ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১১
-ছোটবেলায় মা-বাবা যখন তাদের কর্মব্যস্ততার জন্য আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল, ঠিক তখন দাদাভাই আমাকে তাদের দুজনের ভালবাসা দিয়েছে। আমাকে বড় করার পেছনে আমার বাবা-মায়ের চেয়ে আমার দাদাভাইের ক্রেডিট বেশি। আর আজ দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার বেলায়ও তিনি আমার কথাই ভাবছেন। আর আমি তার নাতি হিসেবে আমার কর্তব্য দাদাভাইয়ের শেষ ইচ্ছাটুকু পূরণ করা।
রাইয়ান হাতে তিন-চারটা মেয়ের ছবি নিয়ে এই কথাগুলো ভাবছে। কিন্তু কোন মেয়েকেই তার পছন্দ হচ্ছে না।
আজ সকাল থেকেই রাইয়ানের বাবা, মা,বোন মিলে একগাদা মেয়ের ছবি নিয়ে রাইয়ানকে দেখাচ্ছে। রাইয়ানকে অফিসেও যেতে দিলো না আজ।
– হ্যালো আন্টি।
শায়ন আসতে দেখে রাইয়ান কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো।
শায়নকে দেখে রাইয়ানের মা মিসেস মাহমুদা মুখে হাসি নিয়ে বললো
– এসো বাবা, এসো। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। এখন তুমি তোমার বন্ধুর জন্য মেয়ে পছন্দ করে দাও।
শায়ন কিছুটা মুচকি হেসে বললো
– এ কাজের জন্য ডেকেছো আমায়? তা আমার পছন্দের মেয়েকে কি আমার বন্ধুর পছন্দ হবে?
বলেই গিয়ে বসলো রাইয়ানের পাশে। রাইয়ানের চুপসে পড়া মুখ দেখেই শায়ন বুজতে পেরেছে যে রাইয়ানের মেয়ে পছন্দ হচ্ছে না। তাই আস্তে করে রাইয়ানকে বললো
– কিরে, কোন মেয়েই পছন্দ হচ্ছে না?
– কি করে হবে? আমি যে পুষ্পকে পছন্দ করি।
– উফ! এ পেয়ার… তা মেয়েটার তো বয়ফেন্ড আছে বললি তো এখন পছন্দ করে কি হবে?
– আরে না, কোন বয়ফেন্ড নেই। ঐদিন আমি একটু ভুল বুঝে ফেলিছিলাম। কালকেই ও আমাকে বলছে যে ওর বয়ফ্রেন্ড নেই।
– ওহ! এতো খুশির সংবাদ। তো প্রপোজটা করেছিস?
– না। আর কিছু বলার সুযোগ পাই নি।
– তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না।
– তুই একটু হেল্প কর প্লিজ?
– আচ্ছা। শোন তোর যা অবস্থা তুই মেয়েটাকে কখনই তোর মনের কথা বলতে পারবি না। তার চেয়ে বরং এখন সরাসরি বিয়ের সমন্ধটাই পাঠিয়ে দে। মেয়ে রাজী হলে তো বিয়ে করবিই নাহলে অন্য মেয়ে দেখবি। কেমন আইডিয়াটা?
– কিন্তু পুষ্পকে কোন কিছু না বলেই সরাসরি বিয়ের প্রপোজাল পাঠিয়ে দিবো? একটু তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে না?
– আরে ধুর তোর তাড়াহুড়ো! এখন কিছু না করলে না মেয়েটাকে আর পাবি না বুজছিস?
-কিন্তু……
-কি কথা হচ্ছে চুপিচুপি দুই বন্ধুর মধ্যে?
রাইয়ান বাবা মি. রাশেদ প্রশ্নটা করলেন তাদের।
বাবার কথা শুনে রাইয়ান চুপ করে বসে পড়লো।
– তা আংকেল-আন্টি আপনারা তো শুধু শুধু এসব মেয়ের ছবি দেখে টাইম নষ্ট করছেন?
শায়নের এমন কথা শুনে ছবির থেকে নজর সরিয়ে সবাই নজর দিলো শায়নের দিকে। মিসেস মাহমুদা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন
– মানে! কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
– রাইয়ানের তো আগে থেকেই মেয়ে পছন্দ করা আছে।
এই কথা শুনে যেন মিসেস মাহমুদার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। তবে মি. রাশেদ তা শুনে খুশি হয়েছে।
রাইয়ানের বোন নুরি বললো
-তা ভাইয়াকে তো শুরুতেই জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তার কোনো পছন্দ আছে কিনা? তখন তো কিছু বলেনি ভাইয়া?
– আরে তুই তোর ভাইয়াকে চিনিস না? মেয়েদের মতো লজ্জায় কথা বলতে পারে না। দেখিস না এই তার মেয়ে পছন্দের কথাটাও আমাকেই বলতে হয়েছে।
শায়নের এমন কথা শুনে মিসেস মাহমুদা চোখের চশমা ঠিক করে বললো
– তা মেয়ের নাম কি? কি করে? তার বংশ পরিচয় কি? তার বাবা কোথায় বিজনেস করে?
কথাটা শুনে রাইয়ানের গলার পানি শুকিয়ে গেছে, সে একটা ঢুক গেলে কিভাবে বলবে তা ভাবছে আর শায়নের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।
– এগুলোও আমাকেই বলতে হবে? কোনো কাজের হলি নাহ!
মনে মনে বলছে শায়ন রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে।
– আন্টি আমি বলছি। মেয়ের নাম পুষ্প। রাইয়ানের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে। আর বাবা…..
বলেই রাইয়ানের দিকে তাকালো শায়ন।
রাইয়ান আস্তে করে বললো
– তার বাবা নেই।
এসব শুনে মিসেস মাহমুদা বসা থেকে ওঠে দাড়িয়ে বললো
– অসম্ভব, এমন মেয়ের সাথে আমি আমার ছেলের বিয়ে কখনোই দিবো না। যার কোন বংশ পরিচয় নেই, বাবা নেই, এমনকি আমাদের অফিসেই চাকরি করে, এমন মেয়ে পছন্দ করতে পারলে কি করে তুমি রাইয়ান?
রাইয়ান চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।
রাইয়ানের মার এমন কথা শুনে রাইয়ানের বাবা কড়া গলায় বলে ওঠলো
– তোমার পছন্দকে আমার ছেলে কখনোই বিয়ে করবে না। আমার ছেলে তাকেই বিয়ে করবে যাকে তার পছন্দ। তোমার এসব মান-মর্যাদা, বংশ পরিচয় দিয়ে কারো জীবন চলবে না। মেয়ে যদি ভালো হয় তবে তার সাথেই আমি রাইয়ানের বিয়ে দিবো। আর আমাদের হাতে এতো সময়ও নেই যে তুমি এতো সময় নিয়ে মেয়ে খুজবে? আর কান খুলে শোনে রাখো, আমার ছেলের পছন্দই আমার কাছে বড়। কারণ বিয়েটা তুমি করবে না রাইয়ান করবে। শায়ন তুমি আজই ঘটককে বলে দাও মেয়ের বাড়িতে যেন খবর পাঠায়। আমরা কালকেই দেখতে যাবো মেয়েকে।
মি. রাশেদের কথা শুনে মিসেস মাহমুদা রাগে হনহনিয়ে রুমে ভিতর চলে যায়।
বাবার কথা শুনে মনে কিছুটা শান্তি পায় রাইয়ান আর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
সকাল থেকে পাপড়ি রাইয়ানের অপেক্ষা করছে। অনেকবার ফোনও দিয়েছে কিন্তু রাইয়ান কল ধরলো না। সারাদিন পার হয়ে যাওয়ায় যখন রাইয়ান অফিস না আসে তখন ম্যানেজারের কাছ থেকে ৭ দিন ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যায় পাপড়ি । বিকেলে পাপড়ি,নীল,রূপা ও অবিনাশ বাবু ট্রেনে ওঠে রওনা হলো রূপাদের বাসায়।
সন্ধ্যায় ঘটকের আগমন হয় পুষ্পদের বাসায়।ঘটককে দেখলেই পুষ্পের রাগ ওঠে যায়। শুধু মা দাদীর সামনে কিছু বলতে পারে না। চুপচাপ রুমে চলে যায়।
ঘটক এসেই আগেই দাদীর সাথে ভাব জমিয়ে নেয়। কতক্ষণ খোশগল্প করে তারপর আসল কথাই আসে ঘটক
– এবার একটা ভালো বিয়ের সমন্ধ এনেছি চাচি।
পুষ্পের দাদী কিছুটা নিরাস হয়ে বললো
– সমন্ধ এনে কি লাভ? আমার নাতিনীর কীর্তি কলাপ দেখে পাত্রপক্ষ আগেই চলে যায়।
– কিন্তু এবারের সমন্ধটা যে অনেক ভালো। আর একটা কথা হলো ছেলে আপনার নাতিনীকে আগে থেকেই পছন্দ করে রেখেছে ছেলে। আর তারাই তো আমাকে পাঠিয়েছে এখানে।
– কিহ! কোন নাতনীকে?
– পুষ্প! পুষ্পই আপনার নাতনীর নাম নাহ?
দাদী খুশি হয়ে বললো
-হ্যা পুষ্প।
– হ্যা। এখন শোনুন, ছেলে অনেক বড় কোম্পানির মালিক, অনেক ভালো পরিবারের সন্তান। ছেলে আপনাদের মেয়েকে প্রথম দেখেই পছন্দ করে ফেলেছে। আর তাই আমাকে খোঁজ-খবর নিতে এখানে পাঠিয়েছে। এখন আপনারা কি বলেন?
– শোনে তো ভালই লাগছে। তুমি কি বলো বউমা?
– দেখেন চাচী, এটা খুব ভালো সমন্ধ। মেয়ের ভাগ্য ভালো যে এমন সমন্ধ এসেছে তার জন্য। তার ওপর থেকে ছেলেও মেয়েকে পছন্দ করেছে। এখানে আপনাদের মেয়ের বিয়ে হলে মেয়ে অনেক সুখে থাকবে। আপনারা যদি রাজি থাকেন তবে কালকেই ছেলের বাবা মা মেয়েকে দেখে যেতে চায়?
– কালকেই? বউমা তোমার কি মত, কিছু বলছো না যে?
– আমি কি বলবো মা, আপনি যা ভালো বুজেন।
কথাটি বললো আফিয়া বেগম।
– হুম, ভালো বুজলে তো হবে না তোমার মেয়ে তো আবার ছেলেপক্ষের সামনে গিয়ে নাটক শুরু করবে। তোমার মেয়েকেও তো বুজাতে হবে?
শাশুড়ীর কথা শুনে আফিয়া বেগম বললো
-আপনি চিন্তা করবেন না মা, আমি পুষ্পকে বুঝাবো।
চলবে…..