#তোমায়_ছেড়ে_যাবো_কোথায়?
লেখাঃ – মুনিরা সুলতানা।
পর্বঃ – ১৩।
——————*
সকাল থেকে প্রচন্ড ব্যাস্ততা। সকালের ব্রেকফাস্ট সেরে কামরানকে বিদায় দিয়েই ঘরের কাজে লেগে পরেছি। রানিকে দিয়ে আরমান ও তিয়ানার কামরাগুলো পরিস্কার করালাম। ওকে বিছানার চাদরগুলো পাল্টে সেগুলো সহ আরও অধোয়া কাপড় চোপড় ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে ঘরের ফার্নিচারগুলো মুছে ফেলতে বলে আমি কামরা ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। রান্নাঘরে প্রচুর কাজ। আসমাকে রান্নার প্রস্তুতির কাজে লাগিয়ে দিয়েছি আগেই। আজ আরমান ও তিয়ানা ফিরে আসছে। তাসিময়াকে গতকাল সন্ধায় বাসায় নিয়ে গেছে। শাশুড়ী মা আরও কিছুদিন মেয়ের কাছে থাকবেন। শুধু ওরা দুজন চলে আসছে। দুজনেরই পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে তাই। আজ তাই খুব ভালো লাগছে। গত কয়দিন একা একা সারাদিন ভিষণ একাকিত্ব বোধ হত। ওরা এলে বাড়িটা আবার ভরে উঠবে। প্রান ফিরে পাবে।
এক এক করে রান্না গুলো সেরে ফেলছি। আসমাও হাত লাগিয়েছে। আমি সবকিছুই মোটামুটি রান্না করতে পারলেও পাকা রাধুনিদের মত সব একা হাতে সামলানো আমার পক্ষে এখন সম্ভব নয়। হয়তো অদুর ভবিষ্যতে হলেও হতে পারি। রান্না করতে করতে আসমার সাথে টুকটাক কথা চলছে। রানি ঘরের কাজগুলো করে চলে গিয়েছে। আবার সন্ধায় আসবে। আসমা বাড়ির সবার পছন্দ অপছন্দ, স্বভাব সম্বন্ধে বলছিল। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল আমার। চট করে কল রিসিভ করে কানে ধরলাম। মামার ফোন। মামা বললেন,
” তোর ননদ, দেবর আজ আসছেতো তাইনা?”
” হ্যা মামা ওরা আসছে। ইতিমধ্যে রওনাও দিয়েছে। আপনাদের জামাই একেবারে ওদের নিয়ে বাসায় ফিরবে। কিন্তু আপনি ওদের আসার কথা কেন জানতে চাইলেন?”
” এই শুক্রবার রাতে তোরা সবাই আমাদের এখানে খাওয়া দাওয়া করবি। সবাই মানে তোর ননদ দেবর সহ সবাই।”
এই শুক্রবার তো কামরানের পিউলির সাথে ফটোশুটে যাওয়ার কথা। ওকি যেতে পারবে? এখন কি বলব মামাকে? কামরানকে জিজ্ঞেস না করে কিছু বলা উচিত হবে না। তাই বললাম,
” আমি তো সবসময় রেডি যাওয়ার জন্য। কিন্তু আপনাদের জামাইয়ের যাওয়া নিয়ে আমি শিওর বলতে পারছিনা মামা। আপনি একবার ওর সাথে কথা বলে নিলে ভালো হতো। ”
” কামরানের সাথেও কথা বলে নেব। আগে তোকে জানিয়ে রাখলাম।”
” ঠিক আছে। কথা বলে দেখেন। মামী তামান্না ওরা কেমন আছে মামা?”
” আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে। আচ্ছা ঠিক আছে এখন তাহলে রাখি? কামরানের সাথে কথা বলি। দেখা হচ্ছে ইনশাআল্লাহ। ”
” ঠিক আছে। আল্লাহ হাফিজ।”
কল কেটে সোলফোনটা এক পাশে রেখে আবারও রান্নার কাজে মনযোগ দিলাম। আসমা হঠাৎ শুধালো, ” আপনার মামায় এই শুক্রবার দাওয়াত করছেন তাইনা? আপনারা যাইবেননা?”
” হ্যা যাবোনা কেন? নিশ্চয়ই যাবো।”
” ভাবিজান আপনারে একটা কথা কই, ঐ শাঁকচুন্নি পিউলি আপায় ঐদিন কইয়া গেলোনা ভাইজানরে এই শুক্রবারেইতো কই জানি শুটিংএ নিয়া যাইবোগা। আমি কইলাম ভাইজানরে যাইতে দিয়েননা। এই সুযোগে দাওয়াত খাইতে যাওয়ার বাহানায় ভাইজানরে আটকাইয়া সামলাইয়া রাইখেন। ”
আসমার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। ও হঠাৎ এমন কথা বলছে কেন? আমি বললাম, ” কি বলছ কি তুমি? ওরা তো একটা কাজে যাবে। আর তাছাড়া মামার বাসায় ইনভিটেশন রাতের বেলায়।”
” ভাবিজান আপনেনা খুবই সরল সোজা। নইলে ঠিকই চোখে পরতো ঐ আপায় জোকের লাহান ভাইজানের পিছে পইরা থাকে। দেখলেন না হেইদিন বাড়িত্ কেউ নাই আপনারা দুইজন ছাড়া তাও আইসা হাজির হইল। হেই জন্য কইলাম একটু চোখ কান খুইলা রাখেন আর ভাইজানরে তার থেইক্কা দুরে রাখেন। ”
আমি জানি আসমা ঠিকই বলছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারলেও কোনকিছু কি আমার হাতে আছে? আমি নতুন বউ। কামরানের উপর খবরদারি করার মত সম্পর্ক তো আমাদের মধ্যে এখনো গড়ে ওঠেনি। কিছু সময় নিরবে কেটে গেল। নিজেকে সামলে তরকারি নাড়া দিয়ে দেখলাম হয়ে গেছে। চুলা বন্ধ করে আসমার দিকে ফিরলাম। ও নোংরা হাড়ি কুড়ি মাজতে ব্যাস্ত। আমি বললাম,
” আমি জানি তুমি যা বলছ ঠিকই বলছ। কিন্তু পরিস্হিতি তো সবসময় আমাদের হাতে থাকেনা। তাইনা? তাছাড়া আমি ভাগ্যো বিশ্বাস করি। আল্লাহ তায়ালা যা আমার তাইতো আমার ঝুলিতে দিয়েছেন। এতোদিন যখন ফাঁকা ময়দানে কিছু করতে পারেনি এখনো পারবেনা। ”
” দেখেন ভাবিজান এই গরীবের কথা বাসি হলে ফলবে। আর এতদিন ময়দান ফাঁকা আছিলনা। দাদাজান আছিল। এখন আপনাকেই সামলাতে হইবো ঐ শাঁকচুন্নি টাকে।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, ” আচ্ছা বাবা খেয়াল রাখব। কিন্তু তুমি আর এভাবে বলনা। এভাবে কাউকে গালাগালি করতে হয়না। এসব কথা যদি পিউলি আপুর কানে যেত তাহলে উনার কষ্ট হতনা বল। তার কাউকে পছন্দ হতেই পারে। এখানে ওর দোষ কোথায় বল? কারও সম্পর্কে এমন সমালোচনা করাকে গীবত বলে। আর গীবত কারীকে আল্লাহ কখনো মাফ করেনা বুঝলে। যতক্ষণ পর্যন্ত না যার গীবত করেছ সে তোমাকে মাফ করে।”
আসমা চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে বললো, ” ও ভাবিজান কি কন এইসব? এইটা কি ভয়ংকর কথা। কিন্তু শাঁকচুন্নিটা যে আপনাদের বিয়া হইয়া গেছে জাইনাও পিছে লাইগা আছে এইডা কি ঠিক? আপনেই কন? ”
আমি স্মিত হেসে বললাম, ” তার জায়গায় সে ভুল মানছি। কিন্তু তোমার ভুল থেকে তোমাকেই বেঁচে চলতে হবে। তোমার ভুলের দায় তো তোমাকেই নিতে হবে। তাইনা? এখন এসব কথা ছাড়। কয়টা বাজে খেয়াল আছে? ওরা এতক্ষণে ল্যান্ড করেছে বোধহয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। তুমি সালাদটা কেটে কিচেনটা ক্লিন করে ফেল। আমি ততক্ষণে গোসলটা সেরে আসি। ঠিক আছে? ”
” জ্বি ভাবিজান আপনি গোসল কইরা আসেন। আমি বাকিটা সামলাইয়া নিবনে। আপনি যান।”
আমি রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। ওয়ালকাবার্ড থেকে একটা হালকা বেগুনি রঙের শাড়ি বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম।
গোসল সেরে কোনরকমে শাড়ি পেচিয়ে আগে জোহরের নামাজ আদায় করে নিলাম। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শাড়িটা ঠিক করে পরছি তখন কলিং বেলের আওয়াজ পেলাম। ওরা চলে এসেছে বোধহয়। আমি দ্রুত গতিতে শাড়ি পরছিলাম, কুচি গুলো করছি ঠিক সেই সময় আয়নায় কামরানকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে হকচকিয়ে গেলাম। আঁচল কোনরকমে এলোমেলো ভাবে গায়ে ফেলে রেখেছি। তাই খোলা পেট কোমর দেখা যাচ্ছে। লজ্জায় তো বটেই এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে কোথায় মুখ লুকাই এখন? ঝট করে আঁচল ঠিক করতে করতে পাশ ফিরে আয়নার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালাম। ততক্ষণে কামরানও ওয়াল কেবিনেট খুলে নিজের কাপড় বের করতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। আমরা স্বামী স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও এই মুহূর্তটা আমাদের দুজনের জন্যই কেমন অস্বস্তিকর এবং লজ্জাজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এটা যে কোন দম্পত্তির জন্য খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। একটা দীর্ঘশ্বাস আমার বুক চিড়ে বেরিয়ে এল। শাড়ি পরা হয়ে গেলে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার আগে দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালাম। আড়চোখে দেখলাম কানরান একটা নেভিব্লু টিশার্ট এবং ছাই রঙের ট্রাউজার হাতে নিয়ে কেবিনেট বন্ধ করছে। আমি ওর দিকে না তাকিয়েই বললাম,
” জলদি শাওয়ার সেরে আসেন। বেলা অনেক হল। খাবার বাড়ছি। আপনি এলে সবাই একসাথে খেতে বসব। ”
কামরান স্বাভাবিক গলায় বললো, ” তোমার টেবিল সাজানোর আগেই আমার হয়ে যাবে। শাওয়ার নিতে জাস্ট পাঁচ মিনিট লাগবে। ”
” আচ্ছা। ”
বলেই কামরা ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। ডাইনিং এ এসে দেখি আরমান এবং তিয়ানা তখনও নিজেদের কামরায় যায়নি। ওরা দুজন শরবত পান করছে। আগেই শরবত বানিয়ে ফ্রিজে ঠান্ডা হতে রেখে দিয়েছিলাম। বাহ্ আসমা মনে করে পরিবেশন করেছে। ওদের দিকে এগিয়ে গেলাম। ওরা ততক্ষণে গ্লাস খালি করে টেবিলে নামিয়ে রাখছে। আমি সালাম দিতে আরমান সালামের জবাব দিল। তিয়ানা উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে উঠলো,
” হেই ভাবি, কেমন আছ? ”
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোমরা কেমন আছ? জার্নি কেমন হলো? ”
এবারও তিয়ানাই জবাব দিল, ” দারুণ জার্নি হয়েছে ভাবি।”
আরমান বললো, ” আমি আমার রুমে গেলাম। গোসল করে এসে ভাত খাব। ভিষণ খিদে পেয়েছে। ”
” হ্যা তোমরা তাড়াতাড়ি গোসল সেরে আস। অনেক বেলা হয়ে গেছে। আমি ততক্ষণে ভাত বাড়ছি। ”
ওরা দুজন কথা না বাড়িয়ে নিজেদের কামরার দিকে চলে গেল। আমিও কিচেনের দিকে পা বাড়ালাম।
খেতে বসে টুকটাক কথা চলছে। তিয়ানা মোটামুটি খুলে বলল ওখানকার পরিস্থিতি সম্বন্ধে। একটু সুস্থ হয়ে উঠলেই তাসমিয়াকে সাথে নিয়ে শাশুড়ি মা ফিরবেন। এত কথাবার্তার মধ্যে আরমান একদম নিশ্চুপ। চুপচাপ খেয়ে চলেছে। কামরান ওর উদ্দেশ্যে বললো,
” টাকা পয়সায় কোন ঘাটতি হয়নি তো। আর সামনেও তো অনেক খরচ। তোরাতো কিছু বললিনা। ”
” না ভাইয়া ঘাটতি হয়নি। লাগলে তো বলতামই। আম্মার একাউন্ট থেকে সব সামলে নেয়া গেছে। কিন্তু ভাইয়া এভাবে কতদিন চলবে? বাচ্চার বাপ হয়ে গেল তবুওকি দুলাভাইয়ের কোনদিন দায়িত্বজ্ঞান হবেনা? আমাদের টাকায় ওদের সংসার চলবে?”
কামরান বললো, ” ছিঃ এসব কি ধরনের কথা। তাসমি আমাদের বোন হয়। আর এটা ওর প্রথম বাচ্চা। আমাদের ফ্যামিলির মধ্যেও প্রথম বাচ্চা। আমাদের একটা দায়িত্ব আছেনা। আব্বা বেঁচে থাকলেও নিশ্চয়ই এই সময় সব খরচ নিজেই করতেন। ”
আরমান বললো, ” আমি এখনকার কথা বলছিনা। দুলাভাই যে এভাবে ভাইদের এবং আমাদের উপর নির্ভর করে বসে থাকে সেই কথা বলছি। তুমি জানো সে বাপ হয়েছে অথচ বাচ্চার জন্য খুশি হয়েও তো একটা জামা কিংবা একটা ফিডারও কিনে আনতে পারতো। অথচ দেখো সে একটা ফুটো কড়িও খরচ করেনি। আচ্ছা তার কি ইচ্ছেও করেনা নিজে শখ করে বাচ্চাদের জন্য কিছু কিনে আনতে? আমার না এসব দেখে জাস্ট রক্ত টগবগ করে উঠছিল। আল্লহই জানে আপু ঐ লোকটাকে কি দেখে পছন্দ করছিল। ”
আমি ওদের কথা শুনে একেবারে অবাকের সীমা ছাড়িয়ে গেছি। এমন মানুষ তাহলে আরো আছে? আমি ভেবেছিলাম আমার চাচ্চুই বোধহয় কেবল এমন। এখন দেখছি এমন অলস মানুষ আরও আছে। আমার চাচাও সারাজীবনে সিরিয়াসভাবে কোন চাকরি করেনি। অল্প বয়সে হয়ত চেষ্টা করেছিল। চাকরিতে জয়েনও করেছে। কিন্তু দুদিন পরেই ছেড়েছুড়ে বসে থাকত। একসময় সবাই হাল ছেড়ে দেয়। শুধু মাত্র চাচ্চুর জন্য দাদা রিটায়ার করার পরে আরডি মার্কেটে দোকান নিয়েছে। তবুও লাভ হয়নি। কাজ যেটুকু করতেন তা কেবল দোকানে বসে থেকে কর্মচারীদের উপর নজর রাখাত। সবাই ওতেই সন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু এখন আব্বা ও ভাইয়াই সামলায়। দুলাভাই সেই ধরনের মানুষ। এরা কখনও বদলায়না। কারন এই ধরনের মানুষের আত্মসম্মানবোধ, লজ্জাবোধ বলতে গেলে থাকেই না।
কামরান বললো, ” বাদ দেতো, এসব নিয়ে কথা বলে কি লাভ। কেবল নিজের মেজাজ গরম করা ছাড়া। ”
আরমান আরও উত্তপ্ত গলায় বললো, ” আমাকে চুপ করালেই কি যা বললাম তা মিথ্যে হয়ে যাবে? ঐ লোকটাকে দেখলে আমার জাস্ট অসহ্য লাগে। ওয়ার্থলেস একটা।”
আরমানের চোখ মুখে তিক্ত ভাব ছেয়ে আছে। দুই ভাইয়ের স্বভাবের মধ্যে অনেক তফাৎ। কামরান একদম ধীর,স্থির, শান্ত, ঠান্ডা চরিত্রের মানুষ। কিন্তু আরমান বেশ বদরাগী, যদিও সেও বেশ চুপচাপ স্বভাবের। কামরান বেশ শান্ত কন্ঠে বললো,
” ওকে মানছি। কিন্তু তুই প্লিজ একটু শান্ত হ। যা হওয়ার তাতো হয়ে গেছে। তাসমিও ওর সাথে ভালোই আছে। আর আমরা তো আছিই তাইনা? আমাদের বোনকে আমরা দেখতে পারবনা বল? তাসমি সুখে আছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা। তাই অযথা এসব কথা তাসমির সামনে যেন কখনও বলতে যাসনা। মেয়েটা খুব কষ্ট পাবে তাহলে।”
আরমান বললো, ” আমাকে পাগল পেয়েছ? আমার কি এটুকু বোধ নেই? যদি কিছু বলার থাকত অনেক আগেই বলে দিতাম। এতদিন অপেক্ষা করতামনা। ”
কথাটা শেষ করেই ও চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়াল। ওর খাওয়া শেষ। বেসিনের দিকে গেল হাত ধুতে। আমি চুপচাপ খেতে খেতে ওদের কথা শুনছিলাম। আসলে এই বাড়িতে আমি একদম নতুন। তাই তাদের কথার মাঝে কোন কথা বলতে ভিষণ সংকোচ হয়। কিজানি কোন কথায় আবার মাইন্ড করে বসে। তারচেয়ে চুপ থাকাই নিরাপদ। এরপর প্রায় নিরবেই সবাই খেয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে তিয়ানা নিরবতা ভেঙে বললো,
” ভাবি আজকের সবকিছু নাকি তুমি রান্না করেছ। বাহ্ তোমার রান্নার হাত তো বেশ চমৎকার। তাইনা ভাইয়া? ”
জবাবে কি বলব ভেবে না পেয়ে আমি একটু লাজুক হাসলাম। কামরান বললো, ” হ্যা রান্নার ক্ষেত্রে তোর ভাবি বেশ পাকা। তা তুমি কি রাধুনির ভুমিকাই পালন করে যাবে নাকি প্রফেশন লাইফে পড়াশোনার সাবজেক্টটাকেও কাজে
লাগাবে? তোমার মতিগতি তো সুবিধার মনে হচ্ছেনা।”
শেষের কথাটা যে আমার উদ্দেশ্যে বলা বুঝতে কয়েক মুহূর্ত সময় লাগলো আমার। আমি কামরানের মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম ও সিরিয়াসলি বলেছে নাকি ফাজলামো করছে। বললাম,
” মাত্র তো এক্সাম শেষ হলো। রেজাল্ট বের হোক আগে। সময় মত সবই করব। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।”
তিয়ানা বললো, ” ভাবি কিসে পড়াশোনা করেছে সেটাই তো জানা হয়নি এখনও। ”
আমি মুখ খোলার আগেই কামরান বললো, ” তোর ভাবি একজন আর্কিটেক্ট। ”
” সত্যি? ওয়াও! ” উৎফুল্ল হয়ে বললো তিয়ানা।
আমি মুচকি হাসলাম। কামরান আবার বললো, ” রেজাল্ট যখন হওয়ার হবে। কিন্তু তুমি কেন সময় নষ্ট করবে? আমি ভাবছি আমাদের নেক্সট প্রজেক্টেই তোমাকে কাজে লাগিয়ে দিব। তৈরি থেকো। ইন্টার্নিটা আমাদের কোম্পানিতেই শুরু করে দাও।”
কথা শেষ করে কামরানও উঠে দাঁড়াল। আমি ঝটপট বললাম, ” ওকে। সে দেখা যাবে। কিন্তু নেক্সট ফ্রাইডে সন্ধায় মামা আমাদের সবাইকে ইনভাইট করেছেন। আপনার সাথে কি কথা হয়েছে? প্লিজ আপনার কাছে রিকোয়েষ্ট, ঐদিন রাতে অন্তত ফ্রী থাকবেন। ”
কামরান আমার দিকে ফিরে বললো, ” ও হ্যা, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তোমার মামা আমাকেও ফোন করেছিল। নো প্রবলেম। ঐদিন দিনে পিউলির ফটোসেশন আছে। রাতে ফ্রী থাকব। ডোন্ট ওরি। ”
কামরান বেশিনের দিকে চলে গেল। আমি বুকে চিনচিনে ব্যথা নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছি। জানিনা কেন ঐ মেয়েটার নাম শুনলেই আমার কেমন যেন অস্বস্তি হতে থাকে। কিন্তু কি করার। এই বাড়ির আত্মীয় সে। সহ্য করতেই হবে। এই প্রথম আমাদের বাড়ির দিক থেকে কারও বাসায় যাওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত কি সবার যাওয়া হবে?
চলবে ইনশাআল্লাহ।