#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??
??পর্ব-২০??
.
?
.
ছাদের রেলিং এ হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবির,,,আর তার ঠিক পাশেই নিলয় দাঁড়িয়ে আছে।নিলয় আবিরকে চুপ করে থাকতে দেখে বলে উঠল-;
-:ভাইয়া কিছু বলবেন??
নিলয়ের মুখে ভাইয়া ডাক শুনে,,,আবির অবাক হয়ে কিছুক্ষণ নিলয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো,,,তারপর হালকা হেঁসে সামনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো-;
-:তো মিস্টার মাফিয়া কিং নিলয় চৌধুরী আজ হঠাৎ আমাকে ভাইয়া বলে ডাকছে যে??
আবিরের এমন প্রশ্নে নিলয় ৪৪০ ভোল্টের এক বড়োসড়ো ধাক্কা খেল,,,নিলয় হাঁ করে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে।নিলয়কে চুপ করে থাকতে দেখে আবির বলে উঠলো-;
-:কী ভেবেছিলে আমি আমার একমাত্র বোনের বিয়ে এমনিই দিয়ে দেব,,,তার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে তার সম্পর্কে কোনো খোঁজ খবর না নিয়েই।
আবিরের কথায় নিলয়ের মনে এক অজানা ভয় কাজ করছে,,,তিথিকে হারানোর ভয়।তাহলে কি আবির তিথির সাথে নিলয়ের বিয়ে হোক সেটা সে চাই না।না না এ হতে পারে না,,,তাহলে বাঁচবে কী করে নিলয়,,,সে তো…না আর কিছুই ভাবতে পারছে না নিলয়।যাই হয়ে যাক না কেন সে তার তিথু পাখিকে ছাড়া বাঁচবেই না।নিলয়ের ভাবনাকে ছেদ করে দিয়ে আবির বলে উঠলো-;
-:এতো অবাক হওয়ার কিছুই নেই,,,আমি তোমার ব্যাপারে সবকিছুই জানি??? আর এটাও জানি তুমি বুড়ি কে ভুল করে অন্য মেয়ে ভেবে কিডন্যাপ করেছিল,,,আর এক সপ্তাহ নিজের বাড়িতে আমার বোনকে আটকিয়েও রেখেছিলে।।কী ঠিক বলছি তো আমি??আচ্ছা একটা কথা বলতো তুমি আমাকে বোনকে বিয়ে করতে চাও কেন??কী উদ্দেশ্যে আছে তোমার তিথি কে বিয়ে করার পেছনে??
এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও এবার নিলয় আর চুপ করে থাকতে পারলো না,,,আবিরের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো-;
-:প্রথমত আমি আপনাকে ভাইয়া বলে ডাকছি তার কারণ হলো আপনি আমার থেকে দুই বছরের বড়।আর রইলো বাকী উদ্দেশ্য??হ্যাঁ ঠিক বলেছেন আপনি।তিথি কে বিয়ে করার পিছনে খুব বড়ো একটা উদ্দেশ্যে আছে আমার।
নিলয়ের কথায় আবির কিছুটা অবাক হয়ে গেল,,,তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে নিলয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেসা করলো-;
-:কী বলতে চাইছো তুমি??তিথি কে বিয়ে করার পিছনে তোমার কী উদ্দেশ্যে আছে??
নিলয় কিছুটা হেঁসে,,জবাব দিল-;
-:নিজের ভালোবাসা দিয়ে তিথি কে সারাজীবন আমার মনের গহীনে ভালোবাসার শিকল দিয়ে বন্ধীনি করে রাখতে চাই এটা আমার প্রথম উদ্দেশ্য।আমার দ্বিতীয় উদ্দেশ্যে হলো তাকে দুনিয়ার সকল বদ নজর থেকে রক্ষা করা,,,কেউ তার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে এলে তাকে শেষ করে দেওয়া।আর আমার শেষ উদ্দেশ্যটা হলো আমার মায়াপরীর কাছ থেকে একটুখানি ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা,,,যেটা মেটানোর জন্য যে আমার তাকে খুবই প্রয়োজন,,,অবশ্য এটা নিজের সার্থের জন্যেই বলতে পারেন।
ভাইয়া জানেন ভালোবাসা কি তা আমি কোনদিন জানতামই না??বলতে পারেন কোনদিন উপলব্ধি করার চেষ্টাই করিনি??ছোটবেলায় বাবা মাকে হারানোর পর ভালবাসার প্রতি একটা তিক্ততা জন্ম নিয়েছিল আমার মনে।কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি কোনদিন জানতামই না যে আমার মনের এই তিক্ততা দূর করতে কেউ একজন আসবে আমার জীবনে,,,,যার ছোঁয়ায় এবং ভালোবাসায় আমার মনে জন্ম নেবে ভালোবাসার কোন এক নতুন অধ্যায়।
হ্যাঁ ভাইয়া তিথি কে আমি ভুল করে তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু আমি সত্যিই তিথির কোন ক্ষতি করিনি।আর তখন আমি জানতামও না যে এই মেয়েটাই আমার মনে জায়গা করে নিবে,,,তাও আবার নিজের দুষ্টুমি,,,মন ভোলানো কথা দিয়ে।
এইটুকুনি বলেই নিলয় কিছুটা হাঁসলো তারপর আবার বলতে লাগলো-;
-:তার ছোটখাটো দুষ্টুমি গুলোকে কখন যে আমি ভালোবেসে ফেলেছিলাম তা আমি নিজেই জানিনা।কিন্তু যখন আমি তা বুঝতে পারলাম তখন তার আমার কাছ থেকে চলে যাওয়া সময় হয়ে এসেছিল।কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না তখন,,,মনে হচ্ছিল আমার শ্বাস কে যেন বন্ধ করে রেখেছে,,,নিঃশ্বাস নিতে প্রচন্ড কষ্ট হতো আমার।তাই আর কিছু না ভেবে,,,বলেই দিলাম আমার মনের গহীনে তার জন্য সঞ্চিত সুপ্ত অনুভূতি টার কথা।কিন্তু সেই অবুঝ মেয়েটা বুঝলোই না আমার ভালোবাসাকে,,,দূরে ঠেলে দিলে আমাকে সাথে আমার ভাঙ্গা মনটাকেও।
প্রচন্ড পরিমানে ভালবেসে ফেলেছিলাম যে তাকে।।আমার খুব কষ্ট হয়েছিল তখন,,যখন সে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল।তবুও তাকে জোর করিনি আমাকে ভালবাসতে,,কারণ আমি তো চাই সে আমাকে নিজের মন থেকে ভালবাসুক,,,জোর করে চাপিয়ে দেওয়া ভালোবাসা তো আমি কখনই নিতে চাইনা তার কাছ থেকে।আমি যে ভালোবাসার বড্ড কাঙাল।তাই জন্যই তো তাকে রেখে আমি চলে গিয়েছিলাম,,,তার জীবন থেকে অনেক দূরে।
কিন্তু আমার পাখিটা আমার ভালোবাসাটা কে বুঝে,,আমার কাছে আবার ফিরে আসবে তা আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবি নি।আচ্ছা আপনিই বলুন তো ভাইয়া ভালোবাসা কি অপরাধ??নাকি আমি একজন মাফিয়া বলে আমার অন্য কাউকে ভালবাসার অধিকারই নেই??আচ্ছা কেউ তো কখনোই এটা জানতে চাইনি যে আমি কেন এই পথটা বেছে নিয়েছি বিজনেসম্যান হওয়া সত্বেও??সবাই কেন আমার কাছ থেকে দূরে সরে যায়,,শুধুই কি আমি একজন মাফিয়া বলে??যাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় সেই আমার কাছ থেকে চলে যায়,,,কেন বলতে পারেন??প্রথমে মা বাবা আমায় ছেড়ে চলে গেল।তারপর যেই তিথি কে আঁকড়ে বাঁচতে চাইছি,,,তখন আবার..
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে,, আবারও বলতে লাগলো-;
-:ভাইয়া আমি যে আমার পাখিটাকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি,,তাকে ছাড়া যে এক মুহুর্তও বেঁচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়,,আপনিই বলুন না আমি কি করবো??একবার বিশ্বাস করে দেখুনই আমাকে,,কথা দিচ্ছি ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখব সারা জীবন তাকে,,,আমার জন্য কখনোই তার চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন হবে না।একবার কি বিশ্বাস করা যায় না আমাকে?
কথাগুলো বলার সময় নিলয়ের গলা বারবার কেঁপে উঠছিল।আর আবির!!সে তো নিলয়ের প্রতিটি কথায় মগ্ধ হয়ে উঠেছে,,এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে।নিলয়ের মতন একজন বড় বিজনেসম্যান এবং মাফিয়ার মনে যে তার ছোট্ট বোনটার জন্য যে এতটা ভালোবাসা লুকিয়ে রাখা ছিল তা সে জানতো না।
নিলয় যখন বলেছিল তার উদ্দেশ্য আছে তিথিকে বিয়ে করার পিছনে তখন সে অনেকটাই অবাক হয়ে গিয়েছিল কিন্তু নিলয়ের উত্তর শুনে সত্যিই সে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছে।এখন তার তিথির উপর সত্যিই এখন অনেক গর্ব হচ্ছে,,,যে তার বোন সত্যিই একজন সঠিক ব্যক্তি কে নির্বাচন করেছে তার জীবনসঙ্গী রুপে।আর কিছু না ভেবে আবির নিলয়কে জড়িয়ে ধরল,,,শক্ত করে। তারপর বলতে লাগলো-;
-:তোমার কাছে আমি আমার বোনকে দেব না তো কার কাছে দেবো?তোমাকে না পেয়ে যে আমার বোনটা মরেই যাবে।তোমার মতোন একজন মানুষকে ছেড়ে যদি আমি আমার বুড়ির হাত অন্য কারোর হাতে দিই,,,তাহলে তো আমি পৃথিবীর নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হব,,,জান্নাতেও ঠাই হবে না আমার।আমি যে আমার বোনটাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি তার চোখের জল সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই তাই আমি তোমাকে পরীক্ষা করে দেখছিলাম যে তুমি সত্যিই আমার বোনটাকে ভালবাসে কি না।কিন্তু তুমি যে এই পরীক্ষায় এত ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতে পারবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।
আবিরের কথায় নিলয় খুশিতে কেঁদেই ফেলল,,,যাক অবশেষে তার পাখি তারই হবে। আবির নিলয়কে ছেড়ে,,তার হাত দুটো ধরে বলতে লাগলো-;
-:আমার বোনটা ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।যখন তার মাত্র তিন বছর তখন ফুপি তাকে একা করে দিয়ে,,,আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।ফুপি সুইসাইড করেছিল অবশ্যই বাবা ফুপির মৃত্যুকে সাধারণ সুইসাইড হিসেবে মেনে নেয়নি,,,তাই ফুপার বিরুদ্ধে কেস ও করেছিল,,কিন্তু কেসে বাবা হেরে যায়,, তিথিকে নিজের কাছে রাখতে চাইলে ফুপা পরিষ্কার না জানিয়ে দেয়।ফুপির মৃত্যুর এক মাসের মধ্যেই ফুপা আরও একটা বিয়ে করে।অবশ্যই আমরা তখন এই বিষয়ে কিছুই জানতাম না।
একদিন বাবা তিথির সাথে দেখা করতে,,ফুপার বাসায় যায়।বাসায় গিয়ে দেখে তিথি মেঝেতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর কাঁদছে,,,মাথা ফেঁটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে অনেকখানি।আর ফুফা আর তার সো কল্ড ওয়াইফ ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে আর গল্প করছে,,,এমন ঘটনা দেখে বাবা প্রচন্ড রেগে যায়,,, তারপর তিথিকে নিয়ে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দেয়।তিথি সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর অনেক কষ্টে,,, অনেক ঝামেলা করে বাবা তিথিকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে।ফুফা তিথিকে কিছুতেই ছাড়তে চাইছিল না,,,কিন্তু বাবা পুলিশের ভয় দেখিয়ে তিথিকে তাদের কাছ থেকে নিয়ে আসে।
বুড়ি যখন আমাদের বাসায় আসে তখন সে খুবই ছোট,,,সেখান থেকে বুড়ি আমাদের সাথে আছে।কোনদিনের জন্যে ও তাকে আমরা বুঝতে দিইনি যে তার এই পৃথিবীতে কেউ নেই।তাকে আমরা ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছি,,, সারাক্ষণ।এক ফোঁটা পানিও পড়তে দিই নি তার চোখ থেকে,,,যখন যা চেয়েছে তাই পূর্ণ করেছি,, আমরা হাঁসি মুখে।বাবা মা সবসময় তাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসে এসেছে,,,আর আমি তাকে নিজের ছোট বোন।
তাই আমি চেয়েছিলাম আমার বোনের হাত এমন একজনের হাতে তুলে দিতে যে আমার বোনকে নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসবে।আর আমি পেয়েছি,,,এমন একজন লোককে যার কাছে আমি আমার বোনকে দিয়ে চিন্তা মুক্ত হতে পারবো কারণ আমি জানি সে থাকতে কোনদিনও আমার বোনের ক্ষতি কেউ করতে পারবেনা।আর সেটা আর অন্য কেউ নয় তুমি।কথা দাও তুমি আমার বোনকে আগলে রাখব সমস্ত বিপদ থেকে।
তিথির বাবার বর্বরতা কাহিনী শুনে নিলয়ের প্রচন্ড রাগ ধরল তিথির বাবার উপর।আবার তিথির উপর মায়াও জন্মালো।নিলয় আবিরের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল-;
-:নিজের রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত আমি তাকে আগলে রাখব।আল্লাহ ব্যতীত কেউ তাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না,,,কথা দিলাম।
-:থ্যাঙ্ক ইউ,, থ্যাংক ইউ সো মাচ,,, এবার চলো নিচে যায়,,সবাই হয়তো চিন্তা করছে এতক্ষন।।।।
তারপর তার নিচে নেমে গেল।নিচে নেমে নিলয় দেখল তিথি তার দিকে তাকিয়ে আছে,, তিথিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড ভয় পেয়ে আছে।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]