ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৪২
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
রাইয়ান একটা পার্কের সামনে তার গাড়ি থামায়। রাইয়ান পার্কের ভিতর গিয়ে দেখলো পাপড়ি একটা গোলাপ ফুলের তোরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পার্পাল কালার শাড়ি সাথে সিম্পল সাজে পাপড়িকে দারুণ দেখাচ্ছে।
পাপড়িকে দেখে রাইয়ানের জায়গায় অন্য যে কেউ থাকলে প্রেমে পড়ে যেতো পাপড়ির। কিন্তু রাইয়ান মনে তেমন কোনো ফিলিংস নেই। চুপচাপ পাপড়ির সামনে গিয়ে দাড়ায়। রাইয়ানকে দেখে পাপড়ি ফুলের তোরাটা রাইয়ানের দিকে বাড়িয়ে দেয়। রাইয়ানের তোরাটা নেওয়ার কোনো ইচ্ছা না থাকা শর্তেও তোরাটা নিয়ে বিরক্তির স্বরে বললো,
– কেনো ডেকেছো?
পাপড়ি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
– আজ থেকে ৩ মাস আগে আপনি আমায় ভালোবেসে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। আর নানা রকম বাঁধা-বিপত্তি আর অনেকের ষড়যন্ত্রের কারণে আমাদের বিয়েটা হয়ে ওঠে নি। কিন্তু এখন আবার আগের মতো সবকিছু হয়ে গেছে। আপু আর আপনার ডিভোর্স হয়ে গেছে। এখন আর কোনো বাঁধা নেই। চলুন আমাদের মধ্যে যা কিছু হয়েছে সব ভুলে আমরা এক হয়ে যায়। রাইয়ান, উইল ইউ মেরি মি?
রাইয়ান ২ কদম পিছিয়ে বললো,
– না, এটা আর কখনোই সম্ভব না।
পাপড়ি অবাক হয়ে বললো,
– কেনো রাইয়ান? আপনি তো আমাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলেন? আমাকে ভালোবাসে ছিলেন? আর এখন তো আপনি আমাকে মাফও করে দিয়েছেন? ডিভোর্সও হয়ে গেছে। তবে এখন আর কি বাধাঁ দিচ্ছে আপনাকে? কেনো আমাকে এখন আর মেনে নিতে পারছেন না?
– কারণ আমি পুষ্পকে……
বলেই চুপ হয়ে যায় রাইয়ান।
পাপড়ি অবাক হয়ে বলে,
– কারণ কি??
রাইয়ান নিজের মাথায় হাত দিয়ে বললো,
– ও সিট! এই কথাটা বুঝতে আমি এতোটা দেরি করে ফেললাম।
পাপড়ি রাইয়ানের কথা শুনে অবাক হয়ে বললো,
– কি বুঝতে দেরি করছেন?
রাইয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
– আমাদের আর কখনো কিছু হওয়া সম্ভব না। কারণ আমি পুষ্পকে ভালোবাসি।
রাইয়ানের কথা শুনে পাপড়ি অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে যায়।
– এসব কি বলছেন আপনি? এটা কখনোই হতে পারে না। আপু আপনাকে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে করেছে।
বলেই পাপড়ি রাইয়ানের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনি শুধু আমার।
রাইয়ান নিজের হাত ছাড়িয়ে বললো,
– তাই নাকি? যদি সত্যিই আমাকে ভালোবেসে থাকো তো নিজের বুকের বা পাশে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করো। দেখো তোমার মন কি বলে?
পাপড়ি অবাক হয়ে রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
রাইয়ান বললো,
– কি হলো যা বলছি করো।
পাপড়ি নিজেকে শান্ত করে বুকের বা পাশে হাত দিয়ে তার চোখ বন্ধ করে।
এবার রাইয়ান বললো কাকে দেখতে পাচ্ছো চোখ বন্ধ করে?
পাপড়ি চোখ বন্ধ করতেই নীলের মুখটা ভেসে ওঠে তার চোখে। নীলকে দেখতে পেয়ে পাপড়ি তার চোখ খুলে ফেলে।
পাপড়িকে চোখ খুলতেই দেখে রাইয়ান বললো,
– কাকে দেখতে পেলে?
পাপড়ি মাথা নিচু করে আছে। রাইয়ানকে সে কি বলবে তা বুঝতে পারছে না।
রাইয়ান মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
– নিশ্চয়ই আমাকে দেখো নি? কারণ আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না।তোমার চোখে আমি কখনো আমার জন্য ভালোবাসা দেখি নি। এমনকি এখনো দেখতে পারছি না। তুমি শুধু পুষ্পর সাথে হিংসা করে আমাকে পেতে চাও।
– না এটা সত্যি নয়।
– হ্যা এটাই সত্যি। আর কার সাথে হিংসা করো? পুষ্পর সাথে? পুষ্পর সব সুখ কেনো কেড়ে নিতে চাও? পুষ্প তোমার জন্য কত কিছু করেছে তার পরও তুমি পুষ্পকে ঘৃণা করো?
পাপড়ি রেগে বললো,
– কি করেছে আপু? আমার সব সুখ তো সে কেড়ে নিলো?
– না তোমার কোনো কিছু কেড়ে নেয় নি পুষ্প। বরং পুষ্প তোমাকে শুধু দিয়েই গেছে। তুমি সব সত্যি না জেনেই পুষ্পকে শুধু ভুল বুজেই গেলে।
– সত্যিই আর কি সত্যি?
– তাহলে শুনো আমি বলছি।
– আর কতো কাঁদবি পুষ্প? কাল আসার পর থেকেই তো কেঁদেই যাচ্ছিস। যে বোনের জন্য তুই সব করেছিস সে তো তোকে ভুলই বুঝে গেছে। তোর কত কষ্ট হচ্ছে সেটা তো পাপড়ি একবারো দেখেনি? তো কার জন্য করলি এসব?
দাদীর কথা শুনে পুষ্প বললো,
– পাপড়ি আমাকে ভুল বুজলেও আমি তো তার খারাপ ভাবতে পারি না। পাপড়ি যেন সবসময় সুখে থাকে সেই জন্যই আমি সব করেছি। এর জন্য আমি যত কষ্টই পাই আমার দুঃখ নেই।
দাদী তুমি প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দাও। নিজেকে সামলে নিতে আমার একটু সময় লাগবে।
রাইয়ানের কাছ থেকে সব সত্য শুনার পর পাপড়ি হতবাক হয়ে যায়।
-এ আমি কি করলাম। না জেনে আমি আমার বোনকে এতটা কষ্ট দিয়েছি। যে বোন সবসময়ই আমার কথা চিন্তা করেছে আর আমি তার ক্ষতি করার জন্য বারবার এগিয়ে এসেছি। এখন আমি কি করবো?
পাপড়িকে রাইয়ান বললো,
– আমি তোমাকে কখনোই ভালোবাসিনি। তোমাকে প্রথম দেখে পছন্দ করেছিলাম শুধু। পছন্দ করাকেই ভালোবাসা ভাবতাম আমি এতোদিন। কিন্তু পুষ্প আমাকে ভালাবাসাটা শিখিয়ে গেছে। তোমাকে কি করতে হবে এখন তুমি ভেবে নিও। তবে আমাকে এখন কি করতে হবে আমি ভেবে নিয়েছি। আর হ্যা, তোমাকে ধন্যবাদ, কারণ তোমার কারণেই আমি পুষ্পকে কতোটা ভালোবাসি তা বুজতে পেরেছি।
বলেই রাইয়ান গাড়ির দিকে ২ কদম বাড়িয়ে আবার ফিরে এসে বললো,
– আর হ্যা। পাপড়ি একটা কথা না বললেই নয়, নীল তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি নীলকে আর ভুল বুঝো না। যদি পারো তার কাছে ফিরে যাও।
বলেই রাইয়ান চলে গেলো।
রাইয়ানের কথাগুলো পাপড়ির কানে বাজছে।
– নীল আমাকে ভালোবাসে? আর আমি নীলকে এতোবার……
কিভাবে দাড়াবো আমি নীলের সামনে? এতকিছু করার পরও কি নীল আর আপু আমাকে মাফ করবে? তাদের এতো কষ্ট দিয়েছি যে এই ভুলের তো কোনো ক্ষমাও নেই। এর থেকে তো আমার মরে যাওয়া ভালো।
চলবে…….