তোমায় ঘিরে পর্ব-০৩

0
1558

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_3
.
.
🥀
ড্রয়িংরুম থেকে সিঁড়ি ধরে উপরের রুমের দিকে এগুচ্ছি আমি!কোথাও মানুষের চিটে ফুটোও নেই।পুরো বাড়ী একেবারে নিস্তব্ধপুরী।জনমানবহীন প্রায় শূন্য।রামীম নামের ছেলেটা কাজী সাহেবকে নিয়ে সেই যে গেছে আর ফিরেনি,হয়তো ফিরবেও না।লোকটা উনার বন্ধু সম্ভবত এখানে থাকে না।হাঁটতে হাঁটতে একটা রুমের সামনে দাঁড়ালাম আমি।ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখলাম ওই দানবটা ভিতরে।হয়তো সদ্য শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়েছেন উনি।বুকের বা পাশে লোমের ফাঁকে ফাঁকে পানির ফোটা এখনও আটকে আছে।উনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সামনের রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম আমি।কিছুক্ষণেই ঘুম ধরা দিলো আমার চোখে।
.
সকালে পানির ঝাপ্টা পেয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠলাম আমি।সামনে লৌহমানবকে দেখে অবাক আমি।উনার চোখ দুটো দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছেন উনি।কিন্তু রাগের কারণ টা বোধগম্য নয় আমার কাছে। আমি প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছি উনার পানে।
.
এই মেয়ে এতবেলা পর্যন্ত কেউ ঘুমায় নাকি…?আমার ব্রেকফাস্ট রেডি করবে কে..?১০ মিনিটে আমার খাবার রেডি করা চাই।
.
উনার কথা শুনে রাগে গা পিওি জ্বলে যাচ্ছে আমার। ঝাঁজালো কন্ঠে বলে উঠলাম…. আমি কি আপনার কাজের লোক নাকি যে আমি আপনার খাবার রেডি করবো।আমি রান্না জানিনা।নিজের খাবার নিজে রেডি করুন আমি পারবো না।
.
হোয়াট!বলে আমার হাত ধরে বিছানা থেকে উঠালেন আমায়।এত তর্ক না করে যা বলছি সেটা করো।আচ্ছা ওয়েট বলে চোখ বুজে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিলেন উনি।কিছুক্ষণ পর আলমারি খুলে একটা ড্রেস বের করে হাতে ধরিয়ে দিলেন আমার।যাও এইটা পাল্টে এটা পড়ে এসো।আর ওখানে তোমার প্রয়োজনীয় সবকিছু রাখা আছে।শাড়ী থেকে শুরু করে এভরিথিং।কোনোকিছুর ঘাটতি নেই।আচ্ছা এত ভারী বেনারসি পরে কাল ঘুমালে কি করে আশ্চর্য বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন উনি।
.
উনার ব্যবহারে শকড আমি।প্রথমে এত রুড বিহেভ তারপর এত ভালো ব্যাটায় করে কি!ওয় নিজে কি জানে!হালা সাইকো!ইচ্ছে করছিলো পেছন থেকে গলা আটকে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলি।কিন্তু পারলাম না!!
.
অনেক্ক্ষণ হলো ব্রেকফাস্ট রেডি করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছি আমি।আম্মুকে কাজে হেল্প করতাম সেই সুবাদে রান্না কিছুটা আয়ও করতে পেরেছি।কিন্তু উনার আসার নাম গন্ধও নেই।এদিকে আমার পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।কাল থেকে কিছু খাইনি আমি।নিজের ক্ষিধে সহ্য হচ্ছে না বলে রান্না করেছি নইলে কে তোর অর্ডার শুনতো।হঠাৎ কলিংবেল চেঁচিয়ে উঠলো “টিন টিন”!আমি যেভাবে ছিলাম সেভাবেই বসে আছি।নো নড়িং নো ছড়িং।কন্টিনিউয়াসলি বেজেই চলেছে ধ্যাৎ ভাল্লাগেনা।একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে দিলাম আমি।দরজা খুলতেই সেই শ্যামলা মেয়েটা হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকলো।নিজের ৩২ দাঁত বের করে হে হে করে হেসে বলে উঠলো….ভাবি কেমন আছেন..?
.
লোকটার কথা শুনে সবকয়টা দাঁত ভেঙ্গে দিতে ইচ্ছে করছে আমার।সাথে ” ভাবি” শব্দটা বড্ড বেমানান।আমি কোনোকথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি তখনই পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো…..
.
কিরে রামীম তুই এত সকালে…?এনি প্রবলেম..?
.
না দোস্ত সব ঠিক আছে!ভাবিকে দেখতে আসলাম আসলে কাল সেভাবে দেখা হয়নি তো তাই ভাবলাম আজ দেখে আসি।কিন্তু এখানে এসে কে জানতো আমাকে কেউ পাওাই দিবে না।
.
মানে!
.
আরে ভাবি তে কোনো কথাই বলছে না।
.
আরে আপনি সেই কখন থেকে কি “ভাবি ভাবি” বলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করছেন।আমি কারোর ভাবি টাবি কিচ্ছু না।যেই বিয়েই মানিনা সেই সম্পর্কের কি কোনো ভিওি আছে।নেই তো তাহলে এত ভাবি ভাবি করার কি কোনো প্রয়োজন আছে…?
.
আরে ভাবি রাগছেন কেন…? আপনি মানেন আর নাই বা মানেন আপনিই আমাদের ভাবি।
.
আমাকে উনি ব্ল্যাকমেইল করেছেন বিধায় এখানে আছি নাহলে কবেই পালিয়ে যেতাম।
.
আচ্ছা রামীম তুই এর সাথে এত কথা কেন বলছিস।ভাবি ডাকতে মানা করেছে খালাম্মা ডাকিস খুশী হয়ে যাবে।উনার কথা শুনে দাঁত চেপে হাসছে রামীম ভাইয়া।সেটা দেখে রাগে ফুসছি আমি।
.
আপনি…..আমাকে থামিয়ে রামীম এসেছিস যখন তখন খেয়ে যা।চল খুব ক্ষিধে পেয়েছে বলেই টেবিলে খেতে বসলেন উনি।কিছুক্ষণ পর রামীম নামের ছেলেটা বলে উঠলো….
.
ভাবি আপনি খেয়েছেন…?না খেলে আমাদের সাথে বসে পড়ুন।
.
আমি কিছু বলার আগেই বলে উঠলেন উনি….এখন কি খাওয়ার সময় নাকি।আগে আমরা খাব তারপর যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে ও খাবে।আমার খাওয়া কমপ্লিট!এই যে ব্রেকফাস্ট ভালোই হয়েছে।আমার বাসার আয়াকে ছাড়িয়ে এবার ভাবছি কাজটা তোমাকেই দিয়ে দেব।আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই রামীমকে নিয়ে চলে গেলেন উনি।মানুষ এতটা পাষাণ কি করে হয়।গতকাল থেকে আজ অবধি কিছু খাইনি সেটা জানার পরও এইগুলো বললো ছিহ!
.
দুপুরের রান্না করতে যাবো তখনই কলিংবেলটা বেজে উঠলো।ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে মধ্য বয়সী একজন মহিলা প্রবেশ করলো।তিনি ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে নিজের পরিচয় দিলেন।
.
আমি রহিমা এই বাড়ীর কাজের লোক।স্যারে কাল না করছিলো আইতে তাই আসি নাই।আইজ কল দিয়া কইলো তোমার ভাবিসাব একা বাসায় আর রান্না করা লাগবো তুমি যাও।তাই মুই চইল্লা আইছি।উনাকে ভিতরে ঢুকিয়ে কিচেনে হেল্প করতে হবে কিনা জিজ্ঞেস করলে উনি মানা করে দিলেন তাই নিজের রুমে চলে গেলাম আমি।আম্মু আব্বুর খবর নেবো সেই জোঁ নেই।কারণ আমার কাছে কোনো ফোনই নেই।আর এই বাড়ীতেও ল্যান লাইনের ব্যবস্থা নেই কেন নেই সেটাও জানিনা।তাই শুয়ে পড়লাম আমি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে ড্রয়িংরুমের উদ্দেশ্যে গেলাম আমি অন্যমনস্ক হওয়ায় পা স্লিপ করে সিঁড়ি থেকে পড়ে যাচ্ছিলাম তখনই কেউ কোমড় জড়িয়ে ধরলো আমায়।আমিও নিজেকে বাঁচাতে তার শার্ট খামছে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি।সামনে থাকা লোকটি কে হতে পারে সেটা ভাবার হুশই নেই আমার।হঠাৎ আমাকে সোজা করে দাঁড় করালো কেউ।সামনে থাকা লোকটার শার্ট ছেড়ে নিজেকে ঠিক করে লোকটার দিকে তাকালাম আমি।ওমা এটা কে…?ডাইনি বুড়ীর গল্পের সেই রাক্ষুস আরাভ।
.
এই তুমি দেখে হাঁটতে পারো না।দাঁত কটমট করে এখন যদি পড়ে যেতে তাহলে কি হতো বুঝতে পারছো তুমি।এই অবস্থায় কেউ এত বেখালি হয়ে হাঁটে৷ !!
.
আরে পড়ে গেলে কি হতো মানে!একটু হাত পা ছিলতো মাথা ফাটতো এর থেকে তো বেশি কিছু নয়।আর যা হতো আমার হতো কষ্ট হলে আমার হতো তাতে আপনার কি…?
.
তোমার কষ্ট হলে আমার কিচ্ছু নয়।আরে তুমি বাঁচলে নাকি মরলে তাতে কিচ্ছু যায় আসে না আমার।
.
তাহলে এতগুলো কথা শোনাচ্ছেন কেন…?আমিও তো সেটাই বলি আমাকে আটকালেন কেন..?পড়লে পড়তাম মরলে মরতাম।চোখের পানি ফেলে মরলে মরে যেতাম,আমার কাছে।এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরাই উওম।
.
তুমি মরে গেলে তো কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু তোমার সাথে জড়িয়ে আছে এই বাড়ীর বংশধর।ওর কিছু হলে আমি টলারেট করবো না।
.
উনার কথাগুলো মাথার উপর দিয়ে গেলো।শেষের কথাটা বারবার কানে বাজছে আমার”ওর কিছু হলে আমি টলারেট করবো না।বংশধর!হাউ ফানি।
.
কিহ!একটা অনাগত বাচ্চাকে নিয়ে তুমি মজা করছো।এই বাচ্চাটার প্রতি বিন্দুমাএ ভালোবাসা নেই তোমার।এই তুমি না মা!মা হয়ে সন্তানের ক্ষতি কি করে চাইছো।
.
আরে কি বলছেন আপনি!বাচ্চা,সন্তান মা আপনার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি।কার বাচ্চা!কিসের বাচ্চা!
.
মজা করছো আমার সাথে!তুমি অস্বীকার করতে পারো তুমি প্রেগন্যান্ট নও…?আর কদিন পরেই তোমার কোলে বাচ্চা আসতে চলেছে।
.
উনার কথা শুনে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো আমার।আপনাআপনি হাত চলে গেলো পেটে।পেটে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছি আমি।আমার হাত অনুসরণ করে পেট বরাবর তাকিয়ে আছেন উনিও।উনার তাকানো দেখে তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে উওেজিত কন্ঠে বলে উঠলাম আমি…..
.
কি যা তা বলছেন…!!একবার বলছেন আমি আপনাকে ভালোবাসি।আরেকবার বলছেন আমি বাচ্চার মা হতে চলেছি।এই আপনি এত মিথ্যা বলে হাঁপিয়ে উঠেন না।মনে হয় না এত মিথ্যা আল্লাহ সইবে না।
.
আমি মিথ্যা বলছি!হায়রে ড্রামা কুইন।এত ড্রামা কি করে করো তুমি।দুই+এক মাস বর্তমানে তুমি প্রায় তিন মাসের প্রেগন্যান্ট আর এখন তুমি না করছো।কেন করছো বলতো আর কদিন পর সত্যি টা লুকাতে পারবে,পারবে না তো!কারণ তখন তোমার শরীরেই প্রেগন্যান্সির সেই চিন্হগুলো ফুটে উঠবে।
.
এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন…!!জোর করে বিয়ে করলেন এখন কি জোর করে প্রেগন্যান্টও বানিয়ে দেবেন আজব!আরে যান তো ফালতু বকবেন না ভাল্লাগেনা!
.
আমি ফালতু বকছি!ঠিক আছে আমার সাথে চলো বলে উনার রুমের বিছানায় ছুড়ে মারলেন আমায়।আলমারি খুলে তন্নতন্ন করে কি যেন খুঁজে চলেছেন উনি….হঠাৎ একটা পেপার আমার হাতে ধরিয়ে ডেবিল স্মাইল দিলেন উনি।এবার বলো কে মিথ্যাবাদী,তুমি না আমি।পেপারটা হাতে নিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো আমার।এটা কি করে হলো…!!আমি প্রেগন্যান্ট আর আমি নিজেই জানিনা।হাউ ইজ পসিবল!
.
.
#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে