#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৪
আমি অনমনে বাহিরে দিকে তাকিয়ে আমাকে মা বাবা মেনে নিবে নাকি ভাবছি।
অভ্র হাতের আগুল দিয়ে মুখের ভিতরে গ্লিসারিন দিয়ে বললো,
–হা করে এতো কী ভাবছেন। একটু মিষ্টি মুখ করে নিন তাহলে ভাবনাগুলো আরো মিষ্টি হবে।
আপনি একটা বদের হাড্ডি মনেমনে বললাম। সত্যি কী আমি হা করে ভাবছিলাম। দেখি তো আয়নার সামনে গিয়ো। আয়নার সামনে যেতে ই অভ্র বললো,
–শাড়ি পড়ে নিচে যান
–আপনি কী আমার মান সম্মান রেখেছেন নিচে যাবো কোন মুখে।
–অভ্র চৌধুরী বউ হয়েছেন এটা ই অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।
–আমি তো এতো ভাগ্যবতী হতে চাইনি। কেনো করলেন আমার সাথে এমন।
–এতো কেনোর উওর দিতে পারবো না, কিন্তু সময় হলে ঠিক ই আপনাকে আমার বাধন থেকে মুক্ত করে দিবো।
বলে ই অভ্র রুম থেকে বের হয়ে যায়। শত প্রশ্নের উওরের আশায় বসে থাকি কিন্তু উনি তো কিছু ই বলছে ই না। নিচে ও যাবো না কোন মুখ নিয়ে যাবো মা বাবার সামনে।
বেশ কিছুক্ষণ পর,
অভ্রের মা রুমে ডুকলো। আমি উনাকে দেখে ই বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে যাই। কান্না করার কারণে চোখ নাক লালা হয়ে গিয়েছে। উনি রুমের লাইট অন করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে। আমার মায়ের মতো আদর করছে দেখে আমি বেশ অবাক হয়। এতোদিন শুনো এসেছি শাশুড়িরা শুধু কাজ ই করায় মায়ের মতো ভালোবাসে না। কিন্তু উনাকে দেখে আমার ধারণাটা পরিবর্তন হয়ে গেলো।
–দুপুরে খাওনি কেনো মা।
–ক্ষুধা নেই আম্মু।
–রাগ করেছো।
–আম্মু আমাদের বাসার কী সবাই এসেছে।
–হে, তুমি রেডি হওনি কেনো মা।
–আম্মু ওরা তো আমাকে মেনে নিবে না।
–ধুর পাগলি আমার ছেলেটা কোন দিক দিয়ে খারাপ বলো তো। কেনো মেনে নিবে না। যেখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই সেখানে তোমার পরিবারের ও কোনো আপত্তি থাকার কথা না।
উনার কথা শুনে আমার ভয়টা অনেকটা কেটে গেছে।
–শড়ি পড়তে পারো।
আমি মাথা নাড়িয়ে না করলাম।
–চলো পড়িয়ে দেই। আর কোনো কথা বলবা না।
আম্মু আমাকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি ও এনে দিয়েছে।
–এখন নিজে একটু সাজুগুজু করে নেও তো। আমরা আগের মানুষ আমাদের সাজ ভালো লাগবে না। একটু পর আমি তোমাকে নিচে নিয়ে যাবো আসছি।।
আমাকে আর কোনো কথা না বলতে দিয়ে ই উনি চলে গেলেন। আমি সাজুগুজু করতে আবার বেশ ভালোবাসি। তাই মনের মাধুরি মিশিয়ে সাজায় মন দিলাম।
আমি আয়না নিজের চুল ঠিক করতে দেখি অভ্র রুমে এসেছে। আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ও সুযোগ মিস করলাম না বলে দিলাম।
–এতো দেখলে আবার প্রেমে পড়ে যাবেন।
–ওহ্ আপনি। আমি তো ভাবলাম আমার রুমে ভূত প্রেত আসলো না তো।
–শয়তানের রুমে ভুত প্রতে কম ই আসে।
বলে ই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। ভয়ে ভয়ে নিচে যেতে লাগলাম।এক সিড়ি নামি তো দুই সিঁড়ি উঠি এমন করতে করতে অনেক্ষন যাবৎ উপরে ও দাড়িয়ে আছি। কী করে যাবো সবার সামনে।
–মিহি।
অভ্রের এর আম্মু ডাকে নিচে দিকে তাকলাম।
উপরে উঠতে উঠতে বললো,
–ভয় পাচ্ছিস কেনো আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলেছি। তোমার মা তো আসেনি তাই আমি ফোন করে বলে দিয়েছি যেনো কিছু না বলে। আজকে মিনতির সাথে তুমি ও যাচ্ছো মিহি।
কথাটা শুনে আম্মুকে জরিয়ে ধরলাম।
–মিহি শুনো।
আমি আম্মুকে ছেড়ে দুজন নিচে নামতে থাকলাম।
–যেহেতু তাদের অমতে বিয়ে করেছো এতে কম বেশি উনারা রাগ করে আছে আমি যা ই বলি না কেনো তোমার উপর কিন্তু রাগটা থাকবে ই। তুমি বড় হয়েছো মা বাবার পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নিয়ো।
–ঠিক আছে আম্মু।।
নিচে নামতে ই আমাকে আর আম্মকে ঘিরে ধরেছে কয়েকটা আন্টি।
–রেনু এটা আপুর বউয়ের বোন না।
–হে,
–দেখতে তো ভারি মিষ্টি। তা আমাদের নুহাশের জন্য বেশ পছন্দ হয়েছে।
–আমার অভ্রের বউ এটা ভাবি।
–ওমা কী বলে এটা। ছেলের এবার দেবদাস থেকে বিয়ে করলো। তা আমাদের শোনাওনি কেনো।
–আপুর বিয়ের দিন ই তো বিয়ে হয়েছে। আপনারা তো শুনার কথা।
–শুনি নাই, মেয়ে সুন্দর তো তাই আরকি অভ্র দেখে ঠিক থাকতে পারেনি বিয়ে করে নিয়েছে।
— যেভাবে ই বিয়ে করুক ভাবি আপনার তো কিছু না। খেয়ে নিন রাত অনেক হয়েছে, আমি যাচ্ছি।
আম্মু আমার হাত ধরে বাবার কাছে নিয়ে এসেছে। বাবা আমাকে দেখে চোখের পানি অনবরত পড়ছে। বাবার কান্না দেখে আমি ও ঠিক থাকতে পারেনি। দৌড়ে জড়িয়ে ধরলাম।
–কেনো করলি মা এমন। তুই বললে আমি তোকে অভ্রের হাতে তুলে দিতাম।
–বাবা সব বলবো সময় হক। তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।
হয়েছে বাবা মেয়ের কান্না , এখন চলো খেয়ে নিবে। দাদিমা আমাদের সবাইকে নিয়ে খেতে বসেছে।
সব নিয়ম কারন শেষ হবার পর। আমরা এখন আমাদের বাসায় চলে যাবো। আমি সবার আগে গাড়িতে গিয়ে বসেছি। যদি পরে আমাকে রেখে চলে যায় এই জন্য।
–মিহি তুই অভ্র ভাইয়াকে না নিয়ে ই গাড়িতে উঠে গেলি।
–অভ্র কেন যাবে মিনতি।
–অপু কেন যাচ্ছে।
–তোর মন চাইলে তোর জামাইকে রেখে যা এতে আমার কী।
–থাপ্পড় দিয়ে দাত ফেলে দিবো যা অভ্র ভাইয়াকে নিয়ে আয়।
–পারবো না।
–তাহলে আমি বাবাকে ডেকে বলছি তোকে রেখে যাওয়ার জন্য
–দূর বাবা সবাই শুধু আমাকে এমন করে।
গাড়ি থেকে নেমে অভ্রের রুমের দিকে পা বাড়ালাম এই অভ্র যেনো আমার সাথে না যায় আল্লাহ দেখো তুমি। অভ্র আমার সাথে থাকলে আমি অভির সাথে কথা বলতে পারবো না।
চলবে,