ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩৩
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
বেশ কয়েকদিন হলো পুষ্প অফিসে যাচ্ছে। শাশুড়ী সহযোগিতায় বাড়ি আর অফিস সব কিছুই একসাথে সামলাতে পুষ্পর বেশি কষ্টও হচ্ছে না।
তবে অফিসে প্রায় প্রতিদিনই পাপড়ি পুষ্পকে কোন না কোন কাজের জন্য অপমান করেই থাকে। পুষ্পকে অফিসে কিভাবে ছোট করবে সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে পাপড়ি। কিন্তু পুষ্পর তার কোনো প্রতিবাদ করে না সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করে যায়। অফিসে বোনের কোন অসম্মান না হয় তা সবসময় খেয়াল রাখে পুষ্প।
– আজ এতোদিন হয়ে যাচ্ছে তবুও তোমার কোন উন্নতি দেখছি না। ডাক্তারের দেওয়া সময়ও তো পার হয়ে গেছে, এখন তো তোমার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা।
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান মুচকি হেসে বললো,
– সুস্থ হয়ে যাবো, তোমার এতো চিন্তা করতে হবে না।
– কেনো চিন্তা করতে হবে না শুনি? অফিস থেকে এসে আমি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। তুমি রেডি থেকো।
– হুম।
– আজ অনেক লেট হয়ে গেছে আসি আমি এখন।
পুষ্পকে বাসার বাহিরে যেতে দেখে মিসেস মাহমুদা বললো,
– পুষ্প, নাস্তা করবি না আজ?
– না মা, আজ লেট হয়ে গেছে। আমি পরে খেয়ে নিবো।
মিসেস মাহমুদা পুষ্পর হাত ধরে টেনে চেয়ারে বসিয়ে বললো,
– বস এখানে। পরে খেতে হবে না। আমি খাইয়ে দিচ্ছি, খেয়ে নে।
শাশুড়ী মুখে এমন কথা শুনে পুষ্পর চোখে জল চলে আছে। পুষ্পর চোখে পানি দেখে মিসেস মাহমুদা বললো,
– কি হলো, কাঁদছিস কেনো?
পুষ্প চোখের জল মুছে বললো,
– কিছু না মা। এটা খুশির কান্না।
– আচ্ছা। এবার খেয়ে নে।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে মি. রাশেদ শাশুড়ী বউয়ের এ দৃশ্য দেখে মনে মনে বলছে,
– যে মাহমুদা একদিন পুষ্পকে দেখতেই পারতো না, আজ সেই পুষ্পকে সে মেয়ে বানিয়েছে। বাবা তুমি ঠিকই বলেছিলে, পুষ্পই এ বাড়ির যোগ্য বউ। এখন শুধু রাইয়ান পুষ্পকে বউ হিসেবে মেনে নিলেই হয়।
আজ অফিসে নতুন ডিলটার প্রেজেন্টেশন হবে ক্লায়েন্টের সামনে। পাপড়ি এ নিয়ে অনেক প্রস্তুতি নিয়েছে। অনেক নার্বাস ফিল করছে সে। একটু পরই ক্লায়েন্ট চলে আসে। পাপড়ির কথামতো পুষ্প সবকিছু ঠিকঠাক করে রেখেছে। সময় মতো প্রেজেন্টেশন শুরু করে পাপড়ি। কিন্তু প্রেজেন্টশন ঠিকঠাক না হওয়ায় ক্লায়েন্ট তা পছন্দ করে না। পাপড়ি ক্লায়েন্টকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ক্লায়েন্ট ডিলটা নিতে একদমই নারাজ।
অফিসে সবার মুখেই টেনশনের ছাপ। পুষ্প পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তার ফাইল থেকে কিছু কাগজ বের করে ক্লাইন্টের সামনে রাখে আর পুষ্প আবার নতুন করে আর একটা প্রেজেন্টশন দেয়। এবার ক্লাইন্ট পুষ্প প্রেজেন্টশন খুব পছন্দ করে আর ডিলটা নিয়ে নেয়।
ডিলটা ওকে হওয়ায় অফিসের সবাই অনেক খুশি হলেও পাপড়ি একদমই খুশি হয়নি।উল্টো আরো রেগে যায়। ক্লায়েন্টরা যেতেই পাপড়ি পুষ্প হাত ধরে টানতে টানতে সেখান থেকে তাকে বের করে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
– এ প্রেজেন্টশন কোথায় পেলি তুই?
পুষ্প একটু ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বললো,
– কিছুদিন আগে রাইয়ান আমাকে এই প্রেজেনটেশনটা তৈরি করে দিয়েছিল। আর আজ যখন তোর প্রেজেন্টশন ক্লায়েন্ট পছন্দ করেনি তাই ডিলটা বাঁচানোর জন্য আমি এই প্রেজেন্টশনটা ক্লায়েন্টের সামনে রাখি।
পাপড়ি রাগে বলে ওঠলো,
– কে বলেছিলো তোকে এই প্রেজেন্টশন ক্লায়েন্টের সামনে রাখতে? আমি কি তোকে অর্ডার দিয়েছিলাম? বলেছিলাম না আমার অনুমতি ছাড়া কোন কাজ না করতে?
– তুই আমাকে ভুল বুঝেছিস, আমি এমনটা….
– ও প্লিজ, এখন আর নাটক করিস না। অফিসে যেন আমি সবার কাছে ছোট হয়ে যায় তাই তুই এমনটা করেছিস, তা কি আমি বুঝি না। আমার সবকিছুতেই তোর হিংসা হয়। আমার খুশি তুই দেখতে পারিস না।
পাপড়ি কথাগুলো পুষ্পকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে, চোখে জল ছলছল করছে তার। কিন্তু পুষ্প খেয়াল করলো অফিসের সবাই তাদের দেখছে। তাই পুষ্প আর কিছু বললো না চুপচাপ দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাপড়ি কথা শুনছিলো।
পাপড়িকে এমন চিৎকার করতে দেখে তার কলিগ সুমনা বললো,
– পুষ্প তুমি এতো রাগ করছো কেন? পাপড়ির প্রেজেন্টশনের জন্যই তো ক্লায়েন্ট ডিলটা নিতে রাজি হয়েছে।
– আপনি বুঝতে পারছেন না, এটা ওর প্লেন। নিজেকে এ অফিসে বড় প্রমাণ করতে চায়। এতোই যদি ভালো থাকতো ও তাহলে প্রেজেন্টশনটা আমাকে দিলো না কেন? আমি প্রেজেন্ট করতাম ক্লায়েন্টের সামনে। কিন্তু তা করেনি সে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
– করবেই বা কেন? কি যোগ্যতা আছে তোমার যে তুমি ক্লায়েন্টের সামনে প্রেজেন্টশন দিবে?
পেছন থেকে হঠাৎ করে কেউ একজন এমন কথা বলাতে সবাই পেছনে তাকিয়ে দেখলো রাইয়ান দাড়িয়ে আছে।
রাইয়ানকে দেখে অফিসের সবাই হতবাক হয়ে যায়। রাইয়ান এগিয়ে গিয়ে পাপড়ির সামনে দাঁড়াতেই পাপড়ি বললো,
-স্যার, আপনি এখানে?
– হ্যা আমি। এখানে না আসলে তোমার এই রূপটা আমার দেখাই হতো না। কতোটা নিচু মন তোমার তা আমার জানা হতো না। তোমার ওপর আমার কোনো বিশ্বাস ছিলো না বলেই আমি পুষ্পকে কিছুদিন আগে এই ব্যাকআপ প্রেজেন্টেশনটা তৈরি করে দিয়েছিলাম।
পাপড়ি রাইয়ানকে বোঝানোর জন্য বললো,
– স্যার, আমি তো…..
– জাস্ট সাট আপ। আর কোন কথা বলবেই না। তোমার কোন অধিকার নেই আমার স্ত্রীর সাথে এভাবে কথা বলার।
রাইয়ানের এমন কথা শুনে অফিসের সবাই অবাক হয়ে যায়। পুষ্প রাইয়ানকে বলে,
– চুপ কর, এসব কেন বলছো তুমি?
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান আরো রেগে গিয়ে ধমক দিয় বলে,
– তুমি চুপ থাকো। তুমি তোমার বোনের কথার প্রতিবাদ না করলেও আমাকে তুমি চুপ করিয়ে রাখতে পারবে না। অফিসের সবাই শুনে রাখুন, ইনি আমার বিবাহিত স্ত্রী। আর এনার নাম পাপড়ি নয় পুষ্প। আর এই যে এতোদিন যাকে আপনারা পুষ্প বলে চিনতেন সে হচ্ছে পাপড়ি। নিজের বোনের নাম আর যোগ্যতা নিয়ে এ অফিসে জয়েন করেছে। নাহলে পাপড়ি কোন যোগ্যতায় নেই এ অফিসে কাজ করার। যে বোন তোমার জন্য এতো ভাবে, এতো কিছু করে তাকে তুমি অফিসে সবার সামনে অপমান করার আগে একবারও ভাবলে না? ছিঃ! এমন বোন থাকার চেয়ে না থাকা বেশি ভালো।
রাইয়ান পাপড়ির সামনে আঙ্গুল তুলে বললো,
– নেক্সট টাইম আই ওয়ার্নিং ইউ, আমার স্ত্রীর সাথে এমন বাজে ভিহেভ করলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। চলো পুষ্প।
বলেই রাইয়ান পুষ্পর হাত ধরে টানতে টানতে তার কেবিনে নিয়ে যায়।
রাইয়ান এসব কথা শুনে অফিসের সবাই অবাক হয়ে গেছে। পাপড়িও স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাইয়ানে কথাগুলো এখনো তার কানে বাজছে। পাপড়ি মনে মনে বলছে,
– কোন একদিন ঠিক এভাবেই আমার জন্য অফিসের কলিগদের ওয়ার্নিং দিয়ে শাসিয়ে ছিলে। আর আজ…. এতোটা চেঞ্জ কিভাবে হয়ে গেলে তুমি রাইয়ান?
পাপড়ি আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে অফিসের বাহিরে চলে যায়।
চলবে…..