#তোকে_খুব_ভালোবাসি
#পর্ব_১
#জাফিরাহ_জারিন
অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছে রিদি। সারা শরীর তার ব্যাথা।কিছুক্ষন আগে রিদির মা তাকে বেত দিয়ে প্রচন্ড পরিমাণে মেরেছে।শুধুমাত্র সন্দেহের বশে।যেখানে রিদির কোনো দোষ ছিল না।রিদি শুয়ে শুয়ে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে।কিন্তু রিদির এই ব্যাথা কম করার জন্য কেউ নেই।বাসায় শুধু তার মা আছে।কিন্তু যে মানুষটি নিজেই রিদির এই অবস্থা করেছে সে আবার কেনো রিদিকে বাচাতে যাবে??
কিছুদিন আগে,
রিদির মা রিদির রুমে এসে বলছে,
রিদির মা: এই শোন!! কালকে তোকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে। কালকে তোর কলেজে যাওয়ার দরকার নেই।
রিদি:মা কালকে আমার জরুরি ক্লাস আছে।
রিদির মা: এই শোন, তোর জরুরি ক্লাস আমাকে দেখাতে আসবি না।তুই কালকে রেডি থাকবি ব্যস।আর আরেকটা কথা, যদি কালকে এমন কিছু করিস যার কারণে তোর এই বিয়েটা না হয় তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
এই বলে রুম থেকে চলে গেল রিদির মা।
(রিদি রহমান। বয়স ১৭ বছর। ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ে।উচ্চতা ৫’৩”। দেখতে মাশাআল্লাহ সুন্দরী।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান রিদি)
পরের দিন রিদিকে ছেলেপক্ষ দেখতে এল।ছেলের মা, বাবা এবং ছেলে।ছেলের মা বাবার রিদিকে খুব পছন্দ হয়েছে।রিদি এবং ছেলেটিকে একা কথা বলতে রিদির রুমে পাঠানো হলো।
ছেলে: শুনুন আমি ডিরেক্টলি কথা বলতে ভালোবাসি।যা প্রশ্ন করব সত্যি করে বলবে।
রিদি:জ্বি বলুন।
ছেলে: আপনি কি ভার্জিন??
রিদি:এসব আপনি কি বলছেন??
ছেলে: যা বলছি ঠিকই বলছি।এখনকার মেয়েরা সাধারণত অনেকগুলা রিলেশন করে।তারপর তাদের সাথে বেডে যেতে দ্বিতীয়বার ভাবে না।তাই বলছি।আপনি কি ভার্জিন??
রিদি: দেখুন দুই একটা মেয়ের জন্য সব মেয়েদেরকে এরকম ভাবা উচিৎ না। তাছাড়া আপনি যে আমাকে বলছেন তার আগে আপনি বলুন তো আপনি নিজে কি??
ছেলে: দেখুন ছেলেদেরকে নিয়ে কিছু যায় আসে না।আমি যেমনি হই না কেন আপনি ভার্জিন হলেই চলবে।
রিদি: আপনার মত ছেলেকে বিয়ে করা আমার পক্ষে অসম্ভব।
রিদি তৎক্ষনাত বাহিরে গিয়ে বলল যে সে এই বিয়ে করতে পারবে না।এটা শুনে ছেলের মা বাবা রেগে গেল এবং নিজেরা বিয়ে ভেঙে দিয়ে চলে গেল। তারা সেখান থেকে যাওয়ার পরই রিদির মা তার রুমে গেল।
রিদির মা:এমন কেন করলি তুই? বিয়েটা কেন ভাঙলি??
রিদি: মা তুমি জানো ওই ছেলেটা….
পুরো কথাটা শেষ করতে পারল না রিদি।তার আগেই নিজের পায়ে ব্যাথা অনুভব করল সে। সামনে তাকিয়ে নিজের মায়ের হাতে বেত দেখে রিদির আর বুঝতে বাকি রইল না যে তার সাথে ঠিক কি হয়েছে।রিদি আর কিছু বলার সুযোগ পেল না।রিদির মা নির্মম ভাবে রিদিকে মারতে শুরু করল।রিদি চিৎকার করে তাকে বলেছিল তার কথাটা একবার শুনতে কিন্তু তার কানে যেন রিদির কোনো কথায় পৌছায় নি।টানা ১ ঘন্টা রিদিকে মারার পর যখন বেতটা ভেঙে গেল তখন রিদির মা রুম থেকে বেরিয়ে গেল।রিদি তখন শুয়ে শুয়ে ব্যাথায় কাতরাতে থাকল।রিদির মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে মরে গেলেও হত।এত যন্ত্রণা সহ্য করার থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো।আত্মহত্যা যদি মহাপাপ না হত তাহলে রিদি অবশ্যই নিজেকে শেষ করে দিত।এভাবেই ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে একসময় রিদি ঘুমের দেশে পাড়ি দিল।
পরের দিন কলেজে,
টিফিন টাইমে চুপচাপ বসে আছে রিদি।নিধি অনেক্ষণ যাবত রিদিকে খেয়াল করছে।কাল পর্যন্ত যেই মেয়েটা হাসিখুশি ছিল সেই মেয়েটা আজকে মনমরা হয়ে বসে আছে।কারণটাও অবশ্য অজানা নয় নিধির। সে জানে যে গতকাল রিদির মা তাকে বেধম পিটিয়েছে।এটা প্রায়ই হয় রিদির সাথে।রিদির মা তাকে প্রায়ই এরকম মারে। কখনও কোনো কারণ ছাড়া শুধুমাত্র নিজের রাগ মেটাতেও তিনি রিদিকে মারে।রিদির বাবা দেশের বাহিরে থাকে।তাই তিনি চাইলেও কিছু করতে পারে না।যদিও রিদির বাবা তার স্ত্রীর এইরকম অত্যাচার সম্পর্কে কিছুই জানে না। রিদির মা কখনও তাকে জানতে দেয় নি।মেয়েটার উপর খুব মায়া হয় নিধির।মেয়েটাকে অদ্ভুত সহ্য ক্ষমতা দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছে আল্লাহ তায়ালা।
নিধি: চল না রিদি।আজকে একটু কলেজের বাগান থেকে ঘুরে আসি।
রিদি: চল।
এরপর তারা চলে গেল কলেজের পিছে বাগানে ঘুরতে।চারপাশে গাছপালা ঘেরা মাঝখানে একটা ছোট ঝিল।কলেজের বাগানের এই সাইডের প্রকৃতিটা খুব সুন্দর।এখানে আসার পর রিদির মন মুহুর্তের মধ্যেই ভালো হয়ে গেল।নিধিও তা দেখে খুব খুশি হলো।মূলত রিদির মন ভালো করতেই নিধি তাকে নিয়ে এই বাগানের সাইডে এসেছিল।
________________________________________
বাগানের বড় একটা আমগাছের নিচে বসে আছে শুভ ও তার বন্ধুরা। ওরা সবাই অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে।এই কলেজের সাথেই ভার্সিটি আছে।সেখানেই ওরা পড়ে।
(শুভ আহমেদ।বয়স ২১ বছর। অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে।উচ্চতা ৬’২”।ভার্সিটির ক্রাশবয়।শুভর একটা ছোট বোন আছে।নাম শুভ্রা।)
শুভরা সবাই গল্প করতে করতে শুভর চোখ গেল একটা মেয়ের দিকে।আকাশি কালার থ্রি পিস পরা। চুলগুলা বেণি করা।মুখে কোনো সাজ নেই।তবুও তাকে দেখতে অসাধারণ লাগেছে।তাকে দেখে অজান্তেই শুভর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো ” মায়াবিনী “।
আকাশ: কে মায়াবিনী??
আকাশের কথায় শুভর ধ্যান ফিরে আসে।
শুভ: কোথায় মায়াবিনী??
আকাশ: তুই তো এইমাত্র বললি?? আচ্ছা দ্যা গ্রেট শুভ আহমেদ আবার কারো প্রেমে পরে নি তো??
শুভ: কি যা তা বলছিস?? বাদ দে তো এসব।
এই বলে মেয়েটির দিকে তাকাতেই দেখে মেয়েটি সেখানে নেই।শুভ আবার বন্ধুদের সাথে গল্প করায় মন দিল।
______________________________________
রিদিদের টিফিন টাইম শেষ হওয়ার সাথে সাথে রিদি সেখান থেকে চলে আসে।নিধি আরও কিছুক্ষন সেখানে থাকতে চেয়েছিল।কিন্তু রিদির জন্য সেখান থেকে চলে আসতে হয়েছে।
ছুটির পর,
শুভ তার বন্ধুদের বিদায় দিয়ে পার্কিং এ গেল নিজের গাড়ির কাছে।গাড়ির কাছে যেতেই সে দেখতে পেল গেট দিয়ে তখনকার সেই মেয়েটি বের হচ্ছে। সে দেখল মেয়েটি হাটতে হাটতে তার দিকেই আসছে।মেয়েটি তার কাছে আসতেই সে মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল,
শুভ: আপনার নামটা জানতে পারি??
এদিকে,
গেট দিয়ে বেরিয়ে নিধিকে বিদায় দিয়ে আনমনে হাটছিল রিদি।বাড়িতে যাওয়ার কথা মনে পরতেই তার মনটা বিষন্ন হয়ে উঠল।এসব ভাবতে ভাবতে রিদি হাটছিল।হঠাৎ কেউ সামনে আসতেই রিদি ভয় পেয়ে সামনে তাকাল।দেখল তার সামনে একজন সুদর্শন যুবক।দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটিকে দেখে এক মুহুর্তের জন্য রিদির খুব ভালো লেগেছিল।ইচ্ছে করছিল যে সেখানে দাঁড়িয়ে ছেলেটির সাথে পরিচিত হতে।কিন্তু পরক্ষণেই মাথায় আসল মায়ের কথা।মা যদি জানতে পারে যে রিদি কোনো ছেলের সাথে কথা বলেছে তাহলে সে রিদিকে মেরেই ফেলবে।এই ভেবে রিদি সেখানে এক মুহুর্তের জন্যেও দাঁড়াল না।সে ছেলেটিকে পাশ কাটিয়ে দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেল।রিদিকে এভাবে চলে যেতে দেখে শুভ খুব অবাক হলো।
শুভ: মেয়েটা ওভাবে চলে গেল কেন?? ও কি আমাকে দেখে ভয় পেল নাকি আমাকে ইগনোর করলো?? আর যদি ইগনোর করেও থাকে তাহলে কেন করলো? ও কি অন্য কাউকে ভালোবাসে নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে??
এসব ভাবতে ভাবতেই শুভ নিজের গাড়িতে উঠল এবং নিজের বাসায় চলে গেল।
অন্যদিকে,
রিদি অনেক্ষণ দৌড়ানোর পরে এসে থেমেছে।সে এতক্ষণ দৌড়ানোর কারণে হাপাচ্ছে। একটুর জন্য বেচে গেছে সে।মা যদি জানতে পারে তাহলে যে কি হত তা শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালা জানে।রিদির এখনো মনে আছে এক বছর আগের কথা।
অতীত,
রিদি ক্লাসে ফার্স হওয়ায় তাদের ক্লাস টিচার রিদির উছিলায় সবাইকে ট্রিট দিবে।এই জন্য সে স্কুল ছুটির পর তার স্যারের সাথে রেস্টুরেন্ট এ যায়।সেখানে স্যার সবাইকে ট্রিট দেয়।সেখানে সবাই খুব মজা করে।এমনকি রিদিও খুব মজা করে।কলেজ থেকে ফেরার পর রিদি নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।গোসল শেষ করে বেরিয়ে দেখে তার মা বসে আছে।
রিদি: কিছু বলবে আম্মু??
রিদির মা: আজকে আসতে এত দেরী হলো??
রিদি: আসলে আম্মু আমি ফার্স হওয়ায় স্যার আমাদের সবাইকে ট্রিট দিয়েছিল।তাই আসতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল।
রিদির: তুই তোর স্যারের সাথে রেস্টুরেন্ট এ গিয়েছিলি??
রিদি: আম্মু আমি তো একা যায় নি। সবাই গিয়েছিল।
রিদির মা: সবাই যাবে বলে তুইও যাবি?? তোর সাহস কি করে হয় স্যারের সাথে রেস্টুরেন্ট এ যাওয়ার??
এই বলে সে গরম খুন্তি দিয়ে রিদিকে মেরেছিল।রিদি তার মাকে অনেক বোঝায়।কিন্তু তিনি বুঝতে চান নি।তিনি রিদিকে প্রচুর মেরেছিল। গরম খুন্তির কারণে রিদির গায়ে অনেক জায়গায় পুড়ে গিয়েছিল।এমনকি এখনও রিদির হাতে সেই পুড়ে যাওয়ার দাগ আছে।
বর্তমান,
সেই কথা মনে আসতেই রিদির অন্তরাত্মা কেপে উঠল।রিদি আর কিছু না ভেবে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
চলবে………….