#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??
??পর্ব-১২??
.
?
.
বিঃদ্রঃ ?? আশফি নাম পরিবর্তন করে আবির নাম রাখছি আর মিতু নাম পরিবর্তন করে নিশি নাম রাখছি,,আসলে বারবার টাইপ করতে প্রবলেম হচ্ছে।☺️☺️??
.
.
তিথি মেসেজটা পড়ে কি করবে বুঝতে পারছে না,,নিলয় তাকে এক্ষুনি তার সাথে দেখা করতে যেতে বলেছে।কিন্তু এখন যাবে কিভাবে,, আজ ছুটির দিনে সবাই বাড়িতে আছে।ঠিক তখনই দুলতে দুলতে নিশি তিথির রুমে প্রবেশ করল,,তিথিকে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই তিথি নিশিকে বলে উঠলো-;
-:দোস্ত বিশাল বড় বিপদে পড়েছি একমাত্র তুই পারিস আমাকে হেল্প করতে,, প্লিজ না করিস না।।
-: বল আমাকে কি হেল্প করতে হবে,,, আজ আমি ভীষণ খুশি তুই যা বলবি তাই করবো।।
তিথি নিশিকে কনুই দিয়ে একটা খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করল-;
-: কিরে ব্যাপারটা কি ভাইয়ার রুম থেকে আসার পর থেকে তোর মনে এত লাড্ডু ফুটছে কেন??
-:উফ্ তিথি কি সব উল্টোপাল্টা বলিস এমন কথা বলতে আছে।(লজ্জায় দুহাত দিয়ে নিজের মুখ ডেকে)
-: আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে অত নটাংকি করতে হবে না।শোন আমি নিচে গিয়ে মামীকে যা যা বলবো তুই শুধু আমার কথার সাথে তাল মিলিয়ে জবাব দিবি।আর একটু মন খারাপ করার এক্টিং করবি,,যাতে সবাই ভাবে যে তোর সত্যি সত্যি মন খারাপ।
-:ওকে।।
তিথি নিচে গিয়ে দেখে মামি রান্নাঘরে রান্না করছে,,,,মামা আর ভাইয়া সোফায় বসে বসে টিভি দেখছে।তিথি চিৎকার করে বলতে লাগল-;
-:নিশি কাঁদিস না সব ঠিক হয়ে যাবে আমি তো আছি আন্টির কিচ্ছু হবে না,,তুই দেখিস।।
তিথির অমন কোথায় বাড়ির সবাই তিথির দিকে তাকালো।।মামি রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে নিশি কে বলল-;
-:কি হয়েছে রে নিশি,,তোর মায়ের কি হয়েছে।(চিন্তিতভাবে জিজ্ঞাসা করল)
নিশি কিছু বলতে যাবে তখনই তিথি কান্না করতে করতে(নটাংকি করে) বলতে লাগল-;
-:মামি আর বলোনা,,,আন্টি ফোন করেছিল নিশির ফোনে আন্টির নাকি পেটে প্রচুর গন্ডগোল হচ্ছে,,আমাকে আর নিশিকে এক্ষুনি তাদের বাসায় যেতে বলল,,,হয়তো মেডিকেলে নিয়ে যেতে হতে পারে।
আবির সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল-;
-:সেকি এতটা বাড়াবাড়ি কখন হল আন্টির।।
-:উফ ভাইয়া এসব গন্ডগোল কি দাওয়াত দিয়ে আসবে,,,এগুলো যখন তখন হুটহাট করে চলে আসে।তুই সত্যি সত্যি ডাক্তার তো,,আমার মাঝে মাঝে এইটা নিয়ে সন্দেহ হয়।আচ্ছা আমাদের এখন যেতে হবে,,ওকে আসছি।
আবির বলে উঠলো-;
-: আরে দাঁড়া দাঁড়া আমিও যাব তোদের সাথে,, আমি একজন ডাক্তার হয়ে এভাবে হাত গুটিয়ে তো বসে থাকতে পারব না।।
আবিরের কথা শুনে তিথি চিৎকার করে উঠে-;
-:না তার কোনো দরকার নেই।।
আবির ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই তিথি বলে উঠলো-;
-:না…না মানে এগুলোতো মেয়েলী ব্যাপার,,,আর তাছাড়া আন্টির লজ্জা করবে না তোর সামনে এসব কথা বলতে।তোর মিনিমাম কমন সেন্স বলতে কিছুই নেই ভাইয়া।আন্টি কি তোকে বলবে যে বাবা আমার পেটে না খুব গন্ডগোল করছে?? নিজের মেয়ের জামাইয়ের কাছে কি কেউ কোনদিন এসব কথা বলতে পারে।
-:জামাই!!!! আবির অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো
-:কে কার জামাই??
নিশিও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তিথির দিকে।।তিথি সঙ্গে সঙ্গে বল উঠল-;
-:না…না মানে জা..জামাইয়ের মতোন।।আর তাছাড়া তোর কাছে আন্টি বলতে লজ্জা পাবে আর এত টেনশন করছিস কেন।তেমন যদি কিছু হয় তাহলে তোকে আমরা ফোন করে ডেকে নিবনি।।
তিথির মামি ও বলল-;
-:ঠিক বলেছে তিথি মামনি।তোর এখন যেতে হবে না যদি তেমন কিছু হয় ওরা ফোন করে ডেকে নেবে।
আবির আর কিছু বলল না।।এতক্ষন মামা চুপ করে তাদের কথাগুলো শুনছিল,,,এবার তিথির কাছে গিয়ে মামা সন্দেহ দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করতে লাগলো-;
-:আচ্ছা এমন কি পেটের গন্ডগোল হলো যে,,, এক্ষুনি মেডিকেলে ভর্তি করতে হবে।না তাহলে তো আমাদেরও যাওয়া উচিত,,,তোরা বাচ্চারা একা গিয়ে কি করবি।
তিথি এবার মামীর দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:দেখেছ মামি এই দুঃসময়ে ও মামা আমাকে সন্দেহ করছে,, তুমিই বল ওখানে কি নিশির বাবা নেই??আঙ্কেলে আর আমরা দুজন থাকলেই তো হবে,,তাই তো আমি বললাম এখন যেতে হবে না তোমাদের।।
তিথির মামী এবার মামার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো স্বরে বলল-;
-: এই সময়ও তোমার সন্দেহ করতে হবে মেয়েটার উপর।।বলি বয়স তো কম হলো না,,এবার এই সন্দেহ করাটা ছাড়ো এই বাচ্চা মেয়েটার উপর।সন্দেহ করতে করতে তো তোমার মাথায় একটাও চুল নেই এখন,, যত্তসব।।
তিথির মামা আর কিছু বলল না চুপ করে গেলে জানে এখন বলে আর কোন লাভ হবে না,,তাই একবার নিজের টাকে হাত বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।।তিথি আর নিশি বেরিয়ে গেল।
.
.
?
.
.
তিথি চরম বিরক্ত নিলয়ের উপর,, কোথায় ভাবলো আজকে ছুটির দিনে সারাদিন ঘুমাবে আর ভাইয়া আর নিশির সেটিংসটা করিয়ে দেবে কিন্তু নিলয়ের জ্বালায় তা আর হলো কোথায়,,,, মেসেজ করে বলল তার সাথে নাকি এক্ষুনি দেখা করতেই হবে নইলে সে বাসায় চলে আসবে,,এই এক প্যারা কেন যে বাসাটা দেখাতে গেলাম ব্যাটাকে,,অসহ্য।(মনে মনে কথাগুলো বলতে বলতে তিথি হাঁটছে)।।
নিশিও হেঁটে যাচ্ছে তিথির সাথে সাথে দেখেই বুঝা যাচ্ছে প্রচন্ডরকম রেগে আছে সে তিথির উপর অনেক কষ্টে নিজের রাগ এতক্ষন চেপে রেখেছিল,,কিন্তু এবার আর পারল না,, বলেই ফেলল-;
-:তুই আমার বেস্টু হতেই পারিস না,,তুই যদি সত্যিই আমার বেস্টু হতিস তাহলে কখনই আমাকে এমন বাঁশ খাওয়াতে পারতিস না।।
-: সরি মেরি জান প্লিজ রাগ করিস না আমার ওপর,,,কি করব বল যদি আমি এটা না বলতাম তাহলে আমাকে বাসা থেকে বের হতেই দিত না আর যদি না আসতাম এখানে তাহলে ব্যাটা লুচু ঠিক বাসায় গিয়ে উঠতো।
-: তাই বলে এমন মিথ্যা কথা,,যে আমার মার পেটে গন্ডগোল হচ্ছে তাই তাকে মেডিকেলে নিয়ে যেতে হবে।আন্টি কিভাবে তোর কথা বিশ্বাস করলো আমি বুঝতেই পারছি না।আঙ্কেল কিন্তু তোর উপর একটুও বিশ্বাস করেনি।।
-:I don’t care..
-:???
কিছুটা দূরে গিয়ে তিথি দেখলো নিলয় গাড়িতে হেলান দিয়ে,,,চোখে সানগ্লাস পড়ে পকেটে হাত ডুকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে,, নিলয়কে দেখে তিথি নিশিকে উদ্দেশ্য করে বলল-;
-:ওই দেখ ব্যাটা লুচু দাঁড়িয়ে আছে।
নিশী তিথীর কথায় ওপারে তাকাতেই হা হয়ে গেল-;
-: নিলয় চৌধুরী!!ও এম জি দ্যা টপ বিজনেসম্যান নিলয় চৌধুরী তোর জন্য অপেক্ষা করছে,,,আই কান্ট বিলিভ।।যে আজ পর্যন্ত কোন মেয়েকে পাত্তা দেয়নি সে তোর জন্য অপেক্ষা করছে,,লাইক সিরিয়াসলি।।এটা সত্যিই নিলয় চৌধুরীই তো আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।।বিজনেস টাইকুন নিলয় চৌধুরী এটা!!??
-:??এতটা রিঅ্যাক্ট করার কি আছে।তাহলে এর নাম নিলয় চৌধুরী।আর ওটা কোন বিজনেস টাইকুন ফাইকুন নয়,,ওটা একজন কিডন্যাপার।।
-: Impossible!!উনি আর কিডনাপার কখনোই হতে পারে না।।আমি আব্বুর কাছে শুনেছি নিলয় চৌধুরী দেশের সবচেয়ে বড় বিজনেসম্যান।আর তুই ওনার নাম আজকে প্রথম শুনলি,,তুই কি পাগল নাকি এতদিন উনার বাড়িতে থাকলি আর উনার নামটাই জানিস না।
-:??হুম,,, এবার চল।।
.
.
দূর থেকে তিথিকে আসতে দেখে নিলয়ের মুখ অটোমেটিকলি হাঁ হয়ে গেল,তিথিকে আজ পুরো আকাশী পরি মতোন দেখতে লাগছে।আজ সে আকাশী রঙের চুড়িদার পড়ে এসেছে,,,দুই হাতে চিকন চিকন আকাশচুরি পরা,,,চুলগুলো পনিটেইল করে বাধা,,,এমনকি ওড়না টা পর্যন্ত আকাশী রঙের।।সূর্যের তপ্ত কিরণে মুখটা পাকা টমেটোর মত দেখতে লাগছে,,,চোখ দুটোতে হালকা করে কাজল দেওয়া।কিন্তু এই হালকা কাজলেই সে নিলয়ের চোখে কাজল নয়না হয়ে উঠেছে,,আর চোখে মুখে বিরক্তির ছাপটা যেন তার সৌন্দর্যকে আরও এক কাঠি উপরে নিয়ে গিয়েছে।আর ঠোঁট!!ঠোঁটের কথা না বললেই নয় ঠোঁট যুগল লিপস্টিক ব্যতীত যে এতটা কমল আর গোলাপি হতে পারে,,তা তিথিকে না দেখলে বোঝাই যেত না।।
নিলয় এক ধানে তিথির দিকে তাকিয়ে আছে।তিথির কথাই নিলয়ের ধ্যান ভাঙলো-;
-:কি হয়েছে বলুন??আমাকে ডাকলেন কেন এখানে এই সময়।।
-: তোমাকে দেখতে।।(তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে)
-: মানে।।(কিছুটা অবাক হয়ে)
এবার নিলয় তিথি কে কিছু বলতে যাবে,,ঠিক তখনই তার নজর গেল তিথির পাশে থাকা মেয়েটির উপর।।তিথির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই,,,তিথি একগাল হেসে বলল-;
-:ও,,,ওতো আমার বেস্টু,,ওর নাম নিশি।
নিলয় একটা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে,, নিশি কে উদ্দেশ্য করে বলল-;
-:হাই আই এম নিলয় চৌধুরী এন্ড নাইস টু মিট ইউ।।
নিশি একটু মুচকি হেসে বলল-;
-:সেম টু ইউ ভাইয়া। ভালো আছেন।
-:জ্বি।
নিশি বেশ বুঝতে পারছে নিলয় তিথির সাথে একান্তে টাইম স্পেন করতে চাই,,সেটা তার ফেস দেখেই বোঝা যাচ্ছে।তাই নিশি তিথি কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল-;
-: তিথি তুই বরং ভাইয়ার সাথে কিছুক্ষণ কথা বল,,আমি ততক্ষণ ওই দিক থেকে ঘুরে আসি একটু।
নিলয় কিছুটা হেসে বলল-; ঠিক আছে।
নিশি যেই যেতে নিবে অমনি তিথি তার হাতটা ধরে ফেলল-;
-:আরে তোর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।ইনি খুব ভালো,,কিছু মনে করবে না তুই এখানে থাকলে।কি আপনি কিছু মনে করবেন??(নিলয়ের দিকে তাকিয়ে)
নিলয় তিথির কথা শুনে নিজেকে কিছুটা কন্ট্রোল করে জোর করে হেসে বলল-;
-:না না প্রবলেম কেন হবে।বল তোমরা কি খাবে,, তোমাদের আজ আমি ট্রিট দিব।
-:ওহ তাহলে আপনি আমাদের ট্রিট দিতে ডেকেছেন আজ,,রাইট।
-:হুম।(তিথির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
নিশি বলে উঠলো-;
-: না না ভাইয়া কিছু লাগবেনা,,আমরা…
নিশিকে থামিয়ে তিথি বলে উঠলো-;
-:এই চুপ কর তো।তুই তো তখন বললি যে তোর নাকি খুব খিদে পেয়েছে আর এমনিতে আমারও খুব খুদা পেয়েছে।।আচ্ছা চলুন আমাদের খাওয়াবেন বলছিলেন না,,,আপাতত ফুচকা দোকানে চলুন।।
নিলয়ের আর কি করার আছে বাধ্য হয়ে তিথির সাথেই যেতে লাগলো।
তিথি মনে মনে ভাবছে-;
-:দেখার খুব শখ না।আজকে যদি আপনাকে প্যারা দিতে না পেরেছি তো আমার নাম তিথি নয়।হুম।।
তিথি নিলয়কে রোডের পাশে দাঁড়ানো ফুচকা দোকানে নিয়ে গেল,,নিলয় ফুচকার দোকান টা দেখে তিথিকে বলল-;
-:দেখো তিথি আগের বারে তোমার কথায় খেয়েছি ঠিক আছে,,,বাট এবারে আমার দ্বারা সম্ভব নয়।।তুমি রেস্টুরেন্টে চলো সেখানে যত ইচ্ছা ফুচকা খাও,, কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে খেও না এইগুলো আনহেলদি শরীরের জন্য।।
-:আরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়া,, আর রেস্টুরেন্টে এসির নিচে বসে ফুচকা খাওয়ার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ আছে।।যদি আপনার খেতে ইচ্ছা না করে,,তাহলে আপনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন,,,শুধু বিল পেমেন্ট করলেই হবে।।
নিশি তিথির হাতটা টেনে বললো-;
-:কি সব বলছিস তিথি।।
-:তুই চুপ কর তো।।আচ্ছা মামা ফুচকা বানান চার প্লেট।
-:এত ফুচকা কে খাবে??
-:এক প্লেট তুই খাবি আর তিন প্লেট আমি খাব। আচ্ছা মামা ঝাল দিয়ে দেবেন একটু বেশি করে।
তিথি,নিশি বসে বসে ফুচকা খাচ্ছে আর নিলয় চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তিথিকে দেখছে।এখন তার প্রচুর পরিমাণে রাগ হচ্ছে তিথি উপর। ভেবেছিল তিথির সাথে কিছুটা টাইম স্পেন্ড করবে,,যেহেতু আজকে তিথির স্কুল ছুটি আছে।। কিন্তু তার সুন্দর প্ল্যানটাকে তিথি কাঁচি দিয়ে কেটে দিল,, নিজের বেস্টুকে সাথে এনে।একবার যদি তিথিকে একা পেত,,তাহলে হারে হারে মজা বুঝায়ে দিত।।
কিছুক্ষণ পর তিথি চিল্লাতে লাগলো-;
-:আআআআআআআ।
নিলয় আর নিশি দুজনেই ব্যস্ত হয়ে উঠলো। নিলয়-;
-: কি হয়েছে,,,কি হয়েছে।।
-:ঝাল…প্রচুর ঝাল,,গাল জ্বলছে।।পানি নিয়ে আসুন তাড়াতাড়ি।।
-:তোকে এত ঝাল খেতে বারণ করলাম,,কিন্তু তুই আমার কথা শুনলিই না।।
-:আচ্ছা তোমরা এখানে দাঁড়াও আমি এক্ষুনি পানি আনছি।।
কিছুক্ষণ পর নীলয় একটা পানির বোতল এনে তিথির হাতে দিল।তিথি বোতলটাকে দেখে বলল-;
-:আপনার সাধারন বুদ্ধি নেই আমার ঝাল,, লেগেছে আর সামান্য জল খেলেই ঝালটা চলে যাবে।যান গিয়ে যে কোন জুস জাতীয় পানীয় নিয়ে আসুন আমর জন্য।
-:আচ্ছা দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি।
কিছুক্ষণ পর নিলয় তিথির দিকে একটা জুসের বোতল এগিয়ে দিল।। তিথি জুসের বোতল টা দেখে বলল-;
-:আসলে আমার ঝাল লাগলে,,,আমি প্রাণ লিচু ড্রিংক খাই।।এইসব খাইনা,,একটু গিয়ে নিয়ে আসুন।।
নিলয়ের এখন মনে হচ্ছে তিথিকে তুলে একটা আছাড় মারতে,,,এত ফাজিল মেয়ে সে তার হোল লাইফে একটাও দেখেনি,,,কেন যে এরকম একটা মেয়েকে তার মনে ধরল,,এখনো মাথায় ঢোকেনা।তিথির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই,, তিথি বলে উঠলো-;
-: প্লিজজজজজজ যান।আমার খুব ঝাল লাগছে।
নিলয় আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল।।কিছুক্ষণ পর নিলয় চারটে প্রাণ লিচু ড্রিংক এর বোতল এনে,,,তিথির হাতে তিনটে দিল আর নিশি হাতে একটা দিল।।
নিশি নিলয় কে বলল-;
-:ভাইয়া আপনি একটা নেন।।রোদে তো ঘামে যাচ্ছেন।।
এবার তিথি নিলয়ের দিকে তাকালে,, তাকিয়ে পুরো হা হয়ে গেল হোয়াইট কালারের ফুল হাতা শার্ট পরে আছে নিলয়,,শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো,,হাতে সিলভার কালারের রিস্ট ওয়াচ,, ব্ল্যাক কালারের প্যান্ট,, গরমের কারণে গলায় রেড কালারের টাইটা লুস করা আছে আর উপরে বোতাম টা খলা আছে,, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপাল ছুঁয়ে আছে,, প্রচণ্ড গরমে শার্ট পুরো ভিজে গিয়েছে,, দেখেই বোঝা যাচ্ছে সোজা অফিস থেকে এখানে এসেছে।। এবার তিথি নিজেরই খারাপ লাগছে,,, এতবার গরমে ছোটাছুটি করার জন্য মুখটা রক্তিম আভা ধারন করেছে,,হঠাৎ তিথির নজর গেল নিলয় ঠোঁটের উপর,,নিলয় দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটটা চেপে ধরে ফোন ঘাটছে আর আরেক হাত দিয়ে বারবার কপালের ঘাম মুচছে,,, তিথি এতদিন খেয়ালই করেনি নিলয়ের ঠোঁটগুলোকে।। টকটকে লাল ঠোঁট নিলয়ের,, আর দাঁত দিয়ে চেপে থাকার কারণে নিচের ঠোঁটটা ভিজা ভিজা লাগছে।ছেলেদের ঠোঁট গুলো যে এত সুন্দর হয় তা তিথির জানাই ছিল না।
নিশির ডাকের তিথির ধ্যান ভাঙলো-;
-:কিরে বাড়ি যাবি না।।
-:হ্যাঁ হ্যাঁ চল।
বলে উঠে দাঁড়ালো,, তখনই নীলয় বলে উঠল-;
-:নিশি তুমি একটু দুমিনিট ওপাশে যাবে।আমার তিথির সাথে একটু কথা ছিল।।
-:জি ভাইয়া।(নীলয়ের দিকে তাকিয়ে)
এই বলে নিশি চলে যাওয়ার জন্য এগোতেই তিথি বলে উঠলো-;
-:আরে নিশি কোথায় যাচ্ছিস,,তোর আম্মুর কাছে যাবি না।আন্টির না শরীর খারাপ,,চল চল তাড়াতাড়ি চল।আচ্ছা আমরা এখন আসি,,ওর আম্মুর খুব শরীর খারাপ দেখতে যাব আমরা।। আপনি ডাকলেন বলেই আসতে হল নইলে আজ ওর বাসায় যাওয়ার কথা ছিল আমার।(জোর করে হেঁসে)
নিলয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই,,তিথি বলে উঠলো-;
-:আমাদের অনেক লেট হয়ে যাচ্ছে আমরা আসছি।
বলে চলে গেল,,তিথি মনে মনে ভাবছে-; আল্লাহ বাঁচিয়ে নিয়েছো আমাকে,,,আজ আমাকে একা পেলে রাক্ষসটা সিওর গিলে ফেলতে।
এই দিকে নিলয় তিথির দিকে তাকিয়ে,,বাঁকা হেসে বলতে লাগলো-;
-:কাজটা ঠিক করলা না পাখি,,,এবার বুঝবে নিলয় চৌধুরী কী করতে পারে। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ।
এই বলে সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেল।।
.
.
?
.
.
রাত এগারোটা তিথি ফোনটা বারবার চেক করছে,,,আজকে নিলয় একবারও তাকে ফোন বা মেসেজ দেয়নি।তিথির মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে,,,কিছুই ভালো লাগছে না।তিথি মনে মনে ভাবল-;
-: লোকটা তো প্রতিদিন আমাকে দিনে একবার অন্তত ফোন করে কিন্তু আজ একবারও করল না কেন??আজকের বেলার ঘটনার জন্য কি আমার ওপর রাগ করে আছে। রাগ করলে আমার কি আমার এত কষ্ট লাগছে কেন??বাই দ্যা ওয়ে তিথী অ্যাট এনি চান্স তুই লোকটাকে কোনভাবে মিস করছিস নাতো।একদম না এসব ভাবাও পাপ। ফোন দেয় নাই তো কি হইছে,,, যাক বাবা বাঁচা গেল।। এবার আমি নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে পারবো।মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে তিথি একসময় ঘুমিয়ে পরল।কিন্তু তিথি জানতো না তার নিশ্চিন্ত ঘুমটাকে অনিশ্চিন্ত করতে খুব শীঘ্রই নিলয় তার রুমে প্রবেশ করবে।
.
.
.
রাত তখন দুটো,,অনেক কষ্টে তিথিদের বাসার পাঁচিল টপকে,,,পাইপ দিয়ে দোতালায় তিথির রুমে বারান্দায় পৌঁছালো নিলয়।তিথির রুমে ব্যালকনি থাকায় নিলয়ের সুবিধাই হলো।।আস্তে করে ব্যালকনির দরজা টান দিতেই দরজা খুলে গেল। নিলয় কিছুটা অবাক হল তারপর মনে মনে ভাবল-;
-:এই মেয়েটার কখনও বুদ্ধি হবে না।।এরকম ভাবে কেউ দরজা খুলে রাখে,,আমি না হয়ে যদি অন্য কেউ আসতো।
তারপর দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখেল তিথি এলোমেলোভাবে খাটে শুয়ে আছে,, আর চারদিকে চারটে টেডি বিয়ার রাখা আছে।। তিথির অমন শোয়া দেখে হেসে উঠলো নিলয়।। তারপর আস্তে করে তিথির পাশে গিয়ে বসল,,, তারপর…….
.
.
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]