#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_13
.
.
🥀এই চুপ!!একদম চুপ!!
.
কথাগুলো কানেই যাচ্ছে না আমার।ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা।এখন কি কারো কথা কানে যাওয়ার সময় নাকি!
.
এ তো থামবেই না!উফফ!!এখন পুরো বাসার লোক জেগে যাবে।তাই ধমকের সুরে বলে উঠলাম আমি….চুপ করো!!এবারও কোনো কাজ হলো না ষাঁড়ের মতো চেঁচিয়েই যাচ্ছে।উফ!এই মেয়ে এত ভীতু কেন…?কোনো উপায় না পেয়ে একহাতে ওর মুখ চেপে ধরলাম আমি।
.
হঠাৎ কেউ মুখ চেপে ধরায় চোখ খুলে তাকালাম আমি।এ কি আআ….আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে….এই তুমি এত ভীতু কেন…?এইটুকু তেই এভাবে চেঁচালে।মাই গড!কানে আঙ্গুল ঢুকাতে ঢুকাতে আমার কানের পোকা মরে গেছে।
.
চেঁচাবো না!!আপনি এমন বেয়াক্কল মার্কা কাজ করবেন আর আমি ভয় পেলেই ভীতু!কে বলেছিলো এই শেষ রাতে নিজেকে সাদা কাপড়ে আবৃত করে সামনে আসতে আমার।আমি তো তাও একটু ভয় পেয়েছি।আমার জায়গায় আপনি থাকলে এর থেকে বেশি ভয় পেতেন।
.
ভয় আর আমি হাহা!!আমি তোমার মতো ভীতু নই।এরকম দশ-বারোটা ভূত আসলেও সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহস আছে আমার।
.
হুহ আপনি যে কতটা সাহসী সেটা আমি জানি!!
.
হুম!জানা থাকলেই ভালো!আচ্ছা এত রাতে এখানে কি করছো…?স্পেশাল কারোর কথা ভাবছিলে বুঝি নাকি দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার কথা ছিলো কোনটা…?
..
উনার এই ফালতু কথাগুলো শুনতে একদম ইচ্ছুক নই আমি।তাই চুপচাপ ছাদ থেকে নামার উদ্দেশ্যে ঘুরে দাঁড়ালাম।
.
কি হলো চলে যাচ্ছ যে…?বললে না!
.
তেমন কিছু নয়!ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো তাই!আচ্ছা আপনি এত রাতে এখানে…?
.
আমি!আমি তো এখনও ঘুমাই নি।নিচে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম।হঠাৎ তোমার ছায়া আমার সামনে পড়লো চেয়ে দেখলাম তুমি দাঁড়িয়ে আছো তাই ভাবলাম একটু ভয় দেখাই।আচ্ছা তুমি কাঁদছিলে কেন…?
.
আমার কান্নাও দেখেছেন উনি।তার মানে আমি ভুল ছিলাম না তখন উনিই ছিলেন।আমতা আমতা করে ককই ননা তো!
.
আমি স্পষ্ট দেখেছি তুমি কাঁদছিলে!!সো মিথ্যা বলো না।কেন কাঁদছিলে বলো না…?আর না ঘুমালে শরীর খারাপ করবে।সো যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
.
আপনাকে বুঝানোর সাধ্য কোনোকালেই ছিলো না আমার।সেদিনও ছিলো না আর আজও নেই।”বিয়ে”!আমার সাথে বিয়ে হয়েছিলো আপনার।সেটা যেভাবেই হোক হয়েছিলো তো।কিন্তু মেনে নিতে পারেন নি আপনি।নিজেকে খুব মহৎ ভাবেন তাই আমাকে ফিরিয়ে দিলেন।।যখন ভাবার কথা ছিলো তখন ভাবেন নি তাহলে এখন কেন আমার ব্যাপারে ভাবছেন।ভাবতে হবে না!তাছাড়া এখন নতুন করে জীবনও শুরু করেছেন তাহলে!এত দরদ দেখানোর কোনো মানে হয় না!চোখ মুখ কঠিন করে বলে উঠলাম…..আমার কাঁদতে ইচ্ছে করেছিলো তাই কেঁদেছি।জেগে থাকতে ইচ্ছে করছে তাই রাত জাগছি তাতে আপনার কি!আমার শরীর ভালো থাকলেও আমার না থাকলেও আমার।এটা নিয়ে আপনাকে ভাবার প্রয়োজন নেই।শুনুন আমার ব্যাপারে এত নাগ গলাবেন না।ওয়েল ইউর ওউন মেশিন।
.
বাবা রে বাবা!!মেয়েটা ক্ষেপে গেলো কেন..?কি এমন বললাম যে এত রাগ দেখাচ্ছে।তুমি এত রেগে যাচ্ছ কেন…?আমি তো তোমার ভালোর জন্যই বললাম।
.
আমার ভালো আমাকেই বুঝতে দিন।অনেক তো ভালো করেছেন,ভালো চেয়েছেন আর নাই বা করলেন ভালো।
.
আমার কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন উনি।প্যান্টের পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে ধীর কন্ঠে বললেন….তুমি এখনও আমাকে ক্ষমা করতে পারো নি তাই না মেহরীমা।
.
জানি কথাটা খুব গায়ে লেগেছে উনার।সেই এর থেকে বেশি বুঝার ক্ষমতা নেই আপনার।ক্ষমা করতে পারোনি হুহ!লোকটাকে এখন ছাদ থেকে লাথি দিয়ে ফেলে দিতে ইচ্ছা করছে আমার।যদি সম্ভব হতো তাহলে এটা ঠিক করতাম আমি।কিন্তু না কিছু করার নেই।
.
মেহরীমা!বললে না তো!!
.
দম আটকে যাচ্ছে আমার।ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি।কিন্তু নিজপর এই অসহায়ত্ব কিছুতেই আপনার সামনে প্রকাশ করবো না আমি।এখন কথা বাড়াতেও ইচ্ছে নেই।ক্ষমা সেটা তো সেই কবেই করে দিয়েছি।আপনার সাথে থাকতে থাকতে আপনাকে মেনে নিয়েছিলাম আমি।আপনাকে ভালোওবেসে ফেলেছিলাম।কিন্তু আপনি!আপনি তা পারেন নি।আপনি বুঝতে পারছেন না আপনার উপর অভিমান জমেছে,রাগ করেছি এর থেকে বেশি কিছু নয়।ওয়াইফ হিসেবে আমি জি এইটুকুও করতে পারিনা।।আচ্ছা আপনি কি কখনও বুঝবেন না আমায়।সেদিনও বুঝেন নি,আজও বুঝছেন না আর হয়তো ভবিষ্যতেও পারবেন না।উনার চোখে অসহায়ত্ব ফুটে আছে।ওই চোখে বেশিক্ষণ তাকানোর সাহস নেই আমার।আচ্ছা আসছি আমি।
.
এড়িয়ে যাচ্ছ…?
.
নাহ্!!অনেক আগেই তো বলেছি আপনাকে মন থেকে ক্ষমা করে দিয়েছি আমি।তাও বারবার এই কথাটা টানেন কেন…?এখন আমি আসি এই রাতের বেলায় যদি কেউ দেখে তাহলে উল্টা পাল্টা ভাববে।
.
কথাটা টানতাম না!!কিন্তু তোমার ব্যবহার বাধ্য করে।
.
আমার ব্যবহার!!আমি আবার কি করলাম।
.
নাহ্ কিছু না!!যাও ঘুমিয়ে পড়ো ভোর হয়ে যাচ্ছে।ছাদ থেকে নেমে গেলো মেহরীমা আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।জীবনটা বড়ই অদ্ভুদ!
.
.
.
সকাল বারোটায় ঘুম ভাঙ্গলো আমার।তাও আবার রিদির গুতাগুতি আর বকবকানির জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে অনিচ্ছা থাকা স্বত্বেও বিছানা ছাড়তে হলো আমায়।আমি ঘুমে এটা যেন সহ্য হচ্ছিলো না মেয়েটার।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হলাম আমি।আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে নাদিরা আর আরাভ।আমাকে দেখেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হাসতে শুরু করলো দুজনে,হাসছে তো হাসছেই থামার নামই নেই।আচমকা এমন হওয়ায় বোকা বনে গেলাম আমি।বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে আছি ওদের দিকে।একেবারে সামনে গিয়ে নাদিরাকে উদ্দেশ্য করে…..
.
কি হয়েছে এভাবে হাসছো কেন তুমি…?
.
হাসবো না!বলে আবারও হাসতে লাগলো মেয়েটি।মুখ চেপে আরাভও হাসছে। কিন্তু এদের হাসির কারণ বোধগম্য নয় আমার কাছে।আচ্ছা আপনাদের হাসির কারণ কি আমি…?
.
অভিয়াসলি বউমণি তুমি!!
.
অবাক হয়ে আমি!!আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠলেন উনি…..
নাদিরা আজকাল প্লাজু অরণা হিসাবে ব্যবহার হয় কই জানতাম না তো!আচ্ছা এটা তোদের নিউ স্টাইল নাকি!
.
উনার কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো আমার।কিসব ফালতু কথা বলছেন।প্লাজু অরণা হিসাবে ব্যবহার হয় পাগল নাকি!!
.
বউমণি একটু নিজের দিকে তাকাও বলে আবারও খিলখিল করে হাসতে লাগলো!
.
কেন কি হ…..নিজের দিকে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম আমি।ছিঃ ছিঃ এ আমি কি করেছি।অরনার জায়গায় প্লাজু পড়ে এসেছি।এখন নিজেকে ড্রেনের পানিতে চুবিয়ে মারতে ইচ্ছে করছে আমার।উনার বলা কথাটা কানে বাজছে। “এত কেয়ারলেস কেন তুমি”…?সত্যি এত কেয়ারলেস কেন আমি….!!চারিদিক তাকিয়ে চোরের মতো দিলাম এক দৌড় আমাকে আর কে পায়।কি সাংঘাতিক কান্ড!প্লাজু ছিঃ!
.
সব মেয়েকেই পার্লারে সাজতে হবে আজ।কোনো মতে পালানো চলবে না।রিদি আজকে আমায় ছাড়বে না।বিকেলে পার্লারে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছি।আমাদের জন্য আরাভের গাড়িটাই বরাদ্দ।ওটা দিয়েই যেতে হবে।কিন্তু ওই রাক্ষস টার সাথে যাবো না আমি।কিন্তু আজকে আমায় যেতেই হবে না গেলে চলবে না।রিদি নাদিরা গাড়ীতে উঠে বসে পড়েছে।পেছনের সিট ফুল সেই সামনে রাক্ষসের সামনে বসতে হবে আমায়।আমি পেঁচার মতো মুখে করে দাঁড়িয়ে আছি। তখনই আহান আসলো।
.
আরে তোমরা সবাই সাজতে যাচ্ছ বুঝি…?আমাকে উদ্দেশ্য করে তুমিও যাচ্ছ নাকি…?
.
প্রশ্নের উওরে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম আমি।
.
ওহ!!তা গাড়ীতে দেখছি জায়গা নেই।চলো তোমাকে আমি বাইক দিয়ে পৌঁছে দিই।
.
আমি কিছু বলার আগেই পেছন থেকে বলে উঠলেন উনি…..কাউকে কিচ্ছু করতে হবে না।ওর জন্য যথেষ্ট জায়গা খালি আছে।মেহরীমা গাড়ীতে উঠে বস হারি আপ!!
.
আসলে সামনে বসলে আমার গা গুলোয়।আমি অসুস্থ ফিল করি।তাই বলছিলাম রিদি তোরা চলে যা আমি উনার সাথেই বাইকে আসছি।
.
কি বলছিস আমরা তোকে ছাড়া যাবো। না না! এটা হবে না!!
.
বউমণি আমি সামনে বসছি তুমি পেছনে এসো।
.
আমার কথা শুনে সাপের মতো ফুঁস করে উঠলেন উনি….দাঁতে দাঁত চেপে বললেন…. কাউকে কোথাও যেতে হবে না।অসুস্থ হলে ডক্টর দেখাবো চলো।তাড়াতাড়ি গাড়ী তে উঠো সিট বেল্ট পড়ে নাও।আহান আঙ্গেল একা মানুষ উনাকে হেল্প করো।মেহরীমার জন্য আমি আছি।আমি থাকতে ওর কারোর হেল্পের প্রয়োজন পড়বে না।
.
বাধ্য মেয়ের মতো সত্যি সত্যি গাড়ীতে উঠে বসলাম আমি।উনার মুখই বলে দিচ্ছে কতটা রেগে আছেন উনি।আহানের সাথে কিছুতেই যেতাম না শুধুমাত্র উনাকে রাগানোই ছিলো মেইন উদ্দেশ্য আমার আর সেটাতে সাকসেস আমি।আপনি রীমা মাথায় নিয়ে সারাদিন ঘুরলে সমস্যা নাই আর আমি ছেলেদের সাথে কথা বললেই দোষ হুহ!পুরো গাড়ীতে টু শব্দটিও করিনি আমি।উনিও রেগে ফায়ার হয়ে আছেন বিধায় কথা বলেন নি।জানালার গ্লাস নামিয়ে মুখ গুড়িয়ে বসে আছি আমি।বাইরে মনোরম দৃশ্য সামনে হালকা বাতাস আহা!কি মনোমুগ্ধকর পবিবেশ।রিদি আর নাদিরা পুরোটা সময় বকবক করেই পার করে দিয়েছে।কিছুক্ষণেই পৌঁছে গেলাম পার্লারে।রিদি আর নাদিরা চলে গেলো ভিতরে।আমিও নেমে ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম…..
.
আহানের সাথে ঘোরাঘুরির খুব শখ তোমার তাই না…?হাতের উপরে হাত ভাঁজ করে সামনে দাঁড়ালেন আমার।
.
উনার কথার প্রতিওোরে কোনো জবাব দিলাম না আমি।এমন ভাব করলাম যেন কথাটা কানেই আসেনি আমার।
.
কি হলো আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তোমায়…?
.
এসব ফালতু কথার উওর দেওয়ার কোনো ইন্টারেস্ট আমার নাই।
.
চোখে মুখে কঠিন ভাব ফুটিয়ে চোয়াল শক্ত করে তোমার এই সিরিয়াস কথাকে ফালতু মনে হচ্ছে…!!তুমি বুঝ কোনটা ফালতু আর কোনটা ইম্পর্ট্যান্ট!
.
নাহ!!বুঝি না।এসব বুঝা আমার কম্যও নয়।ওগুলো আপনার মতো জ্ঞানী-গুণীরা বুঝবে।
.
তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন…?ভালোভাবে কথা বলতে পারে না।সবার সাথে খুব তো হেঁসে হেঁসে কথা বলো।আর আমার বেলায়ই যত রাগ,ইগনোর তোমার।কেন বলতে পারো…?
.
কই না তো!!আপনার উপর কোনো রাগ নেই আমার।সকলের সাথে যেভাবে কথা বলি আপনার সাথেও সেভাবে বলি।সে যাইহোক আর এই কাক ফাঁটা রোদের মধ্যে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না আমার আসছি বলে ভেতরে চলে গেলো মেহরীমা…..মেয়েটা বার বার অবাক করে আমায়।আচ্ছা কাল রাত থেকে একটু বেশিই রাগ দেখাচ্ছে না।যখন থেকে “রীমা” নামটা লিখেছি।তার মানে কি আমাকে ভালোবাসে ও।এরজন্য জেলাস ফিল করছে।এই প্রথম কারোর মন বুঝার চেষ্টা চালাচ্ছি।আচ্ছা যদি ভালোই বাসে তাহলে এত রাগ দেখায় কেন…?উল্টা পাল্টা ছাড়া সোজাসাপ্টা কথা বলে না।সত্যিই কি ভালোবাসে আমায় নাকি সবটাই আমার বুঝার ভুল…..!!
.
.
#চলবে…..