তোকে চাই❤পর্ব:৩৭+৩৮+৩৯
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:37
।
।
মামানির এই কথায় শুভ্র কতটুকু লজ্জা পেয়েছিলেন জানি না,,তবে কাশতে কাশতে যে যক্ষা রোগীর পদবীটা ছিনিয়ে নিতে চাইছিলেন,, সে বেশ বুঝতে পেরেছিলাম,,,,কিন্তু ছেলের এই করুন অবস্থায় মামানির বিন্দুমাত্র দয়া হলো বলে মনে হলো না,,,উনি দুর্দান্ত গতিতে তার প্রশ্ন ছুঁড়ে চলেছেন,,,
।
শুভ্র??এটা ফ্যামিলি প্ল্যানিং করার টাইম নাকি??রোদ কতো বাচ্চা একটা মেয়ে,,,ওকেই আমায় সামলাতে হয়,,,ওর বাচ্চাকে কে সামলাবে???রোদের এডমিশনের আরো দুইমাস আছে,,সেপ্টেম্বরে এক্সাম আর তুই এই সময় এইসব প্ল্যানিং করছিস??এসব নাই বাদই দিলাম,,আমি যে বাচ্চাদের এক সিট করে ড্রেস কিনে ফেলেছি,,,এবার তো নতুন করে শপিং করতে হবে,,সবাইকে বলতে হবে,,কতো কাজ।।।
।
মামানির কথাগুলো শুনে আমি রীতিমতো “হা”।।উনি কই থেকে কই চলে গেছেন???হায় আল্লাহ দরি ফালাও,,,শুভ্রর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম সেও হাবলার মতো তাকিয়ে আছে,,,মামানি এক নিশ্বাসে কথা বলেই চলেছেন,,,যাকে বলে ননস্টপ টকিং ।।।
।
তুই যে মার সেইদিনের বাচ্চা বিষয়ক কথা এতো সিরিয়াসলি নিয়ে নিবি আমি ভাবতেই পারি নি,,,,আর রোদ??তুই কিভাবে,,,
।
মা?(চাপা গলায়)
।
রোদ তুই কিভাবে প্রশ্রয় দিলি??কই এডমিশনের পর হানিমুন টানিমুনে যাবি তা না,,,এখনি,,,
।
মা প্লিজজজজ
।
কি হয়ছে??চেঁচাচ্ছিস কেন??
।
মা তুমি একটা কামড় থেকে বাচ্চার জন্য শপিং পর্যন্ত চলে গেছো,,,তাহলে সত্যি সত্যি বাচ্চা পেটে আসলে তো দেখি ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলবে,,,,
।
কি বলতে চাচ্ছিস তুই??(ভ্রু কুচঁকে)
।
মা??এতো ফাস্ট না দৌড়াই একটু স্লো হও,,, তুমি যে আকাশ-পাতাল ভাবছো,,,তা কিছুই নয়।।রোদ আর আমি ঝগড়া করছিলাম,,,,তাই এই কামড়াকামড়ি,,,
।
হোয়াটটট???তোরা কি বাচ্চা যে কামড়া কামড়ি করিস??(অবাক হয়ে)
।
তোমার বউমা তো বাচ্চাই,,(নিরীহ ভঙ্গিতে)
।
বউমা বাচ্চা হলেও তুইতো ধামড়া ছেলে,,,ছি ছি,,এসব কি??বউয়ের সাথে ঝগড়া করে কামড়া কামড়ি,,মানসম্মান সব ধুলোই মিশিয়ে দিবি দেখছি,,,ওসব নয় বাদই দিলাম আমি যে কতো কিছু ভাবলাম,,,শপিং করবো,,দুই বাচ্চাকে একসাথে কোলে নিয়ে পার্কে ঘুরবো,,,সারাবাড়ি ঘুরে ঘুরে দুই নাতনীকে খাওয়াবো,,,,আর তুই সব ভাবনায় পানি ঢেলে দিলি হতচ্ছাড়া,,,,
।
আমি অবাক হয়ে মামানির কথা শুনছি,,,এর মধ্যে উনি এতো কিছু ভেবে ফেলেছেন???এখন আমারও মনে হচ্ছে উনি সত্যিই বেবি আসার আগেই বেবির বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলবেন।।তবে আমাদের কামড়া-কামড়ির ব্যাপারটি মামানির জানা থাকায় একদিকে ভালোই হয়েছে,,উনিই সবার প্রশ্নের হাত থেকে কয়েক দফা বাঁচিয়ে দিয়েছেন।।।
।
।
দুদিন যাবৎ কোচিং এ ও যায় না,,,সারাদিন ঘর বন্ধি হয়ে থাকতে কার ভালো লাগে???ভালোবাসা যেমন ভালো,,অতি ভালোবাসা তেমনি খারাপ।।যা এখন আমি প্রকটভাবে বুঝতে পারছি।।। বিছানায় পা উঠিয়ে,,গাল ফুলিয়ে বসে আছি,,,,সব কিছুই বিরক্তিকর লাগছে,,,আর এই বিরক্তি চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে,,,ইচ্ছে করছে কাউকে ইচ্ছেমতো চড়াই,,এটা মন ভালো করার ভালো ট্রিক,,,বাবা মার সাথে কথা বলতে পারলেও হতো,,,ভাইয়া নামক ডাফারটার সাথে কিছুক্ষন বকবক করলেও মন ভালো হয়ে যাওয়ার চান্স ছিলো কিন্তু আমার কাছে ফোন থাকলে তো,,,,হঠাৎই উনি রুমে ঢুকলেন,,আমি এমন একটা ভাব করলাম যেনো উনাকে দেখিই নি,,,,উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন,,তার মূল কারন তিনি কয়েকবার আমাকে ডেকেছেন কিন্তু কাঙ্ক্ষিত উত্তর তার মেলে নি।।
।
কি সমস্যা??কথা বলছো না কেন??(একদম সামনে এসে দাঁড়িয়ে)
।
ইচ্ছে করছে না তাই,,,
।
ইচ্ছে কেনো করছে না??(ভ্রু কুচঁকে)
।
মুড সুয়িং করছে,,ব্যাপক বিরক্ত লাগছে,,,(ঠোঁট উল্টিয়ে)
।
তাই??
।
উনার তাই কথাটা শুনে উনার দিকে আড়চোখে তাকালাম,,,উনাকে দেখে মনে হচ্ছে,,আমার মুড সুয়িং এর ব্যাপারটাই উনি চরম খুশি।।।উনার এমন অবাঞ্ছিত খুশি খুশি ভাব দেখে,,অটোমেটিকলি আমার ভ্রু কুঁচকে গেলো,,,,
।
কি ব্যাপার?এতো খুশি খুশি লাগছে কেন আপনাকে??
।
ভাবছি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো,,দেখবে মুড সুয়িং ভাবটা হাওয়া হয়ে গেছে,,,
।
আমি উনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,,,উনার মাথায় কি চলছে,,তাই বুঝার চেষ্টা।।
।
জটপট তৈরি হয়ে নাও,,,
।
আপনার ফোনটা দিবেন প্লিজ??
।
কেনো??(ভ্রু কুচঁকে)
।
আমার কাছে ফোন নেই,,একটা আপনি ভাঙছেন অন্যটা বাসায় ফেলে আসছি,,,,আম্মুর সাথে কথ বলবো(মুখ ফুলিয়ে)
।
ওহ,,,ওকে
।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
উনি ফোনটা আমার হাতে দিলেন,,,খুশি খুশি মনে মনে স্ক্রিনটা অন করতেই,,,স্ক্রিন সোজাসাপ্টা ভাবে জানিয়ে দিলো তার পাসওয়ার্ড চায়,,নয়তো সে খুলবে না।।।ব্যাপারটা সে যতো সহজভাবে বললো,,আমার মেজাজ ততো সহজ ভাবে নিলো বলে মনে হলো না,,বিরক্তি আগের থেকে কয়েকধাপ এগিয়ে গেলো,,,এই সাদা বিলাইকে কি করা যায়??ব্যাটা পাসওয়ার্ড না খুলেই ফোন হাতে তুলে দিলো,,আহাম্মক একটা।।।
।
এইযে??আপনার ফোনের পাসওয়ার্ড কি??
।
উনি ল্যাপটপ দেখছিলেন,,আমার কথায় মাথা উঠিয়ে বলে উঠলেন,,,”দাও খুলে দিচ্ছি”
।
না,,আপনি বলুন,,, আমি ইন করছি,,
।
আমি বলছি তো দাও আমি খুলে দিচ্ছি,,
।
আমিও তো বলছি আপনি বলুন,,,,কি এমন জিনিস আছে যে পাসওয়ার্ড শুনে নিলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে,,,(ভ্রু কুচঁকে)
।
আশ্চর্য এমন সিম্পল একটা বিষয়ে তুমি জেদ করছো কেন??(রাগী গলায়)
।
আশ্চর্য এমন সিম্পল একটা বিষয়ে আপনি জেদ কেন করছেন??নাকি কারো সাথে চক্কর চলছে??(সন্দেহের দৃষ্টিতে)তাই এতো ইনসিকিউর ফিল করছেন???(ভ্রু নাচিয়ে)
।
ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল,,,, এতো জেদি কেন তুমি??যত্তোসব,,,ওকে তুমিই ইন করো,,,(রাগী গলায়)
।
হ্যা হ্যা বলুন,,,(উৎহাস নিয়ে নড়েচড়ে বসে)
।
“মাই পুচকি”
।
উনার কথাটা শুনেই আমার দৃষ্টি সরু হলো,,,পুচকি??ইটস মি??ব্যাপারটা ভাবতেই আমার মুখ “হা” হয়ে যাওয়ার উপক্রম,,,,আমি “থ” মেরে বসে আছি,,,উনি উঠে এসে ফোনটা হাত থেকে নিয়ে লক খুলে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।। যেতে যেতে বলে গেলেন,,,”রেডি হয়ে নাও,,আমরা বেড়োবো”,,,আমি এখনো চুপচাপ বসে আছি,,নিজেই বুঝতে পারছি না আমার ভেতরের অনুভূতিটা আসলে কি???,,,অবাক হয়েছি নাকি খুশি হয়েছি,,,,
।
।
দুজনেই নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি,,এটা সেই জায়গা যেখানে উনি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলেন,,আজও এমন কিছুর প্ল্যান করছেন না তো???আমি উনার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছি কিন্তু উনি আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন,,,ব্যাপারটা ব্যাপক রহস্যজনক,,,
।
#চলবে,,,,
#তোকে চাই❤
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:38
।
।
কি ব্যাপার?এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন???(ভ্রু কুচঁকে)নদীতে ফেলে টেলে দেওয়ার প্ল্যান করছেন না তো??
।
হোয়াট ননসেন্স?? নদীতে কেন ফেলবো??
।
যেভাবে তাকিয়ে আছেন,, সন্দেহ তো লাগবেই,,,এমন তো নয় যে আমাকে দেখে আপনি মিনিটে দশবার/বারোবার ক্রাশ খাচ্ছেন,,আমি তো আবার ক্রাশ খাওয়া টাইপ না,,,তো তাকিয়ে কেনো আছেন??(ভ্রু নাচিয়ে)
।
তোমাকে শাড়ি কে পড়তে বলছে??(গম্ভীর কন্ঠে)
।
কেনো??কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছে নাকি??আই মিন এব্রিথিং অলরাইট?? (তাড়াহুড়ো করে)
।
রিলাক্স তোমার সব ঠিক আছে,,,বাট আমার সব বেঠিক হয়ে গেছে,,,(বাঁকা হাসি দিয়ে)
।
মানে??(ভ্রু কুচঁকে)
।
হার্ট বেরিয়ে আসতে চায়ছে,,,আসলে কি বলোতো রোদ,, তোমাকে যতটা ছোট লাগে তুমি ততটা নও,,,তা তোমায় শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখেই বুঝা যায়,,,,
।
উনার তাকানো আর কথায় অবাক হবো নাকি অস্বস্তি ফিল করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না,,তাই ভ্রু কুচকে আগের মতোই উনার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম,,,
।
তোমাকে গুলুমুলু পুচকি টাইপই বেশি ভালো লাগে,,,এসব শাড়ি টারি পড়ো না,,,
।
কেনো খারাপ লাগছে দেখতে??(মুখ ফুলিয়ে)
।
তুমি আসলেই একটা হাদা,,,আমার কথা যে একটাও তোমার মাথায় ঢুকে নি সে বেশ বুঝতে পারছি,,,(গাল টেনে দিয়ে)
।
তাহলে বুঝিয়ে বললেই তো হয়,,,,(ঠোঁট উল্টে মুখ ফুলিয়ে)
।
বুঝিয়ে বলবো???ওকে বোঝাচ্ছি,,,শাড়ি পড়লে তোমাকে প্রেমে পড়া টাইপ মেয়েদের মতো লাগে,,আই মিন,,,হট এন্ড,, সেক্সি,,(চোখ টিপে)
।
কথাটা বলেই উনি হুহা করে হেসে উঠলেন,,,,আর আমি অবাক চোখে আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছি।।।উনার কথাটা বুঝতে আমার পুরো দু মিনিট সময় লাগলো,,,ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই আমার চোখ দুটি বেরিয়ে আসার উপক্রম,,,
।
ছিহ,,,আপনি আমার উপর এসব বাজে ওয়ার্ড ইউজ করছেন??(রাগী গলায়)
।
তো??এসব বাজে ওয়ার্ড কিভাবে হলো??এগুলোকে মনের ভাব প্রকাশক শব্দ বলতে পারো,,,,তাছাড়া এগুলো তোমার উপর এপ্লাই করবো না তো কার উপর করবো??? বন্ধুর বউ এর উপর এপ্লাই করবো??আমাকে ধুয়ে দেবে,,,হুহ
।
ভালোই তো হবে,,,বিনা খরচে ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবেন,,,,(মুখ ভেঙিয়ে)
।
তুমি,,,,(দাঁতে দাঁত চেপে)এনিওয়ে এখন মন কেমন??
।
কেন আমার মনের আবার কি হলো??(বিরক্তি নিয়ে)
।
তুমিই না বললে মোড সুয়িং হচ্ছে?(অবাক চোখে)
।
ওহ,,,বিরক্তিভাবটা এখন একটু কম,,,(মুখ গোমরা করে)
।
চলো একটা কাজ করি,,,মন ভালো হয়ে যাবে,,,
।
কি কাজ??(ভ্রু কুঁচকে)
।
আরে চলো তো,,আর কথায় কথায় ভ্রু কুচকাবে না তো,,,(হাত ধরে টেনে)
।
উনি আমাকে নদীর পাড়ে এনে ধার করালেন,,,,,আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা উনি কি করতে চাইছেন,,,,কে জানে??ধাক্কা টাক্কা মারবে না তো আবার,,,,
।
চলো পা ভিজাই,,,
।
আমি আবারো উনার দিকে ভ্রু কুচঁকে তাকালাম,,,”এই যে আবারো ভ্রু কুচকাচ্চো,,,মানা করেছি না??এখন চলো আমার সাথে”
।
শাড়ি ধরে রাখতে হবে তো,,,
।
হবে না,,,ভিজতে দাও….
।
দুজনে অল্প পানিতে পা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে আছি,,,আমার কাছে ব্যাপারটা পাগলের কারবার ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না,,,
।
আচ্ছা??তোমার কোন গানটা গায়তে ভালো লাগে?(আমার দিকে তাকিয়ে)
।
ইউ মিন ফেবরিট সং??
।
নাহ,,,ফেবরিট সং না,,,এমন কিছু গান আছে যা তোমার প্রিয় গান বলা যায় না,, তবে গলা ছেড়ে গাইতে ভালো লাগে,,,এমন টাইপ,,,
।
উমমমমম,,,মনে পড়ছে না,,,(করুন চোখে)
।
মনে করো,,,(গম্ভীর মুখে)
।
ইচ্ছেটাকে দিলাম ছুটি আসবে না ফিরে,,,এইগানটা গাইতে বেশ ভালো লাগে,,,
।
তাহলে গাও,,,
।
এখন??(অবাক হয়ে)
।
হুমম,,,আমাকে শোনানোর জন্য নয়,,,নিজের জন্য গাও,,,গলা ছেড়ে গাও,,আশেপাশে কেউ নেই কেউ শুনবে না,,,
।
কিন্তু,,,
।
গাও বলছি,,(ধমক দিয়ে)
।
উনার ধমকে ধীরে গাইতে লাগলাম,,,,আস্তে আস্তে আমার গলার আওয়াজ যে বাড়ছে বুঝতে পারছি।।।একসময় খেয়াল করলাম,,গানটা আমি বেশ ইনজয় করছি এবং হাত পা ছুড়ে তাল মেলানোরও চেষ্টা চালাচ্ছি,,আর উনিও কম কিসে আমার সাথে গলা ছেড়ে গাইছেন,,,”ইচ্ছেটাকে দিলাম ছুটি আসবে না ফিরে,,,এক পৃথিবীর ভালোবাসা রয়েছে ঘিরে,,মনটা যেনো আজ পাখির ডানা,,,হারিয়ে যেতে আজ নেইতো মানা,,,চুপিচুপি চুপি স্বপ্ন ডাকে হাত বাড়িয়ে,,,মন চাই মন চাই,,,,,,,” দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ লাফালাফি করে টায়ার্ড হয়ে ঘাসের উপর বসে পড়লাম,,,,
মনটা সত্যিই ফ্রেশ লাগছে,,,শাড়ি ভিজে একাকার কিন্তু তত খারাপ লাগছে না,,,গরমের দিনে ভেজা কাপড় তেমন সমস্যা করে না।।হঠাৎ ই উনি উঠে গাড়ির দিকে হাটা দিলেন,,,কোথায় যাচ্ছেন জিজ্ঞেস করায় বললেন,,,”এখনি আসছি”।।।প্রায় মিনিট দশেক পর উনি ফিরলেন,,হাতে মাঝারি সাইজ আইসক্রিম বক্স,,,আমার পাশে বসতে বসতে বলে উঠলেন,,,”কি চাই??” আমি মুচকি হাসলাম মাত্র,,,,,সন্ধ্যা হবে হবে ভাব,,,প্রকৃতি ঘন অন্ধকারকে বরন করে নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত,,,,আকাশটাও লাল রঙে সেজেছে অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার লোভে,,,,আমিও সেজেছি এক অজানা অনুভূতিতে,,,শুভ্র, আমি পাশাপাশি দাড়িয়ে আছি,,,দুজনের চোখেই মুগ্ধতা,,,হঠাৎই উনি বলপ উঠলেন,, “রোদ? ভালোবাসি।” উনার বলা “ভালোবাসি” শব্দটা কানে বাজছিলো বার বার।।এটা কি আমার শোনার ভুল নাকি বুঝার ভুল??নাকি বাস্তবতা???অবাক চোখে উনার চোখে তাকালাম,,চোখে একগাদা প্রশ্ন….উনি আমাকে উচু করে তুলে গাড়ির ডিকির উপর বসিয়ে দিলেন,,,স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন,,,,
।
দ্বিতীয় বার ভালোবাসা যায় এটা তোমার থেকে শিখেছি রোদ,,,দ্বিতীয়বারও বাঁচার স্বপ্ন দেখা যায়,,,তোমাদের দুজনের মধ্যে কাকে বেশি ভালোবাসি এটা জিজ্ঞেস করো না,,উত্তরটা আমার নিজেরই অজানা।।।আসলে উত্তরটা কখনো খুঁজতেই যায়নি।।উত্তরটা কি খুব জরুরি রোদ???(করুন দৃষ্টিতে)
।
আমি মাথা নেড়ে জানালাম না,,,উত্তরটা জরুরি নয়,,,,জরুরি হলো উনি আমাকে ভালোবাসেন,,,নীলিমা আপুকে ভুলতে বলার আমি কে??ওটা নীলিমা আপুর অধিকার,,,আসলে,,উনি নীলিমা আপুকে ভুলে যাননি,,,এই ব্যাপারটিই আমাকে তার প্রতি আরো বেশি আসক্ত করে তুলেছে,,,শ্রদ্ধাবোধটা বাড়িয়ে দিয়েছে,,সত্যিতো এভাবে কি ভুলা যায়??ভালোবাসা কি ভুলে যাওয়ার জন্য??উনি নীলি আপুকে পুরোপুরি ভুলে আমায় মেনে নিলে আমিই হয়তো তা মেনে নিতে পারতাম না,,,মনের মধ্যে একটা বিষয় সাড়াক্ষন নাড়া দিতো,,তার মানে কি এই নয় যে,,আমি হারিয়ে গেলেও উনি একইভাবে ভুলে যাবেন??উনার প্রতি ভরসাটা তৈরি হতো না,,,তাই আমি উনার প্রতি কৃতজ্ঞ যে উনি নীলি আপুকে ভুলে যান নি,,,উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো বলতে শুরু করলেন,,,
।
ইশিতার বিয়ে হয়ে যাবার পর রুহান যখন ভেঙে পড়েছিলো,,তখন নীলি ওকে একটা কথা বলেছিলো,,,”ভালোবাসার মানুষটার চেয়ে ভালোবাসাটা বেশি দামী,,,ইশিতা তোমায় ছেড়ে দিয়েছে তারমানে এই নয় তুমি জীবনটাকেই ছেড়ে দিবে,,,আকড়ে ধর জীবনটাকে,,,ভালোবাসাটাকে অন্যকারো ভালোবাসার মধ্যে বাঁচিয়ে রাখো,,,,মানুষটা মরে গেলেও ভালোবাসাটা যেন না মরে,,বেঁচে থাকে অন্য একজনের নিশ্বাসে প্রশ্বাসে”
রোদ??আমি কি নীলির ভালোবাসাটা তোমার মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে পারি না???তোমাকে আমার চাই রোদ,,,খুব বেশিই চাই,,,আমার প্রত্যেকটা প্রয়োজনীয়তায়,,, প্রত্যেকটা মুহূর্তে চাই,,,,তারজন্য কি আমায় নীলিকে ভুলে যেতে হবে???কিভাবে পারবো বলো??(টলমলে চোখে)
।
আমি উনার হাতটা নিজের হাতে নিলাম,,উনার স্থির দৃষ্টি আমার চোখে মুখে,,,
।
নীলি আপুকে ভুলতে হবে না,,,তাকে একবিন্দুও ভুলবেন না আপনি,,,ভালোবাসাটা ভুলে যাওয়ার জন্য নয়,,,আমি নীলি আপুর পাশাপাশি বেশ আছি,,,আমাকে শুধু ভালোবাসলেই হবে,,,ভালোবাসায় প্রতিযোগীতা হয় না,,,ভালোবাসা,তো শুধুই ভালোবাসা,,,,
।
উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন,,,
।
সত্যি ভালোবাসি তোমায়,,,খুব বেশিই ভালোবাসি,,,এটা প্রয়োজনীয়তা থেকে বলছি না,,অনুভূতিগুলো থেকে বলছি,,,তোমাকে হারানোর ভয়ে আমি ক্লান্ত,,,প্লিজ ছেড়ে যেও না আমায়,, প্লিজজজ,,,,
।
আমার চোখে জমে থাকা মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়লো,,,,ইচ্ছে হচ্ছে চেঁচিয়ে বলি,,,ভালোবাসি,,বড্ড বেশিই ভালোবাসি,,,কিন্তু মুখ আজ নির্বাক।।।কান্নাগুলো গলায়,গুটি হয়ে আটকে গেছে যেনো,,কিছুতেই কথা বলতে পারছি না,,,কিছুতেই না।।।
।
#চলবে,,,,
#তোকে চাই❤
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:39
।
।
অবশেষে এডমিশন টেস্টটা শেষ হলো,,অসম্ভব রকম মানুষিক চাপ থেকে বেঁচে গেলাম।।এই কয়দিন শুভ্র আমাকে মারাত্মক পরিমানে জ্বালিয়েছে,,,এইতো সেদিন,,রাতে পড়ছিলাম হঠাৎ উনি সামনে এসে দাঁড়ালেন,,,ট্রে হাতে নির্বিকভাবে দাঁড়িয়ে আছেন,,আমি চোখ তুলে তাকাতেই পাশে বসে পড়লেন,,গম্ভীর গলায় হুকুম ছাড়লেন,,,”হা” করো।।আমি ভ্রু কুচকে বলে উঠলাম,,,”মানে?”
।
মানে বুঝো না??ওপেন ইউর মাউথ।।
।
কিন্তু কেন??
।
কেন মানে?? এসব খাবে তাই,,নাও “হা” করো।।
।
কয়টা বাজে?(রাগী গলায়)
।
১ঃ০৫,,
।
এই মাঝরাতে কেউ ভাত খায়??
।
উনি আমার কথা শুনে সাথে সাথেই ভাতের প্লেটটা রেখে অন্য একটা প্লেট নিলেন,,,
।
এবার “হা” করো,,,
।
এসব কি???
।
ফ্রুটস,,যা তুমি এখন খাবে,,
।
আপনি কি পাগল নাকি??আমি খাবো না এখন যান তো,,,,
।
খেতে তো তোমাকে হবেই,,,বুঝছো এই সময় তোমাকে বেশি মুখস্থ করতে হবে,,,আর তারজন্য বেশি বেশি ক্ষেতে হবে,,,,শুনো তোমাকে কিন্তু আমাদের ভার্সিটিতেই চান্স পেতে হবে,,,এট এনি কষ্ট,,
।
কেনো??এতো দরকার কিসের???তাছাড়া সেটার জন্য আমাকে এক্সট্রা খাওয়াতে হবে না।।।আমি নিজেও চাই যেনো আমার ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স হয়।।।কিন্তু আপনার এতো ব্যাকুলতার কারন কি??(ভ্রু নাচিয়ে)
।
তোমাকে অন্য ভার্সিটিতে দিয়ে আমি শান্তিতে থাকতে পারবো নাকি??টেনশনে মরে যাবো,,আমাদের ভার্সিটি হলে তোমার সব আপটেড আমার কাছে পৌঁছে যাবে,,,সো প্লিজ সোনা,,,বেশি বেশি খাও আর পড়ো,,,,(করুন স্বরে)
।
কিন্তু শুভ্রর ইচ্ছে পূরন হয় নি,,,ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাওয়া হয়ে উঠে নি আমার।।জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি,,,এ নিয়ে বেচারা তিন দিন যাবৎ মুখ ফুলিয়ে বসে ছিলো,,,তার নাকি এখনি হার্ট ফেটে যাচ্ছে টেনশনে।।।আপুর এখন ৬ মাস চলছে,,,কেমন একটা গুলুমুলু ভাব চলে আসছে আপুর মধ্যে,,, খুব কিউট লাগে দেখতে।।।আপুকে দেখে মাঝে মাঝে আমারও কনসিভ করতে ইচ্ছে করে,,কতো কিউট একটা অনুভূতি হবে সেটা ভাবতেই অন্যরকম অনুভূতিতে ছেঁয়ে যায় মন।।।কিন্তু শুভ্রকে বুঝিয়ে লাভ নেই,, তারমাথায় তা কিছুতেই ঢুকবে না।।।প্রথমবার আমার কাছাকাছি আসার পরই উনি আমার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়েছিলেন,,,যা দেখে আমি বুঝে গেছি উনি উনার ডিসিশনে অবিচল।।।কিন্তু আমার মারাত্মক ধরনের কাজটা করতে ইচ্ছে করছে খুব।।উনার ডিসিশনকে ওভারটেক করার মতো মারাত্মক কাজ।।।
।
আজ তিনদিন আমি জানতে পেরেছি যে আমি প্রেগনেন্ট।।অসম্ভব রকম ভালোলাগার সাথে চাপা ভয় ঝেকে ধরেছে আমায়।।আর ভয়টা হলো শুভ্র।।।এতোদিনে এটুকু আমার বোঝা হয়ে গেছে,,, উনি আমার জীবনের সাথে তিল পরিমান রিস্কও নিতে চান না।।।আমাকে হারানোর ভয় তার মধ্যে প্রকট।এই কথাটা বলার পর উনার কি রিয়েকশন হবে ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।। দু’দিন যাবৎ উনাকে বলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু বাদ সাধছে গলা,,,কিছু বলতে গেলেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে,,,সমস্ত কথাগুলোকে শুষে নিচ্ছে অন্ধকার গহ্বরে।।বাড়ির সবার মধ্যে খুশি খুশি ভাব,,মাত্র দু’মাসের মাথায় আমাদের জীবনের সাথে একটি নতুন জীবনের পথচলা শুরু হতে যাচ্ছে।।শুভ্রর ও উৎসাহের সীমা নেই,,সে চাচ্চু হবে,,,ছোটো ছোটো হাতে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরবে তা ভাবতেই নাকি তার শরীর শিউরে উঠছে।।সবার আনন্দের মাঝে আমার আনন্দটাই চাপা পড়েছে হাজারো টেনশনের চাপাচাপিতে।।।আমার বিষয়টা কাউকে জানায়নি,,,যেখানে স্বামীকেই জানাতে পারি নি,,সেখানে অন্য কাউকে কিভাবে জানাবো??কাল আপু চট্টগ্রাম থেকে চলে এসেছে,,, কিন্তু ওকেও বলতে পারি নি,,,আসলে বলার সুযোগই হয়ে উঠে নি।।মা হওয়ার অদম্য ইচ্ছেটাকে পূরন করতেই এতোবড় ভয়ানক ডিসিশন নেওয়া,,,,কিন্তু আজ যখন সেই অনুভূতিটা আমার কাছে প্রকট তখনই সাহস গুলো যেনো উড়ে গিয়েছে।।
।
দুপুরে আপুর সাথে বসে গল্প করছিলাম হঠাৎই শুভ্র এসে টেনে হিঁচড়ে রুমে নিয়ে গেলো।।।উনার চোখ মুখ অসম্ভব রকম লাল।।।উনার এই অগ্নিরূপ আমি আগে কখনো দেখি নি,,ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম।।আপুও হয়তো বেশ ভয় পেয়েছে তাইতো টু শব্দটি পর্যন্ত করলো না।।শুভ্র আমাকে রুমে নিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দরজা লাগিয়ে দিলেন।।।ঘরে ভয়াবহ নিস্তব্ধতা,,, উনি স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিছানার নিচে রাখা প্রেগনেন্সি রিপোর্ট টা ছুড়ে মারলেন আমার উপর।।ভয়াবহ শান্ত গলায় বলে উঠলেন,,,
।
এসব কি রোদ??
।
………………………..
।
আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি রোদ,,,হোয়াট ইজ দিস?(চিৎকার করে)
।
…..……………………
।
কেনো করলে এমন?? হোয়াই??মানা করেছিলাম তোমায়,,,করেছিলাম কিনা??তবু এসব কেন??? সে সামথিং ইডিয়ট।।
।
কথাটা বলেই ড্রেসিংটেবিলের পাশের ফ্লাওয়ার ভাজটা ছুড়ে ফেলে খণ্ডবিখণ্ড করে দিলেন,,,চারদিকে ঝনঝন শব্দটা যেনো প্রতিধ্বনিত্ব করে উঠলো,,,
।
এতো জেদ???এতো জেদ কিসের তোমার???আমাকে মেরে ফেলতে চাও তুমি??বারবার মানা করার পরও তুমি এই স্টেপটা কি করে নিলে??তবু আমাকে না জানিয়ে??বাচ্চার বাবা যেহেতু আমি জানার অধিকার আমার ছিলো রোদ,,,,কাজটি কি তুমি ঠিক করেছো??
।
আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছি,,,সত্যি এটাই, আমি ভুল করেছি,, শুভ্রকে জানানো টা উচিত ছিলো আমার,,কিন্তু উনার ডিসিশন টাও তো ভুলই ছিলো।।।উনি হঠাৎই আমার দুই বাহু চেপে ধরে দাঁতে দাঁতে চেপে বলে উঠলো,,,
।
রোদ??প্রতিশোধ নিচ্ছো আমার থেকে??তোমার সাথে রোড বিহেভ করার প্রতিশোধ??তাহলে সেই প্রতিশোধে নিজের জীবন কেনো জড়াচ্ছো??আমাকে মারো,,আমার সাথে যা ইচ্ছে তা করো কিন্তু নিজের সাথে,,,কেনো??তোমার কোনো ধারনা আছে কতোটা টেনশনে থাকি আমি তোমায় নিয়ে।।।আর আজ তো তুমি সেই টেনশন আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিলে,,,এভাবে তিলে তিলে মারার চেয়ে একবারে মেরে ফেলো আমায় রোদ,,,,
।
আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি,,,বুকটা দুমরে মুচরে যাচ্ছে,,উনার কথার প্রতিত্তরে কিছু বলার সাহস আজ আর নেই।।এতোক্ষণে দরজার ওপাশে বাড়ির সবাই এসে দাঁড়িয়েছে।।সবার কন্ঠে উদ্বেগ স্পষ্ট তারসাথে দরজা খোলার আকুতি।।শুভ্র যেন আরো ভরকে গেলো,,,দরজার পাশে দাঁড়িয়ে চেঁচাতে লাগলো আর ক্রমাগত লাথি দিতে লাগলো,,,
।
জাস্ট গো ফ্রম হেয়ার,,,যাও এখান থেকে আমাদের মধ্যে আসার চেষ্টাও করবে না,,,গো টু হেল অল অফ ইউ।।
।
কথাটা বলেই পাশের সোফায় জোড়ে লাথি দিয়ে দিলেন,,,,সোফা মুহূর্তেই উল্টে পড়লো।।।ভয়ে আমার শরীর কাঁপছে থরথর করে,,,যেনো শরীরের মধ্যে ভূমিকম্প বয়ে যাচ্ছে,,,উনি আমাকে টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে সোজা করে দাঁড় করালেন,,,উনার রাগ এখন আকাশচুম্বি,,,,আমার হাতদুটো শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলেন,,,
।
বাচ্চা,,বাচ্চা,,বাচ্চা।।।আমার থেকে তোর কাছে এই বাচ্চা বেশি বড় হলো???কি আছে এই বাচ্চায়??যে আমার এতো অনুরোধ,, এতো আদেশও তার,কাছে ব্যর্থ হলো।।।কি হলো কথা বল,,,,ভালোবাসি তোকে,,আমার ভালোবাসাটা কেনো বুঝিস না তুই???এতো করে বললাম,,, পারবো না তোকে হারাতে,,,মরে যাবো আমি।।কিন্তু না,,, সেটা বুঝার ক্ষমতা তোর নেই।।শুনে রাখ,,,আই জাস্ট ওয়ান্ট ইউ,,,শুধু “তোকে চাই ” আমার,,,শুধু এবং শুধুই তোকে।।যে বাচ্চাটা এখনো আসেই নি আমার জীবনে তাকে তো চাইই না,,,আর তোমার বিনিময়ে তো কখনোই না,,(চিৎকার করে)
।
উনার চিৎকার,,, দরজার বাইরের সবার চেঁচামেচি,, আর শরীরের দুর্বলতায় যেনো চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার দেখাচ্ছিলো,,অনেক চেষ্টা করেও দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে উনার বুকে ঢলে পড়লাম,,তারপর কি হয়েছিলো জানি না।।যখন চোখ খুলি তখন আমি বিছানায়,,, আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বসে আছে শুভ্র,,,চোখ মুখ লাল,,,বিশেষ করে ফরসা নাকটা টুকটুকে লাল হয়ে আছে,,,বুঝায় যাচ্ছে কান্না করেছেন।।লোকটা আসলেই পাগল,,এইটুকুর জন্য কান্না করা লাগে বুঝি??চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম,,,মামা,,মামানি,,আপু,,ভাইয়া সবাই আছে,,এমনকি বাবা -মা ও এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে,,সবার চোখ-মুখে খুশি খুশি ভাব,,,শুধু শুভ্র ছাড়া।।।আমি বুঝতে পারছি তার মনটা হাজারো ভয়ে চুপসে আছে।।প্রিয়জনকে হারানোর ভয়।।।আমাকে চোখ খুলতে দেখেই একে একে সবাই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কনগ্রাচুলেশন জানালো,,,বাবা-মা তো খুব খুশি,,,,তার দুই মেয়েই মা হতে চলেছে।।মামানির খুশি দেখার মতো,,সে রীতিমতো লিস্ট তৈরি করতে বসে গেছে,,,দুই বাবু আসবে কতো এরেঞ্জমেন্ট।।।সবাই যে শুভ্রকে এক দফা বকাবকি করেছে তা বেশ বুঝতে পারছি।।।সবাই রুম থেকে চলে গেলে,,,শুভ্র মুখ খুললো,,
।
সরি পুচকি,,,আম সো সরি,,,(ধরা গলায়)
।
কেনো??সরি কেনো??
।
তোমার সাথে কতো বাজে ভাবে কথা বললাম,,,আসলে এতোটা রেগে গিয়েছিলাম যে কিছু মাথায়ই আসছিলো না।।।মাফ করে দাও আমায় প্লিজ।।
।
চুপ করুন তো।।আপনাকে সরি বলতে হবে না,,,,দোষটা আসলে আমার,,আমার এমনটা করা উচিত হয় নি।।।সরি,,
।
এই পিচ্চি,,,তুমি জানো না তোমার ব্যাপারে আমি কতোটা ভিতু,,, তবু এমনটা কেনো করলে???আজ থেকে ঘুম খাওয়া সব হারাম হয়ে গেলো আমার।।।
।
আমি চুপচাপ উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি,,এই চোখে আমার জন্য অপরীসীম ভালোবাসা।।।এই ভালোবাসায় মরে গিয়েও শান্তি,,,,,
।
#চলবে,,,,