#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:9
#Suraiya_Aayat
আরূ আজকে বেশ দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে, অন্যদিন ওকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হয় সানার জন্য কারণ যতক্ষণে ও ঘুম থেকে উঠে ততক্ষণে সানা কলের পর কল করেই যাই ওকে রেডি হওয়ার জন্য ৷ আর ঘুমের মাঝে বারবার কল আসলে তা অত্যন্ত বিরক্তিকর একটা অনুভূতি সেই কারণে আরোশী নিজের প্রিয় ঘুমের আত্মসম্মান বিসর্জন না দিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে রোজ ৷ রাতে আবার তারাতারি ঘুমিয়ে পড়ে কারণ ও হলো চিরকালের ফাঁকিবাজ,পড়তে বসতে ইচ্ছা করে না ওর ৷ রাতে টিউশন থেকে ফিরে কোনরকম পড়াগুলো একবার চোখ বুলিয়ে ফোন নিয়ে বসে যায় ৷ ওর এসব কাজৈ ওর বাড়ির লোক সকলেই অভ্যস্থ প্রায় ৷ বলতে গেলে ওনারাও হাঁপিয়ে গেছেন এসব দেখে ৷ তবে এসব ব্যাপার যেন আরূ গায়ে মেখে নেয় না খুব একটা……
তবে রেজাল্ট যে খুব খারাপ হয় তেমনটাও নয় , প্রায় 75 কিংবা 78 % চলে আসে তাতেই ও খুশি…
বিছানা থেকে উঠে বসেছে তবে ঘুমটা যেন আজকে এখনো ছাড়ছে না, কালকে রাতেও বেশ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে, ওর আলাদা বাবুসোনা থাকলে তখন হয়তো অন্যরকম কিছু হতো….
কালকের কোনো ঘটনা আরূ ওর মাকে বলে নি, এমনকি আরিস যে ওকে এতটা রাস্তা বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেছে সেটাও বলে নি, বললে হয়তো ওর মা হাজারখানা প্রশ্ন করে বসতো সেই কারনে…..
অন্য দিন যেখানে 15 মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে যায় আজকে আরূ সেখানে আধঘন্টা সময় পার করলো আলসেমি করে,ও জানে যে আজকে প্রথম ক্লাসটা নির্ঘাত মিস করবে তাতে কি ওর প্রিয় ফোনটা তো আছে ওর সাথে……আর আজকে আবার সানা ও যাবে না ৷
আরূ একটা নর্মাল গাউন পরেছে আর সাথে জিন্সের প্যান্ট , স্ট্রেইট চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে যেগুলো কাঁধ ছাড়িয়ে কোমর অব্দি পড়েছে, ঠোটে হালকা গোলাপী রঙের লিপস্টিক আর কানে একটা নরমাল ঝুমকো পরেছে , আর হাতে নীল রঙের কাঁচের চুড়ি পড়েছে, কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে নিচে নেমে এলো ব্রেকফাস্ট করার জন্য…..
ব্রেড এ একবার কামড় দিতেই ওর মায়ের প্রশ্ন ছুটে এলো ওর দিকে,,,,,,
__” কিরে ড্রাইভার বলল তুই নাকি কালকে একা একা হেঁটে বাড়ি এসেছিস, এটা কি সত্যি আরূ ?”
__” হ্যাঁ সত্যি ৷ “(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে )
আরমান সাহেব ধমক দিয়ে বললেন,,,,,
__” এগুলো কি ছেলেখেলা পেয়েছো তুমি , এত রাতে একটা একলা মেয়ে কিভাবে আসলে….”
__”তো কি হয়েছে আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি একা আসতেই পারি এতে কোন প্রবলেম আছে তা আমি দেখছি না ৷”
আরুর মা এবার জোরে ধমক দিয়ে বললেন ,,,,,
__”আজকালকার সমাজ নিয়ে তোর কোন ধারনা আছে যে এসব কথা বলছিস , যদি তোর কোন একটা বিপদ হত তাহলে কি হতো বলতো !”
এদিকে আরমান সাহেব আর এদিকে আরুর মা দুজনে মিলেই সমানতালে আরুকে বকে যাচ্ছে, তাই আরু এবার বাধ্য হয়ে বলল,,,,,
__” আমি একা আসিনি, উনি আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেছে সেফলি ৷”
ওনারা দুজনে অবাক হয়ে একসঙ্গে বললেন,,,,,
__” কে?”
__” কে আবার তোমার প্রিয় কলিজার বান্ধবী আইমিন অনিকা আন্টির ছেলে, কি যেন নাম উনার ? হোয়াটএভার ! আমার জানার কোন ইচ্ছা নেই ৷”
বলে আরিশকে হাজারো বকা দিতে দিতে বেরিয়ে গেল আরু ৷
আরু চলে যেতেই আরুর মা মুচকি মুচকি হাসছেন,,,
__” কিগো কিছু বুঝলে?”
__” আমার তো মনে হচ্ছে এখন ব্যাপারটা আরও সহজ হয়ে গেল ৷”
__” হ্যাঁ তাইতো দেখছি, আমি আজকেই অনিকার বাড়িতে গিয়ে ওকে খবরটা দেব ৷”
আরমান সাহেব অবাক হয়ে,,,,,,
__” খবর দেওয়ার জন্য বাড়িতে যাওয়ার কি দরকার , ফোনে বললেই তো হয় !”
__” আরে তুমি বুঝনা কেন এত বড়ো খুশির খবর ওর বাড়িতে না গিয়ে বললে হয় , দুজনে একসাথে গলা মিলাবো না !”
বলে উনি হাসতে হাসতে নিজের মনে কিছু বিড়বিড় করতে করতে রুমে চলে গেলেন ৷
আরমান সাহেব বিড়বিড় করে বললেন,,,,
__” বান্ধবীর সাথে দেখা করার সুযোগ পেলেই হয়…”
❤
যেমনটা আরু ভেবেছিল ঠিক তেমনটাই হলো, ভার্সিটিতে ঢুকতে প্রায় কুড়ি মিনিট লেট করেছে ও , ক্লাস 40 মিনিটের হয় তারমানে এখনো ওকে একা একা আরো কুড়ি মিনিট বসে থাকতে হবে , তাই আর অপেক্ষা না করে কিছু ভার্সিটির সবুজ ঘাসের উপরে ফোনটা নিয়ে বসে পড়ল, পারলে ঘাসের ওপর শুয়ে পড়ে শুধু মান সম্মানের খাতিরে তা করছে না, ফোন পেলে আর কিছু চাইনা ওর….
ইউটিউবটা অন করে এখন horried henry দেখছে আরূ ৷ এই কার্টুনটা ওর বড্ড বেশি পছন্দের ৷ সেখানে হ্যানন্ড্রি নামক চরিত্রের সাথে নিজের অনেক মিল পাই বলেই হয়তো বেশি ভালো লাগে ওর কাছে ৷ Handry নিজেকে যেমন পৃথিবীর সবথেকে বদমায়েশ আর দুষ্টু বলে মনে করে তবে আরুশি সরাসরি নিজেকে ত না মনে করলেও মাঝে মাঝে ওর মন থেকে এমনটাই ফিল আসে….
বেশ মনোযোগ দিয়ে ভিডিওটা দেখছে, আর ভিডিওটার প্রত্যেকবারের ঘটনার সাথে আরুর মুখের রিএকশনটাও কেমন চেঞ্জ হচ্ছে , কখনো বা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আবার কখনোবা Handry র জন্য দুঃখ পাচ্ছে ৷
হঠাৎ পাশ দিয়ে একটা মেয়ের জোরে দৌড়ে সামনের দিকে ছুটে যেতেই মনোযোগে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটলো ৷ একবার ফোন থেকে চোখ সরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখল একটা মেয়ে দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওদের রুমের সামনে হয়তো প্রফেসর স্ট্রাইক্টলি রুমে ঢুকতে বারণ করে দিয়েছেন লেট হওয়ার জন্য , তবে আরু এমনটা করেনি , ঢুকতে দেবেনা ও জানে তাই আর চেষ্টা করেও দেখেনি একবারো….
আবার মেয়েটার থেকে চোখ সরিয়ে পুনরায় ফোনের দিকে মন দিতেই হঠাৎ মনে হল পাশে কেউ ধপ করে বসে পড়েছে….
চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলো ওই মেয়েটি ওর পাশে এসে বসে আছে মুখটা কাচুমাচু করে….
__” কি হইছে এমন করে আছো কেন ? জানি রুমে ঢুকতে দেয়নি তাইনা !”
__” হমম, তোমাকেও দেয়নি রুমে ঢুকতে?”
__” আরে না আমি তো নিজেই ঢুকিনি , আমি জানি উনি অপমান করবেন আর তাই উনার কথা শুনার কোন ইচ্ছা আমার নেই ৷”
__” তুমি তো বেশ বুদ্ধিমান, যদি আমারও এমন বুদ্ধি থাকতো !”
__” 😎,সে তো আমি হবোই ৷ বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে আজকে আমি ফার্স্ট দেখছি ৷”
__” ওহ আমি তিথি আর তুমি?’
__” আমি আরুশি , আরু বলে ডাকতে পারো৷”
ক্ষনিকের আলাপেই দুজনের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল , আরু খুব সহজেই কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নিতে পারে কিন্তু সেটা সবার সাথে করে না….
দুজনে বেশ কিছুক্ষন বকবক করার পর ক্লাস রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ আরু থেমে গেল….
ওর চোখ গেল দূরে রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে , যার চোখ থেকে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে আর আরিশ সযত্নে তা মুছে দিচ্ছে….
মুহূর্তের মধ্যে যেন ঝটকা খেলো আরু, হয়তো এমন টা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না ৷
__” কি হল তুই দাঁড়িয়ে পড়লি যে, ক্লাসে যাবিনা ? চল না হলে কিন্তু মিস হয়ে যাবে ৷”
__” ক্লাসে তো যাবোই তার আগে একটা পিক তুলে নিই ৷” বলে bag থেকে ফোনটা বার করে আরিশ আর মেয়েটির একসাথে পিক তুলে নিল বেশ কয়েকটা ৷
__” এগুলো কি হবে? আর কার পিক তুললি ?”
__” মি, অভদ্রের পিক,,, হায় মেরি জান ,মেরি প্রান মি অভদ্র ৷”(বলে হাসতে লাগলো ৷)
|
|
|
ক্লাস রুমের মধ্যে বসে আছে আরূ আর নিজের মনে মনে ভাবছে,,,,,
__” অনিকা আন্টির এই গুণধর পত্র প্রেম করে তা আম্মুকে জানাতে হচ্ছে , তাহলে আম্মুর ওনার সম্বন্ধে ভুল ধারণাটা ভেঙ্গে যাবে ৷ এটা বুঝবে যে যতটা ভদ্র আর মহান মনে হয় ততটা নয়….আর কালকে আমাকে ওভাবে ভয় দেখানো হাহ,,, আর ঘর পরিষ্কার নেভার ৷”
__”কথাটা এখন অনিকা আন্টি আর আম্মুর কানে পৌঁছে দিলেই কেল্লাফতে…ইয়া হু ইউ আর গ্রেট আরু ৷”
__”কিরে মনে মনে এতো হাসছিস কেন তুই?”
__” আরে কিছু না এমনিই হঠাৎ একটা জিনিস মনে পড়তেই বেশ হাসি পেল ৷ ”
__” আচ্ছা তুই আবার একটু পড়াশোনা কনসেনট্রেট কর ৷”
__” বাই দা রাস্তা তুই কি খুব পড়াকু স্টুডেন্ট!
যদি এমনটা হয়ে থাকিস তাহলে তোর সাথে আমার আড়ি ,কারণ আমি এত পড়াশোনা করি না…”
__” 🙄 ৷”
|
|
|
__” আরে তুমি কেঁদো না , তোমার মত এই পিচ্চি বোনটার চোখের জল দেখে কিন্ত খারাপ লাগছে আমার ৷
আচ্ছা আমি সাহেলকে অনেক কথা শোনাবো, আগে বাসায় যাই ৷”
__”মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,,,”
__”ভাইয়া আপনি কিন্তু কিছু বললেন না ওকে, আর দোষটা তো আমারই….”
__”আচ্ছা সে না হয় কিছু বললাম না, তবে এভাবে মান অভিমান করে আর কতখন?”
__” ও তো রাগ করেছে ভাইয়া আমি কি করবো বলুন তো?”
__”আমার কাছে এই সমস্যার সহজ সমাধান আছে তুমি চাইলে বলি ৷”
__” ভাইয়া আপনাকে কি আবার নতুন করে সব বলতে হবে!”
আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” নাহ থাক তবে এখন তুমি ওর সামনে গিয়ে মুচকি একটা হাঁসি দেবে আর তারপরে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে আর ছাড়তে চাইলেও ছাড়বে না ঠিক আছে !”
মেয়েটা মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” ওকে ভাইয়া….আর বরাবরের মতো ধন্যবাদ ৷”
কথাটা বলে মেয়েটা চলে গেল…..
আরিশ মুচকি হেসে প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকে গেল,,,,,
আজকে ও কলেজে এসেছে কারণ প্রিন্সিপাল একবারে এক্সামের আগে ওদেরকে দেখা করতে বলেছিলেন সেই কারণে ৷ এসে তোহাকে কাঁদতে দেখে জানতে পারলো যে সাহেলের সাথে ঝমেলা হয়েছে কাল রাতে তোহা কল রিসিভ করেনি তাই ,তাই নিয়ে ওদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে, তারপরে তোহা কাঁদলেই আরিস ওর চোখের জল মুছে দিল ৷ আর সাহেল আর তোহা ওদের দুজনের মধ্যে যতবার ঝগড়া হয়েছে ততবারই সমস্যার সমাধান করেছে আরিশ ৷ তোহা আরিশকে নিজের বড় ভাইয়ের মত সম্মান করে আর ওকে খুব মান্য করে ৷
চলবে,,,,,,,,