#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_15
.
.
🥀উনার কথাগুলো শোনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি আমি।কি বলবো বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি যে।উনি আমাকে ভালোবাসেন।নিজের কান কেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিনা আমি।আমিই উনার ভালোবাসা রীমা!নিজের নাম ছোট করলে যে এরকম একটা নাম হতে পারে কখনও মাথাতেই আসেনি আমার।এখন নিজের মাথা নিজেকেই ফাটাতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার।কি বোকামি টাই না করেছি।কিন্তু আমার প্রতি যদি ভালোবাসাই থাকে তাহলে আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন কেন উনি….?
.
…..আমি জানি মিহু তোমার আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না এটাই ভাবছো তো তাহলে তোমাকে ছেড়ে দিলাম কেন….?
.
লোকটার কথায় চরম আশ্চর্য আমি!!লোকটা আমার মনের কথা জানলো কি করে।উনি মনোবিজ্ঞানী নাকি…!!
.
অতীতে আমি অনেক ভুল করেছি। আমার ভুলের কোনো শেষ নেই।কিন্তু তুমি কি জানো বিয়ের পরেরদিন থেকেই তোমাকে চাইতাম আমি।তোমার দিকে তাকালেই পেছনের সব ভুলে যেতাম।তুমি নীলাভের সাথে কি করেছো যদিও পরে জানতে পেরেছি তুমি নির্দোষ তবুও তখন পেছনের সব! সব ভুলে যেতাম আমি।ইচ্ছে করে তোমার থেকে দূরে থাকতাম যাতে তোমার উপর দুর্বল হয়ে না পড়ি।কিন্তু কিছুতেই আটকে থাকতে পারিনি।যখন বুঝলাম তুমি সেই মেহরু নও তখন রোজ তোমার দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকতাম আমি।তুমি যখন আমার সাথে তর্কে জড়াতে তখন অপলক চোখে তাকিয়ে থাকতাম।কত রাত যে তোমার দিকে তাকিয়ে পার করেছি নিজেও জানি না আমি।শুধু তোমার ওই মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগতো আমার।কেন এমন পাগলামি করতাম তার কারণও অজানা ছিলো আমার।শুধু জানতাম তোমাকে দেখলে অশান্ত মন শান্ত হয়ে যেত আমার।পৃথিবী থমকে যেতো।মনের মধ্যে যতই অশান্তি থাকুক না কেন….তোমার ওই মুখ দেখলে অদ্ভুদ এক প্রশান্তি অনুভব করতাম মনে।তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না আমার কিন্তু আমার বিবেক আমাকে বাধ্য করেছে ফেরত দিতে তোমায়।বার বার মনে হতো অন্যায় করেছি আমি।যদি বিয়ে হয়ে গেছে বলে আটকে রাখি তাহলে তোমার উপর আরো বেশি অন্যায় করা হবে আমার।তাই সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।জানো তুমি চলে যাওয়ার পর কিছু ভালো লাগতো না আমার।শুধু পাগল পাগল লাগতো।কি যেন নেই মনে হতো।আর বার বার চোখের সামনে তোমার ছবি ভেসে বেড়াতো।কিন্তু কেন তা জানতাম না আমি।এভাবে মনের মধ্যে অশান্তি নিয়েই কেটে গেলো কয়েকটা মাস তোমার সাথে যোগাযোগ নেই আমার।মাঝেমধ্যেই ইচ্ছে করতো তোমার কাছে ছুটে চলে যাই পরক্ষনেই ভাবতাম যদি আমাকে অপমান করো তুমি তাই যাওয়া হয়নি।
.
কিছুটা থেমে আমার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও বলতে শুরু করলেন….একদিন সকালে নাদিরার ফোন ভাইয়া বউমণি রিদির বিয়েতে এসেছে।ব্যাস এই একটা খবর অফিসের সব কাজ অসম্পূর্ণ রেখে বিয়েতে চলে আসি আমি।যেখানে এই বিয়েতে আসারও কোনো ইচ্ছা ছিলো না আমার।তবুও তুমি এসেছো শুনে নিজেকে আটকাতে পারিনি।এখানে কেন এসেছি জানো….. শুধু তোমাকে দেখবো বলে।তোমার কাছাকাছি থাকবো বলে।যদিও এই ফিলিংসটার নাম অজানা আমার।তবুও ছুটে চলে আসি।এখানে আসার পর যখন তুমি আমায় ইগনোর করতে তখন জাস্ট সহ্য করতে পারতাম না।আহানের সাথে দেখলে রাগ হতো আমার,কষ্ট হতো তোমাকে চটকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করতো।শুধু মনে হতো তোমার সাথে কথা বলার অধিকার যদি কারোর থেকে থাকে তাহলে সেটা হলো একমাএ আমার।সেদিন বিকালে নাদিরা আর রামীম হঠাৎ বলে আমি নাকি প্রেমে পড়েছি।কথাটা নিয়ে অনেক ভেবেছি ভেবে উপলব্ধি করেছি হুম সত্যি প্রেমে পড়েছি…. তাও আর কেউ নয় আমার বউয়ের প্রেমে পড়েছি আমি।মানুষ সত্যি বলে বিয়ের পরেও ভালোবাসা হয়।যেটা আমার তোমার সাথে হয়েছে।
.
আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পকেট থেকে একটা লাল গোলাপ বের করে আমার হাত ধরে ফিল্মি স্টাইলে বলে উঠলেন উনি……
#তোমায়_ঘিরে_স্বপ্ন_আমার
#তোমায়_ঘিরে_ঘর
#ভালোবাসবে_কি_আমায়
#সারাজীবন_ভর….!!
❤️আমি তোমাকে ভালোবাসি মিহু❤️
ডু ইউ লাভ মি মিহু….
.
সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে আমার।এটা সত্যি!উনি আমাকে ভালোবাসেন।চোখ দুটো পানিতে চিকচিক করছে আমার।কিন্তু এই কান্না কোনো দুঃখের নয় এটা যে আমার আনন্দের কান্না।উনার কথার জবাবে খুব বলতে ইচ্ছে করছে হুম আমিও ভালোবাসি কিন্তু না আমি তা বলবো না।এতদিন আমার থেকে দূরে থেকে এখন ভালোবাসি বলা হচ্ছে হুহ।আপনার মনে হলো আপনি আমাকে ভালোবাসেন আর আমিও রাজি হয়ে গেলাম না কিছুতেই এটা হতে পারে না।
.
মিহু কিছু বলো…!!আমি তোমার মুখ থেকে হ্যাঁ শুনতে চাই।বলোনা তুমিও ভালোবাসো আমায়।
.
উনি আমার থেকে হ্যাঁ শুনতে চাইছেন কিন্তু আমি তো তা বলবো না।আমাকে কি মনে হয় উনার ফেলনা আমি।চোখে মুখে কঠিনভাব ফুটিয়ে তুলে “না আমি আপনাকে ভালোবাসি না”।
.
এই কথাটা শুনে থমকে গেলো আমার পুরো পৃথিবী।মিহু আমায় ভালোবাসে না।সাথে সাথে হাত থেকে ফুলটা পড়ে গেলো নিচে।গোলাপটার দিকে তাকিয়ে আছে মিহু।পাথরের ন্যায় যেভাবে বসা ছিলাম সেইভাবেই আছি আমি।মিহু আমি জানি তুমি মজা করছো প্লিজ মজা করো না।আমি সিরিয়াসলি জানতে চাইছি।তোমার মনে যা আছে বলে দাও প্লিজ।
.
আমকে কি মনে হয় আপনার পুতুল আমি।যখন ইচ্ছে হলো খেললেন আবার যখন ইচ্ছে হলো ফেলে দিলেন।সেদিন ইচ্ছে হয়েছিলো তুলে নিয়ে বিয়ে করলেন আবার ইচ্ছে হয়েছিলো বলে ফিরিয়ে দিলেন এখন আবার ইচ্ছে করছে ভালোবাসার।কে বলতে পারে ক’দিন পর ইচ্ছে করবে না ডিভোর্স দেওয়ার…..সাথে সাথে আমার মুখ চেপে ধরলেন উনি।
.
একদম এসব কথা মুখেও আনবে না তুমি।দেখ মিহু!!কোমড় জড়িয়ে ওকে নিজের একদম কাছে নিয়ে গেলাম।আমি তার জন্য তোমাকে সরি বলেছি বুঝার চেষ্টা করো।তখন আমি বুঝতে পারিনি ভেবেছি তোমাকে আটকে রাখলে অন্যায় করা হবে তোমার সাথে তাই দিয়ে এসেছিলাম।নিজের ফিলিংটাও তখন বুঝিনি।কিন্তু এখন তো বুঝতে পারছি!এখন তুমিই আমার পৃথিবী।আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন।আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো আমাকে চাও না তুমি।
.
উনার চোখের দিকে তাকানোর সাহস নেই আমার।ওই চোখের মায়ায় পড়ে যাবো।মিথ্যা বলতে পারবো না।কারণ আমিও যে আপনাকে ভালোবাসি,খুব বেশিই ভালোবাসি।নিচের দিকে তাকিয়ে ছাড়ুন আমাকে!ছাড়ুন বলছি!
.
আগে বলো ভালোবাসো!!তারপর ছাড়ছি।
.
আপনি আমাকে জোর করবেন নাকি!!আমার ইচ্ছা অনিচ্ছার কোনো মূল্য নেই আপনার কাছে।আপনি নিজেকে কি মনে করেন বলুন তো।সেদিন বলেছিলাম আমাকে ফিরিয়ে দিতে!বলিনি তো।সকাল পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম কিন্তু সকালে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিলেন তাহলে আজ কেন পুরনো হিসেব নিয়ে বসেছেন।সব কিছুর একটা সময় থাকে আপনারও সেই সময় চলে গেছে।আর ফিরে পাবেন না।যেভাবেই হোক বিয়ে হয়েছিলো আমাদের।আর বিয়ে হাতের মোয়া নয় ইচ্ছে হলে কিনলাম নয়তো ফেলে দিলাম।যেখানে আমি আপনার বৈধ ওয়াইফ সেখানে অন্যায় অবিচার এই কথাগুলো তখন বড্ড বেমানান।আমার কথা শুনে আস্তে আস্তে হাতের বাধঁন আলগা হয়ে গেলো উনার।জানি এখন কষ্ট হচ্ছে আপনার।কথাগুলো বলতে যে খুব কষ্ট হচ্ছে আমারও কিন্তু তবুও বলতে হচ্ছে আমায়।কারণ আমি তো কম কষ্ট পাইনি।ছয়টা মাস আপনার জন্য তিল তিল করে কষ্ট পেয়েছি।এবার আপনার পালা……আমাকে ছেড়ে দিয়ে….
.
এটাই তোমার সিদ্ধান্ত…..
.
হুম বলে সেখান থেকে প্রস্থান করলাম আমি।আজ খুব দিয়েছি রাক্ষুস কে।দেখ কেমন লাগে।খালি আমাকে কষ্ট দেওয়া তাই না।এবার দেখেন কষ্ট পেলে কেমন লাগে।
.
মিহুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি আমি।লাল গোলাপটা নিচে পড়ে রয়েছে।তুলতে গিয়েও কি মনে করে আটকে গেছি থাক।মিহু আমায় ক্ষমা করতে পারলো না।তাহলে আমায় ভালোবাসে না।এটা কেন মেনে নিতে পারছি না আমি।হঠাৎ কারো গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠি আমি।
.
উফফ!কি জটিল কেস।এটা হ্যান্ডেল করতে আমার বেশ সময় লাগবে।কিন্তু সলভ আমি করবোই করবো কথাগুলো বলতে বলতে সামনে এসে দাঁড়ালো নাদিরা।
.
তুই এখানে…?
.
শুধু ও না!!আমিও আছি।আমরা সব শুনেছি আর সব দেখেছিও।এখন কি করা যায় সেটাই ভাবছি।
.
এটা নিয়ে ভাবার কিছু নেই।ও আমাকে ভালোবাসে না।সেটা মুখের উপর স্পষ্ট বলে দিয়েছে।ওর সিদ্ধান্ত কে রেসপেক্ট করি আমি।
.
ধুর ভাইয়া!!রাখো তোমার রেসপেক্ট।আমি জানি বউমণি যতই বলুক তোমাকে ভালোবাসে না কিন্তু মনে মনে ঠিকই তোমাকেই ভালোবাসে।এখন তুমি আটার মতো লেগে থাকো দেখবে হয়ে যাবে।
.
তুই সিওর!!
.
রামীমঃশুধু ও না আমিও ১০০% সিওর!!ওর হাব ভাব দেখেই আমি বুঝেছি।ও তোকে ভালোবাসে এখন শুধু স্বীকার করানোর পালা।মানে হয়েছে কথাটা ওর পেটে আসছে কিন্তু মুখে আনছে না এমন…!!
.
আরাভঃওকে তাহলে কালকেই প্রমাণ হয়ে যাবে।কারণ কালকের পর আমরা এখান থেকে চলে যাচ্ছি।আর যা হবে কালকের মধ্যেই হবে।আমাকে ভালোবাসে কিনা কালকেই ওর শেষ পরীক্ষা।পেটের কথা কীভাবে মুখে আনতে হয় সেটা খুব ভালো মতোই জানি আমি….!!
.
আজ সন্ধ্যায় রিদির রিসেপশন!তাই বিকেলে সবাই কে বেড়িয়ে পড়তে হবে।আজও আমাকে সেই বিরক্তিকর শাড়ী পড়েই যেতে হবে।এই জিনিসটা ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর তম হয়ে উঠেছে আমার কাছে।তার অন্যতম কারণ হলো আরাভ।কালকের কথাগুলো মনে হতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার।যদি আজও এমন করেন উনি তাহলে….একদিকে বেস্টুর অনুরোধ অন্যদিকে আরাভ কোন দিকে যাবো আমি।এসব ভাবনার মধ্যেই দরজায় টোকা পড়লো আমার…..একটা প্যাকেট হাতে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলেন আরাভ।উনাকে দেখে চমকে উঠেছি আমি।এখানে এখন উনি কিন্তু কেন…?আর হাতে!হাতে ওটা কি…?চুপিচুপি আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন উনি।উনাকে দেখে জমে গেছি আমি।আজ আবার কি করতে এসেছেন উনি….!!আমাকে অবাক করে হাতে থাকা প্যাকেট টি এগিয়ে দিলেন আমার দিকে।
.
এটা রাখো এখানে তোমার জন্য একটা গিফট আছে।
.
অবাক হয়ে গিফট!!
.
হুম!!
আমাকে আপনি হঠাৎ গিফট দিচ্ছেন কেন..?
.
গিফট মানুষ মানুষকে হঠাৎই দেয়।হঠাৎ তোমাকে কিছু দিতে ইচ্ছে হলো তাই দিলাম।এবার এটা বলো না আমার দেওয়া গিফট তুমি নিতে পারবে না।কেউ কিছু দিলে ফেরত দিতে নেই যত্ন সহকারে নিজের কাছে রাখতে হয়।আর একটা রিকুয়েষ্ট রিদির বাসায় যাওয়ার আগে এটা খুলে দেখ প্লিজ!বলে হনহন করে বেড়িয়ে গেলেন উনি।আমাকে গিফট!তাও রিদির বাসায় যাওয়ার আগে যেন খুলি!আচ্ছা কি আছে এই প্যাকেটে….!!
.
.
.
#চলবে…….