#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#part:5
#Suraiya_Aayat
সকালবেলা আরু আর ওর মাকে বাড়ি ফেরানোর জন্য ওর আব্বু গাড়ি পাঠিয়ে ছিলেন তবে গাড়ির ড্রাইভারকে একাই ফিরে যেতে হয় , উনি ওদের দুজনকে নিয়ে যেতে পারেননি তার একমাত্র কারণ হলো আরুর মা সঙ্গে সঙ্গে ওনার স্বামী কে ফোন করে বললেন,,,,,,
__” একটা বেলার তো ব্যাপার , তুমি একটু অফিসে গিয়ে খেয়ে নাও প্লিজ, আমি কি সব সময় ওর বাড়িতে এসে থাকি বলো!”
কথাগুলি উনি এত আদুরে কণ্ঠে বললেন যে আরমান সাহেব আর না করতে পারলেন না , বরাবরই এমনটা করেই ওনাকে মানান কোনকিছুর উদ্দেশ্যে ৷ বয়স বাড়লেও স্বভাবগুলো বাচ্চাদের মতই ৷ তিনিও আর না করতে পারলেন না , ওনাকে মানতে হলো হাসিমুখে ৷ বউয়ের কথার ওপর উনি কোন কথা বলতে পারেন না, তার মানে এটা নয় যে উনি ভয় পান, উনি ভালোবাসাকে গুরুত্ব দেন তাই কোন ভালো কাজৈ মানা করেন না ৷
__”আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো আর তুমিও ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করো ৷”
__”আমার আরু মা কেউ নিয়ে আসবে, ও যেন আবার থেকে না যায় , নাহলে কিন্তু আমি নিজেই নিতে চলে যাবো ৷”
__” তোমার মেয়ে কোন দিন কোথায় গিয়ে থেকেছে তুমি বলো ! কালকে অনেক কষ্ট করে আমি রাখতে পেরেছি এটাই আমার কপাল ৷ না জানি বিয়ে হয়ে গেলে শ্বশুরবাড়ি কেমন করে থাকবে !”
আরূ এসে বলল,,,,,
__”হ্যাঁ এখন তো এই সমস্ত কথাই বলবে, বিয়ে দেওয়ার তো তাড়া লেগে গেছে তাইনা ! আমি তো এখন বিরাট কি বোঝা হয়ে গেছি না তোমাদের কাছে, ভালো ভালো আমিও যেদিন চাকরি পাব সেদিন আমিও একা একাই থাকবো , তখন দেখো কেমন লাগে ৷”
__” এই দেখো আমার আরূ মা রাগ করছে ৷”
আরূ আর কিছু না বলে চলে গেল ,,,
_,”এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি আর পারিনা, কথার আগামাথা না জেনেই কি বলে নিজেও জানেনা ৷”
__”আরমান সাহেব হো হো করে হেসে বললেন এখনো তো ও বাচ্চা এসব কিছুই বোঝেনা ৷”
__”সেটাইতো সমস্যা আমরা সবকিছু সহ্য করছি বলে আরিশ ও যে সবটা মুখ বুজে সব সহ্য করবে তা কিন্তু নয় ৷”
__”হমম ,সেটাই ৷”
__”শোনো না, আমি অনিকা কে বলেছি ওদের বিয়ের কথাটা ৷”
__” কি বললো অনিকা আপা?”
__”ও তো রাজি কিন্ত ও আরিশকে নিয়ে ভয় পাচ্ছে, আরিশকে এখনো কিছু জানাইনি ও ৷”
__” আমাদের কি তাহলে সামনা সামনি কথা বলা উচিত?”
__” আরু কি রাজি হবে?”
__” ওরা পরস্পরের সাথে কথা বললে আমার মনে হয় ওরা না করতে পারবে না ৷”
__” তা ঠিক, তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা হলেই ভালো হয় ৷ অনিকা বড্ড তাড়া দিচ্ছে আমাকে ৷ ওর ও আরিশকে নিয়ে চিন্তা হয় আর ছেলেটা একা না জানি কেমন ছন্নছাড়ার মতো থাকে, আরু ওর জীবনে গেলে ও ওর জিবনটাকে গুছিয়ে নেবে আর আরূ ও সবকিছু বুঝবে আশাকরি ৷”
__” আচ্ছা দেখছি কি করা যাই ৷”
❤
আরু আর সানা দুজনেই ক্যাম্পাসের মাঠদিয়ে হাঁটছে আর দুজনই চুপচাপ আছে কেউ কোনো কথা বলছে না ৷ আজকে আরুকে চুপচাপ দেখে সানাও আর কিছু বলল না , ওকে কিছু বললে হয়তো আবার বকবক করা শুরু করে দেবে…
কালকে ওত রাত্রে আরিশ কোথায় বেরিয়ে গেছিল তাড়াহুড়ো করে তা নিয়ে আরুর মনে অনেক কৌতুহল রয়েছে , ওর অনিচ্ছা সত্ত্বেও খুব জানতে ইচ্ছা করছে ৷ আর একটা কথায় মনে আসছে বারবার যে ফোনটা না আসলে গানটা হয়তো আরো কিছুক্ষণ চলত , আরো কিছুক্ষন গানটা শোনার সৌভাগ্য হতে পারতো ওর ৷
কথাটা সরাসরি সানাকে আরূ বলতে পারছে না বললে তাহলে হয়তো সানা অন্যকিছু ভেবে বসবে যা আরূ একদমই চায়না ৷
আরূ একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বলল,,,,,
__” সানা কালকে রাত্রে আমি যখন তোর রুমে ঘুমাতে চলে আসলাম তারপরে গাড়ির আওয়াজ শুনলাম ৷ আঙ্কেল কি এত রাত্রে কোথাও গেছিলেন?”
সানা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,,,,,,
__” আব্বু কোথাও যায়নি , আব্বু বাসায় ছিল তবে ভাইয়া গেছিল ৷”
সঙ্গে সঙ্গে আরূ উত্তর দিল,,,,,
__” এত রাত্রে কোথায় গেছিলেন হঠাৎ?”
__”ভাইয়া ধানমন্ডির বাসায় থাকে সেই বাসায় প্রান্ত ভাইয়া ও থাকে ৷ প্রান্ত ভাইয়ার মা খুব অসুস্থ তাই ওনাকে হসপিটালে এডমিট করতে হতো আর প্রান্ত ভাই উনার আম্মুর সাথে থাকেন সেই কারণেই ভাইয়া তাড়াহুড়ো করে গেল ৷
__”কেন ওনার আব্বু কি মারা গেছেন?”
__”না ঠিক তেমনটা নয়, তবে প্রান্ত ভাইয়ের আব্বু উনার মায়ের উপর খুব অত্যাচার করতেন বলে প্রান্ত ভাইয়া ওনার মাকে নিয়ে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারপর থেকে ওনাদের সংসারের যাবতীয় খরচ বহন করে আরিশ ভাইয়া ৷ আর সব থেকে বড় কথা কি জানিস আজ পর্যন্ত ভাইয়া ওর নিজের হাত খরচা বাবদ যাবতীয় টাকা কোন কিছুই আব্বুর কাছ থেকে নেই না ,সমস্তটা নিজের টাকায় চালাই৷”
আরূ কথাগুলো শুনল , কিছু বলছে না , তবে নিজের মনে মনে অবাক লাগল খুব….
হঠাৎ করে সানা বলে উঠলো,,,,,,
__” আরূ ওই তো ওখানে ভাইয়া , তুই কি যাবি ?আমি যাচ্ছি, আমি একটু ভাইয়ার কাছ থেকে জেনে আসি যে আণ্টি কেমন আছেন!”
আরূ কিছু একটা ভেবে বলল,,,,,
__” আচ্ছা চল আমিও যাচ্ছি ৷”
ওরা দুজন আরিশেরর কাছে গেলে, সেখানে তূর্য কে দেখে আরূর মাথাটা গরম হয়ে গেল এমন একটা পরিস্থিতিতে আরূ কিছু বলতে চাইছে না তাই ওদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়াল ৷
আরিশ আরুর দিকে এক নজর তাঁকিয়ে সানার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেল ৷
সানা আরিশের সাথে কথা বলছে আর আরিশ মাঝে মাঝে আরুর দিকে তাকাচ্ছে, দুজনে চোখাচোখি হতেই আরু চোখ সরিয়ে নিচ্ছে বারবার….
সাহেল: দোস্ত চল এবার এক কাপ কফি খেয়ে আসি, মাথাটা ধরেছে খুব ৷
তূর্য: আমারও এমনিতেও খুব খিদে পেয়েছে , তাহলে কিছু খেয়ে আসি নাহলে আমি এখানেই উল্টাইয়া যাব , তারপরে আবার আণ্টিকেও তো দেখতে যেতে হবে ৷
আরিশ পকেট থেকে রুমাল টা বার করে কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো মুছে নিয়ে ওদের সামনে যাওয়ার জন্য ইশারা করলো ৷
ওরা চলে গেল, সানার আর আরু দাড়িয়ে আছে আরিশের সামনে ৷ আরিশ পকেটে হাত রেখে ওদেরকে চলে যাওয়ার জন্য ইশারা করলো, তাতে আরূ ভাবল আরিশ হয়তো ওর সাথে একান্তে ওকে কিছু কথা বলবে তাই সানা যাচ্ছে তবুও আরূ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷
আরিশ আরূকে ইশারা করে বললো,,,,,
__” আর ইউ স্পেশাল টু মি? যে জন্য দাঁড়িয়ে আছো এখনো ৷”
আরিসের কথা শুনে আরূ একটু থতমত খেয়ে গেল, নিজের অবাক হওয়াটা এইমুহূর্তে আটকাতে হবে তাই তেজ দেখিয়ে বললো,,,,,
__” বয়েই গেছে আপনার স্পেশাল মানুষ হতে ৷”বলে চলে গেল,আরিশ কিছু বলছো না ৷ মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে চুলগুলোকে ঠিকঠাক করে নিয়ে এগিয়ে গেল ৷
#চলবে,,,,,