ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২১
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
দরজা খুলতেই পাপড়ি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। দরজায় রাইয়ান আর পুষ্প দাড়িয়ে আছে।
পাপড়ি মনে মনে বলছে,
– যা ভেবেছিলাম তাই সত্যি হলো। আপুর বিয়ে আমার বসের সাথেই হয়েছে।
রাইয়ান পাপড়িকে দেখে মোটেও অবাক হয়নি। সে তাকে দেখে বললো,
– তোমার কাছ থেকে আমি এটা কখনো আশা করিনি। তুমি আমাকে এভাবে ধোকা দিতে পারলে। আরে তোমাকে যখন আমার পছন্দ হয়নি তো বলে দিলেই তো পারতে আমাকে, তোমার বোনের সাথে বিয়ে দিয়ে আমার জীবনটা কেন নষ্ট করলে তুমি?
রাইয়ান কোন কথায় পাপড়ি বুঝতে পারছে না। সে রাইয়ানকে কিছু বলার আগেই পেছন থেকে মিসেস মাহমুদা বলে ওঠে,
– আরে এই মেয়েকে আর কি বলছিস। ধনী ছেলেদের দেখলে এদের মাথা ঠিক থাকে না। তাই নিজের পছন্দ হয়নি বলে তো আর হাতছাড়া করা যাবে না। তাই এই সব গেম খেলেছে আমাদের সাথে।
রাইয়ান আর মিসেস মাহমুদার কথা শুনে আফিয়া বেগমের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি রুম থেকে বেরিয়ে আসে আর সাথে দাদীও।
আফিয়া বেগম আর দাদীকে দেখে মিসেস মাহমুদা এগিয়ে গিয়ে বললো,
– লজ্জা করলো না আপনাদের আমাদের সাথে এমন একটা গেম খেলতে। কি ভেবেছিলেন আমরা কিছুই জানতে পারবো না।
আফিয়া বেগম ও দাদী একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে। দাদী মিসেস মাহমুদাকে বলল,
– আপনারা কি বলছেন এসব, আমি তো কিছুই বুজতে পারছি না?
দাদীর এমন প্রশ্নে মিসেস মাহমুদা বলল,
– ন্যাকা, কিছু বুজছে না। এই বুড়িটাই সব কিছুর গুরু।
পুষ্প কাঁদতে কাঁদতে বলল,
– প্লিজ, দাদীকে কিছু বলবেন না। ওনারা এসব বিষয়ে কিছুই জানে না।
আফিয়া বেগম জিজ্ঞেসাসূচক চাহনি নিয়ে পুষ্পকে জিজ্ঞেসা করলো,
– কি হয়েছে পুষ্প? ওনারা এসব কি বলছে?
আফিয়া বেগমের কথা শুনে রাইয়ান বলল,
– ওনি কি বলবে, আমি বলছি। আমি যার জন্য বিয়ের প্রোপজাল পাঠিয়েছিলাম সে পুষ্প নয় পাপড়ি।
-কিন্তু তুমি তো পুষ্পর জন্য….
– নাহ। আমি পাপড়ির অফিসের বস। আর সেখানে তাকে দেখে আমি পছন্দ করেছিলাম। কিন্তু পাপড়ি অফিসে তার নাম পুষ্প বলেছে। তাই আমি পাপড়িকে পুষ্প বলেছিলাম।
এসব কথা শুনে আফিয়া বেগম ও দাদী দুজনই অবাক। দাদী বললো,
-কি বলছো এসব। পাপড়ি পুষ্পর নামে তোমার অফিসে কাজ করে। কিন্তু আমরা তো এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না।
– আচ্ছা বুজলাম আপনারা জানতেন না এটা, কিন্তু বিয়ের আগে তারা দুজন যমজ বোন এটা কেন বলেন নি?
এবার দাদী আর আফিয়া বেগম আবার একে অপরকে দেখছে। দাদী বললো,
– আসলে, বিয়েটা এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে যে, এ কথাটা বলতে আমরা ভুলেই গেছিলাম।
মিসেস মাহমুদা বললো,
– ভুলে গেছিলেন নাকি, ইচ্ছে করেই বলেন নি? রাইয়ান তুই আর এদের কথা শুনিস না। তোকে এরা আবার জালে ফেলার চেষ্টা করছে। তুই চল এখান থেকে।
বলেই রাইয়ানকে মিসেস মাহমুদা টানতে টানতে নিয়ে যায়। মি. রাশেদও আর একটি কথাও বললো না। তিনিও চুপচাপ চলে গেলেন।
-ছিঃ আপু ছিঃ, তুই এতোটা লোভী! আমি ভাবতেও পারি নি।
পাপড়ির এমন কথায় পুষ্প, আফিয়া বেগম, দাদী সবাই তার দিকে অবাক হয়ে তাকায়। পুষ্প বললো,
– এসব কি বলছিস তুই?
– কি বলছি বুজছিস না? আমাদের নামের অদল বদলটা মা-দাদী জানতো না ঠিকই কিন্তু তুই তো জানতি। তুই কিভাবে পারলি এ বিয়ে করতে? রাইয়ান যে আমার বসের নাম এটাও তুই ভালো করেই জানতি তবুও এ বিয়ে করে ফেললি তুই? আমি ভাবতাম তুই আমাকে অনেক ভালোবাসিস, আমার জন্য সব কিছুই করতে পারিস। কিন্তু এখন তো তুই আমার সবকিছু কেড়ে নিলি? আমার ক্যারিয়ার, আমার চাকরি, রাইয়ানকেও কেড়ে নিলি।
– এসব কি বলছিস তুই? পাগল হয়ে গেছিস? আমি…
পুষ্প কিছু বলার আগেই পাপড়ি বললো,
– ও প্লিজ স্টপ আপু। আর সাফাই গাইতে হবে না তোর। এতোদিন এতো বিয়ের সমন্ধ আসছিলো তুই কোনটাতে রাজি হস নি। আর রাইয়ান যখন সমন্ধ পাঠালো তখনি তুই বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলি। আমায় ছাড়া যে তুই কেন জলদি বিয়েটা করেছিস সেসব আমি বুজে গেছি।
পাপড়ি কথা শুনে আফিয়া বেগম তাকে ধমক দিয়ে বললো,
– চুপ কর, কিছু না জেনে এভাবে তুই পুষ্পকে কথা শুনাতে পারিস না।
– মা, তুমিও আপুর পক্ষ নিচ্ছো? এ পরিবারে কেউ আমার আপন নয়।
বলেই কাঁদতে কাঁদতে পাপড়ি নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
পুষ্প অবাক হয়ে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।
দাদী কাঁদতে কাঁদতে পুষ্পকে বললো,
– আমাকে মাফ করে দে, আমার জন্যই সব কিছু হয়েছে। এই সবকিছুর জন্য একমাত্র দায়ী আমি। তোর ভালো করতে গিয়ে তোর জীবনটাই আমি নষ্ট করে দিলাম। আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।
– না দাদী তুমি এভাবে বলো না। সব দোষ আমার। ঐদিন যদি তোমার কাছ থেকে বরের সম্পর্কে সব জেনে নিতাম তাহলে এসব কিছুই হতো না।
আফিয়া বেগম কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– সব দোষ আমার। ঐদিন যদি তোকে আমি আমার কসম না দিতাম, তাহলে তো তুই এ বিয়েতে কখনোই রাজি হতি না।শুধু আমার জন্যই এ বিয়েটা করেছিস তুই। আমাকে মাফ করে দে।
বলেই পুষ্পকে আফিয়া বেগম জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
সকালের ঘটনার পর রাইয়ান নিজের রুম থেকে আর বের হয়নি। হঠাৎ মি. রাশেদ এসে রাইয়ানকে ডাক দেয়।
– রাইয়ান তোর দাদাভাইয়ের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
রাইয়ান চমকে ওঠে বলে,
– কি বলছো? ডক্টরকে আসতে বলেছো?
-ডক্টরকে বললে কি হবে, বাবা তো কোন ঔষধ খাচ্ছে। বারবার পুষ্পকে খোঁজছে বাবা। তুই একটু গিয়ে দেখ বাবাকে বুঝাতে পারিস কিনা।
রাইয়ান আর কোন কথা না বলে দৌড়ে তার দাদাভাইয়ের রুমে যায়। রাইয়ানকে তার দাদা দেখে বলতে লাগলো,
– আমার নাতবৌ কোথায় রাইয়ান?
রাইয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
– তুমি ঔষধ খাচ্ছো না কেন? ঔষধ না খেলে তুমি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যাবে যে?
– না আমি কিছুই খাবো না। তুই আগে আমার কাছে আমার নাতবৌকে এনে দে।
– আচ্ছা সে আসবে, আগে তুমি ঔষধগুলো খাও?
– নাহ! যতক্ষণ না আমি আমার নাতবৌকে দেখছি ততক্ষণ আমি কিছু মুখে নিবো না।
দাদাকে আর বুঝাতে পারছে না রাইয়ান। এদিকে ঔষধ না খেয়ে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে দাদার। বাধ্য হয়ে সে গাড়ি ওঠে রওনা হয় পুষ্পকে আনার জন্য।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
সারাদিন কিছু খাইনি কেউ। পাপড়ি এখনো নিজের রুমেই আছে। আফিয়া বেগম কাঁদতে কাঁদতে নিজের শরীরের অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। তাই আফিয়া বেগমকে কিছু খায়ানোর চেষ্টা করছে পুষ্প। হঠাৎ পুষ্পকে কেউ বাহির থেকে ডাক দেয়। পুষ্প বাহিরে গিয়ে দেখে রাইয়ান তাকে ডাকছে। রাইয়ান ডাক শুনে পাপড়িও নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসে। রাইয়ানকে দেখে পুষ্প বলে,
– আপনি? এখন আবার কেন এসেছেন?
– আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি।
-মানে?
– দেখেন, আপনি জানেন আমার দাদাভাই অসুস্থ। সে আপনাকে বারবার খুজছে। আপনাকে না পেয়ে তিনি ঔষধ-খাবার কিছু খাচ্ছে না। এতে ওনার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আপনি চলুন আমার সাথে।
পুষ্প একটু মুচকি হেসে বললো,
– আপনারা বড়লোকেরা পারেনও বটে। সেই তো একটু আগে আপনার বাসায় আমাকে যা তা বলে টানতে টানতে এখানে নিয়ে আসলেন।আর এখন আবার আমার প্রয়োজন তো আবার নিতে চলেও এসেছেন?
– দেখুন, শুধু দাদাভাইয়ের জন্য আপনাকে নিতে এসেছি নয়তো আপনাদের চেহেরাও দেখতে এখানে আসতাম না।
-হুম। যেতে পারি আপনার সাথে তবে এক শর্তে।
– কি শর্ত?
পুষ্প পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
– পাপড়িকে তার চাকরিটা ফিরিয়ে দিতে হবে। আর অফিসে তাকে আগের মতোই সম্মান দিতে হবে?
রাইয়ান তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
– পরিস্থিতির ফায়দা কিভাবে তুলতে হয় তা আপনাদের থেকে ভালো কেউ জানে না। আপনার শর্তে আমি রাজি। চলুন।
পুষ্প রাইয়ানের সাথে গিয়ে গাড়িতে ওঠে বসে চলে যায়। আর পাপড়ি শুধু তাকিয়ে দেখেছে তাদের।
চলবে…..