Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোকে ভালোবেসে খুব পার্ট-০৬

তোকে ভালোবেসে খুব পার্ট-০৬

#তোকে_ভালোবেসে_খুব
#পার্ট_৬
writer:#সারা_মেহেক

ঘড়ির কাঁটা ১২.৩০ পার হয়ে গিয়েছে।রাতের নিস্তব্ধতা ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে।সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কুয়াশার ঘনত্বতা।একটু একটু করে সামনে থাকা ইট সিমেন্টের দালানগুলো অদৃশ্য হতে লাগলো মৌ এর কাছে।সোয়েটারের উপর একটা শাল গায়ে জড়িয়ে বারান্দায় দাঁড়ীয়ে দাঁড়ীয়ে রাতের পরিবেশটা উপভোগ করছে।যদিও মনটা তার তেমন ভালো নেই।তবে এমন একটা লোভনীয় পরিবেশ উপভোগ না করে থাকা যায় না।এমন সৌন্দর্যই তো খারাপ মনকে নিমিষেই ভালো করে দেয়।
মৌ জোরে একটা শ্বাস টেনে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।লালচে কালো রংয়ের এ রাতের আকাশটা যেনো একটা কাপড়।যেখানে মুক্তোর মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য তারা।আর এ তারার মাঝে অসম্ভব সুন্দর একটা চাঁদ।যাকে একটা চকচকে রুপোর থালার সাথে তুলনা করলে ভুল হবে না।মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে এ যেনো ক্যানভাসে আঁকা এক সাদা কালো ছবি।
রাতের এ সৌন্দর্যকে আরো পরিপূর্ণতা দান করেছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।রাতকে পুরোপুরি চুপচাপ হতে দেয়নি এ পুঁচকি পোকাগুলো।একপ্রকার গানে মাতিয়ে রেখেছে রাতটাকে।
মৌ মুগ্ধ হয়ে প্রতিটা সৌন্দর্য খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো।হুট করে হাতে থাকা ফোনটা বেজে উঠে।মৌ সামান্য বিরক্তি নিয়ে ফোনের লো ভলিউম বাটন টা দিয়ে রিংটোনের আওয়াজটা খানিকক্ষণ এর জন্য বন্ধ করে দেয়।কয়েক সেকেন্ড পর আবারো ফোনটা বেজে উঠলো।মৌ এবার চরম বিরক্তি নিয়ে ফোনটা চোখের সামনে ধরলো।ফোনের স্ক্রিনে “মিস্টার মিরর” লেখা দেখে বিরক্তির মাত্রাটা এক ধাপ উপরে উঠে গেলো।তার এখন ইচ্ছা করছে সামনের ড্রেনের পানিতে আয়ানের চাঁদ মুখখানা ডুবিয়ে পাতিলের কালি লাগিয়ে সারা রাস্তায় ঘুরাতে।তবে হাজারো ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তো তা চর সম্ভব না। তাই সে বিরক্তি নিয়েই ফোনটা রিসিভ করলো। কারন সে জানে এখন ফোন কেটে দিলে আয়ান আবারো তাকে কল করবে।
ফোনটা কানে নিয়ে বিরক্তির সুরে মৌ বললো,

—“এতো রাতে কোনো ভদ্র ঘরের ছেলে যে একটা মেয়েকে কল করে ডিস্টার্ব করে তা জানা ছিলো না।”

মৌ এর কথা শেষ হতে না হতেই ওপাশ থেকে বাজখাঁই গলায় বললো,

—“প্রথমে কল দিয়েছিলাম রিসিভ করিস নি কেনো?আর আমাকে কোন এংগেল দিয়ে অভদ্র লাগে শুনি?”

মৌ শান্ত গলায় বললো,

—“আপনার প্রথম প্রশ্নের জবাব হলো,আপনার ফোন রিসিভ করতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছা করছিলো না তাই করিনি।
আর দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব হলো,আপনাকে সব এংগেল দিয়েই আস্ত একটা অভদ্র লাগে।যদিও আপনি একজন সুদর্শন পুরুষ তবে আপনার এ সুদর্শনতাকে ছাপিয়ে অভদ্রের ট্যাগটা আপনার ক্ষেত্রে বেশি মানানসই।নাক,মুখ,চোখ,কথাবার্তা, আপনার সবই অভদ্রতার একেকটা জলজ্যান্ত উদাহরন।”

মৌ এর এমন ত্যাড়া টাইপের জবাব আয়ান মোটেও আশা করেনি।ঠিক এসব ত্যাড়ামোর কারনেই মৌ কে তার সহ্য হয়না।আর এমন অসহ্য মেয়েকে বিয়ে করে একই রুমে থাকা!!!!এসব চিন্তা করলেই দুনিয়া চক্কর দিয়ে উঠে তার।
আয়ান রাগী কণ্ঠে বললো,

—“আমি বেশ ভদ্র মানুষ।তুইই আস্ত একটা অভদ্র।কখনো ভালো করে কথা বলতে জানিস না।”

মৌ একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

—“আপনার মতো অভদ্রের সাথে ভদ্রতা দেখাতে নেই।এমনটা করলে ভদ্রতাটাও লজ্জায় মুখ লুকিয়ে ফেলবে।”

—“তুই কিন্তু বেশি কথা বলে ফেলছিস…”

—“মুখ আমার।সো যত ইচ্ছা ততো কথা বলবো আমি।”

—“তোর কোন পাকা ধানে আমি মই দিয়েছি যে তুই এমন করছিস?”

—” ‘রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করা’ নামক পাকা ধানে আপনি মই দিয়েছেন।”

মৌ এর কথা বার্তা শুনে আয়ানের মনে হলো মৌ নিশ্চয় এখন ঝগড়ার মুডে আছে।কিন্তু সে এখন এ বিষয়ে ঝগড়া করতে চাইছে না।সে তো জানতে চাইছে রাফিকে পছন্দ করা সত্ত্বেও মৌ বিয়েতে রাজি হলো কেনো?তার পরিবারকে এ কথা বললো না কেনো?কিন্তু মৌ যা কথা শুরু করেছে তাতে কাজের কথা তার আর বলা হবে না সে জানে।তাই সে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

—“তুই রাফিকে ভালোবাসা সত্ত্বেও আমাকে বিয়ে করছিস কেনো?”

মৌ জানতো আয়ান তাকে কোনো না কোনো এক সময়ে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করবেই।কিন্তু আজকেই যে করবে সেটা সে জানতো না।সে বললো,

—“আপনিও তো মৌসুমি নামকে মেয়েকে ভালোবাসেন। তাহলে এ বিয়েতে রাজি কেনো হলেন?”

আয়ান বিরক্তি নিয়ে বললো,

—“প্রশ্নের বদলে প্রশ্ন করিস কেনো??আগে প্রশ্নটার জবাব দিবি তারপর ইচ্ছা হলে জবাব দিবি।”

মৌ এবার ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

—“আমি আমার পরিবারকে ভালোবাসি।রাফি ভাইয়াকে না।আর আমার পরিবার আমার জন্য যে ডিসিশন নিয়েছে তা নিশ্চয় ভেবে চিন্তে আমার ভালোর জন্যই নিয়েছে।সবটা ভেবেই আমি রাজি হয়েছি।এবার আপনারটা বলুন আয়ান ভাইয়া।”

বড়দের মতো মৌ এর মুখে এতো স্যাক্রিফাইস মুলক কথা শুনে আয়ান ওপাশে একপ্রকার হা হয়ে রইলো।মৌ এর এমন পাকা পাকা কথা সে আশা করেছিলো না।সে ভেবেছিলো এবারো হয়তো কোনো ত্যাড়া টাইপের জবাব দিবে।কিন্তু তার ধারনাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমানিত করলো মৌ।

ওপাশে আয়ানের নিরবতা টের পেয়ে মৌ একটু গলা ঝেড়ে বললো,

—“কি হলো আয়ান ভাইয়া?ঠিক জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না?মশলাপাতি দিয়ে মশালাদার জবাব তৈরী করছেন বুঝি?”

আয়ান নিজের ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এসে বললো,

—“আমি তোর মতো অতো ভাবুক না।”

—“তো জবাবটা বলুন।”

—“আমিও আমার ফ্যামিলিকে ভালোবাসি।তবে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি দাদিকে। আর দাদির ইচ্ছা তুই আমাদের বাড়ীর বউ হয়ে আয়।আমার ইচ্ছা না এটা।”

—“জানি এসব।তো আপনার মৌসুমির কি হবে?”

মৌসুমির কথা এভাবে জিজ্ঞেস করায় আয়ানের খুব একটা খারাপ বোধ হলো না। কারন সে মৌসুমির সাথে মন দিয়ে যুক্ত না। শুধুই ভালো লাগায় যুক্ত।তাই তো রিলেশন এর দিক বিবেচনায় আনলে আয়ানের কোনো কষ্টই হচ্ছে না।কষ্ট হচ্ছে দায়িত্ব নিতে আর নিজের স্বাধীনতাকে চোখের সামনে হারিয়ে যেতে দেখে।
আয়ান এবার বললো,

—“ওসব বাদ।ওর প্রতি আমার তেমন ফিলিংস নেই।তোর আর আমার বিয়েটা না চাইতেও আমাকে মানতে হবে।এটা সমঝোতা ছাড়া আর কিছুই না।”

—“আমার কাছেও।”

আয়ান কিছুক্ষন থেমে থেকে বললো,

—“তুই সত্যিই রাফিকে ভালোবাসিস না??”

মৌ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

—“আপনাকে তখনও বলেছি।আবারো বলছি,আমি রাফি ভাইয়াকে কোনোদিনও ভালোবাসিনি।উনার প্রতি আমার শুধু ভালোলাগা ছিলো।আর খানিক সময়ের মায়া ছিলো।পরিবারের খাতিরে এ মায়াটাকেও বিসর্জন দিতে রাজি আমি।”
কথাগুলো বলার সময় গলায় যেনো কিছু বেঁধে আসছিলো মৌ এর।কি এক অজানা কষ্টে।হয়তো এ কষ্টে যে সে একজনকে পছন্দ করতো,মনে ধরেছিলো তার,কিন্তু সাহসের অভাবে বলতে পারেনি তার পরিবারকে।আবার হয়তো এ কষ্টে যে,তার পরিবার তার অমত ছাড়াই তার জীবনের এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো।যার সাথে জীবনে এক ঘরে থাকার কথাও মাথা আনেনি মৌ,তার সাথেই বিয়ে নামক এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবে সে!শুধুমাত্র পরিবার চায় বলে!আচ্ছা কোনোদিন যদি এমন হয় যে, আয়ানের সাথে তার ডিভোর্স হয়ে গেলো,তখন কি তার পরিবার তাকে আবারো ফিরিয়ে নেবে নাকি কোনো না কোনো এক অযুহাতে দূরে সরিয়ে দিবে?কারন মৌ মনে করে,সে তার পরিবারকে যতোটা ভালোবাসে, তার পরিবার তাকে ততোটা ভালোবাসে না।এক্ষেত্রে তার বাবার ভালোবাসাটা সবচেয়ে কম ধরা যায় হয়তো।এসব নানা চিন্তা ভাবনা করে মৌ একটা ক্লান্তির শ্বাস ফেললো।যেনো সে খুবই ক্লান্ত এসব দেখে দেখে।

মৌ এর কথাবার্তা শুনে আয়ান বারবার শুধু অবাকই হচ্ছে।কথা বলার সময় মৌ এর গলায় স্বরের যে পরিবর্তন এসেছিলো সেটা না চাইতেও সে শুনে ফেলেছে।
আয়ানের গলার স্বর হঠাৎ করেই নরম হয়ে এলো।সে বললো,

—“এতোটা ভালোবাসিস তুই তোর পরিবারকে?”

—“হুম…কিন্তু আমার মনে হয় কি জানেন আয়ান ভাইয়া?”

—“কি মনে হয়?”

—“আমি যতোটা আমার পরিবারকে ভালোবাসি তারা হয়তো আমাকে ততোটা ভালোবাসে না।তাই তো না বলেই আমার জীবনটা এমন পথে নিয়ে গেলো তারা।আর সবচেয়ে বেশি কম বন্ডিং কার সাথে জানেন?আমার আব্বুর সাথে।মানুষটা কঠোর হতে হতে একদম পাথর হয়ে গিয়েছে।”বলে ওপাশে খানিকটা চোখেরজল ফেললো মৌ।যে চোখেরজল এর সাক্ষী শুধুমাত্রই রাতের এ নৈসর্গিক সৌন্দর্যটা।

না চাইতেও মৌ এর কথাগুলো আয়ানের সোজা বুকে গিয়ে লাগলো।কেনো জানি তার এ মেয়েটার কষ্টটা সহ্য হচ্ছে না।হুট করে তার ইচ্ছা করছে, মৌ কে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে,কষ্ট পাবি না মৌমাছি।একদমই কষ্ট পাবি না।আমি আছি না তোর সাথে।তো এতো কষ্টের কি আছে হুম?তোর কষ্টটা আমার সহ্য হচ্ছে না।
এসব সাতসতেরো ভেবে পরক্ষনেই আয়ান নিজের কপালে চাটি মেরে মনে মনে বললো,তুই কি আস্ত পাগল নাকি রে?যে মেয়েকে তুই সহ্য করতে পারিস না,যে মেয়ে তোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে তাকে তুই শান্ত্বনা দিবি!বুকে জড়িয়ে ধরবি!নো নেভার।এসব বলে আয়ান আবার অবাক হয়ে ভাবলো যে সে মৌ এর সাথে এতোটা ভালো করে কোনোদিনও কথা বলেনি।প্রথম পরিচিত হওয়ার দু/তিনদিন ঠিকঠাক কথা বলেছে।এরপর থেকে যতোবারই সে কথা বলেছে,ততোবারই রাগ করেছে।ঝগড়া করেছে।তাও আবার ছোটো কারন নিয়ে।আর আজকে কি হচ্ছে তার সাথে!!না না এমন হলে তো চলবে না। এমন হলে তো মৌ তাকে পেয়ে বসবে।নাহ এমন হতে দেওয়া যাবে না।ঠিকভাবে কথা বলা যাবে না।।এসব ভেবেই আয়ান শক্ত গলায় বললো,

—“তুই এতো রাত জেগে জেগে করছিলি টা কি?”

মৌ নিজেও এক আবেগে হারিয়ে গিয়েছিলো।তাই তো আয়ানের সাথে এতো কথা বলে ফেলেছে সে।কিন্তু আয়ানের গলার স্বর শুনেই মৌ ও রাগী গলায় বললো,

—“সেটা আপনার জানার বিষয় না।আমি যা খুশি তাই করবো।তাতে আপনার কি যায় আসে?আমি আপনাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।”

আয়ানও রেগে বললো,

—“থাক অতো বলা লাগবে না। তোর কথা শুনলে আমার কান পঁচে যায়।আর তুই তো সোজা মনের মানুষ না। আর তোর সাথে কথা বলার ইচ্ছাও নেই।”বলে আয়ান মৌ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দেয়।আর মৌ ও রেগে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে শুয়ে পরে।

________________________

দেখতে দেখতে ক্যালেন্ডারের পাতায় দিন চলে যেতে লাগলো।সময় তো না যেনো এক পাগলা ছুটন্ত ঘোড়া।এই সময়কে আবারো হাতের মুঠোয় রাখা বালুর সাথে তুলনা করলেও ভুল হবে না।হাতের মুঠোয় জোরে করেও যেমন বালুকে আটকে রাখা যায় না তেমনি হাজার জোর করেও সময়কে আটকে রাখা যায় না।
আজকে শুক্রবার।আয়ান আর মৌ এর বিয়ে।গত একটা সপ্তাহ একদিনের জন্যও কথা বলেনি আয়ান আর মৌ।ইচ্ছাকৃত ভাবেই তারা কথা বলেনি।
বিয়ের সাজে সজ্জিত হয়ে আছে মৌ নামক রূপসী এক রমনি।যাকে দেখে রওনকের মনে হাজারো উথাল পাতাল ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। না চাইতেও এসব ঘটনার সাক্ষী হতে হচ্ছে তাকে।

কাজি সাহেব আয়ানকে কবুল বলতে বললেন।এই কবুল বলতে গিয়ে তার যেনো দম ছুটে যাচ্ছে।কাজি সাহেবের কবুল বলতে বলায় সে সাথে সাথে বলেনি।বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করছে সে।তার এমন অপেক্ষা দেখে রাহুল হাসতে হাসতে বললো,

—“ভাই,তুই মেয়ে না যে তোকে বাড়ীঘর ছেড়ে শ্বশুড় বাড়ী যেতে হবে তাই এতো চিন্তা করছিস।তুই নিজের বাড়ীতেই থাকছিস।তবে হ্যাঁ নিজের স্বাধীনতাটা হারাচ্ছিস আর নিজের জীবনের চাবি মৌ এর হাতে দিচ্ছিস।”

রাহুলের কথা শুনে আয়ান মনে মনে বললো,

—“কিভাবে যে বলি,তুই যা বলছিস তা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি।আর আমি এ সত্যি মানতে চাইছি না।কোনোমতেই না।”
কিন্তু মনের কথা মনে রেখে দিয়ে আয়ান সামান্য বিরক্তি নিয়ে কবুল বললো।

এবার মৌ এর কবুল বলার পালা।আয়ান আর সে আলাদা রুমে বসে আছে।বিয়ের অনুষ্টানটা মৌ দের বাসাতেই আয়োজন করা হয়েছে।
কাজি সাহেব মৌ কে কবুল বলতে বললে হঠাৎ করে কি এক ভয় তাকে এসে ঘিরে ধরলো।সে জানে না এটা কিসের ভয়।নতুন পরিবেশ,পরিবারে যাওয়ার ভয়।নাকি নিজ পরিবারকে ছেড়ে যাওয়ার ভয় নাকি আয়ানের মতো জীবনসঙ্গী পাবার ভয়।কবুল বলতে গিয়ে হুট করেই মৌ কান্না শুরু করে দিলো।সে কান্না করতে করতে জান্নাতকে জড়িয়ে ধরলো।তার এ কান্নটা সবাই স্বাভাবিকভাবে নিলেও রওনক এ কান্না সহ্য করতে পারলো না।তার বুকটা মনে হচ্ছে কেউ চিরে দিচ্ছে। খুব খালি খালি অনুভুত হচ্ছে তার নিজেকে।তার মনে হচ্ছে কি এক অমূল্য জিনিস চলে যাচ্ছে তার কাছ থেকে চিরতরের জন্য।
নিজের সাহসের সাথে পেরে না উঠতে পারায় রওনককে আজ খোয়াতে হয়েছে মৌ কে।এ ব্যাপারটা মেনে নিয়েও নিতে পারছে না রওনক।নিজেকে এখন খুব মারতে ইচ্ছা করছে তার।আফসোস হচ্ছে তার।কেনো সে মৌ কে মনের কথা বললো না।কেনো আয়ান আর মৌ এর বিয়ে হলো।আচ্ছা আয়ানের জায়গায় যদি সে হতো তাহলে কেমন হতো?নিশ্চয় ভালো হতো।মৌ তার জন্য বউ সাজতো।লাল টুকটুকে সুন্দরী বউ সেজে তার জন্য কবুল বলতো।কিন্তু আফসোস এসব হবে না।এ ইচ্ছে যে পূরন হওয়ার নয়।মৌ এর কবুল বলার সাথে সাথে তার সব মনবাসনা বানের স্রোতে ভেসে চলে যাবে।কোনোদিনও আসবে না তা।কষ্টের এক নিঃশ্বাস ফেলে রওনক নিজেকে বললো,
—“সব ইচ্ছে পূরন হতে নেই।কিছু ইচ্ছা অপূর্ণ রাখাই শ্রেয়।সব ইচ্ছাই যদি সবার পূরন হতো তাহলে সবাই খুশি হতো।কিন্তু এমন তো হয়না।কারো কারোর ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়।আমিও নাহয় সেই কাতারেই পরলাম।…….”
নিজের ভাবনা থেকে বেড়িয়ে রওনক দেখলো মৌ এর কবুল বলা শেষ।রওনক তা দেখে একরাশ হতাশা নিয়ে রুম ত্যাগ করলো।সাথে সাথে সে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
__________
রাহুল আর পুলক আয়ানকে এক প্রকার ঠেলে বাসর ঘরে পাঠাতে চাইছে। কিন্তু আয়ানও নাছোড়বান্দা।সে এতো সহজে যাবে না।হেন তেন নানা কথা বলেও যখন কাজ করতে পারলো না পুলক আর রাহুল তখন তারা দাদির সাহায্য নিলো।দাদি আসার পর আয়ানকে একবার বলাতেই আয়ান রুমে ঢুকে পরলো।রুমে গিয়ে দরজা আটকানোর সাথে সাথে আয়ানের চোখ গেলো বেডের দিকে।সেদিকে তাকিয়ে সে যা দেখলো তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

#চলবে

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ