তোমাকে চাই Part:-15+16

0
1893

তোমাকে চাই Part:-15+16
#আরবি_আরভী
#Part_15 (Season 2)

আমি উনাকে দেখে মনের খুশিতে একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।।এখানে কেউ না থাকলে নির্গাত এখন উনাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরতাম।। আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে পাশের আপুটা মুচকি হেসে আমাকে জিজ্ঞাসা করে বসেন,,,
-উনি কি তোমার জামাই নাকি,,
-হুম্মম,, আপনে কিভাবে বুঝলেন? (মৃদু হেসে)
-অনেক আদর করে তোমাকে,,,
আমি তাকে কোনো জবাব না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে জাস্ট একটা হাসি দিলাম।।

গন্তব্যে পৌঁছে আমি পুরাই অবাক।। মেঘলা আকাশে অনেক সুন্দর একটা বালুচর তার এক পাশে একটা ছোট্ট নদীর সাথে লেপ্টে আছে অসংখ্য সবুজ ঘাস তার মধ্যে চতুর্দিকে খোলা চার কোণায় চারটি বাঁশ ও উপরে কিছু খড়কুটো দিয়ে উঁচু করে বানানো একটা ঘর।।।বসে খোলা বাতাসে আড্ডা দেয়ার জন্য বেস উপযোগী ঘড়টা।। তাছাড়া কোথাও কোন বসতি নেই ।।খুবই নিরব একটা জায়গা।। ওঁই দূরে রাস্তার ধারে একটা ছোট ফ্লেক্সিলডের একটা দোকান।। তাও আবার আকাশের পরিস্থিতির কারনে শাটার নামিয়ে রেখেছে।।

নদীর পানি প্রবল বাতাসে নিজের মধ্যে ঢেউয়ের খেলা খেলছে।।। এমন অপুর্ব দৃশ্যের দিকে যখন আমি হা করে তাকিয়ে আছি তখনই উনি আমার ধ্যান ধারণা ভঙ্গ করে হাত দিয়ে আমার মুখমন্ডল বন্ধ করে বলে উঠলেন,,,
-মাছি ঢুকে যাবে তো,,,
আমি উনার দিকে বিস্মিতভাবে তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম,,
-এই জায়গার খোঁজ আপনে কোথায় পেলেন,,, অনেক সুন্দর,,,,
উনি আমার হাতটা ধরে হাটতে হাটতে বলতে লাগলেন,,
-এখানে সব ফ্রেন্ডসরা মিলে প্রায় এসে ওই যে দেখছিস ফাঁকা একটা ঘর ওখানে বসে আড্ডা দেই,,,,জায়গাটা আমার খুব পছন্দের তাই তোকে এখানে এনেছি।।

বালিতে কিছুক্ষণ উনার হাতটা ধরে হাটার পর সামান্য ঘাস মাখানো একটা জায়গায় দুজন মিলে বসে পরেছি।।।যেহেতু উনার গানের গলা খুবই ভালো তাই মেঘলাভরা পরিবেশে আমার অনুরোধে উনি গলায় সুর ধরতে বাধ্য হন,,,

Dil ibhadat kar rahahe dharkane meri sun tujhko me karlo hasi lagi hai eyhi dhun______zindegi ki shakh se lo kuch hasin pal me chun tujhko me karlo hasi lagi hai eyhi dhun___
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


গানের শেষে আমি উনার কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে উনার কাধে মাথাটা রেখে গেইম খেলতে খেলতে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকলাম,,,,
-আচ্ছা রেহান আমি কিন্তু আপনার বিয়েতে নাঁচবো ঠিক আছে,,,
-বলিস কি নিজের বিয়েতে নিজে নাঁচবি??,,,,(হতভম্ব হয়ে)
-অবশ্যই,,,,এখন এটাই চলে বোঝেছেন,,
-একদম না এসব নাঁচ, মডেলিং বাদ দিয়ে এখন থেকেই হিজাব বোরকা পড়ার অভ্যস্ত করে ফেল তাহলে পরবর্তীতে আর কষ্ট হবে না,,,,
-মানে কি,,,,আমি কি বিয়ের পর সবসময় পর্দা করবো নাকি,,,আমার এত সুন্দর ওয়েস্টার্ন ড্রেস গুলো আর কখনো পড়তে পারবো না,,,(রাগান্বিত হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে)
-বিয়ের পরে না বিয়ের আগেও,,,,,(অন্যদিকে তাকিয়ে চুইংগাম খেতে খেতে)
– অসম্ভব আমি পারবো না,,
-ও তাই আপনে পারবেন না,,, তাহলে কোনো দিনও আমার সাথে বের হবেন না,, আপনে যাকে দেখানোর ইচ্ছা তাকে দেখান তবে এসব ড্রেস পড়ে আমার সামনে কখনো আসবেন না,,,মনে থাকবে,,,
-মানে কি,,,আচ্ছা ঠিক আছে শুধু হিজাব,,,(করুন দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে)
-না,,বাহিরে বের হলে আপাদমস্তক ঢাকতেই হবে,,
-হোয়াট!!! ইম্পসিবল,,,,
মুখের কথা মুখেই আছে তার মধ্যে প্রবল ঝড় শুরু হয়ে গেলে রেহান আমাকে উঠিয়ে দিয়ে সেই ফাঁকা ঘরের দিকে দৌড় দিতে চাইলে আমি নিজের হাতটা ছাড়িয়ে উনাকে থামিয়ে দিয়ে বলতে উঠলাম ,,,,
-রেহান প্লিজ আমি সবসময় পর্দা করে চলবো আর নাঁচ, ফ্যাশন করবো না আমার জাস্ট একটা শর্ত মানেন প্লিজ,,,,
-নিসা তারাতারি বল বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি,,,
-আমার অনেক দিনের সপ্ন আপনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজে Tum hi ho গানটায় ডান্স করবো,,,
-তুই কি পাগল হয়ে গেছিস নিসা,,,, এখন না বললি আর কখনো নাচতে চাইবিনা৷
-প্লিজ প্লিজ,,,,,আর কখনো বলবো না,,
– আজকে না নিসা আমার শরীরটা ভালো লাগছে না অন্যদিন ওকে,,
-প্লিজ রেহান আর বাহানা করবেন না,, আমি কিছু চাইলেই আপনে এমন করেন।।আর কখনো কথা বলবেন না আমার সাথে,, আপনে চলে যান আমি এই বৃষ্টিতেই দাড়িয়ে থাকবো (মুখটা গম্ভীর করে)

তারপর উনি নিরউপায় হয়ে আমার শর্তে রাজি হন এবং কাছে এসে হেডফোন টা বের করে আমার ও উনার কানে সাউন্ড তার দুটো দিয়ে Tum hi ho মোবাইলে গানটা চালিয়ে আমার কাছে দাড়িয়ে থাকেন।। আমি তো মহা খুশি।।

একনাগাড়ে প্রায় ৩০-৪০ মিনিট বৃষ্টিতে ভেজার পর হঠাৎ উনার মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে ফোনটা অফ হয়ে যায়।।ওদিকে ডেভিলটার চোখগুলোও একদম লাল লাল হয়ে গেছে।।আহারে আমার ডেভিলটা কিছু বলতেও পারছে না আবার সহ্যও করতে পারছে না।। বেচারা।।আমারো অনেক ঠান্ডা লাগছে।। আর বৃষ্টিতে না ভেজাই ভালো।। তাই আর দেরি না করে দৌড়ে দুজন এসে সেই চতুর্দিক ফাঁকা ঘরটিতে আশ্রয় নিলাম।। চারপাশ খোলা হওয়ায় মাটির মেঝটা পুরো ভিজে গেছে।। ঠান্ডায় আমি কাঁপছি।।ভেতরের সব ভেজা।।আমার এরুপ অবস্থা দেখে উনি নেশাময় কন্ঠে বলে উঠলেন,,,
-বোরকাটা খুলে পানি ছাড়িয়ে নে,, ভেজা কাপড়ে জ্বর আসবে,,
আমি উবার কথার ভঙ্গি শুনে কিছুটা অবাক হয়েছি।। এমন মনে হচ্ছে যেন উনি এখুনি অজ্ঞান হয়ে পরে যাবেন।।

যাইহোক বাঁশগুলোতে কোনো রকমে কাপড় ছড়ানোর একটা ব্যবস্থা আছে তাই আমি আর দুবার না ভেবে উনাকে বলে উঠলাম,,,,,
-ঠিক আছে কিন্তু আমি বোরকা খোলার সময় থেকে যতক্ষণ না আমি আবার এটা পড়ছি আপনে পশ্চিম দিকে আর আমি পূর্ব দিকে মুখ করে থাকবো,,,কোনো ভাবেই আমার দিকে তাকানোর চেষ্টা করবেন না,,,, ওকে?,,, (ভেতরের স্কুল ড্রেস বৃষ্টির পানিতে শরীরের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে আছে,,, শয়তান যাতে ভর না করে তাই এই ব্যবস্থা আর কি)
-এই আমি পশ্চিম দিকে হলাম এক পলকের জন্যেও আমি তাকাবো না,,,, এবার খুশি,,
-হুম্মম,,,,(মুচকি হেসে)

কথাগুলো বলে আমি পাশ ফিরে বোরকাসব আমার ক্রস বেল, বেল ওড়না বাঁশগুলোতে সুন্দর করে ছড়িয়ে দিলাম।।বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।।চুলগুলো খুলে পানি ছাড়াতে ছাড়াতে ভাবছি বৃষ্টি শেষ হলেই বাড়ি চলে যাবো আর ভালো লাগছে না।। এখন আমার যা অবস্থা হয়ে আছে তাতে যেকোনো ছেলেই আকৃষ্ট হয়ে যাবে।। তা ভেবে হঠাৎ আমার মনে একটা অজানা ভয় কাজ করতে লাগল।। রেহান আবার আমার দিকে তাকিয়ে আছে না তো।। রেহান তো এরকম না।।তবুও ছেলে মানুষের কোনো বিশ্বাস নেই।।হতেও তো পারে উনি আমার দিকে লোভী দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনের ভেতর নানা ভাসনা করছেন।।ভালোবাসি তা সত্য কিন্তু তা বলে বিয়ের আগে এইসব করবো ছিঃ।।

ব্যপারটা পরিষ্কার না করে আমি কোনো ভাবেই শান্তি পাচ্ছি না বলে পেছনে ফিরে সন্দেহের দৃষ্টিতে আড়চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।।উনি উনার টি-শার্টটা খুলে মাঠিতে পরে থাকা উনার ব্যাগটার উপর রেখে পশ্চিম দিকে হয়ে দাড়িয়ে আছেন।।ঘারে R এর ভেতর N লেটারের একটা ছোট টেটু আকাঁ।।
বডিবিল্ড করা দেহটা থেকে টপ টপ করে গড়িয়ে পানি পরছে।। যা আমাকে প্রতি মুহূর্তে পাগল করে দিচ্ছে।।আমি হা করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।। উনি ব্যাগ থেকে কিছু নেয়ার জন্য সামনে ফিরে আমাকে পলকহীনভাবে উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধমকের সুরে বলে উঠলেন,,,,,,
-কি রে পাশ ফিরলি কেন,,,

উনার ধমকের সুরে আমার ভাবনার ঘোর কাটলে আমি দ্রুত পূর্ব দিকে হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলেতে শুরু করি,,,
-এ এমনি,,,,
-তোকে না বলেছিলাম শুধু বোরকাটা খুলতে এত কিছু খুলেছিস কেন নির্লজ্জ মেয়ে।। কোনো ছেলে যদি তোকে দেখে তাহলে কি ভাব্বে জানিস___থাক আর বললাম না,,,,
-ঠান্ডা লাগছিল তাই খুলেছি আর আমাকে দেখবে কি করে এখানে তো কোনো ছেলে নেই,,,,,,
-হোয়াট !!! তাহলে আমি কি???,,,(ভীষণ রেগে)
-ও আচ্ছা,,,,ওকে আমি আবার পড়ে নিচ্ছি,,,
-ঠান্ডা লাগলে পরে পড়িস,,,
একবার বলছে পড় আবার বলছে পরে পড়িস ।।এসব কি!!।। যতসব খরুচ ডেভিল রাব্বিস একটা।।

বেশ কিছুক্ষন পর আমি আপন মনে বৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ করছি।।এমন সময় মনে হলো যেন পেছন থেকে রেহান কোমল সুরে আসতে আসতে করে আমাকে ডাকছেন।।প্রথমে ভেবেছি হয়তো ভুলভাল শুনছি।। পরে ভাবলাম একটু দেখি যদি সত্যি ডেকে থাকেন।। তাই আর দেরি না করে পেছনে ফিরে দেখি রেহান বাঁশের সাথে এলিয়ে থেকে অজ্ঞান হয়ে মাঠিতে ঢলে পড়ে যাচ্ছেন।। আমি কোনোরকমে ওড়নাটা গায়ে দিয়ে দৌড়ে উনাকে নিজের বুকের সাথে খুব জোরে জড়িয়ে ধরে উনার মাথায় হাত দিতেই আমি হতভম্ব হয়ে গেছি।। জ্বরে উনার গা আগুনের মতো জ্বলছে।।। বৃষ্টি থামার তো কোন লক্ষণই দেখছি না।। এদিকে রেহানের মোবাইলেও চার্জে অভাবে বন্ধ হয়ে আছে ।।প্রচুর ভয় করছে।। কি করবো আমি এখন ?,,,,,,,,,,,,চলবে
#তোমাকে_চাই
#আরবী_আরভী
বাস্তব জীবনকাহিনী

#Part_16 (Season 2)

আমি কোনোরকমে ওড়নাটা গায়ে দিয়ে দৌড়ে উনাকে নিজের বুকের সাথে খুব জোরে জড়িয়ে ধরে উনার মাথায় হাত দিতেই আমি হতভম্ব হয়ে গেছি।। জ্বরে উনার গা আগুনের মতো জ্বলছে।।। বৃষ্টি থামার তো কোন লক্ষণই দেখছি না।। এদিকে রেহানের মোবাইলেও চার্জের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে ।।প্রচুর ভয় করছে।।এমনতা অবস্থায় কি করবো কিছুই মাথায় আসছে না।। জ্বরে আগুনের মতো জ্বলছে উনার গা ।।কোনো ভারী চাদর দিয়ে না ঢাকলে যেন এখুনি অজ্ঞান হয়ে যাবেন।।কিন্তু এখানে এই মুহূর্তে চাদর পাওয়া একপ্রকার অসম্ভব।। শেষমেশ আর উপায় না পেয়ে নিজের শরীরের সব টুকু জোর দিয়ে আমি উনাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে দু ফোঁটা জল ফেলে বৃষ্টি থামা অব্দি অপেক্ষা করতে লাগলাম।।

কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি পুরোপুরি থেমে গেলে আমি উনাকে আস্তে করে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে দৌড়ে সেই রাস্তার এক পাশে থাকা ফ্লেক্সিলডের দোকানটার দিকে রওনা হলাম।। সবার আগে মোবাইলটা চার্জ করিয়ে উনার ফ্রেন্ড দের কাছে সাহায্য চাবো।। সেখানে গেলে কিছু না কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।।

দৌড়ে ফ্লেক্সিলডের দোকানটায় এসে যখন একনাগাড়ে হাঁপাছি তখন দোকানের ছেলেটা ভেবাচেকা খেয়ে বলতে শুরু করে,,,,
-কি হয়েছে আপু,,
-ভাইয়া আপনার কাছে মোবাইল চার্জ করার কোনো ব্যবস্থা আছে।।আসলে একটা বিপদে পড়ে গেছি ,,,(করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে)
-না কারেন্ট নেই,,, আপনে চাইলে আমার ফোনটা দিয়ে কল করতে পারেন,,,
-আমার আম্মুর নাম্বার ছাড়া অন্য কারো নাম্বার মুখস্থ জানা নেই আর আম্মুকে কল করা এখন অসম্ভব,,
-অওও তাহলে হবে না,,,
-ভাইয়া আপনের পাওয়ার ব্যাংক টা একটু দেন আমার জাস্ট কল করার চার্জ টুকু হলেই হবে,,,,
-ফোন দেন,,
-ফোন তো সাথে নেই আমাকে একটু প্লিজ ধার দেন আমি ওই ঘরটায় আছি ফিরার সময় আপনার মাল আপনার হাতে দিয়ে যাবো প্রমিস,,,,,(বিনয়ী সুরে)
-আচ্ছা দিয়ে যাবেন কিন্তু,,
-ওকে থ্যাংকস ভাইয়া,,,,
কথাটা বলে চোখের পানি মুছে দৌড়ে রেহানের কাছে এসে উনার ব্যাগ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে পাওয়ার ব্যাংকয়ে কানেক্ট করে ফোনটা অন করে দেখি ফোন লক করা। যা দেখে আমার পায়ের রক্ত মাথায় চলে আসে।। তারপর রেহানের দিকে রাগান্বিত ভাবে তাকিয়ে থেকে উনাকে ইচ্ছে মতো ঝাড়ি দিতে লাগলাম।। ব্যাটাকে আমি এখন সাহায্য করবো কিভাবে!!! কি এই ফোনের পাসওয়ার্ড যা আমি কোনোভাবেই কোনদিন উন্মোচন করতে পারি না।। তবুও নানান কৌশলে শেষপর্যন্ত যখন আমি ব্যর্থ তখন ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও উনাকে একনাগাড়ে ডাকতে থাকি।।কিছুক্ষণ পর উনি আদমরা অবস্থায় কোনোরকমে চোখের পাপড়িগুলো খুলে আমার দিকে তাকালে আমি রাগান্বিত হয়ে উনাকে জিজ্ঞাসা করতে থাকি,,,
-কি পাসওয়ার্ড দিয়েছেন খুলতেই পারছি না।।সেই কখন থেকে ট্রাই করছি জানেন।। যত্তসব ফালতু,, ,,,
উনি অপষ্ট কন্ঠে আস্তে করে বলে উঠেন,,,,
-আই লাভ ইউ নিসা,,,,
কথাটা শোনা মাত্র আমার রাগের মাত্রা দিগুন হয়ে যায়।।উনি তো দেখছি আমার পেরেশানি দেখে বেস মজা নিচ্ছেন।। তাই ভীষণ রেগে উনাকে ধমক দিয়ে আবার বলতে শুরু করলাম,,,,
-এখন এইসব বলার সময় আপনার।। আমার ভাবনার আপনার কাছে কোন দাম নেই,,
উনি কিছুই বলছেন না উনার শেষ উত্তরটা দিয়ে উনি আবার চোখগুলো বন্ধ করে ফেলেন।। হয়তো কানে সব শুনছেন কিন্তু মুখে কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই।।,,,,,

যাইহোক কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে আমি নিরবে উনার মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁন্না করছি।।।জানিতো উনি আমাকে অনেক ভালবাসেন কিন্তু এই সময় এই কথা বলার,,,,,,,,আচ্ছা উনি আমাকে পাসওয়ার্ডের কথাই বলছিলেন না তো মনের ভেতর এমন একটা প্রশ্ন জাগতে আমি তারাহুরা করে আবার ফোনটা হাতে নিয়ে পাসোয়ার্ডের অপশনে,,,,
I Love You Nisha,,, লেখতে না লেখতে লকটা খুলে গেল।।যা দেখে আমি পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে থঁ মেরে গেছি।।অনুশোচনা হচ্ছে অনেক।।মানুষটা সত্যি আমাকে ভালবাসে।। আর খুশিও লাগছে এত্ত দিনের চেষ্টা আজ সফল হলো।।

তারপর আর দেরি না করে ঝটপট উনার কন্টাক্ট লিস্টে গিয়ে যার নাম্বারটা সামনে পেয়েছি তাকে কল দিতেই,,,,
-হ্যাঁ বল দোস্ত,,,
-হ্যালো আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া,,,
-হ্যালো হ্যালো রেহান শুনতে পাচ্ছিস,,(নেটওয়ার্ক প্রব্লেম)
-ভাইয়া আমি নিসা,,
-অওও আচ্ছা আসসালামুয়ালাইকুম ভাবী কি অবস্থা,,
-ভাইয়া রেহান অনেক অসুস্থ প্লিজ আমাদের হেল্প করুন,,,
-মানে আচ্ছা আমরা এখুনি রেহানের বাসায় আসছি আংটিকে বলেন চিন্তা না করতে,,,
-আরে না আমি আর উনি একটা জায়গায় ঘুরতে এসেছিলাম ওখানে আছি আমরা,,,
-জায়গাটার নাম বলেন তারাতারি,,,
-জানি না কিন্তু বিশাল বালুচর এটা আপনারা নাকি প্রায় জায়গাটায় আড্ডা দিতে আসেন,,
-বালুচর আবার কি,,,,,, ওও আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি ওকে আমরা এখুনি আসছি,,,

তারপর উনার বন্ধুরা এসে আমাদেরকে উদ্ধার করে রেহানকে হসপিটাল নিয়ে গেলে আমি স্কুলের কাছে নেমে শেষমেশ হেটে বাড়িতে ফিরতে না ফিরতে আম্মু আতংকের সাথে রেহানের হসপিটালে থাকার কথা আমাকে জানালেন আর দুঃখ প্রকাশ করতে লাগলেন তার সাথে সাথে আমি ভিজে যাওয়ার রহস্য উদঘাটন করতে চাইলেন আমি তাকে কিছু একটা বাহানা দিয়ে সেখান থেকে কেটে পড়ি।। আমি মরি আমার জ্বালায়।।

মনটা খুব খারাপ রেহান ভালো নেই এখনও হসপিটাল থেকে আসেননি।। চাচী চাচ্চু মিঠি আপুরা আম্মু সবাই গেছে উনাকে দেখতে।। বাড়ির একমাত্র বড় ছেলে বলে কথা।। অবশ্য আমাকেও আম্মু অনেকবার বলেছেন তাদের সাথে যেতে কিন্তু আমার সেখানে দাড়াবারো সাহস নেই।। উনার এই অবস্থার জন্য যে আমিই দায়ী।। সকালে যদি ঘুরতে যাওয়ার জন্য এত্ত জোরাজুরি না করতাম তাহলে হয়তে এমন কিছু আর হতো না।। সব দোষ আমার।।

যাইহোক সন্ধ্যার দিকে উনারা সবাই বাড়ি ফিরলে আমি দৌড়ে রেহানদের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখি রেহান বিছানায় শুয়ে আছেন আর এদিকে চাচী কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলছেন,,,
-সেই কাল রাত থেকে ছেলেটার খুব জ্বর বারন করেছিলাম আজকে কোথাও যাওয়া জন্য,,,
আমি চুপটি করে উনার খাটের পাশে দাড়িয়ে উনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।। আজ আমার জন্যই এত্ত কিছু।।চাচীকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।।

(এতদিন দেরি করার জন্য আমি দুখিঃত কথামতো এবার থেকে গল্পটা নিয়মিত পোষ্ট করবো ইনশাআল্লাহ,,)

গভীর রাতে সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই।। উনি কেমন আছেন আমি কিছুই জানি না।। ফোনটা হাতে নিয়ে একবার ভাবছি এটা কল করি আরেকবার বলছি না থাক এত রাতে শরীর খারাপ কি দরকার।। আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে রেহান নিজে থেকে কল দিলে আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ উনার নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে থেকে রিসিভ করতে রাগি কন্ঠে উনাকে জারি মেরে বলে উঠলাম,,,
-কাল রাত থেকে শরীর খারাপ ছিল তাহলে আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার দরকার কি ছিল বলে দিলেই পারতেন আপনার শরীর ভালো না এত ডং এত আলগা পিরিতি আমার সাথে দেখাবেন না বুজেছেন যত্তসব,,,
কিন্তু ওপাশ থেকে উনি একদম শান্ত কন্ঠে আস্তে আস্তে বলে উঠলেন,,,
-Happy birthday to you Nisha
-মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেছে আজকে কি ২৬ জুন যে আমার জন্মদিন হবে,,,
-হুম্মম আজকেই আপনার জন্মদিন,, যাইহোক I am so sorry আপনার জন্মদিনটা খারাপ করে দেয়ার জন্য,,
-আজকে আমার জন্মদিন আমারই মনে নেই,,,, ওয়েট ওয়েট আপনে কিভাবে জানলেন যে আমার জন্মদিন ২৬ তারিকে,,,
-অনেক আগে চাচীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তখন জেনেছি,,,
তার কথাগুলো শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি বেচারা আমার জন্য কষ্ট করলো আর আমি তাকে হাজারটা কথা শুনিয়ে দিলাম।।আমার নিরবতা দেখে উনি আবার বলতে শুরু করলেন,,
-কি ম্যাডাম কিছু বলুন,,,
-আপনে ঔষধ খেয়েছেন,,,,(টপিক বদলানোর ধান্দা)
-আমার ঔষধ তো আপনি,,,
-ওও তাই নাকি ওকে তারাতারি ঘুমিয়ে পরেন না হয়ে শরীর আরও খারাপ করবে,,
-নিসা নিসা প্লিজ একটা কথা শুন,,,
-জি বলেন,,
-আমাকে বিয়ে করবি ?
-হুম্মম,,
-সত্যি?
-সত্যি,,,
-ওকে বায় ওমমমমমমমমমমমমমমা,,
ফ্লাইং কিস করে উনি কলটা কেটে দিলে আমিও আর দেরি না করে ঘুমিয়ে পরলাম।।

পরেরদিন দুপুর বেলা স্কুল থেকে ফিরার পথে হাটছি হঠাৎ অসহ্যকর বাইকের হর্নে পেছনে তাকালে দেখি মহোদয় হাজির।।কালো জ্যাকেট পড়ে ভিতরে সাদা ট-শার্টে বেস হ্যান্ডসাম লাগছে ডেভিলটাকে।।কিন্তু দেখো ছেলের কান্ড জ্বর নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।। আমি উনার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থেকে বলেতে লাগলাম,,,
-কি ব্যাপার আপনার না ১০৩ জ্বর তাহলে এখানে কি করছেন,,,,
-জ্বর কোনো ব্যাপার না জান তারাতারি বাইকে ওঠো,,,
-না আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না। পরে আপনার শরীর খারাপ করলে আমার বিপদ হবে,,,,
-ধুরু উঠতো বাইক থেকে নেমে এলে কিন্তু তোর খবর আছে,,,
উনার কথায় রাজি না হয়ে অনেক বার থাপ্পড় খেয়েছি এবার আর খেতে চাই না তাই আর কথা না বারিয়ে চলে গেলাম উনার সাথে দূর অজানাতে।।

প্রথমে দুজন একটা শপিং মলে গিয়ে অনেক ড্রেস কিনলাম উনি স্পেশালি আমাকে জন্মদিন উপলক্ষে একটা লাল ড্রেস কিনে দিলেন।। সেখানে আবার পারফিউমের স্টোর আছে তাই ওখানে গিয়ে আমি উনাকে সবসময় ব্যবহারের জন্য একটা পারফিউম সিলেক্ট করে দিয়েছি।। তারপর গেলাম রেস্টুরেন্টে সেখানে গিয়ে দুজন অনেক খাবার খেয়েছি মজা করেছি পিক ক্লিক করেছি আরও কতো কি।। কিন্তু হঠাৎ আমার সকল আনন্দে পানি ফেলে পেটে চিনচিন ব্যথা অনুভব শুরু হলো পাশে রেহান বসে জোস খাচ্ছেন আর ফোন চালাছেন।।তার মধ্যে মনে পরলো হায় হায় আমার না ডেড এসে পরেছে কিন্তু ব্যাগেতো কিছু আনিনি কথাগুলো ভাবা মাত্রই ইতিমধ্যে নিজের নিচটায় ভিজে যাওয়া অনুভুতিও স্পষ্ট।। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না হায় আল্লাহ!! আমি এখানেই পিরিয়ড হয়ে গেছি নাকি এখন কি হবে,,,,?,,,,
,চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে