#তোর_ছায়ার_সঙ্গী_হব
লেখক-এ রহমান
পর্ব ৬
১২
ঈশা জানালার গ্রিলে মাথা লাগিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তার মন খারাপ। সে গভীর ভাবনায় ডুবে আছে।পাশের টেবিলে রাখা ফোনটা উচ্চ শব্দে বেজেই যাচ্ছে। তাতেও তার কোন খেয়াল নেই। সে চিন্তায় এতোটা বিভোর। তার দরজার সামনে দিয়েই যাচ্ছিলো ইভান। ফোনের শব্দে ঘুরে তাকায়। ঈশাকে এভাবে থাকতে দেখে তার মনটাও খারাপ হয়ে গেলো। ঈশা মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে এটা ভেবেই তার সমস্ত রাগ অভিমান নিস্তেজ হয়ে গেলো। এই মুহূর্তে ঈশার প্রতি সমস্ত রাগ অভিমানের চেয়ে তার মন ভালো করাটা ইভানের কাছে বেশি গুরুত্ব পূর্ণ মনে হচ্ছে। ঈশার মন খারাপের কারন টাও ইভান জানে। কারন হসপিটাল থেকে আসার পর থেকে ইভান তার সাথে ভালো করে কথা বলেনি। খারাপ ব্যাবহার করেছে অনেক। ঈশা মুখ ফুটে না বললেও এসব যে তাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে সেটা ইভান বুঝতে পারছে। ঈশা কে দেখে এই মুহূর্তে ইভানের খুব কষ্ট হচ্ছে। সে মনে মনে ভাবল “একবার আমাকে বলতে পারলিনা আমার সাথে এমন ব্যাবহার করোনা আমি সহ্য করতে পারছিনা। এতো জেদ কিসের তোর। বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটেনা।” আবারো ফোনের শব্দে ইভানের বিরক্ত এসে যায়। এতো কি ভাবছে মেয়েটা ফোনের শব্দ শুনতে পাচ্ছেনা। সে ঘরে ঢুকে ফোনটা হাতে নিয়ে বলে
–রিমা কে? তোর বান্ধবি?
ইভানের গলার আওয়াজ শুনে ঈশা ঘুরে তাকায়। ইভান তার ফোন হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখছে। ঈশা এভাবে ইভান কে দেখে একটু অবাক হল। তার কথার উত্তর না দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো।ইভান ফোনের দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো
–পাশেই এতো জোরে ফোন বাজছিল সেটা শুনতে পেলিনা আর আমি একবার কথা বলতেই সেটা কানে গেলো?
ঈশা এবার বুঝতে পারে ইভান তাকে জালাতে এসেছে। ঈশা কোন কথা না বলে আবার সামনে তাকায়। ইভান এবার ঈশার ফেসবুকে ঢুকে পড়ে। তার আপলোড করা ছবি গুলা বের করে। একটা ছবিতে তার চোখ আটকে যায়। শুধু উপরের অংশের তোলা ছবি। দেখে মনে হচ্ছে ঈশা শাড়ী পড়ে আছে। নীল শাড়ী। ইভান ছবিটাকে ভালো করে দেখতে দেখতে বলল
–তোকে শাড়ী পড়তে কখনও দেখিনি। পরবি? নীল শাড়ী।
ইভানের কথা শুনে ঈশা অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। ইভান যে এমন কথা বলবে তা ঈশার ধারনার বাইরে। কিন্তু কেন জানি এক রাশ মন খারাপের মাঝে কোথাও একটা ভালো লাগা নাড়া দিয়ে উঠলো। আবার ঈশার ফোন বেজে উঠলো। ঈশা অপেক্ষা করছিলো ইভান তাকে ফোনটা দিয়ে দিবে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে ইভান ফোনটা রিসিভ করে ফেললো
–হ্যালো!
ঈশার ফোনে এরকম অপরিচিত একটা ছেলের গলা পেয়ে রিমা একটু ঘাবড়ে গেলো। একটু কাপা কাপা গলায় বলল
–হ্যা…হ্যালো। ঈশা নেই?
–আছে। তুমি কি ঈশার বান্ধবি?
–হ্যা। কিন্তু আপনি কে?
ইভান একটু হেসে বলল
–আমি ঈশার এক মাত্র হাসবেন্ড!
তার কথা শুনে রিমা যেন আকাশ থেকে পড়লো। কারন ঈশার বিয়ের কথা সে জানতোনা। একটু চেচিয়ে বলল
–কি? ঈশা বিয়ে করলো কবে?
–অনেক ছোট বেলায়। কেন তোমাকে বলেনি?
রিমা এবার ঈশার উপরে রেগে গেলো। ঈশার উপরে রাগ করে বলল
–না তো। এসবের কিছুই বলেনি।
ইভান এবার হেসে বলল
–এখন তো জানলে। তাহলে আমার সাথে কবে দেখা করতে আসছ?
রিমা ইভানের কথায় খুশি হয়ে বলল
–কালই আসবো আপনার সাথে দেখা করতে।
–ঠিক আছে বেবি! সময় মতো চলে এসো কেমন?
বলেই ফোনটা ইভান রেখে দিলো। তারপর ঈশার দিকে তাকাল। ঈশার দৃষ্টিতে ঠিক কি রকম এক্সপ্রেশন আছে সেটা ইভানের জন্য বোঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সে মনোযোগ দিয়ে ঈশার দৃষ্টি বোঝার চেষ্টা করছে। অবশেষে দুই একটা খুজে বের করতে সক্ষম হল। তার মধ্যে অবাক রাগ আর ভাললাগা। কিন্তু ইভানের এই মুহূর্তে ভালো লাগাটাই দরকার ছিল। সে বুঝতে পারল একটু হলেও ঈশার মন ভালো হয়েছে। তাই আর কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। ঈশা তার দিকে তাকিয়েই আছে। ইভান তার পিছনে চলে আসতেই ঈশা কি মনে করে হেসে দিলো। ইভান দরজায় দাড়িয়ে পিছনে ঘুরে ঈশার হাসি দেখে নিজেও হাসল। কিন্তু ঈশার সেটা চোখে পড়লনা।
১৩
সোফায় বসে ইভান ফোনে গেমস খেলছিল। পাশ থেকে ইলহাম বলে উঠলো
–ওয়াও!!
হঠাৎ তার এরকম কথার মানে বুঝতে ইভান তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। সে সামনে হা করে তাকিয়ে আছে। ইভান একটু বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি তার চোখের দৃষ্টি তাক করে সামনে তাকিয়ে তার মুখ হা হয়ে যায়। ঈশা নীল শাড়ী পরে ফ্রিজের দরজা খুলে মাথা নিচু করে ভ্রু কুচকে কি যেন খুজেই যাচ্ছে। চুল গুলো দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। মাত্র গোসল করে বেরিয়েছে সে। সামনের কাটা ছোট চুল গুলো বার বার সামনে চলে আসছে। আর ঈশা বার বার সেগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিচ্ছে। ইভানের মনে হচ্ছে সে যেন এক ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে। ঈশা যেন তাকে নেশার মতো টানছে। চোখ ফেরাতে ভুলে গেছে ইভান। আজ তার মনে হচ্ছে বুকের ভিতরে হার্ট খুব জোরে বিট করছে। সেটা যেন ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। আর এই মুহূর্তে তার এই অবস্থায় একটু শান্তি দিতে পারে ঈশা। তার সমস্ত জমান আবেগ আজ বাধ মানছে না। ইভান পারছেনা নিজেকে আটকাতে।
–আপি তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
জোরে কথাটা বলে ইলহাম। তার কথায় ইভান বাস্তবে ফেরে। কিন্তু স্বাভাবিক হতে পারেনা। চোখ ফিরিয়ে নিতেই আবার আনমনে চোখ ঈশার উপরে চলে যায়। ইলহামের কথা শুনে ঈশা আর ইভানের মা দুজনেই ঈশার দিকে তাকায়। ঈশাকে শাড়ী পরতে দেখে তারাও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এবার ঈশা সবার দিকে একবার করে তাকায়। তাদের এভাবে তাকানো ঈশার খুব বিরক্ত লাগে। কিছু একটা বলতে যাবে তখনি ইভানের দিকে চোখ পড়ে তার। ইভানের দৃষ্টি যেন তাকে গ্রাস করে ফেলছে। তার দৃষ্টি দেখে ঈশার মনে হচ্ছে ইভান এখনি উঠে এসে তাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। সে ইভানের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে পারলনা। ঘুরে ঘরে চলে গেলো। ঈশার মা আর ইভানের মা দুজনি ঈশার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে এতক্ষণ ইভান কে দেখছিল। ইভান কে দেখে তারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগলো। ইভানের ওই দৃষ্টি কারও বুঝতে কষ্ট হলনা। ঈশা যাওয়ার পর ইভান চোখ বন্ধ করে বড় একটা শ্বাস নিলো নিজেকে শান্ত করতে।
দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য সবাই টেবিলে বসে পড়লো। ঈশা একটা বাটি হাতে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে টেবিলের কাছে আসলো। তারপর বাটিটা টেবিলে রাখতে রাখতে চেয়ারে বসে পড়লো। সামনে থেকে প্লেট টা নিয়ে পাশে থাকা গ্লাস টা নিতে যাবে দেখে ইভান তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঈশা যে ইভানের পাশের চেয়ারে বসেছে সেটা সে বুঝতে পারেনি। কিন্তু ইভানের এমন দৃষ্টির কারন কি। সে বুঝতে পারলনা কি এমন ভুল করেছে। কি আবার করলো যে এমন ভাবে তাকাচ্ছে। তার কথা মতই তো নীল শাড়ী পরেছে। ইভান ঈশার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে প্লেটের দিকে তাকাল। কিছুক্ষন চোখটা বন্ধ করে মনে মনে ভাবছে “এতো জায়গা থাকতে এই মেয়েকে আমার কাছে এসেই বসতে হবে। এমনিতেই আজ তাকে দেখে মাথাটা নষ্ট হয়ে আছে। তার উপর আবার আমার পাশেই এসে বসতে হল। নিজেকে সামলাব কিভাবে আমি।” চোখ খুলে সামনে থাকা গ্লাসটা নিয়ে অর্ধেকটা পানি খেয়ে নিলো। তারপর সামনে গ্লাসটা রেখে নিজের প্লেটে মনোযোগ দিলো। ঈশা খাবার মুখে দিতেই সেটা গলায় আটকে গেলো। ইভান তাড়াতাড়ি করে তার গ্লাসটা তুলে নিয়ে ঈশার মাথায় হাত দিয়ে পানিটা তাকে খাইয়ে দিলো। একটু বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো
–তুই ঠিক আছিস তো?
ঈশা মাথা নাড়াল। ইভান এবার সামনে ঘুরতেই দেখল সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সে একটু বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে নিলো। তার বিরক্ত হওয়া দেখে সবাই যার যার খাবারে মনোযোগ দিলো। ইভান ঘুরে একবার ঈশার দিকে তাকাল। ঈশা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আছে। এই গ্লাসে ইভান পানি খেয়েছে আর তাকেও সেই পানি খাওয়াল। ঈশার দৃষ্টি বুঝতে পেরে ইভান গ্লাসটা তুলে হাতে নিলো। ঈশা গ্লাসটাকেই দেখছে। ইভান একটু দেখে নিয়ে ঈশা যে পাশে ঠোঁট লাগিয়েছিল সে পাশে ঠোঁট লাগিয়ে বাকি পানি টুকু শেষ করে ফেললো। ঈশা একটু ভ্রু কুচকে ইভানের দিকে তাকাল। ইভান তার দিকে তাকিয়ে ডেভিল হাসি দিলো। ঈশা অপ্রুস্তুত হয়ে সবার দিকে তাকাল। কেউ বিষয়টা খেয়াল করেছে কিনা। কিন্তু সবাই নিজের খাবারে মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে। ঈশার ইভানের কাজে খুব বিরক্ত লাগলো। সব সময় এভাবে তাকে বিরক্ত করা যেন ইভানের পেশায় পরিণত হয়েছে। ঈশার এভাবে চুপ করে বসে থাকা দেখে ইভান ঈশার কানের কাছে এসে ফিস ফিসিয়ে বলল
–আমার হাতে খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিস বুঝি? সেটা মুখে বললেই হয়।
ঈশা ইভানের কথা শুনে তার দিকে তাকায়। তারপর আসতে করে বলে
–বাজে কথা না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দাও।
ইভান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল
–খেতেই তো চাই। কিন্তু আফসোস সেই প্রসন্ন ভাগ্য আমার নেই। এখন পর্যন্ত টেস্টই করতে পারলাম না। খাওয়া তো দুরের কথা।
ইভানের কথা বুঝতে পেরে ঈশা চোখ বড় বড় করে সবার দিকে তাকাল। কেউ কিছু শুনেছে কিনা। সবাই নিজেদের মতো খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত।
১৪
ইরা রান্না ঘরে যাচ্ছে চা বানাতে। ইভান কে পানি খেতে দেখে বলল
–ভাইয়া চা খাবে?
ইভান একটু ভেবে বলল
–তুই বানাবি?
–হুম।
–খাবো।
ইরা রান্না ঘরে চলে গেলো। পানি খেয়ে গ্লাস টা হাতে নিয়েই ইভান একটু ভেবে গ্লাসটা রেখে ঈশার ঘরে গেলো। দরজায় ঢুকেই ঈশা কে দেখে থেমে গেলো। ঈশা ইভানের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন সে তার অপেক্ষা করছিলো। ইভান মনে মনে ভাবল “আমি আসবো এই মেয়ে কিভাবে জানলো। আর এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন। আমাকে পাগল তো আগেই বানিয়েছে এখন পাগলা গারদে পাঠিয়ে তবেই শান্ত হবে। এরকম আচরণ করলে কেউ কি ঠিক থাকতে পারে।” ভেবেই চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল
–ইরা কোথায়?
ইভানের দিকে তাকিয়েই ঈশা বলল
–রান্না ঘরে। চা বানাচ্ছে।
ইভান কথা শেষ করেই উলটা দিকে ঘুরে গেলো। ঈশা তার দিকে তাকিয়েই বলল
–কি দরকার ইরার?
–এমনি
উলটা দিকে ঘুরেই উত্তর দিলো ইভান। তারপর এক ধাপ ঘরের বাইরে বাড়াতেই ঈশা বলল
–সত্যিই কি ইরাকে খুজতে এসেছিলে?
ঈশার মুখ থেকে এমন কথা শুনে ইভান অপ্রুস্তত হয়ে গেলো। বুঝতে পারল ঈশা তার আর ইরার কথা শুনেছে। পিছনে ঘুরে ঈশার দিকে তাকাল। তার দিকে তাকাতেই আবার সে হারিয়ে গেলো তার মাঝে। ঈশার দিকে এগিয়ে এসে তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল
–তোর কি মনে হয়?
ঈশা তার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমার মনে হওয়াতে তো সত্যি মিথ্যা হয়ে যাবে না।
ইভানের এবার নিজেকে সামলাতে কষ্ট হয়ে গেলো। সে ঈশাকে আরও জোরে চেপে ধরে বলল
–আমার সামনে আর কখনও শাড়ী পরে আসবিনা।
ঈশা একটু হেসে বলল
–কেন? সখ মিটে গেছে? নাকি সামলাতে পারছনা নিজেকে?
কথাটা শুনে ইভান ঈশার গলাটা হালকা চেপে ধরে বলল
–৫ বছর ধরে নিজেকে সামলে রেখেছি। এটা আমি ভালই পারি।
–সেটা আজ দেখতেই পাচ্ছি।
কথাটা ঈশার মুখ থেকে শুনে ইভান তাকে ছেড়ে দেয়। কারন তার চোখের ভাষা যে ঈশার বুঝতে বাকি নেই সে বুঝতে পারছে। ঈশা চলে যেতে নিলে সে ঈশার হাত ধরে টেনে এনে ঈশাকে আবার দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। এক হাতে ঈশার দুই গাল চেপে ধরে তার ঠোঁটে রুডলি কিস করতে শুরু করে। কিছুক্ষন পর ইভানের স্পর্শ কোমল হয়ে যায়। সে যেন ভালবেসে তার ভালোবাসার মানুষকে স্পর্শ করছে। ঈশা প্রথমে আচমকা এমনটা হওয়ায় একটু বিব্রত হলেও এখন আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। তবে সে এখন কাঁপছে। ভয়ে নয়। ভালোবাসার প্রথম ছোঁয়ায়। এক হাতে নিজের শাড়ীর আচল খামচে ধরে ঈশা। জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। ইভানের এমন ভালবাসায় ভরা স্পর্শ ঈশাকে এক অন্য জগতে নিয়ে যাচ্ছে। ইভানও চোখ বন্ধ করে ফেলে। দুজনি এক অদ্ভুত অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এক পরম সুখের মুহূর্ত। রান্না ঘর থেকে আওয়াজ আসতেই ইভানের ঘোর কেটে যায়। সে ঈশা কে ছেড়ে দেয়। ঈশা এখনো ঘোরের মধ্যেই আছে। চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। পরম সুখের এই অনুভূতিটাকে সে হারাতে চাইছেনা। ইভান কিছুক্ষন ঈশাকে দেখে চলে যাওয়ার জন্য ঘুরতেই দেখে ইরা চা হাতে দাড়িয়ে আছে। সে একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। বুঝতে চেষ্টা করে ইরা কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে কিনা। ইরা তার দিকে তাকিয়ে বলে
–ভাইয়া তুমি এখানে? কিছু লাগবে?
ইরার কথা শুনে ঈশা চোখ খুলে ফেলে। ইভান বুঝতে পারে ইরা কিছুই বুঝতে পারেনি। তাই ইরার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিতে নিতে খুব শান্ত সরে বলে
–এই মুহূর্তে নিজের মনকে শান্ত করতে যা সব থেকে বেশি প্রয়োজন ছিল সেটা তোর আপুর কাছ থেকে নিয়েছি। এখন আপাতত আর কিছু না হলেও চলবে।
চায়ের কাপটা নিয়ে ঈশার দিকে ঘুরে তাকায়।ইভানের চাহুনিতে আজ মানসিক প্রশান্তির ছোঁয়া। ঈশা একটা ঢোক গিলে উলটা দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। সে ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেনা। উলটা দিকে ঘুরে ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে ঈশা। তাকে এই অবস্থায় দেখে ইভান একটু হাসে। ইভানের হাসির মানে বুঝতে ইরা অবুঝের মতো প্রশ্ন করে বসে
–ভাইয়া আপুকে দেখে এভাবে হাসছ কেন?
ইভান এবার ইরার দিকে তাকিয়ে তার চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে
–কিছু মুহূর্ত সব কিছুর উপরে হয়। কিছু অনুভুতি এমন কিছু মানসিক প্রশান্তি দেয় যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। তখন মানুষ এভাবে হেসে নিজের মনের অনুভুতি প্রকাশ করে। বুঝলি?
তার কথা ইরার মাথার উপর দিয়ে যায়। সে বোকার মতো দৃষ্টি নিয়ে বলে
–কিসব কঠিন কথা বল কিছুই বুঝিনা।আমার বেশ সন্দেহ হয় তোমার কথা তুমি নিজেই বোঝো কিনা।
তার কথা শুনে এবার ঈশা আর ইভান দুজনেই শব্দ করে হেসে দেয়। ইভান হাসতে হাসতে চলে যায়। ইরা ভ্রু কুচকে ভাবতে থাকে। ঈশা পিছনে ঘুরে ইভানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসতে থাকে।
চলবে………