তোমাকে চাই পর্ব-০৫

0
1356

#তোমাকে_চাই💖
#কলমে_অনন্যা(অনু)
#পর্ব_০৫

(০৮)
আজকে তন্ময়দের বাড়িতে পুজো।সকাল সকাল তরুদের যেতে বলেছে।তরুও সকাল সকাল স্নান সেরে একটা লাল জামদানি শাড়ি পরেছে সাথে কানে বড়ো ঝুমকো হাতে দুটো বালা।ওর মা জোড় করে পরিয়ে দিয়েছে।চোখে কাজল,হাল্কা লিপস্টিক আর চুলটা ছেড়ে দিয়েছে।যদিও শাড়িটা ওর মা পরিয়ে দিয়েছে।শাড়িতে তরুকে সব সময় খুব সুন্দর লাগে আর আজকে দারুন লাগছে।কিছুক্ষণ পরে সবাই মিলে বেরিয়ে পরলো তন্ময়দের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

তরুর একটু নার্ভাস লাগছে।প্রথম তন্ময়দের বাড়ি যাচ্ছে তার ওপর কারো সাথে সেরকম আলাপ নেই।ওদের বিয়ের কথা প্রায় সবাই জানে আর আজকে বিয়ের ডেট ফাইনাল হবে।কিছু আত্মীয়স্বজন আসবে তন্ময়দের বাড়ি তরুকে দেখবে তার জন্য তরু আরোও বেশি নার্ভাস।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই তন্ময়দের বাড়ি পৌঁছে গেল।ভেতরে ঢুকতেই তন্ময়ের বাবা তরুদের বললেন,”আরে আসুন আসুন।এতো দেরি করলেন কেন ?বলুন তো।আমরা সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।”

“সরি সরি!মেয়েদের একটু টাইম লাগে রেডি হতে তা তো জানেন!”,অনিমেশ বাবু হাল্কা হেসে বললেন।

“ওমনি আমাদের দোষ হয়ে গেল?”,হাল্কা রাগ দেখিয়ে বললেন অঞ্জলি দেবী।

“এই তো চলে এসেছে!আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি”, তরুদের দেখতে পেয়ে রেখা দেবী এগিয়ে এসে বললেন।

“বউমনি কেমন আছো?”,তন্নী তরুকে জরিয়ে ধরে বলল।

“ভালো আছি,তুমি কেমন আছো?”,তরু মুচকি হেসে বলল।

“এতোক্ষন ভালো ছিলাম না তোমাকে দেখে ভালো হয়ে গেছি”,তন্নী বলল।

“তাই বুঝি?”,তরু হেসে বলল।

“চলো পুজোর ওখানে।কিছুক্ষণ পরেই পুজো শুরু হবে।তন্নী তুই গিয়ে তন্ময়কে ডেকে আনতো”,রেখা দেবী বললেন।

“মা বউমণিকেও নিয়ে যাই?”,তন্নী বলল।

তন্নীর কথায় তরু বেশ লজ্জা পেল কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।

“যা এতে বলার কি আছে?”,রেখা দেবী হেসে বললেন।

“চলো বউমণি”,তন্নী খুশি হয়ে তরুর হাত ধরে বলল।

তরু কি করবে বুঝতে পারছে না।তাই ওর মা বাবার দিকে তাকালো ওনারা চোখের ইশারায় যেতে বললো।তরু আর তন্নী তন্ময়ের ঘরের দিকে গেল।

“আচ্ছা তন্নী আজকের পুজোটা কোন কিছুর উপলক্ষে ?”,তন্ময়ের রুমের দিকে যেতে যেতে তরু জিজ্ঞেস করল।

“হ্যাঁ আজকে আমার ঠাম্মি আর দাদাই এর বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে পুজো”,তন্নী বলল।

“ওওওও,প্রতিবছর হয় তাই না?”, তরু বলল।

“হ্যাঁ,এইটা দাদার ঘর।চলো ভেতরে”,তন্ময়ের রুমের সামনে এসে বলল তন্নী।

তন্নী “দাভাই দাভাই” ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকল।

“কি হয়েছে ডাকছিস কেন?”,তন্ময় রেডি হয়ে হাতে ঘড়ি পরতে পরতে বলল। কে কে ঘরে ঢুকেছে তা দেখেইনি।

“নীচে ডাকছে।পুজো শুরু হবে।তাড়াতাড়ি আয়”, তাড়া দিয়ে বলল তন্নী।

“হুম তুই….”,তন্ময় সামনে তাকিয়ে আর কিছু বলতে পারলো না।ওর লালপরীর দিকে তাকিয়ে আছে।

তন্ময় চুপ করায় তন্নী কিছু না বলেই চুপ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।ও সব জানে তন্ময় যে আগে থেকেই তরুকে পছন্দ করে।তাই তো ইচ্ছে করেই তরুকে সঙ্গে নিয়ে তন্ময় এর ঘরে এসেছে।

তন্ময় হা করে তরুর দিকে তাকিয়ে থাকায় তরুর খুব অস্বস্তি হচ্ছে পাশে তাকিয়ে তন্নীকে খুঁজতে গেলে দেখে তন্নী নেই।তাই তন্ময়কে উদ্দেশ্যে করে বলে,”আপনি আসুন আমি নীচে যাচ্ছি।”
তরু কথাটা বলেই চলে যেতে নেয়।

“এতো তাড়া কিসের?এখনি পুজো শুরু হবে না”,তন তরুর হাত ধরে আটকে দেয়।

“কি করছেন?ছাড়ুন!আমি নীচে যাব”,হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল তরু।

“আমি আবার কি করলাম?আমি তো কিছুই করিনি।আর আমাকে দেখলে তুমি পালিয়ে যাও কেন বলোতো?”,ইনোসেন্ট ভাব করে বলল তন্ময়।

“আ…আমি কোথায় পালিয়ে যাই? এখন নীচে না গেলে সবাই খারাপ ভাববে!তাই তো যেতে চাইছি”,আমতা আমতা করে বলল তরু।

“কেউ কিছু ভাববে না”,তন্ময় তরুর সামনে এসে বলল।

“কি বলছেন কি?তন্নী নিচে চলে গেছে আর আমি এতক্ষন এ ঘরে কি করছি?এসব প্রশ্ন উঠবে”,তরু বলল।

“ওহো তুমি চুপ করতো।আমাকে ভালো করে দেখতে দাও এখন।আর তন্নী সব সামলে নেবে তুমি চিন্তা করো না তো”,তরুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল তন্ময়।

“কি দেখবেন আপনি?”,তরু মিনমিন করে বলল।

“তোমাকে!তুমি জানো আজকে তোমাকে ঠিক কতোটা সুন্দর লাগছে?চোখ ফেরানো মুশকিল”,তন্ময় তরুর একদম কাছে এসে বলল।

তন্ময়ের কথায় তরুর খুব লজ্জা লাগছে তাই মাথা নীচু করে আছে।

“আজকে তো আমাদের বিয়ের ডেট ফাইনাল হবে”,তন্ময় তরুর থেকে দুরে সরে বলল।

“হুম”,তরু বলল।

“তাহলে তুমি মিস তরু থেকে মিসেস তরু হচ্ছো”, তন্ময় মুচকি হেসে বলল।

তরু কিছু বলল না শুধু হাসল।

“চলো নীচে যাই”,তন্ময় নিজেই এবার নিচে যাওয়ার কথা বলল।

তরু যেন এতোক্ষন এটাই চাইছিল তাই তন্ময়কে কিছু না বলেই নীচে চলে গেল আর তন্ময় তরুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল।

ওরা নীচে যেতেই পুজো শুরু হলো।তারপরে ওদের বিয়ের ডেট ফাইনাল হলো।দু সপ্তাহ পরে বিয়ে তার আগে আশীর্বাদ। সবাই খুব খুশি আর তরু খুব এক্সাইটেড।

পুজো শেষ হতেই সবাই গল্পে মেতে উঠল।তন্ময়দের রিলেটিভরা যারা এসেছেন তাঁরা তরুকে দেখে খুব প্রশংসা করলেন।

পুজো শুরু হওয়া থেকে সারাটা সময় তন্ময় তরুকে আড়চোখে দেখে গেছে।এটা অবশ্য তরুর চোখ এড়ায়নি।সবাই যার যার মতো গল্প করছে হঠাৎ তরুর চোখ গেল দরজার দিকে আর সঙ্গে সঙ্গে তরুর মুখটা ভার হয়ে গেল। তরুর দৃষ্টি অনুসরন করে তন্ময় দরজার দিকে তাকালো দেখল দিয়া ঢুকছে।

“কেমন আছো সবাই?”,দিয়া তন্ময়ের পাশে এসে দাঁড়াল।

“ভালো ছিলাম এতোক্ষন!এখন কেমন থাকবো জানি না”,তন্নী মুখ বেকিয়ে বলল।তন্নীও দিয়াকে একদম পছন্দ নয়।

“মানে?”,তন্নীর কথায় ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল দিয়া।

“কিছু না।তা তোমার খবর কি?”,তন্নী বলল।

“আমার আর কি খবর থাকবে বলো?”,দিয়া তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল।

“কেন কোন খবর থাকবে না?দাভাই এর দু সপ্তাহ পরে বিয়ে তা তুমি কবে বিয়ে করছো?”,তন্নী হেসে বলল।

“বিয়ের ডেট ফাইনাল হয়ে গেল?”,অবাক হয়ে বলল দিয়া।

“হ্যাঁ আজকেই তো হলো”,তন্নী বলল।

“বাহ ভালো! কংগ্রাচুলেশন তন্ময় অ্যান্ড তরী”,মুখ ভার করে বলল দিয়া।

“থ্যাংক ইউ”,তরু মুচকি হেসে বলল।

“তন্নী আমিও বিয়ে করবো সেদিন যেদিন তন্ময়ের মতো কাউকে পাবো”,দিয়া তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল।

“আমার দিভাই এর মতো আর কেউ নেই গো তাই তুমি দাভাই এর মতো কাউকে পাবে না”,তন্নী বলল।

“দেখাই যাক না কে পায় আর কে না পায়!”,দিয়া বাঁকা হেসে বলল।

তন্ময় কোন কথা বলছে না।সেদিনের ঘটনার পর দিয়ার বাবার সাথে সব ডিল কেনসেল করে দেয়।তবে দুটো ডিল ফাইলান হয়ে যাওয়ায় কেনসেল করতে পারেনি তাই তো দিয়া আজকে তন্ময়দের বাড়িতে আসার সাহস পেয়েছে।

“তন্নী আমি রুমে যাচ্ছি।মা খোঁজ করলে বলে দিস”,তন্ময় তরুর দিকে তাকিয়ে রুমে চলে গেল।

“না না এই দিয়া কিছু তো একটা করবে তার জন্যই তো এখানে এসেছে!আমাকে খুব সাবধান হতে হবে।আমার বিসনেস এর কেউ ক্ষতি করতে চায়।অনেক ইনফরমেশন লিক করেছে আর যে করেছে সে আমার অফিসের কেউ।তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করতে হবে কে সে।আর এতে দিয়া জড়িত কিনা তা জানতেই হবে”,তন্ময় নিজের ঘরে পায়চারি করছে আর ভাবছে।

কিছুক্ষণ পরে তন্ময়কে খেতে ডাকল।তরুদের যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে তাই তন্নী ওদের বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে ।

“আবার কবে দেখা হবে বউমণি?”,মুখ ভার করে বলল তন্নী।

“তুমি যখন চাইবে”,তরু মুচকি হেসে বলল।

“সত্যিই?”,একগাল হেসে বলল তন্নী।

“হুম!তোমার যখন দেখা করতে ইচ্ছে করবে তুমি তখন আমাদের বাড়ি চলে যেও বা আমাকে কল করো তাহলেই দেখা করে নেব”,তরু হেসে বলল।

“ঠিক আছে।আচ্ছা যাও দাভাই এর সাথে দেখা করে এসো।এখনি তো বেরোবে”,তন্নী হেসে বল।)

” হুম”, তরু গেল তন্ময়ের ঘরে।

“আসতে পারি?”,তন্ময়ের ঘরের দরজা খোলাই ছিল তাই তরু দরজাটা কিছুটা খুলে বলল।

তন্ময় সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তরু দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।

“হ্যাঁ এসো না পারমিশন নেওয়ার কি আছে?”,তন্ময় তরুকে দেখে এগিয়ে গেল।

“না আসলে বলছিলাম আমরা বের হচ্ছি”আমতা আমতা করে বলল তরু।

“এতো তাড়াতাড়ি?”,কিছুটা জোড়ে বলল তন্ময়।

“হুম”,ছোট করে জবাব দিল তরু।

“আচ্ছা শোনো আমি কল করলে রিসিভ করবে আর এর মধ্যে আমি তোমাকে নিয়ে বের হবো”,তন্ময় বলল।

“কোথায় যাবেন?”,অবাক হয়ে বলল তরু।

“শপিং করতে”,তন্ময় বলল।

“সে তো বাড়ির সবাই মিলেও করতে পারি”,তরু বলল।

“আমি বিয়ের শপিং এর কথা বলছি না!বিয়ের শপিং বাড়ির সবাই মিলেই করবো”,তন্ময় বলল।

“তাহলে কিসের শপিং?”,তরু ভ্রু কুঁচকে বলল।

“পরে জানতে পারবে”,তন্ময় হাল্কা হেসে বলল।

“বউমণি চলো ডাকছে”,দরজার ওপর পাশ থেকেই বলল তন্নী।

“হুম চলো,আসছি”,তরু তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল।

এরপর তরুরা তন্ময়দের বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।

#চলবে…..?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে