তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-০৩

0
1998

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:3
#Suraiya_Aayat

__”আমি যাব না আপনি কি করেন আমিও দেখি ৷” বলে আরু আরিশের বিছানায় গিয়ে বসে গেল ৷

__”আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়লাম তো !”

কথাটা শোনা মাত্রই আরূর মাথাটা গরম হয়ে গেল, সাথে সাথে উঠে আরিসের শার্টের কলার ধরে ফেলল ,শার্টের কলারটা ধরতেই আরিশ আরূর অনেকটা কাছে চলে এসেছে, অনেকটাই কাছে ৷
দুজনে কাছাকাছি চলে আসতেই আরু থতমত খেয়ে গেল , ও বুঝতে পারেনি যে ব্যাপারটা ঠিক এমন হবে তাই তাড়াতাড়ি করে আরিশ কে ছেড়ে দিল….

আরিশ এই সমস্ত ব্যবহার একদমই পছন্দ করে না , তাও আবার এই মেয়েটার সাহস দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে , সরাসরি ওর জামার কলার ধরেছে ৷

আগেরবার ভার্সিটির একটা ছেলে ওর কলার ধরেছিল বলে তার পরিনতিতে ছেলেটা প্রায় দু’সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৷ কথাটা মাথায় আসতেই ওর হাতদুটো মুঠিবদ্ধ করল তবে মেয়েদের কে ও যথেষ্ট শ্রদ্ধা করে তাই চাইলেও ও আরুকে ওই ছেলেটার মত পরিণতি করতে পারবেনা….

মাথায় রাগটা উঠে আছে তবে এখন রাগটাকে আর বেশি দেখাতে চাইছে না ও, তাহলে আরু ভয় পেয়ে যাবে সেই কারণে ৷
শান্ত কন্ঠেই আরুকে বলল,,,,,
__” কাউকে পাগল বললেই সে পাগল হয়ে যায় না , যদি না সে নিজেকে মনে করে ৷”

আরিশ মিষ্টি কথায় কড়া জবাব যাকে বলে তাই বলল আরুকে ৷

আরু আর বেশি কিছু বলতে যাবে তার আগে আরিশের ফোনে ফোনটা বেজে উঠলো ৷ টুংটুং আওয়াজ হতেই পকেট থেকে ফোনটা বার করলো আরিশ ৷

__” হ্যাঁ তুর্য বল ৷”

__”দোস্ত তুই ফিরবি কখন?সাহেল এখনো বাড়ি ফিরল না, তাছাড়া প্রান্তটা শুনলাম আজকে ফিরবে না কালকে সরাসরি বাসা থেকে ভার্সিটি যাবে, আমার একা একা ভাল লাগতাছে না ৷”

আরুর দিকের রাগি চোখে তাকিয়ে বলল ,,,,,,
__”রহিমা খালার সাথে গল্প কর যদি ভালো না লাগে ৷”

আরিশের কাছ থেকে এমন একটা উত্তর পেয়ে তুর্য বুঝতে পারল যে কিছু একটা হয়েছে ৷

__”দোস্ত এত রেগে আছিস কেন?
এমন করে কথা বলতাছস কেন?”

__” হমমম ৷”

__”কি কারনে রাগ করে আছিস আমারে বল , কেউ কি তোকে কিছু বলছে ? শুধু একবার তার নামটা বল গিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়ে চলে আসব ৷”

__”আমি এখন রাখছি তূর্য , টেককেয়ার ইউরসেল্ফ যতক্ষণ না আমি বাসায় যাচ্ছি….”

আসলে আরিশের সাথে তুর্য , প্রান্ত আর সাহেলের ফ্রেন্ডশিপটা এমন যে ওর মুডটা ঠিক কখন কেমন সেটা আরিস এর কথা বলার ধরন শুনলেই ওরা বুঝতে পারে , তাছাড়া আরিশ সব সময় ওদের খেয়াল রাখে কখনো কোন বিপদে পড়তে দেয় না , আর আরিশ যদি কোন বিপদে পড়লে তাহলে ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ৷

প্রথমত আরু যাকে নিজের ক্রাশ বলে ভেবেছিল এখন তাকেই নিজের চরম শত্রু হিসেবে দেখছে ও, আর তার ওপরে তূর্যর নামটা আবার শুনে সকালের সব কথা মনে পড়তেই ওর পুরোনো সব রাগ আবারো জেগে উঠলো ৷

আরিসের ফোনটা কাটা মাত্রই আরু বলে উঠলো,,,,, __”নিজের ফ্রেন্ড কে সঠিক শিক্ষা দিতে পারেন না ? আমার আমার তো প্রথমেই মনে হয়েছে আপনিও উনার মতই, আর এখন আমি তা সিওর ৷ আপনাকে দেখেই বোঝা যায় আপনি কেমন ৷
যখন আপনার ফ্রেন্ড গোটা ভার্সিটির মাঝে একটা মেয়েকে এভাবে অপমান করল আর আপনি তো একটা কথাও বললেন না আর না কোনো প্রতিবাদ করলেন ৷ আপনি ওরকম ওনার মতোই মেয়েদের কে টিস করেন আর মেয়েরা সব সহ্য করে শুধু আপনি সিনিয়র বলে ৷ সানা বলছিল আপনি নাকি ওদের মতো নয় তার নমুনা তো দেখতেই পাচ্ছি ৷

রাগের মাথায় আরু যা তা বলে দিল , একেই নিজের ক্রাশকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখেছে তার ওপরে আবার ওকে রুম থেকে বের করে দিয়েছিল সেই রাগ আরো চেপে বসেছে ওকে ৷

আগেই বলেছি যে আরিস কখনো নিজের সম্বন্ধে কটু কথা সহ্য করতে পারে না আর না পারে নিজের ফ্রেন্ড দের কে নিয়ে তাই প্রত্যেক বারের মত এবারও আরুশির কথা বলাটা যেন আর সহ্য হলো না ৷

মুহূর্তের মধ্যে আরুর হাতটা মোচড় দিয়ে ঘুরিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল ,আরুর পিঠটা এখন আরিশের বুকের সাথে লেপ্টে আছে , আর আরুর হাতটাও শক্ত করে ধরে আছে….

হঠাৎ করে এমন হওয়াতে আরূ ভয় পেয়ে গেল, এতক্ষণে যা রাগ দেখিয়েছে সব যেন নিমেষেই পানি হয়ে গেছে….

আরিশ শান্তকণ্ঠে আরুশির কানে কানে বলল,,,,,,
__” ডোন্ট ডেয়ার টু সে এনিথিং রং এবাউট মি and মাই ফ্রেন্ড ওকে ডিয়ার,,,,আইদার আই উইল কিল ইউ ৷”

কথাগুলো আরিশ যেমন ভাবে বলল তার যে হৃদয় ছোঁয়া , অদ্ভুত মায়া আছে কথাগুলোর মাঝে ৷ কেউ তাল কথার মায়ায় আসক্ত হতে বাধ্য ৷ কিছুখনের জন্য ও আরিশের কথায় মাঝে হারিয়ে গিয়েছিল ৷

আরিস আরুর মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলোকে ফু দিয়ে আরও উড়িয়ে দিল ,এতে আরুশির সারা শরীর জুড়ে শিহরন বয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যেই ৷এমনটা ওর সাথে আগে কখনো হয়নি এই প্রথম কোনো এরকম একটা অদ্ভূত অনুভুতিতে জর্জরিত ও ৷

আরুশির হাতটা আগের মতো ধরে রেখেই সাথে সাথে শান্ত আর নেশাভরা কণ্ঠে বলল ,,,,,,,,
__”নাও গেট লস্ট ৷”

আরুশি আরিশের দিকে অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে , কোনো কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ও ৷ আসলে সেই মুহূর্তে ওর কি বলা উচিত ও নিজেই জানে না ৷

সিঁড়ি দিয়ে নামছে আর এক ঘোরের মধ্যে আছে আরু, ওর সাথে কি হচ্ছে নিজেও বুঝতে পারছে না ৷

আরু চলে যেতেই আরিস একটু টেডি smile দিল তারপর চলে গেল ওর সব থেকে প্রিয় ব্যালকনিতে ৷ প্রত্যেকবার বাসায় ফিরে ও প্রথমে ব্যালকনিতে যায়,ওটা ওর কাছে সব থেকে প্রিয় জায়গা ৷ কেন জানিনা জায়গাটার প্রতি অদ্ভুত এক ভালোবাসা আছে ওর ৷ একুরিয়ামের জলের ঢেউয়ের সাথে খেলতে থাকা মাছগুলোই যেন ওর একান্ত সঙগী বলে মনে হয় , ওদের সাথে ভাব বিনিময় করে তবে ওরা তা কতটা বুঝে উঠতে পারে তাও ঠিক স্মৃতিগোচর হয় না আরিশের ৷

আরুশি গিয়ে ধপ করে সানার বিছানার উপর বসে পড়ল, আগের মতোই চুপচাপ ৷ সানা অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে যে আরু চুপচাপ আছে ৷
কোলের উপরে বাটিতে রাখা পপকর্ণ গুলো এতক্ষণ ধরে খাচ্ছিল আর আরুশিকে লক্ষ্য করছিল সানা , তবে এখন আরুর ভাবসাব দেখে ওর ঠিকঠাক লাগছে না,হলো টা কি !

পপকর্ণ এর বাটিটা কে এক সাইডে রেখে আরুর পাশে গিয়ে বসল, তাতেও আরূর ভাবভঙ্গীর কোন পরিবর্তন হলো না তাই না পেরে আরূর কাঁধে আলতো করে স্পর্শ করতেই আরোশী চমকে গেল ৷
__”কিরে এতক্ষণ ধরে কি ভাবছিস আনমনা হয়ে ?”

__”ক্রাশের কথা ৷”

__” হা হা তোর ক্রাশ এর কথা ! ” বলে মুখটা হাত চেপে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল সানা ৷

এতক্ষণ আনমনা হয়ে কথাগুলো ভাবছিল আরূ তবে এখন সানার হাসিতে ওর চেতনা ফিরে এলো, সঙ্গে সঙ্গে রেগে গিয়ে বলল ,,,,,,,
__” আমার চোখে দেখা এই পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ মানুষের তালিকায় উনার নামটা সবার উপরে থাকবে, হি ইজ আ বিগ টাইপ অফ ডেভিল ৷ বাজে লোক, খারাপ লোক , পচা লোক ৷”

সানা তো আরুর কথা শুনে অবাক ৷ তার মানে ওরা দুজন দুজনের মুখোমুখি হয়েছে আর প্রথম দেখাতেই দুজন দুজনের সাথে যে কোনো ঝামেলা বাঁধিয়েছে তা সানার আর বুঝতে বাকি নেই , তবে ওদের দুজনের ক্যাটফাইট টা নিজের চোখে দেখলে বড্ড বেশি ইনজয় করতে সানা, তবে মিস হয়ে গেল ওর ৷

কথাগুলো বলেই আরূ নিচে চলে গেল…..
__”আর বলিস না আমার মেয়ের কথা, তোর মত আমার মনেও এটা বড় প্রশ্ন যে হঠাৎ আজকে সাদা রঙের ড্রেস কেন পড়ে এলো ?”

__”সত্যিই তো ভাবার বিষয় , কি হলো আমার আরু মামনির ! তার দেখ হয়তো কাউকে ভালো লেগেছে আর তার সাদা রঙ পছন্দের ৷ ”
কথাটা বলেই দুজনেই মুখ চেপে হাসতে লাগল ৷

ওদের কথাগুলো আরুর কানে পৌঁছেছে ৷ সত্যিই ওর অজানা ক্রাশ কে ও খুব পছন্দ করত তবে ক্রাশ যে বাঁশের মতো পরিণত হবে সেটা ভেবেনি কখনো ৷ এখন রাগ লাগছে ওর এসব কথায় ৷
কথায় আছে ক্রাশ নামক জিনিসটা হল বাঁশ এর মতো , সেটা আরু আজকে হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে ৷
আরু রেগে গিয়ে বলল ,,,,,,
__”আমার ড্রেস নিয়ে তোমরা মজা করছ তাইনা?”

অনিকা খান আরুর কাছে গিয়ে,,,,,,
__” আমার মামনি কে নিয়ে আমি কখনো মজা করতে পারি এমন টা হয়েছে কখনো !”

__”থাক থাক অনেক হয়েছে, সবই দেখেছি আর শুনেছিও ৷ আমাকে কিছু বোঝাতে এসো না ৷ আন্টি আমার খুব খিদে পেয়েছে আমি বাড়ি যাব তাড়াতাড়ি খেতে দাও নাহলে আমি এক্ষুনি চলে যাচ্ছি ৷”

__”এটা কোন কথা ? তুই আজকে বাড়ি যাবি একথা ভুলে যা ,আজকে তোরা দুজনেই আমাদের বাসায় থাকবি ৷ ”

__” ইমপসিবল , আমি এখানে থাকবোই না ৷”

__” আমার কথা তুই রাখবি না ? তুই না বলিস আমি তোর আরেক মা তাহলে !”

__” থাক না মা !( আরুর মা করুন স্বরে বলল)

__” খেতে দেবে কি না ?”

__” তার মানে থাকবি তাইতো ?”(খুশি হয়ে).

__” হমমম ৷”😒

চলবে,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে