#তোমাতেই_পূর্নতা
#পর্বঃ৫
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা
ছাদে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা । গায়ে খয়েরী রঙের মসৃণ শাড়িটির আঁচল বাতাসে উড়ছে। তার সাথে তাল মিলিয়ে উড়ছে বর্ষার লম্বা কালো চুল । আকাশ পানে তাকিয়ে উদাস মনে কি যেনো ভাবছে । হঠাৎ করে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে রিয়ান বাসায় ফিরছে । “এক ঘন্টা আগে সন্ধ্যা নেমেছে । উনি তো এতো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে না , মনে মনে বলল বর্ষা ।
সকালে বর্ষার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসের কাজে মন বসেনি রিয়ানের। তাই সন্ধ্যায় ম্যানেজারকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বাসায় চলে আসলো । মনে মনে ভেবে রাখলো বাসায় গিয়ে বর্ষাকে শায়েস্তা করবে । বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিল তিন্নি । রিয়ানকে এই সময় বাসায় দেখে জিঙ্গেস করল,
” ভাইয়া তুমি এই সময় বাসায় কি করছো ?
” বাসায় আসতে হলে কি ঘড়ি দেখে আসতে হবে?
রিয়ানের রাগী কন্ঠে এই প্রশ্ন শুনে তিন্নি আমতা আমতা করে বলল,
” তুমি তো সচরাচর দেরী করে বাসায় ফিরো তাই বললাম।
” সর সামনে থেকে …
তিন্নিকে পাশ কাটিয়ে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলো রিয়ান। ড্রয়িং রুমে বর্ষাকে না দেখে মনে মনে ভাবলো বর্ষা রুমে আছে । তাই এখানে না থেকে রুমে চলে গেল। কিন্তু রুমে গিয়ে ও দেখে বর্ষা নেই । শরীরটা ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। তাই আগে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো । তারপর নিচে নেমে গেল।
নিচে নেমে দেখলো তিন্নি আর রিয়ানের আম্মু টিভি দেখছে । বর্ষাকে দেখতে না পেয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে রিয়ান । রিয়ানকে এদিক-ওদিক তাকাতে দেখে তিন্নি জিজ্ঞেস করল,
” কাউকে খুজছো ভাইয়া ?
তিন্নির প্রশ্নে বিব্রত হয়ে পড়ে রিয়ান । তারপর স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
” কাউকে না ।
ছাদ থেকে নিচে নেমে আসলো বর্ষা। নিচে এসে দেখলো রিয়ান ও তার আম্মু কি নিয়ে যেন আলোচনা করছে। বর্ষাকে চোখে পড়া মাএই রিয়ান বলল,
” এক কাপ কফি নিয়ে আসো ।
রিয়ানের সাথে বর্ষার শাশুড়ি থাকায় বর্ষা কিছু না বলে কফি করতে চলে গেল। কফি করা শেষ করে রিয়ানকে এক কাপ কফি দিল বর্ষা । বর্ষার হাত থেকে কফি নিয়ে চুমুক দিয়ে কফিটা ফেলে রিয়ান রাগী কন্ঠেবলল,
” এটা কোনো কফি ? যাও গিয়ে আরেক বার কফি নিয়ে আসো ।
কফি দিয়ে সোফায় বসেছিল বর্ষা। হঠাৎ রিয়ানের রাগী কন্ঠে ভয়ে দাঁড়িয়ে গেল । বর্ষা তো এই প্রথম কফি বানায়নি এর আগেও বানিয়েছে । কফি তো কখনো খারাপ হয়নি । বর্ষার ভাবনার মাঝে রিয়ান আবারও বলে উঠলো,
” কি হলো কথা কানে যায় না ? বললাম না আরেক কাপ কফি বানাতে ।
বর্ষা মাথা নাড়িয়ে রিয়ানের হাত থেকে কফির কাপটা নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল । কফি তৈরি করে আবারও রিয়ানের সামনে ধরে বলল,
” এই নিন ।
রিয়ান বর্ষার হাত থেকে কফির কাপটা নিয়ে চুমুক দিয়ে ধমক দিয়ে আবারো বলল,
” এখন পর্যন্ত কফি বানাতে শিখনি … খালি সব সময় আজগুবি কথা বলতে পারো । আরেক কাপ কফি নিয়ে আসো ।
তিন্নি মনোযোগ সহকারে টিভি দেখছিল। বর্ষাকে প্রথমবার ধমক দেওয়াতে এতো মাথা ঘামায় নি কিন্তু আবারও যখন রিয়ান ধমক দিলো তখন বুঝতে পারলো রিয়ান ইচ্ছে করে এমন করছে । তিন্নি ও অনেক বার বর্ষার হাতের কফি খেয়েছে । কফি তো খারাপ হওয়ার কথা না ।
বর্ষা রিয়ানের জন্য আবার ও কফি নিয়ে এলো । রিয়ানও ধমক দিয়ে আবার কফি বানাতে পাঠালো । এমন করে পাঁচ- ছয় বার বর্ষাকে কফি আনতে পাঠালো । বর্ষা একবার রান্নাঘরে যাচ্ছে তো আরেকবার ড্রয়িং রুমে আসছে । এতো বার যাওয়া আসাতে বর্ষা ঘেমে একাকার হয়ে গেছে । বর্ষা বুঝতে পারছে রিয়ান ইচ্ছে করে বর্ষাকে নাজেহাল করতে যাচ্ছে ।
অন্য দিকে তিন্নি ভাই আর ভাবীর কান্ড দেখছে । বর্ষা এইবার খুব রেগে গেছে। বর্ষার মুখ দেখে তিন্নি স্পষ্ট বুঝতে পারছে । বর্ষা রিয়ানের ধমক খাচ্ছে আর রেগে যাচ্ছে কিন্তু কিছু করতে পারছে না । তা দেখে তিন্নির প্রচুর হাসি পাচ্ছে । কিন্তু এই মুহূর্তে হাসা মানে বর্ষার ক্রোধের শিকার হওয়া তাই নিজের হাসিটাকে হজম করতে হচ্ছে।
রিয়ান আবারও বর্ষাকে কফি বানাতে পাঠালো। বর্ষা কফি নিয়ে আসার পর রিয়ানকে দিলো । রিয়ান কফির কাপে চুমুক দিয়ে যখন কিছু বলতে যাবে তখন রিয়ানের আম্মু রিয়ানকে ধমক দিয়ে বলল,
” রিয়ান অনেক হয়েছে। কি শুরু করেছিস তুই ? মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখ, মেয়েটা ঘেমে একাকার হয়ে গেছে । এখন যদি বলেছিস কফি ভালো হয়নি তাহলে তোর খবর আছে ।
আম্মুর কথায় রিয়ান বর্ষার দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি বর্ষা ঘেমে একাকার হয়ে গেছে । তা দেখে রিয়ানের খুব আনন্দ লাগছে। এইবার কফিটা খেয়ে মনে মনে বলল,,,” কফি তো ভালোই বানায় ”
রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছে । আর বর্ষা সবাইকে পরিবেশন করছে । বর্ষা ইচ্ছে করে রিয়ানের জন্য আলাদা বাটিতে তরকারি নিয়ে এসেছে । তরকারির মধ্যে ইচ্ছে করে অনেক লবণ আর মরিচ মিশিয়ে দিয়েছে । রিয়ান খাবার মুখে দিতেই মুখ থেকে ফেলে দিয়ে বলল,
” এই জঘন্য খাবার রান্না করেছে কে ?
রিয়ানের প্রশ্নে তিন্নি বলল,
” জঘন্য কেন বলছো ভাইয়া ? রান্না তো আম্মু করেছে ?
” খাবারের মধ্যে এতো লবণ আর মরিচ কেন ?
” আমরা ও তো খাচ্ছি। লবণ আর মরিচের পরিমাণ ঠিকই তো আছে ।
রিয়ান এবার বর্ষার দিকে তাকালো । বর্ষার দিকে তাকাতেই বর্ষা চোখ টিপ দিল । রিয়ান বুঝতে পারলো বর্ষা ইচ্ছে করে খাবারে লবণ আর মরিচ মিশিয়ে দিয়েছে। রিয়ান বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
” তুমি ইচ্ছে করে আমার খাবারে লবণ-মরিচ মিশিয়ে দিয়েছো ।
রিয়ানের কথায় বর্ষা ন্যাকা সুরে বলল,
” দেখেছেন আম্মু আপনার ছেলে তখন আমাকে দিয়ে ইচ্ছে করে এতো বার কফি বানালো আর এখন আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে ।
বর্ষার কথায় রিয়ানের আম্মু রিয়ানকে বলল,
” রিয়ান তুই কিন্তু বেশি বেশি করছিস।
রিয়ান কথা না বাড়িয়ে অল্প একটু খেয়ে চলে গেল রুমে। বর্ষা সব কিছু গুছিয়ে রুমে গিয়ে রিয়ানের সামনে গিয়ে বলল,
” এই যে শুনুন …. আপনি ইচ্ছে করে তখন আমার সাথে এমন করেছেন তাই না ? আমার সাথে একদম লাগতে আসবেন না এর ফল ভালো হবে না ।
#চলবে