেলের পছন্দের কথা ভেবে সে এখানে এসেছে। নয়তো এসব জায়গায় পাও রাখে না মিসেস মাহমুদা।
– কি হলো? নামছো না কেন গাড়ি থেকে?
মি. রাশেদের কথার কোন জবাব না দিয়ে গাড়ির দরজাটা খুলে বের হলো মিসেস মাহমুদা। বের হয়ে চারপাশটায় নজর ঘুরিয়ে বললো
– উফ! কি গরম এখানে। এতো ছোট বাসায় মানুষ থাকে কীভাবে আমার তো মাথায় আসে না।
মিসেস মাহমুদার মুখে এমন কথা শুনে মি. রাশেদ মুচকি হেসে বললো
– সবাই তোমার মতো বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত নয়।
মি. রাশেদের এমন কথা শুনে একটা মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে মিসেস মাহমুদা।
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনেই আফিয়া বেগম বুজতে পারে যে মেহমান চলে এসেছে।  নিজের শাড়িটা ঠিক করতে করতে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে দরজা খোলে তাদের স্বাগতম জানায়।
মি. রাশেদ আফিয়া বেগমকে সালাম দিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে। মিসেস মাহমুদা এখনো বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের ভেতরে যাওয়ার ইচ্ছা তার নেই। ইচ্ছে করছে এখনি গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যেতে। কিন্তু একরকম বাধ্য হয়েও ঘরে ঢুকে মিসেস মাহমুদা।
মেহমানদের আসতে দেখে রুম থেকে দাদী আর নীলের মা বেরিয়ে আসে। তাদের সবাইকে  সোফায় বসিয়ে খাবার এনে আপায়ন করছে আফিয়া বেগম। মি. রাশেদ এক কাপ চা নিলেও মিসেস মাহমুদা কোন খাবারেই হাত দিচ্ছে না। চুপচাপ সোফার এক কোনায় বসে আছে।

কিছুক্ষণ পর পুষ্পকে নিয়ে আসা হয় দেখানোর জন্য। পুষ্প চুপচাপ এসে চেয়ারে বসে। পুষ্পকে কোনো নাটক করতে না দেখে দাদী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

পুষ্পকে মি. রাশেদের খুব পছন্দ হয়েছে। নিজের ছেলের পছন্দের ওপর গর্ববোধ করছেন তিনি। অপরদিকে মিসেস মাহমুদার পুষ্পকে একদম পছন্দ হয়নি। মনে মনে বলছে
– এইরকম একটা গাইয়ে ভুত মেয়েকেই পছন্দ করলো রাইয়ান। দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পড়েছিল যে এই মেয়ের জন্যই পাগল হয়েছে সে। ছেলেটা আমার একদম ওর বাবার ওপরই গিয়েছে। নাহলে এমন মেয়েকে নিজের জন্য কখনই পছন্দ করতো না।

রাইয়ান খুব টেনসনে আছে।
-পুষ্পকে কি মা-বাবার পছন্দ হবে? বাবার কাছ থেকে কিছুটা আশা থাকলেও মার কাছ থেকে আমার কোনো আশায় নেই। আর পুষ্পও কি আমাকে বিয়ে করতে রাজী হবে?
পুষ্পকে কি একবার ফোন দিবো? নাহ! এখন কিভাবে ধরবে ফোন সে। সে তো এখন হয়তো মা-বাবার সামনেই বসে আছে।
ধুর কি সব ভাবছি আমি, সব ভালো হবে।
এটা বলে নিজের মনকে শান্তনা দেয় রাইয়ান।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

রুপার বিয়ের বাড়ি সাজানোর দায়িত্বটা রূপা পাপড়ি আর নীলকে দিয়েছে। অনেকক্ষণ ধরে ফুল নিয়ে ছুটাছুটি করছে পাপড়ি। লোকদের বলে দিচ্ছে কোন ফুলটা কোন জায়গায় দিতে হবে। পাপড়ি কিছু ফুল নিয়ে উচু টুলে ওঠে ফুল লাগাতে থাকে। হঠাৎ পাপড়ি টুলে নিজের ব্যালেন্স না সামলাতে পেরে পড়ে যেতেই কেউ একজন তাকে ধরে ফেলে। পাপড়ি চোখ খুলতেই দেখে নীল তাকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সকালের ফোন ভাঙ্গার রাগটা পাপড়ির এখনো আছে নীলের ওপর। তাই পাপড়ি রেগে বললো
– তুই আমাকে ধরলি কেন?
নীল আশ্চর্য হয়ে বললো
– তুই পড়ে যাচ্ছিলি তাই ধরেছি।
-পড়ে গেলে পড়ে যেতাম তবুও তুই আমাকে ধরলি কেন?
-ওকে তাহলে নে..
বলেই নীল পাপড়িকে ছেড়ে দেয়। পাপড়ি নীলের কোল থেকে ধপাস করে পড়ে যায়।
-ওমা! আমার কোমড়টা ভেঙ্গে ফেলেছে। এই রামছাগল, তুই আমাকে ছেড়ে দিলি কেনো?
– তুই তো বললি তোকে না ধরতে তাই ছেড়ে দিছি।
বলেই নীল গান গাইতে গাইতে চলে যায়।
– নীলের বাচ্চা,তোকে এর মজা দেখাবো আমি।

পুষ্পকে রুমে ভিতর পাঠিয়ে মি. রাশেদ বললো
-মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।
মি. রাশেদের মুখে এমন কথা শুনে আফিয়া বেগম আর দাদীর মুখে হাসি ফুটে। তবে মিসেস মাহমুদা রাগে লাল হয়ে আছে। মনে মনে বলছে
-আমার মতামত না নিয়েই পছন্দ হয়েছে বলে দিলো। আমার মতামতের যখন প্রয়োজন ছিলোই না তো আমাকে কেনো এনেছে এখানে।
সামনে মানুষ থাকায় কিছু বলতেও পারছে না এখন মিসেস মাহমুদা।
দাদী হেসে বললো
– মেয়ে আপনাদের পছন্দ হয়েছে এটাই অনেক আমাদের কাছে।
– হ্যা। এখন আপনারা গিয়ে আমার ছেলেকে দেখে আসুন।
-ছেলেকে দেখার কি আছে, ছবিতে তো দেখছি আমরা।
-তবুও ভালো-মন্দের একটা বিচার আছে না, আপনারা আপনাদের মেয়েকে কোথায় পাঠাবেন তা তো দেখতে হবে আপনাদের। আপনারা দু-তিন দিনের মধ্যেই গিয়ে রাইয়ানকে দেখে আসুন।
মি. রাশেদ এমন কথা শুনে দাদী আর আফিয়া বেগম খুব খুশি হয়।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে