তৈমাত্রিক পর্ব-০২

0
1480

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ০২

🍂🍂
.
.

২ বছর পূর্বে ~~
.
.
.

মেহরাম;; মা তুমি কেন এমন করছো বলতো, আরে আমরা কি বেড়ানোর জন্য শহরের বাইরে যাচ্ছি নাকি। পড়াশোনার জন্য যাচ্ছি সেখানে। (মায়ের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে)

কনিকা ইসলাম (আমার মা);; না বাপু বাড়ির মেয়েদের এতো দূর গিয়ে পড়ালেখা করতে হবে না। বলি এখানে থেকেও তো পড়ালেখা করা যায় নাকি!

মেহরাম;; মা কিন্তু সেখানের ভার্সিটিতে আমাদের চান্স হয়েছে।

কনিকা;; যেতে দেবো না মানে না, দুটো মেয়ে চোখের সামনে থাকবি তাই শান্তি।

তনু;; উফফ বড়োমা (তনু আমার মা কে বড়োমা বলেই ডাকে) কেন বুঝতে চাইছো না তুমি?

কনিকা;; কি বুঝবো হ্যাঁ আমাকে কি তোদের অবুঝ মনে হয়?

মেহরাম;; তার থেকেও বেশি।

কনিকা;; এই কি বললি?

মেহরাম;; আপনি মহান আম্মাজান।

কনিকা;; আমি গেলাম আমার কাজ আছে।

মা আমাদের এক প্রকার ঠেলেই চলে গেলো। আর আমি মুখ বাংলার পাচঁ বানিয়ে রেখে দিয়েছি। তনুর দিকে তাকিয়ে দেখি মাথা চুলকাচ্ছে আর তাকিয়ে আছে। তখনই আমি তার মাথায় দিলাম এক বারি।

তনু;; কিরে হারামি তুই আমারে মারস কেন?

মেহরাম;; আরে কিছু কর। সেখানে চান্স হয়েছে দুনিয়া উলটে গেলেও যেতে হবে। এখানে থেকে কে পড়াশোনা করবে। তুই করবি?

তনু;; আমার এতো শখ নাই বইন।

মেহরাম;; কি করবো?

তনু;; হরতাল।

মেহরাম;; মানে কি?

তনু;; খাওয়া-দাওয়া বন্ধ, রুম থেকে বেড়নো বন্ধ। মানে একদম সবকিছু বাদ দিয়ে আমাদের বসে থাকতে হবে যতোক্ষণ না বাসার সবাই রাজি হচ্ছে।

মেহরাম;; তোর কি মনে হয় এতে কাজ হবে?

তনু;; আলবাদ হবে। কিন্তু?

মেহরাম;; কি?

তনু;; না খেয়ে থাকবো কি করে?

মেহরাম;; আরে আগে থেকেই রুমে খাবার নিয়ে বসে থাকবো আর খাবো। কিন্তু সবাই ভাববে কিছুই খাই নি।

তনু;; আচ্ছা এবার চল।


আমার আর তনুর অনেক কষ্টে ঢাকার নেশনাল ইউনিভার্সিটিতে চান্স হয়েছে। যখন রেজাল্ট বের হলো তনুর আর আমার খুশি দেখে কে। সারা বাড়ি পাগলের মতো দৌড়িয়েছি। তনু তো খুশির চোটে কেদেই দিয়েছিলো। কিন্তু এখন ঘটলো আরেক বিপত্তি। বাড়ির সবার মুখে একই কথা পড়াশোনা করে উল্টিয়ে-বল্টিয়ে ফেলো মানা নেই কিন্তু যাই কিছু করো না কেন পরিবারের সাথে থাকতে হবে। যা তনু আর আমি মোটেও মেনে নিতে পারছি না। এতো বড়ো একটা সুবর্ণ সুযোগ কেউ কি হাত ছাড়া করবে। তবে আমাদের প্লেন অনুযায়ী আমি আর তনু রুমেই মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলাম। আর এদিকে একবার আমার মা আরেকবার চাচি এসে জোরে দরজা ধাক্কিয়ে গেছে কিন্তু আমরা তো খুলছি না। আর খুলবো কি করে নাকে-মুখে দুজন মিলে খাচ্ছি যে। খেতে খেতেই আবার দরজাতে কড়া নাড়ার আওয়াজ এলো।

মেহরাম;; এই রে মরেছে। এসে গেলো তো (মুখে খাবার পুরেই)

তনু;; জলদি এগুলো সরা এখান থেকে।

আমি আর তনু মিলে তড়িঘড়ি করে সবকিছু লুকিয়ে ফেললাম। আর এমন একটা ভাব ধরলাম যেন দুজনেরই মন ভীষণ খারাপ। আমি দরজা খুলেই দেখি সামনে আমার বাবা দাঁড়িয়ে আছে।

আশরাফ আলম (আমার বাবা);; কিরে মা তোদের হয়েছে কি। শুনলাম খাচ্ছিস না বাইরে পর্যন্ত বের হচ্ছিস না। কি হয়েছে তোদের?

মেহরাম;; বাবা আসলে…

তনু;; জেঠু আসলে কি আর বলি কষ্টের কথা (তার জেঠুর হাত ধরে কাদো কাদো ফেইস বানিয়ে)

মেহরাম;; বইন আমার একটু থাম বেশি ওভার একটিং হইতাছে (মেকি হেসে ফিসফিস করে)

তনু;; আহাম আহাম… না মানে বলছিলাম কি জেঠু আমাদের না ঢাকার ইউভার্সিটিতে চান্স হয়েছে। মানে শহরের বাইরে আর কি। একই কলেজে, এখন তুমি তো জানোই যে আমাদের পড়ার কতো শখ। মানুষ পড়ালেখার জন্য এবোর্ড চলে যায় আর আমরা তো মাত্র শহর টা চেঞ্জ করছি বলো। প্লিজ যাই না। তুমি একটু আমাদের হেল্প করো না প্লিজ।

আশরাফ আলম;; আহারে বাবা তোরা তো ইমোশনাল ব্লেকমেইল করছিস। আচ্ছা দেখি কি করা যায়। এবার আয় বেরো রুম থেকে।

বাবার পিছু পিছু আমি আর তনু বের হয়ে পরি। এখন যেহেতু দুপুর বেলা তাই সবাই খাবার টেবিলে একসাথেই খেতে বসলাম। আমি টেবিলে বসতেই দিদুন এসে আমার পাশে বসে পরে। আমি সোজা তাকে জড়িয়ে ধরি।

দিদুন;; কিরে বুড়ি আমাদের ছেড়ে নাকি চলে যাচ্ছিস?

দিদুন আমাকে পাকনা বুড়ি বলেই ডাকে। আমি দিদুনের কথায় হেসে দিলাম। তারপর তার গাল গুলো আলতো ভাবে টেনে বলে উঠলাম।

মেহরাম;; না গো দিদুন না। ছেড়ে কোথায় যাচ্ছি না,শুধু কিছুদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি। আর দেখো না আগে যেতে দেয় কিনা।

আতিয়া;; যেতে হবে না। কোথাও যেতে হবে না। পড়াশোনা এখানেই কর নইলে বাদ দে।

চাচি এই কথা বলেই রেগে চলে গেলেন। তনু আর আমি আহত চোখ নিয়ে একে ওপরের দিকে তাকাই। তখনই আমার চাচ্চু বিল্লাল আলম এসে টেবিলে বসে পরেন।

তনু;; বাবা

বিল্লাল আলম;; হ্যাঁ মা বল আর কোথায় হয়েছে চান্স তোদের?

মেহরাম;; চাচ্চু ঢাকা নেশনাল ইউনিভার্সিটিতে।

বিল্লাল আলম;; আসলে কি পড়াশোনার জন্য মানুষ বাইরে যায় এটা বড়ো কনো কথা না। কিন্তু সেখানে গিয়ে থাকতে পারবি একা একা তোরা?

তনু;; অবশ্যই পারবো বাবা। একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবো। হোস্টেলে থাকবো না। আর আমরা তো দুজন একা কোথায়? রাত দিন একসাথেই থাকবো। বাবা প্লিজ যেতে দাও না।

বিল্লাল আলম;; আচ্ছা দেখছি।

একে একে সবাই এসে খাবার টেবিলে বসে পরে। আড়চোখে শুধু তনু আর আমি তাকাতাকি করছি। তখনই আমার বাবা বলে উঠেন…

আশরাফ আলম;; কনিকা।

কনিকা;; হ্যাঁ বলো।

আশরাফ আলম;; বাচ্চারা যেতে চাইছে বাইরে। যেতে দিই। আর তাদের এখন ভালো মন্দ বোঝার বয়স হয়েছে। হাজার বাচ্চারা বাইরে যায় ওদেরও যেতে দেই না।

কনিকা;; আচ্ছা যেতে দেই কিন্তু আমার কথা হল সেখানে আমাদের কোন আত্নীয় নেই। একা একটা জায়গা কিভাবে সামলাবে?!

মেহরাম;; মা এবার সত্যি তোমরা অনেক বারাবারি করছো। মানুষ যায় না বাইরে পড়তে নাকি। আর ছোট বাচ্চা আমরা। আমাদের এখানে ভারসিটিতে চান্স হতো চুপচাপ পড়ে নিতাম। কিন্তু যেখানে হয়েছ সেখানে যেতে তো হবে নাকি। (কিছুটা রেগে)

সবার এমন কথা আমি আর মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই কিছুটা রেগেই কথা গুলো বলে ফেললাম। আমার বলার পরই টেবিলে এক নিরবতা ছেয়ে গেলো। টানা ৫ মিনিট কেউ কোন কথা বলে নি। কিন্তু হঠাৎ করেই চাচ্চু আর আমার মা বলে উঠে….

বিল্লাল আলম;; আমার এক বন্ধু আছে তাকে আমি বলছি সেখানে একটা ভালো বাসা দেখতে তোদের থাকার জন্য।

কনিকা;; সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে চেক করে গুছিয়ে নিস। আর কি কি লাগবে আমাকে বলিস।

চাচ্চুর আর মার কথা শুনে আমি আর তনু ফট করে মাথা তুলে তাকালাম। আমার খুশিতে যেন মাথা ঘুড়ে গেলো। তনু এতো টাই অবাক যে বলেই ফেললো।

তনু;; বড়োমা আমরা যাবো?!

কনিকা;; হ্যাঁ যাবি।

তনু আর আমি শান্ত হয়ে রইলাম। সেখানে আর আমাদের খুশির বহিঃপ্রকাশ করলাম না। খেয়ে দেয়ে আস্তে করে টেবিল ছেড়ে সোজা ছাদে চলে যাই। তনু সারা ছাদে লাফাতে লাগলো।

তনু;; আল্লাহ আমি ভাবতে পারছি না যে সবাই মেনে গেছে।

মেহরাম;; এখন মনে হচ্ছে যে তোর পাখা গজিয়ে গেলো।

তনু;; তার থেকে কম কোথায়।

এভাবেই দুইদিন কেটে গেলো। চাচ্চু তার এক বন্ধুর সাহায্যে একটা সুন্দর ফ্ল্যাট দেখে নিয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক। ইউনিভার্সিটির প্রফেসরের সাথেও সব কথা হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু আমরা যাবো ফ্ল্যাটে উঠবো আর পরেরদিন থেকে ভার্সিটি। তনু আর আমি নাচতে নাচতে সবকিছু পেকিং করে নিলাম। বাইরে এসে পরেছি। চাচ্চু নিজ হাতে আমাদের সব ব্যাগ গুলো গাড়ির ডিকিতে তুলে দিলো। সবকিছু রাখার পর এবার এলো বিদায় নেবার পালা। আমি ঘুরে আম্মুর দিকে তাকালাম। দেখি চোখে যেন পানি চিকচিক করছে।
বরাবরই আমি আম্মুর ওপর অনেক বেশি দূর্বল। তাই দ্রুত গিয়ে চোখের পানি মুছে দিলাম। আমি কিছু একটা বলতে যাবো তার আগেই আম্মু বলে ওঠে…

কনিকা;; শোন ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন দিবি। কি কি রান্না করলি খেলি সব আমায় বলবি। কোন কিছু হলে বিনা দিধায় বলবি।

মেহরাম;; হুম হুম বলতে থাকো আমি নোট করে নিচ্ছি সব।

কনিকা;; মারবো একটা টেনে।

মেহরাম;; হাহাহাহাহা,,,

কনিকা;; আমি একটা কফি মগ ভেংগে ফেলবো।

মেহরাম;; কিহহহ কিন্তু কেন?

কনিকা;; প্রতি রাতে তো তুই আর আমি বসে কফি খেতাম একই কালারের মগে। এখন তো তুই থাকবি না আমার খারাপ লাগবে না।

মেহরাম;; আরে আমার পাগলি মা (জড়িয়ে ধরে) এতো বড়ো আমি হয়ে গেলাম। কিন্তু মাঝে মাঝে তোমার বাচ্চামো স্বভাব দেখে মনে হয় যে তুমিই বাচ্চা আর আমিই মা।

আমার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। তনুও তার বড়োমা আর মার সাথে কথা বললো। আমি চাচি কে অনেক বুঝিয়ে এলাম। দিদুনের মন অনেক খারাপ। তবুও খুব কষ্টে সামাল দিলাম। এবার দেখি আকাশ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তার কাছে চলে গেলাম।

মেহরাম;; কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন, দেখা করবি না?

আকাশ;; চলেই তো যাচ্ছো।

মেহরাম;; আহহ ভাই তুইও। আচ্ছা এদিকে আয় দেখি।

আকাশ;; কি?

মেহরাম;; এই নে (তার হাতে একটা বড়োসড় চকোলেটের বক্স দিয়ে)

আকাশ;; এগুলো আমার জন্য!

মেহরাম;; অবশ্যই। শোন এখন থেকে তোকে মায়ের কাছে পরতে বসতে হবে বুঝলি। দুষ্টুমি কম করবি।

আকাশ;; আচ্ছা।

আকাশ অনেক ছোট তাই সবাই আদর করে। অবশেষে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি আর তনু গাড়িতে উঠে পরলাম। বাবা আর চাচ্চু আমাদের সাথেই যাবেন। তারাও গাড়িতে উঠে পরে। গাড়ি যাচ্ছে আপন গতিতে। আর এদিকে তনু আর আমার কান ঝালাপালা হয়ে গেলো। সারাটা রাস্তা বাবা আর চাচ্চু আমাদের জ্ঞান প্রদান করে এসেছেন। আমরাও ভদ্র মেয়ের মতো তা শুনে এসেছি। প্রায় অনেকক্ষণ যার্নি করে আমরা এসে পরলাম। এটা মিরপুর। চাচ্চু আমাদের দেখিলো দিলো যে এই আমাদের ফ্ল্যাট। আমরা ছোট খাটো জিনিস নিয়ে চলে গেলাম। আর ব্যাগ গুলো বাবা আর চাচ্চুই নিলো, আমাদের ধরতেই দিলো না। এটা একটা দোতালা বাসা। চারিদিকের পরিবেশও ভালোই লাগলো। ফ্ল্যাটের ভেতরে গিয়ে ঘুড়ে ঘুড়ে দেখলাম। ভালোই লাগলো। দুটো রুম আছে যদিও দুটো রুমের কোন দরকারই নেই। একটা কিচেন, একটা ওয়াসরুম। আর সামনেই ছোট একটা বারান্দা। তাতে কয়েকটা ছোট ছোট ফুলের গাছ। ভারি পছন্দ হলো বাসাটা আমারও আর তনুরও। বাড়ির মালিক একজন বয়স্ক মহিলা। অনেক ভালো তিনি যা তার ব্যবহারেই বোঝা গেলো। সবকিছু গুছিয়ে বাবা আর চাচ্চুর বাড়ির চাবি আমাদের দিয়ে গেলো। আমরা নিচ পর্যন্ত গেলাম তখন বাবা আর চাচ্চু গাড়িতে করে চলে গেলো। তাদের চলে গেতেই আমি তনুর দিকে আর তনু আমার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকেই দুজন একসাথে হেসে দিলাম।

তনু;; দেখলি ঠিকই আসতে দিয়েছে আমাদের।

মেহরাম;; হুমম। দিবে না কেন। না দিলে তুলকালাম কান্ড বাধিয়ে দিতাম।

তনু;; হিহিহি চল। ভেতরে যাই।

সেদিন তনুর আর আমার সবকিছু গোছগাছ করতে করতেই চলে যায়। এর মধ্যে বাড়িতে ফোন করেছিলাম। তারা পারছে না ফোনের মাঝে চলে আসতে। প্রায় অনেক সময় কথা বলে আমরা খেতে বসি। খাবার বাইরে থেকে আনতে হয়েছে কারণ বাসায় আজ তেমন ব্যাবস্থা নেই। কাল সকালেই উঠে ভার্সিটি চলে যেতে হবে। আর আজ অনেক ক্লান্তও তাই তাড়াতাড়ি দুজনেই ঘুমিয়ে পরি।



পরেরদিন সকালে~

মেহরাম;; কিরে তনু আজ কি ঘুম থেকে উঠবি না নাকি তুই। কটা বাজে দেখিছিস, তনু বইন উঠ তাড়াতাড়ি।

তনু;; আরে হয়েছি কি? কটাই আর বাজে। (ঘুমে থেকেই)

মেহরাম;; ৮ঃ২৫ বাজে আর ৯ টায় ক্লাস।

তনু;; এইরে, উঠছি উঠছি।

তনু জলদি চলে গেলো ফ্রেশ হতে। খানিক পরে বের হতেই আমি খাবার তার সামনে রাখলাম।

মেহরাম;; খেয়ে নে জলদি।

তনু;; তুই রান্না করেছিস?

মেহরাম;; হ্যাঁ, কোন রকম। রুটি বানালাম আর ডিম। এখন খেয়ে নে।

তনু;; হুমমম।

তনু আর আমি খেয়ে বের হয়ে পরি ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। তবে হ্যাঁ আমাদের ভার্সিটি একই কিন্তু তনুর আর আমার ডিপার্টমেন্ট আলাদা। তনু ফিলোসোফি ডিপার্টমেন্টের আর আমি ইংলিশ। রিকশা করে তনু আর আমি পৌছে গেলাম।

তনু;; মেহরু শোন আমার ক্লাসের টাইম হয়ে গিয়েছে। আমি যাই বুঝেছিস।

মেহরাম;; হ্যাঁ যা কিন্তু ক্লাস শেষে গেটের বাইরে দাড়াস কিন্তু।

তনু;; হ্যাঁ আচ্ছা আমি যাই।

এই বলেই তনু দৌড়ে চলে গেলো। আমিও হেটে হেটে আমার ক্লাসের দিকে যেতে থাকলাম। কিন্তু কিছুদূর গেতেই ভার্সিটির মাঠে কিছু ছেলেকে জরো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। সামনে আরো একটু এগোলে দেখতে পেলাম তাদের মাঝখানে একটা কালো বাইকে একজন বসে আছে। যেভাবে বসে আছে আর হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে যে সে তাদের লিডার এমন। বা কলেজের ভিআইপি। কিন্তু আমি এক প্রকার তাদের ইগ্নোর করেই চলে গেলাম। আমি খেয়াল করলাম যে যখন আমি তাদের পাশ দিয়ে আসছিলাম তখন তারা সবাই অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিলো। তাতে আমার কি যাই হোক আমি চলে গেলাম আমার ক্লাসে। গিয়েই দেখি কতো গুলো মেয়ে গোল হয়ে আড্ডা দিচ্ছে আবার কতো গুলো ছেলে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কথা বলছে। আমি ধীর পায়ে গিয়ে একজন মেয়ের পাশে বসে পরলাম। মেয়েটা ভারি মিষ্টি দেখতে, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পরে আছে। আমি কারো সাথে তেমন কথা না বলে চুপ করে বসে থাকলাম। কিন্তু হুট করেই আমার পাশের মেয়েটা বলে ওঠে…

উর্মি;; হেই হাই।

মেহরাম;; হ্যালো।

উর্মি;; আমার নাম উর্মি। তুমি?

মেহরাম;; মেহরাম আফরিন।

উর্মি;; এখানে নতুন?

মেহরাম;; হ্যাঁ।

উর্মি;; ওহহ, আমাদের এখানে সবাই প্রায় ফ্রেন্ডলি শুধু কিছু মানুষ বাদে। আচ্ছা যাই হোক আমাকে নিজের ফ্রেন্ড ভাবতে পারো। (একগাল হেসে)

মেহরাম;; হুমমম। আচ্ছা।

উর্মি;; আর এই যে আমি কিন্তু তুমি তুমি করে ডাকতে পারবো। তুই করে ডাকতে হবে।

আমি এবার হেসেই দিলাম। যতো টুকু বুঝলাম উর্মি অনেক বেশি মিশুক প্রকৃতির মেয়ে। অনেক ভালো ফ্রেন্ডশিপও হয়ে গেলো আমাদের। এখানে আসার পর উর্মিই আমার এতো পরিচিত। কিছুক্ষন পর স্যার ক্লাসে এসে পরে। তবে বরাবরই কখনোই আমার ক্লাসে কোন মনোযোগ ছিলো না। উর্মি আর আমি বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি আর ফিসফিস করে গল্প করছি। হঠাৎ আরেক টা মেয়ে বলে ওঠে…

বাবলি;; উর্মি চুপ কর।

উর্মি;; আরে ছাড় তো।

মেহরাম;; ও কে?

বাবলি;; আমি বাবলি, পরে পরিচিত হবো এখন আগে ক্লাস করি। কারণ এই স্যার অনেক বেশি কড়া।

মেহরাম;; আমি তা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছি।

বাবলি;; কিভাবে?

মেহরাম;; স্যারের বেল মাথা দেখে।

আমার কথাই আমরা তিনজনই হেসে দিলাম। প্রায় ৫০ মিনিট বা ১ ঘন্টা পর ক্লাস শেষ হলো। স্যার গেতেই যেন পুরো ক্লাসের পোলাপানরা হাফ ছেড়ে বাচলো।

উর্মি;; উফফফ আপদ গেলো।

মেহরাম;; আচ্ছা খুব বেশি খবিশ নাকি স্যারটা?

বাবলি;; অনেক বেশি।

আমরা তিনজন মিলে গল্প করছিলাম ঠিক তখনই প্রায় ৩-৪ জন ছেলে আমাদের ক্লাসে ঢুকে পরে তাও হুড়মুড়িয়ে। তাদের আসার সাথে সাথে ক্লাসের সবাই কেমন একদম চুপ হয়ে যায় আর একসাথে দাঁড়িয়ে পরে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলে উর্মি জলদি আমাকেও দাড় করিয়ে দেয়। আমি সামনে তাকাই। যারা আমাদের ক্লাসে এসেছে তাদের মাঝখান থেকে একজন সাদা রিপ পেন্ট পরা আর ব্রাউন কালারের শার্ট পরা ছেলে আসে। আমি লক্ষ করে দেখলাম যে আজ সকালে যাকে দেখেছিলাম এই সেই ছেলেটি।

আমি কিছুটা ঝুকে বাবলি কে জিজ্ঞেস করলাম…

মেহরাম;; বাবলি, কেরে ইনি?

বাবলি;; তুই ইনাকে চিনিস না?

মেহরাম;; আরে চিনি না বিধায় তো জিজ্ঞেস করছি কে এই?

বাবলি;; ইনি আয়ুশ আহমেদ। ভারসিটির সিনিয়র। সাথে সবার ক্রাশবয় ও। এখানে তার আলাদা নাম ডাক আছে। সবাই আয়ুশ আহমেদ বলতে পাগল।

মেহরাম;; পাগল! লাইক সিরিয়াসলি। এই হনুমান মুখোর ওপর পাগল।

উর্মি;; এই আস্তে বল। একবার শুনে ফেললে না খবর খারাপ করে ছাড়বে। চিনিস না একে। ভার্সিটিতে কারো সাহস হয় না এই আয়ুশ আহমেদের ওপর কিছু বলার।

মেহরাম;; হয়েছে থাম।

আমি কথা বলছিলাম। ঠিক তখনই একটা কঠোর কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসে।

আয়ুশ;; এই যে তুমি!

আয়ুশের কথায় আমি দ্রুত সামনে তাকালাম। আর এই প্রথম আয়ুশ আমার সাথে কথা বললো।

আয়ুশ;; এই মেয়ে তোমাকে বলছি কানে শুনতে পারো না নাকি?

আয়ুশের কথায় আমার মেজাজ গেলো বিগড়ে। আমি ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলাম শার্টের হাতা গুলো ফোল্ড করা, মুখে চাপদাড়ি আছে। আর যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে তাতে কেমন এক গুন্ডার মতো লাগছে। আমি আমার আশেপাশে তাকালাম দেখি সবাই হাবলার মতো আয়ুশের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু তার কথায় আমার রাগ হচ্ছে তাই আমি কড়া গলায় বলে উঠলাম…

মেহরাম;; জ্বি আমি অবশ্যই শুনতে পারি কানে, নয়তো আমি কানের ডাক্তারের কাছে থাকতাম এখানে না।

সবাই আমার কথা শুনে হেসে দিলো।

আয়ুশ;; খুব ইগো তোমার তাই না। নয়তো দেখলাম সকালে নিজের সিনিয়র কে দেখলে আর সম্মান না জানিয়েই এসে পরলে।

আয়ুশের কথায় আমার রাগ মাথায় চড়ে গেলো। আর যতটুকু দেখতে পেলাম তাতে বুঝলাম যে এই ভার্সিটিতে আয়ুশ দাদাগিরি করে বেড়ায়।

মেহরাম;; আমি এখানে কে সিনিয়র বা কে জুনিয়র তা দেখতে আসিনি। আর রইলো সম্মান জানানোর কথা তো আপনাকে তা দেখানোর প্রয়োজনবোধ আমি করিনি তাই জানাইনি।

বাবলি আমাকে ইশারা দিয়ে চুপ থাকতে বলছে কিন্তু আমি তা তোয়াক্কা করলাম না। আজ আমাদের প্রথম দিন ছিলো তাই আর ক্লাস মনে হয় না হবে। আর আয়ুশকে এই কথা বলে আমিও সোজা আমার ব্যাগ নিয়ে তার সামনে দিয়ে বের হয়ে এসে পরি।



🥀চলবে~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে