#তোমাকে আমার প্রয়োজন ??
#পর্ব-০১
#মেঘ পরী
-:উম্….উম্
-:এই মেয়ে চুপচাপ বসে থাকো।বেশি নড়াচড়া করবে না।
পাশ থেকে অপর আর একটা লোক বলল-
-:বস কখন আসবে?
-:আর আধ ঘন্টার মধ্যেই চলে আসবে।
-:উম্….উম্
-:উফ্ জ্বালাতন কোরে ছারলো দেখছি মেয়েটা।(প্রথম লোকটি)
-: মুখের বাঁধন খুলে দিই বরং,দেখি কি বলে।(দ্বিতীয় লোকটি)
-:বস কিছু বলবেনা তো।
-:আরে আমরা তো শুধু মুখের বাঁধন খুলব।
-:তাহলে তাই কর।
এরপর মেয়েটির মুখের বাঁধন খুলে দিল।খুলে দেবার সাথে সাথে মেয়েটি চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
-:এই কে তোরা।আমাকে এই ভাবে বেঁধে রাখার সাহস কি করে হলো।জানিস তোরা আমি কে। একবার এখান থেকে ছাড়া পায় এক এক টা কে যদি জেলের ভাত না খাওয়াতে পারি তো আমার নাম তিথি নয়, দেখে নিশ।
-: উফ কান ঝালাপালা করে দিল মেয়েটা। এইজন্য আমি এর মুখটা খুলতে চাইছিলাম না, দেখলি তো।
-:আমি কি জানতাম নাকি এত বকবক করবে।(অসহায় মুখে বলল দ্বিতীয় লোকটি)
-: এই এই আমার হাতের বাধন খোল জলদি।উফ্ হাতটা যন্ত্রনায় ছেড়ে যাচ্ছে রে। আরে মুখ পোড়া বাঁদর খুলনা তারাতাড়ি আমার হাত তা।
-: দেখুন ম্যাডাম আপনি চুপচাপ একটু বসে থাকুন।আমাদের বস এক্ষুনি আসবে।আর হাতের বাধন খুলার পারমিশন আমাদের নেই। তাই বলছি নিজের ভালোর জন্য চুপচাপ থাকুন।
-:এই কে রে তোদের বস। একবার শুধু আমার হাত আর চোখের বাঁধন টা একবার খুলে দেখ শুধু। তারপর দেখ তোর কি করি। তোদের বস সাথে তোদের এমন হাল করব না, যে 10 দিন বেড থেকে উঠতে পারবি না। ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন আমি।ব্লেক বেল্ট পেয়েছি আমি।(তিথি)
আর কিছু বলার আগেই,প্রথম লোকটার ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।ফোনটা ধরে কিছুক্ষণ কথা বলার পর দ্বিতীয় লোকটিকে বলল-
-:রাফি বস চলে এসেছে। এক্ষুনি এই মেয়েটার মুখ টেপটা লাগিয়ে দে।
-:হুম। এরপর মুখের টেপটা লাগিয়ে দিল।
?
কিছুক্ষণ পর নিলয় চৌধুরী ঘরে প্রবেশ করল। [নিলয় চৌধুরী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন একবার। নিলয় চৌধুরী দ্যা চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির একমাত্র ওনার। বাবা-মা ছোটবেলায় কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে।ছয় ফিট লম্বা, গায়ের রং ফর্সা, চুলগুলো সিল্কি কপাল ছুঁয়ে যায়,বয়স ২৬,ঠোঁটের রং টকটকে লাল,দেখলে মনে হবে যেন কেউ লিপস্টিক পরিয়ে দিয়েছে। প্রচন্ড বদমেজাজি এবং রাগী স্বভাবের লোক। যেটা একবার চাই সেটা নিয়েই ছাড়ে যেকোনো মূল্যে। সবসময় অ্যাটিটিউড নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তার এই কিলার মার্কা রূপ দেখে সব মেয়েরাই ঘায়েল। নিলয় চৌধুরী এই রূপটার সাথে সবাই পরিচিত হলেও আরো একটি রূপের সাথে খুব কম সংখ্যক মানুষই পরিচিত। আর সেটা হল নিলয় চৌধুরী আন্ডারওয়ার্ল্ড একজন নামকরা মাফিয়া। দেশের যেখানে যেখানে কালোবাজারি,নারী পাচার, ড্রাগ সাপ্লাই ইত্যাদি হয় সেখানে তাঁর দলের লোকেরা গিয়ে সেই সব ক্রিমিনালদের তুলে আনে এবং নিলয় নিজের হাতে তাদের শাস্তি দেয়। এমনকি কালোবাজারী সাথেযুক্ত মন্ত্রীরাও নিলয় কে দেখে ভয় কাট হয়ে থাকে। সবাই জানে নিলয়ের পাওয়ার কতটা তাই কেউ কিছু বলে না।সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিলয় এবং তার লোকেরা সব সময় রুখে দাঁড়িয়েছে এবং অন্যায়কারীদের শাস্তি দিয়ে এসেছে।চলুন দেখা যাক কেন নিলয় তিথি কে ধরে এনেছে।]
নিলয় ঘরে ঢুকে দেখল একটা ১৬- ১৭ বয়সী মেয়ে চেয়ারে চোখ মুখ হাত বাঁধা অবস্থায় বসে আছে। পরনে তার বেবি পিঙ্ক কালারের বারবি আঁকা টি শার্ট,আর থ্রি কোয়ার্টার জিন্সের প্যান্ট, দুই দিকে চুল বাধা। চুলগুলো বেশ লম্বা লম্বা। মেয়েটাকে দেখামাত্রই নিলয় রেগে গিয়ে লোকগুলোর দিকে তাকাল আর বলল-
-: একটা কাজ ও ঠিক করে করতে পারিস না তোরা। আমি কাকে ধরে আনতে বলেছিলাম।আর কাকে ধরে এনেছিস তোরা।একটা বাচ্চা মেয়েকে। আমি তদেরকে মিনিস্টারের মেয়েকে ধরে আনতে বলেছিলাম,একটা বাচ্চা মেয়েকে নয়।(রেগে চিল্লিয়ে বলল নিলয়)
-:স্যার এইটাই তো মিনিস্টার এর মেয়ে।(ভয়ে ভয়ে রাফি বলল।)
-: তোদের মাথা,ছবিটা ভালোভাবে দেখেছিস।
-: মানে..মানে.আসলে।(রাফি)
-: কী মানে মানে করছি সত্যি কথাটা বল।হারি আপ।
-: আসলে স্যার ছবিটা না হারিয়ে গিয়েছিল।কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন যে পার্কের পাশে যে মেয়েটা একটা লাল রঙের ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে সেটাই মিনিস্টার এর মেয়ে।(সোহেল)
-: জাস্ট শাট আপ। তোদের কোন একটা কমন সেন্স নেই লালব্যাগ যার কাছে থাকবে সেটাই হবে মিনিস্টারের মেয়ে।গাধা একটা।(রেগে চিল্লিয়ে বলল নিলয়)
-: সরি স্যার এখন কি হবে একে কি ওখানে রেখে আসবো।
-: না এখন একে ছাড়লে প্রবলেম হতে পারে। আগে আসল মেয়েটা কে তুলে নিয়ে আয়। তারপর কেসটা সলভ হলে একে ছাড়া হবে। নাহলে প্রবলেম হয়ে যেতে পারে।
-: তাহলে স্যার ঐই মেয়েটাকে কি করব।
কিছুক্ষণ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা চিন্তা করল নিলয়। তারপর বলল একে আমাদের ঘরের গেস্টরুমে সিফ্ট কর। আর আসল মেয়েটাকে ধরে এনে এই ঘরে বেঁধে রাখ। এদের একসাথে রাখলে রিক্স হয়ে যাবে। এই বলে নিলয় চলে গেল। নিলয়ের কথামতো মেয়েটাকে নিলয়ের বাড়ির গেস্ট রুমে নিয়ে গিয়ে রেখে দিল। তারপর তারা মিনিস্টারের মেয়েকে ধরে এনে আবার ওই রুমে বেঁধে রাখল। অবশ্য এবার কোনো ভুল হয়নি তাদের কারণ নিলয় তাদের ফোনে মেয়েটির ছবি দিয়ে দিয়েছিল।
?
এদিকে তিথী চোখ,মুখ, হাত বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছে। আর মনে মনে হাজারটা গালি দিচ্ছে সেই সব লোকেদের যারা তাকে এখানে বন্দি করে রেখেছে। রাত বারোটায় নিলয় ঘরে ফিরে নিজের রুমে প্রবেশ করতে যাবে কি পাশের গেস্ট রুম থেকে গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেল।আওয়াজটা কে অনুসরণ করে গেস্ট রুমের দিকে গিয়ে,দরজা খুলল তারপর লাইট জ্বালিয়ে দেখল যে তিথি হাত পা ছটফট করছে আর গোঙানির আওয়াজ বের করছে। নিলয় মনে মনে ভাবল-
-: ইস মেয়েটার কথা আমি একদম ভুলে গিয়েছিলাম।
এই বলে নিলয় তিথির সামনে বসল এবং তিথির মুখের বাঁধন খুলে দিল। খুলে দিবার সাথে সাথে তিথি চেঁচিয়ে উঠলো-
-: কোন গন্ডার,হাতি,বাঁদর,ইঁদুর,টিকটিকি আমাকে ধরে এনেছিস। সেই কখন থেকে আমাকে বেঁধে রেখেছিস না আমাকে বাড়ি যেতে দিচ্ছিস আর না আমাকে খেতে দিচ্ছিস।শালা খিদেতে আমার পেটে ধুম ধুম আওয়াজ হচ্ছে শুনতে পাচ্ছিস না।
তিথির এরকম কথা শুনে নিলয় ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল ।তারপর মনে মনে ভাবল সত্যি তো আমিতো একদমই ভুলে গিয়েছিলাম, খাবার কথা। কিন্তু তিথির পরবর্তী কথা শুনে নিলয় মুহূর্তেই রেগে যায়।
-: এই বাদুড় তোদের বস কোথায় রে।তাকে তো আমি নর্দমায় চোবাব। আমি শুনেছি তার সব কথা, আমাকে ভুল ভাবে ধরে এনে, আবার আমাকে বেঁধে রেখেছে।যদি না আমি তাকে জেলের ভাত খাওয়াতে পারি,তো আমার নাম ও তিথি নয়।
-: এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না তুমি আমাকে জেলের ভাত খাওয়াবে।তুমি জানো আমি কে।(রেগে চিল্লিয়ে নিলয় বলল)
তিথি এমন হুংকার শুনে কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল তারপর আবার নিজেকে সামলিয়ে বলল-
-:উম্ নিজেই নিজের নাম জানে না আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করছে তিনি কে। আগে তুই বল তুই কি জানিস আমি কে। আমি হলাম তিথি,তিথি আহমেদ।ক্যারাটে যানি,ব্ল্যাক বেল্ট আছে আমার। একবার শুধু আমার হাতের বাঁধন খুলে দে, তারপর দেখ তোর কি হাল করি।(কিছুটা ভাব নিয়ে বলল)
নিলয় তো হা হয়ে গেল কিছুক্ষণ এর জন্যে। তারপর কিছু বলতে যাবে কি এমন সময়,-
.
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]