#তোমাতেই_পূর্নতা
#পর্বঃ৪
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা
সকালে ঘুম থেকে উঠে রিয়ানের সামনে যায়নি বর্ষা । নাস্তা করে তিন্নিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো কলেজের উদ্দেশ্যে । কলেজের সামনে আসতেই সামনে এসে দাঁড়ালো রাতুল । বর্ষার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” বর্ষামনি কেমন আছো ?
রাতুল বর্ষাকে সবসময় বর্ষামনি বলেই ডাকে । তার নাকি শুধু বর্ষা বলতে ভালোলাগে না । রাতুল বর্ষার সিনিয়র । শ্যাম বর্ণের ছেলেটির স্নিগ্ধ মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক মেয়ে তার প্রেমে পড়েছে কিন্তু রাতুল চেয়েও বর্ষাকে তার প্রতি আকর্ষিত করতে পারেনি । বর্ষা রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ভালো, আপনি ?
” ভালো …….
রাতুল আরো কিছু বলবে তার আগে পিছন থেকে রাতুলের ফ্রেন্ড ডাক দিলো । রাতুল বর্ষাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল আর বর্ষা চলে গেল ক্লাসে।
ক্লাস শেষে বাসায় ফিরছে বর্ষা আর তিন্নি । রাস্তায় কোনো রিকশা না পেয়ে দু’জনে হেঁটে বাসায় ফিরছে । হেঁটে যেতে যেতে তিন্নি বর্ষাকে বলে উঠলো,
” ভাইয়া তোকে মেনে নেয় নি ?
তিন্নির প্রশ্নে বর্ষা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল,
” তোর ভাইয়া এতো সহজে মেনে নিবে বলে তোর মনে হয় ?
বর্ষার কথায় পিঠে আর কোনো কথা বলল না তিন্নি । কারন সে জানে রিয়ান বর্ষাকে মেনে নিবে না । তাই আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ হাঁটতে লাগলো ।
রাতে সোফায় বসে টিভি দেখছে বর্ষা, তিন্নি আর তিন্নির আম্মু । টিভি দেখার মধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠলো। বর্ষা দরজা খুলে দেখে রিয়ান ক্লান্ত শরীরে দাঁড়িয়ে আছে । বর্ষাকে সামনে দেখে নাক-মুখ কুঁচকে তাকালো রিয়ান । বর্ষা সামনে থেকে সরে যেতেই বাসার ভেতরে ঢুকলো । রাতে একসাথে বসেই সবাই খাবার খেলো ।
খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে দেখে রিয়ান ল্যাপটপে কাজ করছে । রুমে বর্ষার উপস্থিতি টের পেয়ে আড় চোখে বর্ষার দিকে তাকালো রিয়ান । আজকে রিয়ানের ঝগড়া করার কোনো ইচ্ছা নেই ।তাই বর্ষাকে কিছু না বলে নিজের কাজ করছে । বর্ষা বিছানায় গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো আর মনে মনে ভাবতে লাগলো ,
” আজকে রিয়ান ভাইয়া কিছু বলল না কেন ? এত ভালো হলো কিভাবে ? যাক বাবা লোকটার লোকটার তাহলে একটু বুদ্ধি হয়েছে।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বর্ষা ঘুমিয়ে পড়লো ।
রিয়ান কাজ শেষ করে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো বর্ষা তার বিছানায় ঘুমিয়ে আছে । কিন্তু এখানে নীলার ঘুমিয়ে থাকার কথা ছিল । বর্ষাকে এখানে দেখে সহ্য করতে পারছে না রিয়ান ।
বর্ষা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে রিয়ান সোফায় ঘুমিয়ে আছে । বর্ষা রিয়ানকে এক পলক দেখে নিচে চলে গেল । নাস্তা তৈরি করার পর রিয়ানের আম্মু বর্ষাকে বলল রিয়ানকে ডেকে নিয়ে যেতে । বর্ষা না চাইতে ও রিয়ানকে ডাকতে আসলো । রুমে এসে দেখে রিয়ান গোসল করে এসেছে । কোমরে শুধু একটা তাওয়াল জড়ানো । বর্ষা কে দেখে রিয়ানের মাথায় মূহুর্তের মধ্যে আগুন জ্বলে উঠলো। বর্ষার হাত চেপে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে রাগী কন্ঠে বলল,
” কারো রুমে আসতে হলে যে নক করে আসতে হয় জানোনা তুমি ? তোমার মধ্যে কি এতটুকু কমন সেন্স নেই ?
রিয়ানকে এভাবে দেখে বর্ষার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না । রিয়ানকে কিছু বলতে গিয়ে ও বলতে পারছে না । বর্ষাকে চুপ থাকতে দেখে রিয়ানের আরো মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে । বর্ষাকে ধমক দিয়ে আবারও বলল,
” কথা বলছো না কেন ?
বর্ষা রিয়ানের ধমক খেয়ে তুতলিয়ে বলল,
” আ. আমি … আমি তো
” কি আমি আমি করছো…
বর্ষা মনে মনে সাহস নিয়ে বলল,
” আমি তো আপনাকে নাস্তা করতে ডাকতে আসছিলাম ।
” তোমাকে বলেছি না আমার আসে পাশে আসবে না। আমার নাস্তা করতে ইচ্ছে হলে আমি নাস্তা করবো ইচ্ছে না করলে করবো না । তুমি বলার কে ?
রিয়ানকে এতো কাছে থেকে বর্ষার অস্বস্তি হচ্ছে । রিয়ানকে একটা ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে কোমরে হাত রেখে বলল,
” শুনেন আপনাকে নাস্তা করার জন্য ডাকতে আসতে আমার ঠেকা পড়ে নাই । শুধুমাত্র আম্মু বলছে তাই ডাকতে এসেছি । আমি খাবেন নাকি না খেয়ে মরে যাবেন তাতে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই ।
কথাগুলো এক শ্বাসে বলে ফেলল বর্ষা । রিয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই হাত দিয়ে থামিয়ে আবারও বলল,
” একটু আগে কি বললেন আমার কমন সেন্স নেই । এই রুমটা এখন আপনার একার না আমারও । আমার রুমে আমি কখন , কিভাবে আসবো এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছে । আপনার কোনো কমন সেন্স নেই? রুমের মধ্যে এভাবে অবতার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার আমাকে আসছেন ধমক দিতে । হুহ ।
” তুমি কিন্তু ..
” আপনার আজাইরা ধমক খাওয়ার টাইম নেই আমার কাছে । সরুন তো সামনে থেকে ।
বর্ষা রিয়ানকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল । রিয়ান রাগে নিজে নিজে বলল,
” একটু আগে আমার সামনে তুতলিয়ে কথা বলে এখন আমাকেই কথা শুনিয়ে চলে গেল । এই রিয়ানকে ..এর ফল ভালো হবে না বর্ষা।
রিয়ান রাগে পাশে থাকা ফুলদানিটা ভেঙে ফেলল । তারপর অফিসের ড্রেস পড়ে না খেয়েই বাসা থেকে বেরিয়ে গেল ।
#চলবে
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।