#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??
??পর্ব-২৭??
.
?
.
নিশীর বাসার সামনে নিলয় গাড়ি থামালো। তারপর গাড়ি থেকে নেমে নিশির হাত ধরে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো।নিশির বাবা সোফায় বসে তখন টিভিতে খবর দেখছিলেন হঠাৎ আবির এবং নিশির এমন আগমনে তিনি চমকে উঠলেন,,,,কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিলয় বলে উঠল-;
-:আঙ্কেল আপনি কি আপনার মেয়ে আজকাল রাস্তায় ছেলেদের হাত একটু বেশিই ধরছিস তাও আবার অচেনা ছেলেদের হাত।
আবিরের কথায় নিশির বাবা প্রচন্ড অবাক হলেন কারণ তিনি জানেন তার মেয়ে কখনোই এমন কাজ করতে পারে না। তারপর নিশির দিকে তাকাতেই তিনি আরো এক ধাপ অবাক হলেন,,, কারণ নিশির ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে,,,আর দুটো গাল অসম্ভব রকম লাল হয়ে আছে। একমাত্র মেয়ে এমন অবস্থা দেখে,,,নিশির বাবা চিৎকার করে বলে উঠলেন-;
-:এ কি অবস্থা হয়েছে তোর মা??
নিশির বাবা চিৎকারে নিশির মা রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন,,,মেয়েকে দেখে তিনিও চিন্তিত গলায় বলে উঠলেন-;
-:কিরে কি করে হলো এইসব??
নিশি কিছু বলতে যাবে,,,তার আগেই আবির বলে উঠলো-;
-: আঙ্কেল আন্টি আমি করেছি ওর এই অবস্থা।
নিশির বাবা আর মা আবিরের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন আর নিশি নীচের দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
-:কিন্তু কেন??(নিশির বাবা)
-:আপনার মেয়ে রাস্তা ভর্তি লোকের সামনে,,, একটা ছেলের হাত ধরে তাকে বলে যে সে নাকি তার সাথে রিলেশন শুরু করতে চাই।তাও আবার ছেলেটা যে সে নয় একটা গুন্ডা মাস্তান টাইপ ছেলে।
-:সেকি!!(নিশির মা)
-:জ্বি আন্টি শুধু তাই নয় আমি আবার তাকে এসব পড়তে মানা করেছি বলে আপনার মেয়ে রাস্তা ভর্তি লোকের সামনে আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বলেছে,,,আমি নাকি একজন মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির ছেলে,,,আমার নাকি ক্ষমতা নেই আঙ্কেলের পায়ের জুতো হওয়ারও।
-:কি??(অবাক হয়ে)
-:জ্বি হ্যাঁ।।ক্ষমা করবেন কিন্তু ওর গায়ে হাত না তুলে আমি থাকতে পারলাম না।
-:ঠিক করেছ বাবা একদম উচিত কাজ করেছো। নিশি তোর সাহস দেখে দিনদিন আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি,,,হ্যাঁ রে আমি কি তোকে এতই বাজে শিক্ষা দিয়েছি যে তুই মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেই জ্ঞানটুকুও হারিয়েছিস।আরে তোর বাবা যে টাকা ইনকাম করে,,,ভুলে যাস না এই টাকা দেওয়ার মালিক,,,তিথির হবু স্বামী।আর তাছাড়াও তোকে সাহস কে দিয়েছে আবিরের সাথে এমন আচরণ করার।
-: কিন্তু না উনি যা বলছে সব মিথ্যে কথা বলছেন??? ছেলেটা….
ব্যস আর কিছু না বলতে দিয়েই নিশির মা নিশিকে তার দিকে ঘুরিয়ে প্রচন্ড জোরে একটা থাপ্পর মারলেন।নিশির মা এমনিতে খুব ভালো মানুষ হলেও রেগে গেলে,,,তিনি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেন,,,,তখন নিশির বাবা ও ভিজে বিড়াল হয়ে থাকেন তার সামনে।
এদিকে আবিরের হাত থেকে পরপর দুটো চড় খাওয়ার পর,,,আবার নিজের মার হাতে আরও একটা চড় খেয়ে,,,নিশি এবার আর নিজেকে আটকাতে পারল না ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেই ফেলল।আবির বুঝতে পারিনি যে নিশির মা এমন কিছু করবো।
-:কি হচ্ছেটা কি???মেয়েটা বড় হয়েছে তাকে এরকম ভাবে মারে আছে নাকি??
-:তুমি চুপ করে থাকবে একদম।আজ তোমার জন্যই মেয়েটার এত অধঃপতন হয়েছে।
-:আমি আবার কি করলাম।(অসহায় ভাবে)
-:তুমি যদি ওর সব আবদার পূরণ না করতে,,, তাহলে আজ এই মেয়ে এতোটা মাথায় চড়ার সাহস পেত না।ওর এত সাহস কে দিয়েছে,,,যে ও রাস্তাঘাটে ছেলেদের সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছে।। তুমি এক্ষুনি ওর জন্য একটা ছেলে দেখো,,,,তিথির বিয়ের পরেই এই মেয়েকে আমি বিদায় করব।
তিনি আরোও অনেক কথা শুনিয়ে দিলেন নিশিকে,,,আর নিশি বেচারি চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর দুই হাতে নিজের চোখের জল মুছে যাচ্ছে।
এর মধ্যে হঠাৎ আবির বলে উঠলো-;
-:আন্টি আপনাদের সাথে আমার কিছু কথা আছে।
-:কি বাবা??
-:আসলে আমি চাইছি,,,মানে আমার বাবাকে আনলে ঠিক হতো এই বিষয়ে কথা বলতে কিন্তু যেহেতু বাবা এখন ব্যাস্ত আছে বিয়ের ঝামেলা নিয়ে,,,,তাই আমি বলছি তিথির ঝামেলা মিটে গেলেই যত শীঘ্রই সম্ভব এই কাজটা সেরে ফেলতে চাইছি আমি,,,,তাই আর কোনরকম রিক্স নিতে চাইছি না।
নিশির মা এবং বাবা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকালেন,,,আবির আবার বলতে লাগলো-;
-:আসলে আমি চাইছি নিশিকে আমার বউ করতে,,,,কারণ আমি চাইনা ও অন্য কোন বাজে ছেলের চক্করে পড়ে নিজের জীবনটা নষ্ট করুক,,,আর এমনিতেই এর আগে কয়েকটা ছেলের সাথে ওকে আমি ঘুরতে দেখেছি।।
আবিরের এমন কথায় নিশি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকালো,,,তারপর মনে মনে বলছে বলতে লাগলো-;
-:বাহ বেশ ভালো নিজে আমাকে দুটো চড় দিলো তারপর মাকে দিও চর খাওয়ালো,,,,এখন আবার আমাকে নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলছে।আসলে সাহস নেই তো বাবা মাকে বিয়ের কথা বলার,,,তাই এমন মিথ্যা কথা বলছে,,, হুম।।।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আবিরের দিকে তাকিয়ে একটা মুখ ভেংচি কাটলো।
এদিকে আবিরের এমন কথায় নিশির মা যেন হাতে আকাশেরর চাঁদ পেয়েছেন।এমনিতেই তিনি আবিরকে আগে থেকেই অনেক পছন্দ করতেন,,,,তার ওপর তার এই হাদা মেয়ের জন্য এতো ভালো একটা জামাই পাবে,,,,,এটা ভেবেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন-;
-:তোমার প্রস্তাবে আমরা রাজি,,,, কোন একদিন তুমি তোমার বাবা মাকে নিয়ে আসতে পারো আমাদের বাড়ি।
-:কিন্তু আমি এত তাড়াতাড়ি নিশিকে বিয়ে দিতে চাচ্ছি না।
-:তুমি চুপ করবে একেই তো তোমার মেয়ে উল্টোপাল্টা কাজ করে বেড়াচ্ছে তার ওপর এত ভাল একটা ছেলে বাসায় এসে যেচে প্রস্তাব দিচ্ছে,,,আর তুমি তাকে পায়ে ঠেলছো,,,বলি হারি তোমায় মেয়ের সাথে কি তোমারও বুদ্ধি লোপ পেয়েছে এই বুড়ো বয়সে।।
-:না আসলে…
-:আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না।আবির বাবা আমরা রাজি।
নিশি মার কথা শুনে আবির মুচকি একটু হাসলে,,,তারপর নিশির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল-;
-:জানতাম আন্টি আপনারা রাজি হবেন,, আমার প্রস্তাব।আর তিথির বিয়ের ঝামেলা মিটলেই আমি চাইছি ছোট্ট করে একটা অনুষ্ঠান করে বিয়েটা সেরে নিতে।বাবা-মা সবাই জানে এই ব্যাপারে শুধু আপনাদের কেই বলা জানানো হয়নি।আচ্ছা আন্টি তাহলে এখন আমরা আসি।
এই বলে নিশির হাত ধরে যেতে নিলেই,,, নিশির বাবা বলে উঠলেন-;
-:বাবা তুমি কি ওকে নিয়ে যাবে তোমার সাথে???
-:হ্যাঁ আঙ্কেল কেন??কোন প্রবলেম আছে??বিয়ে তো আর মাত্র দুদিন বাকি,,,,তাহলে ও এইখানে একা থেকে কি করবে??
-:না নিয়ে যেও তোমার সাথে কিন্তু বাসায় গিয়ে ও গালে একটু ওষুধ লাগিয়ে দিল,,,গালে অনেকটা কেটে গেছে।
নিশি তার বাবার এমন আদর মাখা কণ্ঠ শুনে,,, আবারও কেঁদে উঠলো তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল-;
-:আমি যাব না বাবা এনার সাথে।আমি এখানেই থাকবো।
নিশিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আবির,,, বলে উঠলো-;
-:ঠিক আছে আংকেল আমি ওকে ওষুধ লাগিয়ে দেবো সময় মতোন,,,এখন আমরা আসছি তাহলে।
এই বলে নিশির হাত ধরে নিয়ে চলে গেল।
.
.
?
.
.
নিশি চুপচাপ খাটের এক কোণে বসে আছে আর আবির আস্তে আস্তে ডেটল দিয়ে ঠোঁটের কাটা অংশগুলো ধুয়ে ,,,ওষুধ লাগিয়ে দিল। তারপর নিশির দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে নিশির চোখের জল মুছিয়ে দিল।নিশি অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকাতেই আবির মুচকি হেসে বলে উঠল-;
– বলেছিলাম না সময় হলে জানতে পারবি,,,,আমি তোর কে??? এখন বুঝতে পারছিস আমি তোর কে হয় ???আর কখনো এমন ভুল যেন দ্বিতীয়বার না হয়।।তাহলে তোর অবস্থায় এর থেকেও খারাপ হবে,,,মনে থাকে যেন কথাটা।
নিশি ছল ছল চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:আপনি একটা পচা লোক,,,,আপনি ইচ্ছা করে মাকে দিয়ে আমাকে মার খাওয়ালেন।আপনার সাথে আমি আর কোনদিনও কথা বলবো না।
-:শিহ্ চুপ একদম চুপ কোন কথা নই আর।
নিশির ঠোটে আঙুল রেখে,,,তারপর কানের কাছে মুখ এনে মুচকি বললো-;
-:টিট ফর ট্যাট।