ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২৯
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
এক্সিডেন্টে রাইয়ান খুব গুরুতর আহত হয়েছে। মাথায় আঘাত, ডান হাত ও দু পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ার মাথা, হাত ও পায়ে ব্যান্ডস করা হয়েছে। মিসেস মাহমুদা ও নুরী রাইয়ানকে দূর থেকে দেখে কান্না করছে। রাইয়ানের এখনো হুশ ফিরেনি। ডাক্তার বলে গেছে কিছুক্ষণ পরই তার হুশ ফিরবে।
কিছুক্ষণ পর সেখানে মি. রাশেদ আর পুষ্প হাজির হয়। মি. রাশেদকে সেখানে দেখে মিসেস মাহমুদা আর নুরী দুজনেই অবাক।
– তুমি এখানে এ অবস্থায় কেন এসেছো?
– তুমি কি চাও মাহমুদা আমার ছেলের এক্সিডেন্ট হয়ে হসপিটালে পড়ে আছে আর আমি ঐখানে শুয়ে শুয়ে বিশ্রাম করব?
– আমি, নুরী এখানে রাইয়ানের কাছে আছি। তুমি এখনো পুরাপুরি সুস্থ হয়ে ওঠো নি। তোমার বিশ্রামের দরকার এখন।
– আমার ছেলের এমন অবস্থা আর আমি বিশ্রাম করবো তা কখনই হতে পারে না।
পেছন থেকে পুষ্প বললো,
– বাবা, আপনি বেশি উত্তেজিত হবেন না৷ শান্ত হন।
পুষ্পর কথা শুনে মিসেস মাহমুদা বললো,
– হয়েছে আর ন্যাকামো করতে হবে না। তোমার যদি এতোই চিন্তা থাকতো তো রাইয়ানের বাবাকে রাইয়ানের ব্যাপারে এখন কিছুই বলতে না।
মি. রাশেদ রেগে বললো,
– বউমা আমাকে কিছুই বলতে চাইনি আমি জোর করায় সে আমায় বলছে। আর বলবেই বা না কেন? আমার ছেলের এ অবস্থার কথা আমি জানার অধিকার আছে। রাইয়ান কোথায়? আমি রাইয়ানের সাথে দেখা করবো।
বলেই মি. রাশেদ হসপিটালের কেবিনে ঢুকলেন। মি. রাশেদের পেছনে মিসেস মাহমুদা, নুরী ও পুষ্পও রুমের ভিতর ঢুকে।
সবাই রাইয়ানের কাছে গেলেও পুষ্প দূরে রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকে। রাইয়ানের কাছে যাওয়ার তার সাহস হয়ে ওঠে না।
মি. রাশেদ রাইয়ানের পাশে বসে রাইয়ানের হাতটা ধরতেই রাইয়ানের জ্ঞান ফিরে। মি. রাশেদ কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
– রাইয়ান বাবা আমার, কেমন আছিস তুই?
রাইয়ান চোখ মেলে তার বাবার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর আস্তে করে বলে,
– বাবা! তুমি সুস্থ আছো তো? তোমার হার্ট অ্যাটাকের কথা শুনে আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
– আমি একদম ঠিক আছি। তুই আমার জন্য চিন্তা করিস না। নিজের এ কি হাল করেছিস তুই?
– আসলে বাবা এক্সিডেন্টটা কিভাবে হয়ে গেলো আমি বুজতে পারিনি।
পেছন থেকে মিসেস মাহমুদা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
– হয়েছে আর কথা বলতে হবে না। চুপ করে শুয়ে থাক।
মিসেস মাহমুদাকে কাঁদতে দেখে রাইয়ান বললো,
– মা, তুমি কাঁদছো কেন? আমি একদম সুস্থ হয়ে যাবো দেখো।
রাইয়ান একবার চারপাশ চোখ ঘুরাতেই পুষ্পকে দেখতে পেয়ে বলে,
– পুষ্প তুমি এত দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
রাইয়ান কথা শুনে পুষ্প রাইয়ানের কাছে যাওয়ার জন্য এক কদম এগুতেই তার সামনে মিসেস মাহমুদা এসে দাঁড়িয়ে বলে,
– খবরদার, আমার ছেলের কাছে তুমি যাবে না।
মিসেস মাহমুদার এমন কথা শুনে সেখানের সবাই অবাক হয়ে যায়। মি. রাশেদ বললো,
– মাহমুদা এসব কি বলছো তুমি?
– হ্যা, ঠিক বলছি। এ মেয়ের আসার পর থেকে একটা না একটা অনিষ্ট হয়েই চলেছে। এমনকি এই মেয়ের জন্য তুমি আমার সাথেও ঝগড়া করেছো। এই মেয়েকে কিছুতেই আর আমার পরিবারের কারো কাছে যেতে দিবো না। আমার বাসায়ও এই মেয়ে আর এক কদমও রাখবে না।
– কি বলছো এসব তুমি মাহমুদা? পুষ্প আমাদের বাড়ির বউ।
– না, এই মেয়েকে তুমি বউ মানলেও আমি কখনো বউ মানি নি কখনো। আর এই মেয়েকে আমার ছেলের কাছে আমি কখনোই যেতে দিবো না।
মি. রাশেদ ধমকের সুরে বললেন,
– মাহমুদা এবার তুমি বেশি বলে ফেলছো? কোর্ট তাদের একসাথে ৩ মাস থাকার আদেশ দিয়েছে তা কি তুমি ভুলে ফেলেছো?
পুষ্প এবার কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– প্লিজ বাবা, আপনি আর উত্তেজিত হবেন না? আমি চাই না আপনার আবার আমার জন্য কিছু হোক। মা তো ঠিকই বলেছেন, আমার জন্যই তো সব হয়েছে। আমি যদি নুরীকে ঐসব কথা না বলতাম তাহলে আজ এসব কিছুই হতো না।
মা আমাকে মাফ করে দিবেন। আপনি যা বলবেন তাই হবে। আমি আর ও বাড়িতে যাবো না। আমি এখান থেকে মায়ের কাছে ফিরে যাবো।
মি. রাশেদ পুষ্পকে এক ধমক দিয়ে বললো,
– তুমি চুপ করো বউমা। এটা তোমারো বাড়ি। আর রাইয়ান শুধু মাহমুদার ছেলে নয় তোমারও স্বামী। আর যতদিন তোমাদের ডিভোর্স না হচ্ছে ততদিন তোমারই স্বামী থাকবে। আমি বেঁচে থাকতে কেউ তোমাকে আমার বাড়িতে বের করতে পারবে না। বুঝেছো?
এবার রাইয়ানও তার মাকে বললো,
– মা একটু বুঝার চেষ্টা করো, পুষ্পর এইখানে কোন দোষ নেই।
রাইয়ানের এমন কথা মিসেস মাহমুদা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকে রাইয়ানের দিকে।
নুরী এগিয়ে গিয়ে বললো,
– মা, তুমি একটু আমার সাথে আসো।
বলেই মিসেস মাহমুদার হাত ধরে নুরী টেনে রুমের বাহিরে নিয়ে এসে বলে,
– মা, তুমি কেন শুধু শুধু ঝামেলা করছো?
নুরীর কথা শুনে মিসেস মাহমুদা বললো,
– তুই ও আমাকেই কথা শুনাচ্ছিস?
– না মা, আমি তোমাকে কথা শুনাতে যাবো কেন? আমি তোমাকে বুঝাচ্ছি। এখন তোমাকে ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে। এখন যদি এই মেয়েকে তুমি বাড়ি থেকে বের করে দাও তাহলে এ মেয়ে আবার কোন ফন্দী আটবে এ বাড়িতে আসার জন্য। আর যদি সে পুলিশের কাছে চলে যায় তাহলে হয়তো তিন মাস পরের ডিভোর্সটাও বাতিল হয়ে যেতে পারে। আর এখন তুমি যতই বাবাকে বোঝাও বাবা এ মেয়ের বিরুদ্ধে তোমার কোনো কথাও শুনবে না। উল্টো বাবা বেশি উত্তেজিত হলে প্রবলেম হয়ে যেতে পারে। তার চেয়ে বরং কিছুদিন এই মেয়েকে সহ্য করো। ভাইয়া একবার ডিভোর্সটা দিয়ে দিলে তো এ মেয়েকে এমনিতেই আমাদের বাসা ছেড়ে যেতেই হবে। কি বুঝেছো?
মিসেস মাহমুদা কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাবলো,
– নুরী হয়ত ঠিকই বলছে। এখন আমার কথা কেউ শুনবে না তার চেয়ে বরং আমার ডিভোর্সের অপেক্ষা করাই ভালো।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
অফিস শেষে বাড়ি ফিরছিলো পাপড়ি। হঠাৎ তার সামনে নীল পড়ে যায়। নীল আর পাপড়ি দুজন দুজনকে দেখে অবাক হয়ে দাড়িয়ে যায়। অনেকদিন পর দুজন দুজনকে দেখছে। সেদিনের ঘটনার পর নীল আর পাপড়ির সামনে আসে নি। এতোদিন পর পাপড়ি নীলকে দেখায় তার মনে লুকানো অজানা অনুভুতিগুলোও জেগে ওঠে। আর অন্যদিকে পাপড়িকে দেখে নীলের সেদিনের তাকে অপমানের স্মৃতিগুলো নীলের চোখে ভেসে ওঠে। পাপড়ি নীলকে কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু তার আগেই নীল পাপড়িকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
পাপড়ি পেছন ফিরে নীলের দিকে তাকিয়ে রইল কিন্তু নীল একবারো পেছন ফিরে আর পাপড়িকে দেখেনি। নীলকে এভাবে চলে যেতে দেখে পাপড়ি তার মনে একটু ব্যাথা অনুভব করলো যার কারণ সে নিজেই জানে না।
– কিহ! এতো কিছু হয়ে গেছে আর তুই আমাকে মাত্র জানাচ্ছিস?
আফিয়া বেগমের এমন কথা শুনে পুষ্প বললো,
– মা, এতোক্ষণ তো হসপিটালেই ছিলাম। তোমাদের জানানোর সুযোগ হয়ে ওঠে নি।
– হুম। রাশেদ সাহেব কেমন আছেন এখন?
– বাবা আগের থেকে ভালো আছেন।
– আর জামাই?
– সে তো এখন রেস্ট করছে। এক্সিডেন্টে অনেকটা ব্যাথা পেয়েছে সে। ডাক্তার বলেছে, এক মাস লাগবে তার সম্পূর্ণ সুস্থ হতে।
– জামাইয়ের ঠিকমতো খেয়াল রাখিস, মা। তার সেবাযত্নে কোন কমতি রাখিস না। তুই ভালো করে সেবাযত্ন করলে জামাই আরো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠবে।
– হ্যা মা। তা তো আমার করতেই হবে। কারণ এসবের জন্য কোথাও না কোথাও আমিই দায়ী। আমাকে সবকিছুই আগের মতো করতে হবে।
– আমি দোয়া করি, সবকিছু যেন ঠিক হয়ে যায়।
– আচ্ছা রাখি, এখন।
চলবে…..