ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৪০
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পাপড়ি একটা বখাটে ছেলেকে কিছু টাকা দিয়ে ভাড়া করে নিয়েছে। এখন শুধু সুযোগের অপেক্ষা।
কিছুক্ষণ পর বরযাত্রী চলে আসায় সবাই বরযাত্রীর কাছে চলে যায়। রাইয়ানের এতো ভিড়াভিড়ি পছন্দ না তাই সে একা একা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
রাইয়ানকে একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পাপড়ি বললো,
– এখন সবাই বরযাত্রী নিয়ে বিজি আর রাইয়ানও একা একা দাঁড়িয়ে আছে। এটাই সুযোগ।
পাপড়ি ছেলেটাকে তার কাজ শুরু করতে বলে। ছেলেটাও পাপড়ির কথা মতো তাকে টিজ করা শুরু করলো।
কিন্তু পাপড়ি খেয়াল করলো রাইয়ান তার দিকে কোন খেয়ালই করছে না। রাইয়ান যেন তার দিকে খেয়াল করে তার জন্য পাপড়ি জোরে জোরে আওয়াজ করতে লাগলো।
অন্যদিকে ঠিক এমন সময় বিয়েতে মিসেস মাহমুদা আর মি. রাশেদ বিয়েতে আসায় দূর থেকে রাইয়ান তাদের দেখতে পায়। চারপাশে এতো হট্টগোল থাকার কারণে রাইয়ান পাপড়ি আওয়াজ এতোটা শুনতে পায় নি। রাইয়ান মিসেস মাহমুদা আর মি. রাশেদকে দেখতে পেয়ে সেখান থেকে তাদের কাছে চলে যায়।
পাপড়ি ভেবেছিলো তাকে টিজ করতে দেখে রাইয়ান তাকে বাঁচাতে আসবে। কিন্তু রাইয়ানকে সেখান থেকে চলে যেতে দেখে পাপড়ি রেগে বললো,
– ধুর, সব প্লেন ভেসতে গেলো আমার।
তারপর ছেলেটাকে পাপড়ি বললো,
– হয়েছে, আর টিজ করতে হবে না। তোমার কাজ শেষ। এবার তুমি যেতে পারো।
বলেই পাপড়ি এগুতেই ছেলেটা তার ধরে ফেলে। পাপড়ি অবাক হয়ে বলে,
– ওফ! বলেছি তো আর টিজ করতে হবে না তোমাকে। যাও, তোমার কাজ শেষ।
ছেলেটি তবুও পাপড়ি হাত ছাড়ছে না। এবার রেগে বললো,
– কি হচ্ছেটা কি? আমার কথা কি তোমার কানে যাচ্ছে না?
এবার ছেলেটি বললো,
– না সোনা, আমার কানে যাচ্ছে না। তোমার মতো এতো সুন্দরী মেয়েকে হাতছাড়া করা যায় না। আসো আমার কাছে আসো।
ছেলেটির কথা শুনে পাপড়ি ভড়কে ওঠে বলে,
– দেখো তোমাকে আমি তোমার কাজের জন্য টাকা দিয়েছি। ছাড়ো আমাকে?
– টাকা দিয়েছো তাতে কি? টাকার সাথে যদি আরো কিছু পাই তাতে সমস্যা নেই আমার।
– দেখো আমি কিন্তু এখন চিৎকার করবো?
ছেলেটি মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
– করো। সবাই এখন বরযাত্রী নিয়ে ব্যস্ত। এই হট্টগোলে এখান থেকে তোমার চিৎকার কেউ শুনবে না। হা হা হা।
বলেই ছেলেটি পাপড়ির সাথে জোরাজোরি শুরু করে দেয়।
হঠাৎ পেছন থেকে ছেলেটির কলার ধরে টেনে সরিয়ে ছেলেটিকে একটা ঘুষি মারে নীল। নীলকে দেখে পাপড়িও অবাক হয়ে যায়। নীল ছেলেটিকে মারতে শুরু করলো আর বললো,
– তোর সাহস কি করে হলো ওর গায়ে হাত দেওয়ার? তোর এই হাত আমি ভেঙেই ফেলবো।
নীলকে এতোটা রাগতে দেখে পাপড়িও ভয় পেয়ে যায়। এক পর্যায়ে ছেলেটি নীলকে ধাক্কা মেরে বললো,
– আমাকে কেন মারছেন? এই ম্যাডামই তো আমাকে টাকা দিয়েছে ইনাকে টিজ করার জন্য।
ছেলেটির কথা শুনে নীল অবাক হয়ে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
– পাপড়ি, ছেলেটিকে ঠিক বলছে?
পাপড়ি থতমত খেয়ে গেলো নীলের কথায়। সে কি বলবে বুজতে পারছে না। সে আমতা আমতা করে বললো,
– না মানে, নীল…
ছেলেটি আবার বললো,
– ওনি কি বলবে? আমি বলছি।
ছেলেটি রাইয়ানকে দেখিয়ে বললো
– ওই ছেলেটার সামনে আমাকে এই ম্যাডাম তাকে টিজ করতে বলেছে। এই দেখেন আমাকে তার জন্য টাকাও দিয়েছে।
ছেলেটির কথা নীল একদমই বিশ্বাস হচ্ছে না। অবাক হয়ে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে আছে নীল।
আর অন্যদিকে ছেলেটি আর মার খাওয়ার ভয়ে এ সুযোগে পালিয়ে যায়।
– ছি! পাপড়ি ছি! তুই এতোটা নিচে নেমে গেলি। আমার তো ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে যে এমন একটা জগন্য কাজ তুই করেছিস রাইয়ানের কাছে যাওয়ার জন্য।
নীলের এমন কথা শুনে পাপড়ি নীলকে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না।
নীল আবার বললো,
– নিজের বোনের স্বামীকে পাওয়ার লোভ তোকে এতটাই পাগল করেছে যে তুই তোর নিজের ইজ্জতের কথাও চিন্তা করলি না। তুই কি সেই পাপড়ি, যে পুষ্পকে অনেক ভালোবাসতো? যাকে ছোট থেকে আমি দেখে আসছি? পুষ্প একটু ব্যাথা পেলে পুষ্পর থেকেই যে বেশি কাঁদতো সেই বোন আজ পুষ্পর শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
নীলের কথা শুনে পাপড়ির রাগ ওঠে যায়। সে রেগে বললো,
– থাক, আর বলতে হবে না। তোরা সবাই আপুর কষ্টটাই দেখলি আর এদিকে আমি যে জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছি সেটা কি? আমার কষ্টটা তো তোরা কেউ বুজলি না? আজ আপু যেখানে আছে, সে সুখ পাচ্ছে সেসব আমার পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এসব কিছু আপু আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। তার জন্য রাইয়ান আমাকে কতোবার অপমান করেছে হিসাব নেই। এসব কিছুর প্রতিশোধ আমি আপুর কাছ থেকে নিয়েই ছাড়বো। আর তার জন্য আমাকে যা করা লাগবে আমি তাই করবো।
-ছিঃ! এতো হিংসা তোর ভিতর? এতোটা অহংকার? আরে পুষ্প যদি তোর সব সুখ কেড়ে নিতেই চাইতো তাহলে কেন রাইয়ানকে সে ডিভোর্স দিয়েছিলো। পুষ্প তো পারতোই ডিভোর্স না দিয়ে রাইয়ানের সাথে সুখে সংসার করতে।
পাপড়ি তাছিল্যের হাসি হেসে বললো,
– আপু নয় রাইয়ান আপুকে ডিভোর্সটা দিয়েছে কারন রাইয়ান আমাকে ভালোবাসে, আমাকে বিয়ে করতে চায়। এখন শুধু রাইয়ান আমার ওপর একটু রাগ করে আছে,তাই আমাকে এড়িয়ে চলছে। আর রাইয়ানের যেদিন রাগ ভাঙ্গবে সেদিন সে আমার কাছে ফিরে আসবে। আর তুই কেন বার বার আমার আর রাইয়ানের মাঝে চলে আসিস।
নীল অবাক হয়ে বললো,
– আমি!!
– হ্যাঁ তুই! আমি কি করছি আর কি করবো সেটার মধ্যে তুই নাক গলাতে আসবি না। আপুর সাফাই গেয়ে আমাকে আর বুজতে আসতে হবে না তোর। আমি কি করছি আমি ভালো করেই জানি। আর কখনো আমার কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবি না।
পাপড়ি রাগের মাথায় নীলকে তা ইচ্ছা তাই বলে দিলো।
পাপড়ি কথাগুলো শুনে নীলের চোখ ছলছল করছে।
ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে তাকে এভাবে কথা শুনতে হবে সেটা নীল ভাবতেও পারে নি। নীল আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। চোখে ছলছল পানি নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
নীল নিজের কান্না আটকে রাখতে পারছে না, তাই নিজের কান্না লুকানোর জন্য একটা রুমে ঢুকে পড়ে। রুমে ঢুকতেই নীল দেখলো পুষ্প রুমের ভিতর কাজ করছে।
পুষ্প নীলের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। নীলের চোখে পানি দেখে পুষ্প জিজ্ঞেস করলো,
– নীল তুই কাঁদছিস কেনো?
পুষ্পর কথা কোনো জবাব দেয় না নীল। চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
পুষ্প আবার জিজ্ঞেস করলো,
– কিরে? নীলিমার জন্য কি মন খারাপ তোর?
নীল চোখের পানি মুছে বললো,
– কিছু না পুষ্প! চোখে কিছু একটা পড়েছে হয়তো। তাই আরকি!
বলেই নীল সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে পুষ্প তার হাত ধরে বললো,
– পাপড়ি কি তোকে আবার কিছু বলেছে?
অন্যদিকে রাইয়ান পুষ্পকে খুজতে খুজতে রুমের সামনে এসে পুষ্পকে বাহির থেকে দেখতে পায়। তাই রাইয়ান রুমের কাছে যেতেই পুষ্প আর নীলের কথা শুনতে পেয়ে রুমের বাহিরেই দাঁড়িয়ে যায়।
নীল পুষ্পের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকায় আর একটা মলিন হাসি দিয়ে বলে,
– পাপড়ি কেনো আমায় কিছু বলতে যাবে। আমি তো এমনি….
– তোকে কিছু বলতে হবে না আমি বুঝে গেছি। তুই যে পাপড়িকে যে তুই কতটা ভালোবাসিস সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না।
নীল চোখে জল নিয়ে বললো,
– তাহলে পাপড়ি কেন বুজে না যে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি? কেনে এভাবে আমাকে কষ্ট দেয়?
নীলের কথা শুনে বাহিরে দাড়িয়ে থাকা রাইয়ান মনে মনে বললো,
– নীল পাপড়িকে ভালোবাসে? তবে পাপড়ি কেন নীলকে এভাবে অবহেলা করে?
নীলের কথা শুনে পুষ্প বললো,
– পাপড়ি তো রাইয়ানকে ভালোবাসে তাই তোর ভালবাসাটা সে দেখতে পারে না। তাই আমাদের দুজনকেই রাইয়ান আর পাপড়ির মাঝ থেকে সরে আসা দরকার।
পুষ্পর কথা শুনে নীল অবাক হয়ে বললো,
– দুজন মানে? তুই রাইয়ানকে ভালোবাসিস না?
নীলের কথা শুনে পুষ্প মুখে মলিন একটা হাসি দিয়ে বললো,
– নাহ। রাইয়ান আর আমি শুধু ভালো বন্ধু। এছাড়া আমাদের মাঝে তেমন কোন সম্পর্কে নেই। এই তো আর কদিন, তারপর আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেলে হয়তো আমাদের বন্ধুত্বটাও আর থাকবে না।
পুষ্প কথা শুনে বাহিরে থাকা রাইয়ানের মন খারাপ হয়ে যায়। সে তাদের আর কোন কথা না শুনে সেখান থেকে চুপচাপ চলে যায়।
পুষ্পর কথা শুনে নীল বললো,
– মিথ্যা কথা বলিস না। আমিও একজনকে ভালোবেসেছি। তাই আমি সব বুজতে পারি।
নীল পুষ্পকে তার দিকে ফিরিয়ে বললো,
– তুই রাইয়ানকে ভালোবাসিস সেটা তোর চোখ আমাকে বলে দিচ্ছে।
নীলের কথা শুনে পুষ্প অবাক হয়ে যায় আর অন্যদিকে ফিরে বললো,
– না, আমি ভালবাসি না। আর ভালোবাসলেই বা কি? রাইয়ান তো পাপড়িকে ভালোবাসে। আর ডিভোর্সটা হলেই রাইয়ান পাপড়িকে বিয়ে করবে।
– কিন্তু…
– আর কোনো কিন্তু নয় নীল। আমি আমার বোনের খুশি কিছুতেই কেরে নিতে পারি না। রাইয়ান আর পাপড়ির মাঝ থেকে আমাদের সরে আসা উচিত। তাই তুই এখন থেকে পাপড়ির কাছ থেকে দূরে থাকবি। আর এসব কথা কাউকে বলবি না।
নীল হতাশ হয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।
পুষ্প নীলের চোখের পানি মুছে বললো,
– এখন নিজেকে ঠিক কর। একটু পর নীলিমার বিয়ে পড়ানো শুরু হবে৷ নীলিমাকেও সামলাতে হবে। তোকে কাঁদতে দেখলে নীলিমা আরো ভেঙে পড়বে।
নীল একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
– হুম চল।
চলবে…..