তুমি হলেই চলবে পর্ব-১১

0
1172

#তুমি_হলেই_চলবে
#part_11
writer : #Mahira_Megha

আর্শের কথায় দুজন আর্শের দিকে তাকায়। আরুহী হেসে বলে উঠলো, ” এসো এসো এত খনে আসার সময় হলো তোর?
কতখন ওয়েট করছি ভুলে গেলি কয়দিন পর টেষ্ট এক্সাম তো।তোর মতো অলসের সাথে থাকলে আমি নিশ্চয় খারাপ রেজাল্ট করবো।

আর্শ মন খারাপ করে মনে মনে বলে উঠলো,” হ্যাঁ রুহি এখন তো তোর আর আমাকে ভালো লাগবে না। এখন তো ভাইয়াকে পেয়ে গেছিস। ”
আরুহী ভ্রু কুচকে তাকালো আর্শের দিকে তারপর বলে উঠলো,” কিরে মন খারাপ করে কি ভাবছিস? আমার সামনে একদম মুড অফ করবি না বলে দিলাম। ”
কথাটা কানে আসতেই আর্শের মুখে হাসি ফুটলো তারপর আনমনে বলে উঠলো,” আমার কথা মাথায় আছে তাহলে, ভুলে যাস নি আমায়।”

কথাটা বলেই আর্শ জিভ কাটলো মনে মনে, ” এই রে কি বলে ফেললাম। ”

বাট আরুহীর কি, সামনে আরিয়ান দাড়িয়ে আছে এখন কি আর কারো দিকে মন আছে ওর। আর্শের কথাটা কানে এলো বাট মনোযোগ না থাকায় আরুহী বলে উঠলো,” তোকে কি করে ভুলবো খাতা পেন দে। ”

খাতা কলম নিয়ে বসে পড়লো সামনে রসায়ন বই। আরিয়ান স্টিল দাড়িয়ে আছে আর্শ আরুহীর খুনশুটি দেখছে।
হঠাৎ ই ওদের দেখে চোখে পানি চলে এলো ওর বাট পানির ফোটা চোখ থেকে গড়াতে দিলো না।

আরুহী বিরক্ত মাখা মুখে বলে উঠলো, ” উফফ এই বিক্রিয়া টা তো কিছু তেই সল্ভ হচ্ছে না। কি করবো এবার। ”
আর্শঃ আর একবার ট্রাই কর, এসিড পরিবর্তন কর তারপর চেষ্টা কর।
-তুই কর। তুই ও তো পাচ্ছিস না।

আরিয়ান ওদের চেঁচামেচি শুনে ঘোরের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলো। এতখন যেনো অন্য কোনো জগতে ছিলো।
এগিয়ে গিয়ে বসলো আরুহীর পাশে। আরুহীর চোখ বড় বড় রসগোল্লার আকার ধারন করেছে। হার্টবিট বেড়ে চলেছে। আরিয়ানের শরীর থেকে অদ্ভূদ একটা ঘ্রাণ আসছে যা পাগল করে দিচ্ছে আরুহীকে। আর্শ খাতা কলম হাতে সল্ভ করার চেষ্টা করছে এদিকে কোনো খেয়াল নেয় ওর।
আরুহী যেনো হারিয়ে গেছে ভালোবাসার রাজ্যে।
আরিয়ান আরুহীর সামনে চুটকি বাজিয়ে, ” তুমি আর আর্শ কি এমন ই।”
আরুহীর কোনো সারা নেই।
আর্শ অবাক চোখে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে, ” কি বলছো ভাইয়া কেমন আমরা। ”
আরিয়ান আরুহীকে দেখিয়ে, ” এই যে এর মতো। দুজন কথায় কথায় কোথাই হারাও বলো তো?”

আর্শ আরুহী কাধ ঝাকিয়ে এই রুহি কোথায় হারালি।
আরুহী আরিয়ান বলতে গিয়ে ও থেমে যায়। তারপর নিজেকে বলে ওঠে,” না আরুহী তুই তোর মনের কথা কাউকে বলবি না। এই অনুভূতিটা যে শুধু তোর একার। ”

আরুহী বলে উঠলো,” বিক্রিয়া নিয়ে ভাবছিলাম। বাট কোনো ভাবেই সল্ভ হচ্ছে না ।

আরিয়ান এদিকে দেও 2 মিনিটে বিক্রিয়া সল্ভ করে দিলো আরিয়ান।

নিলিমা রিহানা ওদের জন্য স্যানাক্স নিয়ে এসেছে। আরিয়ান আর্শ আরুহীকে এভাবে একসাথে দেখে দুজনের মুখে খুশি ঝলমল করছে।
রিহানাঃ শোনো আরিয়ান আর্শ আরুহীকে এবার থেকে তুমি পড়তে বসাবা। ওদের এই কদিন তুমি পড়াবা।

কথাটা শোনা মাত্র আরুহীর মুখে হাসি ফুটে উঠলো এবার থেকে এক্সামের আগ অব্দি রোজ বিকেলে আরিয়ানকে এতটা কাছে পাবে আরুহী। পড়ার বাহানায় হোক না কেনো আরিয়ানের সাথে টাইম তো স্পেন্ড করতে পারবে।

সবাই মিলে স্যানাক্স খাচ্ছে আরুহী আর্শ খাওয়া নিয়ে মারামারি করছে।
আরিয়ান ওদের দিকে তাকিয়ে, ” আরুহী স্টপ ইট। একটু তো ম্যাচিউরড হও। বাচ্চামো গুলো বন্ধ করো। ”

আর্শ আরিয়ানের কথার মাঝেই বলে ওঠে ছাড়ো না ভাইয়া ওর এই বাচ্চামো গুলোই তো ওকে সবার থেকে আলাদা করে রেখেছে।

আর্শ আরুহী হেটে কলেজ যাচ্ছে। আর্শ বারন করা শর্তেও ওর কথায় কোনো কান দেয় না আরুহী রিক্সা থেকে নেমে হাটা ধরেছে। বেচারা আর্শ কি আর করবে। আরুহীর পেছন পেছন হাটছে।

রাস্তায় কয়েক টা ছেলে আরুহীকে দেখে জোড়ে জোড়ে হাসছে আর বলছে,” শুনলাম পাড়ার গুন্ডি নাকি এখন সিম্পল সাদা সিদে মেয়ে হয়ে গেছে। শার্ট ছেড়ে স্কার্ট পড়া শুরু করেছে।

কথাটা আরুহীর কানে যেতেই রাগে মুখ লাল হয়ে যায়। ছেলেটার কলার দুই হাতে চেপে, ” হ্যাঁ ঠিকই শুনেছিস ড্রেসআপ পাল্টে গেছে ক্যারেক্টার পাল্টায় নি। এই হাত এখনো আগের মতোই চলে। ছেলেটার পাশে থাকা ছেলেটা আরুহীকে হিট করতে গেলে আর্শ ধরে ফেলে। আর্শের চোখে মুখে অগ্নিশিখা ফর্সা মুখ লাল বর্ন ধারন করেছে। ছেলেটার হাত ধরে মোচর দেয়।
পাশে থাকা সব ছেলে ঝাপিয়ে পড়ে, আর্শ আরুহী ওদের সাথে মারামারির এক পর্যায় আরুহীর ধাক্কা লেগে ছিটকে যায়। পরে গেছে ভেবে চোখ বন্ধ করে নেয় আরুহী।

একটু পর ব্যাথা না পেয়ে চোখ খুলে নিজেকে আরিয়ানের বুকে দেখতে পায়। আরুহী যেনো সব ভুলে যায় একটু আগে কি হচ্ছিলো। আরিয়ানকে দেখেই ওর হার্ট ফাস্ট হয়ে গেছে। আরিয়ানের হার্টবিট যেনো স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে আরুহী। চোখ বন্ধ করে ফিল করছে সবটা।
আরিয়ানের কথা কানে আসতেই চোখ খুলে সরে এলো আরুহী।
আরিয়ান কোনো উত্তর না পেয়ে আবার বলে উঠলো, ” আরুহী ঠিক আছো তুমি? ”
আরুহী হ্যাঁ বলে আর্শের দিকে তাকালো একটা ছেলে আর্শকে মারছে।
আরুহী আর এক সেকেন্ড ও দেরি না করে ছেলেটাকে লাথি মেরে আর্শকে দুহাতে ধরে।

আরিয়ান মারছে ছেলে গুলোকে।
আরুহীর সেদিকে কোনো খেয়াল নেয়। আর্শকে ধরে কান্না করছে, ” আর্শ বল না কোথায় লেগেছে তোর? খুব ব্যাথা করছে তাই না।”

আর্শের সব ব্যাথা নিমিষেই গায়েব হয়ে গেছে। আরুহীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে হাজারো মুগ্ধতা নিয়ে। এই একটা মুখ যে আর্শের কাছে সবচেয়ে প্রিয়।আর্শ যে এই মুখের মায়াতে আটকে গেছে।
আর্শ মনে মনে,” তাহলে কি রুহি ও আমাকে ভালোবাসে? হয়তো রুহি বুঝতে পারছে না। যদি ও আমায় ভালো না বাসতো তাহলে কেনো কাঁদছে আমার জন্য। ”

আরুহী কাঁদতে কাঁদতে আবার বলে উঠলো, ” এই কথা বলছিস না কেনো।

আর্শ ওর দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটিয়ে,” একদম ঠিক আছি আমি। কাঁদছিস কেনো বোকার মতো?
-আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তুই ব্যাথা পেয়েছিস তাই না? খুব ব্যাথা করছে?

-আরে না একটু ও ব্যাথা করছে না। এটুকু তে এই আর্শের কিছু হবে না। বলেই হেসে দেয় আর্শ।
আরুহীও ফিক করে হেসে দেয়।

আরিয়ান ছেলে গুলোকে সেই কখন তাড়িয়ে দিয়েছে। বাট সেদিকে ওদের কোনো খেয়াল নেয়।

আরিয়ান ওদের সামনে দাড়িয়ে, ” আর্শ ঠিক আছো তুমি? ”

-হ্যাঁ ভাইয়া আমি একদম ঠিক আছি। কিছু হয় নি আমার।
-চলো আজকে আর কলেজ যেতে হবে না।
কেউ আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।
আরিয়ান ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো অফিসে।

বিকেলে আরিয়ানের কাছে পড়তে বসেছে দুজন। মাঝের চেয়ারে আরিয়ান আর দুই পাশে আর্শ আরুহী।

পড়ার মাঝে বারবার আরিয়ানকে দেখছে আরুহী। এত মুগ্ধতা যেনো আর কোথাও নেই। আরিয়ান কে দেখে যেনো সারাটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যাবে এই রকম ধারনা আরুহীর।
আরিয়ান আরুহীর দিকে তাকাতেই বইয়ের দিকে তাকাই আরুহী।
আরিয়ান বিষয়টা খেয়াল না করলেও আর্শের চোখ এড়াতে পারে না ও।

আর্শ আরিয়ান আরুহীর বন্ডিং টা আগের থেকে অনেক ভালো হয়ে গেছে।
সবগুলো পরিক্ষা দিতে আরিয়ান ই ওদের সাথে নিয়ে গেছে।

আরুহীঃ ভাইয়াও হয়তো আমায় ভালোবাসতে শুরু করেছে? যদি তা না হতো তাহলে কেনো আমায় নিয়ে এতটা কেয়ারিং ভাইয়া? এখন তো আমার সাথে ভালোভাবে কথাও বলে। ভুল করলে শাসন করে।
যদি ভালো না বাসতো তাহলে কি এগুলো করতো বল আর্শ।
আরুহীর প্রশ্নের কি উত্তর দিবে তা জানা নেয় আর্শের। আর্শ ওর দিকে কিছুখন তাকিয়ে থেকে চোখটা নামিয়ে নিলো। নিম্ন স্বরে বলে উঠলো, ” তুই সত্যি ভাইয়াকে ভালোবাসিস? ভাইয়ার সাথে থাকলে কি তোর নিজেকে সবচেয়ে হ্যাপিস্ট পার্সন বলে মনে হয়?

-কি ডাফার এর মতো বলছিস। ভাইয়াকে আমি কতটা ভালোবাসি তুই জানিস না? জানিস ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আমি নিজের সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো। আমি যে ভাইয়ার মায়ায় পড়েছি।তুই বুঝবি না।

আর্শ একটা ফেক হাসি দিয়ে, ” হ্যাঁ তাইতো ভালোবাসা কি আমি বুঝিনা।

-ভালোবাসা এমন একটা ফিলিংস যা আমাদের বাচতে শেখায়। প্রজাপতির মতো উড়তে শেখায়। রংধনুর সব রং জুড়ে দেয় লাইফে।
ভালোবাসি আমি ভালোবাসি। অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি। আই লাভ আরিয়ান ভাইয়া।

কথাটা বলে চোখ মেললো আরুহী। সামনে দাড়িয়ে আছে আবরার আরহান।

আরুহী আর্শের দিকে তাকালো। আর্শ আরুহীর দিকে। কি বলবে জানে না। দুজনেরি মুখ শুকিয়ে গেছে ভয়ে।

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে