তোমাতেই বিমোহিত পর্ব-০৩

0
1386

#তোমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ৩
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

শরবত বানানো শেষ।তবে সেটা কি নিজে ইহানকে দেবে নাকি লতা বেগমের হাত দিয়ে পাঠাবে সেটায় ভাবছে আরোহি।অনেক ভেবে চিন্তে আরোহি অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো লতা বেগমের হাত দিয়ে পাঠাবে।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। আরোহী শরবতটি লতা বেগমের হাত দিয়ে শরবতটি ইহানের ঘরে পাঠালো।
লতা বেগম শরবত নিয়ে গেল ইহানের ঘরে। ইহান ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসেছিল।লতা বেগমের হাতে শরবত দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল তার।

এর আগে কখনো লতা বেগম ইহানকে শরবত দেয় নি। তাহলে আজ কি হল? তখনই মনে পড়ে গেল আজ আরোহি এই বাড়িতে আছে তার মানে কি শরবতটি আরোহী বানিয়েছে?

ভাবতেই একটা ভালোলাগা ছেয়ে গেল ইহানের মনে।তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হলো না। মুহূর্তেই আবার ও অভিমান এসে জমল মনের কোনে। শরবতটি কি নিজের হাতে দেওয়া যেত না।কথা না হয় না ই বলত।ভাবতেই অভিমানের পাল্লাটা ভারী হয়ে গেল ইহানের।লতা বেগমকে বললেন,

” আমার এখন শরবত খেতে ভালো লাগছে না ফুফু।তুমি নিয়ে যাও শরবত।”

কথাগুলো স্বাভাবিক ভাবে বললো ইহান।কিন্তু ইহানের মনের মধ্যে যে ঝড় বয়ে গেল সেটা জানতে পারল না লতা বেগম।

ইহানের কথামতো শরবত নিয়ে ফিরে আসল লতা বেগম। লতা বেগম কে এভাবে আসতে দেখে ভ্রু কুচকে গেল আরোহির। ভরা গ্লাস দেখে রাগটা যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।এটা যদি আগের আরোহি হতো তাহলে ইহানের গলায় ছুরি ধরে শরবত খাওয়াত সে।কিন্তু এখন সেই অধিকার টা নেয় আর আছে সে রকম কিছু করার ইচ্ছা।লতা বেগম রান্না ঘরে এসে গ্লাস টি রাখতে রাখতে বললেন,

“ইহান বাবার শরীর টা ভালো না বউমা।তাই শরবত খাবে না বলছে।”

বউমা শদটি যেন আরোহির কানে ঝংকার তুলল। সারা শরীর শিরশির করে উঠল তার।এ কেমন অনুভূতি? আরোহি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না।বেরিয়ে এলো রান্নাঘর থেকে। সোজা আরশি বেগম এর ঘরে চলে গেল সে।আরশি বেগম আয়ান এর সাথে সময় কাটাচ্ছিল।আরোহিকে তাড়াতাড়ি করে ঘরে ঢুকতে দেখে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“আরোহি মা, কিছু হয়েছে? এভাবে ছুটে এলি কেনো?”

আরোহি নিজেই নিজের কাজে অবাক হলো! কেনো ছুটে এলো সে? বউমা শব্দের হাত থেকে বাচতে!কিন্তু কেন? সে তো নিজেকে ইহানের বউ মেনে নিয়েছে।নাহ! সে তো আয়ানের মা আর কিছু নয়।

আরশি বেগম এখন ও চেয়ে আছেন আরোহির দিকে।তখন আরোহি বলল,

“সে রকম কিছু নয় খালামনি।আসলে আমার মনে হলো আয়ান কাঁদছে তাই।”

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন আরশি বেগম।বললেন,

না রে মা।আয়ান কাঁদেনি।ও তো চুপচাপই আছে।

“হুম।”

ছোট্ট করে উত্তর দিল আরোহি।

রাতে খাওয়ার জন্য সকলেই ডাংনিং টেবিলে উপস্থিত হলো।আয়ান ঘরে ঘুমাচ্ছে।তাই আরোহি ও সেখানে।সকলকে খাবার পরিবেশন করছে সে। আরশি বেগম এর ডায়াবেটিস এর সমস্যা আছে তাই তাকেও বসিয়ে দিয়েছে আরোহি। সকলকে একে একে খাবার দিল।ইহান কে ও স্বাভাবিক ভাবে খাবার দিল।ইহানের বাবা আরোহিকে খেতে বসতে বললেন।কিন্তু আরোহি বসল না।

” আমার ক্ষুধা নেয় খালু।আমি খাব না।”

থমথমে মুখে বলল আরোহি।আরোহির এমন কথায় ভ্রু কুচকে তাকালো ইহান। ইহানের সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নিল আরোহি।আরশি বেগম আর ইদ্রিস সাহেব চিন্তিত হয়ে উঠলেন।নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন আরশি,

” কেন খাবি না মা? শরীর খারাপ লাগছে নাকি তোর?

আরোহি হালকা হেসে বলল,

“না না খালামনি। আমি ঠিক আছি।কিন্তু কেন জানি না খেতে ইচ্ছা করছে না।তোমরা চিন্তা করো না। রাতে না খেলে আমার কোনো অসুবিধা হবে না।”

আরশি বেগম আর কথা বাড়ালেন না।তিনি নিজে ও আগে রাতে ঠিকমতো খেতেন না।এই ডায়াবেটিস এর জন্য তাকে এখন নিয়ম করে রাতে খেতে হয়।

ইহান কিছু বলল না।চুপচাপ খেয়ে ঘরে চলে গেল।আরোহি শুধু আড় চোখে একবার তাকালো ইহানের যাওয়ার দিকে।

সব কিছু গুছিয়ে ঘরে এলো আরোহি।ইহান ঘরেই আছে। আজ আগে থেকেই সোফাতে শুয়ে পড়েছে সে।আরোহি চুপচাপ ওয়াশরুমে গেল।ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে ইহান উঠে বসল।আরোহিকে ঘরে ঢুকতে দেখে ইহান সোফায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়েছিল।না হলে হয়তো আবার সোফায় ঘুমাতো আরোহি।ইহান আস্তে করে উঠে রান্নাঘরে চলে গেল। তারপর একটি প্লেটে করে খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকল সে। আরোহি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টি টেবিলে খাবার দেখে ভ্রু কুচকে ফেলল।বুঝতে একটু ও সময় লাগল না যে খাবারটা ইহান এনেছে। কিছু না বলে খাটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল আরোহি তখনই ইহান শব্দ করে টেবিলে কাচের গ্লাসটি রাখল।হঠাৎ এমন শব্দে কেঁপে উঠল আরোহি।ইহানের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল ইহান সেই শরবতটুকু খেয়ে খালি গ্লাসটি টেবিলে রাখছে।

গ্লাসটি রেখেই হনহন করে বেলকনিতে চলে গেল ইহান।কোনো কথা বলল না আর না আরোহির দিকে তাকালো।আরোহি ও চুপচাপ টি টবিলের কাছে গিয়ে খাওয়া শুরু করল।হঠাৎ না চায়তে ও চোখের কোনে জমা হলো অশ্রু।মানুষ টা আজ ও তার রাগের কারন সহজেই ধরতে পারে।যে বিষয়টা অন্য কেউ বুঝতে পারেনা সেটা এক নিমিষেই বুঝে ফেলে।

বারান্দা থেকে হালকা উকি দেয় ইহান।আরোহিকে খেতে দেখে হালকা হাসে।অনেক কিছু বদলে গেলে ও রাগটা আগের মতোই আছে।ভাবতেই হাসিটা আর একটু চওড়া হয় ইহানের।ইহান তখনই বুঝে গেছিল সে শরবত খায় নি বলে আরোহির রাগ হয়েছে।আর সেই রাগ ঝেড়েছে রাতের খাবারের উপর

কত বদল ঘটেছে মেয়েটার মধ্যে। যে মেয়েটা আগে সমান্য কিছু হলেই বাড়ি মাথায় তুলতো সেই মেয়েটায় আজ কত শান্ত।যে মেয়েটার বাচ্চামো দেখে
ইহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেত সেই মেয়েটা আজ নিজে একটা বাচ্চাকে সামলায়।আচ্ছা এমনটা কি হওয়ার খুব দরকার ছিল? হয়তো ছিল! না

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আবার ও মনটা বিষাদে ভরে উঠল।আরোহি খাওয়া শেষ করে প্লেট বাইরে রেখে এসে চুপচাপ খাটে শুয়ে পড়ল।ইহান ও বেশ কিছুক্ষণ বেলকনিতে সময় কাটিয়ে ঘরে এসে সোফায় ঘুমিয়ে পড়ল।আজ ও দুজন একই ঘরে আছে। নিরবে একে ওপরকে বুঝতে পারছে কিন্তু মুখে কোনো শব্দ করছে না। মাঝ রাতে বড্ড অসস্তি হচ্ছে আরোহির। মনে হচ্ছে কেউ তাকে গভিরভাবে দেখছে।হঠাৎই জেগে গেল আরোহি কিন্তু কাউকেই দেখতে পেল না।ইহান সোফায় ঘুমাচ্ছে।সেদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল আরোহি।ঘুমালে ইহান এর সৌন্দর্য আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়।এটা আরোহির ধারণা। শুধু ধারনা না।এটা আরোহির বিশ্বাস। এভাবেই ইহানকে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেল আরোহি।

পাখির কিচিরমিচির শব্দে শুরু হলো একটি নতুন সকাল
আরোহি ইহান এর জীবনে।আয়ানকে আরশি বেগম কাছ ছাড়া করছেন না।যতক্ষণ পারছেন নিজের কাছে রাখছেন।আজ সকালে ও তার ব্যতিক্রম হলো না।তাই আরোহি সিদ্ধান্ত নিলো আজ সকালের নাস্তা সে নিজের হাতে বানাবে।বাড়ির সবাই আলু পরোটা পছন্দ করে তাই এটাই বানানোর সিদ্ধান্ত নিলো আরোহি। নিজের ভাবনা অনুযায়ি রান্নাঘরে আলু পরোটা বানাতে লাগলো আরোহি।

ডাইনিং এ বসে খবরের কাগজ পড়ছিল ইহান আর তার বাবা।তখনই রান্নাঘর থেকে মৃদু চিৎকার করে উঠল আরোহি।
আরোহির চিৎকার শুনে ইহান ছুটে রান্নাঘরে ঢুকল।ঢুকে দেখল,

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে