#তোকে_খুব_ভালোবাসি
#পর্ব_৬
#জাফিরাহ_জারিন
আজ একসপ্তাহ পর ভার্সিটিতে যাচ্ছে রিদি আর নিধি।এই একসপ্তাহ রিদি বাড়িতেই ছিল।নিধি আর রিদি সারাদিন প্রচুর মজা করেছে।রিদি আর নিধি গেট দিয়ে ঢুকছে ঠিক তখনই নিধিকে কেউ পিছের থেকে ডাক দেয়।রিদি আর নিধি দুজনেই পিছে ঘুরে দেখে নিরব দাঁড়িয়ে আছে।নিরবকে দেখে রিদি বাকা হেসে আড়চোখে নিধির দিকে তাকালো।রিদিকে এভাবে তাকাতে দেখে নিধি বলল,
নিধি: কি হইছে তোর??ত্যারা হয়ে গেছিস নাকি??এমন করে তাকাস কেন??
রিদি: তুমি জানো না কি হয়েছে??বাই দ্যা রাস্তা আমি গেলাম ক্লাস করতে।তোমার রোম্যান্স করা শেষ হইলে তুমিও আইসো।
এই বলে রিদি চলে গেল।আর নিধি বোকার মত সেখানে দাঁড়িয়ে থাকল।রিদির কথা তার মাথার বারো হাত উপর দিয়ে গেছে।রিদি চলে যেতেই নিধিও সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য হাটা শুরু করল।তখনই নিরব পিছের থেকে ডাকল,
নিরব: দাঁড়াও মিস ধানিলঙ্কা।
নিরবের মুখে এই ডাক শুনে নিধি চট করে পিছনে ঘুরল।দেখল নিরব তার দিকে এগিয়ে আসছে।নিরব তার কাছে এগিয়ে আসতেই নিধি জিজ্ঞাসা করল,
নিধি:আপনি কি আমাকে বললেন??
নিধির প্রশ্ন শুনে নিরব আশেপাশে তাকাতে লাগল।নিরবকে এরকম করতে দেখে নিধি বলল,
নিধি: কি দেখছেন??
নিরব: এখানে আশেপাশে দূরদূরান্ত পর্যন্ত আমি কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।
নিধি: তো??
নিরব: তার মানে কথাটা আমি আপনাকেই বলেছিলাম।
নিধি:আমাকে এই নামে ডাকার মানে কি?? আর আপনি আমাকে ডাকলেনই বা কেন??
নিরব:প্রেমালাপ করতে।
নিধি:মানে??
নিরব:দেখো ওইসব ফিল্মি ডায়লগ মারার মত মানুষ আমি নই।তাই ডিরেক্টলি বলছি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি।
নিধি: কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
নিধির এই কথা শুনে নিরবের প্রচন্ড রাগ হলো।তবুও সে শান্তভাবে আবার জিজ্ঞাসা করল,
নিরব:ভেবে চিন্তে বলছো তো যে তুমি আমাকে ভালোবাসো না।
নিধি: এতে ভাবার কি আছে??
নিরব: লাস্ট বারের মত বলছি ডু ইউ লাভ মি অর নট??
নিধি: আচ্ছা লোক তো আপনি।আমি আপনাকে বল….উমম….উমম
নিধি আর কিছু বলবে তার আগেই নিরব তার ঠোটজোড়া নিজের আয়ত্তে করে নেয়।নিধি যে নিরবকে বাধা দেবে সেই শক্তিটুকুও নিধির নেই।সে যেন পাথরের মত জমে গেছে নিরবের এরুপ কান্ডে।আর নিরব, তার তো কোনোদিকে হুশ নেই।সে তখনও নিধির ঠোটের স্বাদ গ্রহণে ব্যস্ত।কিছুক্ষণ পর নিরব নিজের থেকেই নিধিকে ছেড়ে দেয় আর বলে,
নিরব: নেক্সট টাইম যদি উত্তরটা হ্যা ছাড়া অন্য কিছু হয় তাহলে ডোজটা কিন্তু আরো ভয়ানক হবে।
এই বলে নিরব সেখান থেকে চলে যায় আর নিধি স্ট্যাচুর মত সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।
_______________________________________
কলেজের করিডোর দিয়ে হেটে যাচ্ছে রিদি।নিধিকে তো সেখানে নিরবের সাথে রেখে এসেছে সে।হঠাৎ করেই কেউ রিদির হাত ধরে টান মারে আর পাশের একটি ফাকা রুমে নিয়ে যায়।আচমকা এমন হওয়ায় রিদি অনেকটা ভয় পেয়ে যায়।রিদি সামনে তাকিয়ে দেখে শুভ তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।রিদি সেখান থেকে চলে যেতে নিলে খেয়াল করে যে সে শুভর বাহুডোরে আবদ্ধ।রিদি শুভর দিকে তাকিয়ে দেখে সে এখনও তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
রিদি: এভাবে কি দেখছেন??
শুভ:তোমাকে।জানো তোমাকে দেখলে নিজেকে ঠিক রাখা কতটা কঠিন??
রিদি:তাই বুঝি??
শুভ: হুম তাই।
রিদি: আমার ক্লাসে দেরী হচ্ছে।যেতে হবে।
শুভ আর কথা বাড়ালো না।এমনিতেই এই ৭ দিনে রিদির অনেক ক্লাস মিস গেছে।তাই শুভ রিদিকে ছেড়ে চলে যেতে লাগল।আবার কি মনে করে ফিরে এলো।এসে রিদির ডান গালে থাকা তিলে একটা কিস করে চলে গেল।রিদি কিছুক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে থেকে হেসে ফেলল।তারপর সেও ক্লাসে চলে গেল।
_____________________________________
ক্লাসে বসে শুভর কথা ভাবছে আর হাসছে রিদি।হাসতে হাসতেই তার চোখ গেল নিধির দিকে।নিধির দিকে চোখ যেতেই রিদির মুখের হাসিটা উড়ে গেল।মেয়েটা সেই কখন থেকে স্ট্যাচুর মত বসে আছে।নড়েও না চড়েও না।
রিদি: এই নিধি বল না কি হয়েছে।
নিধির কোনো উত্তর নেই।রিদি আশা ছেড়ে দিয়েছে।নিধি একধ্যানে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।নিরবের করা কিসের শক থেকে সে এখনও বের হতে পারে নি।তাই এরকম স্ট্যাচু অব লিবার্টি সেজে বসে আছে।
______________________________________
পরের দিন ভার্সিটি শেষ করে বাসায় ফিরতেই রিদি আর নিধির চোখ গেল তাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির উপর।একটা গাড়ি গাড়ি তাদের চেনা।গাড়িটা শুভর।শুভ আর নিরব ভার্সিটিতে এই গাড়িতে করেই যায়।আরেকটা গাড়ি তারা কিছুতেই চিনতে পারল না।নিধি না চিনলেও রিদি ঠিকই চিনেছে আরেকটা গাড়ি।গাড়িটা সেই মহিলার যাকে রিদি সেইদিন রাস্তায় সাহায্য করেছিল।রিদি আর নিধি একবার একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল।তারপর তারা বাড়ির ভিতরে গেল।বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখে একসোফায় তাদের বাবা মা বসা।আর ঠিক তার সোজাসুজি অপর সোফায় শুভ,নিরব আর মধ্যবয়স্ক একজন পুরুষ ও মহিলা বসা।মহিলাটিকে রিদি চিনতে পেরেছে।তিনি আর কেউ নন,তিনি হচ্ছেন নোরা আহমেদ।কিন্তু এরা কেন এখানে এসেছে তা বুঝতে পারছে না রিদি বা নিধি।রিদি কিছু জিজ্ঞাসা করবে তার আগেই দেখে নিধি আবার আগের মত স্ট্যাচু হয়ে গেছে।নিধির কোনো হেলদোল নেই।রিদি নিধির দৃস্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই দেখতে পাই রিদি একদৃস্টিতে নিরবের দিকে তাকিয়ে আছে।রিদির চোখ নিরবের পাশে যেতেই দেখে যে শুভ তার দিকেই তাকিয়ে আছে।রিদি শুভর দিকে তাকাতেই শুভ তাকে চোখ টিপ মারে।রিদি তা দেখে হেসে ফেলে।রিদির বাবা রিদি ও নিধিকে ডেকে তাদের পাশে বসায়।
নোরা:আমাদের ছেলে যে কখনও কারোর প্রেমে পরবে সেটা আমাদের কল্পনার বাহিরে ছিল।কালকে যখন ও এসে বলল যে ও রিদিকে ভালোবাসে তখন আমরা নিজেদের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।তাই আমরা শুভ কাজে আর দেরী করতে চাই না।আমরা চাই আগামী শুক্রবার রিদি-শুভ আর নিধি-নিরবের বিয়েটা সেরে ফেলতে।
রিদির মা: আপনারা যা ভালো বুঝেন। আমাদের কোনো সমস্যা নেই।আগামী শুক্রবারই বিয়ে হবে।
নোরা: আমার মনে হয় এখন ওদেরকে আলাদাভাবে কথা বলতে দেওয়া উচিৎ।
এরপর রিদি শুভকে নিয়ে নিজের রুমে গেল আর নিধি নিরবকে নিয়ে নিধির রুমে গেল।আসলে নিধি নিরবকে নয় বরং নিরবই নিধিকে টানতে টানতে তার রুমে নিয়ে গেছে।নিরবের এরুপ কান্ড দেখে সেখানে উপস্থিত সকলে হেসে ফেলল।
রিদির রুমে,
শুভ:তুমি তো আগে বলো নি যে তুমি আমার মাকে চেনো।
রিদি:আমি তো জানতাম না যে উনি আপনার মা হন।
শুভ: তুমি এই বিয়েতে খুশি তো??
রিদি: কেন নয়। আমি নিজেও চেয়েছি আমাদের বিয়েটা হোক।
শুভ মুচকি হেসে রিদিকে জড়িয়ে ধরল।শুভ রিদির কানে ফিসফিস করে বলল,”আই লাভ ইউ”।রিদিও বলল,”আই লাভ ইউ টু”।
নিধির রুমে,
নিধি চুপচাপ খাটের উপর বসে আছে।সে চোখের পলকও ফেলছে না।নিরব এতক্ষণ যাবত এটা সহ্য করলেও এখন তার রাগ উঠছে।সে নিধির কাছে গিয়ে বলল,
নিরব: এই মেয়ে সেই কখন থেকে এইভাবে সং সেজে বসে আছে কেন?? তখনকার ডোজটা কি কম পরেছে??
নিরবের এই কথা শুনে নিধি দ্রুততার সহিত হাতের উল্টাপিঠ দিয়ে নিজের ঠোট ঢেকে ফেলল।নিধিকে এরকম করতে দেখে নিরব ফিক করে হেসে ফেলল।
নিরব: আমাকে বিয়ে করবে না?? দেখো তুমি যদি চাও তবে এই বিয়েতে মানা করতে পারো।আমার সমস্যা নেই।আমি শুধু শুধু তোমার জীবনের কাটা হতে চাই না।
নিরবের এই কথার মধ্যে যে চাপা কস্ট ছিল তা নিধি বুঝতে পারল।তারও নিরবের জন্য খারাপ লাগল।কারণ সে যতই না বলুক সে তো নিরবকে ভালোবাসে।তাই নিধি আর দেরী না করে নিরবের বুকে ঝাঁপিয়ে পরল।নিরবও পরম যত্নে নিধিকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করল।
চলবে…………