#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৪
৩১
চোখে আলো পড়তেই ঈশা বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে ফেলে। কিন্তু চোখ খুলে যা দেখল সেটা দেখেই সে শক খেলো। ইভান তাকে আস্টে পৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হল। ইভান খালি গায়ে শুয়ে আছে। ঈশার এবার হার্ট বিট বেড়ে গেলো। সে কিছুই বুঝতে পারছেনা। একটু সময় নিয়ে আগের কথা মনে করতে চেষ্টা করলো কিন্তু সে কাল চিপস খাওয়া পর্যন্তই মনে করতে পারল। তারপর কি হয়েছে কিছুই মনে পড়ছেনা। সে একটু শুকনো ঢোক গিলে ইভান কে আবার ভালো করে দেখে নিলো। খালি গায়ে ঈশা কে ধরে সে উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে। ঈশা এবার নিজেকে দেখল। তার কাপড় ও এলোমেলো। ওড়না কোথাও খুজে পাচ্ছেনা। ঈশার শরীর ঘামতে শুরু করলো। কি করবে বুঝতে পারছেনা। সে এক ঝটকায় ইভান কে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো। ইভানের ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় রাগ করে বলল
–হচ্ছেটা কি?
ঈশা একটু ভয় পেয়ে চমকে উঠলো। কিন্তু তারপরে কাদ কাদ হয়ে বলল
–তুমি এখানে কেন?
ইভান ঈশার কথার উত্তর না দিয়ে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল
–কাল সারা রাত ঘুমাতে দিস নি। এখন আবার সকাল সকাল উঠে কেন নাটক করছিস?
ইভানের কথা শুনে ঈশা শুকনো ঢোক গিলে বলল
–সারা রাত ঘুমাতে দেইনি মানে? কি করেছি?
ইভান এবার মাথা তুলে অবাক চোখে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–সিরিয়াসলি ঈশা! তোর কিছুই মনে নেই!
ঈশা অসহায়ের মতো মাথা নাড়াল। ইভান এবার সোজা হয়ে শুয়ে পা নাড়াতে নাড়াতে বলল
–কি করেছিস সেটা মুখে কিভাবে বলব। প্রাক্টিক্যালি রাতে করে দেখাব। তখন দেখে নিস। এখন ঘুমা আর আমাকেও ঘুমাতে দে।
ঈশা এবার চোখ বড় বড় করে বলল
–কি বলছ এসব?
ইভান এবার বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো। ঈশাকে পুরোটা ভালো করে দেখে নিয়ে বলল
–নিজের অবস্থা দেখেও বুঝতে পারছিস না নাকি বুঝতে চাইছিস না।
ইভানের কথা শুনে ঈশা নিজের দিকে ভালো করে দেখে নিলো। চুল গুল এলোমেলো। কাপড় ও এলোমেলো। ইভানের গলায় হালকা ঈশার কাজলের কালির অংশ লেগে আছে। মাথার পিন গুলো বিছানায় ছড়ানো। একটু ঘুরতেই চোখে পড়লো তার ওড়না আর ইভানের শার্ট মেঝতে পড়ে আছে। পাশে থাকা বিয়ারের ক্যান টা চোখে পড়তেই ঈশা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে চিৎকার করে বলল
–ওই যে ওই ড্রিঙ্কস টা আমি খেয়েছিলাম। কিন্তু তার পরে আর কিছু মনে নেই কেন?
ইভান বিয়ারের ক্যানের দিকে তাকিয়ে বলল
–ওটা ড্রিঙ্কস না বিয়ার ছিল। আর ওটা খেয়েই তো তুই আমা……।
বলেই থেমে গেলো ইভান। ঈশা চোখ বড় বড় করে বলল
–বিয়ার মানে? তুমি আমাকে বিয়ার খাইয়েছ?
ইভান এবার রাগি চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল
–একটা থাপ্পড় মেরে সোজা বানিয়ে দিবো। আমি তোকে কখন খাওয়ালাম। আমি যদি ঠিক সময় মতো না আসতাম তাহলে তুল কালাম কাহিনি ঘটিয়ে ফেলতিস। আমার সাথেই যা করেছিস। আল্লাহ জানে আমি না থাকলে কি হতো!
ঈশা এবার একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল
–ওটা খেয়ে আমি কি করেছি?
ইভান ঈশার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–কি করিস নি সেটা জিজ্ঞেস কর। অবশ্য তোর এই নতুন রুপের সাথে পরিচিত হয়ে ভালই লেগেছে। খারাপ হয়নি। নিজের সমস্ত আবেগ দিয়ে তোকে ভালবেসেছি। মন ভোরে আদর করেছি সারা রাত।
ইভানের কথা শুনে ঈশা এবার ঘাবড়ে গেলো। একটু ভেবে বলল
–কিন্তু তুমি যে বলেছিলে আমাকে জোর করবেনা। তাহলে?
ইভান এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বলল
–জোর করিনি তো! তুই তো বললি ভালবাসিস তাই আদর নিবি। আর তুই আমার কাছে কিছু চাইলে সেটা আমি তোকে না দিয়ে থাকতে পারি না। তুই তো জানিস।
ঈশা ইভানের কথা শুনে চমকে গেলো। এরকম কথাও কি ঈশা বলেছে। বিশ্বাসই হচ্ছেনা তার। সামনে তাকিয়ে ভাবতে ভাবতে বলল
–আমি কি এরকম বলেছি?
ইভান একটু হেসে ঈশার একদম কাছে চলে আসে। তার কানে আসতে করে একটা কামড় দিয়ে বলে
–এখন এখানে এভাবে বসে থাকলে যে কোন সময় আমার মুড চেঞ্জ হতে পারে। তখন কিন্তু তুই চাইলেও আমি তোকে ছাড়বনা।
ঈশা ইভানের কথা বুঝতে পেরে এক দৌড়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। দরজা বন্ধ করে দরজায় হেলানি দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে ভাবতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই কিছু মনে পড়ছেনা। আবার ইভানের কথা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাসও করেত পারছেনা। মনে একটা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। সামনে থাকা আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখে নিলো। চোখের কাজল লেপটে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছুই বুঝতে পারছেনা। মাথাটাও প্রচণ্ড ব্যাথা করছে। বেশ খানিকটা সময় ওয়াশ রুমে বসে থাকলো ঈশা। বাইরে ইভান মুচকি মুচকি হাসছে। ঈশার এতোটা সময় ওয়াশ রুমে থাকায় ইভান এবার চিৎকার করে বলল
–এতক্ষণ ওয়াশ রুমে কি করছিস? তুই নিজে বের হবি নাকি আমি বের করে আনবো?
ইভানের কথা শুনে ঈশা বের হয়ে এলো ওয়াশ রুম থেকে। ইভান তার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে আছে। ইভানের ওভাবে তাকানো দেখে ঈশা নিচে পড়ে থাকা ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিলো। ঈশাকে আর একটু বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে ইভান বলল
–সারা রাত এতো কিছু হল তখন তো লজ্জা পেলিনা। বরং মজা নিলি। আর এখন লজ্জা উপচে পড়ছে?
তার কথা শুনে ঈশার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে।
৩২
সারা শরীর কাপুনি দিয়ে জর আসছে। অনেকটা দুর্বল ও লাগছে। খাবার রুচি নেই একদম। ঈশা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। সব কিছু কেমন অসহ্য লাগছে। এর মাঝে ইরা খাবার নিয়ে আসলো। কিন্তু সে খুব বিরক্ত হল। ধমক দিয়ে বলল
–এভাবে বিরক্ত করলে কিন্তু আমি বাড়ি থেকে চলে যাব।
ইরা তার আচরনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
–কই যাবে আপু?
চোখ বন্ধ করেই ঈশা বলল
–কেন আমার যাওয়ার জায়গা নেই? তোরা কি ভাবিস আমি এই বাড়ির বাইরে কোথাও যেতে পারব না।
–কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা আছে একটু শুনি?
ইভানের ভারি গলার আওয়াজ শুনে ঈশা চমকে উঠে বসলো। ইরা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–আরে ভাইয়া তুমি! অফিস থেকে কখন এলে?
–মাত্র এলাম।
ইরার মাথায় হাত দিয়ে একটু হেসে বলল
–ওটা আমাকে দে। আমি খাইয়ে দিবো। তুই যা।
ইরা ইভানের হাতে খাবার দিয়ে চলে গেলো। ইভান ঈশার সামনে খাবারের প্লেট ধরতেই ঈশার উকি আসলো। ঈশা মুখ চেপে উকাতে লাগলো। ইভান প্লেট টা সরিয়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে । ঠোঁটে তার সেই ডেভিল হাসি। ঈশা নিজেকে সামলে নিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে তার হাসি দেখে একটু অবাক হল। তারপর চোখ ফিরিয়ে নিয়ে একটু ভাবল তার হাসির কারন। একটু ভেবেই ইভানের দিকে তাকাল। সে তখনও হাসছে। ঈশা এবার একটু চিন্তিত হয়ে বলল
–হাসছ কেন?
ইভান তার হাসিটা বন্ধ করে বলল
–এতো বড় একটা খুশির খবর আর আমি হাসবনা।
ঈশা বুঝতে না পেরেও ভ্রু কুচকে বলল
–কিসের খুশির খবর?
ইভান হতাশা নিয়ে বলল
–তুই কি সব ভুলে গেলি?
ঈশা এবার ভয় পেয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল
–কি বলতে চাইছ তুমি?
ইভান নিরুত্তর হাসল। ঈশা আবার জিজ্ঞেস করলো
–ঠিক করে বলত তুমি কি নিয়ে কথা বলছ?
ইভান খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–সেই দিন রাতের পর থেকে তোর খাবারে অরুচি হয়। বমি পায়। এসব তো আর এমনি এমনি হয়নি।
ঈশা একটু ভেবে আনমনে বলে
–হ্যা।
বলেই ইভানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইভান ঈশার একটু কাছে এসে সামনের চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে বলে
–তুই কি এখনো কিছুই বুঝতে পারছিস না?
কথাটা শুনে ঈশার মাথা ঘুরে উঠে। সে ঘামতে থাকে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। তার অবস্থা বুঝতে পেরে ইভান পানির গ্লাসটা ঈশার সামনে ধরে। ঈশা পুরো গ্লাসের পানিটা একবারে শেষ করে ফেলে। ভয়ে ভয়ে ইভানের দিকে তাকায়। ইভান তার হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে টেবিলে রেখে দেয়। তারপর ঈশার একটু কাছে এসে প্লেট থেকে খাবার নিয়ে ঈশার মুখে ধরে বলে
–খেয়ে নে। তোর জন্য না হলেও আরেক জনের কথা তো ভাবতে হবে।
ঈশা ইভানের কথা শুনে হা হয়ে গেলো। আর ইভান তার মুখে জত্নে খাবার দিতে লাগলো। ঈশাকে সব খাবার খাইয়ে দিয়ে ইভান উঠে গেলো। খাবার প্লেট টা বাইরে রেখে হাত ধুয়ে আবার এলো। ঈশা আনমনেই ভাবছে। ইভান ঔষধের বক্স থেকে ঔষধ টা বের করে ঈশার সামনে ধরল। ঈশা ঔষধের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে সরে গেলো। ইভান খুব শান্ত ভাবে বলল
–আমি খাইয়ে দিবো?
ঈশা ইভানের দিকে একবার তাকিয়ে বলল
–না না। আমি একাই খেতে পারব।
–তাহলে তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।
ঈশা আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলো। সাথে সাথে ইভান তার হাতে চকলেট টা ধরে দিলো। ঈশা প্যাকেট টা খুলে চকলেট টা মুখে নিয়ে নিলো। তারপর ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–রেস্ট নে।
ঈশা কোন কথা না বলে বসে থাকলো। ইভান এবার ঈশার পাশে বসে তার মাথায় হাত দিয়ে বলল
–শুয়ে পড়! মাথা টিপে দিবো?
ঈশা ইভানের দিকে ঘুরে তাকাল। মাত্র অফিস থেকে এসেছে। তার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। আবার সেই কিনা তার মাথা টিপে দিবে। এই মানুষটা এতো এনার্জি কোথায় পায়। ঈশার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে ইভান একটু হেসে বলল
–তোর এই চেহারাটা দেখলেই আমার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
ঈশার গালে হালকা স্পর্শ করে বলল
–আমার সব এনার্জি এখান থেকে আসে।
ঈশা অবাক হয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। একটা মানুষ কিভাবে এতো নিখুঁত ভাবে আরেকটা মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে। এটাও কি সম্ভব। ইভান ঈশাকে বিছানায় শুয়ে দিলো। তারপর তার মাথা টিপে দিতে দিতে বলল
–নিজেকে সব সময় ভালো রাখার চেষ্টা করিস। তাহলেই আমিও ভালো থাকব।
ঈশা চোখ বন্ধ করে ফেললো। ইভান একটু হেলে ঈশার কিছুটা কাছে গেলো। ইভানের মাতাল করা সেই পারফিউম ঈশাকে আজও সেদিনের মতো তার কাছে টানছে। এভাবে বেশিক্ষন থাকতে না পেরে ঈশা বলল
–তুমি ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও। আমি ঘুমিয়ে যাব।
ইভান আর কিছু না বলে উঠে গেলো। দরজার কাছে গিয়ে ঈশার দিকে একবার ঘুরে বলল
–শুধু নিজের খেয়াল রাখলেই কি হবে? আরেকজনের খেয়ালও তো রাখতে হবে!
ইভানের কথা শুনে ঈশা চোখ খুলে বড় বড় করে তার দিকে তাকাল। ইভান একটু হেসে বের হয়ে গেলো।
চলবে………।
(ইভান এটা কি বলল🙄🙄)