তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-১৬

0
2451

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘপরী??

??পর্ব-১৬??
.
?
.

হসপিটালের সামনে গাড়ি থামতেই আবির নিশিকে কোলে তুলে নিয়ে,,,দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলো।নিশি রক্তে আবিরের পুরো জামা ভিজে গিয়েছে।নিশি মাথায় প্রচন্ড পরিমানে আঘাত পেয়েছে।এদিকে আবিরের পিছনে তিথি কাঁদতে কাঁদতে দ্রুত পায়ে হাঁটছে,,,ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না নিশির এমন অবস্থা।আবির নিশিকে নিজের হসপিটালে এনেছে,,,যাতে ট্রিটমেন্ট খুব দ্রুত শুরু করা যায়।

আবির হসপিটালে ঢুকেই নার্সকে আর্জেন্ট OT রেডি করতে বলল। তারপর নিশিকে স্ট্রেচারে শুয়ে দিল,,,আর নিজেও খুব দ্রুত পোশাক চেঞ্জ করে নিল।কারণ নিশির অপারেশন আবির নিজের হাতে করবে,,, ও কোন রিক্স নিতে চায় না এই মুহূর্তে।নার্সরা নিশিকে OT তে নিয়ে গিয়েছে।

আবির যেই OT ঢুকবে,,,,তখনি তিথি আবিরের হাতটা ধরে ফেলল,,তারপর আবিরের দিকে অসহায় নজরে তাকিয়ে,,,কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো-;

-:প্লিজ ভাইয়া নিশি কে তুই বাঁচিয়ে দে,,,প্লিজ ভাইয়া।নিজের ব্যক্তিগত রাগটা তুই নিশির উপর পড়তে দিস না,,,,তোর কাছে আমি হাত জোড় করছি।

-:তিথি!!কি বলছিস তুই এইসব??নিজের পার্সোনাল রাগ বলতে তুই কি বুঝাতে চাইছিস??আর তাছাড়া সবার আগে আমি একজন ডাক্তার সুতরাং পেশেন্ট শত্রু কিংবা বন্ধু যেই হোক না কেন,,,সবার আগে তাকে বাঁচানোর আমার কর্তব্য,,,মনে রাখিস কথাটা,,,,আর আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব নিশিকে বাঁচানোর।

এই বলে আবির যেতে গিয়ে,, আবারও থেমে যায়,,,তারপর তিথির দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:আমি অতটাও অমানুষ নই,,,যে আমি ওকে বাঁচাতে চাইবো না।।আর বিশ্বাস কর আমি চাইনি ওর এমন অবস্থা হোক।।

আর কিছু বলতে পারল না আবির,,, তাড়াতাড়ি অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে গেল।তিথি নিশির এমন অবস্থা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না,,,পাশে থাকা বেঞ্চে বসে,,,হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর তার মনে হল নিশির বাবা-মাকে খবরটা জানানো দরকার,,,তাই সে আর দেরি না করে নিশির বাবা মা এবং তার মামা মামিকে ফোন করে সব জানিয়ে দিল।।
.
.
?
.
.

দেড় ঘন্টা যাবৎ সবাই ওটির সামনে অপেক্ষা করছে,,,তিথি খবর দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই নিশির বাবা মা এবং তিথির মামা মামি হসপিটালে চলে আসে।নিশির মার অবস্থা খুবই শোচনীয়,,,বারবার নিজের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তিথির মামি নিশির মার পাশে বসে আছে,,, নিশির মাকে সেলাইন দিয়ে অন্য একটা ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।এদিকে তিথির অবস্থাও ভীষণ খারাপ কাঁদতে কাঁদতে বেচারি হেঁচকি তুলে ফেলেছে।

তখনই ওটির উপরে থাকা লাল লাইটটা নিভে গেল,,,আর ওটির দরজা খুলে আবির বেরিয়ে এলো।আবিরকে বের হতে দেখে সবাই উঠে দাঁড়ালো,,তিথিতো দৌড়ে গিয়ে আবিরের হাত ধরে,,জিজ্ঞাসা করতে লাগলো,,,কোনমতে নিজের কান্না চেপে রেখেছে সে,,

-:ভা…ভাইয়া এ ভাইয়া নি..নিশি কেম…ন আছে রে??ও..ও ঠিক আছে তো।ও..ও সুস্থ হয়ে যাবে তো??

আবির কিছু বলছে না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।আবিরকে চুপ করে থাকতে দেখে,,নিশির বাবা এগিয়ে এসে আবির কে জিজ্ঞেস করল-;

-:বাবা আবির আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো?? ওর কিছু হয়নি তো।

-:ভাইয়া,,,,ভাইয়ারে কিছুতো বল,,তুই চুপ করে আছিস কেন এমন।

এই বলে আবিরের হাত ধরে তিথি আবিরকে ঝাকাতে লাগলো,,কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবির বলল-;

-:অপারেশন সাকসেসফুল।।তবে 24 ঘন্টার মধ্যে যদি জ্ঞান না ফেরে,,,তা…তাহলে…

-:তাহলে!!(তিথি)

-:তাহলে she will go into a coma।

কথাটা শোনামাত্র নিশির বাবা শব্দ করে কেঁদে উঠলেন।তিথি আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:কিসব যাতা বলছিস ভাইয়া,,তুইতো এক্ষুনি বললি অপারেশন সাকসেসফুল,,,তা..তাহলে এ..এইসব..

-:আসলে প্রচুর পরিমাণে ব্লাড বেরিয়ে গিয়েছে নিশির মাথা থেকে।আর শরীরের অনেক জায়গায় খুব ডিপ ইনজুরিও হয়েছে।খুব জোরে অ্যাকসিডেন্ট হওয়ার জন্য,,,বাঁ পায়ের এঙ্কেল আর ডান হাতে ফিমার এই দুটো হাড় ভেঙে গিয়েছে।ক্ষতগুলো খুব গভীর হয়েছে ২৪ ঘন্টা না গেলে কিছুই বলা সম্ভব না।

-:আমি অত কিছু জানতে চাইছি না,,তোর কাছ থেকে।আমি শুধু চাই,,,তুই নিশিকে সুস্থ করে তোল,,সেটা যেভাবেই হোক।বুঝতে পেরেছিস তুই।।

-:তিথি শান্ত হ তুই,,আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

-:বাবা একমাত্র তুমিই ভরসা,,আমার মেয়েটাকে তুমি সুস্থ করে তুলো বাবা,,,আমি তোমার কাছে হাত জোড় করছি।(নিশির বাবা)

-:একি করছেন আংকেল!!!আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি এবং করব।।প্লিজ আপনি এমন করবেন না।

-:হ্যাঁরে অ্যাক্সিডেন্টেটা কিভাবে হলো।নিশি তো তোদের সাথেই ছিল।

বাবার এমন কথায় আবির চুপ হয়ে গেল,,, কিছুই বলতে পারল না,,মাথা নিচু করে রইল।আবির কে চুপ করে থাকতে দেখে তিথি আবিরের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল-;

-:আসলে মামা আমার নিশি খুব সরল মনের মানুষ কি না,,,তাই জিনিস চিনতে ভুল করে ফেলেছিল।বোকাটা ফুল ভেবে,,কাটা তুলতে গিয়েছিল।

তিথির এমন কথায় আবির অপরাধীর ন্যায় দৃষ্টিতে তিথির দিকে তাকালো।

-:মানে!!(মামা)

এবার নিলয় কিছু বলতে যাবে,,তখনি ওটি থেকে একজন নার্স এসে আবিরকে কিছু একটা বলল,,সেটা শুনেই আবির চলে গেল।কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে জানালো যে নিশির অবস্থা ইম্প্রুভ করছে।খুব শীঘ্রই নিশির জ্ঞান ফিরতে পারে।আবিরের কোথায় সবাই কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো।
.
.
?
.
.
রাত আটটা,,,নিশির কিছুক্ষণ আগে জ্ঞান ফিরেছে।তাই প্রথমে তার বাবা মাকে দেখতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে,,,যেহেতু দুজনের বেশি এলাও করা হচ্ছে না।তিথির মামা গিয়েছে পাশের ফার্মেসি থেকে নিশির জন্য মেডিসিন আনতে,,আর মামি একটু ওয়াশরুমে গিয়েছে,,,তাই তিথি একাই বসে ছিল,,কেবিনের বাইরে।হঠাৎ কেউ একজন এসে তিথিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল,,,আচমকা এমন জড়িয়ে ধরায় তিথি কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।তারপর পাশ ফিরতেই নিজের প্রিয় মানুষটিকে দেখতে পেল। ব্যাস এবার আর নিজের ভেতরে জমিয়ে রাখা কান্নাটাকে আটকে রাখতে পারল না তিথি,,,,নীলয়কে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।

আসলে নিলয় তিথির ফোনে অনেক বার ফোন করেছে,,,কিন্তু তিথি রিসিভ‌ই করছিল না।প্রতিবার পরীক্ষা শেষে,,তিথিকে ফোন দেয় নিলয়,,,কিন্তু আজ তিথির ফোনে রিসিভ না করাই,,,প্রচুর টেনশন পড়েগিয়েছিল।তাই আর টাইম নষ্ট না করে,,অফিস থেকে সোজা তিথির বাসায় গিয়ে পৌঁছালো,,সেখানে গিয়ে দেখল তিথিদের বাসায় তালা চাবি মারা।পরে তিথিদের পাশের বাসা থেকে জানতে পারল যে তিথির মামা মামীরা হসপিটালে গিয়েছে,,কার নাকি অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।ব্যাস নিলয়ের টেনশন আরো বেড়ে গেল,,,তাই আর দেরি না করে হসপিটালের অ্যাড্রেসটা জেনে নিয়ে নিলয় সেখানে এসে হাজির হলো।তারপর রিসিপশনিস্ট এর কাছ থেকে জানতে পারলো যে তিথিরা সেকেন্ড ফ্লোরে আছে,,নিলয় আর সময় নষ্ট না করে সেকেন্ড ফ্লোরে গিয়ে দেখল তিথি একা বেঞ্চে বস আছে।

নিলয় তিথিকে কান্না করতে দেখে,,ভয় পেয়ে যায়,,,তিথিকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে,, তার গালে নিজের দুই হাতে রেখে জিজ্ঞেস করল-;

-:কি হয়েছে পাখি??এমন ভাবে কান্না করছো কেন??তোমার কিছু হয়নি তো??তুমি ঠিক আছো তো??

কিন্তু তিথি কোনো কিছুরই উত্তর দিতে পারছেনা,,,কান্নার কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।নিলয় তিথি আবারও জড়িয়ে ধরল শক্ত করে,,তারপর শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করল-;

-:কি হয়েছে আমায় বলো।না বললে বুঝবো কি করে,,, আমার পাখিটা কেন কান্না করছে।

তিথি এবার হেচকি তুলতে তুলতে বলল-;

-:নিশি….নিশির এ…এক্সিডেন্ট করেছে।।

নিলয় কিছুটা অবাক হয়ে,,জিজ্ঞাসা করল-;

-:ঐদিন তোমার সাথে যে মেয়েটা এসছিল,,সেই মেয়েটা??

-:হ..হুম।

-:ও মাই গড!!কিন্তু কিভাবে??

তারপর তিথি আস্তে আস্তে সব ঘটনা বলল নিলয়কে।নিলয় কিছু বলতে হবে,, তখনই নিশির বাবা এবং মা কেবিন থেকে বারিয়ে আসলো।নিশির বাবা নিলয় কে দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে গেল,,তারপর নিলয়কে জিজ্ঞেস করল-;

-:আরে স্যার আপনি!!আপনি এখানে কি করছেন??

নিলয় কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না তাই কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠলো-;

-:আ..আসলে আপনি তাড়াহুড়ো করে অফিস থেকে চলে আসায়,,,আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আপনার মেয়ের একসিডেন্ট হয়েছে,,তাই এখানে আপনার মেয়েকে দেখতে এলাম।কেমন আছে এখন??

-:জি স্যার ভালো আছে,,তবে ক্ষতগুলো খুব গভীরে ।

আসলে নিশির বাবা নিলয়ের অফিসের ম্যানেজার।তিথি এবার এগিয়ে এসে বলল-;

-:আমি কি এখন দেখা করতে পারি নিশির সাথে,,আঙ্কেল।

-:হ্যাঁ..হ্যাঁ যাও তুমি গিয়ে দেখে এসো।

তিথি যেতে নিলেই,,নিলয় নিশির বাবার দিকে তাকিয়ে বলল-;

-:মিস্টার তাওহীদ আমারও একবার আপনার মেয়ের সাথে দেখা করা উচিত,,তাই আমি বরং উনার সাথে যায়।

-:ঠিক আছে স্যার।

তিথি কেবিনে ঢুকেই দেখল,,,নিশি শুয়ে আছে বেডে,,,হাতে পায়ে মাথায় ব্যান্ডেজ করা।নাকে পাইপ ঢুকানো।নিশিকে এমন অবস্থায় কোন দিন দেখবে,,,তিথি ভাবতেই পারেনি।নিশির এমন অবস্থা দেখে,,তিথি আবারো কেঁদে ফেলল।নিলয় তিথিকে ধরে নিশির সামনে থাকা চেয়ারে বসালো।নিশি তিথির দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করল,,,তিথি নিশির হাত ধরে কান্না মিশ্রিত গলায় জিজ্ঞাসা করল-;

-:কেমন আছিস এখন??ব্যাথা করছে খুব তাই না??

নিশি কিছু একটা বলতে চাইছে,,,তাই তিথি নিশির কাছে নিজের কান নিয়ে গেল,,নিশি আসতে আসতে বলল-;

-:ভালো আছি এখন।কাঁদিস না আর।তোদের প্রচুর কষ্ট দিয়ে ফেললাম নারে,বেকার আমার জন্য তোদের নিজেদের সময় নষ্ট করতে হলো।।

তিথি এবার রেগে গিয়ে,,,নিশি কে বলল-;

-:হ্যাঁ প্রচুর কষ্ট পেয়েছি আমরা??কি করে পারলি এমন কাজ করতে??অত ছুটতে তোকে কে বলেছিল,,,তাও আবার যার জন্য তোর এমন অবস্থা সে তো দিব্যিই ভালো আছে।

তিথি আবির কে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলেছে।তিথির এমন কথা শুনে আবিরের নিজের মনে অপরাধবোধ কাজ করতে লাগলো।আবির কেবিনের মধ্যেই ছিল এতক্ষন।।যেখান থেকে নিশির জ্ঞান ফিরেছে তখন থেকেই নিশির পাশে ছিল আবির।নিলয়কে দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিল প্রথমে,,,তারপরে ভাবল যেহেতু নিশির বাবা তাদের অফিসে কাজ করে তাই,,,হয়তো নিশিকে দেখতে এসেছে।

-: চুপ কর প্লিজ,,,এমন কথা বলিস না।

-:কেন বলব না,,,আরে যার জন্যে তোর আজ এই অবস্থা,, সে তো কোনোকালেই তোর যোগ্য ছিল না।

-:তিথি প্লিজ!!(কান্নাজড়িত গলায়)

এবার তিথি চুপ করে গেল।হঠাৎ নিশির নীলয়ের দিকে নজর গেল।নিলয়ের দিকে তাকিয়ে নিশি হাসার চেষ্টা করলো,,নিলয় মুচকি হেসে নিশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল,,তারপর নিশিকে জিজ্ঞাসা করল-;

-:ভালো আছো??

-:জ্বি,,ভাইয়া।

-:ভেরি গুড,,এখন রেস্ট এ থাকো ওকে।

নিশি মাথা নাড়ালো।আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর নিলয় চলে গেল।
.
.
?
.
.

রাতে তিথির মামা মামী,,আর নিশির মা-বাবা যে যার বাসায় চলে গেল।নিশির বাবা-মা যেতেই চাইছিল না,,আবির অনেক কষ্টে তাদেরকে বাসায় পাঠিয়েছে।কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে তিথিকে নিয়ে,,, তাকে কিছুতেই বাসায় পাঠানো যাচ্ছে না।তাই একমাত্র তিথি আর আবির হসপিটালে থেকে গেল,,নিশির কাছে।রাতে তিথি নিশির কেবিনের পাশে থাকা সোফায় উপর শুয়ে আছে আর আবির নিশির বেডের পাশে একটা চেয়ার নিয়ে,,, বসে বসে ম্যাগাজিন পড়ছিল।হঠাৎ নিশি একটু নড়াচড়া করে উঠলো,,তারপর….
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে