#তোমাকে আমার প্রয়োজন ??
#মেঘ পরী??
??পর্ব-৩২??
নিশি ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো কিন্তু তার স্পষ্ট মনে আছে যে সে মেঝেতে ঘুমিয়ে গিয়েছিল কাল।হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজার আওয়াজে সেদিকে তাকিয়ে দেখলো আবির সদ্য শাওয়ার নিয়ে বের হচ্ছে,,,গায়ে শুধু ব্লেক কালারের ট্রাইজার আর গলায় একটা টাওয়াল জড়ানো।আবিরকে এমন অবস্থায় দেখে নিশি পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে,,,এখনও তার বিশ্বাস হচ্ছে না যে এই লোকটা তার স্বামী।
নিশির খুব করে ইচ্ছা করছে লোকটাকে একবার জড়িয়ে ধরতে কিন্তু দীর্ঘ দিনের জমিয়ে রাখা অভিমানের কাছে কোথায় যেন এই সামান্য ইচ্ছাটুকুও পূরণ করতে বাধা পাচ্ছে সে।না এত সহজে সে কিছুতেই লোকটাকে ক্ষমা করবে না,,তাকে কষ্ট পেতে হবে যেমনটা এতদিন নিশি পেয়ে এসেছিল।
আবিরের ডাকে কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে এল।
-:কখন উঠলে??
নিশি আবিরের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করলো না।চুপচাপ বিছানা ছেড়ে উঠে আলমারি থেকে হলুদ রঙের একটা শাড়ি নিয়ে বাথরুমের চলে গেল।নিশি কে এমন নীরবে চলে যেতে দেখে আবির একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো।তারপর একটা ব্লু কালারের টিশার্ট পড়ে নিচে চলে গেল।
.
.
এইদিকে তিথি আর নিলয় ব্রেকফাস্ট সেরে নিল।আজকে তাদের রিসেপশন,,,তিথি আর নিশির রিসেপশন একসাথেই হবে তাই তারা ব্রেকফাস্টের পর তিথিদের বাড়িতে যাবে। রিসেপশন কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত হবে। আবির অবশ্য তার আর নিশির রিসেপশন টা এখন করবে না বলেছিল কিন্তু নিলয়ের জেদের কাছে তাকে অবশেষে হার মানতে হলো। ব্রেকফাস্টের পর দুজনে বেরিয়ে পরলো ।
.
.
এদিকে অনেকক্ষণ হয়ে যাবার পরও নিশি কে নিচে আসতে না দেখে,,,আবিরের মা আবিরকে উপরে পাঠালো নিশিকে ডাকার জন্য। আবির গিয়ে নিশি কে ডাকার জন্য রুমে প্রবেশ করতেই হা হয়ে গেল।
নিশি অনেকক্ষণ ধরেই চেষ্টা করছিল শাড়ি পরার বাট কিছুতেই তা পারছিল না।গতকাল আবিরের মার কাছ থেকে শাড়ি পড়েছিল বাট এখন কিছুতেই পড়তে পারছেনা।তাই বাধ্য হয়ে শাড়িটা কোনোমতে নিজের শরীরের পেচিয়ে খাটের এক কোণে বসে ছিল।আর ঠিক সেই মূহূর্তে আবির ঘরে প্রবেশ করেছে।
আবিরকে দেখে নিশি নিজেকে ঢাকতে ব্যস্ত তখনই আবির হু হা করে হেসে উঠলো।আবিরকে এমন হাসতে দেখে আর নিজের শাড়ি পরার ব্যর্থতা দেখে নিশি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো,,, আবিরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:লজ্জা করে না এইভাবে নক না করে কোনো মেয়ের ঘরে ঢুকতে।
আবির নিশির কথায় হাসা বন্ধ করে,,, নিশির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:ফর ইউর কাউন্ড ইনফরমেশন এটা আমার রুম আর তাছাড়াও এটা তুমি জানো না যে ঘরের মধ্যে ড্রেস চেঞ্জ করতে হলে সবার আগে দরজাটাকে বন্ধ করতে হয়।
-:শুনুন একে তো নিজে দোষ করেছেন তার উপর আবার নিজের দোষ স্বীকার না করে উল্টে আমার উপর নিজের দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন।
-:আচ্ছা আমি দোষ করেছি??তা কি দোষ করেছি।
এই বলে নিশির দিকে এক পা করে এগোতে এগোতে,,, আবিরের এমন এগোনো নিশি যেই পিছতে যাবে ওমনি তার পা লেগে কোনোমতে নিজের শরীরের পেচিয়ে রাখা শাড়িটা খুলে গেল।এমন হওয়াতে নিশি চোখ বড়বড় করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে আর আবির চরম বিস্মিত ফেস নিয়ে একবার নিশির দিকে আর একবার ফ্লোরে পরে থাকা শাড়িটির দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।হাসতে হাসতে খাটে শুয়ে পরলো।নিশি ফ্লোর থেকে শাড়িটা তুলে কোনোরকম গায়ে পেঁচিয়ে আবিরেরদিকে তাকিয়ে থাকলো।
আবিরের এমন হাসি আর নিজের এমন অপমান কিছুতেই সহ্য করতে না পেরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো। নিশির এমন হঠাৎ কান্না দেখে আবির অবাক হয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:এই তুমি কাঁদছো কেন??
-:আপনি হাসছেন কেন??(ঠোঁট উল্টে পাল্টা প্রশ্ন করে নিশি)
নিশির প্রশ্ন শুনে নিলয় মুচকি হেসে বলে উঠল-;
-: নিজের বৌয়ের অক্ষমতা দেখে।
আবিরের মুখে বউ ঢাক শুনে নিশির বুক ধুক করে উঠলো,, আবিরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো -;
-: নিজের বৌয়ের অক্ষমতা দেখে কি এমন হাসতে।আমাকে একটু সাহায্য ও তো করতে পারেন,,,তা না করে আমাকে দেখে হাসছেন।(মুখ গোমড়া করে)
-: তোমার বুঝি হেল্প লাগবে!!
নিশি আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:হ্যা মাকে একটু ডেকেদিন না।
-:কেন??
-:বাহ্ রে!!আপনি দেখছেন না আমি শাড়ি পরতে পারছিনা। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে এখনও নিচে যাই নি সবাই হয়তো আমার জন্য ওয়েট করছে।
-:মা এখন আসতে পারবে না।
-:কেন??(আবিরের দিকে গোল গোল চোখে তাকিয়ে)
-:মা এখন বিজি আছে।কি হেল্প করতে হবে দাও আমি করে দিচ্ছি।
নিশি আবিরের দিকে একপলক তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:না থাক লাগবে না আপনার হেল্প।আমি বরং চুরিদার পরে নিচ্ছি,,,পরে মার কাছ থেকে শাড়ি পরে নিবনি।
এই বলে পিছনে ফিরতেই আবির বলে উঠলো-;
-:হ্যা পরো চুরিদার।তারপর লোকজন যখন বলবে ইস্ এদের বাড়ির বউ বিয়ের পরেরদিন ই চুরিদার পরেছে তখন আর কি হবে?? আমার মার ই মাতা নিচু হয়ে যাবে,,,যাকে নিজের মেয়ে ভাবে সে যদি এমন করে আর কি করা যাবে??আচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি তুমি তাড়াতাড়ি নিচে চলে এসো ওকে।
এই বলে দরজার দিকে এগোতেই নিশি ডেকে উঠল।এতক্ষন সে আবিরের কথা শুনছিল,,, ঠিকই তো বলেছে আবির বিয়ের পরেরদিন সবাই তো শাড়ি পরে,,, তাহলে ও কেন পড়বেনা।
এদিকে নিশির ডাক শুনে আবির একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:কি হয়েছে??
-:বলছি আমাকে একটু হেল্প করতে পারবেন??
-:আমি!!
-: হুম কেন আপনি পারেন না শাড়ি পরাতে??
-:হ্যা ট্রাই করে দেখতে পারি।
-:ওকে।
অবশেষে অনেক চেষ্টার পর আবির নিশি কে শাড়ি পরাতে সক্ষম হলো।তারপর দুজনে নিচে নেমে ব্রেকফাস্ট করে নিল। কিছুক্ষণ পর তিথি আর নিলয় ও চলে এলো।বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে আবির আর নিলয় ডেকরশেন এর কাজ দেখতে চলে
.
.
.
.
বিকালে তিথি আর নিশিকে পার্লারে নিয়ে যাওয়া হলো,,, সেখান থেকে তাদের সাজিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলো।
তিথি আজ ব্ল্যাক কালারের লেহেঙ্গা পরেছে। অনেক ঘের লেহেঙ্গাটার পুরো লেহেঙ্গাটা ওয়াইট স্টোনের কাজ করা আর ওয়াইট কলারের হালকা স্টোনের কাজ করা ওড়না সামনের দিকে শাড়ির আঁচলের মতোন পড়িয়ে কোমর বন্ধ লাগানো।গলায় ভারি ডায়মন্ডের সেট,,, হাত ডায়মন্ডের ব্রেসলেট,,, মাথায় ক্রাউন।চোখ ভর্তি গাড়ো কাজল,,, ঠোঁটে রেড কালারের ম্যাট লিপস্টিক আর হালকা মেকওভার।চুল গুলো বিনুনী করে একপাশে রেখে,,কিছু চুল সামনের দিকে কার্লি করে রাখা হয়েছে আর চুলের একপাশে বেলীফুল সুন্দর করে লাগানো আছে।ব্যাস এতেই তিথি কে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
তিথির সাথে ম্যাচ করে নিলয় ও আজ ব্লাক কালারে নিজেকে সাজিয়েছে।ব্লাক শেড়ওয়ানী,,ব্লাক প্যান্ট আর তার সাথে ম্যাচ করে অ্যাশ কালারের ওড়না গলায় স্টাইলিশ ভাবে ঝোলানো।
নিশি কে ও আজ ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগছে দেখতে।বেবি পিঙ্ক কালারের উপর ওয়াইট স্টোনের সূক্ষ বুটিকের কাজ করা একটা ভারি লেহেঙ্গা পরেছে। গহনাগুলো তিথির মতোনই সেম পড়া,,,হালকা ওয়াট আর পিঙ্কের মিক্সড কালারের ডিপ পিঙ্ক কালারের স্টোনের লেস লাগানো ওড়না তিথির মতোন স্টাইল করে পড়ানো। চুলগুলো খোপা করা আর কিছু চুল সামনে কার্লি করে ছড়ানো। মাথার এক পাশে দুটো বড় বড় গোলাপ ফুল লাগনো।
আবির নিশির সাথে ম্যাচ করে পিঙ্ক কালারের শেড়ওয়ানী পড়েছে,,,তার সাথে ম্যাচ করে প্যান্ট আর ওড়না পড়েছে।
চারজনকেই আজ অসাধারণ দেখতে লাগছে।একদম মেড ওফ ইচ আদার জুটির মতোন। নিলয়ের মামা,, নিশির মা-বাবা সবাই এসেছিল রিসেপশনে।চারজনে অনেক গুলো কাপল ফটো আর গ্ৰুপ ফটো তুললো। অনুষ্ঠান খুব সুন্দর ভাবেই শেষ হলো। অনুষ্ঠান শেষে নিশি মা-বাবা তাকে নিয়ে যেতে চাইলে নাশি না করে দেয়।যেহেতু তিথিরা আবিরদের বাসায় যাবে তাই নিশি এখন তার মা-বাবার সাথে যাবেনা বলে দিল। তাছাড়াও নিজের বাবা-মার প্রতি কিছুটা চাপা অভিমানের জন্য ও নিশি তাদের সাথে যেতে নারাজ। নিশির বাবা-মা বুঝতে পেরে তাকে আর জোর করলো না।
.
.
.
.
পরেরদিন ব্রেকফাস্ট টেবিলে নিলয় জানালো যে তারা চারজনে একসাথে হানিমুনে সিঙ্গাপুর যাবে।নিশি এতে ঘোর আপত্তি জানিয়েছিল কিন্তু তিথির জন্য তাকে অবশেষে সন্মতি দিতেই হলো।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]