#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??
??পর্ব-৩৫& অন্তিম পর্ব??
.
?
.
প্রায় আধঘন্টা হলো তিথিরা নিজেদের দেশে ল্যান্ড করেছে।তিথি প্রথমে নিজের বাসায় যাবে তারপর সেখান থেকে ওদের বাসায় যাবে। সন্ধে ছটায় সবাই বাসায় পৌঁছালো। বাসায় প্রবেশ করতেই দেখল বাসার পরিবেশটা কিরকম থমথমে হয়ে আছে। মামা সোফার উপর বসে মাথায় হাত দিয়ে কিছু একটা নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন আর তার ঠিক পাশে মামি বসা।তিথিরা যে এসেছে সেই বিষয়ে তাদের কোন খেয়ালই নেই।
-:মামা,,মামি কি হয়েছে তোমাদের??ওমন করে বসে আছো কেন??
তিথির কোথায় তাদের ধ্যান ভাঙল। তিথীকে দেখে যেন ভূত দেখার মতো চমকে উঠল দুজনে,, হয়তো এই সময় তারা তিথি কি আশা করেনি। এই বিষয়টা তিথির কাছে খুব অদ্ভুত লাগল। তাই সেই মামার সামনে গিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করল-;
-:কি হয়েছে মামা তোমার??
-:না না কই কিছু হয়নি তো আমাদের।(হকচকিয়ে বলে উঠলেন)
মামার কথা শুনে তিথি বুঝতে পারলো কোন কিছু তিনি তার কাছ থেকে গোপন করার চেষ্টা করছেন। আবির অনেক বার জিজ্ঞাসা করেছি কিন্তু কেউ কোন কথার উত্তর দিচ্ছে না তাই দেখে তিথির খুব রাগ হল।সে মামার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওনার এক হাত নিজের মাথার উপর রেখে বলে উঠলো-;
-:মামা আমার কসম বলো কি হয়েছে তোমাদের??
তিথির কথায় যেন নজরুল সাহেবের অনেক কষ্ট করে লুকিয়ে রাখা অশ্রু গুলো টপ টপ করে পড়তে লাগলো। বাসায় উপস্থিত প্রত্যেকে নজরুল সাহেবের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে এমনকি তিথি নিজেও বিস্ময় চোখ নিয়ে তার মামার দিকে তাকিয়ে আছে।পাশে তাকিয়ে দেখল তার মামীর চোখ দিয়েও সমান গতিতে অশ্রুধারা নিঃসরণ হচ্ছে। নজরুল সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলতে আরম্ভ করলেন-;
-:পরশুদিন রাতে একজন আমাকে ফোন করে ফোনটা রিসিভ করতে সে জানায় যে সে থাইল্যান্ড থেকে বলছে।অত রাতে থাইল্যান্ড থেকে আমাকে ফোন করছে এই জিনিসটা ভেবে প্রথমে আমি অবাক হয়েছিলাম কিন্তু তার পরবর্তী কথাগুলো শুনে আমি নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম।তিনি জানান যে আতিফ পুলিশের গুলিত নিহত হয়েছে।
তিথি এতক্ষন নজরুল সাহেবের কথাগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনছিল কিন্তু ওনার লাস্টের কথাটা শুনে তার মনে হচ্ছে যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল।আবিরও নজরুল সাহেবের কথায় অবাক এর চূড়ান্ত পৌঁছে গিয়েছে। সে জড়িয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো-;
-: কিন্তু বাবা এটা কি করে সম্ভব??আর তুমি আমাদের এগুলো আগে কেন বলনি ফোন করে??
-: আমি জানাতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তোদের দুদিন পরেই এখানে চলে আসার কথা ছিল তাই আমি আর তোদেরকে জানায়নি।
-: কিন্তু এগুলো কি করে হলো বাবা!!ফুপা তো দেশের মধ্যেই ছিল তাহলে উনি বাইরেই বা গেলেন কখন। আর কি করেই বা উনি পুলিশের কাছে ধরা পড়লেন??
নিলয় আর নিশি এতক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে কেবল শুনছিল,, কিন্তু কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল তা তাদের দুজনেরই বোধগম্য হচ্ছিল না। কিন্তু আবিরের বলা ফুপা শব্দ টি শুনে দুজনের কারণে বুঝতে বাকি রইলো না যে আতিফ বলে ভদ্রলোকটি আর কেউ না তিথির বাবা।নিলয় তিথির দিকে তাকিয়ে দেখল তিথি এখনো তার মামার দিকে স্থির চাহনিতে চেয়ে আছে শুধু তফাৎ এখন তার চোখ দুটো অশ্রুসিক্ত যেকোনো মুহূর্তে গড়িয়ে পড়বে তার গাল বেয়ে।
নজরুল সাহেব আবার বলতে শুরু করলেন-;
-: আমরা তিথিকে এখানে আনার তিন বছরের মাথায় সে এই দেশ ছেড়ে ছিল তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে।নিজের কালো দুনিয়ায় কালো কারবার আর দ্বিতীয় স্ত্রী সংসার এই দুই নিয়ে বেশ ভালই সুখের দিন কাটাচ্ছিল।কিন্তু কিছু বছরের মধ্যেই ব্যবসায় লোকসান শুরু হয়,,নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীর একাউন্ট একসময় অনেক টাকা জমিয়ে রেখেছিলেন। তাই তখন তার স্ত্রীর কাছে সেই টাকার দাবি করে কিন্তু তিনি তা দিতে অস্বীকার করে।
আতিফ তাকে মারার হুমকি দিলে সে আতিফের নামে পুলিশে কেস করে। কিছুদিনের মধ্যেই আতিফ নিজের কালো ব্যবসা,,প্রথম স্ত্রীর খুনের এবং দ্বিতীয় স্ত্রী কে মারার চেষ্টার দায়ে আতিফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু সেই মহিলাটি এটা বলিনি যে সেও আতিফ এর সাথে মিলে আমার বোনকে হত্যা করেছিল। আদালতে বিচার হলে তাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়।
সাত বছর পর জেল থেকে বেরিয়ে সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী সন্ধান করতে থাকে। পরে জানতে পারে তার স্ত্রী তার প্রপার্টি বিক্রি করে সুখে শান্তিতে জীবন কাটাচ্ছে,, এটা আতিফ কিছুতেই মেনে নিতে পারিনি।তাই সে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পনা করে। সব প্লান সে ঠিক করে করলেও খুন করার দিন তাকে খুন করতে বাড়ির চাকর দেখে ফেলে এবং পুলিশকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। পুলিশ সেখানে এসে আতিফকে ধরার চেষ্টা করলে সে পুলিশের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করে তাই পুলিশ বাধ্য হয়ে তাকে এনকাউন্টার করে।
মরে যাওয়ার কিছু মুহূর্ত আগে সে তার সমস্ত দোষ স্বীকার করে এবং তিথিকে একটিবার দেখার অনুরোধ করে কিন্তু সময় খুব কম থাকায় তা পূরণ করা সম্ভব নয় তাই জন্য সে সেখানকার পুলিশের কাছে অনুরোধ করে যে তার মৃত্যুর খবর অন্তত দেশে তার পরিবারের কাছে জানাতে।মরে যাবার পর থাইল্যান্ডের পুলিশ আতিফকে দাফান করে দিয়ে আমাদের ইনফর্ম করে।
এইটুকুনি বলে নজরুল সাহেব একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন।এতক্ষন তিথি তার মামার কথাগুলো একধ্যানে শুনছিল,,এবার সে উঠে দাঁড়ালো এবং আস্তে আস্তে করে উপরে নিজের রুমের দিকে চলে গেল।রুমে ঢুকে নিজের দরজাটা বন্ধ করে দিল।নিলয় যেতে নিলে আবির তাকে থামিয়ে বলে ওঠে-;
-:ওকে কিছুক্ষন একা থাকতে দাও।
তিথি সারা সন্ধ্যে দরজা খুলল না,,, সেই রাত দশটায় তিথি তার রুমের দরজা খুলল।নিলয় সবে ভাবছিল এবার সে তিথিকে ডাকতে যাবে কিন্তু তার আগেই তিথি দরজা খুলে নিচে নেমে এলো।সবাই এতক্ষন নিচের সোফায় বসে ছিল,, তিথিকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে পরল। কিন্তু তিথি সবাইকে অবাক করে দিয়ে ডাইনিংয়ে গিয়ে বসে পড়লো এবং মামি কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল-;
-: মামি আমার খুব খিদে পেয়েছে তাড়াতাড়ি খেতে দাও দেখি। তোমার হাতের রান্না আমি অনেকদিন মিস করেছি।
তিথি এমন স্বাভাবিক কথাবার্তা বলতে দেখে সবাই অনেক অবাক হলো।তিথি সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-: কি হলো তোমাদের কি ব্যান্ডপার্টি ভাড়া করে ডাকতে হবে?? তাড়াতাড়ি সবাই এসো তো আমার খুব খিদে পেয়েছে।।
তিথিকে এমন স্বাভাবিক দেখে সবাই একটু নিশ্চিন্ত হল। সবাই দের সাথে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই কথাবাত্রা বলেই নিজের খাওয়া কমপ্লিট করল তিথি।
রাত দুটো নিজের পাশে তিথি কে না পেয়ে নিলয় কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লো। হঠাৎ তার নজরে গেল ব্যালকনির দরজা খোলা। বিছানা ছেড়ে উঠে সেখানে গিয়ে দেখল তিথি এক ধ্যানে দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিজের কাঁধে কারোর গরম নিঃশ্বাস এবং কোমরে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে তিথির বুঝতে অসুবিধা হল না যে মানুষটি কে!!
-:পাখি!!
নিলয়ের মায়াভরা আওয়াজে তিথি কেপে উঠলো। নিলয় আবার বলতে শুরু করল-;
-: তুমি যত অন্যদের কাছ থেকে নিজের কষ্ট লুকিয়ে থাকো না কেন আমার কাছ থেকে তা পারবে না??
ব্যাস নিলয়ের একটা কথাই যেন তিথির মনের বরফ গলানোর জন্য যথেষ্ট।তিথি হুট করে সামনে ফিরে নিলয়কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। তিথিকে এমন কান্না করতে দেখে নিলয় তিথি কে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তারপর তিথির মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।বেশ কিছুক্ষণ পরে তিথি কান্না থামিয়ে নিলয়ের বুকে চুপটি করে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে থাকালো।নিলয় তিথিকে চুপ করে থাকতে দেখে বলে উঠলো-;
-:বাবার জন্যে কষ্ট হচ্ছে??
তিথি মাথা নাড়িয়ে না বলল। নিলয় এতে কিছুটা অবাক হলো,, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করল-;
-:তাহলে??
তিথি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো-;
-:তোমাকে এটা বলবো না যে বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি আবার এটাও বলব না যে খুব খুশিও হয়েছি।যতই হোক তিনি আমার বাবা ছিলেন,,,যখন মামার কাছ থেকে বাবার মৃত্যুসংবাদটা শুনি তখন প্রথমে খুব কষ্ট হয়েছিল যা বলার বাহিরে। কিন্তু যখন শুনি যে তিনিই আমার মার উনি তখন সেই কষ্টটা তীব্রতা অনেক কমে গেল।জানো ছোটবেলায় মামার মুখে শুনেছিলাম আমার মার খুনের পিছনে কোন না কোনভাবে আমার বাবা জরিত,,, মামার কথায় পুরোপুরি আমার বিশ্বাস ছিল।কারন পরিবার বলতে বলো আর বাবা-মা বলতেই বলো আমি আমার মামা মামিকেই বুঝেছি।তারাই আমার সব তারাই আমার পৃথিবী। আর নিজের আপন ভাইয়া ও মনে হয় আমাকে এতোটা ভালোবাসা দিত না যতটা আমাকে আমার আবির ভাইয়া দিয়েছে।
তাই যে মানুষটা কোনদিনই আমার সাথে যোগাযোগ রাখেনি তার চেয়ে আমি আমার মামীকে বিশ্বাস করব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোথাও যেন মনের এক কোনে বাবার প্রতি সামান্য বিশ্বাস জমানো ছিল।কিন্তু আজকের পর থেকে সেই বিশ্বাস ও আমার সারা জীবনের মতো মাটিতে মিশে গেল। আমি কাঁদছি বাবার জন্য না আমি কাঁদছি আমার মার জন্যে। কত কষ্ট পেতে হয়েছে আমার মার,,, নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে ওই বাজে লোকটাকে।কিন্তু উনি কি করলেন প্রপার্টির জন্য আমার মাকে মেরে ফেললেন।ওনাকে আমার বাবা ভাবতেও ঘৃণা করছে।
কথাগুলো বলতে বলতে তিথি আবার কেঁদে উঠলো। তারপর নিজের কান্না তো আমি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-: তুমি আমায় কথা তুমি শুধু এবার থেকে তোমার বিজনেস ছাড়া কোন দিকে তাকাবো না। তুমি কোন কাল দুনিয়ার সাথে নিজের সম্পর্কে জড়াবে না।অসহায় মানুষের সাহায্য করতে চাইলে একজন বিজনেসম্যান হিসেবে সাহায্য করো মাফিয়া হিসাবে নয়। আমি চাইনা তোমাকে হারাতে নিলয়।
এই বলে আবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। নিলয় তিথি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো-;
-:শশশশশ্ চুপ আর নয়।আর কাঁদবে না তুমি।আজ আমি তোমাকে স্পর্শ করে কথা দিচ্ছি যে আমি কালো দুনিয়া থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে নেব। এই আমি তোমাকে কথা দিলাম।এবার চলো অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।
এই বলে নিলয় তিথি কে নিয়ে রুমে চলে গেল। পরের দিন সকাল সকাল তিথিকে সাথে নিয়ে নিলয় নিজের বাসায় চলে এলো।
.
.
?
.
.
দেখতে দেখতে চার মাস কেটে গেল।এই চার মাসে তিথি এবং নিলয়ের মধ্যেকার ভালোবাসা আরও গাঢ় হয়েছে। তিথিকে দেওয়া কথা অনুযায়ী নিলয় কালো দুনিয়া থেকে নিজের নাম চিরতরে মুছে ফেলেছে। আর একজন বিজনেসম্যান এর পরিচয় সে গরিব মানুষদের সাহায্য করে।দিনগুলো বেশ ভালভাবেই কেটে যাচ্ছিল।কিন্তু আবির এবং নিশি সম্পর্কের তিক্ততা যেন ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছিল। অনেক ভেবেচিন্তে আবির ডিসাইড করল যে সে কি করবে।
এদিকে তিথির শরীর বেশ কিছুদিন ধরে খারাপ যাচ্ছে।ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে না,,, জোর করে কিছু খেলেই বমি করে দিচ্ছে।নিলয় খুব চিন্তিত তিথি কে নিয়ে।আবিরকে ফোন করলো তাদের বাসায় আসার জন্য আর সাথে নিশিকে ও আনতে বলল।
দুপুরে আবির নিশিকে নিয়ে নিলয়দের বাসায় চলে এলো।দুপুরের খাওয়া দাওয়া পর্ব মিটিয়ে তারা সবাই মিলে কিছুক্ষণ গল্প করলো। বিকালে আবির তিথিকে চেকআপ করলো। নিলয় অধীর আগ্রহে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:এই যে তাড়াতাড়ি এক বালতি মিষ্টি নিয়ে আসুন।
নিলয় অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে। নিলয়ের এমন তাকানো দেখে আবির ফিক করে হেসে দিয়ে বলে উঠলো-;
-:আরে মশাই আমি মামা হতে যাচ্ছি!!আর তুমি আমাকে মিষ্টি খাওয়াবে না।
আবিরের কথা শুনে নিশি চিল্লিয়ে তিথিকে জড়িয়ে ধরল।নিলয় কি বলবে বুঝতেই পারছে না তার এখনও বিশ্বাস হতেই কষ্ট হচ্ছে।
আবিরের বাবা-মা ও ভিষন খুশি বাসায় নতুন মেহেমান আসার কথা শুনে।
রাতে নিলয় তিথি কে জরিয়ে ধরে বলে উঠলো-;
-: থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাংক ইউ সো মাচ তিথু পাখি আমাকে এত বড়ো একটা উপহার দেওয়ার জন্য।
তিথিও নিলয়কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো-;
-:তোমাকে ও অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে মা হওয়ার অনুভুতি উপলব্দি করানোর জন্য।
-:হুম।আই লাভ ইউ পাখি।
-:আই লাভ ইউ টু নিলয়।
রাতে নিশি শুয়ে আছে চুপ করে। কিছুক্ষণ পর আবির নিশির পাশে এসে শুলো।আবিরের উপস্থিতি টের পেয়ে নিশি চুপ করে নিজের চোখ বন্ধ করে নিল।কারণ সে জানে প্রতিদিন তার ঘুমানোর পর আবির তাকে তার বুকের মাঝে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমায় আর তার ঘুম ভাঙ্গার আগে আবার আগের মতোন শুইয়ে দেয়।
কিন্তু আজ প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেল ও আবিরের কোনো পাত্তা না পেয়ে ঘুরে তাকাতেই দেখলো যে আবির ঘুমিয়ে পড়েছে। এটা দেখে নিশি খুব কষ্ট পেল অজান্তেই চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। মনে মনে ঠিক করল আর নয় অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে আবিরকে এবার তাকে কালকেই তার মনের কথা খুলে বলবে।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠে নিশি আবিরকে তার পাশে না পেয়ে কিছুটা অবাক হয়ে যায়। কারণ এত তাড়াতাড়ি আবির হসপিটালে যাই না। পরে ভাবলো হয়তো কোনো ইম্পরট্যান্ট কাজ থাকায় তাকে যেতে হয়েছে। তাই সে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেল।
সারাদিন পার হয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেলো তবুও আবিরের কোন পাত্তাই নেই।এবার নিশির খুব চিন্তা হতে লাগলো আবিরকে নিয়ে। রাত ঠিক এগারোটায় আবির ঘরে এলো। আবির কে দেখে নিশি তার কাছে গিয়ে প্রচন্ড রেগে বলতে লাগল-;
-: কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?? কতবার ফোন করেছি ফোন ধরছিলেন না কেন??
-: বিজি ছিলাম।
-: কিসের ব্যস্ত ছিলেন আপনি এতো??? যে আমার ফোন ধরার প্রয়োজন বোধ করেননি??
-: একটা কাজে আটকে পড়েছিলাম।
-: কি কাজে??
আবির তার ব্যাট থেকে একটা কাগজ বের করে নিশিকে দিয়ে বলল-;
-:এ নাও ধরো।
-:কি আছে এতে??(অবাক হয়ে প্রশ্ন করল)
-: খুলে দেখো।
আবিরের কথা শুনে নিশি পেপার টা খুলতেই অবাক হয়ে গেল অজান্তেই তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো টপটপ করে।এটা সে ঠিক দেখছে?? নাকি.. নিশির ভাবনায় ছেদ ফেলে আবির বলে উঠলো-;
-: ডিভোর্স পেপারে আমি সাইন করে দিয়েছি এবার তুমি সাইন করলে হয়ে যাবে।
-: মানে কি??(কম্পিত গলায় নিশি বলে উঠলো)
-: মানে খুবই সিম্পল। জোর করে কখনোই কোনো সম্পর্ক তৈরি করা যায় না। সেটা আমি আগে না বুঝলেও এখন বুঝতে পেরেছি। তোমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছি,,, এটা আমার করা উচিত ছিল না।তোমাকে আর কষ্ট দিতে চাইনা তাই মিথ্যা সম্পর্ক থেকে তোমাকে চিরজীবনের মতো মুক্তি দিতে চাই।
আবিরের কথা শেষ হতে না হতে নিশি ঠাস করে আবিরের গালে চড় মারলো। আবির অবাক হয়ে নিশির দিকে তাকাতেই অটোমেটিকলি সে ভয় পেয়ে গেল। নিশি রাগের থর থর করে কাঁপছে। আবির কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিশি আবিরের কলার ধরে বলে উঠলো-;
-: কি ভেবেছেন টা কি আমাকে?? আপনার হাতের পুতুল!! এসব কথা আমাকে বিয়ে করার আগে আপনার মনে হয়নি?? বিয়ে করার পর আপনার এসব কথা মাথায় আসছে?? ও বুঝতে পেরেছি অন্য কোন মেয়েকে আপনার মনে ধরেছে তাই আমাকে আর ভালো লাগছে না কি তাইনা??(দাঁতে দাঁত চেপে)
-: এসব কি ধরনের কথা কি বলছো তুমি কিছুই বুঝতে পারছিনা আমি??
-: এখন তো বুঝতে পারবেন না আপনি?? সব সময় আমাকে আপনি কষ্ট দিয়ে এসেছেন। আমার কষ্টের কোন মূল্য আপনার কাছে নেই। ঠিক আছে থাকবো না আমি চলে যাব আপনাকে ছেড়ে।
এই বলে নিশি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। নিশি কে এমন হঠাৎ কাঁদতে দেখে আবির ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। নিশির কাছে এগিয়ে আসতে নিশি বলে উঠলো-;
-:এই এই দূরে থাকুন। একদম আসবেন না আমার ধারে কাছে। আমি আজ এক্ষুনি আপনার বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।
এই বলে নিশি যেই যেতে নেব অমনি হবে নিশিকে টান মেরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল।
-: ছাড়ুন আমাকে একদম স্পর্শ করবেন না আমায়। আপনি একটা খুব খারাপ মানুষ।
-: বললেই হলো নাকি আমি আমার বউকে ছুঁয়েছি এতে কার কী??
-: আমি আপনার বৌ না?? আমি যদি আপনার বউ হতাম তাহলে আপনি কখনোই আমাকে ডিভোর্স পেপার টা দিতেন না।
-: বললেই হলো তোমাকে আমি ডিভোর্স দিব।।
নিশি অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-: আমি নিজের চোখে দেখেছি ওটা ডিভোর্স পেপার।
-: হ্যাঁ ওটা ডিভোর্স পেপার ই বাট ওইটা নকল। তোমার রিঅ্যাকশন দেখার জন্য নকল পেপার টা আমি এনেছিলাম।
-:কি!! এত বড় প্রতারণা আমার সাথে!! আপনি খুব খারাপ খুব পচা একটা লোক।
এই বলে নিশি আবিরকে মারতে লাগলো। আবির নিশির হাত ধরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,,,নিশি ছটফট করত লাগলো তা দেখে আবির বলে উঠলো-;
-: খুব ভালোবাসি তোমাকে আমি। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।একটা শেষ সুযোগ দিয়ে দেখো। তোমাকে খুব ভালোবাসবো,, নিজের জীবনের থেকে বেশি।মৃত্যুর…
আবিরের মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে,,নিশি ছল ছল চোখে বলে উঠল-;
-: এই ধরনের কথা প্লিজ মুখে আনবেন না।খুব ভালোবাসি আমি আপনাকে। কিন্তু সবকিছু এইভাবে হয়ে যাওয়ায় মানতে পারছিলাম না,, তাই আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।ক্ষমা করে দিন।
নিশির কথা শুনে আবির নিশিকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে-;
-: আই লাভ ইউ সো মাচ নিশি।আমার এই জীবনে তোমাকে আমার বড্ড প্রয়োজন।
-: আই লাভ ইউ টু।
-:নিশি!!
-: হুম
-:মে আই…
আবিরের কথা বুঝতে পেরে নিশি লজ্জায় লাল হয়ে আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। নিশির অনুমতি পেয়ে আবির মুচকি হেসে নিশিকে কোলে তুলে নিল তারপর…..
তারপর কিছুই হয়নি তবে রাত বাড়ার সাথে সাথে আরও একটা ভালোবাসা পূর্ণতা পেল।
.
.
?
.
.
চার বছর পর…..
আজ নিলয়দের বাসায় বিরাট আয়োজন কারণ আজ নিলয় আর তিথির একমাত্র ছেলে আকাশের তিন বছরের জন্মদিন।তাই সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত আয়োজনে।কিছুক্ষণ পর আবির নিশি তাদের দুই বছরের মেয়ে নিধি কে নিয়ে চলে এলো।নিধি কে দেখে আকাশ দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
-:উফ্ ভাইয়া ছালো আমাকে,,আগছে আমাল।
আকাশ নিধি কে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো-;
-:চল আমাল বন্ধুদেল সাথে তোল পলিচয় কলিয়ে দি।
-:চল।
আবিরের বাবা-মা ও অনেক আগে চলে এসেছে।একটু পর কেক কাটার অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠান শেষে আকাশ জেদ ধরেছে যে সে নানুবাড়ি যাবে। তাই আবির তাকে নিয়ে গিয়েছে তাদের সাথে।নিলয়ের কিছু কাজ পড়ে যাওয়ায় আজ যেতে পারিনি তাই তারা পরের দিন যাবে।
রাতে তিথি ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াচ্ছিল। হঠাৎ পিছন থেকে নিলয় তিথিকে জড়িয়ে ধরল।
-: রাগ করেছো??
-:না রাগ করবো কেন?? আমার কি আর রাগ করতে আছে? ছেলেটার সাথে গেলে কি এমন হতো?? না সেটা করলে কি হবে তুমি তো আছো সারাক্ষণ তোমার কাজ নিয়ে।
-: আমি যে তোমাকে যেতে বললাম।
-:উমমম আমিতো তোমাকে যেতে বললাম।(ভেংচি দিয়ে) কেন তুমি যাবে না একদিন ছুটি করলে এমন কি হতো??
-: কাল যাবো তো।
-: ছেলেটাকে ছাড়া কখনো থাকিনি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
-: আজ রাতটা পার হলেই কাল সকালে আমরা ছেলের কাছে চলে যাব। আর এর আগেও তো একবার সে থেকে ছিল ওখানে একা একা।
-: হুম।
-:পাখি!
-: হুম
-:আই লাভ ইউ পাখি।#তোমাকে আমার প্রয়োজন জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাটানোর জন্য।
-:আই লাভ ইউ টু নিলয়।আমি খুব লাকি যে তোমাকে আমার জীবনে পেয়েছি।
এই বলে নিলয়কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কিছুক্ষণ পর,,,
-:আচ্ছা এবার ছেলে ছেলে বাদ দিয়ে ছেলের বাবার দিকে একটু নজর দাও দেখি।ছেলে আমার বড্ড একা তার জন্য খুব তাড়াতাড়ি একজন খেলার সাথী আনতে হবে।সো লেটস গো।
বলেই তিথিকে কোলে তুলে নিল।
-:কি করছো ছাড়ো তুমি খুব বাজে একটা লোক।
-:তা বললে তো শুনবো না আজ ম্যাডাম।
.
.
.
.
_____সমাপ্ত_______
“”ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার নজরে দেখবেন।তাড়াহুড়ো করে গল্প লেখায় গল্পটি রিচেক করা হয়নি।